এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • বাঙালের প্রথম বিদেশ ভ্রমণ

    PRABIRJIT SARKAR লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ৩৪৫ বার পঠিত
  •  
    বাঙ্গালের প্রথম বিদেশ ভ্রমণ
    প্রবীরজিৎ সরকার
    আমি এবং আমার বাবা কলকাতায় জন্মালেও আমরা বাঙাল। কারণ আমাদের পূর্ব পুরুষ সবাই বাঙাল। বাঙাল কথাটা ওপার বাংলা থেকে কলকাতা আসা লোকজনকে বলা হত বুদ্ধু ভেবে।
    ইংরেজ রাজত্বে প্রথমে কলকাতাকে ওদের ভারতীয় উপনিবেশের রাজধানী করা হয়েছিল। ওপার বাংলা থেকে পড়াশুনা চাকরি করতে অনেকে আসতো। তারা রাস্তাঘাট চিনত না । এত বড় শহর অবাক বিস্ময়ে দেখত। কথা বলত অন্য accent এ। সহজেই এদের চিহ্নিত করা যেত।
    পরে দেশ ভাগের পর লক্ষ লক্ষ লোকজন ওপার থেকে এপার বাংলায় এসে জীবন সংগ্রামে লিপ্ত হল। আমার বাবার বাবা অনেক আগেই এখানে আসেন। গুছিয়ে বসার আগেই মারা যান। বাবা তখন ছ মাসের শিশু। ঠাকুমাকে অনেক সংগ্রাম করে বাবাকে বড় করতে হয়। প্রথা অনুসারে বাবা ওপারের মেয়েকে বিয়ে করেন। তার কিছুদিন পরে মায়ের পরিবার উদ্বাস্তু হয়ে এপারে চলে আসেন। বাবার দায়িত্ব ছিল তাদের পাশে দাঁড়ানো। যতটা পেরেছেন সেই দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই উদ্বাস্তু না হলেও আমাদের সংগ্রাম বাঙালদের মত। এরকম পরিবারে অনেক ভাইয়ের সঙ্গে আমায় বড় হতে হয়েছে। নামি দামি স্কুল কলেজে বাবা পড়ায় নি। ভালো খাওয়া পরা জুটত না। এর মধ্যে আমি চেষ্টা করেছি অর্থনীতি নিয়ে MA পাস করে অধ্যাপনা জুটিয়ে গবেষণা করতে। সারা বিশ্বে নিজেকে মেলে ধরতে।
    আমার MA ক্লাসের সহপাঠীরা অনেকেই বিদেশে পড়াশুনা করতে চলে যায়। প্রতিষ্ঠা পায়। আমি এখানে organised সেক্টরে সরকারি বা আধা সরকারি কলেজে জব সিকুরিটি আছে এমন পড়ানোর কাজ খুঁজেছি। ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পেলে বেশি ভাল হত। পেলাম একটা কলেজে। পাস অনার্স কমার্স সবই ছিল। তাই অনেক ক্লাস। বেশ কিছুদিন পড়িয়ে ফাঁকে ফাঁকে গবেষণার চেষ্টা করেছি।
    আমার আগে বংশে কেউ MA পাস করেনি। অধ্যাপনা করেনি। কেউ বিদেশ যায়নি। পড়তে বা চাকরি করতে। কোন আত্মীয় বিদেশে থাকত না। বিদেশে পড়াশুনা/গবেষণা করতে প্রথম সুযোগ পেতে অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হয়েছে। বিদেশ গিয়ে নানা ধরণের ভাল মন্দ অভিজ্ঞতা হয়েছে। সুযোগমত কিছু ভ্রমণ করেছি। বলা যায় রথ দেখা আর কলা বেচা। যেটুকু মনে করতে পেরেছি লিখেছি। যে ফটোগুলো এতদিন পরে খুঁজে পেয়েছি তার থেকে বাছাই করে কিছু এখানে দিয়েছি।
    ১.দিল্লি থেকে ল্যুব্ল্যানা
    MA পাস করে প্রথম সারির ছেলে মেয়েরা IAS কিম্বা IES হল নয়তো GRE দিয়ে বিদেশে পড়তে গেল। আমি ঠিক করলাম প্রথমে অধ্যাপনা যোগাড় করব। আর্থিক অবস্থা স্থিতিশীল করব। অন্য কোন চাকরি মানে দশ টা পাঁচটা। আমার মত কুঁড়ে লোকের পোষাবে না। প্রথমে ফুড করপোরেশন থেকে চাকরির চিঠি এসেছিল। প্রায় নিয়ে নেব ভাবছি। মেডিকেল টেস্ট হবে। অধ্যাপনা জুটে গেল। বেশ কিছুদিন চাকরি করার পর দু চারটে গবেষণা পত্র ছাপিয়ে MPhil ডিগ্রি পেলাম আর PhD থিসিস লিখে ফেললাম। কদিন বাদে জমা দেব। এবার বিদেশে গবেষণার জন্য সুযোগ খুঁজতে খবরের কাগজ দেখতে লাগলাম। দু তিন মাসের বেশি ছুটি পাব না। তাই PhD এখানেই করলাম।
    হঠাৎ একদিন চোখে পড়ল Indo-যুগোস্লাভ স্কলার এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের বিজ্ঞাপন। তিন মাসের প্রোগ্রাম। আবেদন করলাম । দিল্লি গিয়ে ইন্টারভিউ দিলাম। অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে সরকারি টাকা আদায় করলাম - যাতায়াত ভাড়া। সরকার এক পিঠের ভাড়া দিয়ে বলল আগে যাও গিয়ে ফেরার ভাড়ার আবেদন করবে। তখন নিয়ম ছিল এক পিঠের ইকোনমি ক্লাসের ভাড়া মানে এয়ার ইন্ডিয়ার business ক্লাস। তাই প্ৰথম বিদেশ গেলাম business ক্লাসে বসে শ্যাম্পেনে চুমুক দিতে দিতে। জানলা দিয়ে পৃথিবী দেখতে দেখতে। দামি কোন ক্যামেরা ছিল না। ছিল একটা পাতি হট শট ক্যামেরা। জানলা দিয়ে একটা দুটো ছবি তুলেছিলাম। পরবর্তী কালে স্ক্যান করে রেখেছিলাম।
    আমায় এয়ার ইন্ডিয়া অদ্ভুত টিকিট কেটে দিয়েছিল। কলকাতা-দিল্লি-ফ্রাঙ্কফুট-বেলগ্রেড-ল্যুব্ল্যানা। দিল্লি আগের দিন রাতে পৌঁছে হোটেল সেন্টুরে রাত কাটালাম (ওদের পয়সায়)-পরদিন সকালে ফ্লাইট। যথারীতি লেট করে ছাড়ল আর ফ্রাঙ্কফুর্ট পৌঁছে সব কানেকশন মিস। শ্যাম্পেন খাবার ঘোর কেটে গেল।
    এক লম্বা জার্মান সুন্দরী আমায় বললেন দাঁড়াও। দাঁড়িয়ে রইলাম আর উনি সবাইকে বিকল্প ফ্লাইট দিলেন আর শেষে বললেন তোমায় রাত ফ্রাঙ্কফুর্টে কাটাতে হবে। অফিস চল। ওখানে হোটেল ভাউচার করে দিচ্ছি। একটা গলফ কার্ট ধরণের গাড়ি করে এয়ারপোর্টের এক কোনে নিয়ে সব কাগজ পত্র করে দিলেন।
    এবার বাইরে বেরোবার পথ খুঁজে যেই বেরোবার তোড়জোড় করছি ইমিগ্রেশন অফিসার বলল তোমার ভিসা নেই। বাইরে বেরোতে পারবে না। জার্মান হোটেল ভাউচার কাজে লাগবে না। আমার শুধু যুগোস্লাভ ভিসা ছিল।
    বিশাল এয়ারপোর্ট! কি করে সেই মেয়েটার দেখা পাই ভাবছি। কি ভাবে যেন পৌঁছে গেলাম। উনি সব শুনে ওই অফিসারকে জার্মান ভাষায় অনেক কিছু বললেন। তারপর আমায় বললেন transit ভিসা করে দিলাম তাও দেশে ঢুকতে দেবেনা। ওদের বক্তব্য তোমার পাসপোর্ট জাল। তোমার ছবি অন্যের পাসপোর্টে লাগানো বলে ওদের সন্দেহ। কি বিপদ! আমি নিজে লাইন দিয়ে পাসপোর্ট যোগাড় করেছি। জাল কি করে হবে! যাই হোক business ক্লাস বলে মনে হয় মেয়েটা গ্যারান্টার হয়ে আমায় বাইরে যাবার ব্যবস্থা করল।
    বাইরে তো বেরোলাম! নভেম্বর মাসে মাঝ রাত। হু হু করে ঠান্ডা হাওয়া বইছে। গরম জামা কাপড় লাগেজে। ট্যাক্সি ভাড়া কত লাগবে জানি না। যুগোস্লাভ সরকার থাকা খাওয়া দেবে । তাই ব্যাংক ডলার দিল সামান্যই (সে যুগে এসব নিয়ে খুব কড়া কড়ি)। একজন দেখালো দূরে একটা বাস স্টপ। হোটেল থেকে ফ্রী বাস ঘন্টায় একটা আসে। প্রায় এক ঘন্টা পর একটা বাস এলো। হোটেলটার নাম যদ্দুর মনে পড়ে স্টাইনবার্গার। ওখানে পৌঁছে ফ্রেস হয়ে খাবার খেতে এলাম। এলাহী ব্যবস্থা। সব চেখে দেখতে দেখতে পেট ভরে গেল। কফি পয়সা দিয়ে কিনতে হবে। কুপনে খাবার আছে ড্রিংক নেই। জল খেয়ে ঘরে এলাম।
    আগের দিন জার্মান মেয়েটাকে দিয়ে টিকিট পাল্টে ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে সোজা লুব্ল্যানা করে নিয়েছিলাম। সকালে হোটেল ছেড়ে সোজা ফ্লাইট ধরলাম। নেমে আবার সেই পাসপোর্ট ঘোটালা। সবাই চলে গেছে। আমায় বসিয়ে রেখেছে। দূর থেকে দেখছি আমার লাগেজ শুধু বেল্টে ঘুরছে। ওরা বলছে অন্য ডকুমেন্ট দেখাও যেমন ড্রাইভিং লাইসেন্স। বললাম গাড়ি নেই। চালাতেও জানি না। ড্রাইভিং লাইসেন্স কোথা থেকে পাব? কিছু আর না বলে শুধু বসিয়ে রাখল। যেখানে যাব তাদের আমন্ত্রণ পত্র দেখালাম। লাভ হল না। তারপর শেষে বললাম ওখানে ফোন করে একটু কানেক্ট করে দাও। ওদের বললাম আমায় এখানে আটকে রেখেছে তোমরা কিছু কর। তখন ওরা এসে উদ্ধার করে নিয়ে গেল। ওরাও বললো বেলগ্রেড গিয়ে পাসপোর্ট নিয়ে ঝামেলা মিটিয়ে রাখো। আমরা এসে উদ্ধার না করলে ওরা জাল পাসপোর্ট বলে জেলে ভরে দিত।
    পরে বেলগ্রেড এসে নতুন পাসপোর্ট করালাম। এরাও বলল তোমার এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে ভ্রমণ । তাই আমরা নতুন পাসপোর্ট দিলাম যেহেতু তোমার পুলিশ রিপোর্ট আমাদের কাছে আছে। তুমি দেশে ফিরে বলবে কলকাতা থেকে জাল পাসপোর্ট দিল কেন?
    পরে কলকাতা ফিরে এসে পাসপোর্ট অফিসে দেখা করেছিলাম। ওরা বলল তোমার পাসপোর্ট যখন ইস্যু হয়েছে তখন ছবি এমনি লাগানো থাকতো। এখন কাঁচ কাগজ লাগায়। ভারতীয় দূতাবাস জাল বলে কি করে?
    ল্যুব্ল্যানা এয়ারপোর্ট থেকে একটা ছাত্রদের হোস্টেলে উঠলাম। ওখানে তিন মাস থাকার ব্যবস্থা করা হল। দুটো করে বেডরুম চারটে single বেড। ছোট কিচেন স্পেস আর টয়লেট। বিজ্ঞাপনে পাকা চাকরির অধ্যাপক চাওয়া হয় আর গিয়ে শুনি আমরা ছাত্র। ওদের সঙ্গে মানিয়ে থাকতে হবে। আমার ঘরে দেখলাম পাশের বেডে মেয়েদের পোশাক আশাক। ভাবলাম একই বেডরুমে ছেলে মেয়ে থাকে। পাশের বেডরুমে তাই দেখলাম। একটু পরে একটা ছেলে এসে মেয়েদের পোশাক আশাক নিয়ে গেল। পরে শুনেছিলাম ছেলেদের হোস্টেলে ছেলেরা থাকে -মেয়েদের থাকার কথা নয়। এরা adjust করে যুগল হিসাবে থাকে। কর্তৃপক্ষ হোমো সেক্স নিরুৎসাহিত করার জন্য এই adjustment মেনে নেয়। আমি আর সঙ্গিনী পাই কোথায়? তাই কাবাব মে হাড্ডি হয়ে রইলাম অন্য যুগলের চক্ষুশূল হয়ে।
    বাইরে ভয়ানক ঠান্ডা। ভিতরে সেন্ট্রাল হিটিং এ সিদ্ধ হচ্ছি। গায়ে জ্বালা পোড়া। গায়ের কম্বল ভিজিয়ে হিটিং প্যানেলে রেখে দিতাম। নইলে নাক মুখ শুকিয়ে কাঠ। সকালে স্নান করে গায়ে তেল মেখে ইনস্টিটিউট যাই। আমায় অফিস স্পেস দিয়েছে যা কলেজে পাওয়া স্বপ্ন। তাই কাজের দিনে সকাল আটটায় হাজির হই। ওরা এক রকম থক থকে কফি গিলে খায়। বলে কাভা। ফিল্টার কফি চিনি ছাড়া না ছেঁকে খায়। গা গরম হয়ে যায়।
    কলকাতার শীতে মাঙ্কি ক্যাপ পরে বহুলোকে । একদিন পরতেই যা আওয়াজ খেলাম! শেষে আমি বুক চিতিয়ে শীত সহ্য করতাম। বাঙ্গালী জাতির সম্মান রাখার দায় আমার।
    একদিন বরফ পরতে শুরু করল। ভারতের পাহাড়ি শহরে শীতে যাই নি কখনো। তাই আমার প্রথম বরফ পড়তে দেখা এখানেই।
    কদিন বাদে বরফ ভরা রাস্তায় হাঁটা দায় হয়ে গেল। বেশ কয়েকবার পড়তে পড়তে বেঁচে গেছি। একদিন পড়ে গেলাম।
    বিকাল হলেই ঝুপ করে অন্ধকার নেমে আসে। ঘরে বসে থাকি। মন কেমন করে। এরা রাত হলেই পার্টি করে মদ খেয়ে নাচে। আমি ও রস বঞ্চিত। আমায় মাসে যে ভাতা দিত তা খাতায় কলমে কয়েক লাখ দিনার। জিনিসপত্র সব চড়া দাম। সসেজ সালামি গাজর পাউরুটি খেয়ে কাটাতাম। ওখানেই হট ডগ প্রথম খেলাম।
    ক্রিসমাস নব বর্ষ ধরে বেশ কদিন ছুটি। আমায় ইনস্টিটিউট কিছু দিনার দিল ওদের পত্রিকায় একটা লেখা লিখেছিলাম সেটার জন্য । আমায় কয়েকটা জায়গা বেড়াবার জন্য সাজেশন দিল। পোস্তয়না কেভ, কোপার, পিরান আর বহিন (Bohinj) । সব ল্যুব্ল্যানা থেকে এক দেড় ঘণ্টা ট্রেনে বা বাসে করে যাওয়া যায়।
    পোস্তয়না stalactite & stalagmite দিয়ে সাজানো বেশ বড় গুহা। টয় ট্রেন সার্ভিস আছে ভিতরে নিয়ে যাবার জন্য। বহিন Bohinj একটা লেকের পারে। ওখানে স্কি করতে যায় লোকে। মনোরম দৃশ্য।
    কোপার আর পিরান Adriatic কোস্টের শহর গরম কালে গম গম করে। আমি শীত কালে দেখলাম সব শুন শান। একা একটা সন্দেহজনক লোক ঘুরে বেড়াচ্ছে দেখে পুলিশ ডকুমেন্ট দেখতে চাইল। স্টুডেন্ট পরিচয় দিলাম। অত এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম বুঝবে না। ছেড়ে দিল।
    ল্যুব্ল্যানা একটা ছোট শহর। স্লোভেনিয়ার রাজধানী। আগে স্লোভেনিয়া যুগোশ্লাভিয়ার অঙ্গ রাজ্য ছিল। আমি সেই সময় গেছিলাম। শহরের মধ্য দিয়ে একটা নদী প্রবাহিত। কেউ বলে না দিলে ওটা নদী বোঝা যাবে না। নদী না বলে নালা বলা ভাল। স্লোভিনরা যুগোশ্লাভিয়ার অন্য অঞ্চলের চেয়ে অবস্থাপন্ন ছিল। অনেকেই জার্মানি অস্ট্রিয়াতে কাজের সুবাদে থাকত। তারা টাকা পাঠাত। তাই খুব সস্তার জিনিস পাওয়া যেত না। সার্বিয়ার লোকেরা এদের পছন্দ করত না। এরাও খুব একটা সার্বিয়ার প্রাধান্য মানতে চাইত না। বিশ্ব যুদ্ধের সময় মার্শাল টিটো জনপ্রিয় হয় তাই এক দেশ হিসেবে ছিল। কিন্তু ওনার মৃত্যুর পর ভিতরে ভিতরে ভাঙ্গন হচ্ছিল। আমার চোখেও তাই পড়েছিল।
    ট্রেনে করে বেলগ্রেড যাচ্ছি। UK ভিসা করতে। সাসেক্স ভিজিট পেয়েছি। যুগোশ্লাভিয়ার ভিজিট পেতে দিল্লির বদমাসদের সাথে এত লড়তে হয়েছিল বলেই আমি এই ভিজিট নিলাম। আগেই সাসেক্স ভিজিট পেয়ে গেছিলাম। চিঠিটা আরেকটু আগে পেলে ওই লড়াই লড়তাম না। যাই হোক দেশে ফিরে UK ভিসা নিতে সময় পাব না। তাই বেলগ্রেড যাওয়া। রাতের ট্রেন। ভাবছিলাম ঘুমোতে পারব। দেখি সারা ট্রেন ভর্তি ছেলেপুলেরা। শুনলাম এরা বাধ্যতামূলক সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে যাচ্ছে। প্রথমে আমার reserved সিটে বসতে দিল না। আমি দু চারবার ইন্দিয়া ইন্দিয়া বলে সহানুভুতি পেতে চেষ্টা করলাম। তারপর একজন ভাঙা ভাঙা ইংরাজিতে বলল আমি স্লোভেনিয়ার ভাষা জানি কিনা। যখন দেখল আমি ওদের ভাষা জানি না খুশি হল। ওরা সার্বিয়ান ছিল। আমায় বোঝাল ওরা স্লোভিনদের অপছন্দ করে। তারপর বসতে দিল।
    একেকটা স্টেশন আসে আর ওরা লুটপাট চালায়। শেষে পুলিশ এল। আমাদের সবাইকে বাইরে দাঁড় করিয়ে ওই লুটেরাদের নাম ধাম নিল। লুটের মাল উদ্ধার করল। ওরা হাসি তামাশা করছিল। ওরা জানে ওরা এরপর সৈনিক হবে। এই পুলিশ কিছুই করতে পারবে না।
    সকালে বেলগ্রেড পৌঁছে দেখলাম ওদিন ভিসার আবেদন জমা নেবার সময় পেরিয়ে গেছে। ভারতীয় দূতাবাসের এক বাঙালি কর্মীর বাড়িতে উঠলাম। ওর বউ আর শাশুড়ি আমায় পছন্দ করছিল না। আমার দু একটা কথায় বুঝে গেল আমরা বাঙ্গাল। আমাকে সিনেমায় দেখা অধ্যাপক অধ্যাপক (মোটা ফ্রেমের চশমা পরা উত্তম কুমার) দেখতে নয়। চুল বড় হয়েছে। কাটানো হয়নি। তাই হয়তো তাদের অপছন্দ! নইলে বউটার সঙ্গে ফোনে অনেকবার কথা হয়েছিল। উনিই আমায় বেলগ্রেড এলে কয়েকদিন থাকতে বলেছিলেন। ভদ্রলোক যেই একটু আমার সঙ্গে গল্প গুজব করছেন ভিতর থেকে ডাক আসছে। ভাবছে বরের সঙ্গে জমিয়ে গল্প করে এখানেই থেকে যাবে! বেশ কয়েকবার এমন হল কয়েক ঘণ্টার মধ্যে। উনি থমথমে মুখ করে জিগ্যেস করলেন কদিন থাকব। আমি বললাম কাল সকালে উঠে ভিসার আবেদন করব। উনি বললেন রাতারাতি তো ভিসা পাবেন না। বেশিদিন তো এখানে থাকা যাবে না। আমি বললাম চিন্তা করবেন না। দেরি হলে ফিরে যাব। তারপর এমব্যাসি গিয়ে পাসপোর্ট পাল্টালাম (সেই কলকাতায় ইস্যু করা 'জাল' পাসপোর্ট) ।
    পরের দিন সকালে ভিসার আবেদন করে এক সুন্দরীর বদান্যতায় ভিসা পেলাম। ভিসা অফিসার সাক্ষাৎ করে আমায় বাজিয়ে দেখবেন ঠিক করেছিলেন। কিন্তু বার দুয়েক সময় দিয়েও দেখা করলেন না। শেষে মেয়েটাকে বললাম এই ঠাণ্ডায় পথে পথে আর কত ঘুরব! তখন মেয়েটি নিজ দায়িত্বে ভিসা দিয়ে দিলেন।
    বেলগ্রেডে তখন ভয়ানক ঠান্ডা।
    চারিদিক কেমন হেজি ফাজি। আমার পাতি ক্যামেরায় ছবি তোলা বেকার। কালেমেঘদান বলে একটা জায়গার ছবি তুলেছিলাম। ভাল ওঠেনি। স্ক্যান করে রাখিনি। আরেক বাঙালি পরিবার নেমন্তন্ন করে খাইয়ে ছিল। ওখান থেকে ফিরতে দেরি দেখে এরা ভাবল আজকেও থেকে যাবে। আমিও হুরমুরিয়ে এসে লাগেজ নিয়ে স্টেশন ছুটলাম রাতের ট্রেন ধরতে। তাড়াহুড়াতে ওই পরিবারকে আসি আবার দেখা হবে বলা হয়নি। সেটাকে অজুহাত করে বউটা আর ফোনে কথা বলত না। আসলে ওর বরকে ফোন করতে হত। এমব্যাসি থেকে ওকে না পেলে বাড়িতে লাইন দিত। বউটা ফোন ধরে বলত আমরা ব্যস্ত আছি।
    বেলগ্রেড স্টেশনে এসে দেখলাম মদ্যপান আর নাচ। সেসব দেখে ট্রেনে উঠলাম। আমার সিটে বসে আছি। কিছুক্ষণ পড়ে এক বুড়ো মাতাল এক কলসি ওয়াইন নিয়ে উঠলেন। তারপর আমায় আদর করে থাবরাতে লাগলেন আর অনুরোধ করলেন ওর কলসি থেকে মদ খেতে। একজন আধা ইংরাজিতে বললেন -ও বলছে আমি তোমার বাবার মত আমি আদেশ করছি তুমি এই মদ খাও। ওরাও বললেন একটু খাও নইলে ও থামবে না। আমি যেই একটু সিপ করতে গেলাম ও পুরো কলসি উল্টে দিল। বেশ কিছুটা পেটে চলে গেল। খেতে ভালোই ছিল। কিন্তু ওর থাবরানি থামলো না। কি বিপদ! সেই সময় ওখানে দর্শক হিসাবে দুজন ছিল। মনে হয় গোয়েন্দা। ওরা আমায় অন্য কম্পার্টমেন্টে নিয়ে গেল। সেটা ছিল ফার্স্ট ক্লাস। আমি বুঝিনি। চেকার এসে ফাইন করল। ওরা কি সব ভুজুঙ ভাজুং দিল। চেকার চলে গেল। পরে একজন নাছোড়বান্দা চেকার খালি মানি মানি বলে চেঁচাতে লাগল। ওই দুজন কিছু করতে পারল না। শুধু ফাইন কমিয়ে দিল এই বলে যে আমি সবে এসেছি ফার্স্ট ক্লাস সিটে। গচ্চা গেল। তারপর শুরু হল আরেক উৎপাত। একটা স্টেশনে ওরা দুটো মেয়েকে তুলল আর শুরু করল সেক্স। উদ্দাম সেক্স! আমি চোখ বন্ধ করে শুধু উপলব্ধি করলাম। দু একটা বুটের লাথি ও গায়ে লাগল। তারপর আমিও বুট শুদ্ধ পা সামনের টেবিলে তুলে ঘুমানোর ভান করে পড়ে রইলাম। ওদের মুখ তাতে মাঝে মধ্যে ঘষে যাচ্ছে। ওরা কাজের দাপট কমাচ্চে। এই ভাবে আমার প্রথম বেলগ্রেড ভ্রমণ শেষ হল।
    ২. ল্যুব্ল্যানা থেকে ইতালি আর অস্ট্রিয়া
    লুব্ল্যানা এমন একটা জায়গায় যে একই বেলার মধ্যে ব্রেকফাস্ট করে আল্পস পর্বতে স্কি করে সমুদ্র স্নান শেষ করে লাঞ্চ খেয়ে চলে যাওয়া যায়। আমি ওর কোনটাই করি না। তার উপর ভয়ানক ঠান্ডার সময় ছিলাম। তাও কিছু স্পটে ঘুরে এসেছিলাম।
    ল্যুব্ল্যানা শহর থেকে ইতালির ত্রিয়েস্তা শহর ও খুব কাছে। বাসে সকালে গিয়ে বাজার করে বিকালে ফিরে আসা যায়। কিছু লোকের হাতে জার্মান মার্ক ছিল। তারা ওখানে গিয়ে উন্নত দুনিয়ার জিনিস পত্র কিনত। তাই রোজ এরকম বাস সার্ভিস ছিল। আমি শুনলাম নোবেল পুরস্কার বিজয়ী পাকিস্তানি বিজ্ঞানী আব্দুস সালাম Third World একাডেমি খুলেছেন ওই শহরে। আমি ওদের লিখলাম। ওরা তিন দিনের ভিজিট দিল আর আমার একটা লেকচারের ব্যবস্থা করল।
    একদিন সকালে ওদের নিমন্ত্রণ পত্র আর ভিসা নিয়ে বাসে উঠে বসলাম। বর্ডার পৌঁছে শুরু হল আমার দুর্গতি। বাসে অফিসার উঠে সবার দিকে তাকিয়ে খুঁজে নিলেন কালা আদমি আমাকে। পাসপোর্ট ভিসা চিঠি দেখালাম। সব নিয়ে লোকটা হাওয়া হয়ে গেল। বাসের লোকেরা আমার দিকে কটমট করে চেয়ে আছে আর বিড় বিড় করে গালি মারছে। ড্রাইভার আমায় বলল নেমে যাও। আমি এক পা ও নড়লাম না। আমি জানতাম আমি নামলেই বাস নিয়ে চলে যাবে আমায় ফেলে। ওর ও বাজার করার তাগিদ আছে। বেশ কিছুক্ষণ পর লোকটা আরেক অফিসার নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করল। একমাস অপেক্ষা করে ওদের ভিসা পেযাচ্ছিলাম। তাও এই হেনস্থা। ওদের হাব ভাব দেখে মনে হল আমি বোধ হয় প্রথম ভারতীয় স্লোভেনিয়া থেকে ইতালি যাচ্ছি। কি করবে বুঝতে পারছে না। এবার বাসের লোক চিৎকার করা শুরু করল। ওনারা রেগে গিয়ে সবাইকে স্ট্রিপ সার্চ করার আদেশ দিলেন। আমাকেও নামতে হল। তারপর ওদের সার্চ শেষ হতেই বাসে উঠে বসল আর যা আশঙ্কা করছিলাম তাই হল। বাস আমায় ফেলে পালালো। আমার সাবান , শ্যাম্পুর মিনি শিশি, জামা প্যান্ট সব খুলে খুলে দেখে কিছু যখন পেল না বলল যাও। আমি এবার চেঁচাতে লাগলাম। আমার বাস চলে গেছে আমি কি করব? তখন ওরা জাগ্রেব বা আরো অনেক জায়গা থেকে বাস আসে তার একটায় তুলে দিল। ওদের ভাষায় বললো ওর টিকিট কাটবে না। ওর বাস ওকে ফেলে পালিয়েছে। সারা বাস আমার দিকে তাকিয়ে হোহো করে হাসছে। আর আমি মাথা নিচু করে আছি। যেন চোরের দায়ে ধরা পড়েছি। পরে বাস স্ট্যান্ডে সেই ড্রাইভারকে খুঁজে বকলাম। সেও আমায় ওর ভাষায় যা বলল তার মর্মার্থ: ফের যদি এই বাসে তোমায় দেখি ঘাড় ধরে নামিয়ে দেব। বুঝলাম ট্রেনে ফিরতে হবে।
    ত্রিয়েস্তা বাস স্ট্যান্ড থেকে আমার গন্তব্য অনেক দূর। বেশ কিছু দূর গিয়ে একটা বাস ধরতে হবে। শুনলাম টিকিট কোন কিয়স্ক থেকে কিনতে হবে। খুঁজে পেতে এরকম জায়গা থেকে টিকিট কিনে বাসে চড়ে বসলাম। বেশ কিছুক্ষণ পরে খেয়াল করলাম এই টিকিট সবাই একটা যন্ত্রে ঢোকাচ্ছে। আমি ওদের দেখাদেখি ওরকম যন্ত্রে টিকিট ঢোকালাম। কিছু একটা ছাপ দিল যন্ত্র। তার পরের মুহূর্তে একটা চেকার উঠেই আমায় ধরল। ভাবখানা পাইসি একটা মুরগি। টিকিট কয়েক মুহূর্ত আগে validate করেছি। ও বিশ্বাস করতে পারছে না। বেশ কয়েকবার টিকিট যন্ত্রে ঢুকিয়ে ও বোঝার চেষ্টা করছে case টা কি হল? কোন খুঁত না পেয়ে ছেড়ে দিল।
    ইন্সিটিউট পৌঁছে হোটেলে উঠলাম। খুব ভাল ব্যবস্থা। আসে পাশে হাঁটাহাঁটি করে দেখলাম আমার বক্তৃতার জন্য নানা জায়গায় পোস্টার। লেকচার হলে বহু লোক। দু জন তরুণ বাঙালি বিজ্ঞানীর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। তারা আসবে বলে এল না। গেঁয়ো যোগী ভিখ পায়না case । কিন্তু লেকচার ভাল জমেছিল। জীবনে প্রথম বিদেশে বক্তৃতা। খুব আনন্দ হল। ওই দুজন ও পরে এসে বলল ওদের স্যার খুব প্রশংসা করেছে। ওরা একটা কাজে আটকে যাওয়ায় আসতে পারেনি।
    পরদিন রাতের ট্রেনে রোম গেলাম।রাতে ট্রেনে ঘুমিয়ে ভোর থেকে সারাদিন ঘুরব এই প্ল্যান। ফাঁকা ট্রেন কিন্তু ঘুমাবার জো নেই। কিছুক্ষণ পর পর পুলিশ আসছে ডকুমেন্ট দেখছে। জেরা করছে। ইতালি এসেছ পুলিশ রিপোর্ট কই। ভাগ্যিস আমি হোটেলের বিল ফেলিনি। ওটা দেখানো তে রেহাই দিল। বুঝল যা করবার ওরাই করেছে।
    স্টেশন থেকে বেরোতেই একদল জিপসি ঘিরে ধরল। চোখের সামনে একটা খবরের কাগজ নাচাতে নাচাতে কি বলছিল ওরাই জানে। পরে খেয়াল করলাম দশ ডলার হাতের কাছে রাখা ছিল সারাদিন পিজ্জা খেয়ে কাটাব বলে। সেটা হাওয়া। আর সব টাকা নানা জায়গায় লুকানো ছিল। শীত কাল বলে অনেক কিছু পরা ছিল। টাকা পাসপোর্ট লুকিয়ে রাখার সুবিধা। সারা দিন রোমে ঘুরে বেড়ালাম। একটা conducted ট্যুর নিয়ে শহরটা দেখলাম। শীত কাল। অন্ধকার তাড়াতাড়ি নেমে এল। ছবি তোলার প্রশ্ন নেই।
    রাতে একটা ট্রেন ধরে ভেনিস গেলাম । ভোরে ভেনিস পৌঁছে বোটে ঘুরে বেড়াতে লাগলাম। কিছু ছবি এখনো আছে স্ক্যান করে দিলাম এখানে।
    রাতের ট্রেনে লুব্ল্যানা ফিরে আসার জন্য স্টেশন গেলাম। খুব সম্ভবতঃ রবিবার ছিল। তাই অনেক ট্রেন বাতিল। স্টেশন শুনশান। আমি একা প্লাটফর্মে পায়চারি করছি। এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত। দু দিকে দুটো পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল। যতবার ওদের কাছে আসছি একবার করে পাসপোর্ট আর ভিসা দেখতে চাইছে। শেষে মুখ থেকে কাঁচা বাংলা বেরিয়ে এল। কি উগ্গা রে বাবা! কেন জানি তারপর আর ঘাটায় নি। আমি শুনেছিলাম আন্তর্জাতিক টিকিট একটু বেশি দাম নেয়। তার উপর ইতালি থেকে কাটছি। তাই বর্ডার অব্দি কাটলাম টিকিট। ট্রেন এখানে অনেকক্ষন দাঁড়ায়। তাই বাইরে বেরিয়ে ওখান থেকে যুগোস্লাভ দিনারে ল্যুব্ল্যানার টিকিট কাটলাম। পরিষ্কার দেখালাম ওই দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনে যাব। বুকিং ক্লার্ক কি বুঝল জানি না। লোকাল ট্রেনের টিকিট দিল। তখন যদি বুঝতাম ওই ট্রেনে উঠতাম না। উঠে চেকারের পাল্লায় পড়লাম। বড় ফাইন করল। আমি গড় গড় করে ইংরাজিতে প্রতিবাদ করলাম। চেকার প্যাসেঞ্জারদের মধ্যে খুঁজে একজনকে নিয়ে এল। এক যুবতী। সব জায়গায় দেখেছি মেয়েরা একটু আধটু ইংরাজি জানে। ছেলেরা একদম জানে না বা ভয় পায় কি বলতে কি বলব। ইতালিতে ও রাস্তা জিগ্যেস করলে ছেলেরা তাদের সঙ্গিনীকে এগিয়ে দিত। যাই হোক মেয়েটা বলতে লাগল ইউ মাস্ত পে দিনার। আমি তর্ক শুরু করতেই চেকার আর মেয়েটা রণে ভঙ্গ দিল। আমি তারপর ঘুমানোর ভান করে খেয়াল রাখছিলাম পুলিশ আসে কিনা। যদি আসে জেলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তখন ফাইন দিয়ে দেব। শেষ পর্যন্ত কিছু হয়নি। অন্য প্যাসেঞ্জাররা আমায় বলল লাস্ট স্টেশন এসে গেছে নেমে যাও। ইতালি ভ্রমণ সাঙ্গ হল।
    আমি লুব্ল্যানা থাকার সময় এক অস্ট্রিয়ান অধ্যাপক ভিয়েনা তে কয়েকটা lecture দেবার আমন্ত্রণ জানালেন। উনি ওনার বাড়িতে অতিথি হিসাবে রাখবেন আর বিশ্ববিদ্যালয় ফার্স্ট ক্লাস ট্রেন ভাড়া দেবে। ওদের চিঠি নিয়ে অস্ট্রিয়ান কনস্যুলেট গেলাম। ওখান থেকে পরিস্কার বলে দিল গিয়ে ফিরবে ওখানে থেকে যাবে না তার গ্যারান্টি হিসাবে 5000 ডলার জমা রাখতে হবে। আমি ঐ অধ্যাপককে ফোনে জানালাম। সেই সময় অস্ট্রিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন কুর্ট ওয়ালধাইম বা ওই জাতীয় কোন নাম। উনি এক সময় রাষ্ট্রসংঘের বড় কর্তা ও ছিলেন। হঠাৎ ওনার নাৎসি যোগাযোগ ফাঁস হয়ে গেছিল। একটু চাপে ছিলেন। ওই অধ্যাপক ওনাকে চিনতেন। ওনাকে বললেন কনস্যুলেট একজন ভারতীয় অধ্যাপকের সঙ্গে চূড়ান্ত অসভ্যতা করছে। ওই প্রেসিডেন্ট সাহেব সোজা কনস্যুলার দপ্তরে ধাতানি দিলেন। কনস্যুলেট থেকে একজন আমার ইনস্টিটিউটে এসে ভিসার স্ট্যাম্প দিয়ে ক্ষমা চেয়ে গেলেন।
    নির্দিষ্ট দিনে ফার্স্ট ক্লাস টিকিট কেটে সিগারেট খেতে খেতে ভিয়েনা পৌছালাম। তখন সিগারেট নিয়ে এখনকার মত কড়াকড়ি ছিল না। যুগোশ্লাভিয়াতে 555 ডানহিল তৈরি হত আর কলকাতার চারমিনারের চেয়েও কম দামে পাওয়া যেত। সিগারেট খেতে খেতে নামলাম আর সেই অধ্যাপক বলে দিলেন আমার বাড়িতে তোমার ঠাঁই নেই। বিশাল ধাক্কা লাগল। ভাগ্যিস আমি আসক্ত ছিলাম না। ওনাকে বললাম আমি না খেয়েও থাকতে পারি। তোমায় কথা দিচ্ছি যে কদিন থাকছি একটাও খাব না । মনে মনে বললাম গ্যাটের কড়ি ফেলে হোটেলে থাকতে হবে। তার চেয়ে কদিন সংযম পালন করি। ওনার বাড়িতে উঠে ভিয়েনা দেখতে বেরোলাম। উনি ওনার উইকলি টিকিট দিয়ে দিলেন। ওনার ঘরে যখন ইচ্ছা ঢোকা বেরোনোর চাবি ও দিলেন।
    একদিন সস্ত্রীক বেরোলেন আমায় রেস্টুরেন্টে খাওয়ালেন। তারপর এলো বিপত্তি। ওনার ফ্লু হল। উনি ঘর বন্দী হয়ে থাকলেন। শুনলাম ওদের ভিয়েনায় নতুন ফ্লুর প্রাদুর্ভাব হয়েছে। সবাই আক্রান্ত হচ্ছে। আমার বিশ্বাস ছিল কলকাতাতে এর চেয়ে অনেক ভাইরাসের মোকাবিলা করি। আমার কিছু হবে না। হয় ও নি কিছু। আমার বক্তৃতার দিন অন্য এক অধ্যাপক এসে নিয়ে গেলেন। অনেক ছাত্র ছাত্রী এসেছিল। ভালোই লাগল। ফাঁকা মাঠে গোল দিতে আর কার ভাল লাগে!
    একটা রিসার্চ ইনস্টিটিউটে রাতে বক্তৃতা দেবার ব্যবস্থা হল। যাবার সময় ওই অধ্যাপক বললেন ওখানে সুট কোট টাই পরে যাওয়া বাধ্যতামূলক। আমার তো এসব নেই। সত্যি কথা বলতে কি আমি যখন বেলগ্রেডে আমাদের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সৌজন্যমূলক দেখা করেছিলাম উনি কিছু মুখের উপর না বললেও পরে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। এবার আসল বিপদ। ঠিক ঠাক পোশাক না পরলে ঢুকতে দেবে না। আমি বিরক্ত হলাম। কিন্তু হোস্ট অধ্যাপক পীড়া পীড়ি করে তার ছোট হয় এমন সুট টাই আমায় পরালেন। ভালোই ফিট করেছিল। আমি না করতে পারলাম না। সেখানেও বক্তৃতা ভালোই জমেছিল।
    এবার ফেরার পালা। উনি বললেন তোমার ফার্স্ট ক্লাস টিকিট না কাটলেও চলবে। তোমাদের ভারতের মত কোথাও টিকিট দেখাতে হবে না। যা হিসাব করে হয় আমরা দিয়ে দেব। কিছু টাকা হাতে এল। উনি সাজেস্ট করলেন সবাই বড় বড় শহর দেখে তুমি বরং ফেরার সময় একটা ছোট্ট শহর দেখে যাও। নাম Klagenfurt । সত্যি ছবির মত শহর। প্রচন্ড ঠান্ডায় ঘুরে বেড়াতে লাগলাম। মাঝে মাঝেই এক লম্বা ফর্সা গৌর বর্ণ সাধু বাবার সঙ্গে দেখা হচ্ছিল। পরে শুনলাম উনি ভবঘুরে। চুল দাড়ি রাখাতে আমাদের দেশের সাধুবাবার মত লাগছিল। উনি কয়েকটা জায়গা দেখালেন।
    ওখান থেকে রাতে ফেরার ট্রেন ধরে যুগোস্লাভ বর্ডারে একটা স্টেশন এলাম। নাম যদ্দুর মনে হয় Jesinice উচ্চারণ হবে ইয়েসিনিচে। ওখান থেকে অনেক এক্সপ্রেস ট্রেন লুব্ল্যানা যায়। কিন্তু মাঝরাতে ওখানে পৌঁছলে আমায় ওই ঠান্ডায় হেঁটে হোস্টেলে ফিরতে হবে। আবার স্টেশনে থাকলে পুলিশ ধরবে। তাই একটা বুদ্ধি করলাম। ভোর বেলা একটা লোকাল ট্রেন আছে তার টিকিট কেটে waiting রুমে গরমে আরামে ঘুমোতে লাগলাম। যথারীতি পুলিশ ধরল। আমি টিকিট দেখিয়ে বললাম ট্রেনের অপেক্ষাতে আছি। ওনারা বললেন এত ট্রেন যাচ্ছে তাতে যাচ্ছ না কেন? আমি বললাম ওতে ভাড়া বেশি। তাই সকালের লোকালে যাব। অকাট্য যুক্তি। অন্য ভবঘুরেদের তুলে নিয়ে গেল। আমি সকালের ট্রেনে ফিরলাম। বাসের monthly টিকিট ছিল। ট্যাক্সি করতে হল না।
    যুগোস্লাভিয়া ভ্রমণ সাঙ্গ করে বাড়ি ফিরে যাবার কথা ইংল্যান্ড। তাই আগে ভাগে ভিসা নিয়েছিলাম। যুগোস্লাভিয়া যাবার আগে দিল্লির শাস্ত্রী ভবনে রোজ যেতাম ফাইল নড়াতে। আমায় কলকাতার সবাই বলেছিল এমনকি এক বড় ডাক্তার (যার কাছ থেকে মেডিকেল সার্টিফিকেট নিতে হয়েছিল) ও বলেছিলেন যে দিল্লির ব্যাটারা মহা বদমাশ কলকাতা থেকে যতই চিঠি চালা চালি কর যেতে পারবে না। আমরা অনেকেই এরকম পেয়ে যেতে পারি নি। কংগ্রেসের নিত্যানন্দ দে আমার অধ্যাপক সহকর্মী ছিলেন । উনি পুজোর সময় VIP কোটায় টিকিটের ব্যবস্থা করলেন। উনিও বললেন দিল্লি যাও। কর্মী সেজে সক্কাল বেলা ঢুকে পড়তাম শাস্ত্রী ভবনে। নিয়ম মত দেখা করতে বিকালে আসতে হবে আর যার সঙ্গে দেখা করব তার অনুমতি লাগবে। কোনদিন পাই নি। তাই অন্য গেট দিয়ে ঢুকতাম। একজন ফাইল চেপে বসেছিল। বলছিল তুমি চিঠি পেয়েছ তাতে কি? আমরা তো পাই নি। তাদের মতলব ছিল আমায় ডিফল্ট করিয়ে ওই ভবনের কাউকে পাঠানো। আমি সোজা এমব্যাসি গিয়ে ভিসা নিয়ে সেই পথ বন্ধ করে দিলাম। গেলে আমিই যাব। বাঙালের গোঁ। লক্ষী পুজোর দিন ওই অফিসার ছুটি নিলেন আর অন্য অফিসার দশ মিনিটের মধ্যে টিকিট ভাউচার করে দিলেন। সাত দিন ধরে যা করতে পারছিলাম না। দিল্লি থেকে কলকাতায় ফিরে লাগেজ গুছিয়ে গেছিলাম যুগোশ্লাভিয়া। যার গল্প আগেই করেছি।
    এবার তিন মাস কাটিয়ে দেশে ফিরে আবার লাগেজ গুছিয়ে যেতে হবে সাসেক্স। কিন্তু আমার ফেরার টিকিট আসেনা। বেলগ্রেড গিয়ে হত্যে দিয়ে পড়লাম। ল্যুব্ল্যানার হোস্ট ইনস্টিটিউট বেলগ্রেড থাকার ব্যবস্থা করল। রাতের ট্রেনে এলাম। সেই ট্রেনে কিন্তু ওই conscript সৈন্যরা ছিল না। তাই সব ঠিকঠাক হল। সকালে পৌঁছে এক সরকারি দপ্তরে এক বসের সাথে আটটার সময় দেখা করার কথা। উনি এলেন দশটায়। দেখেই মনে হল এক পাওয়ারফুল কমরেড। কি দাপট! স্লোভেনিয়াতে কমরেড খুঁজে পাইনি। এরকম কাউকে মিট করব ভেবেছিলাম। কলকাতার কমরেড রাজ থেকে এসেছি। এখানে কাউকে পেলে আলাপ করতাম। এক রাশিয়ান স্কলার কদিন আমার ঘরে ছিল। ও বিশেষ মুখ খোলেনি। শুধু একটা লেনিন ব্যাজ উপহার দিয়েছিল। যাই হোক ওই কমরেড একে তাকে ধমকে আমার থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। কিন্তু হোস্টেলে যেতেই আমার পাসপোর্ট আটকে রাখল। আবার এলাম ওই কমরেড বাবুর কাছে। ও ফোন তুলে কাদের যেন ধমকাল। হোস্টেল আসতেই পাসপোর্ট ফিরিয়ে দিল।
    রোজ এমব্যাসি যাই। ফেরার টিকিটের তদবির করতে। দিল্লি থেকে কোন উত্তর আসেনা। বুঝলাম যারা যাওয়া আটকানোর চেষ্টা করেছে তারা আবার খেলছে। শেষে রাষ্ট্রদূত কে বললাম দু দিনের মধ্যে টিকিট না এলে আমি এয়ারপোর্ট গিয়ে সত্যাগ্রহ করব। ওরা ডিপোর্ট করবে। নিউজ হবে। তখন বুঝবে সবাই। উনি ঘাবড়ে গিয়ে ministry তে ফোন করে ব্যবস্থা করলেন। রুট চেয়েছিলাম বেলগ্রেড রোম দিল্লি। ভাউচার দিল বেলগ্রেড মস্কো দিল্লি। তাও মস্কো দিল্লি confirmed নয়। মস্কোতে কদিন ঝুলে থাকতে হবে কে জানে! এক্সট্রা টাকা দিয়ে টিকিট আমার পছন্দের রুটে করে নিলাম।
    বেলগ্রেড এয়ারপোর্ট এলাম। পকেটে অনেক দিনার জমে গেছে। এগুলো দেশে কোন কাজে লাগবে না। কবে আবার এ দেশে আসব তার ঠিক নেই। যে হারে এখানে দাম বাড়ে তাতে পরে এসে কিছুই কেনা যাবে না। তাই এয়ারপোর্ট ব্যাংকে এসে ওগুলো ডলারে কনভার্ট করতে চাইলাম। ভারতে বিদেশিরা তখন এমন পারতো জানতাম। কিন্তু এখানে বলল হবে না। তর্ক জুড়ে দিলাম। ওখানে এক যুবতী দাঁড়িয়ে সব শুনল। তারপর ব্যাংকে কত দিনারে কত ডলার পাওয়া যায় শুনে আমার দিনার কিনে নিল ডলারে। কেন করল জানি না। যুগোশ্লাভিয়াতে যখনি কোন ঝামেলায় পড়েছি কোন না কোন ইংরাজি জানা যুবতি সাহায্য করেছে। হয়ত এরা গোয়েন্দা। লুব্ল্যানাতে এক আঙুরওয়ালা আমি ভাষা জানি না মানে জড় বুদ্ধি ভেবে দু শ গ্রাম আঙুরের দাম নিতে গিয়ে নিল এক কিলোর দাম। ওদের ভাষা না জানলেও ওদের দাম ইংরাজি সংখ্যায় লিখত। আমি তর্ক জুড়ে দিলাম। রাস্তা শুন শান। কোথা থেকে এক ইংরাজি জানা যুবতি এসে সব শুনে দোকানদারকে ধমক দিল। যাই হোক সামান্য কিছু দিনার রেখে দিয়েছিলাম তাই দিয়ে চকলেট কিনলাম আর কয়েকটা মেমেন্টো হিসাবে রেখে দিয়েছিলাম। রোম ঠিক মত এলাম।
    এরপর যথা রীতি এয়ার ইন্ডিয়ার দুর্ভোগ শুরু হল। চার পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষা করে হঠাৎ চোখ কচলে দেখি প্লেন ছাড়ার কথা 9 PM expected 9 AM । ওই বসে থাকার সময় এক ভারতীয় ছাত্রের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। ইতালিতে আমার খারাপ অভিজ্ঞতা ওকে বলতেই ও অবাক হয়ে বলল এরকম ওর সঙ্গে হয়নি। যাই হোক ও আমাকে কফি টফি খাইয়েছিল। এবারে আমরা এয়ার ইন্ডিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বললাম। ওরা সবার জন্য একটা কাগজে নাম ধাম লিখে ব্ল্যাংকেট এন্ট্রি পারমিট তৈরি করল। ছেলেটার ভিসা multiple এন্ট্রি। তাই ও ভিসা দেখিয়ে বেরোল। আমাকেও ওই ভাবে বেরোতে বলেছিল। ওরা দিল না। কারণ আমার single এন্ট্রি ভিসা ছিল। পরে বুঝেছিলাম শাপে বর হয়েছে।
    আমাদের বাসে করে একটা হোটেলে নিয়ে এল। দেখে মনে হল এখানে ভারতীয়দের মাঝে মাঝেই এয়ার ইন্ডিয়া এনে ফেলে। একেবারে ভিয়েন বসিয়ে পুরি তরকারি হছিল। সেই খেয়ে রাতে ঘুমিয়ে সকালে এয়ারপোর্ট এলাম। ওই তালিকা মিলিয়ে আমাদের ঢোকানো হল। ছেলেটাকে আর দেখতে পাই না। শেষ মুহূর্তে ছেলেটা প্রায় কাঁদতে কাঁদতে এল। বললাম কী হয়েছে? বলল আমায় detain করে রেখেছিল। ওই তালিকায় আমার নাম নেই বলে। ওরা বলছে তুমি কাল দেশ থেকে বেরিয়ে গেলে কি করে আবার সকালে ঢুকতে চাইছো? নিশ্চয়ই গড়বড় আছে কিছু। ও বলতে চাইল ফ্লাইট delayed তাই ভিসা দেখিয়ে দেশে ঢুকেছি। ওরা বললো ওই লিস্টে তোমার নাম নেই কেন? ঢুকতে দেব না। শেষে ও কাকে কাকে ফোন করে রেহাই পেয়েছে। আমায় বলল তুমি ঠিকই বলেছ। এদের মাথা মোটা প্রশাসন হ্যারাস করতে সুযোগ ছাড়েনা। এরপর দিল্লি পৌঁছে আবার হোটেলে রাত কাটিয়ে পরদিন সকালের ফ্লাইট ধরে কলকাতা ফিরলাম। বাঙালের গোঁ না থাকলে কেউ এই ভাবে বিদেশ ভ্রমণ করতে পারে সরকারি পয়সায়!
    কলেজে ফিরে আরো দুর্গতি অপেক্ষা করছিল। অনেক চেষ্টা করেও বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি হয়নি। ওখানে Phd করতে তিন বছরের paid লিভ দেয় জানতাম। কলেজ বলল তুমি জীবনে একবার তিন মাসের সবেতন স্টাডি লিভ পেতে পার। সেটা নিয়ে নিয়েছ। এখন earned লিভ খরচ করে আর নয়ত বিনাবেতনে ছুটি নিয়ে সাসেক্স যেতে পার। গরমের ছুটিও হিসাব করল না। এত লড়াই করে যুগোশ্লাভিয়া না গিয়ে সাসেক্স গেলেই হত। চিঠি তো আগেই পেয়েছিলাম। কিন্তু তার আগেই যে বিশাল লড়াই লড়ে যা পেয়েছি সেটা ছেড়ে দেব? আগেই আশঙ্কা করেছিলাম এমন হবে। তাই ভাড়া বাড়ি ছেড়ে বউ বাচ্চাকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।
    পুরো ভ্রমণ কাহিনী যদি কারুর ধৈর্য আর আগ্রহ থাকে তাদের জন্য এই লিঙ্ক: https://docs.google.com/.../1Yz7ZYOEPH4tYN1ZUl0.../edit...

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • যোষিতা | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:০৫528864
  • পুরো লেখাটা এখানে কপি পেস্ট করে দিন না।
    পড়লাম লেখাটা। অনেক কিছুর সঙ্গে রিলেট করতে পেরেছি।
  • PRABIRJIT SARKAR | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:৩৪528865
  • কপি পেসট করলে ফটোগুলো আসে না। নতুন করে আপলোড করতে হয় প্রতিটি ফটো আলাদা করে।
  • খ্যা খ্যা | 2a0b:f4c2:3::90 | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:৫২528867
  • এ চাড্ডিমালটা এখেনে আর লিকবো না বলে হাত পা ছুঁড়ে চলে গেচল না? আবার কেঁউ কেঁউ করে ফিরেচে!
  • যোষিতা | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৩:২৩528869
  • একসঙ্গে পেস্ট করবেন কেন?
    ফোটোগুলো আলাদা করে আপলোড করবেন।
  • PRABIRJIT SARKAR | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৫:৪১528897
  • আমি চাড্ডি হলে তোরা আমারই জারজ সন্তান! তোদের মানুষ তো করতে হবে তাই ফিরে এলাম।
  • পলিটিশিয়ান | 23.241.209.119 | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:৩৪528902
  • "মূর্খরাই কেউ কিছু পোস্ট করলে তাদের মনের মত না হলে ব্যক্তি আক্রমণ করে।"
  • খ্যা খ্যা | 2a0b:f4c2::8 | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:৪৫528903
  • "মূর্খরাই কেউ কিছু পোস্ট করলে তাদের মনের মত না হলে ব্যক্তি আক্রমণ করে।" (2)
    +
    তুই তুকারি শুরু করে। laugh
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন