এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • এক টাকার ছোট কয়েন এবং অন্যান্য

    Himadrisekhar Datta লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৪ জুলাই ২০২৩ | ২৭৭ বার পঠিত
  • এক টাকার ছোট কয়েন এবং অন্যান্য

    সিঁথি মোড় থেকে বাড়ির গলি পর্যন্ত ভাড়া ১০ টাকা, অটোতে। যখন চালু হয়েছিল তখন ২ টাকা ছিল। সে আজ মোটামুটি ২৫- বছর আগেকার কথা৷ তখন স্টেজ ওয়াইজ ভাড়া ছিল। বরানগর বাজার ১.৫০ আর টানা সিঁথি পর্যন্ত গেলে দুটাকা। ঠিক মনে নেই, ২.৫০ -ও হতে পারে। এখন ইউনিফর্ম ফেয়ার - দশ টাকা। মোট রাস্তার দৈর্ঘ্য দু কিলোমিটারের চেয়ে কয়েক শো মিটার বেশি। 
    সেই অটোতে আজ এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হল। আমার পকেটে প্রচুর খুচরো ছিল,ওষুধপত্র কেনার পরে। সিঁথির মোড়ের অসীমদার দোকান থেকে পাওয়া। ভিটামিন বি-১২ এর ইঞ্জেকশনের সাথে, ভিটামিনের গুলির মত, তিনি খুচরো বর্ষণ করলেন। আমিও লিশ্চিন্ত হলাম - অটোতে দিতে সুবিধে হবে।
    কিন্তু তখন কি আর জানি, এটা তাসের দেশ। এখানে সকলেই রাজা। গাড়িতে বসেই পাইলটের হাতে খুচরো গুণে আটটি কয়েন তুলে দিই। দুটি দুটাকার আর ছটি এক টাকার। উনি হাতে নিয়েই ফেরত দিলেন। ছ-টা একটাকার কয়েন দেওয়া চলবে না। বড়জোর তিনটে নেব। 
    আমি তো অবাক! কেন জানতে চাই। সরকার থেকে এই কয়েন বন্ধ হয়ে গেছে, না কোন লিমিট করে দিয়েছে?  
    না, সেসব কিছুই নয় - আমরা এই লাইনে নিই না। 
    কেন নেন না? তিনটে নিতে পারেন, সাথে আরো তিনটে নিতে অসুবিধা কোথায়? 
    না,না আমরা নিই না, কেউ নেয় না। আপনি অন্য কোথাও দিন, তারাও নেবে না।
    কিন্তু এই না নেবার কারণটা কি, সেটা তো বলুন? এগুলি ন্যায্য পয়সা নয়? 
    ওসব জানি না, আমি নেব না। নিই না। কাউকে দিয়ে দেখান, সে যদি নেয়, তখন আমিও নেব।
    এই নিয়ম কে চালু করেছে?  আপনাদের ইউনিয়ন?  
    অত জানি না, কুঁচো টাকা তিনটের বেশি নেওয়া হয় না। 
    আমরা সবাই রাজা আমাদেরি রাজার রাজত্বে। 

    বাকি রাস্তাটা গভীর ভাবে ভাববার চেষ্টা করি, এর পেছনে কারণ কি হতে পারে? অন্যান্য সময়, প্রায়শই দেখি, একটি ছেলে বা মেয়ে, গরীব ঘরের বোঝা যায়, মিষ্টির দোকানে, ওষুধের দোকানে,পান বিড়ির দোকানে,প্লাস্টিকের ব্যাগে করে, ছনছন করে এসে দাঁড়ায়। কাকু একশো আছে। নি:শব্দে হাত বদল হয়ে যায়, সেই প্লাস্টিকের থলি - ড্রয়ার থেকে দুটো পঞ্চাশ বা একটা গোটা পাত্তি বেরিয়ে আসে সেই খুচরো আনয়নকারীর দিকে। এমন কি আমি অটোওয়ালাদেরও এই এক্সচেঞ্জ করতে দেখেছি, রুমালে বেঁধে।
    পয়সা হল মালক্ষ্মী - সদা চঞ্চলা। সারাদিন ধরেই হাত বদল আর পকেট বদলের পরিবর্তন তাকে মেনে নিতে হয়। আমাদের দেশের বর্তমান মুহ্যমান অবস্থায়, মা লক্ষ্মী আরোও বেশি চঞ্চলা। সেখানে কিছু সংখ্যক মানুষের নিজস্ব কানুনে যদি ক্রমাগত এই ছোট আকারের একটাকার কয়েন গুলি ব্রাত্য হতে থাকে দিনের পর দিন, যা সচল, কিন্তু ব্যবহারে কেউ আনছে না, তাহলে সেই বিশাল পরিমাণ অর্থের যে অকারণ বিসর্জন ঘটিয়ে দেওয়া হচ্ছে - রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের কাছে সে হিসাব কি ভাবে মিলবে? এই ডেফিসিয়েন্সি কোথায় কি ভাবে অ্যাডজাস্ট হবে? করবৃদ্ধি বা জিএস টি দিয়ে, না'কি টোল ট্যাক্স বাড়িয়ে? শুধু এক টাকার তিনটে কয়েন নয়, সারাদিনে তার পরিমাণ অ্যাভারেজে ২০০ টাকা ধরলে, মাসে ৬০০০ টাকা। বছরে ৭২০০০ টাকা। পঞ্চাশটি অটো শুধু যদি ধরে নিই এই লাইনে চলে, তাহলে পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ৩৬,০০,০০০ টাকা। একটা আন্দাজ পাওয়া যাচ্ছে?  এটি মাত্র একটি লাইনের অটো নিয়ে হিসেব করা, কম কম ধরে। উৎসব অনুষ্ঠানে ট্রিপ বেড়ে যায়। সেইসব আমি ধরিইনি। শুধু বরানগর এলাকায় কম করেও ৭০-৮০ টা অটো-টোটো মিলিয়ে রুট আছে। আছে তিন চাকার রিক্সাও। যদি সত্তরটা রুটের হিসেব করি, তাহলে এই অব্যবহার করা অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৫২,০০০,০০০ টাকা। 

    এবার একবার ভাবুন, আমার সুধী বন্ধুরা - আমি আপনি কি সত্যিই দেশের দায়িত্বশীল নাগরিক?
    এই অঢেল খুচরো পয়সাগুলিকে ধরা যাক, কেউ একজন জড়ো করা শুরু করে খবর পেয়ে - সে সমাজের তথাকথিত রাজনৈতিক যে কোন দলের ছত্রছায়ায় লুকিয়ে থাকা ভ্যাগাবন্ড। আমাদের চোখে তার কোন পরিচয় নেই। কিন্তু বিশেষ বিশেষ পাত্রের জন্য সে মহা শক্তিমান। বছর দুই এইভাবে চললে, যে হিউজ পয়সা জমা হল, যা পুরোটাই  black, এবার তার ব্যবহার তো যা খুশী হতে পারে?  পারে না?  আমরা একজন অটো চালকের হুইমসের কাছে আত্ম সমর্পণ করেছিলাম, নিজের ওপরে ঝামেলা এড়াতে। আর তার জন্য যে কোনও দুষ্কৃতিকারী, সেই পয়সা, কিনে নিয়ে, তার আকার কথামত কোন বড় কুকার্য্যের জাল পাতছে। আমার আপনার জন্যেই। এ পয়সার হিসেব কেউ জানে না। আপনি আমি বাই চান্স জেনেছিলাম।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত মতামত দিন