এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  আলোচনা  রাজনীতি

  • প্যালেস্টাইন মিনি কড়চা

    বকলমে
    আলোচনা | রাজনীতি | ২৫ অক্টোবর ২০২৩ | ৩৯৯০ বার পঠিত
  •  
    • guru | ২৫ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:৫১
    • প্যালেস্টাইন মিনি কড়চা ১ 
       
      ইসরায়েল সমর্থনে লন্ডনে আর ম্যানচেস্টারে দুটি মিছিল করেছে সংঘের লোকজন। বেশ বড়ো বড়ো এইদুটো মিছিলের (দুটোতেই ১০০ ২০০ লোক হয়েছিল) মোটামুটি সব লোকজন ৫০ উর্ধ। ওদের ভীষণ আক্ষেপ যে ওদের ছেলেমেয়েরা সবাই ট্রাফালগার স্কোয়ারে "জিওনবাদ নিপাত যাক, মুক্ত করো গাজা" মিছিলে যোগদান করেছে।


    • guru | ২৫ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:৫৮
    • প্যালেস্টাইন মিনি কড়চা ২ 
       
      আমরিকী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন টেলিফোনে কথা বলছিলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বিনয়ামিন নিতান্যহুর সঙ্গে। নিতান্যহুর ভয় গাজাতে বোমা ফেলবার সময়ে পাচ্ছে ইরান লেবানন থেকে রকেট আর মিসাইল ছোড়ে। জো বাইডেন অভয় দিয়ে বললেন, "চিন্তা করবেননা, যত পারুন বোমা মারুন আমরা আপনাদের পাশে আছি।" প্রেসিডেন্ট ফোনটা রাখতেই তার কাছে আরেকটি ফোন। এবার ইরাক থেকে। ইরাকের আম্রিকি রাষ্ট্রদূত জানাচ্ছেন, "মিস্টার প্রেসিডেন্ট বড় সমস্যা। ইরানীরা ইস্রায়েল নয় আমাদের ইরাকি ঘাঁটিতে মিসাইল দিয়ে হামলা করছে বারবার।"


    • guru | ২৫ অক্টোবর ২০২৩ ১২:০২
    • প্যালেস্টাইন মিনি কড়চা ৩ 
       
      কয়েকদিন আগে গাজার একটি খ্রীষ্টান হাসপাতাল আর প্রায় ৮০০ বছর পুরোনো একটি চার্চে ইসরায়েলের তরফ থেকে বোমা বর্ষণ করাতে বেশ কয়েকশো মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সমস্যা হচ্ছে যে ইসরায়েলের সরকার (এর সঙ্গে আম্রিকার জো বাইডেন, ভারতের জামাই ঋষি সুনক, ফ্রান্সের মাক্রু) ইতিমধ্যেই এর জন্য হামাসকে দায়ী করে ফেলেছেন কিন্তু টুইটারে আমাদের সঙ্ঘের বীরেরা (এর সঙ্গে তাদের জিওনবাদী বন্ধুরা) অলরেডি ইসরায়েলকে এর ক্রেডিট দিয়ে বলছেন, "কি রে গাজার ইঁদুর ছুঁচোরা আর আমাদের জ্বালাতে আসবি? দেখলি তো বাঘে ছুঁলে ১৮ ঘা আর ইস্রায়েল ছুঁলে ৫০০০ ঘা"। তাহলে কে মেরেছে এদের?


    • guru |২৫ অক্টোবর ২০২৩ ১৮:৪৮
    • প্যালেস্টাইন মিনি কড়চা ৪

      বর্তমান ইসরায়েল প্যালেস্টাইন সংঘর্ষে সবচেয়ে চাপে ​​​​​​​বোধহয় ​​​​​​​আরব ​​​​​​​ও ​​​​​​​মুসলীম ​​​​​​​আমেরিকানরা। এরা 9/11 এর ​​​​​​​ঘরপোড়া ​​​​​​​গোরু, তাই ​​​​​​​বেশ ​​​​​​​ভয়ে ​​​​​​​ভয়েই ​​​​​​​কাটান। গাজার খবর সামনে আসামাত্র একটি ৬ বছরের মুসলিম আমেরিকান শিশুর তার প্রতিবেশী এক শ্বেতাঙ্গ বৃদ্ধের হাতে ছুরিকাঘাতে মৃত্যুর  ঘটনা সামনে আসে। বর্তমান ইসরায়েল প্যালেস্টাইন ​​​​​​​সংঘর্ষের ​​​​​​​সময়ে ​​​​​​​তাই আপাতত ​​​​​​​এরা ​​​​​​​ভীষণভাবে ​​​​​​​নিজেদের ​​​​​​​কোনঠাসা ​​​​​​​ও ​​​​​​​একঘরে ​​​​​​​হিসেবে ​​​​​​​অনুভব ​​​​​​​করছেন। 2020 সালে ​​​​​​​এরা ​​​​​​​সবাই ​​​​​​​মিলে ​​​​​​​বাইডেনকে ​​​​​​​জিতিয়েছেন ​​​​​​​ট্রাম্পের ​​​​​​​বিরুদ্ধে ​​​​​​​অনেক ​​​​​​আশা ​​​​​​​নিয়ে যে 9/11 এর ​​​​​​​পরের ​​​​​​​ইসলামোফোবিয়া ​​​​​​​যা ​​​​​​​কিনা ​​​​​​​ট্রাম্পের ​​​​​​​আমলে ​​​​​​​ভয়াবহ ​​​​​​​রূপ ​​​​​​​ধারণ ​​​​​​​করেছিল ​​​​​​​সেটি ​​​​​​​কিছুটা ​​​​​​​কমবে ​​​​​​​ও ​​​​​​​প্যালেস্টাইন ​​​​​​​সুবিচার ​​​​​​​পাবে ​​​​​​​সে ​​​​​​​সবই ​​​​​​​এখন ​​​​​​​"আশার ​​​​​​​ছলনে ​​​​​​​ভুলি"। এখন কথা ​​​​​​​হলো ​​​​​​​এরা ​​​​​​​ভোট ​​​​​​​দেবেন ​​​​​​​কাকে ?? ট্রাম্প ​​​​​​​বা ​​​​​​​অন্য ​​​​​​​রিপাবলিকান ​​​​​​​প্রার্থীদের ​​​​​​​ভোট ​​​​​​​দিলে ​​​​​​​কোনোই ​​​​​​​লাভ ​​​​​​​নেই ​​​​​​​যেহেতু ​​​​​​​তাতে ​​​​​​​তাদের ​​​​​​​স্বার্থসিদ্ধি ​​​​​​​হবেনা ​​​​​​​কিন্তু ​​​​​​​আবার ​​​​​​​বাইডেনকে ​​​​​​​ভোট ​​​​​​​দিলেও ​​​​​​​আশাভঙ্গ ​​​​​​​হোবে। তাহোলে ​​​​​​​তাদের ​​​​​​​উপায় ​​​​​​​কি ?


    • guru | ২৫ অক্টোবর ২০২৩ ১৯:৪৭
    • প্যালেস্টাইন মিনি কড়চা ৫ 
       
      মুসলিম আমেরিকানদের ডাইলেমার কথা আগের মিনি কড়চা তে লিখেছি। ঘটনা হচ্ছে আমেরিকাতে যেসব মুসলিম আমেরিকানরা থাকতে আসেন তারা নিজেদের দেশেই যথেষ্ট অত্যাচারিত এবং একপ্রকার বাধ্য হন শরণার্থী হিসেবে আমেরিকাতে আশ্রয় নিতে। প্যালেস্টাইন থেকে আশা এরকমই একটি পরিবারের ৬ বছরের ছেলে ওয়াদিয়া আল-ফাওয়ামে। গত অক্টোবরের প্রথম দিকে এই ইস্রায়েল প্যালেস্টাইন বর্তমান সংঘর্ষ শুরু হবার পরেই ছেলেটি ও তার মাকে বাড়িতে একা পেয়ে তাদের উপরে চড়াও হয় বাড়িওলা ৭১ বছর বয়স্ক জোসেফ জুবা। এই জুবা ভদ্রলোকের মুখে একমাত্র চিৎকার ছিল, "আমার দেশ ছেড়ে চলে যা টেরোরিস্টরা"। প্রায় ২৬ বার ছুরির আঘাতের পরে যখন ছেলেটিকে তার মা (যিনি নিজেও আহত হয়েছিলেন) কোনো রকমে উদ্ধার করেন ছেলেটির মুখে একটাই কথা ছিল, "মা আমার জন্য ভেবোনা আমি ঠিক আছি"। এটাই ছিল ছেলেটির শেষ কথা।
       
      পুলিশ আপাতত ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত করছে। ছেলেটির মা আপাতত প্রাণহানির আশংকার বাইরে কিন্তু মানসিকভাবে ডিপ্রেশনে।


    • guru | ২৫ অক্টোবর ২০২৩ ২০:১৯
    • প্যালেস্টাইন মিনি কড়চা ৬ 
       
      গাজাতে বর্তমান ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে মুসলিম আমেরিকানদের ভোটের প্রসঙ্গটি আস্তে আস্তে আমেরিকান প্রচারমাধ্যমে সামনে আসছে। দুটি প্রদেশ মিশিগান ও পেনসিলভানিয়াতে গতবার বাইডেন ট্রাম্পকে একচুলের ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছিলেন। ঘটনা হচ্ছে সমগ্র আমেরিকাতে মুসলিমদের ডেমোগ্রাফিক পার্সেন্টেজ মাত্র ১ পার্সেন্টের মতো কিন্তু এদুটো প্রদেশে সংখ্যাটা কিছু বেশী যেকারণে ২০২৪ এর ভোটে অন্ততঃ এদুটো প্রদেশে বাইডেনকে মুসলিম ভোট পুরোটাই নিজের পক্ষে টানার দরকার। এর কারণ নির্বাচনী পাটিগণিত।
       
      পেনসিলভানিয়ার নির্বাচনে ২০১৬ সালে ট্রাম্প যেতেন ৪১ হাজার ভোটে আর 2020 সালে বাইডেন জেতেন প্রায় ৮১০০০ ভোটে। এই স্টেটটির রেজিস্টার্ড মুসলিম ভোটার এর সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ্য ৮০ হাজার অর্থাৎ যে ব্যক্তি এই ভোট বেশি পাবেন তিনি জিতবেন এই সুইং স্টেট। এই সুইং স্টেট অন্তত ২০ টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট আছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে।
       
      একই ভাবে মিশিগানে গতবার বাইডেন ট্রাম্পকে মাত্র দেড়লক্ষের ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছিলেন। মিশিগানে রেজিস্টার্ড মুসলিম ভোটার এর সংখ্যা প্রায় ২  লক্ষ্য ৪০ হাজার অর্থাৎ এখানেও বাইডেনের ট্রাম্পকে হারাতে প্রায় পুরো মুসলিম ভোট হাতে দরকার। এই সুইং স্টেট অন্তত ১৬ টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট আছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে।
       
      এখন দেখা যাক গাজাতে বর্তমান ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে এবং ট্রাম্প ও বাইডেন উভয়েরই ইসরায়েলকে অকুন্ঠ সমর্থনের পরে মুসলিম আমেরিকানরা কাকে ভোট দেন !  


    • guru | ২৫ অক্টোবর ২০২৩ ২০:৩২
    • প্যালেস্টাইন মিনি কড়চা ৭ 
       
      ইউক্রেইন্ ও গাজার যুদ্ধের ব্যাপারে পশ্চিমা শক্তিদের মনোভাবের মধ্যে একটি তুলনা।
       
      পশ্চিমারা রাশিয়ার ইউক্রেইন্ আগ্রাসন  নিয়ে : ইউক্রেইন্ এর ব্যাপারে রাশিয়ানরা আগ্রাসনকারী ওরা ইউক্রেইন্ এর বিদ্যুৎ জ্বল বন্ধ করেছে বুচাতে অসংখ্য নিরপরাধ নারী ও শিশুকে হত্যা করেছে।
       
      পশ্চিমারা গাজার ইসরায়েলি হামলাতে ব্যাপারে : ইসরায়েল এর অধিকার আছে যা খুশি করবার। প্যালেস্টিনিয়ানরা দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেনা কেন? আমরা ইসরাইলের পাশে আছি ছিলাম থাকবো।
       
      এখন পশ্চিমা মিডিয়াতে ইসরায়েল নিয়ে বেফাঁস কিছু বললেই চাকরি যাবার সম্ভাবনা !!!


    • guru | ২৫ অক্টোবর ২০২৩ ২০:৫৩
    • প্যালেস্টাইন মিনি কড়চা ৮ 
       
      আমি ব্যক্তিগত ভাবে গত প্রায় ২৩ বছর ধরেই চেষ্টা করে যাচ্ছি এই পশ্চিম এশিয়ার সমস্যা নিয়ে পড়াশোনা করার ও পুরো ব্যাপারটি নিয়ে বিস্তারিত জানবার। তবে সত্যি কথা বলতেকি এবারের মতো এতো আলোড়ন এদেশে এই পশ্চিম এশিয়ার সমস্যা নিয়ে আমি আগে দেখিনি কখনোই।টুইটার দেখলে মনে হবে যে এদেশে এখন বিশ্বকাপ ক্রিকেট চলছে তাকেও ছাড়িয়ে গেছে ইসরায়েল প্যালেস্টাইন সমস্যা। আমার নিজের একজন সহকর্মী আমাকে সেদিন বললেন "কাটার বাচ্চা আর কতদিন থাকবি এদেশে " যখন আমি তাকে বলেছিলাম যে দেখুন ইস্রায়েল আর মোসাদ না থাকলে হামাসের নামই কেউ জানতোনা। হামাসকে মোসাদ সৃষ্টি করেছিল আরাফাতকে সাইজ করতে। এই প্রথম দেখছি এতো সুদূর বিদেশের একটি এতো জটিল বহুমাত্রিক সমস্যা এইভাবে এদেশেও মেরুকরণ তৈরী করছে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • lcm | ১৩ নভেম্বর ২০২৩ ০০:৫৫741252
  • সেদিন এখানকার মিডিয়ায় ঐ স্লোগানটি From the river to the sea, Palestine will be free নিয়ে বলছিল যে এই স্লোগান বিতর্কিত, এতে নাকি ম্যাপ থেকে ইহুদীদের মুছে দেবার কথা বলা হচ্ছে।

    “From the river to the sea, Palestine will be free” is an antisemitic slogan commonly featured in anti-Israel campaigns and chanted at demonstrations.

    Usage of this phrase has the effect of making members of the Jewish and pro-Israel community feel unsafe and ostracized.

    It is important to note that demanding justice for Palestinians, or calling for a Palestinian state, should not mean, as this hateful phrase posits, denying the right of the State of Israel to exist.
  • aranya | 2601:84:4600:5410:f80c:155c:9eb3:8c75 | ১৩ নভেম্বর ২০২৩ ০২:০০741253
  • রাচেল কোরি, এই মেয়েটির স্মৃতি এখনো হন্ট করে। আরও কিছু এমন ব্যতিক্রমী মানুষ- তিয়েনানমেন স্কোয়ারে ট্যাঙ্কের সামনে দাঁড়িয়েছিল যে লোকটি, চিপকো আন্দোলনে গাছ জড়িয়ে রেখেছিলো যারা ..
     
    মানুষের মত মানুষ 
  • যোষিতা | ১৩ নভেম্বর ২০২৩ ০৪:৪৪741254
  • প্যালেস্তাইন ম্যাপ থেকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। সুবিচার এই দুনিয়ায় নেই।
  • guru | 103.211.135.111 | ১৩ নভেম্বর ২০২৩ ২২:১৭741262
  • প্যালেস্টাইন মিনি কড়চা ৩৪ 
     
    গাজার শিশু 
     
    আজকের এই মিনি করচাটা ইচ্ছে ​​​​​​​করেই খুব ছোট রাখছি। গাজার পরিস্থিতি দেখে বিশেষ কিছুই লিখতে ইচ্ছে করছিল না আজকে। অন্তর্জালে খবর পেলাম যে গাজার এখন সবচেয়ে বড় যুদ্ধক্ষেত্র হলো .......... গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফা। ইসরায়েলী লাগাতার হানাতে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ আর জল নেই ওখানে। মেটারনিটি ওয়ার্ড থেকে সদ্য জন্মানো এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রি ম্যাচিউর বর্ন বাচ্চাগুলোকে গরম কাপড়ে মুড়ে রাখতে হচ্ছে। বেশ কয়েক সময়ে সেই কাপড়ই কাজে লাগছে বাচ্চাগুলোর কাফন হিসেবে।
     
     
  • guru | 103.211.135.111 | ১৩ নভেম্বর ২০২৩ ২৩:১২741263
  • প্যালেস্টাইন মিনি কড়চা ৩৫ 
     
    ব্রেকিং নিউজ
     
    গাজা নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারী মিছিলগুলোকে "ঘৃণার সমুদ্র" বলাতে চাকরি হারালেন ব্রিটেনের প্রথম ভারতীয় অরিজিনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারমান। গত কয়েক দিন ধরেই ইংল্যান্ডে বিশেষ করে লন্ডন শহরে গাজার মানুষদের সমর্থনে যুদ্ধবিরতির জন্যে বিশাল বিশাল মিছিল চলছে। সেইসব মিচিলগুলোকেই আক্রমণ করেছিলেন সুয়েলা। 
     
    গুরুচন্ডালীর আমার এই লেখার পাঠকেরা যারা লন্ডনের বা ইংল্যান্ডনিবাসী তারা এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত ভাবে জানান এই অনুরোধ রইলো।
  • বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত | 2406:b400:b4:15df:19f8:afab:213c:b23b | ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৯:১০741289
  • গুরু, খবরটা কাল বা পরশু দেখে খুশি হয়েছিলাম, ব্রিটেনের বিষাক্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর চাগরি টা যাওয়ায় দিল গার্ডেন গার্ডেন হয়ে গেল। তবে সিজ ফায়ার দূর অস্ত।
  • guru | 103.175.169.22 | ১৫ নভেম্বর ২০২৩ ১০:৪০741314
  • প্যালেস্টাইন মিনি কড়চা ৩৬ 
     
    গাজাতে জেনোসাইড কেন? ভূরাজনীতির কয়েকটা দিক
     
    বিখ্যাত সাংবাদিক পেপে এসকোবার গাজার বর্তমানের ইসরায়েলী জেনোসাইড নীতি নিয়ে কিছু বক্তব্য রেখেছেন। উনি বলছেন যে বিগত সেপ্টেম্বরে ২০ তারিখে ইসরায়েল "বিবি" নেতানিয়াহু ও আমেরিকার জো বাইডেনের মধ্যে একটা বৈঠক হয় হোয়াইট হাউসে। এই বৈঠকের এজেন্ডা ছিল মূলতঃ তিনটি।
     
    ১) IMEEC এটি সেই বিখ্যাত করিডোর যেটি ভারত থেকে পশ্চিম এশিয়ার সৌদি আরব ও UAE হয়ে ইউরোপে আসবে। ইসরায়েলের হাইফা বন্দরটি থেকেই এটি শুরু হবার কথা।

    ২) বেন গুরিওন খাল : এই খালটি সুয়েজ খালকে বাইপাস করে ইসরায়েলের কন্ট্রোলে থাকা গালফ অফ আকাবা থেকে ঘুরে ভূমধ্যসাগরে পড়বে। এই খালটি সম্পন্ন হলে আর প্রয়োজন হবেনা সুয়েজ খালকে। এখন এই খালটি আসবে গাজার উত্তরভাগ দিয়ে এবং মিশবে ভূমধ্যসাগরে।

    ৩) গাজার গ্যাস ও গ্যাজপ্রম : গাজাতে বিশেষ করে এর উত্তরভাগে প্রচুর প্রাকৃতিক গ্যাসের ভান্ডার আছে এবং বর্তমানে একটি ব্রিটিশ গ্যাস কোম্পানির কাছে এই বরাত আছে এই গ্যাসের ভান্ডার এক্সপ্লোর করবার কিন্তু সামনের বছরে এই কোম্পানির বরাত শেষ হবার কথা। শোনা যাচ্ছিলো যে হামাস এই বরাতটি দিতে পারে রাশিয়ার গ্যাজপ্রম কোম্পানীকে।
     
    আমরা যদি দেখি যে গাজার বর্তমানে প্রায় সবরকম জেনোসাইড হচ্ছে উত্তর গাজাতে এবং এই জায়গাটা দিয়েই বেন গুরিওন খাল আসবার কথা এবং এইখানেই প্রচুর প্রাকৃতিক গ্যাসের ভান্ডার থাকবার কথা। 
     
    আমার গুরুচন্ডালির পাঠকেরা নিজস্ব বক্তব্য ও মতামত দিতেই পারেন এই ব্যাপারে। আপনাদের অনুরোধ রইলো।
     
    নিচের ম্যাপটি গাজাতে ইসরায়েলি বোমাবর্ষণের ম্যাপ এখনো পর্যন্ত। আপনারা নিজেরাই এই ম্যাপটি দেখলে বুঝতে পারবেন যে বেশীর ভাগ ইসরায়েলী বম্বিং, হামলা ও জেনোসাইড হচ্ছে এই উত্তর গাজার এলাকাতে যেখানে দিয়েই বেন গুরিওন খাল যাবার কথা এবং গাজার গ্যাস ও এই জায়গাতেই সবই আছে। (নিচের ম্যাপটির সোর্স আলজাজিরা)
     
     
    এই ম্যাপটি বেন গুরিওন খালকে দেখাচ্ছে |
      
     
  • গংগারাম | 115.187.40.142 | ১৫ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:৪৮741322
  • @গুরু
    একটা অন্য ব্যপারে একটা তথ্য চাইছি, একটু সাহায্য করতে পারবেন? সংযুক্ত আরব আমিরশাহী এতে যে সাতটা দেশ আছে, তারা কি আলাদা সাতটা দেশ, নাকি আলাদা সাতটা শহর, দেশ একটাই?
  • guru | 103.175.169.22 | ১৫ নভেম্বর ২০২৩ ২১:২২741325
  • @গংগারাম
     
    সংযুক্ত আরব আমিরশাহী একটা রাষ্ট্র যেটি সাতটি অফিসিয়ালী স্বতন্ত্র ভূখণ্ড আবু ধাবি, দুবাই, আজমান, ফুজাইরা, উম আল কুয়েন, রাস আল খাইমা এবং শারজা নিয়ে গঠিত। এরা সবাই একটা এক্সেকিউটিভ কাউন্সিলে কয়েক বছর অন্তর প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে। মোটামুটি এটাই ঠিক যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন আবু ধাবির শাসক ও ভাইস প্রেসিডেন্ট হন দুবাইয়ের শাসক।
  • guru | 103.175.169.22 | ১৫ নভেম্বর ২০২৩ ২২:২৪741327
  • প্যালেস্টাইন মিনি কড়চা ৩৭ 
     
     হাসপাতালের তলাতে টানেল 
     
    আমরা দেখেছি যে গাজার প্রায় সমস্ত বড়ো বড়ো হাসপাতালগুলোতে আক্রমণ করবার জন্য ইসরায়েল বলছে যে হাসপাতালগুলোতে গোপন টানেল বানিয়েছে হামাস। এখন অন্তর্জালে বেশ কিছু খবর আসছে যে গাজার সবচেয়ে বড়ো হাসপাতাল আল শিফা তে সত্যি সত্যি একটি মাটির নিচে একটা খুব গভীর টানেল আছে যেটা বানিয়েছিলো .................................. ইসরায়েল !!!!!!!!surprise
     
    আজ্ঞে হ্যাঁ ইসরায়েল !!!! ১৯৮৩ সালে যখন ইসরায়েল গাজা শাসন করছিলো তখনি এই হাসপাতালটির নিচের এই টানেল বানানো হয় ইসরায়েলের মিলিটারি শাসকের দ্বারা। উদ্দেশ্য ছিল সামরিক কারণের জন্য এটিকে বাংকার হিসেবে ব্যাবহার করা।
  • গঙ্গারাম | 115.187.40.142 | ১৫ নভেম্বর ২০২৩ ২৩:৪৪741330
  • @গুরু
    ধন্যবাদ আপনাকে। থ্রেডটা এমনিও ফলো করছি।
  • guru | 103.211.134.0 | ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ১২:৩৯741334
  • প্যালেস্টাইন মিনি কড়চা ৩৮

    পাঠক আপনি কোন দিকে ?

    এবছরে গাজার ইসরায়েল প্যালেস্টাইনের যুদ্ধ ও গতবছরের থেকে এখনো চলতে থাকা ইউক্রেইন্ যুদ্ধ (যেটি বর্তমানে গাজার জন্য খবরের শিরোনামে নেই) বিশ্বের জনমানসকে নানা ভাবে বিভক্ত করেছে। তবে প্রচলিত লেফট বনাম রাইট নয় সাংবাদিক ব্রুনো মাকেইস ইউক্রেইন্ ও গাজার যুদ্ধ চলাকালীন কে কাকে সাপোর্ট বা বিরোধিতা করবে সেই অনুযায়ী চারটি ক্লাসে ক্লাসিফাই করছেন বিশ্বের জনমানসকে।

    ১) ইউনিভারসালিস্ট এরা মূলতঃ ইউক্রেন ও প্যালেস্টাইন দুই পক্ষকেই সমর্থন করেন (আবার ইসরায়েলের আত্মরক্ষার যুক্তিও মেনে নেন)। লেখকের মতানুযায়ী এধরণের মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে কম যেহেতু এরা একটি আদর্শের ভিত্তিতে তার সার্বিক বা ইউনিভার্সাল প্রয়োগে বিশ্বাসী।

    ২) পশ্চিম সমর্থক বা ওয়েস্টার্নিস্ট এরা মূলতঃ ইউক্রেন ও ইসরায়েলের সমর্থক যেহেতু এদের মতানুযায়ী ইউক্রেন ও ইসরায়েলের পশ্চিমের পক্ষে অবস্থান। এরা প্যালেস্টাইনের সমর্থন করেননা যেহেতু এদের মতানুযায়ী প্যালেস্টাইন পশ্চিমের সংস্কৃতির অংশ নয় বা প্যালেস্টাইনের মানুষের চামড়ার রং যথেষ্ট ফরসা নয়।

    ৩) পশ্চিম বিরোধী বা এন্টি ওয়েস্টার্নিস্ট এরা মূলতঃ রাশিয়া ও প্যালেস্টাইনের সমর্থক যেহেতু এরা মনে করেন পশ্চিম তাদের গায়ের রং বা অন্যান্য নানা কারণে তাদের দমিয়ে রেখেছে। ইউক্রেন ও ইসরায়েলের প্রবল বিরোধীতা করেন যেহেতু এরা মনে করেন এদুটো রাষ্ট্রই পশ্চিমের প্রতিভূ। মূলতঃ গ্লোবাল সাউথ ও পূর্ব পশ্চিমের নরম ও চরম সবরকম বামপন্থীরাই এই দলে পড়েন।

    ৪) ডারউইনিস্ট এরা রাশিয়া ও ইসরায়েল দুজনকেই সমর্থন করেন কেননা এদের বক্তব্য রাশিয়া(ইউক্রেন তুলনাতে) ও ইসরায়েল (প্যালেস্টাইনের তুলনাতে) বেশী শক্তিশালী। যেহেতু এরা সবসময়েই শক্তিমানের পক্ষে, কাজেই এরা রাশিয়া ও ইসরায়েলকে সমর্থন করেন।

    প্রসঙ্গতঃ জানিয়ে রাখি লেখক ব্রুনো মাকেইস ভারতের জাতীয়তাবাদী দক্ষিনপন্থীদের (পড়ুন গেরুয়াধারীরা) মূলতঃ এই ডারউইনিস্ট গ্রুপটিতেই ফেলেছেন যেহেতু এরা মূলতঃ রাশিয়া ও ইসরায়েল দুজনকেই সমর্থন করেছেন। আমি নিজে মনে করি যে এদের শুধুমাত্র একারণে এধরণের তকমা লাগানো ঠিক নয় যেহেতু গেরুয়াধারীদের রাশিয়া ও ইসরায়েলকে সমর্থনের কারণ ভিন্ন। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি স্বার্থের জন্য কেননা রাশিয়া থেকে প্রচুর সস্তা তেল ও অস্ত্র আমদানি হয়। কিন্তু ইসরায়েলের ক্ষেত্রে সমর্থনের মূল কারণ হলো মুসলিম বিদ্ধেষ বা ইসলামোফোবিয়া।




  • Sumit Roy | ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:৫৭741335
  • @guru 

    অন্যদিকে যারা প্যালেস্টাইনের পক্ষে মিছিল করছে তারা মূলত তরুণ।প্যালেস্টাইনের পক্ষে সারা বিশ্বজুড়ে তারুণ্যের আধিক্য বা তরুণদের মধ্যে কেন এতো প্রো-ফিলিস্তিনি অবস্থান তা আলাদাভাবে এনালাইসের দাবি রাখে। এটা নিয়ে একটা লেখা রেডি করার ইচ্ছে আছে (সম্ভব হলে আজই)।
  • guru | 103.135.228.52 | ১৭ নভেম্বর ২০২৩ ১১:৪৯741341
  • @সুমিত

    অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনাদের মতো তরুণ তুর্কি প্রজন্ম প্যালেস্টাইনের মতো একটি জটিল ও বহুমাত্রিক সমস্যা নিয়ে ভাবছে এর মানে আমাদের তরুণ প্রজন্ম এখনো রাজনীতিতে সচেতন। যেটি দীর্ঘমেয়াদে সবার জন্য মঙ্গলকর।
  • guru | 103.135.228.52 | ১৭ নভেম্বর ২০২৩ ১২:৩১741342
  • প্যালেস্টাইন মিনি কড়চা ৩৯

    আই ওইওই সংবাদ

    চীনের গণতন্ত্রকামী ও প্রগতিশীল শিল্পী আই ওইওই আবার শিরোনামে তবে এমন একটি কারণে যা স্বযং আই ওইওই হয়তো স্বপ্নেও ভাবেননি। এমনিতে পশ্চিমের নানা তথাকথিত গণতন্ত্রকামী NGO গুলোতে আই ওইওই খুবই জনপ্রিয় গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সরকারকে বারবার অত্যাচারী ও স্বৈরাচারী বলাতে। কয়েকবছর আগে তাকে নিজের দেশ চীন ছেড়ে পশ্চিমে আশ্রয় নিতে হয় নিজের দেশের সরকারকে স্বৈরাচারী বলাতে। তবে বর্তমান গাজার পরিস্থিতিতে ইসরায়েলকে অন্যায়কারী ও আক্রমণকারী আগ্রাসী বলে প্যালেস্টাইনের সমর্থনে টুইট করাতে পশ্চিমের শক্তিশালী জায়নবাদী লবির কোপে পড়লেন আই। বিবিসি জানাচ্ছে যে প্যালেস্টাইনের সমর্থনে টুইট করাতে আই ওইওই এর বেশ কয়েকটি চিত্র প্রদর্শনী লন্ডনসহ বেশ কয়েকটি পশ্চিমের বড়বড় শহরে পৃষ্ঠপোষকেরা বন্ধ করে দিলেন। আই ওইওই বোধহয় এবার বুঝতে পারছেন যে দেশ ছেড়ে পশ্চিমে পালালেই অত্যাচার ও স্বৈরাচার পিছন ছাড়েনা। তিনি বোধহয় আরো বুঝতে পারছেন যে শিল্পীর স্বাধীনতা পশ্চিমেও ততক্ষনই থাকে যতক্ষণ শিল্পী পশ্চিমের ভূরাজনীতির লাভের জন্য কাজ করেন।

    এবিষয়ে অবশ্য আই ওইওই প্রথম শিল্পী নন যিনি পশ্চিমের এধরণের দ্বিচারিতার শিকার হলেন। বিশ্ববিখ্যাত সোভিয়েত নোবেলজয়ী সাহিত্যিক আলেক্সাণ্ডার সলঝেনিৎসিন ("গুলাগ আর্চিপেলাগো"র স্রষ্টা ) নিজে সোভিয়েত রাষ্ট্র থেকে পালিয়ে আম্রিকাতে আশ্রয় নিলেও অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আম্রিকি তথা পশ্চিমী সভ্যতা ​​​​​​​নিয়ে ​​​​​​​মোহভঙ্গ ঘটে তার। শেষ জীবনে তিনি পশ্চিমী আধুনিকতার ঘোরতর বিরোধী ও রাশিয়ান জাতীয়তাবাদের সমর্থক হন। ভ্লাদিমির পুতিনের সমর্থনও করেন।



    https://www.bbc.com/news/entertainment-arts-67424486
  • Sumit Roy | ১৭ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:৪৭741343
  • @guru

    আপনার উল্লিখিত "পশ্চিমের এধরণের দ্বিচারিতার" কথাটা আই ওইওই এর বেলায় সত্য, কেন সত্য তা এই কমেন্টে লিখব। কিন্তু আলেক্সাণ্ডার সলঝেনিৎসিন এর ব্যাপারটা ভিন্ন। তিনি পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়েছিলেন সেখানকার ইন্ডিভিজুয়ালিস্ট সংস্কৃতি ও আপাত ধর্মহীনতার জন্য, যেকারণে তিনি খ্রিস্টীয় অর্থোডক্সের প্রতি বেশি ঝুকে পড়েন। কিন্তু পাশ্চাত্যের এই ইন্ডিভিজুয়ালিস্ট কালচার, ধর্মনিরপেক্ষতা সহ বিভিন্ন রিলেটেড কালচারাল বিষয়গুলো পাশ্চাত্যের সাংস্কৃতিক বিবর্তন, যুক্তিবাদী ধারণার বিকাশ প্রভৃতির উপর ভিত্তি করেই উদ্ভুত হচ্ছে। তাই দ্বিচারিতার ব্যাপারটা এখানে খাটেনা। তবে আই ওইওই এর ব্যাপারে পাশ্চাত্যের দ্বিচারিতার ব্যাপারটা খাটে, কেন খাটে সেটাই আমার এই কমেন্টের আলেখ্য।

    আই ওইওই-কে এন্টি-সেমেটিক ট্যাগ দেয়া হয় তার যে টুইটের ওপর ভিত্তি করে তার অনুবাদ করলে মোটামুটি এমনটা দাঁড়ায়, "ইহুদিদের ওপর নিপীড়ন কে কেন্দ্র করে অপরাধবোধ অনেক সময় আরব বিশ্বকে বিপর্যস্ত করার জন্য স্থানান্তরিত হয়েছে। আর্থিক, সাংস্কৃতিক এবং মিডিয়া প্রভাবের দিক থেকে, ইহুদি সম্প্রদায়ের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে। কয়েক দশক ধরে ইসরায়েলের জন্য বার্ষিক ৩ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা প্যাকেজকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে মূল্যবান বিনিয়োগ হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এই অংশীদারিত্বকে প্রায়শই ভাগ করে নেওয়া ভাগ্য হিসাবে বর্ণনা করা হয়।"

    এখানে সবচেয়ে ইম্পর্টেন্ট যে শব্দটা আই ওইওই ব্যবহার করছেন, আমার মতে তা হচ্ছে "অপরাধবোধ" বা "sense of guilt". পাশ্চাত্যের rationality বা বাকস্বাধীনতার পাশে যদি ইহুদিদের নিয়ে তাদের এই সেন্স অফ গিল্টকে পাশে রাখা হয় তাহলে অবশ্যই এটাকে দ্বিচারিতাই লাগবে। আর এই দ্বিচারিতার উদ্ভবও পাশ্চাত্যে জন্ম নেয়া অরেক দ্বিচারিতার রিফ্লেকশন হিসেবেই। কিসের দ্বিচারিতা? সেই দ্বিচারিতা যার জন্য রিজন বা যুক্তিবোধ নিয়ে কাজ করা সবচাইতে বিখ্যাত এনলাইটেনমেন্টের দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট এর দেশে, হেগেল, মার্ক্স, শোপেনহাওয়ারদের দেশের, সেই কান্ট থেকে আইনস্টাইন পর্যন্ত লম্বা ইতিহাসের দেশের বিকাশের সমাপ্তি গিয়ে ঠেকেছিল নাৎসিবাদের বিজয়ে, এনলাইটেনমেন্টের শখানেক বছরেরও বেশী সময় পার হয়ে যাবার পর।

    আর তারপর? ইহুদিদের উপর এতো নির্যাতন, অত্যাচার করার সময় এদের হুশ হল না, মনে পড়ল না এতকালের সভ্যতার বিকাশ, এনলাইটেনমেন্টের বিজয়গৌরবের মাধ্যমে আসা যুক্তিবোধ, মানবতাবোধের দিকগুলো। হুশ হল যুদ্ধে হেরে যাবার যাওয়ার পর। কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পগুলো মুক্ত করে যখন ভুখা, নাঙা ইহুদি সার্ভাইভার, মৃত ইহুদিদের লাশের স্তুপ, আর গ্যাস চেম্বারের সামনে দাঁড় করানো জার্মান জনগণকে তারা যখন দেখলো, তার পর। তখন তারা এমনই সেন্স অফ গিল্টে আক্রান্ত হল, যা এখনো প্রবলভাবে তাদের রাজনৈতিক চিন্তা ভাবনাকে নিয়ন্ত্রন করে চলেছে। পুরোনো দ্বিচারিতার পর নতুন দ্বিচারিতার সূচনা, যা পাশ্চাত্যে এতদিনকার বিবর্তনের মাধ্যমে তৈরি হওয়া যুক্তিবোধ, মানবতাবোধেরই বিরুদ্ধে যায়। আর এটাই বাস্তবতা। জ্ঞান, বিজ্ঞান, দর্শনে অনেক দূর অগ্রসর একটা জাতি কত প্রবলভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে প্রবলভাবেই গিল্ট বা অনুতাপের দ্বারা চালিত হচ্ছে।

    কেন? কারণ যুক্তির সীমা আছে। মানুষ সাধারণত তাদের জ্ঞান, বুদ্ধি, শিক্ষা, স্বার্থ, বাসনা ইত্যাদির সীমার মধ্যেই যুক্তির চর্চা করে। ইজরায়েল-ফিলিস্তিন প্রশ্নে পাশ্চাত্যের উন্নত রাষ্ট্রগুলার যুক্তিবোধের সীমা নিয়ন্ত্রিত হয় প্রধানত গিল্ট বা অনুতাপ নামক অনুভূতি দ্বারাই। আর স্বার্থান্বেষী পক্ষগুলো তার সুবিধাভোগ করে। যুক্তিবোধের এই সীমাবদ্ধতা (ব্যক্তির মতো মাইক্রো হোক আর জাতির মতো ম্যাক্রো) কেবল পাশ্চাত্য নয়, এটা গ্লোবাল বিষয়। কিন্তু এই বিশেষ বিষয়টিকে "পাশ্চাত্য দ্বিচারিতা" বলতে আমার এই কারণে আপত্তি নেই যে, এই দ্বিচারিতার বিষয়টা এসেন্সিয়ালি পাশ্চাত্যের ইতিহাস-দর্শন ও সভ্যতার বিবর্তন-নির্ভর।

    ইবনে খালদুন যেমন বলেছিলেন, একটি সংস্কৃতি অন্যান্য কালচার থেকে যতই বিভিন্ন বিষয় এপ্রোপ্রিয়েট করতে করতে পরিবর্তিত হোক, এর ভেরি এসেনশিয়াল বৈশিষ্ট্যটি টিকেই থাকবে। ওয়েস্টের এই সেন্স অফ গিল্টের জায়গাটি থেকে সেই দিকটাই মনে পড়ে। একটি সমাজ প্রবল মাত্রায় সেকুলার শাসন কায়েম হলেও তাদের সেকুলার কালচারের মধ্যে যেমন পূর্ববর্তী ধর্মীয় সংস্কৃতি নানান লেয়ারে থেকে যায়, পাশ্চাত্যের এই ফ্যাসিজম থেকে গিল্ট ট্রিপের দ্বিচারিতাগুলোও যেন এরকমই। প্রচণ্ড যুক্তিবোধ, সেক্যুলারিজমের লেয়ারের মধ্যে আটকে থাকা ধর্মচিন্তার মতো। ধর্মের কথা আনাটা বিশেষভাবে এই কারণে গুরুত্বপূর্ণ যে, এই গিল্ট ট্রিপেও যেন পাশ্চাত্য সমাজ বিবর্তনের পেছনে অলক্ষ্যে থাকা ধর্মীয়তার ব্যাপার আছে। সেটার সন্ধান হয়তো আলেক্সাণ্ডার সলঝেনিৎসিন পাননি, কিন্তু তার উপস্থিতি ছিলই। যে পাশ্চাত্য সমাজের বিকাশের মূলের অনেকটাই ধারণ করে আছে খ্রিস্টীয় প্রোটেস্টান্ট এথিক্স, সেই খ্রিস্টধর্মও একটি ব্যাপকমাত্রায় ট্রমা ও গিল্ট নির্ভর ধর্ম। যীশুর ক্রুশবিদ্ধ রূপ তাদের মনে হাজার হাজার বছর ধরে একটা স্থায়ী ট্রমা জন্ম দিয়েছে, যা থেকে মোক্ষের, নাজাতের একমাত্র উপায় সদাই গিল্টের মধ্যে বাস করা। পাপ করা, অনুতপ্ত হওয়া, সপ্তাহান্তে চার্চে গিয়া ফাদারের কাছে ভুল স্বীকার করা, আর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এর পুনরাবৃত্তি। অতীতে ক্যাথলিক চার্চেরও প্রধান ব্যবসাই ছিল গিল্ট ইকোনমি। আধুনিক পুঁজিবাদের ব্যাপারটাতেওঁ সেটারই প্রতিফলন পাওয়া যখন ওয়াল্টার বেনিয়ামিন চিহ্নিত পুঁজিবাদকে চিহ্নিত করেন, এমন একটা ধর্ম হিসেবে যা সর্বদা গিল্ট তৈরি করে চলে, সর্বদা বাসনা তৈরির ফল হিসাবে। বাসনা তৈরি, বাসনার সেটিসফ্যাকশন, বাসনা বৃদ্ধি আর তার রিফ্লেকশনে সেন্স অফ গিল্ট।

    পাশ্চাত্য যুক্তির অঞ্চল, মানবতার অঞ্চল, কিন্তু এটি কখনই অযুক্তি, অমানবতা থেকে মুক্ত ছিলোনা। এনলাইটেনমেন্টের আলোয় যখন সবাই আপ্লুত, তখনও নিৎসে বলেছিলেন, "কেবল সহশ্রাব্দের যুক্তিবোধ না, পাগলামিও আমাদের ভেতরটা ভেঙে ফেলছে"। ট্রাম্প যখন আমেরিকার ক্ষমতায় ছিলেন, যখন তিনি খোলামেলাভাবেই আমেরিকার ধর্মান্ধ প্রটেস্টান্ট এবং ইজরায়েলের উগ্রডানপন্থীদের সমর্থন দিতেন, তখন রিজনের পর্দাটা খুলে পাগলামিটা উন্মোচিত হতো। এখানে রিজন যেমন কাজ করছে, তেমন কাজ করছে নন-রিজনও। ব্রিটিশরা যখন এই উপমহাদেশ শোষণের জন্য পুরোনো মার্কেন্টাইল নীতিভিত্তিক ভীষণ অমানবিক ও এক্সপ্লইটিং ইকোনোমিক সিস্টেম লাগু করছে তখন তা যুক্তিবিরোধী-মানবতাবিরোধী পাগলামিই ছিল, কিন্তু যখন ইভেন এডাম স্মিথের মতো ক্লাসিকাল ইকোনোমিস্টও সেখানকারই ইকোনোমিস্টরা বারবার বলছিল এই ইকোনোমিক সিস্টেম সাসটেইনেবল না, আল্টিমেটলি ভাল কিছু বয়ে আনবে না, এর চেয়েও আরো সাসটেইনেবল ও কার্যকর ইকোনমির দিকে যাওয়া যায়, তখন পাশ্চাত্যের যুক্তি, মানবতা সামনে দেখতে পাই। তাই পাশ্চাত্য নিয়ে পরিচিত হতে গেলে, এখন থেকে কিছু নিতে হলে, এখানে কাজ করতে চাইলে এই দুইয়ের মধ্যে বিভেদ করে, সন্তর্পনেই নিতে হয়। আই ওইওই এরও উচিৎ ছিল ব্যাপারটা আগে থেকে অনুধাবন করে এরকমটার জন্য মানসিক প্রস্তুতি রাখা।

    যুক্তিবোধ ও পাগলামির পাশাপাশি থাকার ব্যাপারটা গ্লোবাল, যেখানেই মানুষ সেখানেই এই দ্বিচারিক বৈশিষ্ট্য। তবে হয়তো পাশ্চাত্যে যুক্তিবাদ, মানবতাবাদ বিশেষ উচ্চতায় উঠবার কারণে, এর পাগলামি ও পাগলামির প্রভাবটাও অনেক বেশি, আর তাই এই দ্বিচারিতাগুলোও অনেক বেশি প্রকট হয়।
  • guru | 160.238.93.83 | ১৭ নভেম্বর ২০২৩ ১৯:২৭741345
  • @সুমিত

    অনেক ধন্যবাদ আমার লেখাটি পড়ে খুব সুচিন্তিত মতামত দেবার জন্য। আপনার মতো এরকম সচেতন পাঠক থাকলেই খুব ভালো লাগে লিখতে।
  • বিতর্ক  | 136.226.50.108 | ১৭ নভেম্বর ২০২৩ ১৯:৫০741346
  • @Sumit Roy: বাহঃ 
  • বিতর্ক | 136.226.50.108 | ১৭ নভেম্বর ২০২৩ ১৯:৫৬741347
  • @guru: আপনি বেশ কিছু ভাল তথ্যই দেন। ধন্যবাদ। 

    কেবল একটা ধারণা আমার মধ্যে অন্ততঃ হয়ে গেছে যে আপনি আগে অ্যাজেন্ডা স্থির করে তাতে তথ্য ফিট করাচ্ছেন। তাতে বিশ্বাসযোগ্যতা শুধু ঝাড় খায় তাই নয় অ্যাজেন্ডাতেও সংশয় দেখা দেয়। 

    যাই হোক, এই খবরটার কোন তথ্যসূত্র দিতে পারলে ভাল লাগবেঃ 
    "এখন অন্তর্জালে বেশ কিছু খবর আসছে যে গাজার সবচেয়ে বড়ো হাসপাতাল আল শিফা তে সত্যি সত্যি একটি মাটির নিচে একটা খুব গভীর টানেল আছে যেটা বানিয়েছিলো .................................. ইসরায়েল !!!!!!!!"

    আগাম ধন্যবাদ। 
  • অ্যাজেন্ডা | 64.62.219.66 | ১৭ নভেম্বর ২০২৩ ২০:০৫741348
  • তো এখান থেকেই বোঝা যায়। যুদ্ধবাজঃ   
     
    কিন্তু কথা হচ্ছে যে যুদ্ধটা তো লেবাননের জন্য ভালোও কিছু নিয়ে আসতে পারে। যেমন ধরুন যুদ্ধ হলে একটা ঐক্য তৈরি হবে বলেই আমার ধারণা হিজবুল্লাহ ও অন্যান্য খ্রীষ্টান লেবানিজ দলগুলোর মধ্যে। উপরন্তু যুদ্ধ হলে ইসরায়েলের কিছু অধিকৃত জমি উদ্ধারেরও সুযোগ হয়তো লেবানন পাবে যদিও এটা ঠিক যে এর কৃতিত্ব পুরোপুরি হিজবুল্লাহ নিয়ে নেবে
  • guru | 160.238.93.83 | ১৭ নভেম্বর ২০২৩ ২০:৩৬741349
  • @সুমিত

    আসলে এই গাজার বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতির মতো সময়গুলো এশিয়া থেকে ডিসেন্টার হিসেবে পশ্চিমে সুপ্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের জন্য সবসময়ই খুব চ্যালেঞ্জিং সময়। এরা নিজেরা যখন পশ্চিমে চলে যান তখন এদের পশ্চিমী রাষ্ট্রগুলো নিজেদের ভূ রাজনৈতিক টোপ হিসেবে এদেরপ্রচারকার্যে ব্যবহার করে। কিন্তু ইসরায়েল প্রশ্নেই যখন পশ্চিমের দ্বিচারিতা সবার সামনে আসে তখন এদের হাতে কিছুই থাকেনা। পশ্চিমের ইসরায়েল নীতিরসমালোচনা করলে নিজেদের ভিসা স্টেটাস নিয়ে প্রশ্ন ওঠে আবার খোলামেলা ইসরায়েলকে সমর্থন করলে নিজের দেশে "পশ্চিমের হাতের পুতুল" বলে বদনাম কুড়োতে হয় এবং নিজেদের ক্রেডিবিলিটির উপরে স্থায়ী প্রশ্নচিহ্ন চলে আসে যেই দাগ ধোয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনা অনেক সময়েই। তাসলিমা নাসরিন, আযান হিরশি আলি, মালালা সবারই এখন এই সমস্যা সামনে। গাজার ব্যাপারে চুপচাপ থাকলে বা ইসরায়েলকে সমর্থন করলে তাদের নিজেদের দেশেরই প্রগতিশীল অংশের কাছে তাদের চরম বিরাগভাজন হতে হবে আবার ইসরায়েলের সক্রিয় বিরোধিতা করলে নিজেদের পশ্চিমী আশ্রয়দাতার বিষ নজরে পড়তে হবে। শাঁকের করাত যাকে বলে।

    সলঝেনিৎসিন নিজে পশ্চিমের এই ব্যাপারটা বুঝতে পেরে শেষে নিজের দেশেই ফিরে গেছিলেন যেহেতু আপনি যেমন বলেছেন যে শেষ জীবনে তিনি প্রবল রাশিয়ান জাতীয়তাবাদী হয়েছিলেন এবং পুতিনের মতোই সোভিয়েতের প্রবল বিরোধী হয়েও তার পতনকে রাশিয়ান জাতির তথা মানবতার পক্ষেচরম বিপর্যয় বলে মনে করতেন।আই ওইওই-কেও হয়তো ওরকমই কিছু করবার কথা ভাবতে হবে।
  • guru | 160.238.93.83 | ১৭ নভেম্বর ২০২৩ ২০:৫৭741351
  • @বিতর্ক

    "কিন্তু কথা হচ্ছে যে যুদ্ধটা তো লেবাননের জন্য ভালোও কিছু নিয়ে আসতে পারে। যেমন ধরুন যুদ্ধ হলে একটা ঐক্য তৈরি হবে বলেই আমার ধারণা হিজবুল্লাহ ও অন্যান্য খ্রীষ্টান লেবানিজ দলগুলোর মধ্যে। উপরন্তু যুদ্ধ হলে ইসরায়েলের কিছু অধিকৃত জমি উদ্ধারেরও সুযোগ হয়তো লেবানন পাবে যদিও এটা ঠিক যে এর কৃতিত্ব পুরোপুরি হিজবুল্লাহ নিয়ে নেবে"

    এটা আমার এনালাইসিস বলতে পারেন লেবাননের ভূরাজনীতি আর ২০০৬ এর ইসরায়েল লেবানন যুদ্ধের বা সিরিয়া ইরাকে ISIS বনাম হিজবুল্লাহ যুদ্ধের কারণ ও ফল এনালাইসিস করে এটাই মনে হচ্ছে। এই সবকটা অতীতের যুদ্ধ থেকেই হিজবুল্লাহ কিন্তু লেবাননে রাজনৌতিক ফায়দা তুলেছে যেহেতু এটা সত্য যে হিজবুল্লাহ লেবাননের ইলেক্টোরাল রাজনীতিতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করে।

    তবে শুধু হিজবুল্লাহ কেই দোষ দিযে লাভ নেই , স্বয়ং "বিবি" নেতানিয়াহু এই যুদ্ধ চালাচ্ছেন দুর্নীতি কেলেঙ্কারী ও ইসরায়েলের বিচার ব্যাবস্থার ডানা ছাঁটার বিতর্ক থেকে নিজের গদী বাঁচাতে খোদ ইসরায়েলের মধ্যে থেকে এরকম আওয়াজ এখন উঠছে।

    https://english.alarabiya.net/News/middle-east/2023/11/08/Former-Israeli-PM-says-emotionally-destroyed-Netanyahu-has-become-danger-to-Israel-
  • guru | 160.238.93.83 | ১৭ নভেম্বর ২০২৩ ২১:০৭741352
  • @বিতর্ক

    তবে লেবাননের ক্ষেত্রে আরেকটি ব্যাপার এখানে দেখা যাচ্ছে যে হিজবুল্লাহ কিন্তু নিজে থেকে যেচে খুব তেড়েফুঁড়ে যুদ্ধে নামছেনা। ইসরায়েল লেবানন সীমান্তে রেগুলার skirmish হচ্ছে কিন্তু হিজবুল্লাহ খুব চট করে কিছু করতে চাইছেনা অন্তত এখনো পর্যন্ত।
  • সিএস | 2405:201:802c:7838:f01e:8f30:6339:1294 | ১৮ নভেম্বর ২০২৩ ০০:৩৯741353
  • সুমিতবাবুর করা বড় পোস্টটা পড়ে কিছু কথা মনে হল -

    হামাসদ্বারা ইস্রায়েল অ্যাটাকের দু - তিনদিনের মধ্যে জার্মানিতে এক বইসংক্রান্ত উৎসবে আদানিয়া শিবলি নামে এক প্যালিস্টিনীয় লেখিকাকে ওনার ক'বছর আগে লেখা 'আ মাইনর ডিটেল' নামক উপন্যসের জন্য ঘোষিত পুরস্কারের অনুষ্ঠানটি রদ করা হয়, কবে দেওয়া হবে সে মনে হয় না এখনো জানানো হয়েছে। উপন্যাসটিতে দুটি গল্প, একটি গল্প ১৯৪৮ সালে, নকবার সময়ে ইস্রায়েলি সৈন্যদের হাতে এক আরব মেয়ের ধর্ষণ ও খুন হওয়ার বর্ণনা, অন্য গল্পটি বর্তমানের প্যালেস্টাইনে আর এক মেয়ে, যে ১৯৪৮ সালের ঘটনার অনুসন্ধান করছে, ইস্রায়েলি সৈন্যদের গুলিতে তারও মরে যাওয়া। তো পুরস্কারটি না দেওয়ার জন্য যথারীতি সমালোচনা হয়, দেওয়ার কথা যখন আগে থেকেই স্থির ছিল।

    লক্ষ্য করার যে হামাস ঘটনাগুলি ঘটিয়ে তোলার পরে ইস্রায়েল প্রথম থেকেই তাদের ওপরে আক্রমণকে হলোকাস্ট বলে প্রচার করেছে, আপাতভাবে যা অতিরেক। কিন্তু এই এখন মনে হয়, ঐ হলোকাস্ট শব্দটি, জার্মানির ঘটনার কনটেক্সটে কি তাদের নাজীপর্বে ঘটিয়ে তোলার ঘটনার 'গিল্ট' ট্রিগার করে? সেই গিল্ট ট্রিগার হওয়ার ফলেই কী তারা পুরস্কারের অনুস্ঠানটি রদ করে ? রদ করে কারণ হলোকাস্টের সাথে তাদের স্মৃতি ও অন্যায় যুক্ত হয়ে আছে, যা তারা এড়াতে চায়?

    কিন্তু এও দেখার যে ১৯৪৫ পরবর্তী সময় জুড়ে জার্মানিতে ইহুদী নিধনের জন্য নিজেদের দায়ী করে 'কালেক্টিভ গিল্ট' - এর কথা জার্মানিতেই দীর্ঘদিন ধরে বলা - লেখা হয়েছে। এও বলা হয়েছে জার্মানি যেন তাদের জাতিত্ব ভুলতে চেয়েছে এবং ইওরোপীয় ইউনিয়ন ইত্যাদির জন্য চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমার মনে হল, নানা কিছু করার পরেও হলোকাস্ট বা ইহুদীদের ওপরে আক্রমণের ঘটনা তাদের গিল্ট ট্রিগার করে কেন ?

    ব্যাপরাটি কি এমন, যে জার্মানির ক্ষেত্রে ঐ গিল্ট, মনস্তত্বের দিক দিয়ে রিজলভ্ড নয় ? যা রিজল্ভড নয়, তা যদি রিপ্রেসড হয়, তাহলে কি ঐ গিল্ট বস্তুটিও জার্মানিতে পুরোপুরি রিজলভড না হয়ে রিপ্রেসড হয়েছে, যা এইসব ঘটনার মধ্যে দিয়ে ফুটে ওঠে ?

    এক ধাপ এগিয়ে কি বলা যায় যে ইস্রায়েল রাষ্ট্রটি জানে যে জার্মানি বা পশ্চিম, ইহুদী নিধনের গিল্টকে, অন্যায়কে সত্যি সত্যি মানসিক্ভাবে রিজল্ভ করে উঠতে পারেনি ? সেই জন্যই কি যেকোন ঘটনা ঘটলেই তারা অ্যান্টি - সেমিটিজম বা হলোকাস্টের প্রসঙ্গ আনে, এটা জেনে যে পস্চিম তাদের চেপে রাখা গিল্টকে ভয় পেয়ে, তজ্জনিত anxiety থেকে বেরোবার জন্য ইস্রায়েলকে সাহায্য করবে ?

    দু'ধাপ এগিয়ে এও কি বলা যায় যে ইহুদী নিধনের গিল্ট যদি রিপ্রেস্ড হয়, তাহলে কি সেই গিল্টের কারণ, অর্থাত ইহুদীবিদ্বেষও রিপ্রেস্ড ? ইস্রায়েল কি ভয় করে সেই ইহুদীবিদ্বেষ আবার ফিরে আসতে পারে ? সেই জন্যই কি সর্বত্রই তাদের বিভিন্নভাবে বাধা দেওয়া, যেখানেই ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ওঠে ?
  • বিতর্ক  | 136.226.50.108 | ১৮ নভেম্বর ২০২৩ ০০:৪১741354
  • @guru - লিন্কের জন্যে ধন্যবাদ। ​​​​​​​খবরটা ​​​​​​​ঠিকই। 
     
    একটা কনফিউশান হয়েছে মনে হচ্ছে - লেবানন সম্পর্কে বক্তব্য আমি রাখি নি। তবে দুজনের বক্তব্যই জানতে ভাল লেগেছে।
  • সিএস | 2405:201:802c:7838:f01e:8f30:6339:1294 | ১৮ নভেম্বর ২০২৩ ০১:১৫741355
  • এখানে জার্মানিতে বিশ বছর আগে করা একটা সার্ভের খবর আছে।

    https://www.nbcnews.com/news/amp/wbna3684520

    ৭০% জার্মান অখুশী হলোকাস্টের জন্য তাদের দায়ী করাকে এবং মনে করে ইহুদীরা ঐ ঘটনার সুবিধে নিচ্ছে। কেন তারা এরকম মনে করে, কেন তারা ঐ পাপবোধ ঝেড়ে ফেলতে চায় সে নিয়ে এক জার্মান পলিটিশিয়ানের মতও আছে।

    আবার এরকম খবরও দেখলাম, ২০২১ সালের, সেসময়ের জার্মান প্রেসিডেন্টের বক্তব্য যে নাজীপর্বের ঘটনার জন্য তারা তখনও নিজেদের দায়ী করেন।

    দুটো খবর কন্ট্রাডিকটরি। দেশের লোক যদি পুরোন ঘটনাকে ভুলেও যেতে চায়, রাষ্ট্রটি - যা আদতে জাতিটিকেই রিপ্রেজেন্ট করে - ঐ ঘটনা এবং তার অন্যায়কে মনে রাখতে চায় !

    তো, এইরকমই কিছু বলার চেষ্টা করছিলাম, ইহুদীনিধন সংক্রান্ত 'গিল্ট' সত্যিই কতটা 'রিজলভ' হয়েছে, জার্মানিতে ? এবং কেনই বা তা ফিরে ফিরে আসে, নাড়া খেলে ?
  • guru | 160.238.92.171 | ১৮ নভেম্বর ২০২৩ ১০:৪৪741361
  • @সিএস

    আপনিও খুবই সুচিন্তিত মতামত দিয়েছেন। অনেক ধন্যবাদ। এখন কথা হচ্ছে যে হোয়াইট জার্মান গিল্টের সূচনা যদি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ইহুদী হলোকস্টের ধ্বংসলীলা দেখেই হয়, সেক্ষেত্রেও একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। জার্মান গিল্টের সম্পর্ক শুধুমাত্র ইহুদী হলোকস্টের সঙ্গেই বা কেন?? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বেশ কয়েক দশক আগেই জার্মান সাম্রাজ্যবাদ বর্তমান আফ্রিকার নামিবিয়াতে হেরেরো জাতির মূলোচ্ছেদ ও হলোকস্ট করেছিল কিন্তু আজকে জার্মানরা যতটা ইহুদী হলোকস্টের ব্যাপারে স্পর্শকাতর ততটা নামিবিয়ার হেরেরো হলোকস্ট নিয়ে স্পর্শকাতর নয় কেন?

    আমার নিজের থিওরী এব্যাপারে হচ্ছে যে ইহুদী হলোকস্টের জার্মান গিল্টের ব্যাপারটি আসলে পুরোপরি একটা হোয়াইট ম্যান্স গিল্ট যেখানে সাদা জার্মান অইহুদীরা সাদা জার্মান ইহুদীদের হলোকস্ট করে নিকেশ করবার জন্য গিল্ট অনুভব করে। কিন্তু যেহেতু হেরেরো জাতি সাদা নয় সেকারণেই সেই ব্যাপারে কোনো অনুশোচনা অনুভব করেনা বর্তমানের জার্মান রাষ্ট্র। জার্মান রাষ্ট্র (এবং প্রায় সবকটি পশ্চিমের শ্বেতাঙ্গ প্রধান রাষ্ট্র ) এখনো পুরোপুরি ভাবেই শুধুমাত্র শ্বেতাঙ্গদের জন্যই তৈরী, অসাদারা সেখানে চাকরি ব্যবসা রাজনীতি (যেটুকু সাদাদের প্রয়োজন সেটুকুই) করতে পারে কিন্তু পুরোপুরি সমানাধিকার পাবার তারা উপযুক্ত নয় শুধুমাত্র গায়ের রঙের জন্যই। ব্যাতিক্রমী পশ্চিমী রাষ্ট্র (যেমন স্পেন বা আয়ারল্যান্ড) একেবারেই নেই তা নয় তবে তারা সংখ্যাতে একেবারেই নগণ্য।

    এপ্রসংঙ্গে বলে রাখি বর্তমানে আম্রিকাতে যে সমর্থন ছাত্র যুবকদের তরফ থেকে প্যালেস্টাইন পাচ্ছে তার একটা বড় কারণ হচ্ছে যে আম্রিকি বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে শ্বেতাঙ্গের সংখ্যা আগের প্রজন্মের তুলনাতে অনেকটাই কম।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে প্রতিক্রিয়া দিন