“you are like a tree… planted beside streams of water that bears its fruit in season and whose leaf does not wither. ”
তোমার প্রথম ইমেইল যখন পৌঁছল, এখানে সূর্য তখন মুখ খুলছে সবে...আর বালিশের গা ঘেঁষে শুয়ে আছে জিলিপির না-লেখা সব পঙ্তিরা...
জিলিপি তাও গত রাতের কথা রাখবে...তোমার জন্য লিখবে একটা গোটা কবিতা...
যদিও শীত নিয়ে আমার অত উৎসাহ নেই...তবু অক্টোবর এলে হারিয়ে ফেলা শিউলি বিছানো উঠোনগুলো প্রায়শই মন খারাপ করে...
তোমার ওখানে কেমন করে সকাল হয় মার্গারিটা...কলিং বেলে নির্ঘাৎ জানান দেয় মর্নিংগুলো ভালো হয়ে গেছে সোনা, এবার উঠতে পার...
আমার ওপর তলার ঘর...পাখিগুলোর এন্তার কলকলানি লেগেই আছে...তারপর কানের কাছে সকাল থেকেই দুধওয়ালা, পেপারওয়ালা আর সব্জিওয়ালাদের কচকচানি...সেই যে শুরু ওদের, শেষ কখন হয় জানিনা...
সকালে তুমি যখন পাউরুটিতে মার্জারিন লাগাও, আমি তখন গোলারুটিতে ঝোলাগুড়...আহা কি স্বাদ, ও তুমি বুঝবেনা...
আমাদের পার্থক্য প্রচুর...তাও ভাবনাগুলো কোথাও গিয়ে এক হয়ে যায়...তোমার ওয়ার্ডসওয়ার্থ, আমার প্রিয় কবিদের সাথে প্রায়ই ব্যালকনিতে চর্চা করে...একখানা ভালো কবিতা নাকি তবেই লেখা যায়...
এমন একটা কিছু আমারও ইচ্ছে অনেকদিনের...হয়ে ওঠেনা...একেই শব্দসংখ্যা কম, তাতে গুটিয়ে আসছে আরো...
প্রতিকার কি জানিনা..তবে কেউ একজন বলেছিল, জ্বর হলে কবিতা আসে...কবিতা আসে মনখারাপেও...
আমিও চাই, ধুম জ্বরে দু-চার কথা বকব... আর মনখারাপ... সে বড়ই ছোঁয়াচে...
তবুও বলব, এ জিলিপির মিঠাস নেই, মার্গারিটার আছে...তাই সে জিলিপিকে “গাছ” ভাবতেই পারে...
আর এ কথাও তো সত্যি, গাছেদের হাত ছাড়া হতেই আনন্দ...
২
নামে কি আসে যায় বলো...আমি জিলিপি না হয়ে ফণীভূষণ হতে পারতাম...আর তুমিও হতে পারতে দেবলীনা....!
নাম একটা অজুহাত মাত্র...শর্ত একটাই, বন্ধু হতে হবে।
মার্গারিটার জবাব আসে...
ওর কঠিন ইংরেজিকে সহজ করতে জিলিপি রোজ অভিধান খোলে...শুধু একটাই শব্দ ওতে পুরো লেখা নেই “ভালো থেক”...
ভালো থাকা কাকে বলে জিলিপি জানে...জানে মার্গারিটাও...শুধু দুজনের ধরনখানা আলাদা...তাই একজনের ইমেলএ যেখানে রোজকার গল্প, আরেকজন পরিপাটি, সাদাসিধে...ফর্সা কবিদের কোট করে এন্তার লিখে যাচ্ছে...
জিলিপির প্রায়ই ওকে বলতে ইচ্ছে হয়...এমনটা একঘেয়ে...একটু বদল করো...
কিন্তু ও জানে মার্গারিটার জেদ...কাল থেকে টানা কদিন কথা বন্ধ করে দেবে...
ওর সাথে কথা বলতে ভালোলাগে... জিলিপির বন্ধ ঘরে একটানা হাওয়ার মত খেলে যায় মার্গারিটার হাসি...
৩
স্বপ্ন দেখ...কি আসে তাতে?
উত্তর দেয়না মার্গারিটা...কিছু প্রশ্ন ও ইচ্ছেকৃত এড়িয়ে যায়.....
জিলিপিও ছাড়বার পাত্র নয়...একটানা একই সুর...
কাল প্রশ্নটার উত্তর আসেনি কো...!
কো যুক্ত হতেও ফারাক পড়েনা মার্গারিটার কথোপকথনে...সে জিলিপিকে বন্দু বলে...
আর বাংলায় সাফ সুতরা জিলিপিরও ইচ্ছে হয় বলে...
মেয়ে, একদিন তোমাকে বাংলা শিখিয়েই ছাড়ব।
৪
মাসটা ফেব্রুয়ারী...মনখারাপের...
সব কথা মার্গারিটা জানে না...ভার্চুয়াল সংসারে পর্দা সরাতে সময় লাগে..এ কথা পুরোপুরি বিশ্বাস করে জিলিপি...
তবে এ কদিনে আরো বেশি সে বিশ্বাস করে ফেলেছে মেয়েটিকে...
ও ছোটবেলার ছবি দেয়...সঙ্গে গুচ্ছ হাসি...জিফ ফাইলে হাসিখুশি গড়াগড়ি খায় -
জিলিপিরও ভারী গালে একটা আলতো রেখা...ভালোলাগার...
আগেরজন তো স্পষ্ট বাংলা বলত...তবু একবারও মনটা বুঝতে পারেনি!
৫
প্রিয় মার্গারিটা,
ইলেকট্রনিক মেইল পৌঁছতে সময় লাগে অল্প। কিন্তু আমি জানি এ চিঠি তোমার হাতে যেতে অনেক রাত হয়ে যাবে। যেমনটা ওই পুরনো দিনে...”কবুতর যা যা...” করতে করতে রাজপুত্রর মন যখন ভার... রাজকন্যে দিব্যি তখন জানালায় চুল এলিয়ে ঝিলের পদ্মফুল গুনছে।
তুমিও এক রাজকন্যেই। ব্যস্ত খুব। তবে এলিয়ে ঠেলিয়ে নয়, নিজ কাজে। ওয়ার্ক ফ্রম হোম নিয়ে তাই এক প্রস্থ শোনালে সেদিন। দু বাক্য ইংরেজিতে ভুল হয় ভেবে গবেট বোলো না। এখানেও লক ডাউন চলছে। অনেকটা ওই গানের মতন...হম তুম এক কামরে মেঁ বন্দ হো / অর চাবি খো জায়ে...
তবে খোয়াখুয়ির কোনও সিন নেই...ঘর হাট খোলা থাকলেও চোর আসবে না। কোনও হম তুমও নেই...সব তুম তুম হয়ে গেছে...ঘরের মধ্যে ঘর...সব থেকেও অলস সারাটা দিন। রাস্তাতেও লোক দেখা যায় না। পাখিদের চেহল পেহল, কিচ্ছুটি না। ওরাও কেমন চুপটি করে যে যার কোটরে। শুধু খাবার খোঁজে কখনও মাথা বার করে, আবার ভালো মানুষটি হয়ে ঘাপটি মেরে যায়। এভাবে ভালো আছি আমিও। ভালো আছি এক টাল গল্প-কবিতা নিয়ে। আজ পিডিএফ, জিফ ফাইল - ফোল্ডারে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে গিয়ে জগজিৎ-জি কে পেলাম। কি করে উনি সবার ভেতরকার খবর ঠিক ধরে ফেলতেন, দ্যাখো...
“বাত্ নিকলেগি তো ফির দূর তলক যায়েগি / লোগ বেবযহ উদাসী কা সবাব পুছেঙ্গে
ইয়ে ভি পুছেঙ্গে কে তুম ইৎনা পরেশান কিউ হো...”
কিউ হো? ?? এর উত্তর শুধু উনিই জানতেন...তাই শেষে বলেও দিলেন...
“চাহে কুছ ভি হো সওয়ালাত ন করনা উনসে / মেরে বারে মেঁ কোই বাৎ ন করনা উনসে… ”
দিস ইজ কল্ড ম্যাজিক। দ্য পোয়েটিক ম্যাজিক। যা আমার দূর দূরান্ত অবধি নেই। তবু তোমার মত করে কবিতা ভালোবাসতে গিয়ে ক্রমাগত মানুষ হতে শিখছি। এখন তাই আর “ছাতা”র সঙ্গে “মাথা” মেলাই না। বরং চেষ্টা করে যাই...লড়ে যাই, কিছু একটা হবে।
এই মুহুর্তে একটা বিষাদময় আবহাওয়া সৃষ্টি করতে চাই ...শুধু এই গানগুলো আর আমি। কিন্তু পারছি কই! ফ্যানের একটানা ঘড়ঘড়, বিকেল গড়িয়ে সাড়ে পাঁচ...আবারও সেই এক কাজ। সব থেকে সবার থেকে আলাদা হওয়াটা বেশ কঠিন, মার্গারিটা।
ছাড়ো। ও তুমি বুঝবে না। ব্রায়ান অ্যাডামস্ শুনো...ফ্যাসফ্যাসে গলাতেও যে লোকটা কত বিষাদ গেয়ে গেছে এটুকু বোঝো নিশ্চয়ই.....
আচ্ছা রাখি। খেয়াল রেখ। আর দূরে দূরে থেকে এমনই বজায় রেখো, দূরত্ব। যেমন আমার সাথেও এতদিন...ও তোমার অভ্যাস হয়ে গেছে।
ইতি জিলিপি
৬
“ডিয়ার পোয়েট। আই এম লিটল বিজি টুডে।
কল ইউ লেটার…”
যখন এলো তখন আমার একটা বড় গল্প পড়া শেষ। মনে হলো এ এক উপসংহার যেন। গল্পের নায়ককেও এইমাত্র গল্প থেকে বেরিয়ে যেতে হয়েছে, এবার আমার পালা।
৭
করোনা লেটার টু
गुरुर था तुझे लम्बे होने का
ऐ सड़क.....।
गरीब ने तुझे पैदल ही
नाप दिया....।
সকাল সকাল এটা পাওয়ার পর থেকেই মনে হলো যে কোনো অহংকারই স্বল্পস্থায়ী। যখন তখন চুরমার হতে পারে তার শীষমহল।
সকালটা আজ খুব ভালো মার্গারিটা। এক বন্ধুর সাথে কথা হলো...পড়লাম, একটা কবিতাও যা মন ভালো করে দিতে যথেষ্ট।
লবঙ্গও এখন হ্যালো হাই করে। ডোন্ট ফিল জেলাস। আই এম কোয়াইট ফাইন...
উত্তরে, ইমোজি ইমোজি ইমোজি...বেশিরভাগেরই মাথামুন্ডু বুঝিনা আমি...তার চাইতে বরং এটা পড়ো...
হ্যালো
১।
ভাবছেন ইনিয়ে বিনিয়ে
কাছে পাবার ইচ্ছেটা তীব্রতর
কিন্তু নম্বরটা ভুল করে লেগে গেছে
বিশ্বাস করুন।
সেই শুরু
তারপর আরো বিশ্বাস করতে গিয়ে
জড়িয়ে গেল দুটি মন
আপনজন
আর বছর পর কোনও ব্যস্ততম সন্ধ্যায়
যখন কেউ কোত্থাও নেই
জেগে থাকে
একা শুধু
এক
টেলিফোন।
২।
হ্যালো
তোমায় হ্যাঁ বলতেও রাজি
(জানি) তোমার না-এর ওপর ঘর
তোমায় পেতে জিতব হর-এক বাজি
যতই এড়াও ভাবতে লাগুক পর।
৩।
মিল আছে
অমিলও
তাও যখন এক প্রান্তের হ্যালো
অন্য প্রান্তে যায়
মনে হয়
আজই পৃথিবীর সুন্দরতম দিন
দীর্ঘ এক কবিতা লেখা হবে।
৪।
প্রত্যেকটা হ্যালোর মধ্যে একটা আশ্চর্য গুনগুন আছে। গাছের পাতারা পাশাপাশি হাওয়ায় খেলে হ্যালো করে যায়
ফুলেরাও হ্যালো করে হেলেদুলে
আর পাখি ডানা ঝাপটিয়ে যখন বলে,
বন্ধু ভালো আছ -
ঠিক তখনই
দুটো অচেনা মানুষের মনকেমনের ফ্রিকুয়েন্সি
মিলে গিয়ে
হ্যালো হ্যালো হয়
জমানো লেখা সব মার্গারিটা... আমার এখানে সকাল হয়েছে। তুমি ঘুমোও সোনামনির মতন...টা টা...
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।