এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • মাতৃত্ব  (ছোটোগল্প)

    Tusar Sardar লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৫ এপ্রিল ২০২২ | ৪৪৮ বার পঠিত
  • মাতৃত্ব
                                                             তুষার সরদার

    খাটের তলা থেকে খুড়খাড় আর কিঁচমিঁচ শব্দ হচ্ছিল। রাত বারোটার মতো হবে বোধহয়। পাতলা ঘুমের পর্দা ছিঁড়ে যেতে শিখর উৎকর্ণ হয়। শব্দের উৎসটা বোঝার চেষ্টা করতে থাকে। প্রথমেই তার মনে হল শব্দের উৎস খাটের তলা। খাটের তলায় কাঠের অনেকগুলো তক্তা ডাঁই করা আছে। খাটের তলায় অত তক্তা রাখার কারণ আছে।

    ছয় আর আট বছরের দুই ছেলেমেয়ে আর বউকে নিয়ে শিখর এখন ভাড়ার বাড়িতে থাকে। দু’কাঠার মতো জায়গা কেনা আছে। অফিস থেকে হাউসিং লোনটা পেলেই বাড়ির কাজে হাত দেবে। বাড়ি তৈরির একটা মোটা খরচ হল দরজা জানালা বানাবার খরচ।

    পরিচিত কাঠমিস্ত্রি খবর এনেছিল একটা প্রকান্ড এবং দুষ্প্রাপ্য কাঁঠালগাছের গুঁড়ি বিক্রি হচ্ছে। গুঁড়ি হিসেবে কিনলে প্রায় অর্ধেক দামে প্রয়োজনীয় কাঠ পেয়ে যাবে। বউ শামার সঙ্গে পরামর্শ করে গুঁড়িটা কিনেই ফেললো শিখর। গুঁড়িটা চেরাই করার পর দেখা গেল তাদের সম্ভাব্য সব প্রয়োজন মিটে যাবার পরও বেশ কিছু তক্তা বিক্রি করা যাবে। তবে তক্তাগুলো আপাততঃ সংরক্ষণ করতে হবে। শোবার ঘরে খাটের তলায় সেগুলো ঠিকমতো সাজিয়ে রাখা হয়েছিল। শব্দগুলো সেখান থেকেই আসছে। ভালো করে খানিক শুনে শিখর বুঝল সম্ভবত তক্তাগুলোর ভিতরে কোথাও ইঁদুর বাসা করেছে। কাল একবার তক্তাগুলো সরিয়ে দেখতে হবে।

    পরদিন বিকেলে তক্তাগুলো সরাতে লাগল শিখর। প্রথমে এগুলো বাইরে বের করে নিয়ে খাটের তলার মেঝেটা সাফ করে তারপর আবার আগের মতো সাজিয়ে রাখতে হবে। ইঁদুর থাকলে মেরে দিতে হবে। ইঁদুর মারবার জন্য সে একটা খাটো লাঠি নিল।

    কিন্তু শামা বলল, ‘ইঁদুরটাকে মেরে ফেলো না গো। শুধু তাড়িয়ে দাও। আমাদের ক্ষেত, খামার বা সবজিবাগান নেই যে ক্ষতি করবে। কোনো সমস্যায় পড়ে আমাদের এখানে আশ্রয় নিয়েছে। অসুবিধা হচ্ছে, তাড়িয়ে দাও। প্রাণে মেরো না।’

    লাঠিটা সেখান থেকে তুলে সরিয়ে নিয়ে যায় শামা। শিখর সম্মতিতে নীরব থাকে।

    চব্বিশপঁচিশখানা তক্তা সরাবার পরও তেমন কিছুই নজরে এল না। আর মাত্র খানপাঁচেক আছে। তার একটা ধরে টান মারতেই একটা মস্তবড় ইঁদুর লাফিয়ে বেরিয়ে এসে পালিয়ে গেল বাইরের দিকে। শিখর হইহই করে বলে উঠল, -
    ‘ওই দেখ শামা! পালিয়ে গেল মস্ত ধেড়ে ইঁদুরটা!’
    শামা বলে উঠল, ‘আহা গো, প্রাণের ভয় বলে কথা! যাক, পালিয়ে গেছে, ভালো হয়েছে। তুমি এবার হাত ধুয়ে এসে টিফিনটা করে চা খেয়ে নাও।’
    ‘আর মাত্র পাঁচটা তক্তা আছে। এই কটা সরিয়ে ফেলে যাচ্ছি।’

    আরো দু’খানা তক্তা খানিকটা সরিয়ে অবাক হয়ে গেল শিখর। তার তলায় এক তক্তার মাঝে একটা গর্তের খোপের মধ্যে তিনটে ইঁদুরছানা! ভয় পেয়ে তারা কিঁচমিঁচ শব্দ করছে। কিন্তু তার অবাক হতে আরও বাকি ছিল। সে দেখল তক্তার কিনারায় আর একটা মস্তবড়ো ইঁদুর! তার কিন্তু পালাবার কোনো লক্ষণই নেই।
    ‘শামা! শামা!’- চেঁচিয়ে ওঠে শিখর, ‘দৌড়ে এস! দেখে যাও।’
    শামা হাতের কাজ ফেলে দৌড়ে আসে। স্বামীর পাশে সেও হামাগুড়ি দিয়ে বসে খাটের তলায় উঁকি দেয়। শিখর খুব উত্তেজিত ভাবে বলে,-
    ‘ওই দেখ শামা! আসলে এখানে একজোড়া বড়ো ইঁদুর ছিল। বড়ো বিপদ আসছে বুঝে একটু আগেই যেটা পালিয়ে গেল, সেটা – সেটা নিশ্চয়ই পুরুষটা ছিল। ওই যে অন্যটা। ওটা নিশ্চয়ই মা-ইঁদুর! মরতে হলে মরবে, তবু বাচ্চা ছেড়ে ও কিছুতেই নড়বে না!’
    শামার ডাগর দু’চোখে এখন ছাপাছাপি জল। শিখরের চোখে সেই চোখ রেখে দিয়ে শামা শুধু বলতে পারল,-
    ‘ওদের মেরো না প্লিজ...!’

    বিয়ের পর প্রায় এগারো বছর কেটে গেছে। শামার এমন চোখ কখনও দেখেনি শিখর। খুব অভিভূত হয়ে সে বলল,-
    ‘না না, মারব না। এখন ওরা ওইভাবেই ওখানে থাক। রাত নামলে মা-ইঁদুরটা নিজেই ওর বাচ্চাগুলো ঠিক সরিয়ে নিয়ে যাবে।’

    শিখরের তখন বেশ লজ্জা লজ্জা বোধ হচ্ছিল। কেন যে তেমন হচ্ছিল তা শুধু সে-ই জানে।
    __________________________________
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন