এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • আকুতি

    Rashmita Das লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১১০ বার পঠিত
  • পর্ব ৪

    তাতান এখন একসমুদ্র প্রশ্নের মাঝে সঠিক দিশা খুঁজে পাবার জন্য মরিয়া হয়ে উঠল। সে এবার কোনো একটা সূত্র পাবার জন্য দাদুর ব্যবহার্য টেবিলে রাখা খাতাপত্র আর টুকরো কিছু কাগজ নিয়ে টেবিল ল্যাম্পটা জ্বেলে নিয়ে জোরালো গবেষণা করতে বসে গেল। সামনে রাখা চেয়ারখানি টেনে নিয়ে তাতে বসে সেগুলো নিয়ে কিঞ্চিৎ নাড়াচাড়া করতে লাগল। দাদুর প্রতিদিন ডায়েরী লেখার অভ্যাসের কথা বাড়ির সবাই জানে। অন্যের ডায়েরী পড়া কোনো ভদ্ররুচির পরিচয় যে নয় এই শিক্ষাটা যথেষ্ট ভালোভাবেই আছে তাতানের। কিন্তু দিনে দিনে চোখের সামনে দাদুর যে অপার্থিব পরিবর্তন সে চাক্ষুষ করেছে। প্রকৃতির নিয়মের সম্পূর্ণ উল্টোস্রোতে যেভাবে টগবগিয়ে উঠেছিল দাদুর অকাল তারুণ্য, তার কোনো কূলকিনারা যে না পেলে চলবে না তাতানের। সে একটা সূত্রের কাছাকাছি এসেও বড়ো কিন্তু কিন্তু করতে লাগল। কাজটা হয়তো ঠিক নয়। সে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে এদিক ওদিক চারিধার দেখতে লাগল। এমন সময় আনমনা তাতানের হাত লেগে দাদুর ডায়েরীটাতে ধাক্কা টেবিল থেকে নীচে পড়ে গেল একটি পুরোনো মলাটছেঁড়া পুরু বই আর তার ভিতর দিয়ে একটা খাম বেরিয়ে এল। খামটি হাতে নিয়ে দেখল তাতান, সেটি আসলে একটি চিঠির খাম। চিঠির প্রাপকের স্হানে তাতানের নাম লেখা। দাদু জীবদ্দশায় থাকতে তাতানকে উদ্দেশ্য করে একটি চিঠি লিখে গিয়েছেন!অধীর আগ্রহ আর উৎকন্ঠা নিয়ে ভীষণ তাড়াহুড়ো করে খামখানা ছিঁড়ে চিঠিখানি খুলল তাতান। চোখের সামনে মেলে ধরল তার প্রতি স্বর্গীয় দাদুর শেষ উদ্ধৃতিগুলি।

    স্নেহের তাতান,

    আমি জানি আমার মৃত্যুর পরে তুমি আমার পরিত্যক্ত শূন্য ঘরটিতে আসবে। তোমার মনে অনেক প্রশ্ন রয়েছে যার উত্তর আমার জীবদ্দশায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমি তোমায় দিয়ে যেতে পারিনি। বাড়ির বাকি সকলের বিষয় আশয়ের হিসেব নিকেশের উর্দ্ধে উঠে তোমার সেই নিষ্পলক চোখের প্রশ্নপিপাসু দৃষ্টির ভাষা আমি বুঝতে পেরেছিলাম। কিন্তু তখন আমি নিরুপায় ছিলাম। আজ আমার মুক্তির পর আর তোমার কাছে অন্তত আমার কোনো পর্দা নেই কারণ এই বাড়িতে আমার একমাত্র যোগ্য উত্তরসূরী তুমি। তাই তোমার কাছে নিঃসংকোচে আমি আমার মুক্তিপ্রাপ্তির প্রকৃত রহস্য উন্মোচনের চাবিকাঠি দিয়ে গেলাম। আমার যাবতীয় ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কোনোরকম সংকোচ না করেই অকপটে তোমার জন্য রেখে গেলাম তোমার যাবতীয় সংশয়ের উত্তর যেটি ক্যানভাসের পিছন দিকটা খুঁজে দেখলে তুমি হাতে পাবে। তোমার সব প্রশ্নের উত্তর সেখানেই রয়েছে। আমার আশীর্বাদ নিয়ো।

    ইতি, তোমার দাদু

    চিঠিখানি পড়ে তাতানের মনটা উৎফুল্লতায় ভরে গেল। দাদু জীবদ্দশায় তাকে যে তাঁর হৃদয়ে কতখানি জায়গা দিয়েছিলেন সেটা আবার নতুন করে উপলব্ধি করতে পারল তাতান। আর দেরী না করে সে ক্যানভাসের কাছে চলে গেল আর তার পিছনটায় দাদুর রেখে যাওয়া কোনো কাগজের টুকরো খুঁজতে লাগল। ক্যানভাসের পিছনে একেবারে নীচের দিকে দেখল একটা চাবি রাখা রয়েছে। তাতান দেখল, এটা তো তাতানের ডায়েরীর লকএর চাবি। তাজ্জব বনে গেল তাতান। তার ডায়েরী আর তার চাবি তো মেসে রাখা ছিল। সেই চাবি দাদুর হাতে এল কি করে!কোনো কিছুরই কোনো মাথামুন্ডু খুঁজে পেল না তাতান। বিস্ময়ে হতবুদ্ধি হয়ে চাবি হাতে সে মাটিতে বসে পড়ল। সে এবারে মেস থেকে ফেরার সময়ে ডায়েরীটা আর চাবি সাথে করেই নিয়ে এসেছিল। এটা তাহলে কিভাবে সম্ভব! একটা সাংঘাতিক কিছুর আঁচ করতে পেরে সে তড়াক করে লাফিয়ে  উঠে প্রায় একছুটে টেবিলের কাছে চলে আসল এবং আর কোনো দ্বিধা বা সংশয় না রেখে সে দাদুর ডায়েরী খুলে তার পাতা ওলটাতে শুরু করল। তারপর যে দৃশ্য সে চাক্ষুষ করল তাতে তার সর্বাঙ্গে কাঁটা দিয়ে উঠল। সে দেখল, দাদুর ডায়েরীর ভিতরের প্রতিটি পাতায় জ্বলজ্বল করে ভাসছে তার নিজের স্বহস্তে লেখা প্রতিদিনকার দিনলিপি। সে আর কালবিলম্ব করল না। সাথে সাথে সে ছুট লাগাল নিজের ঘরের অভিমুখে। এই মাঘ মাসেও তার কপালে শিশির ফোঁটার মত দেখা দিয়েছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। নিজের ঘরে ঢুকেই নিজের শেলফ থেকে এক ঝটকায় টেনে বার করল নিজের ডায়েরীখানা। যে চাবি সে মেসবাড়ি থেকে নিজে হাতে করে নিয়ে এসেছে সেই চাবি এইভাবে দাদুর ঘরের এমন একটি জায়গা থেকে পেয়ে তার মাথা ইতিমধ্যেই খারাপ হয়ে আছে। সে এক পৃথিবী বিস্ময় নিয়ে ডায়েরী হাতে ধপ করে বসে পড়ল মাটিতে। আনমনাভাবে ওলটাতে লাগল নিজের ডায়েরীর পাতা। সে দেখল, ডায়েরীর প্রতিটি পাতায় ভেসে উঠেছে দাদুর মৃত্যুর পূর্বেকার দিনলিপি। সে আর বৃথা চিন্তাভাবনার মধ্যে না গিয়ে ক্রমশ ডায়েরীর পাতায় মনোনিবেশ করল।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন