এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • এলোমেলো ভাবনা - ১

    স্বাতী রায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৪ মার্চ ২০২৪ | ৪৯৮ বার পঠিত
  • মমতাশংকরের সাম্প্রতিক শাড়ী মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ওঠা ঢেউ এর  সাপেক্ষে স্বগত চিন্তার লিখিত রূপ মাত্র
     
     শরীর, শরীর তোমার মন নাই কুসুম? এই প্রশ্ন কুসুমদের চিরকালই করা হয়েছে? আর আজকাল আমরা বলি, শরীর শরীর তোমার মগজ নাই কুসুম? ( এই লাইনটা এক ফেসবুক বন্ধুর দেওয়াল থেকে নেওয়া। তাকে কৃতজ্ঞতা। ) অর্থাৎ শরীর বনাম মগজ। একটা বাইনারি।

    মগজ বলতে অবশ্য শুধু মাথার ভিতরের খানিকটা ‘বায়লজিক্যাল মাস’ নয়। মগজ মানে নিরন্তর চর্চার ফলে ক্রমঃ বিকশিত বোধ। এখানে এই নিরন্তর ( কখনও কখনও প্রজন্ম বাহিত) চর্চা কথাটা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই চর্চা কিন্তু শুধু স্কুল কলেজের বিদ্যাচর্চা নয়। চর্চা মানে হল আজন্ম পরিবার ও পরিবেশ থেকে পাওয়া অজস্র স্টিমুল্যান্ট যা আমাদের মাথা ঘামাতে, প্রত্যক্ষ পরোক্ষ শিক্ষায় সাহায্য করে।

    প্রতিটা সময়ের কিছু মেগা ট্রেন্ড থাকে। মোটামুটি ভাবে বলা যায়, সংখ্যাগুরুর aspiration সেই ট্রেন্ডসমূহকে নির্দেশ করে। এর ব্যতিক্রম থাকতেই পারে, তবে সেটা সংখ্যালঘু। তাই বললাম, মোটামুটিভাবে। আজকের বাংলার সেই মেগা ট্রেন্ডের একটা হল মুখ্যত মগজজীবি হওয়া। এ আমাদের কলোনিয়ান উত্তরাধিকার, নাকি অন্য কিছু সেও বিতর্কের বিষয় অবশ্য। সে প্রসঙ্গ আপাতত ধামাচাপা দেওয়া থাক। এদিকে বাইনারির সমস্যা হল, সে শুধু বাইনারি তৈরি করেই চুপ করে থাকে না, বাইনারির একটিকে উপরে তোলে অন্যটিকে নিচে ঠেলে। সেই একই সূত্র ধরে মগজজীবি হওয়ার স্বপ্ন লালনের সঙ্গে জড়িয়ে যায় শরীরজীবি হওয়াটাকে খাটো নজরে দেখা।

    কিন্তু মগজজীবি হওয়ার স্বপ্নটা কেবল শুরুর স্বপ্ন। যে মানুষটা আজ অনেক কষ্টে শরীরজীবি থেকে ( যাকে গোদা বাংলায় বলে “গতর খাটিয়ে খাওয়া”) থেকে মসীজীবি হল, সে আসলে নিজের অজান্তেই একটা ট্র্যাপে পড়ল। কারণ সে আদতে একটা পিরামিডের সবথেকে নিচের ধাপে পা রাখল। বস্তুত সে জানে না যে পিরামিডের মাথায় যারা আছেন বলে ভাবেন, তাঁদের কাছে সে গ্রহণযোগ্যই নয়। বেরাদরি তো দূরের কথা। এ সম্পর্কের দূরত্ব ব্রাহ্মণ-শূদ্র বা আশরাফ-আতরাফ তুল্য বললে হয়ত ভুল হবে, কিন্তু সম্পর্কের দূরত্ব যদি পরিমাপযোগ্য হত তাহলে যে কি বেরোত কে জানে!

    আমরা যারা মধ্যবিত্ত, আমরা যারা বইপত্র পড়ি, অবসর সময়ে ওয়েবজাইনের পাতায় বিনোদন খুঁজি, আমরা সকলেই জ্ঞানে- অজ্ঞানে ওই পিরামিডের কোন না কোন স্তরের বাসিন্দা। আমরা বিশ্বাস করি যে মগজের বিকাশে, মগজের উৎকর্ষতায়। এমনিতে কোন সমস্যা ছিল না। প্রতিটি মানুষই নিজের নিজের পরিবেশ-পরিস্থিতি-অভিজ্ঞতা -ভাবনা-অনুভূতি সঞ্জাত বিশ্বাসে দিন চালাবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ওই মগজের প্রাধান্যের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের প্রতি একটা তাচ্ছিল্যও মাথায় খুঁটি গাড়ে। এই তাচ্ছিল্য কি আদতে কোন এক পূর্বপুরুষের উপরে ওঠার aspiration এর কারণে ফেলে আসা স্তরের প্রতি তাচ্ছিল্যের ধারণার প্রজন্মগত উত্তরাধিকার? হতে পারে। তবে মোটামুটিভাবে নিজেদের মানসিক নির্মাণে আমরা ওই মগজজীবি-নয় যে মানবগোষ্ঠী, তাদের এই পিরামিডের তলার পাদদানি বলে ভাবতেই ভালবাসি।

    আমাদের কাছে ওই পিরামিডের মাথাটাই একমাত্র লক্ষ্য। যদিও খুব কম জনই সেখান অবধি পৌঁছান। তবু ধাপে ধাপে ওই পিরামিডের মাথায় চড়াই আমাদের বড় হওয়ার লক্ষ্মণ। যাকে বলে ‘ইন্ডিভিজুয়াল গ্রোথ’। আর এও আমাদের অনেকের বিশ্বাস যে জীবন মানেই বাড়া, বাড়ের বন্ধ মানেই আসলে ক্ষয়ে যাওয়া। আর এইখানেই মগজ হয়ে ওঠে আধিপত্যবাদের প্রতীক। কাস্তেতে শান দেওয়ার বদলে মগজে শান দেওয়া হয়, প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। বহুর থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলার তাগিদে। সমষ্টির থেকে মুষ্টিতে গমন।

    মেয়েদের ক্ষেত্রে, এই ধারার সঙ্গে পরতে পরতে জুড়ে যায় লিঙ্গনির্মাণও। মধ্যবিত্ত বাড়ির মেয়েদের সোশ্যালাইজেশন প্রক্রিয়ায় যৌন শুদ্ধতার উপর অপরিমেয় গুরুত্ব দেওয়ার কারণে শরীর ঘিরে তৈরি হওয়া এক প্রজন্ম বাহিত পাপবোধ। ওই পাপবোধও অনেকাংশেই হয়ত ভিক্টোরিয়ান নীতিবোধের উত্তরাধিকার। কিন্তু হয়ত একথা বললে খুব জেনেরালাইজেশন-গত ভুল করা হবে না যে আজকের মধ্যবিত্ত বাড়ির মেয়েদের চরিত্রগঠনের একটা বিল্ডিং ব্লক হল একটা কম বেশি ডিসগাইসড পাপবোধ। অনেকে যুক্তিবুদ্ধি দিয়ে এর কম-বেশি কিছুটা অতিক্রম করতে পারেন, পুরো মুছে ফেলা যায় কি? শুধু মেয়েদের না, ছেলেদেরও শরীর নিয়েও অনেক রকম পাপ-পুণ্যের ভাল মন্দের ধারণা থাকে। আমাদের প্রত্যেকেরই আমিত্ব তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া আসলে এই সব বিবিধ ও বিচিত্র ধারণার মধ্যে গ্রহণ-বর্জন নেগোসিয়েশনের ফল।

    অথচ সমাজের প্রয়োজন সকল লিঙ্গ-শরীরকেই। কখনো প্রজননের জন্য। কখনো যৌন-আনন্দের জন্য। কখনো বা বিনোদনের কারণে। কাজেই তাকে ছাই ইরেজার দিয়ে মুছেও ফেলা যায় না। অথচ আমরা, মধ্যবিত্ত মেয়েরা যে ক্রমাগত শরীরকে পাপের উৎস বলে ভাবতে শিখেছি? এই দুয়ের মধ্যে একটা দিব্য শ্রেণীগত সমঝোতা হল মগজজীবিত্বের মারফৎও। সেটা আরেকরকম একটা শ্রেণির যারা ইতিমধ্যেই পিরামিডের উপরের দিকে বিরাজমান, তাদের আধিপত্য বজায় রাখার কলও বটে। কারণ কে না জানে বহু প্রজন্মের চর্চার ধার অনেকটাই বেশি। কমলহীরের ঝলক তো আর প্রথম প্রজন্মে সাধারণত আসে না। যে ধারণাটা ছড়িয়ে দেওয়া হল যে এই দেখ ছেলেরা তো মগজ দিয়েই যুদ্ধ জিতে নেয়, কাজেই সেটাই তোমারও লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। শরীর ব্যবহার করে “খারাপ” মেয়েরা, যারা ছেলেদের সঙ্গে মগজের যুদ্ধে পিছিয়ে পড়ে তারা। তোমরা যদি জিততে চাও তো এসো সমানে সমানে খেলো। মগজে শান দাও। দেখবে একদিন তোমারও হবে। এইটাই আমরাও বেশ বুঝে নিলাম। আমরাও মগজ চর্চায় ব্যস্ত হলাম। শরীর শরীর তোমার মগজ নাই কুসুম? আইস আমরা দাম্পত্য ব্যতীত আর সকল ক্ষেত্রে উভয় লিঙ্গের মেলামেশার সম্ভাবনা সেগুলোকে যৌনতা মুক্ত করে গড়ি। বেশ ভাল কথা। আমরাও সেই টার্ম মেনে নিলাম।

    এই সকলই একেকটি অবস্থান। এবং প্রত্যেক মানুষের নিজ নিজ অবস্থান বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা আছে। কিন্তু সমস্যা সেখানেই আসে যেখানে একটি অবস্থানের জোরে অন্য অবস্থানকে দমিয়ে দেওয়া হয়। মমতাশংকরের সাম্প্রতিক শাড়ী নিয়ে মন্তব্যের পরের সামাজিক বিতর্ক প্লাবনে যে বিবিধ ঢেউ দেখা যাচ্ছে তার মধ্যে একটা হল এই মগজজীবিতার গুণগান। এবং সেই প্রসঙ্গে দেহ প্রদর্শনের নিন্দা। অজস্র পোস্ট ভেসে উঠছে চারদিকে যে আজকের মেয়েরা লজ্জা, শালীনতা সব ভুলে যাচ্ছে। আর সেই সঙ্গে উঠে আসছে যে মেয়েরা শরীর দেখিয়ে অ্যাটেনশন কুড়োন তাদের প্রতি নিন্দাবাদ। যে যুক্তি উঠে আসছে যে ১) দেহ প্রদর্শন কুরুচিকর। ২) দেহ প্রদর্শন আসলে পিতৃতন্ত্রের ট্র্যাপে পা দেওয়া। ৩) দেহ প্রদর্শন হল নিম্নস্তরের ব্যাপার। মগজের শক্তি আরও বেশি। ( প্রসঙ্গত মমতাশংকরের কথার বিশ্লেষণ এই এলোমেলো চিন্তার উদ্দেশ্য নয়। তাই সে প্রসঙ্গ উহ্য রইল। )

    তৃতীয় বিষয়টি আগে ধরা যাক। সেই চিরাচরিত হাই-লো নির্মাণ। অথচ খতিয়ে দেখলে, এই হাই লো নির্মাণের মধ্যেও কি কোন পিতৃতান্ত্রিক দুরভিসন্ধি নেই? কর্মক্ষেত্র যৌনতা মুক্ত রাখার ডাক কি কোনভাবে একাধারে পুরুষের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের বক্তব্যকে আরও মান্যতা দেয় না? আর সেই সঙ্গে পিতৃতন্ত্রের প্রিয়তম বিষয় মেয়েদের যৌন শুদ্ধতাকেও বজায় রাখে না? তাহলে এই যে মগজকে উপরে রাখতে চাওয়া, এও কি আদতে নারীবাদের ঘোমটার আড়ালে পিতৃতন্ত্রের ধ্বজা ওড়ানো?

    দেহ প্রদর্শন করে মেয়েরা কার থেকে সুবিধা নেয়? একজন নারী যদি উচ্চাসনে থাকেন, দণ্ডমুন্ডের কর্তা হন সেখানেও কি মেয়েরা দেহ প্রদর্শন করেন? নাকি করেন না? সকল উচ্চতর স্থানে মেয়েদের বসিয়ে দিলেই কি সমস্যার সমাধান হবে? যদি দেশের সকল আর্থিক দায়ভার মেয়েদের হাতে আসে, তাহলেও? তখনও কি আর মেয়েদের দেহ প্রদর্শনের দরকার হবে? আবার একজন পুরুষ যদি উচ্চাসনে বসেন, আর যদি তিনি দেহ প্রদর্শনে বা নারী-দেহের যৌনতায় মুগ্ধ হন, আর সেই কর্মস্থলে দুটি মেয়ের মধ্যে একজন যদি যৌনতার মাধ্যমে এগিয়ে যায়, অপারগ প্রথমা আদৌ দ্বিতীয়াকে দোষারোপ করেন কেন? কেন কেবলমাত্র পুরুষটিই খেলার নিয়ম বদলে দেওয়ার জন্য কাঠগড়ায় দাঁড়াবে না? উচ্চতর পদে থাকার জন্য কর্মস্থলের নিয়ম মেনে চলার দায়িত্ব তো তারই অধিক? বিনোদনের জগতের যে আজকালকার মেয়েদের উপর শরীর দেখানোর দায় চেপেছে, সে শরীরের ভোক্তা কে? শুধু যদি পুরুষ হন, তো তাঁদের বিরুদ্ধে আইন করা যাচ্ছে না? নাকি সে ক্ষমতা নেই বলে মেয়েদেরই খারাপ মেয়ে বলে দাগিয়ে দেওয়া? আর যদি মেয়েরাও সেই বিনোদনের দর্শক হন, তাহলে কি কোথাও হিসেবের গোলমাল হচ্ছে?

    আর এই যে একটা কোন পরিস্থিতিতে একজন মেয়ে নিজস্ব নীতিবোধের কারণে পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারছেন না, অন্য মেয়েটি তার তুলনায় অন্যরকম নীতিবোধের কারণে সেই সুযোগ খপাৎ করে আঁকড়ে ধরতে পারছে, এর থেকে এটাও কি বোঝা যায় না যে প্রথমজনের নীতিবোধ যে রুলবুক মেনে তৈরি হয়েছে, সেটাই দুনিয়ার একমাত্র সত্য নয়? দ্বিতীয়জনকে শরীরপ্রবণ বলে গালি দিলে প্রথমার কিঞ্চিৎ গাত্রদাহ কম হতেই পারে, বা তাঁর আহত ইগো নিজের নীতি বোধকে উন্নততর ভেবে আনন্দ পেতেই পারে, কিন্তু তাতেও বিভিন্নতার ব্যাপারটার এবং পরিস্থিতির ফলাফল কোনটারই কোন তারতম্য ঘটে না। আর এই ভাবে ফলাফলের বিভিন্নতার জন্য গালি দিলে তো যৌনতা ছাড়াও আরও কত কত তুই না মুই কারণ খুঁজে পাওয়া যাবে। বরং ভেবে দেখব কি এই নীতিবোধ বস্তুত কিসের থেকে তৈরি হয়েছে? যৌন শুদ্ধতা কি সত্যিই কারোর নিরপেক্ষ চয়েজ নাকি সেও বহু শতাব্দীর সযত্ন নির্মাণ?

    প্রসঙ্গত একথা ভাবার কোন কারণ নেই যে দ্বিতীয়া প্রবল নারীবাদী চেতনার দ্বারা চালিত হয়েই যৌনতার দ্বারা কাজ উদ্ধার করেছে। সেও হয়ত শুধুই সুবিধাটুকু, মেটেরিয়ালিস্টিক পাওনা গন্ডাটুকুই বুঝেছে। কিন্তু তাতেই যদি প্রথমা তাকে পিতৃতন্ত্রের অনুসারী বলে দাগিয়ে দেয়, প্রথমার অবস্থানই কি একমাত্র শুদ্ধ নারীবাদ? নাকি নারীবাদের ছাতার তলায় আরও বিভিন্ন ধারাও সম্ভব?  

    রুচি ব্যাপারটা একান্তই ব্যক্তিগত। রুচি নির্মাণের আনাটমি অতি জটিল। আইডেন্টিটি নির্মানের তুল্যই বলা যায় এক বিভিন্ন প্যারামিটারের ইন্টারসেকশন। জাত ধর্ম ইত্যাদি চিরাচরিত প্যারামিটারের সঙ্গে অতিরিক্ত জোড়ে স্থান-কালের বহুমাত্রিক অবস্থান।  সেই সঙ্গে রুচি প্রবল পরিবর্তনশীল।  সে জটিলতায় ঢুকে কাজ নেই। তবে একজনের নিজের রুচি যাই হোক না কেন, তাই দিয়ে তিনি শুধু নিজেকেই কন্ট্রোল করতে পারেন, নিজের চারপাশকে সেই রুচি দিয়ে ইনফ্লুয়েন্স করতে চেষ্টা করতে পারেন মাত্র, কে কতটা নেবে তা অবশ্যই তাদের ব্যাপার, কেউ না নিলে মন খারাপও লাগতে পারে, আবার নিজের অপছন্দ জোর গলায় বলতেও পারেন, কিন্তু সেটা একান্তই ব্যক্তিগত অপছন্দ। এই ব্যক্তিগত কথাটা, আমার মতে, আন্ডারলাইন্ড। দুনিয়ার সবাইকে সেই দিয়ে কন্ট্রোল করার চেষ্টা বাতুলতা। তাই রুচির প্রশ্ন তুলে কাউকে খারাপ মেয়ে বলে দাগিয়ে দেওয়া কতটা ঠিক?   (হ্যাঁ এইটাও একটা ব্যক্তিগত অবস্থান, যেটা অবশ্যই আরেকজনের অবস্থান নাও হতে পারে। সেটাও অন্যজনের স্বাধীনতা। ) 

    পিতৃতন্ত্রের ট্র্যাপ কথাটা আরও গোলমেলে। দেহ দেখালেই যদি সেটা পিতৃতন্ত্রের ট্র্যাপ হয়, তাহলে দেহ না দেখানোই  কি সঠিক নারীবাদের একমাত্র সংজ্ঞা? দেহ আছে তাকে কি আমরা অস্বীকার করতে পারি ? নাকি অন্দরমহলের বাইরের জগৎকে যৌনতা মুক্ত রাখতে চেয়ে আসলে আমরা পিতৃতন্ত্রের তৈরি রীতিকেই মান্যতা দিচ্ছি? আমাদের জন্মই হয়েছে পিতৃতন্ত্রের ভিতর, কাজেই আমাদের চেতনে- অবচেতনে আচরণেও কম বেশি তার ছাপ থাকবে সেটা বোধগম্য, কিন্তু নিজের অবস্থানের বিপরীতের যে কোন অবস্থানকেই পিতৃতান্ত্রিক ট্র্যাপ বলে দাগিয়ে দেওয়াটা কেমন ব্যাপার?  

    মনে হয় প্রতিটা সময়ই আসলে বিভিন্ন বিপরীতমুখী ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার সমারোহ। আর এসবই সেইসকল বিভিন্ন ভাবধারার মধ্যে সংঘর্ষের ফল। অবশ্যই এক্ষেত্রেও প্রতিটি ছোট ছোট বৃত্তেই যে দল সংখ্যাগুরু, তাদের মতামতই অধিকতর মান্যতা পাবে। আর তা সে যতই যৌক্তিক হোক বা অযৌক্তিক হোক। বস্তুত বাংলার অনেক মেয়ের কান অবধি কথাটা গিয়ে পৌছাবেই না,বা পৌঁছালেও তারা পাত্তাও দেবে না । নিজের নিজের মতেই চলবে।  কোথাও কোন ফারাক পড়বে না। পড়া উচিৎ ও না। তবু বিতর্কে উঠে আসা বিভিন্ন বক্তব্যের উপর নিজস্ব বিশ্লেষণ লিপিবদ্ধ করে রাখার তাগিদেই কথা কটা লিখে রাখা। 

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • R.K | 125.253.34.72 | ২৪ মার্চ ২০২৪ ১৯:১১529761
  • যে কারন এ পর্দা প্রথা পছন্দ করি না  সেই এক ই  কারনে নারীর শরীর সর্বস্ব  উপস্থাপনা কে সমর্থন করিনা। 
    নারীর শরীর এভাবেই তৈরী একে সহজভাবে গ্রহণ করতে হবে , ভোক্তা পুরুষ কে খুশি রাখার জন্য নয়। 
  • | ২৪ মার্চ ২০২৪ ২০:২৯529763
  • এমনিতে প্রশ্ন বা ভাবনাগুলো অনেকটাই  আমার সাথে মিলছে। আমার বিভিন্ন পোস্টে জিগ্যেস করতে ইচ্ছে হচ্ছিল যে মগজ খাটিয়ে রোজগার কেন বেশী মহান বলে মানা হচ্ছে? তারপর আলসেমি লাগল। smiley
     
    কিন্তু শরীর প্রদর্শনকে পিতৃতন্ত্রর ফাঁদ বলে  তো আমার জানামতে রাইট উইং লোকজন।  তাদের কেউ কেউ যথা কঙ্গনা রান আউট নিজেকে ফেমিনিস্ট বলে বটে কিন্তু এরা তো ফেমিনিজমের কোন টাইপেরই নয়। লহামোখা ওদের যুক্তিকে ফেমনিজমের একটা স্ট্রীম ধরব কেন? 
  • Swati Ray | 117.194.34.10 | ২৪ মার্চ ২০২৪ ২১:১৮529766
  • R K হ্যাঁ এটা একটা ভাবনা অবশ্যই।  কারণ পাওয়ার প্লে তো হচ্ছেই। আমি যেটা জোরে জোরে ভাবার চেষ্টা করছি, ক্ষমতা কে মিষ্টি কথায় তুষ্ট  রাখা , সরাসরি  বিরুদ্ধে না যাওয়া এগুলো  যদি  ক্ষমতার  মুখোমুখি  হওয়ার  স্ট্র্যাটেজি  হতে পারে, তাহলে  শরীর  দেওয়া  বা  দেখানো  কি আরেকটা জাস্ট  স্ট্রাটেজি  হতে পারে ? তার  সঙ্গে  সকলে নারী  শরীরের  অবমূল্যায়ন  কেই  বা জুড়ছেন  কেন ? সেটাও কি  শরীর ঘিরে অহেতুক টাচি নেস  থাকার কারণে ? 
     
    দ  প্রচুর  নারীবাদী  বলে প্রচলিত  মেয়েরা  বলছেন . কঙ্গনা র কথা ধরছি না . এবং  এদের  অভিমত  এই করে একদল মেয়ে মেয়েদের পজিশন কে নষ্ট করছেন . 
  • Ranjan Roy | 171.60.250.156 | ২৪ মার্চ ২০২৪ ২৩:১৬529770
  • ভাল বহুমাত্রিক লেখা। আমি নিজের লিবারেল মুখোশ নিয়ে ভাবছি। 
  • যোষিতা | ২৫ মার্চ ২০২৪ ০৬:০৬529778
  • "একজন নারী যদি উচ্চাসনে থাকেন, দণ্ডমুন্ডের কর্তা হন সেখানেও কি মেয়েরা দেহ প্রদর্শন করেন? নাকি করেন না? সকল উচ্চতর স্থানে মেয়েদের বসিয়ে দিলেই কি সমস্যার সমাধান হবে?"
    লেসবিয়ান হন যদি তিনি মানে ঐ দণ্ডমুণ্ডের কর্তা?
  • যোষিতা | ২৫ মার্চ ২০২৪ ০৬:১১529779
  • অসংখ্য এলজিবিটিকিউ+ মানুষজন আছেন আমাদের চারিদিকে, এখনও ক্লোজেট থেকে বের হবার সাহস পাচ্ছে না যাঁরা, তাঁদের বাদ দেওয়া হচ্ছে। জীবন একটা বাইনারি নয়, ঠিক যেমন শরীর ভার্সেস মগজ ও বাইনারি হতে পারে না।
  • যোষিতা | ২৫ মার্চ ২০২৪ ০৬:৫২529780
  • এতক্ষণে মমতা শংকরের বক্তব্য খুঁজে বের করে পড়লাম। অতীব বোকা এবং মূর্খের মন্তব্য মনে হয়েছে ওটা। উনি নাচ অভিনয় নিয়ে আছেন, থাকুন। মুখ খুললেই বোকামি বেরিয়ে পড়বে।
  • স্বাতী রায় | 117.194.33.176 | ২৫ মার্চ ২০২৪ ০৯:৫১529783
  • যোশিতা একদম সহমত। আমার ভাবনা প্রসঙ্গে আমি একটু সচেতন ভাবেই নারী পুরুষ বাইনারির বাইরে কিছু লিখিনি, যদিও যৌন ইচ্ছা ও চাহিদার বিভিন্নতা সম্বন্ধে কিছুটা aware। সেটা এই লিপিবদ্ধ করণের লিমিটেশন বলা যেতেই পারে। 
     
    আর প্রেফারেন্স এর অনেক দিক থাকে বলে আমার ধারণা। তিন জন মানুষের সঙ্গে কথা বললে একজনকে একদম পছন্দ হল না এও তো হয়। সেই ভাল লাগা মন্দ লাগা কি সিদ্ধান্ত কে কোন ভাবে প্রভাবিত করে না? আমার তো মনে হয় কিছুটা করে। তিনজন প্রায় সমান সমান ক্যান্ডিডেট এর মধ্যে একজনকে যখন বাছাই করা হয় তখন সেই  ব্যক্তি গত প্রেফারেন্স পিছনে পিছনে কাজ করে বলে আমার ধারণা। সবটাই তো আর quantifiable নয়। objective ও নয়। 
     
    মমতা শংকরের কথা যা বলেছেন, সেটা ওঁর ব্যক্তিগত মত। উনি তো আর বঙ্গ সংস্কৃতির জিম্মাদার নন। অন্তত আমি তাই ভাবি। তবে সমস্যা হল। বহু মহিলা এখনও ঠিক ওরকম ভাবেন। সেও হজম হচ্ছিল। কারণ সমাজে বহু বিপ্রতীপ স্রোত থাকবেই। কিন্তু প্রগতিশীল মেয়েদের বহুজনের মুখেই শরীর কে অগ্রাহ্য করার কথা শুনে আর সেটাই একমাত্র উচিত কাজ শুনেই একটু বিষয়টা নেড়ে ঘেঁটে দেখতে ইচ্ছে হল। 
  • স্বাতী রায় | 117.194.33.176 | ২৫ মার্চ ২০২৪ ০৯:৫৩529784
  • @রঞ্জন দা, ধন্যবাদ। আমরা সকলেই কি হরেক মুখোশ চাপিয়ে থাকিনা?  মুখোশ ছাড়া মুখ কই? 
  • hu | 72.241.81.21 | ২৫ মার্চ ২০২৪ ১১:০০529785
  • লেখাটা অনেক চিন্তার খোরাক দিল। যৌনতার মত পাওয়ারফুল একটা অস্ত্রকে মানুষ ব্যবহার করবে এটাই স্বাভাবিক। শুধু কর্মক্ষেত্রেই করবে এমন নয়। সর্বত্রই করবে। শুধু মেয়েরা করবে এমনটাও নয়। স্বাতীদির লেখায় মগজ আর শরীরকে আলাদা করে দেখার প্রসঙ্গ এসেছে। হয়ত শুধু স্বাতীদির লেখায় নয়, উনি যে রিঅ্যাকশনগুলোর উল্লেখ করেছেন সেগুলোতেই হয়ত এসেছে। সেগুলো আমি পড়িনি। প্রশ্ন জাগে, যৌনতার বাসা কি মগজেই নয়? মগজ কি শরীর নয়? যৌনতার ব্যবহার করতে কি মগজ লাগে না? নারী-পুরুষ বাইনারীটা মনে হয় গুরুত্ব হারাবে দিনে দিনে। এতদিন ব্যপারটা একপেশে ছিল কারণ মেয়েদের ক্ষমতা প্রকাশের জায়গাগুলো ছিল সীমাবদ্ধ। মমতাশঙ্কর যাঁদের কথা বলেছেন তাঁরা ক্ষমতাশালী মহিলা। শরীর দেখিয়ে কোনো একটা কাজ হয়ে গেল এমন কোনো স্থূল বিনিময় সেখানে ঘটছে না। কিন্তু যৌনতা তাবলে বৃথা যাচ্ছে না। সেটা সংশ্লিষ্ট মানুষটাকে শক্তিশালী করছে। এটা তাকে কোনো বস্তুগত সুবিধা দিতে পারে, বা শুধুই ক্ষমতা উপভোগের সুখ দিতে পারে। যিনি যৌনতা ব্যবহার করবেন না, তিনি তাঁর অন্য কোনো দক্ষতা ব্যবহার করেও সেই ক্ষমতার জায়গায় পৌঁছতে পারেন। এখানে যৌনতা বা অন্য দক্ষতাকে লক্ষ্যে পৌঁছানোর অস্ত্র হিসেবেই দেখা উচিত। এর মধ্যে ভালো-খারাপ ইত্যাদি বিচার তখনই আসতে পারে যখন দেখা যাবে কোনো একটা কাজের জন্য যে যোগ্যতা লাগে তা না থাকা সত্বেও কেউ সে কাজে বহাল হয়ে গেল। এটা মানুষে শুধু যৌনতা দিয়েই হাসিল করে এমন নয়। কাজেই যৌনতাকে আলাদা করে ছিছিক্কার করার যুক্তি নেই।
     
  • π | ২৫ মার্চ ২০২৪ ১৩:৪৪529788
  • স্বাতীদি,এই লেখাটায় কিছু জায়গায় একটু ঘেঁটে গেলাম।
     
    প্রথম কথা ,শরীর,তার প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে শারীরিক শ্রমের উল্লেখ নেই কেন ?
    'সমাজের প্রয়োজন সকল লিঙ্গ-শরীরকেই। কখনো প্রজননের জন্য। কখনো যৌন-আনন্দের জন্য। কখনো বা বিনোদনের কারণে।'    -   এখানে শারীরিক শ্রম, সেই শ্রমভিত্তিক কাজের কথা বাদ থাকল কিনা বা থাকলে কী কারণে হয়তো মিস করে গেলাম।
     
    পরের বক্তব্য আমি এই শারীরিক শ্রমকে ধরেই লিখছি।
     
    তুমি লিখেছ,"কর্মক্ষেত্র যৌনতা মুক্ত রাখার ডাক কি কোনভাবে একাধারে পুরুষের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের বক্তব্যকে আরও মান্যতা দেয় না?... তিনি দেহ প্রদর্শনে বা নারী-দেহের যৌনতায় মুগ্ধ হন, আর সেই কর্মস্থলে দুটি মেয়ের মধ্যে একজন যদি যৌনতার মাধ্যমে এগিয়ে যায়, অপারগ প্রথমা আদৌ দ্বিতীয়াকে দোষারোপ করেন কেন? কেন কেবলমাত্র পুরুষটিই খেলার নিয়ম বদলে দেওয়ার জন্য কাঠগড়ায় দাঁড়াবে না? উচ্চতর পদে থাকার জন্য কর্মস্থলের নিয়ম মেনে চলার দায়িত্ব তো তারই অধিক? বিনোদনের জগতের যে আজকালকার মেয়েদের উপর শরীর দেখানোর দায় চেপেছে, সে শরীরের ভোক্তা কে? "
     
    যেখানে কর্মক্ষেত্র মগজের শ্রম  বা শারীরিক শ্রম নির্ভর , এই নির্দিষ্ট কাজের ক্ষেত্রের সঙ্গে  শরীর প্রদর্শন বা যৌনতার কোন সম্পর্ক  নেই, তো এই প্রসঙ্গ এখানে আসছে কেন ? আর এই শরীর প্রদর্শন বা যৌনতা কর্মক্ষেত্রে কারুর উন্নতির সহায় হলে তা অনুচিত বা অন্যায়ই বা নয় কেন ? ঊর্ধ্বতন বা অধস্তন - দুজনের জন্যই ,সে তিনি  পুরুষ ,  নারী  আর যেকোন কামীই হোন না কেন।   হ্যাঁ,যেখানে অধস্তন শরীর প্রদর্শন করতে বাধ্য হচ্ছেন , সে সরাসরি চাপ হোক,বা এছাড়া উন্নতির পথ না থাকার দরুণ পরোক্ষ চাপেই হোক,সেখানে তিনি ভিক্টিমও ।  মূল দোষী অবশ্যই চাপ সৃষ্টিকারী।   তবে কেউ স্বেচ্ছায় শরীর প্রদর্শন করলে তার দায় কেবল ভোক্তার,এ মানতেও সমস্যা আছে।  মানে এব্যাপারে কারুর উপর দায় চাপানোরই দরকার দেখিনা,জাজমেন্টাল হয়ে একে দোষ বলা বা দোষী বানানোরও। নিজের ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দটুকু ্র বজায় রাখা আর ক্ষেত্রবিশেষে সেটুকু জানানো ছাড়া তাও নেহাত ব্যক্তিগত মতামত - এই ডিস্ক্লেইমার সহ।
    কিন্তু আবারো যে কর্ম যৌনতা বা শরীর প্রদর্শনের সঙ্গে যুক্ত নয়, সেই কর্মের ক্ষেত্রে  এসব থেকে মুক্তির দাবিতে সমস্যা কী ?  বরং এগুলো আসলেই তো সমস্যার।   
    এমনকি বিনোদন জগতও যদি ধরি ,মডেলিং বা কিছু ক্ষেত্রে অভিনয়জগত - সেখানেও কর্মের সূত্রে শারীরিক প্রদর্শন প্রয়োজন হলেও, কর্মক্ষেত্র তো কোন ব্যক্তির প্রতি যৌনতা নির্ভর  বা  সাধারণ ভাবে শারীরিক প্রদর্শন নির্ভর  নয়,তাই  কাজ পাওয়া বা উন্নতির জন্য যৌনতা বা শরীরপ্রদর্শন করতে হলে ,এক কথায় কাস্টিং কাউচ থাকলে সেও সমস্যারই।    
     
     
     
     
  • স্বাতী রায় | 117.194.33.176 | ২৫ মার্চ ২০২৪ ১৫:২২529790
  • ঈপ্সিতা, thank you প্রতি প্রশ্নের জন্য। আমার নিজের ভাবনা টা খুব প্রাথমিক স্তরে আছে। তাই বস্তুত সেটা সলিডিফাই করার উদ্দেশ্যেই খেরোর খাতায় লিখে রাখা। তাই সব রকমের প্রশ্ন খুবই স্বাগত। 
    ১) শারীরিক শ্রমের কথাটা এই কারণে এই প্রসঙ্গে আসেনি কারণ আমার আলোচনার লক্ষ্য মধ্যবিত্ত মেয়ের দল। সাধারণ ভাবে এই মেয়েরা শারীরিক শ্রমের বিনিময়ে উপার্জন করেন না।  তাই সেই প্রসঙ্গ আনিনি। 
    ২) এই প্রশ্ন টা আরেকটু বিশদে যাওয়ার। কর্ম ক্ষেত্র মগজ বা শারীরিক শ্রমের জায়গা এই assumption টা নিয়েই আমার কিঞ্চিৎ দ্বিধা জেগেছে। হ্যাঁ প্রতিটা কর্ম ক্ষেত্রের একটা defined responsibility থাকে আর একটা accepted performance goal থাকে। কিন্তু আমার চাকরি জীবনের অভিজ্ঞতা আর সবার থেকে কতটা আলাদা বা এক গোত্রের তা জানি না, কিন্তু আমার অভিজ্ঞতায় প্রতিটি প্রমোশনের সঙ্গে অজস্র সাবজেক্টিভ বিষয় জড়িয়ে থাকে সেটা আদৌ measurable নয়। Potential জিনিসটাই একটা নন মেসারেবল জিনিস। আর তার একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে একজনের সফটস্কিল। আর যেহেতু কর্ম ক্ষেত্র এখনো পুরো ভার্চুয়াল নয়, কাজেই এখনো মানুষের bodily presence অনেক টা পজিটিভ বা নেগেটিভ ইম্প্রেশন তৈরি করে। হ্যাঁ শরীর ও তাকে তুমি কিভাবে উপস্থিত করছ। কালচারাল ভাবে কর্ম ক্ষেত্রের পরিবেশে  ফিট করছ নাকি সেটা তো একটা বড় প্রশ্ন বটেই, কিন্তু তার পরেও অনেক বিষয় থাকে যেটা উপর ওলা র প্রেফারেন্স করতে সাহায্য করে । সে তোমাকে ব্যাক করবে কিনা বা কতটা করবে সেটা তার উপর নির্ভর করে। এবার আমরা বারে বারে আমাদের মধ্যবিত্ত দের কাজের ক্ষেত্রে বলি, intellectually impress করা,  তার মধ্যে কিন্তু  সমাজমান্য পরিমিত সাজ ও থাকে। ছেলে মেয়ে উভয়েরই। যাকে বলে ড্রেস টু ইমপ্রেস। মানে যা বলতে চাইছি যে খাতায় কলমে কাজ যদি বা মগজ নির্ভর হয়, তারপর কিন্তু আজও আমরা শরীর কে বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করেই চলি। 
    এই ব্যাপার গুলো এতটাই naturally আসে আমাদের কাছে, যে আমরা এগুলো আলাদা করে লক্ষ্য করি না। কিন্তু এগুলো থাকে। এবার ধর তুমি আমার থেকে মগজের বুদ্ধিতে বেশ অনেকটা এগিয়ে আছ। ধরা যাক তুমি অনেক বেশি চর্চার সুযোগ পেয়েছ,  নিরুপদ্রবে  একুশ বাইশ বছর পড়াশোনায় মন দিতে পেরেছ, ধর তোমার বাড়ির পরিবেশও intellectually charged, সেই পরিবেশে বড় হয়ে তুমি মগজের চর্চায় অনেকটা এগিয়ে আছ আমার থেকে। আমরা  সাধারণ ভাবে যদিও ভাবি মেধা আমার নিজের অর্জন, আদতে তো তা নয়। দিব্য ফাংশন of space time and socio economic location supplied by the family.  আমি এই সুযোগটা গুলো  ধর  কোনটাই পাইনি। কারখানার মজুরের বাড়ি থেকে উঠে এসেছি,  কোনমতে নিজের  পরিশ্রমে সরকারি বদান্যতায়  তোমার সমান ডিগ্রি ও জোগাড় করেছি। দুজনেই একই চাকরির প্রথম ধাপে পা রেখেছি। এবার naturally  cultural capital এর অভাবে তোমার intellect এর বিভার সঙ্গে আমি এঁটে উঠতে পারছি না। তুমি চায়ের আড্ডায় সত্যজিৎ মৃণাল ঋত্বিক নিয়ে ফাটাও, সবাই মুগ্ধ হয়, আমি হাঁ করে শুনি। চেষ্টা করছি ক্যাচ আপ করার, কিন্তু আজন্ম গ্যাপ তো সহজে যায় না। এইসময় আমি যদি দেখি আমার যে বস সে একটু বুকের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভাল বাসে, আর সেই চায়ের আড্ডায় যদি আমার জামার বোতাম accidentally খুলেই যায় তাহলে আর কি করা যাবে ! মানুষের প্রেফারেন্স তো আর লজিক্যাল ভাবে তৈরি হয় না। অথচ impression এর compartmentalisation হয় না, বিশেষত যদি মেজারেবল আউটপুট এক থাকে। দুজনের মধ্যে একজন ধর একটা কোন সুযোগ পাবে বা পরের প্রমোশন পাবে, সেখানে কিন্তু impression, favour bank ইত্যাদি  সব কাজ করে। 
     
    এবার favour bank , out of office networking ছেলেদেরও পক্ষে কাজ করে তাই সেসব তৈরি করা জায়েজ, কিন্তু অন্যটা জায়েজ না এই জায়গাটাতেই আমি প্রশ্ন তুলছি। তোমার প্রশ্নের উত্তর হল কিনা জানি না। না হলে বলো। 
  • স্বাতী রায় | 117.194.33.176 | ২৫ মার্চ ২০২৪ ১৫:২৪529791
  • হু, সেটাই। 
  • Chandrani Adhikary | ২৫ মার্চ ২০২৪ ১৮:০৪529792
  • মতামত আসলে কিছুই নয়। অন্তঃকরণের মধ্যে পূর্ণতা,স্তব্ধতা ও আত্মপ্রসাদ ইহাই সকলের চেয়ে দুর্লভ। কথা টির মধ্যে সত্য মিথ্যা, ঠিক ভুল যতোই তর্ক করো না কেনো, প্রাপ্তির মধ্যে যেটি সত্য তাই আসল। (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গোরা)
    অবশ্য ই যাঁরা চর্চার মধ্যে আছেন তাঁরা জানেন ও সে কথা। উনি ও জানতেন। কিন্তু  এক অস্থির
    সময় সবাই কে ই একটা অস্থিরতা র দিকে নিয়ে যায়। তখন সবাই খুব বিহবল হয়ে পরে। উনিও হয়তো হতাশ, হয়তো বিহবল। আজন্ম শিক্ষা, রুচি, ধ্যানধারণা সত্যিই হয়তো চেতনা কে আঘাত করছে। সব জেনে ও মন্তব্য না করাই উচিত ছিল। উনি পারলেন না, এটাই শুধু ক্ষেদ রয়ে গেল।
  • hu | 72.241.81.21 | ২৫ মার্চ ২০২৪ ২১:০৬529796
  • "কিন্তু আবারো যে কর্ম যৌনতা বা শরীর প্রদর্শনের সঙ্গে যুক্ত নয়, সেই কর্মের ক্ষেত্রে  এসব থেকে মুক্তির দাবিতে সমস্যা কী ?"
    দাবীতে সমস্যা নেই। কিন্তু কোনো নিয়ম জারী করে এটা আটকানো যাবে বলে মনে হয় না। কর্মক্ষেত্রে ড্রেসকোড থাকলেও কর্মক্ষেত্রের বাইরে সেটা মানতে কেউ বাধ্য নয়। পুরো আদানপ্রদানটাই এত সূক্ষ্মভাবে হওয়া সম্ভব যে তাকে নিয়ম জারী করে বাধা দেওয়া সম্ভব না। 
  • kaktarua | 192.82.150.102 | ২৫ মার্চ ২০২৪ ২২:১৭529798
  • এই আলোচনার ভিত্তিতে একটাই প্রশ্ন থেকে যায়। একমাত্র এই একটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার সাথে কেন এতো পাপ পুন্য ভালো মন্দ বোধ জড়িত। আমি অফিসে ঘুম পেয়েছে বললে কেউ চমকাবে না (অফিস এ ঘুমোনোর কথা নয় ) বা স্কুল এ "এই তোর টিফিন টা খাব" বললে কেউ চমকাবে না। কিন্তু বস কে দেখে আমার ভালো লাগছে বললে দুনিয়া রসাতলে চলে যাবে। একজন ছেলে একটা মেয়ের কাছে একমাত্র "কুপ্রস্তাব" ই নিয়ে যায়। কেন শুধুই প্রস্তাব নয়? শুধুই হাঁ বা না দিয়ে যার নিষ্পত্তি হয়। 
     
    উত্তর টাও সবার জানা। মূলত উত্তরাধিকার সুনিশ্চিৎ করতে-ই এতো পাপ পুন্য বোধের আবিষ্কার।  সেই মূল কারণ টাই যখন আজকের দিনে আর অতোটা "relevant" নয় তখন পাপ পুন্য/ ভালো মন্দ বোধের সংঘাত একটা  লাগবেই। যতক্ষণ না এতদিনের মগজধোলাই কাটিয়ে সত্যিকারের একটা লজিকাল কোনো সমাধান বেরোয়। শুধুই আবার লজিকাল সমাধান নয়। পৃথিবীর সমস্ত আইনি ব্যবস্থাও এই ভালো মন্দ র ওপরে তৈরী। তাই দিল্লি এখনো দূরে। 
     
    অনেক দাবি দাওয়া থাকতেই পারে কিন্তু সত্যি হচ্ছে একটা অত্যন্ত স্বাভাবিক প্রক্রিয়া কে নিয়মের জালে বাঁধা হচ্ছে। গা জোয়ারি ছাড়া সীমারেখা টানা খুব ই মুশকিল। যেকোনো সিমারেখাই কোনো না কোনো ক্ষেত্রে "applicable" হবে  না। 
     
     
  • স্বাতী রায় | 117.194.35.26 | ২৬ মার্চ ২০২৪ ১০:২৩529808
  • @kaktarua  এই ভাল লাগা মন্দ লাগা টা আরেক ইন্টারেস্টিং দিক। উভয় পক্ষের  সম্মতি থাকলে সেটা সুপ্রস্তাব। সম্মতি না থাকলে সেটা কুপ্রস্তাব। এক পক্ষের  প্রথমে সম্মতি ছিল পরে অসম্মতি হলে সেটা সু থেকে কু এ transit করে যায়। আর এর সঙ্গে পরতে পরতে পাওয়ার প্লে এবং morality জুড়ে বা না জুড়ে আরও জটিল হয়। এত জটিল ব্যাপার স্যাপার হয়ে যায় যে এইজন্যেই বোধ হয় theoretically concept থেকেই যৌনতা বাদ দিয়ে দিয়েছিল। Too tough to handle.
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন