এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • বকবকস (জার্মান সাহেবের গপ্পো)

    Falguni Ghosh লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৫ মে ২০২৪ | ১৬৯ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • ভাষা যা কিনা মনের ভাবের প্রকাশক — তার রঙ ঢং সব কিছুই বদলে যায় বা নতুন রকমের হয়ে ওঠে শুধুমাত্র বলার ভঙ্গীর চোটে। আর সেই ভঙ্গীসহ যেন নতুন ভাষার তৈরি হয়। সেক্ষেত্রে কোনো ‘ক’অক্ষর গোমাংসে’র শিক্ষানবীশদের বেশ নাকানি চোবানি খেতে হয়। তখন গবেষণা কর্মী হলেও নবজাতকের মন দৃষ্টি নিয়ে সব শব্দ, প্রতিটি ভঙ্গী গলাধঃকরণ করতে হয়। তা নাহলে আসল কাজটি যায় আটকে! হ্যাঁ আমার মেয়েবেলার জার্মান সাহেবের কথাই বলছি, ঠিক ধরেছেন।

    সেই বিশিষ্ট গবেষক সাহেবটিও ‘পায়েস’ –এর অনেক পরিমার্জন, সংশোধন, পরিবর্জন করে ‘ফা-এস’, ‘পা-এস’ বলে হেঁচকাতে হেঁচকাতে শেষে গিয়ে দাঁড়ালেন ‘সুইট রাইস’-এ। আবার শুধু নামেই ক্ষান্ত দিলেন না, রন্ধন প্রনালীটিও বাধ্য ছাত্রের মত লিখে, মুখস্থ করে, আউড়িয়ে, ঠোঁটস্থ করে তবে হাঁফ ছাড়লেন। এককথায় বলা যায় মোটামুটি বঙ্গ সংস্কৃতি বলতে তাবৎ বাঙালি যা বোঝে তার সবটুকুই উনি আত্মস্থ করতে উঠে পড়ে লাগলেন। ‘গোরু খোঁজা’ বলে কথা! (থুড়ি গবেষণা)

    এই সাহেবের প্রধান ইয়ার দোস্তদের মধ্যে ছিলেন আমার বাবা আর তাঁর এক দাদা (দুজনেই শিক্ষক, দাদাটি ইংরেজির বিশিষ্ট পণ্ডিত)। শঙ্কর জেঠু ছিল নাম। ইংরেজির পণ্ডিত হলে কি হয়, নিজ মাতৃভাষা অন্ত প্রাণ ছিলেন তিনি। বিশেষত আড্ডার ঠেকে সেই হৃদয় নিঃসৃত মাতৃভাষার মধু যেন ঝরে পরত। ওঁদের পরিবারের সঙ্গে আমাদের ছিল বেশ হৃদ্যতার বন্ধন, তাই দুই পরিবারের যাতায়াত - ওঠাবসা - খাওয়াদাওয়া ছিল অবাধ। অবশ্য জেঠিমার আদরের টান এই আত্মীয়তার প্রধান মশলা ছিল।

    তো কোনো পার্বণ উৎসব হলে আর কথাই নেই। তারপর যদি হয় দুর্গাপুজো। বাঙালির উচ্ছ্বাস আড়ম্বর দেখে কে! দুর্গাপুজোর শেষদিন অর্থাৎ বিজয়া দশমীর সকালে ঘটবিসর্জন পর্ব শেষ হয়ে বিকেলে ‘গোরুছোটা’তে উৎসবের সমাপ্তি ঘটে। অবশেষে সন্ধ্যে নামার পর মায়ের বিসর্জন। এই ‘গোরুছোটা’ উপলক্ষে দুপুরের পর থেকেই ঢাক পেটানো আর ছেলে ছোকরাদের বাজি- পটকা বর্ষণ শুরু হত। বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে তেল সিঁদুর মাখিয়ে গ্রামের একপাশের কোনো ফাঁকা মাঠে গোরুগুলোকে সারি দিয়ে দাঁড় করানো হত। গোরুগুলোর আশেপাশে প্রচুর বাজি পটকা ফোটানো আর ঢাক বাজানোর ফলে গোরুগুলো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে এলোপাথাড়ি দৌড় শুরু করত। (আগে এই উপলক্ষে বৎসরকালীন চাষবাসের দর দস্তুর করা এবং সারা বছরের চাষের প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ধার্য করা হত) আর এতেই মানুষের মজা, উৎসব। সাধে কি আর বলে গোরু!!

    যাই হোক, এই গোরু ছোটা পর্বটি সাঙ্গ হলেও ছেলে পিলেদের তিড়িং বিড়িং আর বাজি ফোটানোর আনন্দ সহজে মিটত না। সেই বিজয়া দশমীর বিকেলে আমার ঐ ইংরেজির পণ্ডিত শঙ্কর জেঠুর বাড়িতে বৈঠকি আড্ডা চলছে। কিন্তু পাশের রাস্তা থেকে উড়ে আসা বাজি পটকার আওয়াজে কানের ঝালাপালা। বারবার রসভঙ্গ হচ্ ছে--
    “বুঝলে ভায়া!(আমার বাবাকে) এই ছেলেগুলোর কুটকুটি দেখেছো! অনেক হল! এবার থাম, তা নয়। উচ্চিংড়িগিরি করতে গিয়ে যখন হাতে পায়ে কি গায়ে আগুনের ছ্যাকা খাবে তখন কুটকুটি মরবে ব্যাটাদের। খুব কুটকুটি!”

    আর ঠিক তখনই কানের পাশ থেকে উড়ে এল আরেকটি ব্যোম —
    “হোয়াট ইজ ক্যাটকটি( কুটকুটি)?”— হায় হায়! শিক্ষানবীশ সাহেবের কথা কারো খেয়ালই ছিল না।
    জেঠিমার ফোড়ন ভেসে এল — “বেশ হয়েছে! যেমন সাহেবের সামনে উল্টোপালটা ভাষায় কথা বলা! এবার ডিকশনারিতে ‘কুটকুটি’র ইংরেজি খোঁজো গে!”
    সত্যি তাই সাহেব তো না বুঝে ছাড়বেন না। অবশেষে ইংরেজির পন্ডিতের মাথা চুলকে বের হল — কুটকুটি মিন’স জয়ফুল মোমেন্ট উইথ এক্সট্রা চিয়ারস!!
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত প্রতিক্রিয়া দিন