প্রবুদ্ধ বাগচী
কথা ছিল হাওড়ার কদমতলায় পাওয়ার হাউস বাসস্টপে তিনি দাঁড়িয়ে থাকবেন। এগারোটা সাড়ে এগারোটায় । আমি এসে পৌছাব সেখানে । সঙ্গে থাকবেন আমার একজন অধস্তন সহকারী । সচরাচর এইটাই হয় । অন্তত তখন হত । সেটা সম্ভবত ২০০৯-২০১০ । অফিসের হাজারো চিঠিপত্রের মতই এসেছিল চিঠিটা । জেলাশাসকের দফতর থেকে পাঠানো হয়েছে অফিসে । সঙ্গে আবেদনকারীর নাম, ঠিকানা । যথাযথ তদন্ত করে রিপোর্ট দেওয়ার ভার আমার । সেই রিপোর্ট যাবে ওপর মহলে । রিপোর্টটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই রিপোর্টের ওপর নির্ভর করছে আবেদনকারীর ভবিষ্যৎ ।
মনে করার কোনও কারণ নেই, এই তদন্ত মানে কোনও খুন-খারাপি বা অন্য কোনও অপরাধের অনুসন্ধান । এটা একটু অন্য ব্যাপার । যেসব নিঃসন্তান দম্পতিরা শিশু দত্তক নিতে চান তাঁদের আসলে কিছু সরকারি বিধিনিষেধের বেড়া পেরোতে হয় । উপযুক্ত তদন্ত না করে কোনও সরকারি হোমে থাকা শিশুকে হস্তান্তরিত করা যায় না । তাই ইচ্ছুক দম্পতি তাঁদের সব তথ্য জানিয়ে দত্তক গ্রহণের আবেদন করেন । তারপর সেই আবেদন নানা প্রশাসনিক দফতর পার হয়ে আসে সেই পর্যায়ে যখন প্রকৃত আবেদনকারীর বাড়ি গিয়ে যাচাই করা হয় তাঁর দেওয়া তথ্য । সেই যাচাইপর্বে যা ধরা পড়ে তারই ভিত্তিতে তৈরি হয় রিপোর্ট ।
প্রশাসনিক নিয়মবিধির বালাই থাকলেও এই কাজ আসলে বড় কঠিন । কারণ, অপত্যস্নেহে বঞ্চিত একজোড়া মানবমনের সামনে বিধি-বিধানের যষ্টি নিয়ে দাঁড়ানোর মধ্যে কোথাও থেকে যায় একরকম জবরদস্তি নিষ্ঠুরতা, আসলে যা রাষ্ট্রের ধর্ম । শুধুমাত্র রাষ্ট্রবিরোধী জেহাদি নয়, রাষ্ট্রের এই কাঠামোগত হিংসা বা ‘স্টাকচারাল ভায়োলেন্স’ অনেক ছোটখাটো গলিপথে, আনাচে-কানাচেও জেগে থাকে তার উদ্যত তর্জনী নিয়ে । সবসময় পুলিশ-মিলিটারি নয় সরকারি প্রশাসনের প্রতিনিধিরাও হয়ে ওঠেন সেই হিংসা বা দমনের পরোক্ষ প্রয়োগকারী । এই যেমন ধরুন, সুচরিতার কথা ।
সুচরিতার নিজের বাড়ি হুগলী জেলার জিরাটে । স্কুলের গণ্ডিতে উচ্চমাধ্যমিক পেরিয়েই তার বিয়ে হয়েছিল হাওড়ায় । তার স্বামী কাজ করেন টিকিয়াপাড়ায় রেলওয়ে ওয়ার্কশপে । টিকিয়াপাড়া রেলস্টেশনের লাগোয়া যে কর্মী-আবাসন সেখানেই থাকেন সুচরিতা । আর পাঁচটা মেয়ের মতোই সে দাম্পত্য জীবন থেকে পেতে চেয়েছিল একটি বা দুটি সন্তান । কিন্তু বিয়ের দু-বছরের মধ্যে কী এক অসুখে বাদ দিতে হল তার জরায়ু । সেই অপারেশনের পরে স্বভাবত তাঁর চিকিৎসক বলেই দিয়েছিলেন প্রাকৃতিকভাবে (Biologically) আর তাঁর সন্তানধারণের সুযোগ নেই । সেই রিপোর্ট-এর কপি আমার হাতে তুলে দিয়ে থরথর করে কেঁপে উঠেছিল সুচরিতা । তারপর চোখের জল আঁচলে চেপে দ্রুত ঢুকে গিয়েছিল রান্নাঘরে । হয়তো একেবারে বাইরের লোকের কাছে এই আবেগের কোনও মূল্য নেই জেনেই। অল্প পরে হাতে চায়ের কাপ আর ডিশে দুটো বিস্কুট নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন যখন --- তখন তাঁকে ঘিরে রয়েছে অশ্রুনদীর সূদূর পারে ঘনিয়ে ওঠা এক বেদনার আড়াল । অবগুণ্ঠনের ভিতর থেকে শুধু অনুভব করা যায় তার আদল, তাকে স্পর্শ করা যায় না আর । তাছাড়া আমি কীই বা করতে পারতাম সেখানে ?
সে শুধু চাইছিল দ্রুত এক স্পর্শ । একটি তৃষিত মাতৃহৃদয়ের সঙ্গে এক মানবপুত্রের স্পন্দিত সংযোগ । কিন্তু তাঁকে বিশ্বাস করাতে পারিনি এই দীর্ঘ সরকারি প্রক্রিয়ায় কোনও বাড়তি গতি সঞ্চার করা আমার অসাধ্য । আর যেসব অন্ধকার অলিগলি দিয়ে প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রিতা কমিয়ে ফেলার টোটকার কাছে পৌঁছানো যায় তার হদিশ আমি জানলেও ওই দুঃখিনীকে তা বলা আমার পক্ষে ছিল একান্তই অসম্ভব । এক গবেষক ভদ্রলোককে জানি যিনি নানা সামাজিক বিষয় নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গবেষণা কর্মের সুবাদে মুখোমুখি হয়েছিলেন নানা অভিজ্ঞতার । তিনি একবার আমায় বলেছিলেন, সমস্ত অভিজ্ঞতার কথা বলা উচিত নয়, কিছু কিছু অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ্যে না আসাই হয়তো ভাল । সেই অর্থে হয়তো সুচরিতার সব কথা বলা আমারও উচিত নয়, যদিও এই কাজে কোনও মন্ত্রগুপ্তির বালাই নেই ।
তাই সবটা না বললেও আমি ভুলতে পারি না সেই সকালবেলাটার কথা । অফিসে বেরোব বলে তৈরি হচ্ছি, বেজে উঠল ফোন । একটু বিরক্তি নিয়েই ফোন তুলি । ওপারে সুচরিতা ।
স্যার, আপনাকে একটা দরকারি কথা জানানো দরকার ।
বলুন ।
আমাদের কোয়ার্টারের নিচে যে সুইপার্স কোয়ার্টার আছে ওখানকার একজন আজ সকালে একটা বাচ্চা কুড়িয়ে পেয়েছে রাস্তায় .... এই কিছুক্ষণ আগে
তো ?
বলছিলাম যে ওরা বাচ্চাটাকে কাউকে দিয়ে দেবে বলছে । আমি নিয়ে নেব বলেছি । এখন আমার কাছেই এনে রেখেছি বাচ্চাটাকে । তাই ভাবলাম আপনাকে জানাই ।
কী করেছেন কি ?
কেন ?
শিগগির ওটা ফেরত দিয়ে দিন।
ফেরত ?
হ্যাঁ, ফেরত । ওইভাবে বাচ্চা নেওয়া যায় নাকি ?
তাহলে ..... আপনি একবার আসবেন এখানে ? আমার হাজব্যান্ডও আজ বাড়ি আছেন, একবার আসুন না !
সেদিন দুপুরে অনেক জরুরি কাজ মুলতুবি রেখে ছুটতে হয় সুচরিতাদের আবাসনে । তখনও সেই পরিত্যক্ত শিশুটি শুয়ে আছে সুচরিতার নিঃসঙ্গ বিছানায় । পরম শান্তিতে চোখ বুজে ঘুমোচ্ছে সে, আর তাকে আগলে আছে সুচরিতা । তার স্বামীকে একান্তে ডেকে বোঝাতেই হয়, বিষয়টা একেবারেই বেআইনি । অবিলম্বে শিশুটিকে তুলে দিতে হবে পুলিশের কাছে। কঠিন, অসম্ভব কঠিন সেই কাজ, বুঝি । এভাবে এক তৃষ্ণার্ত নারীর কোল থেকে কি শিশু কেড়ে নেওয়া যায় ? কিন্তু ওই যে নিয়ম বড় বালাই আর সেই বিধি কখনও এক প্রবল হিংসা ও আগ্রাসনের প্রতীক যা অনায়াসে কোল ফাঁকা করতে বলে এই সন্তান-আকাঙ্ক্ষী নারীর এবং কার্যত তা করেই দেয় ! বিপরীতে এই শিশুর পরিবর্তে কোনও প্রার্থিত শিশু তার হাতে দ্রুত তুলে দেওয়ার কোনও আশ্বাস দিতে পারে না । আর সেটা দিলেও আসলে তা অন্তঃসারহীন । আসলে যা প্রবঞ্চনা ।
পরিত্যক্ত শিশুর কথাই যখন উঠল তখন আমরা একবার ঘুরে আসি ব্যান্ডেল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে । তাদের কর্মী আবাসনে থাকা এক দম্পতি এমনই এক পরিত্যক্ত শিশুর মাথায় ছাদ দিয়েছিলেন, দিয়েছিলেন তার যোগ্য গোত্রপরিচয় । পরিচর্যাহীন সেই পাপজন্মের আড়াল তাঁরা সাজিয়ে তুলেছিলেন স্নেহে প্রেমে শুশ্রূষা ও উষ্ণতায় । সংবাদপত্রে প্রকাশিত সেই পেপার-কাটিং তাঁরা সযত্নে গচ্ছিত রেখেছিলেন তাঁদের কাছে যেখানে বিবৃত হয়েছিল নীলরতন সরকার হাসপাতালের ফুটপাথের এক কলঙ্কিত প্রত্যুষে কীভাবে আবিষ্কৃত হয়েছিল এই মানবপুত্র । আর তার পাশেপাশেই তাঁরা আমায় দেখালেন সেই শিশুটির প্রথম ভাত খাওয়ার অনুষ্ঠানের ছবি । অবহেলা থেকে চর্যায় উন্নীত হয়েছিল সে। আচ্ছাদিত অতীতের বেড়া টপকে সে যখন পালিকা মায়ের উদ্দেশে ছুঁড়ে দিয়েছিল মাতৃরব সম্ভবত সেইটাই পৃথিবীর বিরলতম মুহূর্ত যেখানে আলো নিজেই গান গেয়ে ওঠে প্রাণের সমীপে । এবং সেই সত্যকাম যখন খেলা করে তার বাড়ির সামনের খোলা জায়গায় সে তখন নিজেই এক সংগীত ।
এইরকমই এক সংগীতের সুরেলা মূর্ছনা ঘনিয়ে উঠেছিল সুচরিতার তেতলার ব্যালকনিতে । ওঁর স্বামী আমায় আমন্ত্রণ করেছিলেন সেদিন । তার সপ্তাহখানেক আগে তাঁরা সরকারি ভাবে পেয়েছেন এক শিশুকন্যাকে । অসামান্য এক স্বর্গীয় প্রাপ্তির উচ্ছলতা সেদিন সুচরিতার চোখে মুখে ও সমস্ত শরীরের স্পন্দে । আমায় কিভাবে আপ্যায়িত করে সে তার কৃতজ্ঞতার জ্ঞাপন করবে তা যেন খুঁজেই পাচ্ছিল না সেই যুবতী । সেইদিন সে পোশাকে অলংকারে সুসজ্জিতা । রান্নাঘর থেকে ঘুরে এসে আমায় বলে, আপনার জন্য লুচি ভাজছি, খেয়ে যাবেন।
আমি অপ্রস্তুত হই এই আতিথ্যে । সাধ্যমতো বারণ করি, এড়িয়ে যেতে চাই। তবু এই নাছোড় অনুরোধের কাছে কোথাও একটু হেরে যেতেও যে ইচ্ছে করে । আসলে আমি তো কিছুই করিনি । কেবল এই দম্পতির যৌথ জীবনের ফাঁকটুকু ভরে দিতে চেয়েছি একটি আনন্দল অস্তিত্বের হাসি কান্না আর দামালপনায় । সেই আর্তিটাই জানিয়েছিলাম আমার রিপোর্টে যাতে ওরা সেই অভিজ্ঞতার শরিক হতে পারেন । লুচি বা মিষ্টি নয় এই যে কৃতজ্ঞতার আততি --- হয়তো এইটুকুই আমার পাওনা । একটা নতুন জীবনের উথলে ওঠা আনন্দের সামনে দাঁড়িয়ে কোথাও হয়তো আমারও বুকের মধ্যে জড়ো হয় সুবাতাস । আমি সেই নিবিড় পুলকে ভিজতে থাকি । ভিজতেই থাকি ।
কিন্তু এবার আমায় যেতেই হবে কদমতলায় । পাওয়ার হাউসের সামনে বাসস্টপে । সেখানে অপেক্ষা করছেন তিনি । তাঁকে আমি চিনি না । কিন্তু তার যেসব কাগজপত্র আমার ব্যাগে তাতে অনুমান করি তিনিও এমন এক সন্তান প্রত্যাশী পুরুষ আর অনিবার্যভাবে তার পেছনে রয়েছেন এক নারী। হয়তো আবারও আমায় তাঁদের সামনে দাঁড়াতে হবে এক সরকারি প্রতিনিধি পরিচয়ে । আবেগ ও আর্তির নরম সংবেদের সামনে বিছিয়ে দিতে হবে বিধির রোঁয়া ওঠা চাদর । বলতে হবে বিধির কথা বলতে হবে নানা শেখানো কথা । এইই তো আমার নিয়তি অনুসারী ভূমিকা ।
নির্দিষ্ট জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা ভদ্রলোককে দেখে একটু অবাকই হলাম । বিস্ময় তার বয়সের আনুমানিক বিচারে । তবু সেই কৌতূহল চেপে ঢুকলাম তার ঘরে । বাইরের ঘরে প্রচুর ভারী ভারী আইনের বই । তিনি নিজেই জানালেন হাওড়া আদালতে তিনি ব্যবহারজীবী । নমস্কার প্রতি নমস্কার বিনিময়ের পর আসল কথা । আমি ওঁর ফাইল খুললাম । সেগুলি বিছিয়ে ধরলাম টেবিলে ।
ভদ্রলোক বললেন, আপনি মৃন্ময় পাত্রের নাম শুনেছেন ?
কোন মৃন্ময় পাত্র বলুন তো ?
কবিতা লেখে । আপনি ‘কৌরব’ পত্রিকা পড়েন ?
‘কৌরব’ ? আমি একটু বাড়াবাড়ি রকম অবাক হই । এই পরিবেশে ‘কৌরব’ পত্রিকা ও কবিতার আগমন যেন নিতান্তই বেমানান ।
বলি, ‘কৌরব’ মাঝে মাঝে হাতে আসে বইকি ।
এইবার উনি বলেন, আপনি কবি সুজিত সরকারকে চেনেন ?
আবারও আমার অবাক হওয়ার পালা । এইসব প্রশ্নের প্রসঙ্গটা কী বুঝতে পারি না ।
হ্যাঁ, চিনি তো সুজিত সরকারকে । উনি আমার একজন শুভার্থী , অনেক দিনের পরিচয় । কিন্তু কেন ?
ভদ্রলোক এইবার একটু থেমে বলেন, আমার ছেলে কবিতা লিখত ।
লিখত ! আমার মনের কোণে আশঙ্কার এক টুকরো মেঘ ।
খেয়াল করিনি, কখন পেছনের দরজা দিয়ে এসে দাঁড়িয়েছেন তার স্ত্রী ।
ভদ্রলোক বলে যান, ‘কৌরব’ পত্রিকায় মৃন্ময়ের লেখা বেরোত । সুজিতবাবু ওকে খুব ভালবাসতেন । আমার এই বাড়ির ওপরের ঘরে কতবার কবিতা পাঠের আসর হয়েছে । উনি এসেছেন, মৃদুল দাশগুপ্ত এসেছেন । কমলবাবু ( কৌরব সম্পাদক কমল চক্রবর্তী) এসে থেকেছেন ।
আমি স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি ওঁর দিকে ।
নরসিংহ দত্ত কলেজে সেকেন্ড ইয়ারে উঠেছিল । মাত্র সাতদিনের জ্বরে ......
বাকি কথা আর শোনা যায় না । ডুকরে কেঁদে উঠেছেন ওঁর স্ত্রী । জড়িয়ে ধরেছেন আমার অধস্তন মহিলা সহকারীকে । পুরো পরিস্থিতির সামনে বাক্যহারা আমি ।
ঘরের বাইরে বেরিয়ে বোতাম টিপি মোবাইলের । সুজিতদা ফোন ধরেন । বিস্তারিত বলেন মৃন্ময় বিষয়ে । বলেন ওর কাছের বন্ধুরা ওর শেষ লেখাগুলো নিয়ে বই প্রকাশ করার কথা ভাবছে ।
সদ্য পুত্রহারা মহিলা আমায় ও আমার সহকারীকে আকুলি বিকুলি করেন দোতলায় ছেলের ঘরটি দেখতে যাওয়ার জন্য । যাই । নিজস্ব একটি চার দেওয়ালে স্মৃতিবিজড়িত অশরীরী উপস্থিতি এক কবির । টেবিলের বই, ছেঁড়া কাগজ, দেওয়ালের পোস্টার আর চেয়ারের হাতলে, বিছানার চাদরে । সেগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে হু হু করে কেঁদে ওঠেন মা । সহকারীকে তার কাছে রেখে নীচে নেমে আসি । গৃহকর্তার কাছে ।
খুব সতর্ক হয়ে বলি, আপনারা নতুন করে শিশু দত্তকের আবেদন করছেন কেন ?
এবার ভদ্রলোক চুপ করে যান হঠাৎই ।
খানিক নীরবতার পর আস্তে আস্তে বলেন, কী করব বলুন ? আমার স্ত্রীকে তো রাখা যাচ্ছে না । আমি বাইরে বাইরে কাজে থাকি , একরকম ভাবে সময় কেটে যায় । কিন্তু ও তো এই বাড়ির ভিতর --- সারাদিন কান্নাকাটি করে....চারদিকে ছেলের স্মৃতি
কিন্তু ...
হ্যাঁ, আপনি কী বলতে চাইছেন বুঝেছি । এই বয়সে নতুন করে আবার ...
.........
কিন্তু আমার স্ত্রী তো আরেকটি শিশু না পেলে বোধহয় আর বাঁচবেন না ! কিছু কি করা যায় না ?
একটু ফেভার ??
অবরুদ্ধ শোকের এক প্রবল প্রতাপ থাকে । সত্যিই তো কী করা যাবে ? আমি ঠিক ঠাহর করতে পারি না । পঁয়তাল্লিশ পেরোনো এই প্রৌঢ়ের জন্য কি বিশেষ কিছু করার আছে আমার ? কীই বা করতে পারি আমি ?
কিছুক্ষণ চুপ থেকে ভদ্রলোক টেবিলের ড্রয়ার থেকে বার করেন একটা সাদা খাম । একটা নিমন্ত্রণপত্র । আগামী মাসের দশ তারিখে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি সভাঘরে আবরণ উন্মোচন হবে এক সদ্য প্রয়াত তরুণ কবির শেষ কাব্যগ্রন্থ । কবিতা পড়া হবে । ভদ্রলোক বলেন, আপনি আসবেন তো ?
আমি কি যেতে পারি না সেই সভায় ? হয়তো পারি । হয়তো পারি না ।
প্রাচীন শহর হাওড়ার পুরোন এক বাসভূমিতে ছায়া দীর্ঘতর হয় । স্তব্ধ হয়ে থাকে এক হাহাকার ।