এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • জাপান ভ্রমণ ১, ২০১৯ এ বই আকারে প্রকাশিত ঋতবাক প্রকাশনী থেকে "জাপান যাত্রীর কলমে"

    Rumjhum Bhattacharya লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৬ এপ্রিল ২০২২ | ৬১২ বার পঠিত
  • কখনও কখনও বেড়াতে যাওয়ার কথা উঠলে, বন্ধু মহলে ইচ্ছা প্রকাশ করতাম আমি জাপান দেখতে যাব। বিশেষত: জাপানের চেরি ফুল ফোটা দেখার ভারি শখ ছিল। মানুষের মনে এমন কতোই তো শখ থাকে। কচু পাতায় জলবিন্দুর মতো সে সব শখ মনের শাখায় দোল খেতে খেতে একসময়ে টুপ করে খসে পড়ে। ভেবেছিলাম চেরি ফুলের শোভা দেখতে চাওয়ার শখটাও তেমনই  একদিন মাটিতে মিশে যাবে। কিন্তু আমার এই শখটা ভারি কাকতালীয়ভাবে মিটিয়ে নেওয়ার একটা সুযোগ এসে গেল। গত বছর থেকে আমার বোনের পরিবার কর্মসূত্রে টোকিও তে থাকতে আরম্ভ করে আর ক্রমাগত আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে ওদের কাছে যাওয়ার জন্য। অতএব শখের আর জলবিন্দুর মতো গড়িয়ে পড়া হল না, এই বছর এপ্রিল মাসে রওনা হলাম জাপান দেশের চেরি ফুলের শোভা দেখতে। 

    আপাতভাবে শুনলে মনে হয় একধরণের ফুল ফুটবে যার শোভা মন মাতানো এই হচ্ছে সার কথা। কিন্তু ও দেশের মাটিতে পা রেখে বুঝলাম এ শুধু ফুলের শোভা নয় এ আসলে একটা সংস্কৃতির অঙ্গ।'সাকুরা ফেস্টিভাল'' নামে পরিচিত চেরি উৎসব। গোটা দেশ জুড়ে চেরি ফুল ফোটে এক একটা জায়গায় এক এক সময়ে। কোন জায়গায় কখন ফুল ফুটবে তার একটা সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করা হয় সরকারিভাবে। এত দিনক্ষণের বালাই কারণ চেরি ফুল খুব অল্প দিনের মধ্যেই (সচরাচর ১0 বা ১২ দিন) ঝরে যায়। আর সেই ক্ষণ স্থায়ী চেরি ফুলের জীবনেই যেন প্রতিফলিত বৌদ্ধ দর্শন ---- মূল্যবান মানব জীবন রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে পরিনতির গণ্ডি পেরিয়ে মৃত্যুতে বিলীন হয়। মানবজন্মের নশ্বরতার কালজয়ী রূপক চেরি ফুলের ঝরে যাওয়া পাপড়ি। বছর বছর নতুন ফুলের ফুটে ওঠা, দীর্ঘ শৈত্যের অবসান শেষে বসন্তের দূতসম মানুষের হৃদয়ে বিশেষ জায়গা করে নেয়, জাপানের মানুষকে যেন আত্মসচেতন করে তোলে। দেশের দক্ষিণে ওকিনাওয়াতে প্রথম ফোটে ফেব্রুয়ারী মাসে আর একদম উত্তরে হোকাইডোতে ফোটে মে মাস নাগাদ। টোকিও তে ফোটে মার্চের শেষে। আমরা যেহেতু এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে যাব স্থির  করেছিলাম বোন বলেছিল অফিসিয়ালি টোকিওতে ফুল ঝরে যাবে। আমার অবশ্য দৃঢ় বিশ্বাস ছিল টোকিওর চেরি ফুল ফোটা আমি দেখতে পাবই। 

    ফুল ফুটলেই হবে না, সেই সৌন্দর্য দেখতে যেতে হবে তো! দীর্ঘ শীতের অবসানে বসন্তের আমেজ নিতে দলে দলে মানুষ তখন  বেরিয়ে পড়ে চেরি ফুল দর্শনে। পার্কে, বাগানে, প্যালেসের 
    গার্ডেনে দলে দলে মানুষ ফুলের শোভা উপভোগ করতে যায়।গাছের নীচে বসে চলে পানাহার। জাপানের ভাষায় এই হল হানামী। একি যেমন তেমন উৎসব! হানামীর সময়ে জাপানে গেলে বোঝা যাবে পুরো জাপান যেন সাকুরাপ্রেমে পাগল।দোকান বাজার ছেয়ে গেছে সাকুরাগন্ধী খাদ্য আর পানীয়তে। মিঠে স্বাদের সাকুরা চু-হাই আসলে চেরিগন্ধী জাপানি মদ, সাকুরা ডাম্পিলিং, সাকুরা কিটক্যাট, সাকুরা বিয়ার, এমনকি স্টারবাকসে সাকুরাগন্ধী কফিও সীমিত সংখ্যায় উপলব্ধ বলে বিজ্ঞাপিত। সমস্ত দোকানের সাজসজ্জায় আসল ও নকল চেরি ফুলের সমাহার। 
    এই না হলে উৎসব! ইতিহাস বলছে হানামী জাপানের সমাজ জীবনে বহু যুগ ধরে জড়িয়ে গেছে। পুরাকালের জাপানে এমন বিশ্বাস প্রচলিত ছিল যে সাকুরা গাছের আত্মা আছে।মদ উৎসর্গের মধ্যে দিয়ে সেই আত্মার পুজো করার চল থেকেই সম্ভবত: হানামীর উদ্ভব। জাপানের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সময়কাল নারা যুগে (৭১০ খ্রী: থেকে ৭৯৪খ্রী:) হানামীর চল ছিল। রাজাদের বিলাসিতা থেকে ক্রমে হানামী সাধারণ মানুষের উৎসবের রূপ নিয়েছে। 
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন