রাজা আর রাজা হতে পারত এমন একজন, দুয়ের যুদ্ধ হয়। একজন রাজা ও একজন রাজা হতে পারত এমন একজন। রাজা জেতেন ও রাজা হন। রাজা কে হবে এটা আগে থেকেই ঠিক থাকত। রাজাদের সময় কোন টাই ব্রেকার হতো না। এ ক্ষেত্রেও তাই হল। রাজা হতে পারত এমন একজন বেধড়ক হেরে ধড়ে শুধু মাথা নিয়ে পালান। সেই মাথাটাও কিছু দিনের মধ্যে কাটা পড়ে।
সব কিছু ঠিকঠাক ছিল -জ্যোতিষী বললেন। কবি ও সাধকও বাহবা দিল। ছোটখাট রাজা আর সেপাইসালার, আমিররা ইনসাইডার। তাদের কাছে ঠিকই খবর থাকে আর সবার জ্যোতিষী এক হয়েই এই রাজাকে জিতিয়েছে এটা সবাই মানে। এক জায়গাতেই গণনা মেলেনি। রাজা হতে পারত এমনজনের জেনানায় একজন মহিলা ছিলেন। যদিও তখন কেউ মহিলা ছিল না আলাদা করে। সবাই পুরুষ আর তাদের জেনানা মহল। অত্যন্ত পবিত্র বলে সেই জেনানার মেয়েদের আড়ালে থাকা, বেশি বা কম আলগ থাকা মাসট। রাজা হতে পারত এমন একজনের জেনানার ওই মহিলাকে রাজার খুব পসন্দ। এই রাজা অত্যন্ত পণ্ডিত , বাতাসের বেগে তলোয়ার চালান আর তীর ও মাস্কেটে সমান দড় হয়েও খুবই ভদ্র আর জেনানা মহলের প্রোটেকশন দেবেন নৃশংসভাবে । এমন রাজার জেনানার পসন্দিদা হলে কি কোন নারীর পক্ষে না করা সম্ভব ? কিন্তু এই মহিলা খুবই ট্যাঁটা অনেকটা নূর জাহানের মতো। তফাৎ যা ইনি হয়ত ততোটা বিরাট কিছু অভিজাত নন।
—— কিন্তু এবার তো সুযোগ এসেচে।
—— কিসের ?
—— নূর জাহান হবার।
—— না হতে চাইলে ?
—— ধ্যাত! তা আবার হয় নাকি ?
—— কেন ?
—— ক্ষমতা ।
কিন্তু এই মহিলা দেখা যাচ্ছে ক্ষমতার গোল্ডেন রুল মানছেন না। রাজাকে প্রশ্ন করে পাঠালেন,“ আমার কোনটা পসন্দিদা আপনার?” রাজা তৎক্ষণাত বলেন,“ চুল। ” মহিলা তাঁর সুন্দর চুল কেটে পাঠালেন যা রাজাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। সেই শুনে মহিলা রাজাকে আবার জিজ্ঞেস করেন,“ আমার কোনটা পসন্দিদা আপনার?” রাজা মুখ আকাশে তুলে গ্রহ নক্ষত্রের আজিব গতিবিধি দেখেন আর পোষা পায়রার ডিগবাজি বা চাঁদের আলোর সঙ্গে স্বর্গ থেকে আসা কোন বার্তা অজান্তে গলে পড়ে কিনা সামনের বিশাল তলাওয়ের জলে। সেসব দেখছিলেন রাজা দিনে ও রাতে আর উত্তর দিলেন,“ মুখ। ” তৎক্ষণাত বার্তা চলে গেল মহিলার কাছে তিনি খাপ থেকে খুব ধারালো ছোরা বের করে মুখে গভীর আঘাত করেন। সেখান থেকে যা রক্ত ঝরে সব কি একটা রুমালে লেপ্টে থাকবে , না থাকা সম্ভব ? তাই একাধিক রুমালে সেই মুখের রক্ত লেপ্টে পাঠানো হল রাজার কাছে। সেই রক্তের ফলে রাজা মুখ দেখলেন পরিষ্কার সেই মুখ তাঁর পসন্দিদা ছিল না। তিনি রক্ত চিনতেন আর অনেক কাটা মুণ্ডু উপহার পেয়েছিলেন। সব মুণ্ডু তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকবে এমন বুড়বাক কেন হবে বেগুনাহ সব মুণ্ডুরা। তারা তো দোষ ছেড়ে বা ধড় ছেড়ে খোলা চোখে বরাবর তাকিয়ে থাকার জন্যই আছে। তবু এই রাজা যে রাজা হতে পারত তাঁর মুণ্ডুটা কী রকম করে যেন দেখতে পান। এটা জিনের খেলা ? তাঁর পিতা যাঁকে তিনি শেষ জীবনে কয়েদ করলেন তিনি জিনদেরও রাজা সলোমন তূল্য ছিলেন। এখনও ছেলের কাছে রাজত্ব হারালেও জিনেরা তাঁর কাছে দরবার বসায়। কিন্তু বাবার কাছে যাবার মুখ রাজার ছিল না তাই তিনি বললেন,“ না পসন্দ। ” আর প্রচুর উপহার পাঠিয়ে দিলেন সেই মহিলার কাছে । পাঠালেন সেরা হাকিমকেও যাতে মুখের ক্ষত সেরে ওঠে। ক্ষতের ইলাজ হলে যে রাজা হতে পারত তাঁর জেনানার মহিলাটির মুখের দাগ উঠল না। ক্ষমতার দাগ যে উঠবে না এটা সবাই জানতেন, রাজাও, তবে সেই দাগ যে নিজেই করে সেই তো আসলি ক্ষমতাধর এটা রাজা বুঝতে পেরেছিলেন কারণ তিনি ছিলেন অত্যন্ত পণ্ডিত , বাতাসের বেগে তলোয়ার চালান আর তীর ও মাস্কেটে সমান দড় হয়েও খুবই ভদ্র আর জেনানা মহলের প্রোটেকশন দেবেন নৃশংসভাবে। ওই ক্ষমতাধর মহিলাকে শাহী তোষাখানা থেকে মোটারকম টাকা দেওয়ার ফরমান দেওয়া হয়।
মুখের দাগটা মাঝে মধ্যেই দেখতেন ওই জেনানা মহলের মহিলা, কখনও কখনও হাসিও ফুটে উঠত তাঁর মুখে।
কৃতজ্ঞতা হরবনস মুখিয়া
রাজা হল ঔরঙ্গজেব আলমগীর। রাজা হতে পারত দারা শিকহো। বাবা শাজাহান রাজা সলোমন তূল্য। মহিলা অজানা। হরবসন মুখিয়ার মোঘলস অফ ইন্ডিয়া থেকে নেওয়া এ্যানেকডোট।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।