এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • চল মিনি আসাম যাব!

    Rajat Das লেখকের গ্রাহক হোন
    ২২ অক্টোবর ২০২৩ | ১৯০ বার পঠিত
  • অসমের গৌহাটি শহর থেকে প্রায় কুড়ি বাইশ কিলোমিটার দূরে পৌঁছে গেছি। আমাদের গাড়িটা যেখানে দাঁড়াল। সেটাই ভদ্র সভ্য পথের শেষ প্রান্ত। সেখান থেকে চরণবাবুর আশ্রয়ে নিজেকে সঁপে চলা শুরু করেছিলাম। গন্তব্য আরো প্রায় দেড় থেকে দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এক মহান ব্যক্তির বাড়ি। ঝোপঝাড় দুদিকে রেখে মাঝখান দিয়ে সরু পথ। কদিন ধরেই গোটা অসম জুড়ে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনও মুষল ধারায়। কখনও টিপ টিপ করে। আবার কখনও ইলশে গুঁড়ি। অসম আসার পর থেকেই দেখছি প্রকৃতিদেবী রুষ্ট। এদিকে সন্ধ্যে নামছে। গাড়িটা থামার পর থেকেই যেন সন্ধ্যেটা ঝুপ ঝুপিয়ে আকাশ থেকে নামতে শুরু করেছে। বৃষ্টি আর সন্ধ্যের অন্ধকার যেন দুই অধ্যায়। হাত ধরাধরি করে তাড়া করে ফিরছে। যেটুকু আলোর ভরসায় এসেছি, সেটিকেও যেন বৃষ্টি আর খারাপ আবহাওয়ার দাপট শুষে নিল। অগত্যা মোবাইলের টর্চের আলোর ভরসায় এগোতে থাকলাম। 

    ক্রমশ উচ্চতায় উঠছি। কয়েক মিনিটের মধ্যেই পথটি খাড়াই হয়ে গেল। পাহাড়ি পথ যেমন হয় আরকি। একে উচ্চতায় উঠতে দম বেরিয়ে যাচ্ছে। তদুপরি কর্দমাক্ত পিছল রাস্তা। এক মুহুর্ত অন্যমনস্ক হলেই গড়িয়ে পাঁচশ মিটার নিচে গিয়ে পড়ব। হাড়গোড় ভাঙবে নিশ্চিত। তবুও যেতে তো হবেই। আমার সামনে দুজন। পিছনে একজন। আমি পড়ে গেলে সামনের দুজন কিছুই করতে পারবে না। বরং কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়বে, নিজেদের অজান্তেই। পিছনের জন তবুও ভরসা যোগ্য। টালটা অন্তত সামলে নেওয়ার চেষ্টা করবে। 

    অনেক কষ্টে উঠে প্রথম যেখানে পৌঁছলাম, সেখানটা এক গৃহস্থ বাড়ির উঠোন। আগে এসব জায়গায় কাঠের অথবা টিনের বাড়ি ছিল। এখন ক্রমশ পাকা হচ্ছে। তিন চারটি ঘরের মধ্যে তবুও একখানি টিনের দেখলাম। গৃহস্থ বাড়ির কয়েকজন নারীপুরুষ বেরিয়ে এলেন। আমাদের দেখে তাঁরা এই সময়ে বেশ অবাক হলেন। এঁরা বাঙালি। মজুমদার পদবী। ভাবলাম বাঙালি কোথায় নেই! অসমের পাহাড়ে জঙ্গুলে রাস্তা পেরিয়েও বাঙালি মিলল। সেই উঠোন পেরিয়ে আমরা ফের চলতে শুরু করলাম। আরো সরু খাড়াই পিছল রাস্তা। দু দুবার পড়তে পড়তে বাঁচলাম। অতঃপর পাহাড়ের খাঁজে জঙ্গলের মধ্যে তৈরি একটি টিনের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছলাম। এতটা কষ্ট করে নিরাশ হলাম। মহান ব্যক্তিটি গতকাল থেকে উধাও। তাঁর স্ত্রী বাড়ি থেকে বেরিয়ে সেটাই বললেন। ভাবলাম, এই দুর্গম অঞ্চলে একাকিনী নারী কিভাবে দিনযাপন করেন, কে জানে! মানুষ বড় বিচিত্র প্রাণী।

    আশ্চর্য হয়ে যেতে হয়, আমরা যারা শহর কেন্দ্রিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত। তারা শতেক পাওয়ার মাঝেও কিঞ্চিৎ না'পাওয়াকেও অনেক বড় বলে মনে করি। সেটাই অভ্যেস। আজ কর্পোরেশনের জল দেরিতে কেন এলো! হঠাৎ বিদ্যুৎ কেন চলে গেল! টিভির কেবল চ্যানেল না বলে কয়ে উধাও কেন হল! কাজের লোক কেন আজ এলো না! ইত্যাদি ইত্যাদি নানান অভিযোগের পাহাড় আমাদের নিত্য সঙ্গী। অথচ এইসব অঞ্চলের বাসিন্দাদের কোনো অভিযোগ নেই। যাঁরা নাগরিক পরিষেবার বিন্দুমাত্রও পাননা। যাদের ঘরে শুধু নেই রাজ্যের বিস্তার। রোজকার ব্যবহৃত জলটুকুও দু কিলোমিটার নিচে নেমে বয়ে নিয়ে আসতে হয়। প্রতিদিন স্নান খাওয়ার জলটাও যাঁদের ঘরে নব ঘোরালে মিলবে, এই ভাবনাটাও বাতুলতা। তবুও তাঁরা একমুখ হেসে কথা বলতে ছাড়েন না। অমন বাদলা সন্ধ্যেবেলায় আমাদের চারজনকে ওই ভদ্রমহিলা চা না খাইয়ে ছাড়লেন না। সত্যই আমরা বড্ড দুঃখী। এখানকার মানুষগুলো বোধহয় আমাদের থেকে অনেক সুখী...।
    _____________
    ©রজত দাস
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন