এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ভ্রমণ  পথ ও রেখা

  • শীতল মরুভূমিতে সাড়ে তিনদিন - টেথিসের ইশারা 

    লেখকের গ্রাহক হোন
    ভ্রমণ | পথ ও রেখা | ০৮ নভেম্বর ২০২৩ | ৯০৭ বার পঠিত | রেটিং ৪.৭ (৩ জন)
  •  

    কাজা থেকে হিকিমের পথে 
     
    মানালির উচ্চতা সমুদ্রতল থেকে ৬৭২৫ ফিট আর কাজা ১১৯৮০ ফিট। এই সোয়া পাঁচ হাজার ফিট উচ্চতা আমরা একদিনে মোটামুটি ঘন্টা দশেকে উঠেছি, ফলে দলের প্রায় সকলেরই কিছু না কিছু শারিরীক সমস্যা হচ্ছে। পরেরদিনটা তাই কাজার আশেপাশেই ঘোরাঘুরি করা হবে। তাতেও অবশ্য প্রায় হাজার তিনেক ফুট ওঠানামা  আছে। তবে সেখানে থাকা হবে অতি অল্প সময় আর দূরত্বও খুব বেশী নয়। তাই বেলা করে এগারোটা কি তারও পরে বেরোব বলে জানালেন সংগঠকরা। একইসাথে জানালেন এই কদিনের যাত্রায় কারোর কিছু অসুবিধে হয়ে থাকলে, কোন ব্যবস্থাপনায় আপত্তি থাকলে সেকথাও শুনতে চান এবং আজই এক্ষুণি চান। সে বেশ কথা। ঘুমে ঢুলে পড়তে পড়তেও বসে রইলাম। কিন্তু হায় সে নিতান্তই বহ্বারম্ভে লঘুক্রিয়া।


    কাজার এলাকা পেরিয়েই - রাস্তা আর নদী এখানে কাটাকুটি খেলে 

    তবে একটা জিনিষ জানা গেল। তা হল ওই সারাহান থেকে কল্পা যাবার রাস্তা কর্তৃপক্ষের তরফে ঘোষণা করেই বন্ধ ছিল। প্রথমত ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর এবং পরে পরিস্থিতি অনুযায়ী বাড়ানো হয়। জানা গেল হিমাচল প্রদেশে প্রতিটি এলাকার পুলিশ তাদের ফেসবুক পেজে যাবতীয় আপডেট দেয় এবং নিয়মিত দেয়। মজার ব্যপার হল মূল সংগঠক এই সমস্ত কিছু জেনেও কোনওরকম মিটিগেশান প্ল্যানের ব্যবস্থা করেন নি। দু’দিন জাস্ট রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রেখেই কাটিয়ে দিলেন। পুরো স্পিতিটাই কাটাবার তালে ছিলেন, নেহাৎই অনেকে এককাট্টা হয়ে মানালি ট্যু কাজা রুটে যাবার জন্য চেঁচামেচি করায় ঢোঁক গিলে মানতে বাধ্য হন। আমার একেবারে হাত নিশপিশ করছিল রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট, রিস্ক মিটিগেশান ইত্যাদির বিভিন্ন কোর্স পলবাবুর নামে অ্যাসাইন করতে।

    মে কিম্বা জুনমাসে এক দাদার সাথে এই ট্রিপ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেছিলাম আমার ধারণা যতগুলো জায়গা এরা পিডিএফে লিখেছে ততগুলোতে নিয়ে যাবে না, কিছু না কিছু ছুতো করে কাটিয়ে দেবে। দেখছি চারমাস আগেই একেবারে সঠিক অনুমান করেছিলাম। আরো একটা ব্যপার খেয়াল করলাম। বিভিন্ন হোটেলে ঘর বরাদ্দ করার জন্য লটারি করা হয় সংগঠকদের তরফে, রিসেপশান ডেস্কে সমস্ত ঘরের চাবি সাজিয়ে রেখে গ্রুপের সবাইকে এক এক করে ডাকা হয়। শুনেছিলাম সেটি প্রাথমিক টাকা জমা করার তারিখের ক্রমানুসারে সাজানো। সেই হিসেবে আমার নাম আসে শেষদিক থেকে দুজনের আগে। এই মিটিঙে কয়েকজনকে বলতে শুনলাম তাঁরা চারমাস আগে টাকা দিয়েছেন স্পিতির জন্য কাজেই সেই প্ল্যান বাতিল হওয়া মর্মান্তিক।

    ঠিকই, আমার জন্যও সেটা মর্মান্তিকই ছিল। কিন্তু ...কিন্তু আমি প্রাথমিক বুকিঙ অ্যামাউন্ট জমা করেছি (এবং মূল সংগঠক প্রাপ্তিস্বীকার করেছেন) ২৭শে মার্চ অর্থাৎ প্রায় ছয়মাস আগে। যাঁরা চারমাস আগে জমা করেছেন বলছেন তাঁরা তার মানে মে মাস নাগাদ দিয়েছেন। অথচ লটারি করার সময় তাঁদের নাম আগে আসে। কিউরিওসার এন্ড কিউরিওসার। এটা নিয়ে আমি কিছুই বলি নি, কারণ একরাতের বাসস্থান হিসেবে মোটামুটি পরিস্কার ঘর বাথরুম আর গরমজলের ব্যবস্থাই যথেষ্ট  আমার জন্য। কিন্তু এ থেকে আমার ধারণা হল মূল সংগঠকের পেশাদারিত্বে ঘাটতি আছে।  কোন স্বাধীন একক মহিলাকে ট্রিপে নেওয়ার সময় যে নিরপেক্ষ পেশাদারি আচরণ আমি আশা করি, সেটি দিতে এই ট্যুর কোম্পানি (নামটা শেষপর্বে লিখবো) অপারগ হয়েছে।

    এরপরেও এই ব্যপারটা বেশ কয়েকবার খেয়াল করেছি এবং কিঞ্চিৎ মজাই পেয়েছি। যাঁরা আমার আগের ভ্রমন্থনগুলো পড়েছেন তাঁরা মনে করতে পারবেন তাড়োবা বা নামদাফা  ট্রিপের কথা। সেখানে অভিজ্ঞতা ছিল সম্পূর্ণ উল্টো। দুই ক্ষেত্রেই সংগঠকরা অত্যন্ত চমৎকার পেশাদারিত্বের সাথে ট্রিপ ম্যানেজ করেছেন। তো যা বলছিলাম, মাঝরাত পার করা সেই মিটিঙ পুরোপুরি শেষ হবার আগেই আমি ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। পরেরদিনের সকালটা ঝকঝকে রোদভরা। জানালার পর্দা সরিয়েই মন ভাল হয়ে যায়। ঘরটা পেছনের দিকে হওয়ায় দৃশ্য হিসেবে দূরের পাহাড় আর কাছের কিছু ঘরবাড়িই সম্বল। আজ  যাওয়া হবে পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম পোস্ট অফিস, হিকিমে। শনিবার, কাজেই বেলা দুটোর মধ্যেই বন্ধ হবে সে অফিস।

    কাজা ভিস্তা পয়েন্ট 
     
    হিকিম, কমিক, লাংজা, তাশি গং – নিতান্ত ছোট ছোট কটা পাহাড়ি গ্রাম। বজ্রযান বা তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মের ব্যপক প্রসার ছিল এই অঞ্চলে। তিব্বত লাগোয়া জনপদে তা হওয়ারই কথা অবশ্য। ১৪৪০০ ফিট উচ্চতায় হিকিমের পোস্ট অফিস এই কয়েক বছর আগে পর্যন্ত পৃথিবীর সর্বোচ্চ পোস্ট অফিস হিসেবে গণ্য ছিল। ২০০৮ সালে  অবশ্য চিন সরকার ১৭৫৯৮ ফিট উচ্চতায় তিব্বতের এভারেস্ট বেস ক্যাম্পে একটা পোস্ট অফিস চালু করেছেন, এপ্রিল থেকে আগস্ট অবধি চালু এই অফিস বর্তমানে সর্বোচ্চ।  হিকিমের অফিসটা তাই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। পোস্ট অফিসের বাইরে যদিও ‘পৃথিবীর সর্বোচ্চ পোস্ট অফিস’ বোর্ডটা বহাল তবিয়তে বর্তমান। সেলফিপিয়াসী জনগণ তার পাশে দাঁড়িয়ে মহানন্দে ছবিও তুলছেন।


    হিকিম পোস্ট অফিস 

    সেলফি পয়েন্ট   wink   (এখানে সৌরবিদ্যুতই বিদ্যুতের একমাত্র উৎস)  

    হিকিমে গেলে কিছু চিঠি পোস্ট করব এ আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলাম। কিছু ট্রাভেল গ্রুপে দেখেছি সাধারণ পোস্ট কার্ড সাধারণত এসে পৌঁছায় না, অতএব স্পীড পোস্ট কিম্বা রেজিস্টার্ড পোস্ট। সেইমত খামে করে ঠিকানা টিকানা লিখে তৈরী করেই নিয়ে গিয়েছিলাম। গিয়ে জানা গেল ওখান থেকে কেবলমাত্র দেশের মধ্যেই পোস্ট করা যায়, দেশের বাইরে হবে না। আর সাধারণ পোস্ট ছাড়া কেবলমাত্র রেজিস্টার্ড পোস্ট হবে। কথায় কথায় জানা গেল পোস্ট মাস্টার হিকিম গ্রামেরই মানুষ, তিনিই একমাত্র কর্মী আপাতত। পর্যটকদের চিঠি পাঠানো ছাড়া আধার আপডেটের কাজও এখানে হচ্ছে এখন। কাজের পরিমাণ বেড়েছে, আরেকজন লোক হলে সুবিধে হয়। পোস্ট অফিসের উলটো দিকে নীচের ঢাল ঘেঁষে একটা চা কফি ম্যাগীর দোকান।  


    হিকিম পোস্ট অফিস,চায়ের দোকান - উল্টোদিকের পাহাড় থেকে 

    সকলের চিঠি পোস্ট করা হলে ছবি তুলে আমরা রওনা দিলাম কমিকের দিকে। ১৫০২৭ ফিট (৪৫৮৭ মিটার)উচ্চতার কমিক গ্রামে পৌঁছাতে গাড়িতে দশ মিনিট লাগলেও  উচ্চতা বাড়ছে প্রায় ৮০০ ফিটের মত। তবে আমরা দশ মিনিটে পৌঁছাতে পারলাম না। হিকিমের উল্টোদিকের পাহাড়ে পৌঁছে এক জায়গায় গাড়ি থেমে গেল, সামনে গাড়ির লম্বা লাইন। আমাদের তো এতদিনে গাড়ির লাইন দেখলেই আতঙ্ক হয়, এই বুঝি গেল আজ  সারাদিন এখানেই দাঁড়িয়ে। নেমে জানা গেল সামনে কোথাও একটা অলটো গাড়ি পড়ে গেছে নীচে। সেটাকে তোলার জন্য জেসিবি ক্রেন এসেছে। তোলা হলে রাস্তা ছাড়বে। পড়ে গেছে শুনে একটু শিউরে উঠি, কিন্তু কেউই দেখলাম সেরকম সিরিয়াস নয়। আশা করি কেউ মারা যান নি।


    মাউন্ট কানামো 

    গাড়ি থেকে নেমে দেখি ডানদিকে বরফের পাতে মোড়া মাউন্ট কানামো (১৯৬০০ ফিট) ঝকঝক করছে রোদ্দুরে। এই শৃঙ্গ জয় করতে কিব্বের গ্রাম থেকে ৩ দিনের ট্রেকে যায় ট্রেকাররা। কিব্বের যদিও এখান থেকে বেশ কাছেই, কিন্তু আমাদের গন্তব্য তালিকায় নেই। কিব্বেরে একটা বন্যপ্রাণীদের জন্য সংরক্ষিত অভয়ারণ্য আছে। সেখানকার প্রাণীকূলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আইবেক্স, হিমালয়ান নেকড়ে, তিব্বতী পশমী খরগোশ এবং তুষার চিতা। তবে হিমাচলে এখন সম্ভবত তুষার চিতার একটাই পরিবার আছে। অসম্ভব সুন্দর দেখতে, লাজুক এই প্রাণীটাকে অতি তীব্র ঠান্ডা ছাড়া দেখা যায় না। এই অঞ্চলে ওই মোটামুটি জানুয়ারি ফেব্রুয়ারী মাসে দেখা গেলেও যেতে পারে। এদের স্বাভাবিক বাসস্থান সাধারণত ১৮০০০ ফিটের উপরে।  


    উল্টোদিকের পাহাড় থেকে হিকিম গ্রাম ও আশেপাশের এলাকা (টেক্সচারটা দেখে সমুদ্রের ঢেউ মনে হচ্ছে না?)

    কিব্বের ছাড়াও তাশি গং নামে আরেকটি ছোট গ্রাম আছে কিছু দূরে, মাত্র ৪ ঘর লোকের বাস। গ্রামটার কাছেই একটা অপরূপ হ্রদও আছে। কিন্তু কোনটাই এবারে দেখা হবে না। মনে মনে ভেবে রাখি একবার কিব্বেরে এসে কয়েকদিন থাকতে হবে। প্রায় ঘন্টাখানেক আটকে থাকার পরে গাড়ি ছাড়ে, কমিকে পৌঁছে দেখি কমিক গোম্পায় ঢোকা গেলেও একটু দূরে অবস্থিত সংগ্রহশালাটায় ঢোকা যাবে না। কে জানে এখানেও কোথাও থেকে অনুমতি করিয়ে আনতে হয় কিনা। এখানে একটা রেস্টুরেন্ট, উপরে লেখা ‘World’s highest resturant’. এমনিতে গুগলে সাংহাইয়ের এক রেস্টুরেন্টকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ বলে। কিন্তু সেটাও সমুদ্রতল থেকে ১৮০০ ফিট। কাজেই ১৫০০০ ফিটের উপরে এই রেস্টুরেন্ট নিঃসন্দেহে সর্বোচ্চ, শুধু গিনেস বুক আর গুগল জানে না এই যা।
     

    কমিক মনাস্টারি 
     

     গোম্পার ভিতরে 

    কমিক সংগ্রহশালা (সম্ভবত) - বন্ধ থাকায় গিয়ে যাচাই করা বা দেখা সম্ভব হয় নি


    এদের মাখন চা'টা অতি ভাল খেতে। তিব্বতী নকশা করা ঢাকনি দেওয়া কাপে পরিবেশন করে 

    এই রেস্টুরেন্টে খোঁজ নিয়ে জানলাম নুন মাখনের তিব্বতী চা পাওয়া যাবে। অতএব এককাপ অর্ডার দিয়ে বসি নিশ্চিন্ত হয়ে। বাকীরাও কেউ চা কেউ কফি সাথে ম্যাগী ইত্যাদি অর্ডার করেন। এটা তো সবাই বোধহয় জানেন হিমালয়ের আনাচে কানাচে যে কোন ছোট  চায়ের দোকানেও ম্যাগীর স্বাদ হয় অসাধারণ। সম্ভবত ওখানকার জলের কারণে এই স্বাদ হয়। স্পিতিতে এই স্বাদ সত্যিই অতি চমৎকার। আমি অবশ্য এখানে কিছু খাই নি। আমাদের পরের গন্তব্য ১৪৫০০ ফিট উচ্চতার লাংজা গ্রাম, মূলত পাহাড়ের উপরে উপত্যকার দিকে মুখ করে বসানো সোনালী রঙের মস্ত বুদ্ধমূর্তি। কথিত আছে হাজার বছর আগে এই মূর্তি বসানো হয়েছিল।


    লাংজার বুদ্ধমূর্তি 


    গাড়ি থেকে নেমে যাওয়ার পথে - মিনিট সাত আট উৎরাই 

    গাড়ি যেখানে পার্ক করা হয়, সেখান থেকে মোটামুটি মিনিট সাত আট হেঁটে মুর্তির পাদদেশে পৌঁছানো যায়। একটু উপর থেকে দেখলে লাংজা গ্রাম ও বুদ্ধমূর্তি অনেকটা একটা বাটির মধ্যে বসানো মনে হয়। এই বুদ্ধ নাকি লাংজা গ্রামকে যাবতীয় বিপদ থেকে রক্ষা করেন। যথারীতি এখানেও একটা ছোট্ট গোম্পা আছে,যখন পৌঁছালাম সে তখন বন্ধ ছিল। গ্রামের লোকসংখ্যা ১৩৬ জন, হয়ত সকালে সন্ধ্যায় খোলে পুজো করতে, কে জানে! কমিক এবং বিশেষ করে লাংজা ও তার আসেপাশের অঞ্চল দেখলে ভীষণভাবে মনে হয় টেথিস তার ঢেউ টেউ শুদ্ধ শিলীভূত হয়ে আছে এখানে। লাংজা গ্রাম এখানে পাওয়া বিভিন্ন সামুদ্রিক জীবাশ্ম সংগ্রহের জন্যও বিখ্যাত। একসময় স্থানীয় লোকজন ট্যুরিস্টদের কাছে ৫০ কি ১০০ টাকায় জীবাশ্ম বিক্রি করতেন।


    টেথিসের ইশারা  - ১ 

    টেথিসের ঈশারা  - ২ 

    ট্রায়াসিক যুগের (২০ থেকে ২৫ কোটি বছর আগের)  প্রবালপ্রাচীরের টুকরো টাকরা এবং ট্রায়াসিক-জুরাসিক যুগের (১৪.৫ থেকে ২০কোটি বছর আগের) অ্যামোনাইট ফসিল পাওয়া যায় এখানকার পাহাড়ে বড় বড় বোল্ডারের নীচে, এদিক সেদিকে। তবে হিমাচল প্রদেশের সরকার থেকে আইন করে এই অতি মূল্যবান জীবাশ্মের বিক্রি বন্ধ করা হয়েছে বলে কাগজে পড়েছিলাম। দেখতেই পাচ্ছেন জীবাশ্মগুলোর বয়স হিমালয়ের থেকে অনেকটা বেশী। লাংজায় একটা চৌদুয়া (ফসিলের স্থানীয় নাম) কেন্দ্রও আছে, সম্ভবত জিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া দেখাশোনা করে। লাংজার আরেক নামই হল চৌদুয়া গ্রাম। আমাদের সংগঠকরা এসবে আদৌ উৎসাহী নন,কাজেই সেসব খোঁজা বা যাওয়ার কোনও গল্পই নেই।


    এইসব অঞ্চলেই জীবাশ্মদের দেখা মেলে আজও 

    ওই যে বলছিলাম না, কিব্বেরে এসে কয়েকদিন থাকতে হবে, তখনই লাংজাও ভাল করে ঘুরে দেখতে হবে। পঁচিশ কোটি বছর আগের প্রবালপ্রাচীরের টুকরো জীবাশ্ম! আর তা পাওয়া যাচ্ছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সাড়ে চোদ্দহাজার ফিট উঁচুতে! ভাবতেই গায়ে কাঁটা দেয়। বুদ্ধদর্শন শেষ করে গাড়িগুলো রওনা দিল কাজার পথে ফেরতযাত্রায়। কথা ছিল কাজা বাজারে পৌঁছে আমরা দুপুরের খাওয়া দাওয়া করব। তা সে পৌঁছালাম প্রায় সাড়ে চারটে নাগাদ। দ্য হিমালয়ান ক্যাফে, একটা ছোট্ট আরামদায়ক খাবার জায়গা। সেখানে গিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসা গেল। আমি নিলাম ক্রিম অব চিকেন স্যুপ উইত হার্বস আর ব্যানানা প্যানকেক উইত গ্যুরমে মেপল সিরাপ। দুইই অত্যন্ত ভাল স্বাদের ছিল, বিশেষত মেপল সিরাপ দেওয়া প্যানকেকটা।


    যেমন পরিবেশ তেমনি খাবার দাবার - ক্যাফেটা চমৎকার 

    মেপল সিরাপ ছড়ানো ব্যানানা প্যানকেক 

    কাজার বাজারটা ভারী আকর্ষণীয়। খেয়েদেয়ে অনেকে বাজারের দিকে গেলেন, এদিকে গাড়ি হোটেলে চলে গেছে। নীরজ গাড়ি রেখে আবার এসেছে বাজারে। শুনলাম একটা শর্টকাট রাস্তা আছে বাজার থেকে হোটেল যাবার। তখনো আকাশে চড়চড়ে রোদ্দুর, আমি ভাবলাম গিয়ে একটু বিশ্রাম করে ক্যামেরা ট্যামেরা ঘরে রেখে আবার আসবোখনে। হায়! নীরজের সাথে শর্টকাট ধরে যেতে গিয়ে দেখি সে কার দোকানের পেছনের নর্দমার উপর দিয়ে কোন বাড়ির পয়ঃপ্রণালীর পাশ দিয়ে বিতিকিচ্ছিরি এক রাস্তা। এদিকে কাজায় নাকি এমনি এদিক ওদিক যাবার জন্য ট্যাক্সি বা অন্য কিছু পাওয়া যায় না। ছোট্ট শহর না পাওয়ারই কথা, কিন্তু ওই নালা নর্দমা টপকে আরো একবার যাওয়া আসা করার জন্য নিজেকে রাজী করাতে পারলাম না।

    আরো অনেককিছুর মত কাজার বাজারটাও ঘোরা হল না। পরে এসে ছবি নেব বলে তখন ঠা ঠা রোদ্দুরে আর  বাজারের ছবি নিই নি। যে কোন জায়গাকে ভাল করে চিনতে গেলে তার বাজারে অন্তত কিছুটা সময় কাটানো উচিৎ বলে মনে করি। থাক পরে হবে। কারা যেন গিটার আর উকুলেলে বাজিয়ে গান করছিল সেও শোনা হল না। এমনিতে কাজা এলে বাজারের আশেপাশেই থাকা উচিৎ। বেশ কিছু হোটেল আর হোমস্টে রয়েছে একদম বাজারঘেঁষা। খাওয়া দাওয়া, অন্যত্র যাওয়া সবই সুবিধেজনক। আমাদের হোটেলটা বাজার থেকে বেশ অনেকটা দূরে ছিল। আগামীকাল যাওয়া হবে কী-গোম্পা, চিচম ব্রিজ আর চন্দ্রতাল লেক। মনে হতেই কিঞ্চিৎ চুপসানো মনে দ্বিগুণ   উৎসাহ সঞ্চার হয়। কালই বেড়ানোর অষ্টমী বলা যায়।
     

    লাংজা থেকে কাজা ফেরার পথে 
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ভ্রমণ | ০৮ নভেম্বর ২০২৩ | ৯০৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • mon | 2405:8100:8000:5ca1::115:9d11 | ০৯ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:১১525777
  • দারুন দারুন সব ছবি। লেখাও খুব ভাল লাগল পড়তে।  সত্যিকারে সমুদ্রের ফসিল ওখানে পাওয়া যায়? কি অদ্ভুত।
  • dc | 2401:4900:1f2b:6409:b87f:2284:a31f:bfeb | ০৯ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:২৮525778
  • অসাধারন ছবিগুলো। প্রথম ছবিটা দেখে ওল্ড টার্কি বাজার্ড এর কথা মনে হলো। 
  • সুদীপ্ত | ০৯ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:৩২525780
  • কি অসাধারণ জায়গাগুলো! দারুণ লাগছে পড়তে।  লাদাখের সাথে এর ভূপ্রকৃতির অনেকটা মিল আছে। নাহ, গেলে এই প্রতিটা গ্রামে এক রাত করে থাকতেই হবে দেখছি
  • দীমু | 182.69.176.112 | ০৯ নভেম্বর ২০২৩ ১৯:১৬525827
  • দারুণ yes​​ জীবাশ্ম এভাবে কেনা বেচা করার গল্পটা ইন্টারেস্টিং খুব।
  • kk | 2607:fb90:ea0c:cd31:7a6a:9d53:7567:cde4 | ০৯ নভেম্বর ২০২৩ ২০:৪৮525835
  • এই রকম নদীর শিরা-উপশিরা কখনো দেখিনি। কী অদ্ভুত সুন্দর! আর ঐ পোস্ট-অফিস। খুব মজার লাগলো। বুদ্ধদেবের যে ছবিটা পেছনদিক থেকে তোলা সেটাও খুব ভালো লাগলো। এই পর্বটা পড়ে ঐ তাশি গং গ্রামে চলে গিয়ে ওখানেই পাঁচ নম্বর ঘর বানিয়ে থেকে যেতে ইচ্ছে করছে এখন। সেটা এখুনি সম্ভব নয় তা জানি। তবে আপাতত একটা ব্যানানা প্যানকেক বানিয়ে খেয়ে সেই লোভটা অন্তত মেটাতেই হবে দেখছি!
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ১০ নভেম্বর ২০২৩ ০০:৩৯525859
  • দমুদি তোমার সাথে ঘুরে ঘুরে ভ্রমণটা ব্যাপক হচ্ছে (বুঝতেই পারছ, আমার বেড়ানোর অ্যাাডভেঞ্চার কি আঁধারে ভোজন, সব এইভাবেই হবে)। laugh 
     
    পরের বার যদি কিব্বেরে আর লাংজায় বেশ কিছুদিন কাটাতে পারো কি মজাই যে হবে! 
  • | ১০ নভেম্বর ২০২৩ ১৯:১১525888
  • সব্বাইকে  এত্তগুলো ধন্যবাদ। 
    মোন, হ্যাঁ সত্যিই সামুদ্রিক জীবাশ্ম পাওয়া যায়। টেথিস সাগর ছিল ত এইখানটা। 
     
    সুদীপ্ত, হ্যাঁ রে  লাদাখ আর এখানকার ভূপ্রকৃতি একই রকমের। লাদাখে পাহাড়গুলো আর রঙীন, উচ্চতাও বেশী। 
     
    লহমাদাদা, যা বলেছেন সে ভারী মজা হবে।  
     
    কেকে,  তাশি গঙএ গিয়ে একেবারে থাকতে শুরু করা , অসম্ভব বলছি না তবে খুব খুউউব কঠিন। শীতে প্রায় ৬ মাস এখানে -২০ বা তার চেয়েও নীচে তাপমাত্রা থাকে। কিন্তু ইলেকট্রিক হিটিং তো নেই।  আর আগুন জ্বালাবার মতন কাঠকুটোও  নেই। ছবিতে দেখতেই পাচ্ছ গাছপালা একেবারেই নেই। কাজেই শীতের সময়টা এখানে ভয়ানক। সোলার পাওয়ারও শীতে খুবই সামান্য থাকে কারণ রোদ্দুরের মুখ দেখা যায় না অনেক সময়ই। 
     
    আচ্ছা এই নাও আরো দুটো ছবি দিই তোমাকে। এই ক্যাফেটা বন্ধ পেয়েছি তবে জুলাই আগস্টে নাকি খোলা থাকে। আর ইনি সেই ক্যাফের দরজায় নিস্চিন্তে ঘুমুচ্ছিলেন। অত লোকের হাঁটাচলা কথাবার্তায় একবার আধখান চোখ খুলে দেখেই আবার ঘুমিয়ে পড়লেন। 
     
    ক্যাফের দেওয়ালে নয়, বোর্ডটা ছাদে 
     
    কি ঘুম কি ঘুম বাপরে! 
     
  • r2h | 208.127.71.79 | ১০ নভেম্বর ২০২৩ ১৯:২৯525889
  • হাহা, যাকে বলে কুকুর কুন্ডলিঃ)
  • kk | 2607:fb90:ea0c:cd31:7a6a:9d53:7567:cde4 | ১০ নভেম্বর ২০২৩ ২০:৪১525893
  • এই ছবিটা দেখে (কুকুর কুন্ডলী) মনটা ভালো হয়ে গেলো সকাল সকাল ^_^
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন