এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • ধর্ম, মৌলবাদ ও আমাদের ভবিষ্যৎ : কিছু যুক্তিবাদী চর্চা

    Debasis Bhattacharya লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ | ৪৭৭০৮ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  • ইসলাম সম্পর্কে আলাদা করে দু-চার কথা

    মৌলবাদ নিয়ে এই ধরনের একটা লেখায় যদি কেউ ঘোষণা করেন যে, এইবার ইসলাম নিয়ে আলাদা করে কিছু বলা হবে, তখন পাঠকের সে নিয়ে একটা প্রত্যাশা তৈরি হতে পারে। কাজেই, এখানে গোড়াতেই সে ব্যাপারে পরিষ্কারভাবে বলে রাখা দরকার, না হলে পাঠক হয়ত বিভ্রান্ত ও ক্ষুব্ধ হবেন। সম্ভাব্য প্রত্যাশাটি এই রকম যে, মৌলবাদের স্বরূপ নিয়ে যখন চর্চা হচ্ছে, এবং তার মধ্যেই আলাদা করে ইসলাম নিয়ে চর্চার ঘোষণা হচ্ছে, তখন নিশ্চয়ই দেশে দেশে ইসলামীয় মৌলবাদের উৎপত্তি ও বিকাশ নিয়ে ঐতিহাসিক বিবরণ পাওয়া যাবে এখানে, বিভিন্ন স্থান-কালে তার সাধারণ বৈশিষ্ট্য ও বিশেষ বিশেষ বৈচিত্র্যের উল্লেখ পাওয়া যাবে, এবং অন্যান্য ধর্মের মৌলবাদের সঙ্গে তার মিল ও অমিল এবং তার কার্যকারণ ইত্যাদি বিষয়ক অনুসন্ধান ও তার ফলাফলও পাওয়া যাবে। হ্যাঁ, এখানে তা করতে পারলে ভালই হত, কিন্তু তার উপায় নেই। সেটা করতে গেলে আগে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধর্মের মৌলবাদের কার্যকলাপ নিয়ে একটা সুনির্দিষ্ট ও বিস্তারিত আলোচনা সেরে রাখতে হত, তবেই তার প্রেক্ষিতে ইসলামীয় মৌলবাদের বৈশিষ্ট্যগুলো স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠতে পারত। দুঃখের বিষয়, সে পরিসর এখানে ছিল না, এখানে তো এতক্ষণ মৌলবাদ নিয়ে শুধু কতকগুলো অতি সাধারণ কথাই বলেছি। বলে রাখা দরকার, এখানে আমি সরাসরি সেইসব নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করব না, যদিও যা আসলে বলব তার মধ্যে এ বিষয়ে আমার মতামত ও চিন্তাভাবনারও কিছু ইঙ্গিত হয়ত মিলবে। এখানে আমি মূলত কথা বলব ইসলাম ধর্ম ও সংশ্লিষ্ট মৌলবাদ প্রসঙ্গে আমাদের সমাজের মূলস্রোত ধ্যানধারণা নিয়ে, এবং তার ঠিক-বেঠিক নিয়েও। এ নিয়ে কথা বলব কারণ, আমার ধারণা, ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে যাঁরা ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লড়তে চান, তাঁদের এ বিষয়টি এড়িয়ে যাবার কোনও উপায় নেই।
     
    ওপরে বলেছি, যাঁরা ধার্মিক নন বরঞ্চ ‘ধর্ম’ জিনিসটার সমালোচক, তাঁদের মধ্যে ইসলাম নিয়ে দু রকমের ভাবনা বেশ পরিচিত। অনেকে মনে করেন, এই ‘মৌলবাদ’ সংক্রান্ত সমস্যাটা আসলে শুধুই ইসলামের সমস্যা, আর কারুরই নয় --- ধর্মের নামে ফতোয়াবাজি আর মারদাঙ্গা মূলত মুসলমানেরাই করছে। অন্যদের যদি আদৌ কিছু সমস্যা থেকেও থাকে, তো সেটা শুধু ইসলামি জঙ্গিপনার প্রতিক্রিয়া মাত্র। আবার, এ অবস্থানটি অন্য অনেকের দুশ্চিন্তারও কারণ। ইসলামি জঙ্গিপনার বিপদ স্বীকার করেও তাঁরা মনে করেন যে, এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে নির্দোষ ও নিরীহ আম মুসলমানের ঢালাও খলনায়কীকরণ হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ছড়ানো হচ্ছে ঘৃণা বিদ্বেষ ও হিংস্রতা। প্রথম ভাবনাটি ভুল, কেন তার কিছু ব্যাখ্যা নিচে আছে।
     
    আর ওই দ্বিতীয় প্রকারের যে দুশ্চিন্তা, আমি এবং আমার মত অনেকেই যার শরিক, তার এক প্রতিনিধি-স্থানীয় দৃষ্টান্ত আমার হাতে এসেছে কয়েকদিন আগে, আমার এক তরুণ বন্ধুর সাথে ফেসবুকীয় কথোপকথনে। তিনি কে, সেটা এখানে প্রাসঙ্গিক না, কিন্তু তিনি আমাকে যে সব প্রশ্ন করেছেন তা বোধহয় অতিশয় প্রাসঙ্গিক। এখানে সেগুলো হুবহু উদ্ধৃত করলে হয়ত আমাদের আলোচ্য প্রশ্নগুলোকে সুনির্দিষ্ট আকার দিতে সুবিধে হবে। অবশ্য, এখানে উদ্ধৃত প্রত্যেকটি প্রশ্নগুলোর সুনির্দিষ্ট ও নিষ্পত্তিমূলক উত্তর দেওয়া এ লেখার উদ্দেশ্য ততটা নয়, যতটা হল মূল প্রশ্নগুলোকে চিহ্নিত করার মাধ্যমে সমস্যাটাকে আরেকটু স্পষ্ট করে তোলা। নিচে রইল সেই তরুণ বন্ধুর দুশ্চিন্তা-জারিত প্রশ্নগুলো।
     
    দাদা,

    একটা বিষয় একটু বিস্তারিত জানতে চাই আপনার কাছে। আপনি যদি সময় করে একটু ডিটেইলসে উত্তর দেন, খুব উপকৃত হই। অনেকদিনই এটা আপনাকে জিজ্ঞেস করব করব ভেবেছি, কিন্তু করা হয়নি, কারণ বিষয়টা একটু সেন্সেটিভ, আর প্রশ্নটা একটু বিস্তারে করতে হবে।

    ছোটবেলা থেকেই (ক্লাস ওয়ান থেকে) আমি দেখে এসছি, আমার পরিমণ্ডলে শুধুমাত্র ধর্মে মুসলিম হওয়ার জন্য মানুষকে সন্দেহের চোখে, বিদ্বেষের চোখে দেখা হয়। ক্রিকেটে পাকিস্তান জিতলে "কীরে, খুব আনন্দ বল!" বলে টন্ট কাটা হয়, কেবল নাম দেখে বাড়িভাড়া দিতে অস্বীকার করা হয়, এমনকি মুসলিম ছাত্র ক্লাসে ভাল রেজাল্ট করলেও "আশ্রম থেকে শেষে মুসলিম ফার্স্ট হবে" এরকম কথা খোদ টিচারের মুখেই শুনেছিআমি ঘটনাক্রমে মুসলিম পরিবারে জন্মাইনি, কিন্তু একদম ছোটবেলা থেকেই আমার মুসলিম বন্ধু বা প্রতিবেশীদের এভাবে সামাজিক হেট ক্যাম্পেনিং এর মুখে পড়াটা ভীষণ দুঃখজনক লাগে। এই খারাপ লাগাটা ক্লাস ওয়ান থেকেই শুরু হয়েছিল, তো তখন তো আমি ধর্ম ভাল না খারাপ, যুক্তিবাদ ভাল না খারাপ, এতকিছু তো বুঝতাম না।

    এখন মুসলিমবিদ্বেষকে যারা জাস্টিফাই করে, তাদের থেকে যে যুক্তিগুলো উঠে আসে, সেগুলো -

    ১) আর কোন ধর্মে আইসিস, তালিবান, বোকোহারামের মত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আছে?

    ২) "ওরা" (মুসলিমরা) সংখ্যায় বাড়লেই ইসলামিক রাষ্ট্র চায়, সংখ্যায় কমলেই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র চায়।

    ৩) সব ধর্মে সংস্কার হয়েছে, কিন্তু "ওরা" এখনও মধ্যযুগেই পড়ে আছে।

    ৪) সব ধর্মেই বহুবিবাহ বন্ধ হয়েছে, কিন্তু "ওদের ধর্মে" বহুবিবাহ আজও জায়েজ, ওদের ধর্মে নারীর অবস্থা সবচাইতে খারাপ।

    ৫) "ওরা" নিজেদের বাঙালি মনে করে না, মননে চিন্তনে আরব, ওদের কাছে ধর্মই সব।

    ৬) ধর্মের নামে মানুষ হত্যা "ওদের ধর্মের মত কোন ধর্মই করেনি।"

    ৭) "ওদের" বাড়াবাড়ির জন্যই বিজেপির মত দলের সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ, হিন্দু মৌলবাদ ইসলামিক মৌলবাদের প্রতিক্রিয়ার ফসল।

    ইত্যাদি ইত্যাদি। আপাতত এই কটাই মনে পড়ছে।

    এখন আমার প্রশ্ন

    ১) মুসলিমবিদ্বেষীদের এই দাবিগুলো কি তথ্যগতভাবে সত্যি?

    ২) সত্যিই কি ইসলাম আর পাঁচটা ধর্মের থেকে ব্যতিক্রমী ভায়োলেন্ট? এখন তো যুক্তি, তথ্য, পরিসংখ্যানের বিভিন্ন মেথডলজি দিয়ে অনেক বিষয় কম্পারেটিভ স্টাডি করা যায়। "ইসলাম অন্য পাঁচটা ধর্মের থেকে ভায়োলেন্ট" - এই বিষয়টা কি যুক্তি, তথ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা করা যায়? মানে আমার প্রশ্ন, দাবিটার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু?

    ৩) ধরে নিলাম, ইসলাম সবচাইতে ভায়োলেন্ট ধর্ম। কিন্তু তাতে করেই কি মুসলিমবিদ্বেষ জায়েজ হয়ে যায়?

    ৪) একজন নাস্তিক হিসাবে মুসলিম সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার হরণ করা হলে তার প্রতিবাদ করা কি অন্যায়?

    ৫) হিন্দু মৌলবাদ কি সত্যিই ইসলামিক মৌলবাদের প্রতিক্রিয়ার ফসল? ইসলামিক মৌলবাদ না থাকলে সত্যিই কি হিন্দু মৌলবাদ বলে কিছু থাকত না?

    ৬) আইসিস বা তালিবানের মত মুসলিম লিগ বা বর্তমানে মিমকে কি মৌলবাদী বলা যায়? নাকি "সাম্প্রদায়িক, কিন্তু মৌলবাদী নয়"-এমনটা বলা উচিত?

    আমার প্রশ্ন করার মূল কারণটা কিন্তু কোনভাবেই ইসলামকে ডিফেন্ড করা বা তার ভয়াবহতাকে লঘু করা নয়। আমিও ধর্মহীন সমাজের স্বপ্ন দেখি, সব ধর্মের মত ইসলামের অবসানও আশা করি।

    কিন্তু মধ্যবিত্ত শিক্ষিত স্তরে ইসলামের সমালোচনাটা যেভাবে হয়, তার টোনটা ঠিক যুক্তিবাদের নয়, টোনটা বিদ্বেষের। এখন রিলিজিয়াস ক্রিটিসিজমকে ঢাল করে বুঝে বা না বুঝে অনেক প্রগতিশীল মানুষও বিদ্বেষের টোন ব্যবহার করছেন। এটা খুব আশঙ্কার।

    এখন, এই প্রশ্নগুলোর প্রত্যেকটাকে আলাদা করে উত্তর দেবার চেষ্টা না করে বরং এ প্রসঙ্গে কতকগুলো সাধারণ কথা ভেবেচিন্তে দেখি। তাতে করে সমাধান না আসুক, অন্তত সমস্যাটার চেহারাটা আরেকটু স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠতে পারে কিনা, দেখা যাক। হতে পারে, ভাবতে গিয়ে হয়ত ওপরের দু-একটা প্রশ্ন শেষতক বাদই পড়ে গেল, বা উল্টোভাবে, যে প্রশ্ন এখানে নেই তেমন কিছু এসে কথার মধ্যে ঢুকে পড়ল।

    প্রথমেই বলা দরকার, অনেকে আধুনিক মৌলবাদী উত্থানকে মুসলমান জঙ্গি উত্থানের সঙ্গে এক করে দেখেন, যা মোটেই সঠিক নয়। বর্তমান পৃথিবীর প্রধান ধর্মীয় ধারাগুলোর সবকটির মধ্যেই মৌলবাদী উত্থান ঘটেছে, বিভিন্ন মাত্রা, ভঙ্গী ও ধরনে। আমেরিকায় খ্রিস্টান মৌলবাদীদের কথা আমরা জানি, জানি ইসরায়েলের ইহুদী মৌলবাদীদের কথা, জানি ভারতের হিন্দু মৌলবাদীদের কথা, এবং জানি এই ভারতেই আশির দশকে তেড়েফুঁড়ে ওঠা শিখ মৌলবাদীদের কথাও --- যাদের হাতে ভারতের এক প্রধানমন্ত্রী নিহত হয়েছিলেন। ‘অহিংসার ধর্ম’ বলে কথিত বৌদ্ধধর্মও এ প্রবণতার বাইরে নয় মোটেই। থাইল্যান্ড, বর্মা ও শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধ ধর্মের তরফেও জঙ্গি প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। আজ অনেকেরই হয়ত আর মনে নেই, দুহাজার এক সালের কুখ্যাত ‘নাইন ইলেভেন’-এর ঘটনার আগে পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ধর্মীয় নাশকতার ঘটনা বলে ধরা হত উনিশশো পঁচানব্বই সালের দুটি ঘটনাকে। তার একটি ঘটেছিল আমেরিকার ওকলাহোমা সিটি-র ‘ট্রেড সেন্টার’-এ, যাতে বিস্ফোরক-ভর্তি ট্রাক দিয়ে ওই ভবনটিতে ধাক্কা মেরে প্রায় দেড়শো লোকের প্রাণনাশ করা হয়েছিল, এবং সেটা ঘটিয়েছিল কতিপয় খ্রিস্টান মৌলবাদী। অন্যটি ঘটেছিল জাপানে, যেখানে পাতাল রেলের সুড়ঙ্গে বিষাক্ত সারিন গ্যাসের কৌটো ফাটিয়ে দেওয়া হয়, তাতে বিষাক্ত গ্যাসে সরাসরি যত না মারা যায় তার চেয়ে অনেক বেশি লোক মারা যায় এবং গুরুতরভাবে জখম হয় সুড়ঙ্গের ভেতরে আতঙ্কগ্রস্তদের দৌড়োদৌড়িতে পদপিষ্ট হয়ে --- এবং সেটা ঘটিয়েছিল কট্টরপন্থী বৌদ্ধদের একটি ক্ষুদ্র উপগোষ্ঠী। আমরা বৌদ্ধধর্মটা অন্তত অহিংস বলে জানতাম, তাই না? তার দু বছর আগে উনিশশো তিরানব্বই সালে ভারতে সংঘটিত কুখ্যাত ‘বম্বে বিস্ফোরণ’ অবশ্যই একটি বৃহৎ নাশকতা, এবং সেটা ঘটিয়েছিল মুসলমান জঙ্গিরাই। কিন্তু, মুসলমান মৌলবাদীদের বক্তব্য অনুযায়ী, সেটা ছিল তার এক বছর আগে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রতিক্রিয়া। বলা বাহুল্য, এই বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনাটিকেও আবার মুসলমানদের অত্যাচারের প্রতিক্রিয়া বলেই দেখানো হয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, সেটা কোনও সাম্প্রতিক ‘অত্যাচার’-এর প্রতিক্রিয়া ছিল না। হিন্দু মৌলবাদীদের নিজেদের দাবি অনুযায়ীই, এটা নাকি মোগল সম্রাট বাবরের তরফে ঘটে যাওয়া পাঁচশ বছরের পুরোনো এক অন্যায়ের প্রতিকার মাত্র! এবং, এই বাবরি মসজিদের ধ্বংসও আবার এ দেশে ধর্মীয় নাশকতার প্রথম ঘটনা নয়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাও নয়। এ দেশে আজ পর্যন্ত ধর্মীয় নাশকতার সবচেয়ে বড় ঘটনা বলে যদি কোনও বিশেষ ঘটনাকে ধরতেই হয়, তো সেটা সম্ভবত উনিশশো চুরাশি সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধিকে হত্যা করার ঘটনা। সেটা মুসলমানেরা ঘটায়নি, ঘটিয়েছিল শিখ মৌলবাদীরা।

    ধর্মের সমালোচনা যে আধুনিক পৃথিবীর অন্যতম প্রধান কাজ, তাতে সন্দেহ নেই। সমালোচনা মানে সব ধর্মেরই সমালোচনা, ইসলামেরও।  কিন্তু, ইসলাম ধর্মের সমালোচনায় একটি ভুল আমরা প্রায়শই করে থাকি। আমরা বলি, ইসলাম ধর্ম (এবং সেইহেতু ওই ধর্মাবলম্বীরাও) তো হিংস্র হবারই কথা, কারণ, ইসলামীয় ধর্মশাস্ত্রে হিংসার উপাদান খুব বেশি আছে। হয়ত সত্যিই আছে, কিন্তু যুক্তিটা তা সত্ত্বেও ভুল, এবং দুটো দিক থেকেই ভুল। কারণ, প্রথমত, সব ধর্মশাস্ত্রেই হিংসার উপাদান কমবেশি আছে। এবং দ্বিতীয়ত, যে ধর্মের শাস্ত্রে হিংসার উপাদান কিছু কম আছে সে ধর্মগোষ্ঠীর মানুষের আচরণে হিংসা কম থাকবেই --- এ প্রত্যাশার ভিত্তিটাও বোধহয় খুব পোক্ত নয়।
     
    হিংস্রতার বর্ণনা ও তার নৈতিক সমর্থন হিন্দু শাস্ত্রগুলোতে কোরানের চেয়ে কিছু কম নেই। কম নেই বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টেও, যদিও, হয়ত বা সত্যিই কিছু কম আছে নিউ টেস্টামেন্টে।  আবার, শাস্ত্রগ্রন্থে হিংস্রতার বর্ণনা কম থাকলেই যে ধার্মিকেরা কিছু কম হিংস্র হবেন, এমন নিশ্চয়তাও পাওয়া কঠিন। যুদ্ধলিপ্সা, হত্যা এবং হিংস্রতায় যিনি প্রবাদপ্রতিম, সেই চেঙ্গিস খান কিন্তু মোটেই মুসলমান ছিলেন না, 'খান' পদবী দেখে যা-ই মনে হোক।  খ্রিস্টানরা ষোড়শ-সপ্তদশ শতক জুড়ে আমেরিকাতে স্থানীয় অধিবাসীদের বিরুদ্ধে যেভাবে হত্যালীলা চালিয়েছে নিউ টেস্টামেন্টের যাবতীয় ক্ষমার বাণী সত্ত্বেও, তা ইতিহাসে বিরল। মধ্যযুগের শেষে এবং আধুনিক যুগের গোড়ায় 'ক্ষমাশীল' খ্রিস্টানদের ডাইনি পোড়ানোর হিড়িক দেখে আতঙ্কে শিউরে ওঠেন না, এমন কেউই কি আছেন এ যুগে? 'ইসলামিক স্টেট' তার ঘোষিত 'বিধর্মীদের' হত্যা করে হত্যার উদ্দেশ্যেই, বা প্রতিশোধের উদ্দেশ্যে, এবং সেটা সারা জগতের লোককে ডেকে দেখানোর জন্যেও বটে। দেখ হে, আমরা কত ভয়ঙ্কর, কত বড় বীর, এই রকম একটা ভাব। কিন্তু মধ্যযুগের খ্রিস্টানরা ডাইনি মারত ভয়ঙ্কর যন্ত্রণা দিয়ে, এবং যন্ত্রণা দেওয়াটাই সেখানে মূল উদ্দেশ্য, যাতে অকথ্য অত্যাচার করে তার মুখ থেকে অন্য আরেক ‘ডাইনি’-র নাম বার করে আনা যায়। এই কাজটির জন্য তারা বিচিত্র ও বীভৎস সব কলা-কৌশল ও যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করেছিল। কাজেই, বিশেষ একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর ধর্মান্ধতা ও ধর্মীয় হিংস্রতার সঙ্গে তার শাস্ত্রীয় অনুমোদনের একটা সহজ সরল সম্পর্ক ধরে নেওয়াটা বোধহয় সব সময় খুব নিরাপদ নয়।

    মুসলমানদের হিংস্রতার মতই আরেকটি বাজে গল্প আছে মুসলমানদের জনসংখ্যাবৃদ্ধি নিয়ে। মুসলমানদের হুহু করে বংশবৃদ্ধি হচ্ছে, এবং দ্রুত তারা হিন্দুদেরকে ছাপিয়ে গিয়ে গোটা দেশটাকে দখল করে ফেলবে, এই মিথ্যে আতঙ্কটা হচ্ছে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির প্রচারের অন্যতম প্রধান বিষয়বস্তু, বহু মানুষই যা সরলমনে বিশ্বাস করেন। এখানে বলে নেওয়া দরকার, মুসলিম জনসংখ্যা যে বাড়ছে এবং তার হার যে হিন্দুদের চেয়ে এখন পর্যন্ত কিছু বেশিই বটে, এটা কিন্তু মিথ্যে নয়। মিথ্যে হল এই প্রচারটা যে, এইভাবে বাড়তে বাড়তে হিন্দুদের চেয়ে তাদের সংখ্যা নাকি বেশি হয়ে যাবে, এবং তারাই দেশটাকে গ্রাস করে ফেলবে। আসলে ঘটনা হল, সব ধর্মের জনসংখ্যাই বাড়ছে, এবং সংখ্যালঘুদের জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার সব দেশেই সংখ্যাগুরুদের চেয়ে সামান্য একটু বেশি হয়, যদি সেখানে সংখ্যালঘু নিধন না চলে, এবং বিশেষত যদি সে সংখ্যালঘুরা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া হয়। জনসংখ্যাবৃদ্ধির আসল যোগটা ধর্মের সঙ্গে নয়, অর্থনীতির সঙ্গে। হিন্দু জনগোষ্ঠীর মধ্যেও গরিবদের জনসংখ্যাবৃদ্ধি যদি আলাদা করে হিসেব করা হয় তো দেখা যাবে যে তা সচ্ছল হিন্দুদের চেয়ে অনেক বেশি। সম্পন্নরা ভাল রোজগার করতে চায়, ভালভাবে থাকতে চায়, এবং সন্তানের জীবনযাপনও যাতে সে রকমই হয়, সে ব্যবস্থা করতে চায়। তারা জানে যে সেটা করতে গেলে সন্তানকে উচ্চমানের শিক্ষাদীক্ষা দেওয়া দরকার, তার পেছনে ভাল করে যত্ন ও খরচাপাতি করা দরকার, এবং সেটা করার ক্ষমতাও তাদের আছে। ছেলেপুলে বেশি হলে তা সম্ভব নয়, এবং তাতে করে বাচ্চার মায়ের স্বাস্থ্যের বারোটা বাজবে, মা ঘরের বাইরে গিয়ে পেশাগত কাজকর্ম করে অর্থ উপার্জনও করতে পারবে না। ফলে, তারা বেশি সন্তান একদমই চায় না। উল্টোদিকে, গরিবরা এত কথা জানেও না আর তাদের সে ক্ষমতাও নেই। ফলে তারা যত বেশি সম্ভব সন্তান চায়, সেটা মায়ের স্বাস্থ্যহানি ও মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে হলেও। গরিবরা জানে তাদের সন্তান দুধেভাতে থাকবে না, এবং শেষপর্যন্ত কোনও শ্রমসাধ্য কাজেই যোগ দেবে যাতে শিক্ষা বা 'স্কিল' সেভাবে লাগে না। ফলে, সন্তানের সংখ্যা বেশি হলে দুরবস্থা আর অযত্নের মধ্যেও হয়ত রোগভোগ মৃত্যু এড়িয়ে কেউ কেউ টিঁকে যাবে, আর পরিশ্রম করে পরিবারের আয় বাড়াতে পারবে, যৎসামান্য হলেও। অথচ এদেরই যখন অর্থনৈতিক উন্নতি হবে, তখন এরা মেয়েদেরকে পড়াশোনা শেখাতে চাইবে, ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে সন্তানকে কেরানি-আমলা-ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-উকিল এইসব বানাতে চাইবে, ফলে স্বল্পসংখ্যক সন্তান চাইবে, এবং মায়ের জীবন ও স্বাস্থ্যকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করবে। একটু ভাল করে খোঁজখবর করলেই জানা যাবে, অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ঘটছে কিন্তু আসলে ঠিক তাইই, হিন্দু ও মুসলমান উভয়ের ক্ষেত্রেই। এবং, মুসলমানরা পিছিয়ে আছে বলেই তাদের অগ্রগতিও দ্রুততর। তাদের জন্মহারের বৃদ্ধি কমছে কিছু বেশি দ্রুতলয়ে। এভাবে চললে আর দেড় দুই দশক পরেই হয়ত হিন্দু-মুসলমানের জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার সমান হয়ে যাবে, এবং মুসলমানদের ভারত দখলের কুৎসিত অশিক্ষিত গল্পতেও তখন আর কেউই পাত্তা দেবে না। ইতিহাসের স্বাভাবিক গতি এই দিকেই।
     
    এখানে 'অগ্রগতি' বলতে জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার কমিয়ে আনার কথা বুঝিয়েছি। মুসলমানদের ক্ষেত্রে এই কমিয়ে আনাটা হিন্দুদের চেয়ে বেশি হারে ঘটছে (বৃদ্ধির হার কমে যাওয়া মানে জনসংখ্যা কমে যাওয়া নয় কিন্তু, এ হার কমতে কমতে শূন্যের নিচে নামলে তবেই জনসংখ্যা কমতে শুরু করবে)। এই কমে আসাটা উন্নয়নের পরোক্ষ সূচক। এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিন বাদে যে হিন্দু-মুসলমানের জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার সমান হয়ে যাবে তাতে সন্দেহ নেই।  পিছিয়ে আছে বলেই অগ্রগতি বেশি তাড়াতাড়ি হচ্ছে --- এ কথাটা হয়ত অনেককে বিস্মিত করতে পারে, কিন্তু কথাটা বলার কারণ আছে। নিশ্চয়ই জানেন, ভারত চিন ব্রাজিলের মত একটু এগিয়ে থাকা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ইউরোপ আমেরিকার উন্নত দেশগুলোর থেকে বেশি। এর কারণ হচ্ছে, একবার উন্নত হয়ে গেলে একই গতিতে আরও আরও উন্নত হতে থাকাটা ক্রমশই আরও বেশি বেশি করে কঠিন হয়ে ওঠে, তাই উন্নয়নের প্রথম দিকে বৃদ্ধির যে গতি থাকে পরের দিকে আর তত গতি থাকে না। মুসলমানদের জনসংখ্যার ক্ষেত্রেও তাইই ঘটছে, এবং আরও ঘটবে (ও দুটোকে খুব নিখুঁতভাবে মেলানোর দরকার নেই, যদিও)।

    আমরা যারা এই বিষয়গুলোকে এইভাবে ভাবার চেষ্টা করি, তাদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আসে প্রায়শই, ফেসবুকে সে গর্জন রোজই শোনা যায়। এখন, এটা তো সত্যি কথাই যে, পশ্চিমবাংলার যুক্তিবাদীদের লেখালিখিতে, এবং যথারীতি আমার নিজের লেখাতেও, হিন্দু মৌলবাদের সমালোচনাই বেশি আসে, মুসলমান মৌলবাদের কথা বাস্তবিকই আসে অনেক কম। ঠিক এই অভিযোগটি সেক্যুলারদের প্রতি হিন্দু মৌলবাদীরা করে থাকেন নিয়মিতই (বস্তুত, প্রত্যেক ধর্মের মৌলবাদীরাই তাদের নিজস্ব গোষ্ঠী বা সমাজের সেক্যুলারদের প্রতি এই একই অভিযোগ করে থাকে)। কিন্তু একটু ভাবলে বুঝবেন, এটাই প্রত্যাশিত ও স্বাভাবিক। এবং, অন্যরকম কিছু হলেই বরং অত্যন্ত অস্বাভাবিক ও অসঙ্গত হত, এমন কি অন্যায়ও হত। কেন, তার একাধিক কারণ আছে। প্রথমত, এ দেশের রাষ্ট্র ও সমাজ যে মৌলবাদী হুমকিটির মুখোমুখি, সেটা তো হিন্দু মৌলবাদই, অন্য কোনও মৌলবাদ নয়। শিক্ষা-প্রশাসন-বিচারব্যবস্থার ধর্মীয়করণ, সংবিধানকে পাল্টে দেবার পরিকল্পনা, ভিন-ধর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন, ধর্মের জিগির তুলে তার আড়ালে সরকারি সম্পত্তি পাচার --- এ সব তো মুসলমানরা করছে না, হিন্দুত্ববাদীরাই করছে। অতএব, তাদের মুখোশ খোলাটাই এখানে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক। মুসলমান জঙ্গিরা নাশকতা ঘটালে তার মোকাবিলার জন্য পুলিশ-মিলিটারি আছে, কিন্তু নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসা মৌলবাদীদের রোখবার দায়িত্ব তো আর পুলিশ-মিলিটারি নেবে না, সেটা সাধারণ ভারতীয় নাগরিকের কাজ। আমি যে দেশে এবং যে ধর্মীয় সমাজের মধ্যে বাস করি, সেখানে যারা অন্ধত্ব ও হিংস্রতা ছড়াচ্ছে, ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রকে বিনাশ করছে, তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোটাই তো আমার পক্ষে স্বাভাবিক, তাই না? বাংলাদেশি মুক্তমনারা যদি মুসলমান ধর্ম ছেড়ে হিন্দুদেরকে গালি দিতে থাকতেন, বা বার্ট্র্যান্ড রাসেল যদি 'হোয়াই আই অ্যাম নট আ ক্রিশ্চান' না লিখে 'হোয়াই আই অ্যাম নট আ হিন্দু' লিখে বসতেন, তাহলে যেমন উদ্ভট অসঙ্গত কাজ হত, এখানে আমরা হিন্দু ধর্ম ছেড়ে মুসলমান নিয়ে পড়লেও ঠিকই একই ব্যাপার হবে (যদিও বাংলাদেশি মুক্তমনারা ঠিক যা বলেন এবং যেভাবে বলেন, তার অনেক কিছুর সঙ্গেই আমার দ্বিমত আছে, তবে সেটা এখানে প্রাসঙ্গিক না)। দ্বিতীয়ত, আমরা পশ্চিমবঙ্গের বেশির ভাগ মুক্তমনা যুক্তিবাদী নাস্তিকেরা হিন্দু সমাজে জন্মেছি বলেই সে সমাজ ও তার ধর্ম শাস্ত্র রীতিনীতি আচার বিচার এইসব অনেক বেশি জানি, ফলে সে ব্যাপারে আমাদের সমালোচনা অনেক বেশি নিরেট, নির্ভুল এবং অর্থবহ হয়, যা ভিনধর্মী সমাজে যারা জন্মেছে তারা পারবেনা। ঠিক একই কারণে, মুসলমান সমাজ ও ধর্ম সম্পর্কে মুসলমান সমাজে জন্মানো যুক্তিবাদীদের সমালোচনা অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য ও ফলপ্রসূ হয়। যদিও, এর মানে মোটেই এই নয় যে এক ধর্মে জন্মানো লোক অন্য ধর্মের সমালোচনা করতেই পারবেনা --- যে কোনও মানুষের যে কোনও ধর্মের সমালোচনা করার অধিকার আছে, এবং করা উচিত। তবে কিনা, নিজের সমাজের অন্ধত্ব অযুক্তি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথমে সোচ্চার হওয়াটা যে কোনও মানুষেরই ‘স্বাভাবিক’ অধিকার, কর্তব্যও বটে।
     
    আচ্ছা, তা সে যা-ই হোক, মোদ্দা কথাটা তাহলে কী দাঁড়াল --- মুসলমানেরা ধর্মান্ধতায় অন্যদের চেয়ে এগিয়ে, না পিছিয়ে? এসব ঠিকঠাক বলতে গেলে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে পৃথিবীজোড়া সমীক্ষার নির্ভরযোগ্য ফলাফল চাই, না হলে সবটাই চায়ের দোকানের আড্ডা হয়ে যাবে। আপাতত আছে কি সে সব, আমাদের হাতে? সুখের বিষয়, সে সব আছে। এই কিছুদিন মাত্র আগেও সেভাবে ছিল না, কিন্তু এই একুশ শতকে বেশ ভালভাবেই আছে। বেশ কয়েকটি বিখ্যাত সংস্থা এখন মানুষের জীবনের নানা দিক নিয়ে প্রামাণ্য সমীক্ষা করে থাকে, তার মধ্যে ধর্মবিশ্বাসও পড়ে। এইসব সমীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে বড় বড় বিশেষজ্ঞরা নানা গভীর গবেষণাও করে থাকেন, এবং তাতে তেমন চমকপ্রদ কোনও ফলাফল পাওয়া গেলে সারা পৃথিবীর গণমাধ্যমে সে নিয়ে আলোড়ন উঠে যায়। এই রকমই একটি সংস্থা হল ‘উইন গ্যালাপ’। তারা সারা পৃথিবী জুড়ে মানুষের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে এক বিখ্যাত সমীক্ষা চালিয়েছিল ২০১২ সালে, তাতে বিভিন্ন ধর্মগোষ্ঠীর মধ্যে ধর্মবিশ্বাসের প্রাবল্য, ধর্মবিশ্বাস ছেড়ে বেরিয়ে আসা মানুষের সংখ্যা, এইসবের হিসেব ছিল। তাতে কি দেখা গেল? নিচে দেখে নিন ২০১২ সালের পৃথিবীজোড়া সমীক্ষার ফলাফল, সুন্দর করে সারণিতে সাজানো। এখানে পরিষ্কারভাবেই দেখা যাচ্ছে, নিজেকে বিশ্বাসী বলে দাবি করেন অথচ ধার্মিক বলে দাবি করেন না --- এমন মানুষের অনুপাত মুসলমানদের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি। কারা কবে সমীক্ষাটি করেছে, এবং তা কোন নথিতে প্রকাশিত, সব তথ্যই পাবেন এখানে।
     
     
    এবার একটি ইসলামীয় দেশকে নিয়ে ভাবা যাক, যেখানে প্রায় সর্বাত্মক মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং ইসলামীয় রাষ্ট্র আছে। ধরুন, ইরান। এই  দেশটা সম্পর্কে আপনি কী জানেন? জানি, এ প্রশ্নের উত্তরে প্রায় সকলেই একই কথা বলবেন। ছিয়ানব্বই দশমিক পাঁচ শতাংশ (সরকারি সেন্সাসের তথ্য অনুযায়ী) মুসলমান অধ্যুষিত একটি ধর্মান্ধ দেশ, যার মধ্যে আবার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা শিয়া মুসলমানদের। কট্টর মৌলবাদীরা সেখানে দেশ চালায়, প্রশ্ন করলেই কোতল হতে হয়, মুক্তচিন্তা কল্পনাতীত। সম্প্রতি সেখানে হুলুস্থুলু ঘটে গিয়েছে, সে সব খবরাখবর আপনারা দেখেছেন। একটি মেয়েকে ইসলাম-সম্মত পোশাক না পরার অপরাধে সেখানে হত্যা করা হয়েছে, তাই নিয়ে প্রবল আন্দোলন হলে রাষ্ট্রের তরফে নেমে এসেছে দমন-পীড়ন, এবং সদ্য-সমাপ্ত ফুটবল বিশ্বকাপে সারা পৃথিবীর সামনে তার প্রতিবাদ করায় সে দেশের জাতীয় দলের এক খেলোয়াড়কে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। এখানে মৌলবাদের দাপটের ছবিটা একদমই স্পষ্ট, আবার গণমানুষের আপত্তিটাও খুব আবছা নয়।

    আসলে, এখানে ধর্মীয় রাষ্ট্রের দোর্দণ্ডপ্রতাপের তলাতেই লুকিয়ে আছে অন্য এক বাস্তবতা। নেদারল্যান্ডের একটি গবেষণা সংস্থা (GAMAAN), ইরানই যাদের অনুসন্ধানের বিষয়বস্তু, তারা ২০২০ সালে  ইরানে সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে। সে সমীক্ষার ফলাফল যদি বিশ্বাস করতে হয়, তো সেখানে সাঁইত্রিশ শতাংশ মত লোক নিজেদের মুসলমান বলে দাবি করেন (শিয়া-সুন্নি মিলিয়ে), যাঁরা কোনও ধর্মীয় পরিচয় দিতে রাজি নন তাঁরা বাইশ শতাংশ, যাঁরা পরিষ্কারভাবে নিজেকে নাস্তিক-অজ্ঞাবাদী-মানবতাবাদী এইসব বলে পরিচয় দেন তাঁরা সব মিলিয়ে প্রায় সতেরো শতাংশ, যাঁরা নিজেকে শুধুই 'স্পিরিচুয়াল' বলেন তাঁরা প্রায় সাত শতাংশ, এবং বাকিরা আরও নানা বিচিত্র ধর্মের মানুষ। নিচের ছবি দুটোয় সমীক্ষার ফলাফল এক নজরে পাওয়া যাবে। হ্যাঁ বন্ধু, একুশ শতকে পৃথিবী বদলাচ্ছে, এবং হয়ত বিশ শতকের চেয়েও দ্রুত গতিতে! এবং, ইসলামীয় দেশগুলো কোনওভাবেই এ প্রবণতার বাইরে নয়। নিচে সে সমীক্ষার ফলাফল দেখুন, চিত্রাকারে।
     
     
    ধর্ম, ঈশ্বর, স্বর্গ, নরক, মৃত্যু-পরবর্তী জীবন, অবতার ইত্যাদি ধ্যানধারণা বিষয়ে ইরান-বাসীদের বিশ্বাস (বা অবিশ্বাস) ঠিক কী রকম, সে চিত্রও উঠে এসেছে সমীক্ষা থেকে। নিচে দেখুন।
     
     
     
    তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, মুসলমানদের ধর্মপ্রীতি নিয়ে আমাদের অধিকাংশের মধ্যে যেসব জনপ্রিয় ধ্যানধারণা আছে, তার সমর্থন এইসব সমীক্ষার ফলাফল থেকে মিলছে না মোটেই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যে ইঙ্গিত এখান থেকে আমরা পাচ্ছি, সেটা সামগ্রিক বৈশ্বিক প্রবণতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, নাকি একটা সম্পূর্ণ আলাদা উল্টোপাল্টা কিছু। সেটা বুঝতে গেলে বর্তমান শতকের বিগত কয়েকটি দশকে গোটা পৃথিবীর ধর্মবিশ্বাসের গতিপ্রকৃতি এক নজরে দেখে নেওয়া দরকার। এমনিতে সেটা একটু মুশকিল, কারণ, তার জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংস্থার করা অনেকগুলো সমীক্ষা-কর্ম খুঁটিয়ে দেখে সেগুলোর প্রাসঙ্গিক ফলাফলটুকু বেছে নিয়ে তুলনা করতে হবে। সেইজন্যে, আমি যতটা পেরেছি সেগুলোকে সাজিয়ে একটা মাত্র সারণিতে নিয়ে এসেছি, তাতে পাঠিকের কিছু সুবিধে হবার কথা। সেটা নিচে দিলাম, দেখুন। সারণির কোন সংখ্যাটি কোন সংস্থার করা কবেকার সমীক্ষায় পাওয়া গেছে, সেটা ওখানেই দেওয়া আছে। প্রথম সংখ্যাটি অবশ্য কোনও সংস্থার তরফে দেওয়া নয়। এটি দিয়েছিলেন সমাজতত্ত্ববিদ ফিলিপ জুকারম্যান, তখন পর্যন্ত প্রাপ্য সমস্ত টুকরো টুকরো সমীক্ষার ফলাফল এক জায়গায় করে।
     
     
     
     
    এবার নিশ্চয়ই বোঝা যাচ্ছে, মুসলমানদের ধর্মবিশ্বাসের গতিপ্রকৃতি অন্য ধর্মাবলম্বীদের থেকে খুব বেশি আলাদা নয়। আসলে, এই একুশ শতকে দাঁড়িয়ে, সব ধর্মগোষ্ঠীর মধ্যেই ধর্মবিশ্বাস ছেড়ে বেরিয়ে আসার যে প্রবণতা রয়েছে, মুসলমানরা কোনও মতেই সে প্রবণতার বাইরে নয় (অবশ্যই, এ হিসেব সামগ্রিক ও বৈশ্বিক, এবং অঞ্চল ও অন্যান্য পরিস্থিতি-ভেদে মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য আছে)।

    কেন এই জগৎজোড়া প্রবণতা? আমাদের স্বাভাবিক বুদ্ধি বলবে, সবই যুগের হাওয়া। মানে, বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং গণতন্ত্র-মানবতাবাদ-যুক্তিবাদ এইসবের প্রভাবই এর কারণ। কথাটা সত্যি, কিন্তু সমাজবিদেরা এর চেয়েও বড় কারণ আবিষ্কার করেছেন। তাঁরা আজ সুপ্রচুর তথ্য-যুক্তি দিয়ে দেখিয়েছেন, মানব সমাজের উন্নতির সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক বিপ্রতীপ। দেশের মাথাপিছু আয় বাড়লে, সমাজকল্যাণে সরকার বেশি বেশি খরচা করলে, অর্থনৈতিক অসাম্য কমলে এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের হাল ভাল হলে ধর্মের রমরমা কমতে থাকে (এখানে আর বিস্তারে যাব না, যদিও আগে এ নিয়ে আলোচনা করেছি এবং পরেও করব)। সমাজ-বিকাশের এই সাধারণ নিয়ম মুসলমান সমাজের ওপরে প্রযোজ্য হবে না, এমনটা  ভেবে নেওয়ার কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। ইরানে যা ঘটছে, সেটা সমাজ-বিকাশের এই সাধারণ নিয়মের চাপেই। নেটে একটু খোঁজাখুঁজি করলেই দেখতে পাবেন, ইরানের মাথাপিছু উৎপাদন ভারতের প্রায় আটগুণ, বাজেটের শতাংশ হিসেবে স্বাস্থ্যখাতে সরকারি খরচ প্রায় সাতগুণ এবং শিক্ষাখাতে তা দেড়গুণেরও বেশি, এবং নারী ও পুরুষ উভয়েরই আয়ু আমাদের থেকে ভাল (গণতন্ত্র আর মানবাধিকারের দশা শোচনীয়, যদিও)। কাজেই, ইরানে মৌলবাদী রাজনীতি ও প্রশাসনের ওপর কেন গণ-অসন্তোষের চাপ আছে এবং পাকিস্তান আর আফগানিস্তানে কেন তা ততটা নেই --- এইটা বুঝতে পারা খুব কঠিন না।

    বলা প্রয়োজন, সমাজ-বিকাশজাত এই চাপের খেলা সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান উন্নত পশ্চিমী দেশগুলোতেও, বিশেষত এই একুশ শতকে। এই সেদিন পর্যন্ত আমেরিকা আর আয়ার্ল্যান্ডে ধর্মবিশ্বাসের প্রাবল্য ছিল অন্যান্য উন্নত দেশের চেয়ে অনেক বেশি। ধার্মিক সমাজবিদেরা তাই দেখিয়ে বলতেন, অর্থনৈতিক উন্নতি হলেই ধর্মের রমরমা কমবে, এটা হচ্ছে গিয়ে প্রগতিবাদীদের বানানো একটা মিথ্যে কথা। কিন্তু সময় যতই গড়াচ্ছে ততই বিষয়টা জলের মত স্বচ্ছ হয়ে আসছে, এবং আপত্তি তোলবার পরিসর হয়ে আসছে অতিশয় সঙ্কুচিত। মার্কিন সমাজে ধর্মবিশ্বাসের পরিবর্তনটা দেখতে পাবেন এক নজরেই, নিচের লেখচিত্রে। লক্ষ করে দেখুন, ১৯৫০ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত আমেরিকাতে যখন খ্রিস্টানরা এসে ঠেকেছে ৮৫ শতাংশ থেকে ৬৯-এ, এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা যখন মোটের ওপর একই আছে, তখন ধর্মহীনদের শতকরা অনুপাত গিয়ে ঠেকেছে শূন্য থেকে একুশে (অন্য কিছু সমীক্ষায় এটি প্রায় তিরিশ বলে দেখানো হয়েছে, যদিও)।
     
     
     
    আর, এই শতকের প্রথম দশকে আয়ার্ল্যান্ড-বাসীর ধর্মবিশ্বাসে যা ঘটেছে, সেটা দেখে নিন নিচের সারণিতে। আয়ার্ল্যান্ড হল গোঁড়া ক্যাথোলিক অধ্যুষিত একটি দেশ। একটা উন্নত পশ্চিমী দেশের পক্ষে অবিশ্বাস্যভাবে, এই সেদিন পর্যন্তও এই দেশটিতে গর্ভপাত নিষিদ্ধ ছিল, এবং গর্ভপাতের দরকার পড়লে আইরিশ নারীদেরকে পার্শ্ববর্তী ব্রিটেনে গিয়ে হাজির হতে হত। তারপর উন্নত আধুনিক অর্থনীতির সঙ্গে রক্ষণশীল ধর্ম-সংস্কৃতির দীর্ঘ সংঘর্ষের ফলাফল তখনই সারা বিশ্বের নজরে এল, যখন দু হাজার আঠেরো সালে গর্ভপাত আইনসিদ্ধ হয়ে গেল (আয়ার্ল্যান্ড নিয়ে আমার আলাদা একটি লেখা ‘গুরুচণ্ডালি’-তে পাবেন)।
     
     
    বলা বাহুল্য, মোটের ওপর এই একই ঘটনা ঘটবার কথা মুসলমান-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতেও, এবং ঘটছেও তাইই। বেশ কয়েকটি ধর্ম-শাসিত রক্ষণশীল দেশে কমছে কঠোর ধর্মীয় বাধানিষেধ, বাড়ছে ধর্মহীনতা, এবং সাধারণ্যে কমছে ধর্মের প্রতি আনুগত্য, যদিও অনেক ক্ষেত্রেই তা  এখনও স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান নয়। বিষয়টাকে যদি খুঁটিয়ে নজর করা হয়, তাহলে এমন অনেক কিছুই হয়ত জানা যাবে, যে ব্যাপারে আমরা আগে সচেতন ছিলাম না। যেমন, ইরান-ইরাক-আফগানিস্তান যেভাবে ধর্মনিরপেক্ষ থেকে ধর্মীয় রাষ্ট্র হয়ে গেল, এবং যেভাবে তুর্কি দেশটিতে ক্রমেই শক্ত হচ্ছে মৌলবাদের মুঠি আর টলমল করছে ধর্মনিরপেক্ষতার আসন, সে নিয়ে আমরা প্রায়শই দুশ্চিন্তিত হই। ঠিকই করি। কিন্তু, আমরা কখনই খেয়াল করে দেখিনা যে, এই ধরাধামে একান্নটি মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মধ্যে একুশটিতে কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ সরকারই চলছে (সে ধর্মনিরপেক্ষতার দশা প্রায়শই আমাদের চেয়ে খুব একটা ভাল নয় যদিও, তবে সেটা তো অন্য চর্চা)। এবং, ধর্মনিরপেক্ষীকরণের প্রক্রিয়া এখনও চালু, সে তালিকায় এই সেদিনও যুক্ত হয়েছে সুদান।

    তবুও প্রশ্ন আসতেই পারে, এবং আসবেও, জানা কথা। ওপরে উদ্ধৃত আমার তরুণ বন্ধুর ভাষায়, সে প্রশ্নটা এ রকম --- “আর কোন ধর্মে আইসিস, তালিবান, বোকোহারামের মত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আছে?”। সত্যিই তো, প্রশ্ন হতেই পারে। ওপরে ব্যাখ্যা করেছি (এবং পূর্ববর্তী পর্বগুলোতেও), মৌলবাদী উত্থান সব ধর্মেই হয়েছে, শুধু ইসলামে নয়। এবং, জঙ্গি ক্রিয়াকলাপও কম বেশি হয়েছে সব ধর্মের তরফেই। সেই সত্যে ভর করে আমি হয়ত তর্ক করতে পারতাম, অন্যান্য ধর্মের মৌলবাদের সঙ্গে ইসলামের তফাতটা তাহলে গুণগত নয়, নিছকই পরিমাণগত। এরা কম, ওরা কিছু বেশি, এটুকুই মাত্র। কিন্তু, এ তর্ক শেষতক দাঁড়াবে না। পাথরের নুড়ির সঙ্গে পাথরের টিলার গুণগত পার্থক্যকে স্রেফ পরিমাণের দোহাই দিয়ে নস্যাৎ করাটা বোধহয় খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ইসলামীয় জঙ্গিপনার নিবিড়তা, ঘনত্ব, প্রচণ্ডতা এবং আন্তর্জাতিকতা, এ সবকে নিছক কম-বেশির ব্যাপার বলে উড়িয়ে দেওয়া অসম্ভব। যদি বলি, মধ্যপ্রাচ্যে একাধিক আধুনিক রাষ্ট্র থেকে খামচে নিয়ে একটা গোটা এবং আনকোরা নতুন ধর্মীয় রাষ্ট্র বানিয়ে তোলা, অনেকগুলো দেশে ধর্মনিরপেক্ষ সরকার উল্টে দিয়ে মৌলবাদী রাজত্ব কায়েম করা, প্রায় সবকটি মহাদেশে বড়সড় নাশকতা চালানোর মত সংগঠন তৈরি করতে পারা --- এত সব শুধুই জঙ্গিপনার কম-বেশির ব্যাপার, তার মধ্যে আলাদা করে বলার মত গুরুত্বপূর্ণ গুণগত বৈশিষ্ট্য কিছুই নেই --- তাহলে অবশ্যই বোকামি হবে, বাস্তবকে অস্বীকার করার বোকামি। কাজেই, জঙ্গিপনার এই ভয়ঙ্কর নিবিড়তা আর ব্যাপকতাকে ইসলামীয় মৌলবাদের একটি স্বতন্ত্র গুণগত বৈশিষ্ট্য বলে স্বীকার করে নেওয়াই ভাল। কিন্তু মুশকিলটা হচ্ছে, সেটা মেনে নিলেও আসল সমস্যাটা রয়েই যায়। সব মুসলমানই তো আর মৌলবাদী জঙ্গি নন, তার এক অতি ক্ষুদ্র অংশই কেবল মৌলবাদী জঙ্গি। কাজেই, এই জঙ্গিপনাকে ইসলামীয় মৌলবাদের একটি স্বতন্ত্র গুণগত বৈশিষ্ট্য বলে মেনে নিলেও প্রশ্ন থাকে, ‘ইসলাম’ নামক ধর্মটির কোনও মৌল উপাদান থেকেই কি এই বৈশিষ্ট্যটি উৎসারিত হচ্ছে, নাকি, মুসলমান অধ্যুষিত সমাজ তথা রাষ্ট্রগুলোর  কোনও বিশেষ ঐতিহাসিক পরিস্থিতিই এ বৈশিষ্ট্যের নির্মাতা?
     
    কেউ কেউ এ প্রশ্নের উত্তর খুব দ্রুত দিয়ে ফেলতে ভালবাসেন। তাঁরা বলেন, এ বৈশিষ্ট্য অবশ্যই ‘ইসলাম’ নামক ধর্মটিরই মৌল উপাদান থেকে নিঃসৃত, কারণ, ইসলামীয় ধর্মশাস্ত্রে হিংসার অনুমোদন আছে। এ যুক্তিটি যে ভুল, সে আলোচনা ওপরে করেছি। কিন্তু কথা হচ্ছে, এ প্রশ্নের উত্তর তবে কীভাবে খোঁজা যায়? আজকের দিনে বিজ্ঞানে, বিশেষত সমাজবিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে, এ ধরনের প্রশ্নের সমাধানের জন্য যা করা হয় তাকে বলে ‘কন্ট্রোল্‌ড্‌ এক্সপেরিমেন্ট’। সমাজের ওপর তো আর পরীক্ষা চলবে না, অতএব সেখানে দরকার ‘কন্ট্রোল্‌ড্‌ অবজার্ভেশন’ বা সুনিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণ। অর্থাৎ, পুরোপুরি একই রকম করে তৈরি (বা সংগ্রহ) করে রাখা দুটি ক্ষেত্রের মধ্যে একটিতে একটি সুনির্দিষ্ট নির্ধারক উপাদান যোগ করে (বা একটি সুনির্দিষ্ট নির্ধারক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে), এবং অপরটিতে তা না করে, শুধুমাত্র প্রথম ক্ষেত্রটিতে কোনও এক নির্দিষ্ট প্রত্যাশিত ফলাফল এলো কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা, যাতে ওই নির্দিষ্ট উপাদানটির (বা প্রক্রিয়াটির) সঙ্গে ওই ফলাফলটির কার্যকারণ সম্পর্ক সন্দেহাতীতভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায়। কোনও ওষুধের কার্যকারিতা প্রমাণের জন্য যেমন একই ধরনের দু দল রুগির মধ্যে একদলকে সে ওষুধ দিয়ে এবং অন্যদলকে তা না দিয়ে পরীক্ষা করা হয় যে দ্বিতীয় দলের তুলনায় প্রথম দলের কিছু বেশি উপকার হল কিনা, এও তেমনি। মনে করুন প্রশ্ন উঠল যে, মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামের যে মৌলবাদী উত্থান দেখা গেল, ইরাকের খনিজ তেল এবং আফগানিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থানগত সামরিক গুরুত্ব না থাকলেও কি তা ঘটতে পারত, শুধুমাত্র ইসলামীয় শাস্ত্র, সমাজ ও সংস্কৃতির একান্ত নিজস্ব আভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্যের কারণেই? এ প্রশ্নের বিজ্ঞানসম্মত ও বস্তুনিষ্ঠ উত্তর বেরিয়ে আসতে পারে একমাত্র সেই ধরনের পদ্ধতিতেই, অর্থাৎ, ‘কন্ট্রোল্‌ড্‌ অবজার্ভেশন’ বা সুনিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। যেখানে ইসলামের প্রবল প্রভাব আছে অথচ কোনও বড়সড় অর্থনৈতিক বা সামরিক লাভালাভের পরিস্থিতি নেই, সে রকম সমস্ত জায়গাতেও কি মৌলবাদী জঙ্গিপনার উদ্ভব ঘটেছে? আবার, যেখানে ওই ধরনের পরিস্থিতি আছে অথচ ইসলাম নেই, সে রকম কোনও জায়গাতেই কি জঙ্গি আন্দোলনের উদ্ভব ঘটেনি? এই ধরনের অনুসন্ধান হয়ত আমাদেরকে এ ধরনের প্রশ্নের বস্তুনিষ্ঠ উত্তরের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারত। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এ প্রসঙ্গে এ রকম গবেষণার কথা আমাদের জানা নেই।
     
    এই যে মুসলমান মৌলবাদের অস্তিত্বের কারণ হিসেবে ইসলামের আভ্যন্তরীণ কারণকে পুরোপুরিই দায়ী করা, ওপরের দুই অনুচ্ছেদে যার কথা বললাম, এর ঠিক উল্টো প্রবণতাটা হচ্ছে এর পেছনে ‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ’ (বা আরও সাধারণভাবে ‘পশ্চিমী চক্রান্ত’) বা ওই জাতীয় ইসলাম-বহির্ভূত কোনও কিছুকে পুরোপুরি দায়ী করা (এবং সেইহেতু ইসলামীয় সমাজ ও সংস্কৃতির আভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্যগুলোকে এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক বলে সাব্যস্ত করা)। মুসলিম মৌলবাদের উত্থানের পেছনে পাশ্চাত্য শক্তি, বিশেষত আমেরিকার ভুমিকা অবশ্যই অত্যন্ত গুরুত্বের সাথেই আলোচনা করা উচিত। কিন্তু, বিশ শতকের পৃথিবীর ইতিহাসের সমস্ত ঘটনাই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অঙ্গুলিহেলনে ঘটছে, চোখ বুজে এইটা বলে দিলে আপাতদৃষ্টিতে হয়ত তাকে নিন্দা করা হয়, কিন্তু আসলে শেষ বিচারে তার ক্ষমতাকে অনেকখানি বাড়িয়ে দেখা হয়। আমেরিকা (বা সাধারণভাবে ‘পশ্চিম’) মুসলমান দেশগুলোর আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল, শুধু এটুকু বললে প্রায় কিছুই বলা হয় না --- আসল প্রশ্ন হচ্ছে তারা তা পারল কী করে --- পৃথিবীর সব জায়গাতেই যে তারা যা চেয়েছে তাইই পেরেছে এমন তো আর নয়। মুসলমান সমাজ ও দেশগুলোর সুনির্দিষ্ট বিন্যাস ও ঐতিহাসিক পরিস্থিতি, বিকাশের সুনির্দিষ্ট অবস্থা, তাদের সামাজিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা, অন্তর্দ্বন্দ্ব, তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সংশ্লিষ্ট সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্তাদের তরফে নানা মতাদর্শ ও গোষ্ঠী-পরিচিতি নির্মাণের খেলা, এবং কখন ঠিক কোন তাড়নায় তারা কোন বৃহৎ শক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব বা শত্রুতার সম্পর্কে আবদ্ধ হচ্ছে, আর কোন বৃহৎ শক্তিই বা তাদেরকে সামলানো বা ব্যবহার করার জন্য ঠিক কী চাল চালছে --- এই সবের ভাল বিশ্লেষণ ছাড়া বিষয়টা ঠিকভাবে বোঝাই যাবে না। তাছাড়া, এই দেশগুলোতে 'সেক্যুলার' শাসন প্রতিষ্ঠিত হবার পরেও প্রায়শই শাসকরা স্বৈরাচারি এবং দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে কেন, এবং, কেনই বা মৌলবাদীরা বারবার তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জনগণের পাশে থাকার ভাণ করতে পারে, এটাও এ প্রসঙ্গে গভীরভাবে বোঝার বিষয়।  

    বলা বাহুল্য, এ সব প্রশ্নে যথার্থ ও যথেষ্ট বিশ্লেষণ এবং নিষ্পত্তিমূলক উত্তর এখনও আসেনি সমাজবিজ্ঞানীদের তরফ থেকে। যতদিন তা না আসে, ততদিন আমরা কী করতে পারি? ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে পারি, বিষয়টি সম্পর্কে ইতিমধ্যে যা জানা গেছে সে সব জানার চেষ্টা করতে পারি, যুক্তিসম্মত ও বস্তুনিষ্ঠ চিন্তার অভ্যাস করতে পারি …………… আর কিছু পারি কি?

    হ্যাঁ, পারি বোধহয়। মন থেকে অকারণ সন্দেহ ঘৃণা হিংসা বিদ্বেষ এইসব চিহ্নিত করে তা বর্জন করার অনুশীলনটা চালিয়ে যেতে পারি।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ | ৪৭৭০৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বিবিসি হাহাহা | 115.187.40.188 | ১৪ মে ২০২৩ ২২:২১519809
  • আর্টিকেল পড়ে হবে , "পরে " নয় 
  • | 146.196.33.172 | ১৪ মে ২০২৩ ২৩:০৬519812
  • বিবিসির লেখাটায় hobby gene এর ব্যাপারটা ঠিকই বলেছেন, একটা মোটা দাগের ধারণা দেওয়ার জন্য লিংক দিয়েছিলাম। তবে নির্লজ্জ্ব ভাটবাজি, কোন বিজ্ঞানী কি বলেছেন সেটা যথেচ্ছ তুলে দেওয়া, মুখে যা এল তাই বলা, এগুলো বোধহয় কোনটাই সচেতনভাবে করিনি, এবং ভুল বললে স্বীকার করতে আমার কোন আপত্তি নেই।
     
    বিরক্ত হয়ে মেজাজ হারানো এবং কড়া কথা বলা কিন্তু তর্কে বাধাই সৃষ্টি করে, ঠান্ডাভাবে ভুল ধরিয়ে দিলে স্বীকার করতে আপত্তি যখন নেই।
     
    আর আখোঁ র জাস্ট কৌতুহলটা আমারও , সেটার নিবৃত্তি কিন্তু হল না।
  • Guru | 2409:4060:a:b43c:3f4e:db88:c33f:9707 | ১৪ মে ২০২৩ ২৩:০৯519813
  • @আধুনিকতার খোঁজে                                                                             এই সময়ে একদম প্রাসঙ্গিক একটা লেখা . নাত্সি জার্মানির প্রোপাগান্ডা সঙ্গে তুলনাটাও একদম ঠিকঠাক . আপনার লেখাটি যে এতটা ভালো হয়েছে তার সবচেয়ে বড়ো কারণ হলো ​​​​​​​যে ​​​​​​​ভীষণ ​​​​​​​সময় ​​​​​​​নিয়ে ​​​​​​​অনেক ​​​​​​​রিসার্চ ​​​​​​​করে ​​​​​​​লিখেছেন . আরো ​​​​​​​ডিটেলস ​​​​​​​এ ​​​​​​​ফিডব্যাক ​​​​​​​কালকে ​​​​​​​দিচ্ছি ​​​​​​​. 
     
  • | 146.196.33.172 | ১৪ মে ২০২৩ ২৩:১৮519814
  • @বিবিসি হাহাহা
  • বিবিসি হাহাহা | 115.187.40.188 | ১৪ মে ২০২৩ ২৩:৩৯519816
  • @উ 
    আমি দুঃখিত। 
    তবে নির্লজ্জ্ব ভাটবাজি, কোন বিজ্ঞানী কি বলেছেন সেটা যথেচ্ছ তুলে দেওয়া, মুখে যা এল তাই বলা, এগুলো বোধহয় কোনটাই সচেতনভাবে করিনি,
    এগুলো কোনটাই আপনি করছেন , এমনটা বলতে চাইনি। একদল বাজারি বিজ্ঞানব্যবসায়ী এগুলো করে চলেছেন ঝাঁঝটা পুরোটাই তাদের উদ্দেশ্যে , আপনার উদ্দেশ্যে একেবারেই নয়। অভিযোগগুলো সবই তাদের উদ্দেশ্যে করেছি। আমার বলার ভঙ্গিতে ভুল ছিল তাই আপনি ট্রিগার্ড হয়ে থাকলে আমি দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী। 
  • &/ | 151.141.85.8 | ১৪ মে ২০২৩ ২৩:৪৯519817
  • গণপরিসরে ক্লিকবেইটের উৎপাত এত বেড়েছে যে বলার নয়। বিজ্ঞানের বিষয় নিয়ে হোক, সাহিত্যের কিছু হোক, এমনি সামাজিক বা রাজনৈতিক বা অন্য বিষয়ে হোক-ক্লিকবেইটে ক্লিকবেইটে দুনিয়া একাকার। এগুলোর ভিতর থেকে কাঁটা বেছে দরকারি জিনিস বের করা ক্রমশই কঠিন হচ্ছে।
  • &/ | 151.141.85.8 | ১৫ মে ২০২৩ ০১:২৩519820
  • কোয়ান্টাম ফিজিক্স দিয়ে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করেছে নাকি? কী সাংঘাতিক!!!!! কোথায়?
    আর এই পথিকবাবু! ইনি বিশ-পঁচিশ বচ্ছর কি তারও বেশিকাল ধরে আহা কোপারনিকাস আহা তিনি আমাদের জন্য কী বিলাপগাথাই না শোনালেন, আমাদের পৃথিবী নাকি একটা নগণ্য গ্রহ আর আমরা তার উপরে ঘুরে বেড়াই, হায় গো--এই করে যাচ্ছেন। প্রায় প্রত্যেকটা আর্টিকেলে সে টুরিং নিয়েই হোক, হাবল টেলিস্কোপ নিয়েই হোক, জেনেটিক্স নিয়েই হোক, এল এইচ সি নিয়েই হোক, হিগস বোসন নিয়েই হোক, রিমান হাইপোথিসিস নিয়েই হোক---সবেতেই শেষে গিয়ে কোপারনিকাসের বিলাপগাথা। কোপার্নিকাস স্বয়ং তিতিবিরক্ত হয়ে যেতেন শুনলে।
  • আধুনিকতার খোঁজে | 2402:3a80:1981:681a:178:5634:1232:5476 | ১৫ মে ২০২৩ ১৩:৩৬519827
  • গুরু 
    অনেক ধন্যবাদ। লেখাটা আরো ভালো করা যেত। কিন্ত একদিনে নোটিসে লিখতে হয়েছিল। যাই হোক লিখবার সময় আপনার কথা গুলো মনে পড়ছিলো. সেটা আমাকে খুব সাহায্য করেছে। ধন্যবাদ। 
  • guru | 115.187.51.111 | ১৫ মে ২০২৩ ১৬:০৬519828
  • @আধুনিকতার খোঁজে 
     
                                       আপনি লিখতে থাকুন আমাদের বর্তমান সমাজের এইসব সমস্যাগুলোর ব্যাপারে লিখতে আপনার মতো একজন সংবেদনশীল অনুসন্ধানীর খুবই প্রয়োজন | আমার নিজের এইসব নিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে বিশেষ করে ধরুন আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিষয়ে কিন্তু মুশকিল হচ্ছে গুরুতে প্রায় ২ মাস আগে আবেদন করেও কোনো লাভ হয়নি | গুরুর কতৃপক্ষ এখনো আমার ব্লগের লেখার আবেদন মঞ্জুর করেননি |
     
      পোস্ট কেরালা ফাইলস পরিস্থিতি নিয়ে আমার কিছু অবসেরভেশন আছে |
     
    ১ .  আরএসএস বা বিজেপি এধরণের ঘৃণার প্রচারক ছবি করে সাময়িক রাজনৈতিক ফায়দা তুললেও আসলে আমার মতে এই ঘৃণার রোগটির শিকড় আরো গভীরে | অনেক মানুষ আছেন যারা হয়তো বিজেপিকে ভোট দেননা কিন্তু তাদের মধ্যেও এই রোগটি খুবই বাড়ছে | আপনার লেখাটি আমার পরিচিত প্রাক্তন স্কুল বন্ধুদের হোয়াটসআপ গ্রুপের মধ্যে পাঠিয়েছিলাম গতকাল বললে বিশ্বাস করবেননা প্রায় সবাই দেখলাম এই সিনেমাটি দেখেছে ও মনে প্রাণে বিশ্বাস করে এই প্রোপাগান্ডা | সমাজের একটি বিশেষ স্তর মূলতঃ নিম্ন ও মধ্য বিত্তের মধ্যে এরোগ বেশ ভালোই ছড়িয়েছে ও ছড়াচ্ছে |
     
    ২ . সবসময়ে হয়তো বিজেপি ভোটে জেতেনা এসব প্রোপাগান্ডা করে যেমন দুদিন আগেই কর্নাটকে জেতেনি কিন্তু এধরণের সিনেমার সামাজিক রাজনৈতিক প্রভাব সুদূরপ্রসারী | কর্নাটকে কংগ্রেস গতবারের থেকে কম সংখ্যক মুসলিম প্রার্থীদের টিকিট দিয়েছিলো এবারে | যেদিন ভোটফল বেরুবে সেদিন প্রিয়াঙ্কা পুজো দিচ্ছিলেন হনুমান মন্দিরে | কাজেই বলাই যেতে পারে বিজেপি ভোটে হারলেও সিনেমাটির সামাজিক রাজনৈতিক প্রভাব সুদূরপ্রসারী | কংগ্রেস আদৌ vhp কে ব্যান করবেকিনা এব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ আছে |
  • আধুনিকতার খোঁজে | 42.110.136.183 | ১৫ মে ২০২৩ ১৮:১৯519829
  • গুরু 
    প্রিয়াঙ্কার পুজোটুকু বাদ দিলে কংগ্রেস খুব একটা সে পথে হাঁটেনি। ক্যাম্পেনে নরম হিন্দুত্বের ব্যাপারটাও ছিল না অতটা। রাহুলের ভারত জোড়ো একটা ভালো প্রভাব ফেলেছে আমার মনে হয়। যেটা খুবই সদর্থক। 
    আর আপনি ঠিকই বলেছেন যে ভেদাভেদএর শিকড় অনেক গভীরে। প্রোপাগান্ডা মাস লেভেলে একেই আর্টিকুলেট করে। এই শিকড় কী ভাবে ছড়িয়েছিল তার বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন। 
    আপনিও লিখুন। এ সব নিয়ে লেখা তো খুবই জরুরি। তবে গুরু কর্তৃপক্ষ হয়তো অনেক চিন্তা ভাবনা করেই লেখক নির্বাচন করেন। (আমিও লেখা পাঠিয়ে উত্তীর্ণ হতে পারিনি। :-)) আশা করি নিশ্চই আপনি এখানে লিখবেন। দেবাশিসবাবু বোধহয় এ ব্যাপারে পরামর্শ দিতে পারেন। 
  • guru | 115.187.51.111 | ১৬ মে ২০২৩ ১৬:০১519844
  • @আধুনিকতার খোঁজে 
     
     ১ . কয়েকটি ব্যাপার এখানে আমি বলতে চাইছি | দেখুন আমি আগেও বলেছি যে এদেশের রাষ্ট্রযন্ত্রের মূল লক্ষ্য এদেশে একটি উত্তর ভারত হিন্দী ভাষী কেন্দ্রীক একাধিপত্যের ও একীকরণের | আরএসএস বহু বছর ধরে এইখানে রাষ্ট্রযন্ত্রকে সহায়তা করে এসেছে যেহেতু এই জায়গাতে মোটামুটি আরএসএস বা কংগ্রেসের মূল লক্ষ্য একই অর্থাৎ হিন্দি কেন্দ্রিক একীকরণ | আপনি বলতেই পারেন যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সময়েও এইসব শুরু হয় | এখন দেখুন ১৯৮৪ সালের পরে এতো বৃহৎ ও বিচিত্র জনগোষ্ঠীকে শুধু কংগ্রেসের মতো একটি ডাইনেস্টির আড়ালে শাসন করা অসম্ভব ছিল তাই রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রয়োজন ছিল একটি শত্রুর | ১৯৮৪ সালের পরে অল্প কয়েকটি বছর টার্গেট ছিল শিখ কৌম | তার পরে রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রয়োজন হয় আরো দীর্ঘমেয়াদী একটি শত্রুর | তখনি আসরে এলেন আদবানি তার রাম রথযাত্রা নিয়ে | বাকিটা ইতিহাস | এখনো মোটামুটি এই ফর্মুলাই চলছে | বর্তমানেও আমরা দেখছি সফল হচ্ছে এই একীকরণের পলিসি যেহেতু  এখন কর্পোরেটেরা এই ব্যাপারটিকে সমর্থন করছে |
     
    ২ . কর্নাটকে এবং অন্যান্য জায়গাতেও আরএসএস একটি বিশেষ ফর্মুলা নিয়ে কাজ করে | সরকারি সম্পদ বন্টন ও অন্যান্য জায়গাতে মুসলিমদের সংরক্ষণের অংশ কমিয়ে সেই জায়গাতে বেশী করে অন্য অনগ্রসর শ্রেণীকে তুলে আনা | এটি এমন একটি এজেন্ডা যেটি মোটামুটি সব অ মুসলিম অনগ্রসর শ্রেণী সমর্থন করে প্রায় সব রাজ্যে | এভাবেই সফল হয় মেরুকরণের এজেন্ডা | ভবিষ্যতে এসব অনগ্রসর শ্রেণীর মানুষদের কাজে লাগানো যায় দাঙ্গা ইত্যাদির সময়ে মুসলিম বা অন্যান্য সংখ্যালঘুর বিরুদ্ধে | এভাবেই ব্যবহার করা যায় মেরুকরণের এজেন্ডাতে এইসব অনগ্রসর মানুষের দারিদ্র ও পশ্চাদপরতাকে | এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রজেক্ট এবং খুব ভালোই কাজ করছে |
     
    ৩ . প্রোপাগান্ডা সিনেমার কথা আপনি উল্লেখ করেছেন , এখন তো পপ গানকেও এই ঘৃণার প্রোপাগান্ডার কাজে লাগানো হচ্ছে |  
     
     
    ৪ . সবচেয়ে বড়ো কথা হচ্ছে শহুরে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত এধরণের প্রোপাগান্ডা এখন শুধু বিশ্বাস করে তাই নয় নিজেরা এইধরণের মনোভাব ছড়াতে হোয়াটস্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে বেশ ভালো ভাবে কাজ করে | এখন তো বিদেশেও এধরণের প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে আরএসএস এর মাধ্যমে নিজস্ব বিদেশী শাখা থেকে |
     
    শেষে বলতেই হচ্ছে কর্নাটকে ভোটের ফল যাইহোক না কেন কংগ্রেসের সামনে দুটো বড়ো চ্যালেঞ্জ | VHP ব্যান এর প্রতিশ্রুতিকে কাজে লাগানো ও মেরুকরণ বন্ধ করা | এই দুটি যথেষ্ট কঠিন কাজ |
     
  • guru | 115.187.51.111 | ১৬ মে ২০২৩ ১৬:৩০519845
  • @&/
     
           আপনি হাতিদের নিয়ে যে প্রবন্ধটি দেখিয়েছেন সেটি অসাধারণ | অনেক নতুন কিছু শেখা গেলো | এখন কথা হচ্ছে এইধরণের সেলফ ডোমেস্টিকেশন শুধু হাতি বা দুএকটি বানর প্রজাতি শুধু কেন ভাবলো ? বাঘরা কেন এরকম ভাবলোনা ? আচ্ছা বাঘরা কি সামাজিক জীব ? যদি না হয় কেন ? মানবজাতির পক্ষে কি সেটাই ভালো হয়েছে যে বাঘেরা সমাজবদ্ধ নয় ?
  • আধুনিকতার খোঁজে | 113.21.77.34 | ১৬ মে ২০২৩ ২২:৪৯519849
  • গুরু 
    আপনার প্রতিটি অবজারভেশন যথাযথ। ২ নং এর ব্যাপারটা নিয়ে যদি প্রবন্ধাকারে বিস্তারিত লেখেন তো খুব ভালো হয়। 
    আর একটা জিনিস আপনার থেকে জানার ছিল। মানে আপনি যখন জিওপলিটিক্সের লোক। ইসলামোফোবিয়া নির্মাণে মোসাদের ভূমিকা। আপনি কী মনে করেন? 
  • @গুরু | 72.52.87.22 | ১৭ মে ২০২৩ ০৯:৪৫519851
  • আপনি তো জিওপলিটিক্সের লোক, তাই ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও কিছু লিখবেন দাদা। কি চলছে কিছুই বুঝতে পারছি না। আপনি কী মনে করেন?   
  • guru | 115.187.51.111 | ১৮ মে ২০২৩ ১৫:২১519874
  • @@গুরু 
                ইউক্রেইন্ যুদ্ধ বড়ো জটিল ব্যাপার দাদা | অনেকগুলো diverse পয়েন্টস আছে | সেসব নিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে কিন্তু ঘটনা হলো যে গুরু কতৃপক্ষ তো আমাকে অনুমতিই দেননি লেখবার | কি করি বলুন ?
     
               শুধু ইউক্রেইন্ কেন ঘরের পাশের পাকিস্তানের সাম্প্রতিক টালমাটাল পরিস্থিতি নিয়েও কিছু লেখবার ইচ্ছে ছিল কিন্তু ওই যে বললাম লিখবো কি করে ? একাধিকবার অনুরোধ করবার পরেও গুরু কতৃপক্ষ তো আমাকে অনুমতিই দেননি লেখবার |
                     
  • @গুরু | 72.52.87.47 | ১৮ মে ২০২৩ ১৮:৫৬519878
  • এইখানে লিখার জন্য কনো অনুমতির দরকার নাই। আপনি এতো লিখেছেন, কোন পার্মিশান লাগছে? আপনে হাত খুলে লিখুন দাদা। জিওপলিটিক্সের জটিল বিষয় সহজ করে বুঝায়ে দ্যান। এই টইতে ইউক্রেইন নিয়েও লিখুন আর পাকস্থান নিয়েও লিখুন। 
     
    সেদিন একজন আমারে কইল ইউক্রেইনেতে আসলেই কোন যুদ্ধ হতেছে না। মার্কিন সৈন্য গিয়ে বোমা ফেলতাসে আর ইউক্রেনবাসীদের মারতে আছে। মাঝখান দিয়া বদনাম হইতাছে পুতিন সায়েবের। তবে আমাগো পুতিন সায়েব সব নজর করতেছে, ঠিক সময়ে সবাইরে ঠান্ডা কইরা দিবো। আপনের কি মনে হয় দাদা? 
     
  • আধুনিকতার খোঁজে | 2402:3a80:1cd2:b613:378:5634:1232:5476 | ১৮ মে ২০২৩ ২২:২৯519893
  • @@গুরু
    আপনি যখন আম্রিগায় থাকেন তখন আপনার তো মার্কিন সৈন্যদের এক্টিভিটি নিয়ে জানার সুযোগ হাতেগরম অনেক বেশি। তাই না? গুরু বেচারা এঁদো বাংলা থেকে কি অত কিছুর হদিশ পাবে? আপনিও লিখুন দাদা বা দিদি। আমরা আম্রিগা থেকে হাতেগরম কিছু সাংঘাতিক খবর পাই। আপনি আর আপনার যে বন্ধুটি বোম ফেলার খবর দিলেন, দুজনে মিলেই শুরু করে দিন। 
     
  • আহা | 103.76.82.171 | ১৮ মে ২০২৩ ২২:৩৪519894
  • গুরু নিক-টি জাকির নায়েক কে নিয়ে লিখলেই আপাতত যথেষ্ট।
  • আধুনিকতার খোঁজে | 2402:3a80:1cd2:b3be:378:5634:1232:5476 | ১৮ মে ২০২৩ ২৩:১৯519896
  • আহা গুরু নাহয় জাকির নায়েকেরটা লিখলেন, আপনিও স্বাধ্বী প্রজ্ঞাকে নিয়ে নামিয়ে দিন। এদিকটায় বঞ্চিত করবেন না। 
  • @guru | 192.42.116.217 | ১৮ মে ২০২৩ ২৩:৩০519897
  • গুরুতে খেরোর খাতায় লিখতে অনুমতি লাগে না
  • হরিদাস পাল | 115.187.40.188 | ১৮ মে ২০২৩ ২৩:৫৯519900
  • @গুরু 
    আমি যতদূর জানি , গুরুতে "হরিদাস পাল " অংশটাতে নিজে টই খুলে লেখা যায়। লগ ইন করে লিখতে হবে যদিও। আপনি নিক দিয়েই লগ ইন করুন তারপর হরিদাসপাল আর্টিকেলটা লিখুন তারপর এখানে লিংক দিতে পারেন। 
  • ;\ | 2405:8100:8000:5ca1::5d:b238 | ১৯ মে ২০২৩ ০৩:১৯519903
  • গুরুছাগু,দীপচাড্ডি এগুলোকে ব্লগ অ্যাকসেস না দেওয়াই উচিৎ।  টইপত্তরে বা খেরোর খাতায় নেদে ভরাতে থাকুক।
  • টুকলা! | 115.187.40.188 | ২০ মে ২০২৩ ০০:৩৮519910
  • @গুরু 
    একটা স্পর্শকাতর বিষয়ে প্রশ্ন তুলছি কিছু মনে করবেন না। সবাই দেখি আপনাকে ছাগু বলে , আপনি কি সত্যিই তাই ?নাকি এই সম্মোধনের কারণ কেবলই তাদের চোরা ঈর্ষা ?
  • guru | 146.196.44.32 | ২০ মে ২০২৩ ১৩:২৮519924
  • @আধুনিকতার খোঁজে 
     
                                 অনেক ধন্যবাদ আপনাকে | আপনার মোসাদ ও ইসলামোফোবিয়া সংক্রান্ত প্রশ্নটির উত্তর দিতে চেষ্টা করছি | এটিও ইউক্রেইন্ এর মতো একটি বহুমাত্রিক ও অত্যন্ত জটিল বিষয় তাই আমার ভুলত্রুটি হলে ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখবেন প্লিজ |
     
    মোসাদের একটি বিশেষ ভূমিকা আছে  ইসলামোফোবিয়ার মনোভাব সারা পৃথিবীতে স্প্রেড করার | একমেরু বিশ্বে ইউরো সেন্ট্রালিজমের বিশেষ প্রভাব আছে | সেখানে ধরুন আম্রিকার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব প্রভাবশালী ডিপার্টমেন্টগুলোতে প্রফেসরদের দিয়ে একটি বিশেষ মনোভাব প্রচার করানোর পিছনে মোসাদের যথেষ্ট ভূমিকা আছে | মোসাদের মূল উদ্যেশ্য বহুদিন ধরেই হচ্ছে যে প্যালেস্টিনিয়ানদের যে রাজনৈতিক আন্দোলন সেটিকে কোনোভাবে হোক ডিসক্রেডিট করা (ডিসক্রেডিট এর বাংলা ঠিক মনে পড়ছেনা ) মোসাদের আরো একটি শত্রু হচ্ছে ইরান | এখন এদের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য "শত্রুর শত্রু বন্ধু " নীতি মোসাদের | এক্ষেত্রে পশ্চিমী দেশগুলো বিশেষ করে আম্রিকার সাহায্য মোসাদের দরকার যেহেতু আম্রিকা ও ইরান ভূ রাজনীতির জন্য একে অপরের শত্রু | 
     
    9/11 এর পর থেকে যখন "ওয়ার অন টেরর " শুরু হলো তখন আম্রিকি মিলিটারী ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সের তরফ থেকে মুসলিম দেশগুলোকে শত্রু হিসেবে দেখা শুরু হয় | সেসময়ে মোসাদের তরফ থেকে এই আম্রিকি সংবাদ মাধ্যমে ও একাডেমিয়াতে একটি ইসলামোফোবিয়ার মনোভাব প্রচার করা শুরু হয়ে থাকে যাতে সমগ্র প্যালেস্টিনিয়ান তথা সমগ্র মুসলমানদেরই অবমানব বলে চালানো যেতে পারে | এসব প্রচারকাজ মোশাদপন্থী আম্রিকি ইহুদি একাডেমিকরাই করেছেন | যেহেতু পশ্চিমী বিশেষ করে আম্রিকি সমাজে পশ্চিম এশিয়ার মানুষের তুলনাতে ইউরোপীয় ইহুদীরা অনেক বেশীদিন ধরে বসবাস করছেন কাজেই তাদের পক্ষে  এধরণের কাজ করা খুবই সহজ | আরেকটি অ্যাডভান্টেজ মোসাদের আছে সেটি হলো যে আম্রিকার দুটি পার্টির ভোটার প্রচার খরচ মূলতঃ ওয়াল স্ট্রিটের ইহুদি ধনকুবেরদের থেকে আসে |  এই সব সোর্স ব্যবহার করে প্রচার করা খুবই সহজ এবং মজার ব্যাপার হলো যে এর প্রতিবাদ কোনো একাডেমিক বা সেলেব্রিটি করতে গেলেই তাকে এন্টি সেমিটিক লেবেল সেঁটে একঘরে করে দেওয়া এটিও একটি মোসাদের কৌশল | এবিষয়ে "The Israel Lobby" নামের একটি বই আছে সেটি একটি প্রামাণ্য বই | চাইলে পড়ে দেখতে পারেন | 
     
    তবে ইহুদি ধনকুবের বা ইহুদি একাডেমিক মাত্রেই যে মোশাদপন্থী তা কিন্তু একেবারেই নয় | বস্তুতঃ আম্রিকি একাডেমিয়াতে একদল ইহুদি দার্শনিক আছেন যেমন নোয়াম চমস্কি , নরম্যান ফিংকেলস্টাইনে এরা বহুদিন ধরেই প্যালেস্টিনিয়ানদের বিরুদ্ধে ইস্রাইলি ইউরো সেন্ট্রিক কলোনিয়ালিজমের ঘোরতর বিরোধী | বর্তমানের আম্রিকাতে যে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং sustainable ডেভেলপমেন্ট নিয়ে আন্দোলন দেখেন যেগুলো অনেকটাই ইতিহাসের ইউরো সেন্ট্রিক কলোনিয়ালিজমের আত্মকেন্দ্রিক দর্শনের বিরোধী সেগুলোর পুরোভাগেও অনেক ইহুদীরা আছেন | 
    এপ্রসঙ্গে বলতে পারি আমি নিজে প্রায় দশ বছর আগে ইন্টারনেট মাধ্যমে দুজন ইহুদী ইন্টেলেক্চুয়ালের সঙ্গে পরিচিত ছিলাম এদের নাম কেন ক্লিপেনস্টেইন ও পল gottinger এরা তখন পুরোদমে পশ্চিম এশিয়াতে আম্রিকি সাম্রাজ্যবাদ ও যুদ্ধের ঘোর বিরোধী ছিলেন এবং এখনো এরা  তাই | এরা আম্রিকাতে তথা সমগ্র এশিয়াতে আর্থিক বৈষম্যের জন্য আম্রিকি মিলিটারী ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সের ভূ রাজনীতিকে দায়ী করেন | এমনকি এই দুজন তো স্বয়ং যীশুকেও ভগবান অবতার টবতার  না ভেবে মূলতঃ একজন রাজনৈতিক আন্দোলনকারী হিসেবেই দেখেন যিনি তৎকালীন ইহুদী সমাজের সমাজপতিদের অপশাসনের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছিলেন | এরা মূলতঃ আম্রিকি ডেমোক্রাট পার্টির supporter |  
     
    আবার এদের উল্টোদিকে পশ্চিম এশিয়াতে আম্রিকি ইউরো সেন্ট্রিক কলোনিয়ালিজমের ঘোরতর সমর্থক একদল ইহুদী একাডেমিক ও ধনকুবের আছেন যারা ইরাক যুদ্ধ ও প্যালেস্টিনিয়ানদের বিরুদ্ধে নিপীড়ণের ঘোরতর সমর্থক | এরাই মূলতঃ zionist ও বিভিন্নভাবে "ওয়ার অন টেরর " কে সমর্থন করেছেন ও ইসলামোফোবিয়াকে প্রচার করতে সাহায্য করেছেন মোসাদকে | এদেরই একাংশ পরিচিত "নিও conservative" বা "neocon" নামে কুখ্যাত যেহেতু মনে করা হয় এদের প্ররোচনার জন্যই ইরাক যুদ্ধ হয়েছিল | বার্নার্ড লুইস , ড্যানিয়েল পাইপস , ম্যাক্স বুট , বিল ক্রিস্টাল প্রভৃতি এই দলে পড়েন | 
    প্রসঙ্গতঃ বলে রাখি গত প্রায় ১২-১৩ বছর ধরে আমার সঙ্গে ড্যানিয়েল পাইপস এর অন্তর্জাল মাধ্যমে মতবিনিময় করে যেটা জেনেছি যে ওনার কাছে ইস্রায়েল ও আম্রিকার ভূ রাজনৈতিক স্বার্থ প্রায় সমার্থক | উনি তো এটাও মনে করেন যে যেহেতু পশ্চিম এশিয়াতে অবাধ ও মুক্ত নির্বাচন হলে এমনসব ভূ রাজনৈতিক শক্তি ক্ষমতাতে আসতে পারে যারা ইস্রায়েল ও আম্রিকার শত্রূ কাজেই পশ্চিম এশিয়াতে ক্ষমতাতে থাকা উচিত আম্রিকি পন্থী ও ইস্রায়েল পন্থী মিলিটারি জেনারেল দের যেমন মিশরের হোসনি মুবারক ও বর্তমানের সিসি | যেহেতু উনি ইরানকে নিজের শত্রু মনে করেন কাজেই অদ্ভুত ভাবে উনি ইরানের বিরুদ্ধে আল কায়দা বা ISIS কে ব্যবহারের পক্ষে ছিলেন | বলাই বাহুল্য এধরণের একাডেমিকদের ইসলামোফোবিয়ার প্রচারে ব্যবহার করা খুবই সহজ মোসাদের পক্ষে |
     
    আপনার মতামতের অপেক্ষাতে রইলাম |
  • @গুরু | 64.62.219.196 | ২০ মে ২০২৩ ১৩:৫৯519928
  • কেমন নধর একখান লেখা লিখা ফালাইলেন। গুরু কতৃপক্ষর অনুমতির দরকার হলো? তাই কইলাম, হাত খুইলা ল্যাখেন। আপনে হইলেন ​​​​​​​জিওপলিটিক্সের ​​​​​​​লোক, ​​​​​​​আপনে লেখবেন ​​​​​​​না ​​​​​​​তো ​​​​​​​কে ​​​​​​​লেখবে? 
     
    চুপি চুপি কই, গুরুর কোর কমিটিতে মোসাদের লোক লুকায়ে আছে। তারা কমিউনিষ্টি করে আর কমোডে হাগে। তাদের থেকে দূর থাকবেন।  
  • guru | 146.196.44.32 | ২০ মে ২০২৩ ১৪:০০519929
  • @আধুনিকতার খোঁজে 
     
                                   এদেশে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক মেরুকরণের ও তার সঙ্গে সঙ্ঘপরিবারের তথাকথিত প্রান্তিক জনগণের ধর্মীয়  মেরুকরণের ব্যাপারটি নিয়ে লিখবো তবে আরেকটু সময় ও পড়াশোনা লাগবে এতসব বহুমাত্রিক ও জটিল বিষয়ে লিখতে |
     
                                   আজকে আমি আমার এক সহকর্মীর গল্প বলি | এ মানুষটি বাঙালী , অব্রাহ্মণ , মধ্য চল্লিশে বয়েস , মধ্যবিত্ত ও জীবনের প্রায় পুরোটা সময় পার্ক সার্কাস লেডিস পার্ক মৌলালি অঞ্চলের কাটিয়েছেন যদিও বর্তমানে ইনি দক্ষিণ কলকাতা নিবাসী | ইনি প্রথম জীবনে আশুতোষ কলেজে পড়ার সময়ে যুগধর্মের প্রভাবে প্রবলভাবে মার্ক্সবাদী ছিলেন ও সক্রিয়ভাবে SFI করতেন কিন্তু 2011 সালের পরে আরএসএস ও বিজেপি সমর্থক হয়ে গিয়ে ওনার ভাষাতে "কট্টর হিন্দু " ও  "প্রবল সনাতনী" হয়ে যান | বর্তমানে আমাদের অফিসে বিজেপি it সেলের প্রচারকাজের প্রায় সবকটি হোয়াটস্যাপ গ্রুপের উনি মেম্বার ও এবিষয়ে প্রায় সব প্রচার গোটা অফিস ওনার কাছথেকেই প্রথম জানতে পারে | একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে উঠতে বসতে গালমন্দ না করে উনি দিন শুরু করতে পারেননা |
     
                               এহেন মানুষটির সঙ্গে আমার সৌভাগ্য হয়েছিল 2020-21 সালে লোকডাউনের সময়ে অফিসের দেওয়া গাড়িতে একসঙ্গে যাতায়াত করবার | আমি দেখতাম মৌলালীর বড়ো রাস্তার উপরে বিখ্যাত মাজারটির পাশ দিয়ে যাবার সময়ে উনি মাথা ঠেকিয়ে ভক্তিভরে প্রণাম করেন বারবার | গত বছরে পুজোর সময়ে হঠাৎ করেই ওনার পরিবারে একটি চরম বিপদ আসে তখন উনি সাহায্যের জন্য ওনার আগের পাড়ার সবচেয়ে পুরনো এক বন্ধুর উপরেই ভরসা করেন যে কিনা মুসলমান ছিল | ওনার নিজের কথাতে "মুসলমান ছাড়া এসময়ে কাউকে ভরসা করতে পারিনা " |  
     
                            আমার এই সহকর্মীটিকে দেখে এদেশের বহুমাত্রিক বৈচিত্র ও জটিলতাকে বুঝতে পারি | আপনি কি বলেন ? আপনার তো কর্মসূত্রে বহু বিচিত্র মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে | আমার সহকর্মীটির মতো মানুষ কি দেখেছেন ?
  • আধুনিকতার খোঁজে | 2402:3a80:1985:7787:378:5634:1232:5476 | ২০ মে ২০২৩ ১৫:২৬519932
  • গুরু 
    আপনার লেখা মন দিয়ে পড়লাম। খুবই গুরুত্বপূর্ণ কতগুলো দিক রয়েছে যেগুলো আরো আলোচনায় উৎসাহিত করছে। আমি এই মুহূর্তে একটু ব্যস্ত তাই একটু পরে বলছি। 
     
    তবে একটা জিনিস আমার মনে হচ্ছে এখানে (গুরু-তে) এই সব নিয়ে আলোচনা হোক কোনো কারণবশত অনেকেই চাইছেন না। সেক্ষেত্রে অন্যত্র অন্যভাবে হতেই পারে। এই বিষয়টা ভাববেন। 
  • &/ | 151.141.85.8 | ২১ মে ২০২৩ ২১:৫৭519958
  • না না, এখানেই আলোচনা চলুক। খুব মূল্যবান এসব আলোচনা। নানা পক্ষের মতামত জেনে রাখা খুবই দরকার। পরবর্তীকালে সমাধানপ্রচেষ্টার সময় কোনটা কখন কাজে লেগে যায় কে বলতে পারে?
    আপনারা প্লীজ কন্টিনিউ করুন।
  • &/ | 107.77.234.10 | ২২ মে ২০২৩ ২৩:৪২519982
  • দেবাশিস বাবু ,আপনি কোথায় ? কিছু বলুন। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন