এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • তরাই ও ডুয়ার্সে চা পর্যটন বিকশিত হোক 

    Goutam Chakraborty লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৮ মে ২০২৪ | ৬৯ বার পঠিত
  • তীব্র গরম এবং শারীরিক অসুস্থতার জন্য ক্ষেত্রসমীক্ষাতে যেতে পারছিলাম না। এই সপ্তাহে আবার বেরোলাম। আসলে ডুয়ার্সের প্রকৃতি নিত্যনতুন সাজে পর্যটকদের জন্য প্রতীক্ষারত। পর্যটক, প্রকৃতিপ্রেমিক, বন্যপ্রাণী এবং পক্ষী বিশারদেরা ডুয়ার্সের বনে জঙ্গলে, সবুজ তেপান্তরে, নদী নির্ঝরে, চা বাগিচার সবুজ গালিচায় বেড়াতে আসেন। শুধুমাত্র অরণ্য বা পাহাড়ের হাতছানিতে নয়, পুরনো মন্দির, মসজিদ এবং মাজারের টানেও পর্যটকেরা আসছেন। রয়েছে ভাওয়াইয়া, মুইশাল, মাহুত বন্ধুর গান, চোর-চুন্নির গান। ডুয়ার্স পরিক্রমায় দেখা যায় মেচ, রাভা, টোটো, ডুকপা, রাজবংশী, ওঁরাও জনজাতি, ডুয়ার্সের হাট, চা বাগিচার মোরগ লড়াই, ধামসা মাদল নৃত্য এবং লোকসংস্কৃতির বহু বিচিত্র এবং বর্ণময় সংস্কৃতি। মেঘেদের লুকোচুরি খেলার মাঝে সন্ধ্যায় মাদলের ধিতাং ধিতাং শব্দে দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশে পর্যটকেরা যেতে পারেন। নাগরাকাটাকে কেন্দ্র করে পর্যটকেরা বেরিয়ে আসতে পারেন জিতি, হোপ, হিলা, এবং কূর্তি চা বাগানে। চা শিল্পের সংকটে পর্য্যটনকে গুরুত্ব দিতে হচ্ছে বলে চালসা, মালবাজার, লাটাগুড়ি এবং নাগরাকাটাকে নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এখান থেকে যাওয়া যেতে পারে চাপরামারি জঙ্গল পেরিয়ে ঝালং বিন্দুর পাহাড়ি রাস্তায় জলঢাকা জলবিদ্যুত প্রকল্পের জলঢাকাতে। কুলকুল শব্দে একটানা বয়ে যাওয়ার ছন্দ মন আকুল করে। বনাঞ্চলের অপূর্ব শোভার পাশাপাশি তরাই এবং ডুয়ার্সের শ্রেষ্ঠ সম্পদ চা উৎপাদনের প্রক্রিয়া দেশী এবং বিদেশী পর্য্যটকদের দেখাবার মধ্য দিয়ে তারা যাতে চা বাগিচা অঞ্চলে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পায় তার জন্য চা বাগিচা কতৃপক্ষকে সঙ্গে নিয়ে রাজ্য সরকার পরিকল্পনা রচনা করলে পর্যটন শিল্পের বিকাশের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবেও সরকার উপকৃত হবে। চা বাগানে কিভাবে চা পাতা তোলা হয় এবং ফ্যাক্টরীতে কিভাবে চা তৈরি হয় তা পর্যটকদের নিয়ে দেখানোর পাশাপাশি ভ্রমণের ব্যবস্থা যদি করা যায় তাহলে ট্যুরিজমের আকর্ষণীয় প্যাকেজ চালু করা যেতে পারে।

    তাই যে বিষয় নিয়ে লিখবো বলে এবারের সমীক্ষাতে বের হয়েছিলাম, ডুয়ার্সের অপরূপ মনোরম প্রকৃতিতে দাঁড়িয়ে মনে হল অনেক দুঃখ, বেদনা, কান্না, পাওয়া-না পাওয়ার কথা, দুর্নীতি, রাজনৈতিক বিবাদ, ধর্ম-অধর্ম সংক্রান্ত লেখা পড়ে মানুষ ক্লান্ত। মানুষ একটু রিলিফ চাচ্ছে। ন্যুনতম মজুরি, বোনাস, পিএফ, গ্র্যাচুইটি, চা সুন্দরী, পাট্টা নিয়ে লেখা পড়তে পড়তে মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। আসলে সমস্যার পাহাড়ে বসে থাকা চা বাগিচা নিয়ে লিখতে গেলে দিস্তার পর দিস্তা লেখা যাবে, কলমের পর কলমের কালি শেষ হয়ে যাবে। সিদ্ধান্ত নিলাম অনেকদিন চা পর্যটন বিষয়ে খোঁজ খবর করা হয়নি। তাই আটকে গেলাম নাগরাকাটা-বানারহাট-গয়েরকাটা সার্কিটে। মালবাজার সাব ডিভিশনের প্রায় প্রতিটি বাগান, কালিম্পং এর ফাগু, মিশন হিল, সামাবিয়ং, জলপাইগুড়ির করলা ভ্যালি থেকে বেলাকোবা, ভান্ডিগুড়ি হয়ে শিকারপুর, মালবাজার এবং বীরপাড়া মাদারিহাটের লঙ্কাপাড়া, গ্যান্দ্রাপাড়া, তুলসীপাড়া, বাগরাকোট, নাগেশ্বরী, কিলকট এককথাতে প্রচুর বাগান পর্যটন সম্ভাবনাতে ভরপুর। বন্ধ বা রুগ্ন চা বাগানগুলোতে যদি শ্রমিকদের ব্লু হোম স্টে ট্যুরিজম খুলতে সাহায্য করা হয় তবে সমষ্টিগতভাবে অনেকেই উপকৃত হবে। এলাম ক্যারনে। সামনের নীল পাহাড়টা হাতছানি দিয়ে ডাকছিলো।হাসপাতালের সামনেই পেলাম একদল মহিলাদের। ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলে কথা বলার অনুমতি চাইলাম। প্রথমে লজ্জাতে জড়োসড়। আধা হিন্দী, বাংলা মিশিয়ে যখন বোঝাতে সক্ষম হলাম আমার এই লেখাগুলো সরকারের মন্ত্রীদের ঘরে যায় এবং তাঁরা পড়েন এবং উন্নয়নের পপরে  কথা বলছিলাম নাগরাকাটার রুগ্ন বাগান ক্যারণের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের সঙ্গে। তাদের দাবি সরকারি সাহায্য এবং সামান্য প্রশিক্ষণ পেলে তারা সহজেই হোম স্টে চালাতে পারবে। বাগানের শ্রমিকদের দাবি মালিকের হাতে নয়, সরকার যদি সবরকম সাহায্য দিয়ে বাগানের শ্রমিকদের হাতেই পর্যটনের ব্যবস্থা তুলে দেয় তবে স্থানীয় অনেকেই উপকৃত হবে। বন্ধ রেড ব্যাংক চা বাগানেও শ্রমিকদেরকে কাজে লাগিয়ে টি ট্যুরিজমকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যাওয়া যেতে পারে বলে একমত চা বাগানের শ্রমিকেরা। সরকার চা-বাগানে পর্যটন নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার সঙ্গে তবে বলে বাগানের জানান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে এখানে পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে। বাগানটিতে নদী, পাহাড়, জঙ্গল রয়েছে। যাতে স্থানীয় শ্রমিকদের চা পর্যটন ব্যবস্থায় শামিল করা যায় সেই জন্য বিভিন্ন জায়গায় প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বানারহাটকে কেন্দ্র করে চামুর্চি, সামচি ভুটান, মাকরাপাড়া, বীরপাড়াকে কেন্দ্র করে মাদারিহাট জলদাপাড়া সার্কিট নিয়ে অসাধারণ টি টুরিজমের প্যাকেজ করাই যায়।

    ১৯৯৮-৯৯ সালে চা-এর বাজার ছিল তেজি। বলা হয় সেই সময় চায়ের স্বর্ণযুগ ছিল। চা শিল্পপতিদের একটি অংশ মোটা অঙ্কের লাভের টাকা চা শিল্প থেকে সরিয়ে অন্য শিল্প গড়ার কাজে বিনিয়োগ করেছেন। তাতে তাদের পকেট মোটা হয়েছে। কিন্তু পরিণতিতে চা শিল্প রুগ্ন হয়েছে। সে সময় কেউ এই প্রবণতা আটকানোর চেষ্টা করেনি। কেউ বলেনি যে চা শ্রমিকের রক্ত-ঘামে উপার্জিত লভ্যাংশ উত্তরবঙ্গেই বিনিয়োগ করতে হবে। চা শ্রমিকরা যে নিদারুণ আর্থিক সংকটে রয়েছেন তা সরকারি পরিসংখ্যানই জানান দেয়।  উত্তরবঙ্গের চা বাগানগুলিতে প্রায় হাজার হাজার হেক্টর জমি পতিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। চা বাগান কর্তৃপক্ষ এই জমি ব্যবহার করার কোন উদ্যোগ দেখান না। দেবাদিত্য চক্রবর্তী জলপাইগুড়ির বিভাগীয় কমিশনার পদে থাকাকালীন চা বাগানের এই পতিত জমির প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। কিন্তু তাতে জট খোলেনি। এই পরিত্যক্ত জমি ব্যবহার করে চা বাগানের শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য স্বনির্ভর প্রকল্প তৈরি করা যায়। সরকার এবং বিরোধী উভয়েই উন্নয়নের কথা বলে। এতে কতটা আন্তরিকতা আছে তা অভিজ্ঞতার নিরিখে এখন উপলব্ধি করতে পারেন উত্তরবঙ্গের বাসিন্দারা। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন টি টুরিজম বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে চা শিল্পপতিদের সঙ্গে বিন্নাগুড়ির সেন্ট্রাল ডুয়ার্স ক্লাবে সভা করেছিলেন। সে সময় কথা প্রসঙ্গে বুদ্ধবাবু বলেছিলেন চা পর্যটন উত্তরবঙ্গের অর্থনীতির ছবি বদলে দেবে। কিন্তু বাস্তবে কোনও বদল হয়নি। বুদ্ধবাবুর উত্তরসুরি বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও চা-পর্যটনে গুরুত্ব দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তব হল তাঁর আমলেও চা পর্যটনের বিকাশ তেমনভাবে হয়নি। আলিপুরদুয়ার জেলায় ফাঁসখাওয়া চা বাগান কর্তৃপক্ষ নিজস্ব উদ্যোগে পর্যটনের ব্যবস্থা করেছিল একসময়। এখন তারা বাগান বিক্রি করে দিয়েছে। বিশিষ্ট শিল্পপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণী প্রয়াত হবার আগে সরস্বতীপুর চা বাগানে এই ধরনের পর্যটন প্রকল্প তৈরি করেছেন। এর বাইরে সার্বিকভাবে কিছু হয়নি। অথচ চা পর্যটনে উন্নতি হলে উত্তরবঙ্গে কর্মসংস্থানের অনেক সুযোগ সৃষ্টি হত।

    শিল্প এবং বাণিজ্যমন্ত্রকের কাছে চা বাগানের মোট জমির অন্তত কুড়ি শতাংশ বিকল্প কাজে ব্যবহারের দাবি জানিয়েছিল চা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মালিকপক্ষ এবং শিল্পমহল। পাশাপাশি বন্ধ বাগানগুলির মত বাকি বাগানেও অস্থায়ী শ্রমিকদের ১০০ দিনের কাজের মাধ্যমে বাগান পরিচর্যার দাবি উঠে আসে। টি বোর্ডের মত ছিল বর্তমান ব্যবস্থায় অসমের চা বাগানে জমির ৫% বিকল্প ফসল চাষে ব্যবহার করা যেতে পারে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে ফসল চাষ সহ আরও কয়েকটি ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচ একর জমি ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। চা বাগানগুলো চাইছিল এই পরিমাণ বাড়িয়ে অন্তত কুড়ি শতাংশ করা হোক। টি বোর্ড এর মত ছিল বিষয়টি সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের বিষয়। তাই এই দাবির ব্যাপারে রাজ্য সরকারই বিচার বিবেচনা করতে পারে। টাই এর ডুয়ার্স শাখার তৎকালীন সম্পাদক রামঅবতার শর্মার মত ছিল কোন পূর্ব শর্ত ছাড়া শিল্পবান্ধব অন্য কোন প্রকল্পে চা বাগানের জমি ব্যবহারের অনুমতি মিললে সব ধরনের বাগান উপকৃত হবে। শিল্পমহল সেই কথাই জানিয়েছিল। রাজ্যে ট্যুরিজম পলিসি সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে রাজ্য সরকার ২০১৯ সালে। বলা হয় কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, কালিম্পং এবং উত্তর দিনাজপুর জেলায় এই পলিসি কার্যকর হবে। নতুন এই পলিসির নাম দেওয়া হয়েছিল টি ট্যুরিজম এন্ড অনলাইন বিজনেস পলিসি ২০১৯। এই আইনে বলা হয় চা বাগানগুলি তাদের চা বাগান এলাকার বাইরে থাকা অতিরিক্ত জমির ১৫ শতাংশ জমি অন্য প্রকল্পে ব্যবহার করতে পারবে। এতদিন চা-বাগানে পর্যটনের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ একর জমি ব্যবহারের অনুমতি ছিল। নির্মাণ কাজ করা যেত দেড় একরে। রাজ্য ক্যাবিনেটে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বাগানের মোট জমির ১৫% পর্যটনের কাজে ব্যবহার করা যাবে। তার ৪০ শতাংশ জমিতে নির্মাণ কাজ করা যেতে পারে। সর্বোচ্চ ১৫০ একর জমি টি ট্যুরিজমের জন্য বরাদ্দ হতে পারে। রাজ্য সরকারের নতুন টুরিজম আইনে বলা হয় চা-বাগানে টি টুরিজম পরিষেবা রূপায়নের বাইরে অন্য সহায়ক শিল্প যেমন জলবিদ্যুৎ, প্রাণিসম্পদ, ভেষজ উদ্ভিদ, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, হর্টিকালচার সহ আরো অনেক কৃষি-শিল্প করতে পারবে চা বাগান কর্তৃপক্ষ। তবে পরিবেশ বান্ধব কর্মসূচী এবং চা শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা করে চা বাগানগুলি পর্যটন পরিকল্পনা করে কাজ করার সুযোগ পাবে বলে সরকারের নির্দেশনামায় বলা হয়েছে।

    বলা হয় নতুন এই প্রকল্পে তৈরি হওয়া ৮০ শতাংশ কর্মসংস্থানের সুযোগ চা বাগানের মানুষ এবং স্থানীয়দেরকেই দিতে হবে। এই প্রকল্প রূপায়ণে শ্রমিক বস্তির ক্ষতি, স্থানীয় পরিবেশের ক্ষতি, বনদপ্তর এর জমি বা আদিবাসীদের জমির ক্ষতি কোন অবস্থাতেই করা যাবে না। যদি প্রকল্পের জন্য শ্রমিক কোয়ার্টার সরাতে হয় তাহলে নতুন করে কোয়ার্টার তৈরি করে দিতে হবে। এই নতুন কাজে চা বাগান অন্য কারোর সঙ্গে পিপিপি মডেল করতে পারে। তার জন্য জমি সংক্রান্ত বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা শাসকের সঙ্গে কথা বলতে বলা হয়েছে নতুন এই আইনে। এই নতুন প্রকল্প নীতিতে রাজ্য সরকারের মুখ্য সচিব ছাড়াও প্রিন্সিপ্যাল সচিব, টি বোর্ড, চা বাগান মালিক সংগঠনের দুজন প্রতিনিধি থাকবে। কারণ শুধুমাত্র চা নয়, চা বাগানের ফাঁকা জমিতে পর্যটনের বাইরে আরও বেশ কয়েকটি নতুন প্রকল্প করার কথা বলা হয়েছে যার ফলে চা শিল্প এবং বাগানের শ্রমিক এবং সহযোগী শিল্পের অনেক উন্নতি হবে এবং অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। পূর্বতন বাম সরকার ট্রেডিং কর্পোরেশন করেও কিছু করতে পারেনি চা শিল্পে। তাই টি ট্যুরিজম এন্ড অনলাইন বিজনেস পলিসি ২০১৯ এই প্রকল্প রূপায়ণে টি টুরিজমের বিষয়টি রূপায়ণ করা যেতে পারে চা বাগিচাগুলিতে। তবে চা বাগানের জমি অন্য কাজে ব্যবহার করতে গেলে ভূমি সংস্কার দপ্তরের বিশেষ ছাড়পত্র দরকার হয়। যে জমিতে পর্যটন প্রকল্প গড়ে তোলা হবে নিয়মানুয়ায়ী চা বাগান মালিককে তা সারেন্ডার করতে হবে ভূমি দপ্তরে। ভূমি দপ্তর ছাড়পত্র দিলে তবে পর্যটন প্রকল্প হবে। কিন্তু কে নেবে এই উদ্যোগ। আগেও কেউ উদ্যোগ নেয়নি, এখনও নেয় না। আসলে জমির পরিমাণের কথা শুনেই প্রস্তাবিত টি ট্যুরিজম নিয়ে সরব হয় বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। বিজেপির চা শ্রমিক সংগঠন ভারতীয় টি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং আলিপুরদুয়ারের প্রাক্তন সাংসদ জন বারলার মতে বন্ধ বাগান খোলার নাম নেই, চা শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে জমির পাট্টা দেওয়ার কোনো কথা বলা হচ্ছে না, অথচ মালিকদের হাত শক্ত করার জন্য তাদেরকে জমি দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। টি ট্যুরিজম হলে শ্রমিকদের আদৌ কোনো লাভ হবে না। বরং মালিকেরা ওই পুঁজি বাগানে বিনিয়োগ করলে আখেরে মঙ্গল হবে লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের। 

    অল ইন্ডিয়া প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের চা বাগান ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা জিয়াউল আলমের মতে ওয়েস্ট বেঙ্গল এস্টেট অ্যাকুইজিশন অ্যাক্টের আওতাধীন ব্যবস্থায় চা বাগানের জমিতে স্রেফ চা উৎপাদন এবং তার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়া ছাড়া আর অন্য কিছু করার সংস্থান নেই। তাহলে বাগানের ভেতরে বিরাট পরিমাণ জমি পর্যটনের জন্য ব্যবহারের অনুমতি কিভাবে দেওয়া হচ্ছে। তাঁর মতে, পশ্চিমবঙ্গে এস্টেট অ্যাকুইজিশন অ্যাক্টের নিয়ন্ত্রণাধীন চা বাগানের জমি কেবলমাত্র চা উৎপাদন এবং সে জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই জমির ওপর যদি কারোর প্রকৃত অধিকার থেকে থাকে তবে তাঁরা হলেন উত্তরাধিকারসূত্রে কয়েক পুরুষ ধরে বসবাসকারী শ্রমিকেরা। তাঁদের জমির পাট্টা দেওয়া হোক। এই জমি অন্যভাবে ব্যবহার করতে পারে না বাগান মালিকেরা। বাগানে প্রোমোটারির ব্যবসা ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যেই সরকার এসব করছে বলে জিয়াউল বাবু সরাসরি অভিযোগ করেন। সরকার যদি বিষয়টি নিয়ে পুনরায় ভাবনাচিন্তা না করে তবে বিশেষ করে শহর লাগোয়া বাগানগুলোতে রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা এবং সেই সঙ্গে জমি মাফিয়াদের কারবার আরো ফুলে ফেঁপে উঠবে। এনইউপিডব্লিউ এর সভাপতি অলক চক্রবর্তীর বক্তব্য ছিল আগে যখন পাঁচ একর জমি ব্যবহারের অনুমতি ছিল তখনই নানা কিছু হয়েছে। এবারে ১৫০ একর হওয়ার পর চা শিল্পে শেষ পেরেক পোঁতার কাজটি শুরু হবে। সরকারকে পুনরায় সিদ্ধান্ত ভেবে দেখার আর্জি জানিয়েছেন তারা। পিটিডব্লিউইউএর চেয়ারম্যান তেজকুমার টোপ্পোর মতে বাগানের একফালি জমিতে শ্রমিকেরা ধান চাষ করতে গেলেও বাধা দেওয়া হয়। তাহলে পর্যটনের অনুমতি কিভাবে দেওয়া হচ্ছে। কলকাতা এবং মুম্বাইয়ের বাবুরা বাগানে হোটেল খুললে শ্রমিকদের কোন লাভ হবে না। তারা শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার হিসাবে জমির পাট্টা চেয়েছেন। তবে শাসকদলের শ্রমিক সংগঠনের মতে সরকারি সিদ্ধান্তের ফলে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে এবং টি ট্যুরিজমের প্রচার এবং প্রসারের মাধ্যমে ডুয়ার্স তরাই ও পাহাড়ের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। বড় বাগানে নয়া আঙ্গিকে চা পর্যটনের সরকারি প্রস্তাব নিয়ে চায়ের পেয়ালায় তর্কবিতর্কের তুফান অব্যাহত। লোকসভা নির্বাচন শেষ। রাজনৈতিক আকচাআকচি বন্ধ করে ২০২৬ এর বিধানসভাতে ঘর গোছানো শুরু হবে। টি টুরিজমই হোক না ডুয়ার্সের চা বলয়ে উন্নয়নের দিশারী।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • জয়ন্ত ভট্টাচার্য | 117.245.63.164 | ০৮ মে ২০২৪ ১৪:০৭531508
  • ভালো লেখা 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে প্রতিক্রিয়া দিন