এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • আদিম আতঙ্কঃ এক দুর্ভাগ্যের গল্প

    Pradhanna Mitra লেখকের গ্রাহক হোন
    ২২ মার্চ ২০২৩ | ৩৬২ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)

  • অদ্রীশ বর্ধনের দুর্ভাগ্য তিনি বাংলায় জন্মেছেন। অদ্রীশ বর্ধনের দুর্ভাগ্য, তার ‘আদিম আতঙ্ক’ উপন্যাসটা কেউ উদ্যোগ নিয়ে ইংরাজীতে অনুবাদ করেন নি। অদ্রীশ বর্ধনের দুর্ভাগ্য, সেই ইংরাজী অনুবাদটার বিশ্বে প্রচার ও প্রসার হয় নি। অদ্রীশ বর্ধনের দুর্ভাগ্য, সঠিক কোন হলিউড পরিচালকের চোখে সেই উপন্যাসটা পড়ে নি। না হলে এতদিনে, তার এই উপন্যাসটা, অন্তত বিশ্বসাহিত্যে একটা স্থায়ী দাগ রেখে যেতে পারত। আর কল্পবিশ্ব প্রকাশ করার আগে, বাঙালীরা এমন একটা উপন্যাসকে স্রেফ ভুলে মেরে দিয়েছেন একটাই কারণে, এটা একটা কল্পবিজ্ঞান থ্রিলার। আর কে না জানে, বাঙালী বেডরুম ড্রামা পড়ে ঘোঁৎ ঘোঁৎ নাক ডাকিয়ে ঘুমাতে ভালোবাসে, যা কি না বর্তমানের বাংলা সিরিয়ালের পাঠ্য সংস্করণ বৈ আর কিছুই নয়। তারা বিজ্ঞান নিয়ে মাথা ঘামাতে ভালোবাসে না, একমাত্র ‘বেণীমাধব শীলের ফুল পঞ্জিকা’ জাতীয় উচ্চতত্ত্বযুক্ত বৈজ্ঞানিক বই ছাড়া। অবশ্য এখন একটু আধটু তন্ত্র আর গোয়েন্দা নিয়ে তারা ন্যাকামি করছে বটে, কিন্তু সেটাও কোন সিরিয়াস পর্যায়ে নয়। ওই ঘুমোতে যাওয়ার আগে একটু মাথাটাকে ক্লান্ত করা পর্যন্তই এর লিমিটেশান।

    আর তাই অদ্রীশ বর্ধনের মতন কল্পবিজ্ঞানের লেখকেরা ব্রাত্য, এখনও।

    আমি পুরোনো সংস্করণের কথা বলতে পারি না, কিন্তু নতুন সংস্করণের প্রচ্ছদটাই এত হাড় হিম করা, যে দেখলেই গা শিরিশির করে ওঠে। প্রচ্ছদকারীকে অভিনন্দন। 

    আমি যখন উপন্যাসটা পড়তে শুরু করলাম, তখন অনেক রাত। একটু আগে ঝড় হয়ে গেছে, বাইরে। বৃষ্টির আলগা ধারাপাত সমন্বিত বাগানটা জানলা দিয়ে যতটা চোখে পড়ছে, তাতে করে রাত কেমন যেন রহস্যময়ী থেকে আতঙ্কময়ী হয়ে উঠছে। এমন সময়ে আপনি যদি দেখেন, আপনার উপন্যাসের শুরুতেই গাড়ী নিয়ে দুই বোন যে পাহাড়ী অত্যাধুনিক শহরে উঠছে, সেই শহর অত্যন্ত কুশ্রী রকমের শান্ত, তখনই কেমন যেন লাগতে শুরু করে। অদ্রীশ বর্ধন তার আগে শহরের পটভূমিকাকে তৈরীই করেছেন কয়েকটা আর্তনাদ দিয়ে। সেখানেই অলরেডী একটা আবহ তৈরী হয়ে গিয়েছিল। এখন যদি আবিস্কার করা যায় যে, গোটা শহরটাই মৃত, তাহলে ব্যাপারটা আর সহজ থাকে না, অন্তত এই হঠাৎ বৃষ্টির রাতে। যেখানে পায়ের ওপর চাদর টানতে গেলেও গা-টা শিরশির করে ওঠে।

    কিছুটা ঠান্ডায়, কিছুটা অজানা আতঙ্কে।

    গোটা শহরটা মৃত। শহরের প্রত্যেকটা প্রাণী, কীট-পতঙ্গসমেত জীবিত প্রাণীরা হয় মৃত, না হয় বিলীন। এই মৃত্যু প্রত্যেকের কাছেই এসেছে হঠাৎ করে। আতঙ্ক নিয়ে। এবং যাদের মৃত্যু হয়েছে, তারা প্রত্যেকেই যে অবস্থায় ছিল, সেই অবস্থাতেই মারা গেছে। সেই অবস্থাতেই প্রিসার্ভ হয়ে রয়েছে। কোন পচন নেই। ঘন্টার পর ঘন্টা পরেও কোন বিকৃতি নেই। মরণাঘাতের কোন চিহ্ন নেই। কোন সূত্র নেই। কেবল একটাই কথা লেখা আছে এক হোটেলে, সূত্ররূপে ---

    আদিম শত্রু। উতঙ্ক চৌধুরী।

    এ গল্প কোন এলিয়েনের নয়। এ গল্প পৃথিবীরই। পৃথিবীর মধ্যেই এক অপার্থিব আবহ তৈরী করেছেন অদ্রীশ বর্ধন। আমি জানি, আমি একটা উপন্যাস পড়ছি। যার সত্যতা অন্তত এই পৃথিবীতে, বহু দূর-দূরান্তেও নেই, হতে পারে না। কিন্তু তবুও লেখার গুণে, আমার মনে হচ্ছিল, জানলার বাইরের কালো জমাট বাধা অন্ধকারটাও কেমন যেন নড়েচড়ে উঠছে। প্রাণ পাচ্ছে।

    গল্পটা বলতে চাই না। কোন সূত্রও দিতে চাই না। অশরীরীর কথা সশরীরেই পড়া ভাল। না হলে ভয় পাওয়ার কোন মজা নেই।

    ===============================

    আদিম আতঙ্ক
    অদ্রীশ বর্ধন
    কল্পবিশ্ব পাবলিকেশান
    মুদ্রিত মূল্যঃ ২১০ টাকা

    ছবি কৃতজ্ঞতাঃ সমর্পিতা
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন