এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর

  • Letter to a teacher by The school of Barbiana অথবা বারবিয়ানা স্কুল থেকে "" আপনাকে বলছি স্যার""

    Tim
    বইপত্তর | ২৪ জুন ২০০৭ | ৩৩৪৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • Tim | 71.67.115.14 | ২৪ জুন ২০০৭ ০৬:১০388779
  • ইতালির টাসকানিতে চতুর্দশ শতাব্দীতে তৈরী হয়েছিল বারবিয়ানা চার্চ। ছবির মত উপত্যকাকে সাক্ষী রেখে পাহাড়ের মাথায় গড়ে ওঠা এই গীর্জায় ১৯৫৪ সালে বদলি হয়ে আসেন ফাদার মিলানি। পুরো নাম ডন লোরেঞ্জো মিলানি। এই অল্পবয়স্ক যাজকের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে মাথা ঘামানোর বাতিক ছিল। ফ্লোরেন্সের যে গীর্জা থেকে তাঁকে বদলি করা হয় সেখানে তিনি একটা নৈশ বিদ্যালয় চালু করেছিলেন, অচিরেই যা প্রভূত জনপ্রিয়তা লাভ করে।
    এহেন মিলানি বারবিয়ানাতে এসেও খোঁজ-খবর করতে শুরু করেন সেখানকার প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে। এবং যা দেখেন তাতে তাঁর চোখ কপালে উঠে যায়।
    বারবিয়ানায় ছড়িয়ে থাকা কুড়িটি খামারের বাচ্চা ছেলেমেয়েদের শিক্ষার অবস্থা তখন শোচনীয়। অধিকাংশ ছেলেমেয়েই ততদিনে পরীক্ষায় ফেল করে স্কুলকে চিরতরে বিদায় জানিয়েছে। যারা আছে তারাও বকা খেয়ে খেয়ে প্রবল হীনমন্যতা আর আতঙ্কে দিশেহারা।
    এইসব ফেল করা , স্কুল পালানো দশটি ছেলেকে নিয়ে মিলানি চালু করলেন বারবিয়ানা স্কুল। এদের বয়স ছিল এগারো থেকে তেরোর মধ্যে। পরে ছাত্রসংখ্যা সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় কুড়ি।
  • Tim | 71.67.115.14 | ২৪ জুন ২০০৭ ০৬:৩৭388790
  • এই স্কুলের নিয়ম কানুন একটু অন্যরকম ছিল। এখানে পুরোন ছাত্রেরা অনেক সময়ই নতুনদের পড়াত, আর শিক্ষার অঙ্গ হিসেবে পড়ুয়াদের সমধান করতে হত এমন সব সমস্যা যা তাদের প্রাত্যহিক জীবনে সহজেই আসতে পারে। এইরকম একটা প্রোজেক্ট হিসেবে স্কুলের আটজন পড়ুয়া মিলে একটি বই লেখে, নাম দেয় "" আপনাকে বলছি স্যার""। এই বইতে তারা সেই সময়ের শিক্ষাপদ্ধতির ত্রুটিগুলি প্রাঞ্জল ভাষায় ব্যাখ্যা করে , তথ্য-সমেত।
    ১৯৬৭ সালে মিলানি মারা যান, আর তার সাথে বারবিয়ানা স্কুল-ও বন্ধ হয়। কিন্তু প্রিয় শিক্ষকের আদর্শ বুকে করে আগলে রাখে সেদিনের সেই ছোট্ট পড়ুয়ারা। তাই শেষ হতে হতেও থেকে যায় বারবিয়ানা স্কুল।

    Letter to a teacher ইতালিতে সর্বাধিক বিক্রী হওয়া বই হিসেবে মর্যাদা পাওয়ার পর প্রচারের আলো পায়, আর সেই সঙ্গে লেখকেরা লাভ করে Italian Physical Society র বিশেষ সম্মান। সাধারনত: প্রতিভাবান পদর্থবিদেরাই এই বিশেষ সম্মান পেতেন, যা ঐ আটজন ""ফেল করা"" ছাত্র সেদিন জিতে নিয়েছিল, সংগৃহিত তথ্যের নিপুন বিশ্লেষনকে হাতিয়ার করে । তারপর সেই বইএর অনুবাদ হতে শুরু করে। বাউলমন প্রকাশনী থেকে একটি বাংলা অনুবাদ ও হয়, নাম দেওয়া হয়
    বারবিয়ানা স্কুল থেকে "" আপনাকে বলছি স্যার""।
  • Tim | 71.67.115.14 | ২৪ জুন ২০০৭ ০৮:১২388801
  • আগেই বলেছি যে মিলানির মৃত্যুর সাথে আপাতভাবে বারবিয়ানা স্কুলের-ও মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু যেসব ""বাতিল"" ছাত্রদের মিলানি মানুষ হওয়ার পথ দেখিয়েছিলেন, তারা তাদের আদরের স্কুলকে নতুন করে ফিরিয়ে আনে।

    বিশ্বের বেশ কিছু ভাষায় অনুবাদ হওয়ার পর বারবিয়ানার ক্ষুদেরা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৬৮র গ্রীষ্মে এক অনুবাদক কৌতুহলী হয়ে বারবিয়ানা যান। আর অবাক হয়ে প্রত্যক্ষ করেন ফিনিক্স পাখীর মত করে বেঁচে ওঠা নতুন বারবিয়ানা স্কুল।

  • Tim | 71.67.115.14 | ২৪ জুন ২০০৭ ০৯:১১388812
  • পূর্বোক্ত অনুবাদক যখন বারবিয়ানা যান তখন শুরুর সেইসব ছাত্রদের বয়স ষোল কি সতেরো। সেই সময় ফ্লোরেন্সের এক অনাথ আশ্রমের কিছু বাচ্চাকে জড়ো করে সেইসব ""পুরোন"" ছাত্ররা পড়াচ্ছিল। নানা বয়সের শিশুরা সেই আবাসিক শিবিরে স্বতস্ফুর্ততার সাথে পাঠ নিচ্ছিল, কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে শিখে নিচ্ছিল দৈনন্দিন জীবনে শিক্ষাকে কাজে লাগাবার উপায়। সেই বিশাল কর্মশালার ব্যবস্থাপনা দেখে ঐ অনুবাদক চমৎকৃত হন।

    ঐ বছরের শরতেই স্কুলটি স্থানান্তরিত হয় ফ্লোরেন্সের কালেন্‌জানোতে। এই সেই জায়গা যেখান থেকে বদলি হয়ে মিলানি বারবিয়ানা গেছিলেন।
    মিলানির মৃত্যুর পরেও যে তাঁর ছাত্ররা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রেখেছিল সেকথা আগেই বলেছি। ফ্লোরেন্সে তারা সবাই জমায়েত হল। সেখানে একসাথে ছোট আর বড়দের জন্যে বৃত্তিমূলক শিক্ষাকেন্দ্র তৈরী হল; একটা বড় হলঘর , কয়েক টুকরো চক আর বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে। যদিও সেই অকিঞ্চিৎকর প্রয়াসের মধ্যেই নিহিত ছিল এক উঙ্কÄল ভবিষ্যতের আশা।
  • Tim | 71.67.115.14 | ২৪ জুন ২০০৭ ১৪:৩৭388823
  • এবার প্রশ্ন উঠবে Letter to a teacher লেখা হল কেন? ফাদার মিলানি চেয়েছিলেন বারবিয়ানা স্কুলের ছাত্ররা বাস্তব সমস্যা সমাধান করতে শিখুক। সমাধান করার জন্য দরকার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ। letter to a teacher এমনই এক সার্থক হোমওয়র্ক যেখানে ছাত্ররা তাদের সবথেকে বড় সমস্যার শিকড় খোঁজার প্রেরণা পেল। আবার বিষয়ের গুণে তাদের শিখে নিতে হল তথ্য বিশ্লেষণের খুঁটিনাটি।
    letter to a teacher আসলে আটজন ছাত্রের তরফ থেকে লেখা একটা চিঠি, তাদের শিক্ষয়ত্রীর উদ্দেশ্যে। গোটা চিঠিটা প্রথম পুরুষে লেখা, যেখানে ""আমি"" আসলে সমষ্টিগত ভাবে ঐ আটজনকেই বোঝাচ্ছে।
    কেন এবং কারা লিখেছিল তাতো মোটামুটি জানা গেল। কিন্তু কি ছিল সেই চিঠিতে, যার ঢেউ আছড়ে পড়েছিল সারা বিশ্বে? ছিল তীরের ফলার মত সহজ কিন্তু অমোঘ যুক্তিজাল। দু-একটা উদাহরণ দিলেই ব্যাপারটা খানিক বোঝা যাবে।
    বইটা শুরুই হচ্ছে এইভাবে :

    "" প্রিয় শিক্ষিকা মহাশয়া,
    আপনি আমাকে মনে করতে পারবেন না। আপনি আমাদের অনেককে ফেল করিয়েছিলেন।
    আমি কিন্তু প্রায়েই আপনার কথা, অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কথা,ঐ প্রতিষ্ঠান যাকে আপনারা স্কুল বলে ডাকেন তার কথা আর যাদের আপনি ফেল করান সেইসব ছেলেদের কথা ভেবেছি।
    দুবছর আগে যখন আমি প্রথম শ্রেণীতে পড়তাম, তখন আপনি আমাকে প্রায়েই লজ্জায় ফেলে দিতেন। সেই থেকে লজ্জা পাওয়া আর ভিরুতা আমার সারা জীবনের সঙ্গী।
    প্রথমে আমার মনে হয়েছিল এটা আমার বা আমাদের পরিবারের একটা অসুখ। টেলিগ্রামের ফর্ম দেখলেই মা এবং জরুরি কোন নোটিশ দেখলেই বাবাও এরকম করে। পরে আমি ভেবে দেখলাম এটা হয়ত পাহাড়ের লোকেদের একটা বৈশিষ্ট্য। হয়ত সমতলের লোকেরা অনেক আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু সেখানেও ঐ একই ব্যাপার দেখে আমার মনে হচ্ছে, হয়ত এর সাথে সাহসিকতা বা ভীরুতার কোন সম্পর্কই নেই। এটা হয়ত ঔদ্ধত্যের অভাব। গরীবদের মধ্যে যা বহু পুরোন যুগ থেকেই চলে আসছে কোন এক রহস্যময় কারনে...।""
    গোটা বইটাই এমন যে অনুবাদ করতে শুরু করলে থামতে ইচ্ছে করেনা। কিন্তু তা নিÖপ্রয়জন। তার থেকে বরং গোটা বইটার বক্তব্য সংক্ষেপে জানাবার একটা দু:সাহসিক চেষ্টা করা যাক।
  • I | 81.129.181.72 | ২৪ জুন ২০০৭ ১৫:৩৯388827
  • ব্যাপক শুরু। বসে আছি, শুনবো বলে।
  • Tim | 71.67.115.14 | ২৫ জুন ২০০৭ ১২:০৪388828
  • Letter to a teacher অসম্ভব জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে একটা বড় কারণ ছিল বইটার ভাষা। শিক্ষাপদ্ধতির মত এমন জটিল একটা বিষয় কত সহজ সরল ভাষায় আলোচনা করা যায় শুধু সেটা জানার জন্যই বইটা পড়ে ফেলা যায়। আর এখন বইটার সম্পর্কে লিখতে বসে বারবার মনে হচ্ছে যে আমার বর্ণনা বইটাকে পাঠকের থেকে আরো দূরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, কারণ বইটা নিজেই তার সব থেকে বড় বিজ্ঞাপন।
    তাই মধ্যপন্থা অবলম্বন করলাম। কিছু জায়গা সরাসরি তুলে দেবো; কিছু পাতার বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে লিখব। এরপরেও কোন সমস্যা হলে ? আমার যা কিছু ত্রুটি, তা ঢেকে দেওয়ার জন্য তো মূল বইটা আছেই।
    স্কুলের বাচ্চাদের ভীরুতা নিয়ে লেখকের বক্তব্য তো আগেই বললাম। এরপর সে জানাচ্ছে কিভাবে ছাত্রদের মধ্যে ভাল আর খারাপ এই দুই গোষ্ঠী তৈরী করে সেই বিভাজনকে আরো বাড়িয়ে তোলা হয়। যেসব ছাত্র প্রথাগত সিলেবাস মেনে টুঁ শব্দটি না করে দারুনভাবে তাদের পাখি পড়ার মত করে শেখানো বুলি আওড়াত তারাই খালি পাস করে করে উপরের ক্লাসে ভরতি হতে পারত। অন্যরকম করলেই ফেল। আর কয়েকবার ফেল মানেই সেই হতভাগ্যের বাবাকে ডেকে বলা হত, "" ওর দ্বারা লেখাপড়া হবেনা। ওকে মাঠে-ঘাটে চাষের কাজে লাগিয়ে দিন""।
    বোঝাই যাচ্ছে, এই বইটির লেখকদের সবার বাবাকেই এরকমই কিছু শুনতে হয়েছিল। মিলানি যখন বারবিয়ানায় স্কুল খুললেন, তখন এইসব অভিভাবকেরা একটা বিকল্প প্রতিষ্ঠান পেলেন। এবং কিছুদিনের মধ্যেই বহুদূর থেকে ""বাতিল"" ছেলেদের নিয়ে এসে বাবারা মিলানির জিম্মায় রেখে যেতে লাগলেন। বারবিয়ানার নিয়ম ছিল অন্যরকম। সেখানে কাউকে শুনতে হয়নি, যে "" এটা তোমার জন্য নয়""।
    দূরত্বের ব্যাপারটা বোঝানোর জন্য একটা সুন্দর উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। বাড়ি থেকে স্কুল যেতে এক ছাত্রকে দুঘন্টা দুর্গম নির্জন পথে চলতে হত। শীত কি গ্রীষ্ম রোজ স্কুল বসত। হ্যাঁ, রবিবারেও। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলত সে স্কুল। এই বিপুল দূরত্ব, কঠোর পরিশ্রম, সবকিছু আনন্দের সাথে মানিয়ে নিয়েছিল ফেল করা ছেলেগুলো, "" পড়াশুনো তোমাদের যাদের জন্য নয়"" বলে যাদের একদা ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল প্রথাগত শিক্ষার ধ্বজাধারী স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
  • Tim | 71.67.115.14 | ২৫ জুন ২০০৭ ১২:৪৬388829
  • প্রথমবার বারবিয়ানা এসে ছাত্ররা যারপরনাই অবাক হত। একটা স্কুল বলতে যা বোঝায় বারবিয়ানায় তার কিছুই ছিলনা। ব্ল্যাকবোর্ড, বেঞ্চ কিচ্ছু নেই। শুধু প্রকান্ড একটা টেবিল ছিল। সেটার চারপাশে বসে পড়াও হত, আবার খাওয়াও হত। প্রত্যেকটা বইএর একটাই করে কপি ছিল। ছাত্ররা সেই একটা বইএর চারধারে জড়ো হয়ে পড়ত। না জানলে বোঝা যেত না যে, ঐ ক্ষুদে পড়ুয়াদের মধ্যেই একজন ওদের শিক্ষক।
    এইসব ""শিক্ষক""দের মধ্যে সব থেকে বেশি যার বয়স , সেও ছিল মাত্রই ষোল বছরের। আর সর্বকনিষ্ঠটি বারো বছরের।
    এইসব দেখেশুনে নবাগত ছাত্ররাও উৎসাহ পেত খুব। তাদের মধ্যে অনেকেই একদিন ঐ স্কুলেই ছোটদের পড়ানোর স্বপ্ন দেখত। এবং তাদের সেই স্বপ্ন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সত্যিও হয়েছিল।
    বারবিয়ানার আরো একটা জিনিস নতুনদের অভিভূত করত। ঐ স্কুলের নিয়ম ছিল যে যতক্ষণ না সবাই পড়া বুঝতে পারছে, ততক্ষণ পড়া আর এগোবে না। সবাই ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করত ক্লাসের সবথেকে দুর্বল ছাত্রটির জন্য। সে বুঝলে তবেই পড়া এগোত। মজার ব্যাপার হল, ক্লাসে ঐ দুর্বল ছাত্রদেরকে প্রচন্ড আদর আর ভালবাসায় ভরিয়ে দেওয়া হত। প্রতি পদক্ষেপে তারা টের পেত, স্কুলটা তৈরী হয়েছে তাদের জন্যই। তাই কেউ হীনমন্যতায় ভুগত না। উল্টে আত্মবিশ্বাসের সাথে পড়তে শুরু করত এবং সেরাটাই দেওয়ার চেষ্টা করত।
    মিলানির স্কুল প্রায় সমস্ত ছাত্রকেই শিশুশ্রমিক হওয়া থেকে বাঁচাতে পেরেছিল। এখানে দুটো তথ্য দেওয়া দরকার।
    ১) তৎকালীন শিক্ষা আইন অনুযায়ী পাঁচ বছরের বিদ্যালয়শিক্ষা বাধ্যতামূলক ছিল যার মধ্যে বেশিরভাগটাই একজন ছাত্র কাটিয়ে দিত একই ক্লাসে, বারবার ফেল করার জন্য। তারপরেই তারা চালান হয়ে যেত চাষের মাঠে বা কারখানায়।
    ২) বারবিয়ানা স্কুলে কোন মেয়ে ভর্তি হয়নি। কারন, প্রথমত, তাদের বাড়ির লোকেরা চাইত না মেয়েরা বেশি জানুক বা শিখুক। কে না জানে ওরা "" যত বেশি জানে.... ইত্যাদি ""।
    এছাড়া পথের দুর্গমতা এবং দীর্ঘ সময়সীমাও বড় কারন ছিল।
  • a | 80.43.135.199 | ২৫ জুন ২০০৭ ১৪:১৬388830
  • তারপর ????????
  • d | 202.142.6.253 | ২৫ জুন ২০০৭ ১৪:৫৩388780
  • বা:!
  • Tim | 71.67.115.14 | ২৬ জুন ২০০৭ ১১:৪৬388781
  • বারবিয়ানা স্কুলের সাফল্যে প্রথাগত স্কুলের কর্তাব্যক্তিরা যে খুসি হননি তা বলাই বাহুল্য। সুযোগ পেলেই তাঁরা প্রমাণ করার চেষ্টা করতেন যে মিলানির শিক্ষাপদ্ধতি একেবারেই অচল। মিলানিকে অপদস্থ করার লোকেরও অভাব ছিলনা। কিন্তু ছাত্ররা ততদিনে ঠিক-ভুলের পার্থক্য করতে শিখে গেছে। তাই তারা সেইসব প্রচারে কান দেয়নি।
    মিলানির ছাত্রদের স্কুল সম্পর্কে ধীরে ধীরে একটা পরিষ্কার ধারনা গড়ে উঠছিল। "" পাশ ""করা ছাত্রদের মত তারা স্কুলকে "" শাস্তি"" হিসেবে ভাবত না। খেলাধুলো বা ছুটির মতই স্কুলে যাওয়াও তাদের কাছে সমান আনন্দের ছিল।
    এবার শোনা যাক স্যান্ড্রো আর জিয়ান্নির গল্প। বছর পনেরোর তালঢ্যাঙা স্যান্ড্রোকে নিয়ে ওর পুরোন স্কুলে সবাই হাসাহাসি করত। দুবার পরপর ফেল করার পরে এই ""অমনোযোগী"" ছাত্রটির আগমন ঘটে বারবিয়ানায়।
    অন্যদিকে জিয়ান্নিকে প্রায় দাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল
    "" ফাঁকিবাজ"" বলে। চৌদ্দ বছর বয়সের এই ছেলেটির পড়ার নামে জ্বর আসত। এরা দুজনেই প্রথমে আসতে চায়নি বারবিয়ানায়। নতুন ক্লাসে ভর্তি করে নেওয়া হবে এবং নম্বর নিয়ে কটাক্ষ করা হবেনা বলার পর তারা নিমরাজি হয়।
    কিন্তু এরা দুজনেই বারবিয়ানা এসে বেহদ খুসি হয়। ""পাশ"" করার যে আনন্দ তাদের অধরা ছিল তা ওরা এক লহমায় পেয়ে যায় এই স্কুলে। ওদের সম্পর্কে শিক্ষিকাকে বারবিয়ানার তরফ থেকে লেখা চিঠিতে বলা হচ্ছে :
    ""..... আপনি ওদের শিক্ষাকে নির্ভুল বানানোর জন্য কোনদিন পাশ-ই করালেন না। আর ওরাও দিনের পর দিন একই গল্প-কবিতা, গ্রীক আর রোমের ইতিহাস, ইতালির ভূগোল পড়তে পড়তে ( এবং অবশ্যই ফেল করে করে)বিরক্ত হয়ে একদিন স্কুল-ই ছেড়ে দিল। এর ফলে ওরা জানলই না যে ইতালির বাইরেটা ঠিক কেমন।
    ... । এটা ঠিক-ই যে জিয়ান্নি ব্যাকরণে কাঁচা ছিল। কিন্তু বয়সে বড় হওয়ায় সে অনেক এমন জিনিস জানত ও বুঝত যা অন্যদের সেই বয়সে জানা ছিল না। সে বুঝতে শুরু করেছিল পারিবারিক সম্পর্কের খুঁটিনাটি ও চাকরির অবস্থা। তার চারপাশের মানুষদের জীবনসংগ্রাম তাকে ভাবাত।
    কিন্তু আপনাদের স্কুলে তার কোন দাম ছিলনা ""।

  • Tim | 71.67.115.14 | ২৬ জুন ২০০৭ ১২:১৬388782
  • চিঠি আরো বলছে : "" বারবিয়ানায় এসে স্যান্ড্রোর জীবনের মোড় ঘুরে যায়। পরবর্তীকালে সে দুর্দান্ত পড়ুয়া হয়ে ওঠে এবং "" কোন এক সুন্দর গ্রীষ্মে "" আপনারা তাকে পাশ করাতে বাধ্য হন।
    জিয়ান্নি অবশ্য এতটা এগোতে পারেনি। বেশ কয়েকটি বিষয়ে যথেষ্ট পড়াশুনো করার পর সে যখন আপনাদের স্কুলে মৌখিক পরীক্ষা দিতে যায় তখন পরীক্ষক তাকে বলেন, "" কিসের জন্য ঐ স্কুলে যাও তুমি?? তুমি তো এখনো কথা বলতেই শেখোনি হে! ""
    এটা অনস্বীকার্য যে জিয়ান্নি কথা বলতে "" শেখেনি""। এবং সেই সমস্যার সমাধান আপনারা সহজেই করে ফেলেছিলেন, ওকে স্কুল থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে।
    এবার ভাষা সম্পর্কে দু-একটা কথা। এটা আমরা সবাই জানি যে গরিব আর বড়লোকেদের ভাষা আলাদা হয়। কিন্তু মজার ব্যাপার হল, কোন এক মন্ত্রবলে আমরা ধরে নি যে বড়লোকেদের বানানো নিয়ম-কানুন এক্কেবারে সঠিক ও বিজ্ঞানসম্মত। ফলে বড়লোকের ছেলে পিরিনো তার নিজস্ব ভাষায় লিখে ঝুড়ি ঝুড়ি নম্বর পায়। কিন্তু বেচারা জিয়ান্নি একই কারনে ফেল করে।
    সংবিধান বলে-- " রাষ্ট্রের কাছে সমস্ত নাগরিক সমান, সে তারা যে ভাষাতেই কথা বলুক না কেন ""। কিন্তু আপনারা সংবিধানের থেকেও ব্যাকরনকে বেশি গুরুত্ব দেন। আপনাদের অমন দয়ালু ব্যবহারে জিয়ান্নি দারুন "" খুসি"" হয়ে পালিয়ে যায়। সে আর আমাদের কাছেও ফিরে আসেনি।

  • Tim | 71.67.115.14 | ২৬ জুন ২০০৭ ১৩:০৪388783
  • শিক্ষিত ও অশিক্ষিতের তফাত সেইযুগেও শুধু একটুকরো কাগজ বিচার করেই হত। তাই যেসব ছেলেরা বারবিয়ানায় পড়ত তাদেরও সরকারি স্কুলের পরীক্ষায় বসে পাশ করে শিক্ষার প্রমাণ দিতে হত। কি থাকত সেইসব পরীক্ষায়? চিঠি কি বলছে শোনা যাক :
    "" বারবিয়ানায় আমাদের শেখানো হত কি লিখব ও কেন লিখব। এমন কিছু লিখতে বলা হত যা সবার না হলেও অন্তত বেশিরভাগ মানুষের কাজের কথা। কিন্তু সরকারি সিলেবাসের পরীক্ষা দিতে গিয়ে আমরা রচনার বিষয় হিসেবে পেলাম , "" একটি মালগাড়ির আত্মকথা""। সত্যি বলতে আমাদের সাদা খাতা জমা দেওয়াই উচিত ছিল। কারন কিছু লিখতে হলে আমরা বিষয়টার-ই সমালোচনা করতাম। কিন্তু চোদ্দ বছরের গরিব পাহাড়ি ছেলেরা আর কতই বা সাহসী হবে? তাই আমরা আপনাদের মত করে লেখার চেষ্টা করে ফেল করলাম। স্বীকার করছি যে আপনাদের স্কুলের ছাত্ররা দারুন গুছিয়ে লিখেছিল। ওরা ফ্রেঞ্চ পরীক্ষাতেও দারুন করেছিল। প্যাঁচা থেকে হাতপাখা যেকোন শব্দের ফরাসী প্রতিশব্দ ওদের কন্ঠস্থ ছিল। কিন্তু কেউ জানত না ফ্রান্সে বাথরুমকে কি বলে। আপনারা ওদের খুব যত্ন করে শিখিয়েছেন বেশ কিছু কঠিন আর ব্যতিক্রমী শব্দ, কিন্তু রোজকার কাজের কথাগুলো বলতে শেখান নি।
    অন্যদিকে আমাদের শুধু কাজের কথাই শেখানো হত। তাই আমরা ইংরেজি আর ফরাসিতে কথা বলতে পারতাম, তর্ক করার সময়েও শব্দের অভাব বোধ করতাম না। ""

  • Tim | 71.67.115.14 | ২৬ জুন ২০০৭ ১৩:৩১388784
  • অন্যান্য পরীক্ষার হালও একইরকম ছিল। সরকারি স্কুলে সারা বছর ধরে একটাই কবিতা মৌখিকের জন্য পড়ানো হত। ইন্সপেক্টর এসে ঐটাই জিগ্যেস করতেন। কারচুপিটা একেবারে নিচের মহল থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ মহল পর্যন্ত সবাই জানত। কিন্তু কেউ কিছু বলত না। পাছে গদি টলে যায়?
    অঙ্ক পরীক্ষায় অজানা কিম্ভুত সব বস্তুর আয়তন ক্ষেত্রফল ইত্যাদি বের করতে দেওয়া হত। এ সম্পর্কে লেখকদের বক্তব্য, "" জ্যামিতির অঙ্কে যেসব ছবি দেওয়া হত সেগুলো অনায়াসে আধুনিক চারুকলা বলে চালিয়ে দেয়া যায়। পরীক্ষকেরা এমন ভাব করতেন যেন ক্ষেত্রফল মাপার কোন যন্ত্র আছে তাদের, যা দিয়ে অজানা মাত্রার বস্তুর ক্ষেত্রফল জেনে নেওয়া যায়। এমন কোন যন্ত্রের কথা আমাদের জানা ছিলনা, তাই আমাদের খালি মনে হত এগুলি অসুস্থ মানসিকতার ফসল।""
    ১৯৬২ সালে এই অবস্থার খানিকটা পরিবর্তন করার জন্য ঢাকঢোল পিটিয়ে নিয়ম পাল্টানো হয়। অবস্থার উন্নতি বোঝানোর জন্যে একটা উদাহরণই যথেষ্ট। আগের নিয়মে প্রশ্ন শুরু হত অনেকটা এরকমভাবে "" একটি অর্ধগোলক ও একটি চোঙের সমন্বয়ে গঠিত কোন এক ঘনবস্তুর ক্ষেত্রফলের তিন-সপ্তমাংস .....""
    নিয়ম-টিয়ম পাল্টানোর পরে অঙ্কের ভাষা হল "" একটি অর্ধগোলকাকৃতির চুল্লীর ক্ষেত্রফল....."। ঐ পরীক্ষাটিতে ২৮ জনের মধ্যে ২ জন পাশ করেছিল।
  • Tim | 71.67.115.14 | ২৭ জুন ২০০৭ ১২:৩৮388785
  • সেই সময়ের সিলেবাস নিয়েও বিস্তর অভিযোগ করা হয়েছে চিঠিতে। সরকারি স্কুলের ছাত্ররা কেউ খবরের কাগজ পড়ত না। সিলেবাসের বাইরের বই পড়া রীতিমত অন্যায় ছিল। একবার তো বাইরের বই পড়া নিয়ে সাংঘাতিক গোলমাল বাঁধল। এক ছাত্রের মা স্কুলে এসে বললেন যে তাঁর ছেলের পড়াশোনায় খুব মন হয়েছে। সে সারাদিনই নানা পড়ে। শুনেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে শিক্ষিকা বললেন, "" একে আপনি পড়া বলেন? জানেন কি পড়ে ও? ও খালি সংবিধান আর খবরের কাগজ পড়ে""।
    এইসব শুনে সেই ভদ্রমহিলা (যিনি কখনো স্কুলেই যাননি) ভাবলেন যে ওগুলো বোধহয় নোংরা নিষিদ্ধ বইপত্র। সেদিন মাঠ থেকে ফিরলে ছেলেটির বাবাকে বলে আচ্ছা করে উত্তম-মধ্যম দেওয়ানো হল। জ্ঞানার্জনের উপযুক্ত পুরষ্কার! বলাই বাহুল্য, ঐ ছেলেটি মিলানির স্কুলেও যেত, প্রথাগত শিক্ষার পাশাপাশি তার মনের জানলা খুলতে শুরু করেছিল বলেই শিক্ষিকাদের রোষের শিকার হয়েছিল সে।
    প্রথাগত স্কুলে রাজনীতি নিয়ে কথা বলা বারন। কিন্তু বারবিয়ানায় তখন হইহই করে বিশ্বযুদ্ধ পড়ানো চলছে। আর ফেল করা ছাত্ররা ঘন্টার পর ঘন্টা সেগুলো নিয়ে কথা বলছে।
    সরকারি স্কুলে হোমারের ইলিয়াডের একটা জঘন্য অনুবাদ পড়ানো হত। যেখানে প্রতি পংক্তিতে অনুবাদক অন্তত চল্লিশটা করে শব্দ বেশি ব্যবহার করেছিলেন মূল কাব্যের ভাব প্রকাশের জন্য (এইটা বারবিয়ানার ছেলেরা গুনে দেখেছিল)।
    সবচেয়ে মজা হত খেলার পরীক্ষায়। প্রতি বছর বাইরে থেকে একজন পরীক্ষক এসে আমাদের জড়ো করে একটা বাস্কেট্‌বল ছুঁড়ে দিয়ে বলতেন "" খেলো""। ছেলেরা পরে চিঠিতে বলছে "" আমরা বুঝতেই পারতাম না ওটা খায় না মাথায় মাখে। তাই বছর বছর আবার সেই একই পরীক্ষা দিতে হত। অথচ আমরা যে খেলাধুলোতে পিছিয়ে ছিলাম তা নয়। আমরা দিব্যি গাছ বাইতাম। ভারি ভারি ডাল কেটে নিয়ে বরফের ওপর দিয়ে টেনে নিয়ে যেতাম অনায়াসে। কিন্তু তবু আমরা C পেতাম। আর ফ্লোরেন্সের জনৈক ছাত্র, যে একতলা থেকে দোতলায় লিফ্‌ট ব্যবহার করত, তাকে A পেতে কোন অসুবিধেয় পড়তে হয়নি।""

  • Tim | 71.67.115.14 | ২৭ জুন ২০০৭ ১৩:৪৮388786
  • বারবিয়ানার মত ""অন্যরকম"" স্কুলকে, যা কিনা শুধু ছাত্রদের সুবিধে আর ইচ্ছে অনুযায়ী চলত, সরকার আরোপিত নানা বিধিনিষেধ মেনে চলতে হত। আর এসব ঠিক করে দিতেন সরকারি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাই। তাই তথ্য বলছে, ফ্লোরেন্সের ৫১টি শহরের মধ্যে ১৫টিতে দোপোস্কোলা (বারবিয়ানার মত অতিরিক্ত সময়ের স্কুল ; শব্দটার উচ্চারণ নিয়ে সন্দেহ আছে) চালু হয়। কিন্তু একবছরের মধ্যেই সেটা কমে ৬টিতে দাঁড়ায়। মাত্র ৭% ছাত্র নিয়ে কিছুদিন চলে সেগুলো একে একে উঠে গিয়েছে সব।
    এরপরের অংশে আছে তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ। দলিল দস্তাবেজ ঘেঁটে পনেরো বছরের জিয়ান্‌কার্লো দেখাচ্ছে বছরে ৪৬২০০০ ছাত্র স্কুলকে চিরবিদায় জানায়। (কোন টাইপো নেই)। এরকম মোট ১০৩১০০০ জন ছাত্রের কথা সরকারি হিসেবেই আছে।
    বারবিয়ানার চিঠিতে মূলত যে সমস্ত সমস্যাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল সেগুলো আরেকবার দেখা যাক:
    ১) স্কুল থেকে ছাত্রদের ফেল করিয়ে তারপর তাড়িয়ে দেওয়া। এর ফলে ছেলেরা পড়শুনো করার সুযোগ না পেয়ে কালক্রমে মজুরে পরিনত হত।
    ২) চুড়ান্ত বৈষম্যমূলক শিক্ষানীতি। বড়লোকের ছেলেরা ডিগ্রী পেত সহজেই, তারা সব দিক থেকেই একটা সুবিধাজনক অবস্থায় ছিল। আর স্কুলের শিক্ষিকারা এই বৈষম্য দিন কে দিন বাড়িয়ে তুলছিলেন।
    ৩) শিক্ষিকাদের (বইতে খালি শিক্ষিকাই আছে বারবার) পড়ানোর প্রতি দায়বদ্ধতা না থাকা। তারা একেবারেই সংবেদনশীল ছিলেন না।
    ৪) মান্ধাতার আমলের সিলেবাস ও প্রশ্নের ধরণ।
    ৫)কর্তৃপক্ষের ঔদাসিন্য।
    এছাড়াও মিলানির মত মানুষদের উদ্যোগে সক্রিয় বিরোধিতা করা, অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত অভিভাবকদের বিভ্রান্ত করার মত ""সৎকাজ "" এর কমতি ছিলনা।
    বারবিয়ানার ছেলেরা শুধু সমস্যা তুলে ধরেই হাত ধুয়ে ফেলেনি। চিঠির এবং বইয়ের দ্বিতীয় অংশে আছে সমাধানের পথ। কাগুজে অবাস্তব সমাধান নয়। রীতিমত হিসেব নিকেশ করে বের করা কাজের কথা।
  • d | 122.162.105.106 | ২৭ জুন ২০০৭ ১৭:২৮388787
  • বইটা যোগাড় করতেই হবে। বড্ড ভাল লাগছে।
  • Blank | 65.82.130.9 | ২৭ জুন ২০০৭ ২২:৩৯388789
  • থ্যাংকু
  • Tim | 71.67.115.14 | ২৭ জুন ২০০৭ ২২:৫৩388791
  • ব্যাপক। থ্যাংকু।
    বাউলমনের বইটা কাছে না থাকায় আমার বেশ সন্দেহ ছিল যে কেমন অনুবাদ হচ্ছে। এবার আমার ছুটি। সক্কলে পড়ে নিয়ে আলোচনা করা যাক বরং। :)
  • Tim | 71.67.115.14 | ২৮ জুন ২০০৭ ০৫:৪৩388792
  • শুধু সমাধানগুলো লিখে রাখলাম। নাহলে কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।
    চিঠিতে যেসব সমাধানের কথা বলা আছে তা হল :

    """....
    ১) ছাত্রদের ফেল করানো বন্ধ করুন।
    ২) যাদের দুর্বল বা মাথামোটা বলে মনে করেন, তাদের জন্যে পুরো সময়ের স্কুল চালু করুন।
    ৩)যারা অলস, তাদের নানারকম কাজ দিয়ে ব্যস্ত রাখুন।
    ..."""
    এই প্রসঙ্গে আবেদন করা হয়েছে যেন পুঁথিগত শিক্ষার ওপর নির্ভর করে সিলেবাস তৈরী ও অধ্যাপনা না করা হয়। অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে শুধু বড়লোকের ছেলেরাই আলাদা করে টিউশন নিতে পারে; তাই দোপোস্কোলাগুলির বিরোধিতা না করে বরং সেগুলোর উন্নতিতে সাহায্য করা উচিত। যাতে গরিব ঘরের ছেলেমেয়েরাও পাশ-টাশ করে।
    তবে স্কুলের ভাল বা খারাপ হওয়ার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভূমিকা। এখন প্রশ্ন কারা শিক্ষকতা করবেন? কতটা আত্মত্যাগ করার জন্যে তারা প্রস্তুত? উদাহরণ হিসেবে দেখানো হয়েছে গান্ধী-আশ্রমের কথা, যেখানে নিজের বাড়িটাকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বানিয়ে ফেলে পরিবার আর ছাত্রদের মিশিয়ে নিয়ে অসাধারন উদারতা ও ত্যাগের পরিচয় দেওয়া হয়েছে। অথবা সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কৌমার্য অবলম্বন করতে অনুরোধ করা হয়েছে (যদিও মেনেই নেওয়া হয়েছে যে এটা চালু হতে হাজার বছর লাগবে)।
    বইটা যেহেতু এখন হাতের কাছেই, সবাই পড়ে দেখুন। আরো এমন সব আলোচনা আছে (যেমন খাতা দেখা, প্রশ্ন বানানো ইত্যাদিকে ""অতিরিক্ত"" কাজ বলার অভ্যেসটা ঠিক কিনা), যা দেশ-কালের সীমা ছাড়িয়ে নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে জ্বলজ্বল করছে। statistics দিয়ে বলাও হয়েছে ঠিক কতজন পুরো সময়ের শিক্ষক পেলে স্কুলগুলো দাঁড়িয়ে যাবে। বলা বাহুল্য, শিক্ষকসমাজ বিভিন্ন সময়ে নিজেদের সুবিধার্থে যেসব শিশুমনস্তত্ব, সামাজিক কর্তব্য, আর্থিক নির্ভরতা ইত্যাদি গালভরা কথা বলে নিজেদের কাজের সময় কাটছাঁট করে, statistics দিয়ে তার-ও মোকাবিলা করা হয়েছে। সেইসব মণিমুক্তো ছড়ানো রইল প্রিয় পাঠকের জন্য। ( শেষ)
    ---------------------------------------
  • Tim | 71.67.115.14 | ২৮ জুন ২০০৭ ০৫:৪৫388793
  • অসহ্য টাইপো অগ্রাহ্য করেও ধৈর্য ধরে পড়ার এবং উৎসাহ দেওয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। :)
  • Ishan | 71.239.32.103 | ২৮ জুন ২০০৭ ১০:০২388794
  • আরে, মাঝখানটা কে লিখবে?
  • Tim | 71.67.115.14 | ২৮ জুন ২০০৭ ১০:১৭388795
  • ঈশেনদা,
    মূল বইটাই তো থাকল। তাই আমার লেখাটা আর টানলাম না। চটপট শেষ করে ফেলতে ইচ্ছে হল। যাতে আলোচনা হতে দেরি না হয়। তবে যদি মনে কর ইনকমপ্লিট লাগছে, লিখে দেবখন। জানিও।
  • d | 122.162.104.228 | ২৮ জুন ২০০৭ ১০:৩০388796
  • হ্যাঁ টিম, মাঝখানটা তাল কেটে গেছে। খাপছাড়া লাগছে। এটা আলোচনায় তুললে কেমন ইন্‌কমপ্লিট লাগবে। একটু ল্যাদ কাটিয়ে মাঝখানটা মোটামুটি লজিক্যাল করে দাও, লক্ষ্মী ছেলে।
  • Tim | 71.67.115.14 | ২৮ জুন ২০০৭ ১০:৩৫388797
  • বেশ। লিখে দেব কাল। ঈশানদা পরে এডিট করে দিও প্লিজ।
  • d | 122.162.104.228 | ২৮ জুন ২০০৭ ১০:৪১388798
  • এডিটিং নিয়ে ভেবো না। "আলোচনা' ঠিকঠাকই উঠবে। :)))
  • Tim | 71.67.115.14 | ২৮ জুন ২০০৭ ১২:০৫388799
  • মিসিং লিংক (শেষ পোস্টের আগের কথা) :-

    বারবিয়ানার ছেলেদের ভয় ছিল যে তাদের কথাকে উড়িয়ে দেওয়া হবে স্রেফ প্রমাণের অভাবে। তাই তারা পরিসংখ্যান দিয়ে হাতেনাতে ব্যাপরটা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিল। সেই পরিসংখ্যানকেই পরে ব্যবহার করা হয় সমাধানের পথ খুঁজতে। আর এই ব্যাপারে সেই পনেরো বছরের স্কুলছুট বালকের ওপরেই নির্ভর করা হয়।
    ক্লাসের রেজিস্টার ঘেঁটে তারা খুঁজে বের করেছিল স্কুল থেকে ফেল করিয়ে দেওয়ার পর ছেলেরা কি করে। দেখা গেছিল বেশির্ভাগ ক্ষেত্রেই তারা শিশুশ্রমিক হিসেবে কাজে লেগে যায়। অথচ একজন ফেল করা সচ্ছল পরিবারের ছেলে অনায়াসে আরো একাধিকবার পাশ করার সুযোগ পেত। যেহেতু স্কুলের তরফে গরিব এবং দুর্বল (?) ছাত্রদের জন্যে কিছুই করা হতনা, তাই অবস্থা উত্তরোত্তর খারাপের দিকেই যাচ্ছিল।
    সুতরাং দেখা যাচ্ছে, প্রথমত, স্কুলে পড়ার সরকারকর্তৃক নির্ধারিত সময়সীমাই ছিল বেশ কম। আবার পাশ না করার ফলে বেশির ভাগ ছেলেমেয়ে ঐটুকু পড়াশুনো করারও সুযোগ পেতনা। তাই বারবিয়ানার চিঠিতে প্রস্তাব দেওয়া হয় যে, ফেল করানো বন্ধ করা হোক। তাছাড়া বয়স বেড়ে গেলেই তাদের স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার একটা প্রবণতা তৈরী হয়েছিল, যার ফলে অনেকের পক্ষেই পাশ করা একটা অবাস্তব ব্যাপার ছিল।
    মিলানির স্কুল বহু ছাত্রকে আবার বিদ্যালয়মুখী করেছিল। তারা একাধিক বিষয়ে অত্যন্ত আগ্রহের সাথে পড়াশুনো করত এবং সমসাময়িক প্রথাগত শিক্ষার্থীদের থেকে অনেক এগিয়ে ছিল। তাই দ্বিতীয় পদক্ষেপ হিসেবে বারবিয়ানার মত আরো স্কুল তৈরী করার প্রস্তাব রাখা হয়েছিল। এই স্কুলগুলোতে দিনের বেশিরভাগ সময় ধরে পড়াশুনো চলবে এবং দুর্বল ছাত্ররা প্রয়োজনীয় গুরুত্ব ও সময় পাবে, যা সরকারি স্কুল দিতে পারছেনা।
    যেসমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকারা ছাত্রদের ফেল করানোর পক্ষে ছিলেন তারা যুক্তি হিসেবে বলতেন যে "" শুধু অলস এবং বোকাদেরকেই ফেল করানো হয়""। অত্যন্ত হাস্যকর যুক্তি। জনৈক প্রিন্সিপাল তাঁর ভাষনে বলেছিলেন , "" এটা খুব-ই দুর্ভাগ্যজনক যে সংবিধান সমস্ত শিশুদের সমান মানসিক বৃদ্ধির নিশ্চয়তা দিতে পারেনা।"" অর্থাত তিনি বলতে চাইলেন যে কেউ কেউ অল্পবুদ্ধি ও অলস হতেই পারে। তার জন্যে রাষ্ট্রের কিছুই করার নেই। বারবিয়ানার ছেলেদের প্রশ্ন ""নিজের ছেলে বা মেয়ের ক্ষেত্রেও কি তিনি একই কথা বলতে পারতেন? তাকে কি ফেল করিয়ে মাঠে কাজ করতে পাঠানো হত? কখনো-ই না। বরং তাকে চাপ দিয়ে ধীরে ধীরে পড়াশুনো করানোর চেষ্টা চলত।"" সুতরাং, দেখা যাচ্ছে যে কেউ-ই প্রায় জন্ম থেকে বোকা বা অলস নয়। সবাই সমান হয়ে জন্মায়। রাষ্ট্রই তাদের বোকা বা অলসের তকমা দিয়ে নিজেদের পিঠ বাঁচায়। এই প্রসঙ্গে সংবিধান যা বলে :
    ""আইনের চোখে জাতি, ভাষা, ব্যক্তিবিশেষ বা সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে সবাই সমান।
    আর্থিক ও সামাজিক অবস্থাজনিত যেসমস্ত বাধা নাগরিকদের স্বাধীন রাজনৈতিক, সামাজিক এবং আর্থিক বিকাশের পরিপন্থী তা নির্মূল করা রাষ্ট্রের কর্তব্য"""। অর্থাৎ রাষ্ট্রের বকলমে স্কুলের ওপরেই সেই বাধা দূর করার কাজটা বর্তায়। সুতরাং বুদ্ধি বা আলস্যের দোহাই দেওয়া অর্থহীন। তাই, বারবিয়ানার তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব, "অলস" বা "বোকা" বলে যাদের মনে হচ্ছে তাদের জন্যে আলাদা ব্যবস্থা করা হোক। এবং আলাদা নজর দিলে যে কাজ হয় তার প্রমাণ স্যান্ড্রোর মত একদা ফেল করা ছাত্রেরা।
    সংক্ষেপে এবারে ফিরে দেখা যাক সমাধানের রাস্তাটা।

  • Tim | 71.67.115.14 | ২৮ জুন ২০০৭ ১২:০৮388800
  • শেষদুটো পোস্ট নিয়ে ব্যাপক গোলমাল হল। দু:খিত।
    d-দি আর ঈশানদাকে থ্যংকু দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য। :)
  • I | 172.203.193.64 | ২৮ জুন ২০০৭ ১৮:১৯388802
  • টিম,
    ব্যাপক হয়েছে। প্রচুর প্রচুর ধন্যযোগ।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন