এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর

  • উপকথা (২)

    Tim
    বইপত্তর | ০২ সেপ্টেম্বর ২০০৭ | ২৮০২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • Tim | 204.111.134.55 | ০২ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ০৯:১০391856
  • নানাদেশের উপকথার আগের সুতোটা বেশি লম্বা হয়ে যাওয়ায় দ্বিতীয় পর্ব খুলে দিলুম। ইচ্ছে করেই সুতোটা ""বই"" এর বিভাগে রাখা হল, কারণ, এখানে যে সমস্ত গল্প দেওয়া হচ্ছে সেগুলো বেশিরভাগই বিভিন্ন বই থেকে খুঁজে আনা। এই সূত্রে বইগুলো সম্পর্কেও খানিক আলোচনার পথ খোলা থাকবে।
    আগেরবার কিছুসংখ্যক উপকথা স্মৃতি থেকেও বলা হয়েছিলো, এবারেও বিশেষ অনুরোধ রইলো সবার কাছে, মনে রাখা, অল্প ভুলে যাওয়া গল্পগুলো তুলে দিন এখানে।
    শুরুতেই হাওয়ার্ড নর্ম্যানের সংগ্রহের উপকথা নিয়ে গাঁথা Northern Tales থেকে কয়েকটা গল্প বলে নি। ৩২৫ পাতা জুড়ে এই বইতে অজস্র উপকথা সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে মোট আটটি বিভাগে। এইসব বিভাগের নামকরণ হয়েছে গল্পগুলির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় বা ঘটনার নামে, যেমন কিনা stories of village life বা stories of strange and menacing neighbours কিম্বা stories of all sorts of marriages
  • Tim | 204.111.134.55 | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ১২:১৫391867
  • পাহাড়ঘেরা ছোট্ট উপত্যকা জুড়ে অস্থায়ী শিবির। তার মাঝখান দিয়ে সরু সরু পায়েচলা পথ চলে গেছে গভীর জঙ্গলের দিকে। এরকম একটা রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে তাদের বিপদের কথা ভাবছিলো উপজাতিদলের সর্দার আইয়া। বিশাল এই যৌথ পরিবারে সবাই এতদিন বেশ আনন্দেই ছিলো। কিন্তু ইদানিং কোথা থেকে এক অজানা জন্তুর আবির্ভাব হয়েছে, তার কবলে পড়ে প্রাণ গেছে গ্রামের বহু শিকারির। আজকাল কেউ ভয়ে শিকারে যায় না, গ্রামে খাদ্য সমস্যা প্রবল। অবস্থা এমন, যে অগভীর জঙ্গলে বেরি তুলতে যেতেও ভয় পায় সবাই, কি জানি কখন হামলা করে সেই নাম না জানা নরখাদক।
    চিন্তা করতে করতে কখন যে জঙ্গলে ঢুকে পড়েছে, আইয়ার খেয়ালই নেই। সরু পায়েচলা পথ কখন শেষ হয়ে গেছে, এখন চারদিকে হয় বুনো ঘাস, নয়ত রুক্ষ পাথুরে জমি দেখা যাচ্ছে। আইয়া এমনিতে বেশ সাহসী, তায় এখনো বেশ জোয়ান। তাই সে না ঘাবড়ে এগিয়ে চলল। বেশ কিছুটা এগিয়ে সামনে দেখা গেল একটা পাথরের ঘর, তার মাথার চিমনি দিয়ে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। ঘরের দরজায় অজস্র নরকরোটি ঝোলানো আছে এমনভাবে, যাতে কেউ ঢুকতে গেলেই সেগুলোয় আওয়াজ হয়ে সতর্ক করে দেবে ঘরের লোককে। অতি সাবধানে ঘরে গিয়ে ঢুকলো আইয়া। ঘরের একপাশে লুকিয়ে আইয়া ভালো করে সব দেখতে লাগলো। মেঝেতে স্তুপীকৃত হাড়, আর একটা প্রকান্ড উনুনে কি যেন সেদ্ধ হচ্ছে, প্রথমে এটুকুই দেখা গেল। তারপর অন্ধকারে চোখ সয়ে এলে উনুনের একপাশে দেয়াল ঘেঁষে দেখা গেল একজোড়া অন্ধ স্ত্রী-পুরুষকে।
    আইয়া বুঝে গেল যে এরাই গ্রামের শিকারীদের মেরে খেয়ে ফেলেছে। সে ইচ্ছে করে দরজার কাছে নিজের জোব্বাটা ছুঁড়ে দিলো। সেই শব্দ শুনেই স্ত্রীলোকটি দৌড়ে এলো, কাছে এলে দেখা গেল তার কনুইটা ছুরির মত ধারালো। সে এসেই ঐ জোব্বাটাকে কোপাতে লাগলো। ওদিকে জোব্বার মধ্যে আগে থেকেই কিছু সূঁচ রাখা ছিলো। তারই একটা বিঁধে গেল স্ত্রীলোকটির হাতে। তার আর্তনাদে এবার দৌড়ে এসে পুরুষটি ঝাঁপিয়ে পড়লো। কিন্তু তারা দুজনেই অন্ধ, তাই প্রথমটায় টের-ই পেলনা যে আসলে তারা পরষ্পরকেই আক্রমণ করেছে। যখন বুঝতে পারলো, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। দুজনেই মারা গেল অল্পক্ষণেই।
    এতক্ষণ আইয়া একপাশে দাঁড়িয়ে সব দেখছিলো। এবার সে বেরিয়ে এসে মৃতদেহদুটোকে টুকরো টুকরো করে কাটলো। তারপর মুঠো ভরে তুলে সেই টুকরোগুলো সে ছুঁড়ে দিলো আকাশের দিকে। আর কি অবাক কান্ড! মৃত শবদেহের টুকরোগুলো হাওয়ায় ভাসতে লাগলো কিছুক্ষণ। তারপর সেগুলো অজস্র বাদুড় হয়ে ছড়িয়ে পড়লো আকাশে। এইভাবে আইয়াদের গ্রাম শাপমুক্ত হল, আর সৃষ্টি হল এক নতুন প্রাণীর।
    ----------------------------------
  • Tim | 204.111.134.55 | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ০৬:৩৪391878
  • কাসিয়াকের কুঁড়েতে আজ সবার নেমন্তন্ন। গত হপ্তায় কাসিয়াক একটা বিশাল হরিণ মেরেছে। তাই আজ ভোজ। খাওয়ার আগে সবাই মিলে গল্প করছিলো আগুন ঘিরে। কাসিয়াকের ঠাকুর্দা ইউয়েং নামকরা শিকারী ছিলেন, সবাই তাঁকে মান্য করে এখনো। সেইসব শিকারের গল্পই হচ্ছিলো। ছোটবেলায় শোনা টুকরো টাকরা ঘটনা জুড়ে জুড়ে বলছিলো কাসিয়াক। সবাই হাঁ করে গিলছিলো। ""খারাপ স্বপ্ন সত্যি হবেই, ঠাকুর্দা বলত ""-- চারপাশটা দেখতে দেখতে বলে চলল কাসিয়াক, "" ঠাকুর্দার নিজের জীবনেই কতবার হয়েছে এমন। একবার তো উনি নিজেই টের পান নি ""। এইকথায় একটা মৃদু গুঞ্জন উঠলো সবার মধ্যে। সবাই গল্পটা শুনতে চায়। মোড়ল সবাইকে চুপ করিয়ে কাসিয়াকের দিকে তাকালেন। কাসিয়াকের গল্প শুরু হল :
    "" গভীর জঙ্গলে যে সমস্ত মানুষ আমরা দেখি, তারা অনেকেই যে ভিনদেশী, তা সবাই জানো নিশ্চই। ওরা তক্কে তক্কে থাকে, কোন অসতর্ক মুহুর্তে বাচ্চা বা মেয়েদের অজ্ঞান করে নিয়ে পালায়। ওদের সবাই যে এরকম তা কিন্তু নয়, কেউ কেউ এমনি আমাদের মতই শিকার করে, কুঁড়ে বেঁধে থাকে। উইলিয়াম বলে একজন সেরকম বন্ধু ছিলো ঠাকুর্দার। জঙ্গলের ব্যাপার স্যাপার তার মত আর কেউ বুঝতো না। তাই ঠাকুর্দা ওকে নিয়ে শিকারে যেতেন। উইলিয়ামের একটা দোষ ছিলো, সে মাঝে মধ্যেই নিরুদ্দেশ হয়ে যেত। আবার বেশ কিছুদিন পরে আপনা থেকেই ফিরে আসত।
    একবার হল কি, অনেকদিন কেটে গেল, উইলিয়াম ফিরল না। খোঁজ নেওয়ার তো কোন উপায় ছিলো না, তাই ঠাকুর্দা ভাবলেন সে ব্যাটা বোধহয় জন্তু জানোয়ারের হাতে মোলো। এর কদিন পরেই ঠাকুর্দা স্বপ্ন দেখলেন।
    স্বপ্নে দেখলেন, তিনি পাখীর মত উড়ছেন। অনেক নিচে ঘন সবুজ বন দেখলেন। জঙ্গলের এই অংশটা চেনাই লাগলো তাঁর। একটু নিচু দিয়ে উড়তে শুরু করলেন তিনি। আর, তখনই লোকটাকে দেখা গেল। মাথায় একটা পাগড়িমতন, ঢিলে পোষাক আর বেঢপ জুতোয় তাকে সং এর মত লাগছিলো। কিন্তু ঠাকুর্দার এসব চিন্তা করার সময় ছিলো না। সবকিছুই এত চেনা লাগছে কেন? আরো খানিক নিচে নেমে আসতেই স্পষ্ট লোকটার মুখ দেখা গেল। উইলিয়াম! কি আশ্চর্য! কিন্তু উইলিয়ামকে ডেকে ডেকে গলা ব্যাথা হয়ে গেলেও সে সাড়া দিলোনা। তখন রেগে মেগে ঠাকুর্দা চুপচাপ লক্ষ্য করতে লাগলেন সে কি করে।
    উইলিয়াম প্রথমে জঙ্গলের মধ্যে একটা ফাঁদ পাতলো। তারপর নি:শব্দে জঙ্গলের পথে চলে কাছের একটা গ্রামে পৌঁছলো। ঠাকুর্দাও তাকে অনুসরণ করে সেখানে পৌঁছোলেন। গ্রামটা ইন্ডিয়ানদেরই। সবাই ঘুমোচ্ছে। শুধু গোটাকয় কুকুর পাহাড়ায়। উইলিয়াম গিয়েই একে একে সবকটা কুকুরকে মেরে ফেলল, টুঁ শব্দটি হল না। তারপর যখন সে মশালটা খুলে নিয়ে মোড়লের ঘরে আগুন দিতে যাচ্ছে, এমন সময় ঠাকুর্দা পিছন থেকে তার পিঠে বল্লমটা গেঁথে দিলেন। উইলিয়াম মারা গেল কিছুক্ষণের মধ্যেই। এরপরই ঘুমটা ভেঙ্গে গিয়ে ঘেমে নেয়ে ঠাকুর্দা উঠে বসলেন। বাইরে তখন আলো ফুটে গেছে।
    সেদিন সন্ধ্যের দিকে খবর পাওয়া গেল, পাশের গ্রামে কি একটা গোলমাল হচ্ছে। ঠাকুর্দাও গেলেন সবার সাথে সেখানে। ব্যাপার শুনে তো তাঁর চোখ গোল। রাতের অন্ধকারে কে একজন নাকি চুরি করতে এসে মারা পড়েছে। কিন্তু কে মেরেছে, সেটাই রহস্য। ঠাকুর্দা তখন মৃত লোকটার জিনিসপত্র দেখতে চাইলেন। অনতিবিলম্বেই বোঝা গেল, তাঁর সন্দেহই ঠিক, মৃত ব্যক্তি উইলিয়াম ছাড়া কেউ নয়।
    উইলিয়ামের পোষাক আর জুতো নিয়ে বাড়ি ফিরে এলেন ঠাকুর্দা। সবাই পইপই করে বলল, সেগুলো পুড়িয়ে ফেলতে। কিন্তু তিনি শুনলেন না। বরং সেই পোষাক গায়ে চাপালেন, জুতো পরলেন পায়ে। যেই না পরা, অমনি তাঁর হাবভাব, গলার স্বর পাল্টে কেমন জানি হয়ে গেল। দেখে চেনাই যায় না। পোষা কুকুরগুলো পর্যন্ত চিৎকার করে তেড়ে এলো। তখন গ্রামের বাকিরা এসে জোর করে ঠাকুর্দাকে ঘরের ভেতরে নিয়ে গিয়ে আচ্ছা করে বাঁধলো। তারপর ঐ জামাজুতো কেড়ে নিয়ে এসে পুড়িয়ে ফেললো। অবাক কান্ড! জামাজুতো পুড়ে ছাই হল যেই, অমনি ঠাকুর্দা আবার স্বাভাবিক হলেন।
    উইলিয়াম যে রাস্তা ধরে ফাঁদ পেতে রেখেছিলো, সেই রাস্তায় এই ঘটনার পরে লোক চলাচল বন্ধ হয়ে গেল।""
    এই পর্যন্ত বলে কাসিয়াক সবার দিকে একবার দেখে নিয়ে বলল, "" পূব কোণের মাছের আড়তে যেতে হলে আগে উইলিয়ামের ঐ রাস্তাটা দিয়েই সবাই যেত। সেই ঘটনার পর থেকে আর ওটা ব্যবহার হয় না। ঘুরপথে যেতে হয় তাই। "" বলেই সবাইকে বেদম তাড়া লাগালো কাসিয়াক। খাওয়ার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে।
    --------x-------------
  • surajit | 206.126.163.20 | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ১৮:৩৩391889
  • অমি বরি জাবো ৯,০০ তে অমাকে অল্ল কোর
  • Tim | 204.111.134.55 | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ১৩:১৫391894
  • ঈশানদা,
    ওপরের পোস্টটা মোছা যায় না?
  • Tim | 204.111.134.55 | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ০৪:৫০391895
  • অনেকদিন আগেকার কথা। গ্রীনল্যান্ডের কাছে এক ইনুইট গ্রামে ক্রুকাস নামে এক খ্যাপাটে ছেলে ছিলো। সেই গ্রামের সবথেকে সুন্দরী যে মেয়েটি, তার নাম ছিলো সিলা। ক্রুকাস তো সিলার প্রেমে পাগলপারা। ওদিকে সিলা বেজায় দজ্জাল ছিলো। সে পষ্টাপষ্টি বলে দিলো,অন্য রাস্তা দেখ। কিন্তু ক্রুকাস নাছোড়। প্রায় প্রত্যেকদিন সে একবার করে সিলাকে প্রেম নিবেদন করত, আর প্রত্যাখ্যাত হত। পরের দিকে সিলা বেশি কথাও খরচ করত না, শুধু বলতো, ""দূর হও!"" এইভাবেই চলছিলো। গ্রামের সবাই জানতো ওদের কথা।
    তারপর যথাসময় সিলার সাথে গ্রামেরই অন্য একজনের বিয়ে হয়ে গেল। কিছুদিনের মধ্যেই ওদের ফুটফুটে দুটি ছেলেমেয়ে হল। স্বামী ছেলেমেয়ে নিয়ে সুখে ঘর করছে সিলা, এমন সময় একদিন ক্রুকাস এসে হাজির। ততদিনে শিকারী হিসেবে তার বেশ নাম হয়েছে। সে এসেই সিলাকে বললো, "" শুনেছো সবাই কি বলছে? আমিই এ তল্লাটের সেরা শিকারী। এখনো সময় আছে, ভুল শুধরে নিয়ে আমাকে বিয়ে করে ফেলো।"" শুনে সিলা শুধু বললো, ""দূর হও!"" ক্রুকাস কিন্তু দমল না। সে পরেরদিন আবার এলো, তারপরেরদিনও। এইরকম করে আবার রুটিনমাফিক আবেদনের পালা শুরু হল। শেষে এমন হল, যে ক্রুকাসকে দেখলেই সিলা বলে উঠতো ""দূর হও!"" আর এই কথাদুটো শুনলেই ক্রুকাসের পা আপনা থেকেই উল্টোপানে চলতে শুরু করে দিত।
    তারপর একদিন পুরো এলাকা জুড়ে ভয়ঙ্কর তুষারঝড় শুরু হল। দিনের পর দিন ধরে চলল সেই ঝড়। সে এমন ঝড় যে দু হাত দূরের জিনিস দেখা যায় না। শিকার বন্ধ। সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগলো, কখন ঝড় থামে। কিন্তু ঝড় থামলো না। বরং ক্রমশ খাবারের সঞ্চয় এলো ফুরিয়ে। সবাই যখন ভাবছে এবার বোধহয় উপোস করে মরতে হবে, তখন একদিন ক্রুকাস একাই বেরিয়ে গেল শিকারে। আর বাহাদুর বটে! ফিরল যখন তখন তার পিঠে মাংসের বোঝা, কোমরের থলিতে রাশিকৃত মাছ। সবার চিন্তা দূর হল। এইভাবে ঝড়ও চলল আর ক্রুকাস একাই সারা গ্রামের খাবার জোগাড় করতে লাগলো দিনের পর দিন। অতএব যা হয়, একদিন সে কঠিন অসুখে পড়লো। সবাই মিলে তখন তাকে একটা গরম ঘরে শুইয়ে, প্রচুর খাবার খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলো। প্রচন্ড ঠান্ডায় বেচারীর শরীর জমে গেছিলো। সে অঘোরে ঘুমোতে লাগলো।
    ওদিকে হয়েছে কি, সিলার এইসব আদিখ্যেতা দেখে হিংসেয় গা জ্বলছিলো। তার স্বামীও শিকারী ছিলো, কিন্তু খুবই ছোট দরের। তার ওপর গ্রামের অন্যদের মত তাকেও ক্রুকাসের আনা খাবারের ওপরেই নির্ভর করতে হচ্ছিলো। এইটা তার অসহ্য লাগছিলো। সে একদিন করলো কি, চুপি চুপি ক্রুকাসের রোগশয্যার পাশে এলো রাত্রীবেলা। তখন সবাই ঘুমে অচেতন। ক্রুকাসও ঘুমোচ্ছিলো। সিলা ঘুমন্ত ক্রুকাসের কানে কানে বলল, "" দূর হও""। এই মন্ত্র ম্যাজিকের মত কাজ করলো। ঘুমের মধ্যেই ক্রুকাস হাঁটতে শুরু করল। তারপর সিলার চোখের সামনেই সে এক সময় তুমুল ঝড়ের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেল। নিশ্চিন্ত হয়ে ঘরে ফিরলো সিলা।
    পরেরদিন তো খোঁজ খোঁজ পড়ে গেল। শেষে গ্রামের বাইরে ,বেশ কিছুটা দূরে ক্রুকাসকে পাওয়া গেল। তার প্রাণহীন শরীরের চারপাশে বরফের পুরু আস্তরণ জমেছে। তুমুল তুষারঝড়ের মধ্যে সে গ্রামের বাইরে গিয়ে সে চুপটি করে দাঁড়িয়ে ছিলো, চিরকালের মত ঘুমিয়ে পড়ার আগে তার জাগতিক ঘুম ভেঙ্গেছিলো কিনা কে জানে?
    ---------

  • tan | 131.95.121.132 | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ০৪:৫৭391896
  • টিম,
    খুব সুন্দর লাগছে গল্পগুলো। চালিয়ে যাও।
    কত দেশে কতরকমের গল্প,ভেতরের কথায় কত মিল! অবাক লাগে না?
  • Tim | 204.111.134.55 | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ০৫:১৫391897
  • হ্যাঁ, ট্যান। আশ্চর্য মিল গল্পগুলোয়। আর কি তুচ্ছ সব ঘটনা নিয়ে কত সুন্দর গল্প বোনা হয়েছে, তাই না? আমরা খালি আরো জটিল, আরো কঠিন সাহিত্য নিয়ে মাতামাতি করি, কিন্তু সেসব কোথায় হারিয়ে যায়। জেগে থাকে শুধু এইসব সহজ সরল উপাখ্যান।
  • tan | 131.95.121.132 | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ০৫:৫৪391898
  • নেটিভ আমেরিকান চেরোকী উপজাতির উপকথায় আছে প্লেইয়াডেস(কৃত্তিকা)তারাপুঞ্জটির গল্প।
    গল্পটা পড়তে পড়তে অবাক লাগলো কারণ আমাদের বাংলার গ্রামেও এই তারাপুঞ্জকে বলে সাতভাই।
    চেরোকীরা বলে "ছয়ছেলে"।
    ওদের গল্পে আছে অনেক অনেক দিন আগে এক গাঁয়ে সাতটি বাচ্চাছেলে ছিলো,ওরা সারাদিন একসাথে খেলে বেড়াতো,খেলতো ডান্ডাগুলি খেলা। ওদের মায়েরা যত বলে,""ওরে শুধু খেললে হবে? একটু আধটু কাজকর্মও তো শিখতে হয়! যা না, দাদাদের সঙ্গে ভুট্টাক্ষেতে গিয়ে একটু হাতে হাতে সাহায্য কর না।""
    কে শোনে কার কথা! ওরা সারাদিন শুধু খেলেই বেড়ায় আর খেলেই বেড়ায়,খেলা শেষ হলে ঘরে ফিরে খাওয়াদাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়ে অথবা নতুন খেলার প্ল্যান আঁটে।
    দিনের পরে দিন কেটে যায়,মায়েরা শেষ তিতিবিরক্ত হয়ে পড়েন।একদিন সাত বন্ধু খেলেটেলে খুব ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত হয়ে বাড়ী এসেছে,ওদের মায়েরা পাতে বেড়ে দিলো ডান্ডাগুলি খেলার গুলিপাথর,কইলো ""তোরা যখন এই গুল্লিখেলাই এত ভালোবাসিস,পাথরের গুল্লিই তাই খা।"
    সাতটি ছেলে খুব শকড হলো,হাত ধরাধরি করে বেরিয়ে গেলো।সোজা চলে গেলো গাঁয়ের মাঝের মন্দিরের কাছে-বললো,""ওরা আমাদের চায় না।কেনই বা ওদের কষ্ট দিতে আমরা থাকি? চল, আমরা সাতজনে মিলে এমন জায়্‌গায় চলে যাবো,যেখানে ওরা আর আমাদের খুঁজে পাবে না।""
    সাতজন ক্ষুধার্ত ক্লান্ত বালক মন্দির ঘিরে পরিক্রমা আর প্রার্থনা শুরু করলো, যেন দেবতারা ওদের টেনে নেন।
    অনেকক্ষন হয়ে গেছে,ছেলেরা রাগ করে গেছে,মায়েদের মন কেমন করে উঠেছে এবার।কি জানি কি হলো বাছাদের,কোথা গেলো!
    লোকে এসে খবর দিলো ওরা মন্দির ঘিরে মন্ত্র পড়ে নাচছে আর প্রার্থনা করছে।
    মায়েরা ছুটে গিয়ে দেখে ছেলেরা ততক্ষণে আকাশের দিকে অনেকটা উঠে গেছে।মায়েরা অনেক কাঁদলো,বিলাপ করলো,ফিরে আসতে কইলো,ওরা নামলো না,চলে গেলো আকাশে।
    শুধু একজনকে ঝাঁপিয়ে ধরতে পেরেছিলেন এক মা,কিন্তু রাখতে পারলেন না, সে ডুবে গেলো পৃথিবীর মাটি ফুঁড়ে।
    ছয়টি ছেলে আকাশের তারা হয়ে জ্বলছে একই সঙ্গে,চেরোকীরা ওদের বলে ছয়ছেলে।
    যার ছেলে মাটিতে ডুবে গেছিলো,সেই মা রোজ এসে সেই জায়্‌গায় কাঁদতেন সকালে সন্ধ্যায়, সেখানে ক্রমে গজিয়ে উঠলো এক গাছ,সরল দীর্ঘদেহ পাইন গাছ,ওর চূড়া উঠে গেলো আকাশের তারার দিকে।
    চেরোকীরা বলে পাইনগাছ আর তারাদের মধ্যে অন্তরে অন্তরে মিল-উভয়ের মধ্যেই আগুন আছে।

  • Tim | 204.111.134.55 | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ২৩:১৫391857
  • আরো কটা গল্প দিও ট্যান। আফ্রিকা বা এশিয়ার গল্প হলে ভালো দারুণ হয়।
  • tan | 131.95.121.132 | ০২ অক্টোবর ২০০৭ ০৩:০৪391858
  • নিল ফিলিপ সাহেবের কথায় আর নীলেশ মিস্ত্রীর আঁকায় তৈরী বই দ্য ইলাসট্রেটেড বুক অব মিথস।এ বইয়ে উপকথা পাওয়া গেলো অনেক। অনেকগুলো ভাগে ভাগে ভাগ করে গপ্পোগুলো শোনানো হয়েছে-সৃষ্টির গল্প-শুরুর গল্প-কৃষি ও উর্বরতা-মানুষ ও ঠাকুরদেবতা-পশুপাখী ও দেবতা-শেষের সেদিন-এই কয়টা ভাগ করে নানাদেশের উপকথা,লোককথা,মিথ,লেজেন্ড একসাথে জড়ো করে দেওয়া।
    চমৎকার বই। সময় পেলে কটা গল্প তুলে দেবো।
  • tan | 131.95.121.132 | ০২ অক্টোবর ২০০৭ ০৩:৫৬391859
  • জাপানের সৃষ্টিকথায় আছে এইরকম গল্প:
    প্রথমে আকাশ আর পৃথিবী আলাদা ছিলো না,সব মিলেজুলে ছিলো। না ছিলো কোনো নিয়ম, না ছিলো কোনো শৃংখলা।
    এই কেওসের সমুদ্র থেকে প্রথমে জন্মালো অপূর্ব সুর,সমস্ত বিশৃংখলা সুন্দর সুন্দর সব নিয়মে বাঁধা পড়তে লাগলো-নৃত্যের বশে সুন্দর হলো বিদ্রোহী পরমাণু... সেরকম আরকি।
    তারপরে এলেন নারীদেবতা ইজানামী আর পুরুষদেবতা ইজানাগী।ওনারা স্বর্গের ঝুলন্ত সেতুর উপরে দাঁড়িয়ে বড়ো বড়ো দুই রত্নময় বর্শা নিয়ে সমুদ্রটাকে খুব করে ঘঁএটে ঘেঁটে প্রথম দ্বীপ তৈরী করলেন,এই দ্বীপ হলো ওনোকোরো। ওনারা এই দ্বীপে এক বড়ো বাড়ী বানালেন, একটা মস্ত বড়ো একশিলা পাথরের থাম ছিলো এক বাড়ী কেন্দ্রীয় থাম্বা। বাড়ীটাড়ী বানানো হয়ে গেলে ওনারা থাম ঘিরে ঘুরে ঘুরে মন্ত্র পড়ে পরস্পরকে বিবাহ করলেন।
    প্রথম সন্তান জন্মালো-হিরুকো।সে খুব দুর্বল আর ছোট্টো। ইজানাগী আর ইজানামী খুব যত্ন করলেন,কিন্তু সে বাড়লো না বিশেষ।হতাশ হয়ে শনগাছের নৌকায় তুলে দিলেন তাকে জলে ভাসিয়ে। সেই ছেলেই হলো ধীবরদের দেবতা এবিসু।

  • tan | 131.95.121.132 | ০২ অক্টোবর ২০০৭ ০৪:২৩391860
  • তারপরে ইজানাগী ইজানামী আটখানি বড়ো বড়ো দ্বীপ তৈরী করলেন।
    এরপরে ইজানামী মায়ের কোলে একে একে জন্ম নিতে লাগলো নানা দেবতা-সমুদ্রদেব,ভূমিদেব,মরুৎদেব আর বৃষ্টিদেব।কিন্তু এরপরে অগ্নিদেবের জন্ম দিতে গিয়ে ইজানামী পুড়ে মরে গেলেন।
    ইজানাগী এত রেগে গেলেন যে অগ্নিকে কেটে তিনটুকরো করে ফেললেন,আর রাগে অধীর হয়ে চললেন পাতালে, মৃত্যুলোকে,মৃতা ইজানামীর সন্ধানে।
    মত্যুলোকের দুয়ারে গিয়ে ডাকলেন,""ইজানামী-ঈ-ঈ-ঈ,কোথায় তুই? ফিরে আয়, দ্বীপপগুলো বানানো যে শেষ হয় নি আমাদের।""
    ইজানামী এলেন, কিন্তু কাছে এলেন না,দূর থেকেই কইলেন,""ইজানাগী,এসেছিস তুই? বড়ো দেরী করে ফেললি রে! আমি যে এদেশের খাবার খেয়ে ফেলেছি।আর তো ফিরতে পারবো না।কিন্তু তুই তবু অপেক্ষা কর,আমি দেখি মৃত্যুদেব যদি আমায় ছেড়ে দেন।আমার দিকে তাকাস নি কিন্তু খবদ্দার।""
    ইজানামী অনুমতি আনতে চললেন, ইজানাগী দাঁড়িয়ে রইলেন।কিন্তু অনেকক্ষণ হয়ে গেলো দেখে আর ধৈর্য না ধরতে পেরে একটা টর্চ জ্বালিয়ে চললেন যে পথে গেছিলো ইজানামী।
    গিয়ে দেখেন ইজানামীর দেহাবশেষ কীটদষ্ট গলিত বিকট দুর্গন্ধযুক্ত।স্তম্ভিত হয়ে গেলেন ইজানাগী,দুই হাতে নাক চেপে পিছু হটে দৌড় দিলেন।
    দেখে ইজানামী শক্‌ড,ছি ছি, এই তোর বিশ্বাস? এই তোর ভালোবাসা? এই তোর শপথ? সামান্য দেহটার নাশ দেখে তুই সইতে পারলি না?
    ক্রুদ্ধ ইজানামীর নির্দেশে মৃত্যুলোকের সমস্ত স্পিরিটেরা পিছু ধাওয়া করলো ইজানাগীর।কিন্তু ইজানাগী দৌড়ে পালাতে পালাতে মাথা থেকে খুলে ফেলে দিলেন মুকুট-তা হয়ে গেলো আঙুরের গুচ্ছ,স্পিরিটেরা মানে প্রেতেরা আঙুর খেতে থেমে গেলো খানিকক্ষণ।দৌড়ে আরো খানিক গিয়ে চিরুনী ফেলে দিলেন,হয়ে গেলো বাঁশঝাড়,আবার প্রেতেরা থামলো।ইতিমধ্যে ইজানাগী পৌঁছে গেছে মৃত্যুলোক ও জীবনলোকের সংযোগস্থলে,ইজানামী নিজে দৌড়ে এসে ওকে প্রায় ধরে ধরে অবস্থা,একলাফ মেরে বেরিয়ে এক বিরাট পাথর টেনে পথ বধ করে দিলেন ইজানাগী।ইজানামীর চিৎকৃত শপথ পাথরে লেগে বন্ধ হয়ে গেলো-ইজানামী বলছিলো,প্রত্যেকদিন আমি হাজার মানুষ মেরে এই দেশে নিয়ে আসবো।
    বাইরে থেকে ইজানামী পাল্টা শপথ করলো,প্রত্যেকদিন আমি দেড় হাজার শিশু জন্মের ব্যবস্থা করবো।
    সেই থেকে মৃত্যুলোকে রয়ে গেলো ইজানামী আর জীবনলোকে ফিরে এলো ইজানাগী।
    এইবারে কমলালেবুর বনে এসে এক ঝর্ণায় স্নান করে সমস্ত গ্লানি ধুয়ে ফেললেন ইজানাগী-বাঁচোখ ধুলেন,জন্মালো আমাতেরাসু-সকলের প্রিয় সূর্য,জাপানে সে সূর্যদেবী। ডানচোখ ধুলেন,জন্মালো ৎসুমি-ইয়োমি,চন্দ্রদেবতা।নাক ধুলেন,জন্মালো সুসানোইয়ো-ঝড়ের দেবতা।এরকম আরো বহু দেবতা জন্মালেন।
  • tan | 131.95.121.132 | ০২ অক্টোবর ২০০৭ ০৫:০৯391861
  • এইসব সন্তানদের পেয়ে ইজানাগী খুব খুশী হলেন-ওদের রাজত্ব ভাগ করে দিলেন। আমাতেরাসু পেলেন দিন,ৎসুমিইয়োমি পেলেন রাত,সুসানোইয়ো পেলেন সমুদ্র।
    আমাতেরাসু আর ৎসুমিইয়োমি খুশী হলেন উপহারে, কিন্তু ঝড়ের দেবতা খুশী না, রেগে কাঁদে চিৎকার করে,ঝড়ের দেবতা কিনা,ওনার চিৎকারে ঝড় শুরু হয়ে যায়।
    ইজানাগী রেগে গিয়ে কন,""তুই ভারী বেয়াড়া ছেলে, তুই পাতালে যা।""
    ব্যাপারটার নিষ্পত্তি হয় না।
    ঝড়ের দেবতা সমুদ্রশাসন না করে কেবল এদিক ওদিক উৎপাত করে বেড়ায়,গাছ উপড়ায়,ধানের ক্ষেত নষ্ট করে,ঘরবাড়ী ভেঙে দেয়।কেউ কিছুই করতে পারে না।
    ইজানাগী ভাবেন কিকরে একে টেমড করা যায়,কিন্তু উপায় পান না।
    একদিন আমাতেরাসুর সুনদর শুদ্ধ পবিত্র ঘরে সখীদের নিয়ে তিনি কাপড় বুনছেন,সেখানে গিয়ে হাজির সুসানোইয়া। খুব উৎপাত করলো সুসানোইয়া,তান্ডব চালিয়ে সব ভেঙেচুরে ছারখার তছনছ করে দিলো। প্রচন্ড শকড হয়ে আমাতেরাসু পালিয়ে গেলো। এক গুহায় নিজেকে বন্ধ করে রাখলো।
    আমাতেরাসু হলো সূর্যদেবী, তার বিহনে সমস্ত পৃথিবীতে নেমে এলো অন্ধকার।বরফ গলে না,ফসল ফলে না,চারিদিকে ঘোর ভয় ঘনিয়ে এলো।
    দেবতারা সবাই শলা করলেন আমাতেরাসুকে যেমন করেই হোক বের করতে হবে।
  • tan | 131.95.121.132 | ০২ অক্টোবর ২০০৭ ০৫:১৭391862
  • প্রচুর অনুনয় করলো দেবতারা,আমাতেরাসু অটল।সে বেরুবে না।
    তখন দেবতারা ঐ গুহার বাইরে আগুন জ্বালিয়ে গানবাজনা শুরু করলেন,এক মোরগকে শিখিয়ে দিলেন সে বারে বারে ডেকে উঠলো।গুহার বাইরে এইসব শুনতে পেয়ে গুহামুখের পাথরের কাছে এসে ফাঁক দিয়ে উঁকি দিয়ে আমাতেরাসু জিগালো, কি হচ্ছে এসব?
    এক দেবতা কইলো, আমারা আমাতেরাসুর চেয়েও উজল এক দেবী পেয়েছি কিনা,তাই সেলিব্রেট করছি।
    আমাতেরাসু কৌতুহলো হয়ে যেই না মুখ বাড়িয়ে দেখতে গেছেন ওর সামনে আয়্‌না ধরেছে অমনি, আয়্‌নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখে আমাতেরাসু বিহ্বল খানিকটা, সেই অবসরে ওকে হাত ধরে টেনে বাইরে এনে গুহার মুখ দিয়েছে বন্ধ করে।
    তারপর থেকে আর কখনো সূর্যহীন দীর্ঘদিন কাটাতে হয় নি মানুষকে, সূর্য প্রত্যেকদিন সকালে পুবে উঁকি দিয়েছে, সোনার আলোয় ভরে গেছে দুনিয়া।
    ঝড়ের দেবতার হাতের নখ পায়ের নখ কেটে,দাড়ি কামিয়ে ওকে ভব্যসভ্য করা হয়েছে, তবুও আজও একটু এদিক ওদিক হলেই সে ঝড় ডেকে আনে।

  • tan | 131.95.121.132 | ০৩ অক্টোবর ২০০৭ ০৬:১৬391863
  • এইবারে নাভাহো গল্প। নাভাহোরা নেটিভ আমেরিকান উপজাতি,চেরোকীদের মতন।কর্ন মানে ভুট্টা এদের কাছে খুব পবিত্র(সমস্ত নেটিভ আমেরিকান উপকথায় ভুট্টাগাছ নিয়ে কিছু না কিছু ইম্পোর্ট্যান্ট গল্প আছেই),নাভাহো কাঁথায় থাকে সাদা ভুট্টা পুরুষ আর হলদে ভুট্টা নারী-এরা আদিপিতামাতা,পবিত্র ভুট্টাশীষ উপহার দিচ্ছেন মরমানুষকে।

    যাই হোক, এবারে আসল গল্পে চলে যাওয়া যাক। নাভাহোরা বলে এটা হলো পঞ্চম জগৎ, মানুষের পূর্বজরা থাকতেন চতুর্থ জগতে, এক বিরাট বন্যায় সব ধুয়ে মুছে গেলো সেখানে, কিছু মানুষ কোনোমতে পথ খুঁজে এই দুনিয়ায় এসে পড়লেন, তারপর থেকে মানুষ এই পঞ্চম দুনিয়ায় আছে।
    দিঅন যায়, দিন যায়, সুখেদুখে। একদিন মানুষ শোনে হু উ উ উ উ উ উ হু হু হু হু। কে জানি কি কয় আকাশ থেকে, ওরা কান পেতে শোনে সেই দৈববাণী। ক্রমে সে শব্দ জোরে হলো,দৈববানীর দেবতা প্রকট হলেন মানুষের সামনে।রঙীন পাথর থেকে তিনি বানালেন এক নারী, যে কিনা সদা পরিবর্তিত হয়।ভুট্টার শেষ থেকে বানালেন সাদা ভুট্টা ছেলে আর হলদে ভুট্টা মেয়ে।
    সেই যে সদা-রূপবদল কন্যা-সেই কন্যা বিবাহ করলেন সূর্যকে,সূর্য তাকে বানিয়ে দিলেন এক সুন্দর বাড়ী, ও ও ঐ পশ্চিমে, সে এখন সেখানেই থাকে।ঐখান থেকেই বসন্তের মিঠা হাওয়া আসে,গ্রীষ্মের পরে মধুর বৃষ্টি আসে নাভাহোদের দেশে, সেও আসে সেই পশ্চিম-নারীর ঘর খানি হতে।
    সেই পশ্চিমবাসিনী সূর্যপত্নীর ঘরে দুটি ফুটফুটে ছেলে হলো-শত্রুঞ্জয় আর নীরজ। কিন্তু কেন জানি ওদের বাবা সূর্য ওদের দিকে ফিরেও চাইলেন না, দেখতেও এলেন না, খোঁজখবরও করলেন না।
    এই দুই ভাই বড়ো হলেন মায়ের কাছেই, দেখতে দেখতে শৌর্যে বীর্যে অতুলনীয় দুই কিশোর হয়ে উঠলেন।এবারে দুই ভাই সিদ্ধান্ত নিলো,বাবার কাছে যাবে আর বাবার কাছ থেকে জেনে আসবে নানা অশুভ আত্মাকে শান্ত করার কৌশল-ঐসব অশুভ আত্মারা মানুষকে কষ্ট দেয় দেখে এই দুই সূর্যপুত্রের প্রাণে বাজে।

  • tan | 131.95.121.132 | ০৩ অক্টোবর ২০০৭ ০৬:৪১391864
  • যাবে তো,কিন্তু যায় কিভাবে? দুই ভাই অনেক ভাবে, অনেক ভাবে।
    তারপরে পাহাড়ের গুহায় যেখানে খুব জ্ঞানী আর কৌশলী মাকড়াসাবুড়ী থাকে,সেইখানে গিয়ে হাজির। বলে,""ঠাম্মা গো, তোর পায়ে পড়ি/পথ বলে দে দয়া করি'/মোরা দুজন যাবো সুজ্জি-বাড়ী/বলে দে পথ দয়া করি'।""
    ঠাম্মা গলে জল,পথ বলে দেন আর দেন মন্ত্রপাতি যাতে কিনা নাতিদের কোনো অমঙ্গল না হয়।তাদের আরো দেন মন্ত্রপূত কিছু ঈগলের পালক।
    দুই ভাই এইবারে মহা উৎসাহে যাত্রা করে,পথ চলে আর চলে,দীর্ঘ পথ পার হয়ে অবশেষে এক হ্রদের কিনারে সূর্যপ্রাসাদে হাজির হয়। সূর্য তখন বাড়ী ছিলেন না,দুয়ারে পাহারা দিচ্ছিলো ভীষণ দর্শন দুই বন্য বরাহ,দুই ভাই ওদের বুড়ীর মন্ত্র পড়ে অচল করে দিলো।এইবারে ওদের পাশ দিয়ে ঢুকে পড়লো প্রাসাদে।
    কেউ কোথাও নেই,খোঁজে খোঁজে কাউকে পায় না। তবে বাবা বাড়ী নেই,পরে আসবে,সারপ্রাইজ দেওয়া যাবে। এই ভেবে দুই ভাই এইবারে লুকিয়ে পড়লো কম্বলের তলায়-
    সূর্য ফিরলেন, ফিরেই বুঝলেন কিছু হয়েছে,কেউ এসেছে।প্রথমে ঝাড়া দিলেন সাদা সকাল কম্বল-তারপরে নীল আকাশ কম্বল-তারপরে হলদে বিকাল কম্বল-একদম শেষে কালো রাত্রি কম্বল।
    আর যায় কোথা,দুই ভাই গড়িয়ে পড়ে গেলো।সূর্য চিনতে পারেন নি কিনা, এই রকম চোরের মতন লুকিয়ে থাকতে দেখে ভেবেছেন এরা সত্যি চোর-শাস্তি দিতে ধরে আছাড় দিলেন পাথরে,কিন্তু মন্ত্রপূত ঈগলের পালক থাকায় তেমন কিছুই হলো না দুভায়ের।এট্টু ছড়ে গেলো নুনছাল উঠে গেলো মাত্র।
    তারপরে রাগ পড়ে গেলে সূর্য দেখেন আহা বাচ্চা বাচ্চা দুটো ছেলে,হাতে টাতে কেমন ছড়ে গেছে,কিজানি কার ছেলে,কেন এসেছিলো। কিছু তো নেয় নি,কি দেখেই বা তিনি চোর ভাবলেন!
    ওরা জল চাইছিলো, জলটল দিলেন,কাটাছড়াগুলোতে ওষুধ দিলেন-তারপরে জিগালেন পরিচয় ইত্যাদি। ওরা প্রথমে ভয়ে বলতে চায় না,চলে যেতে চায়, বলে এমনি এসেছিলাম,আপনার অসুবিধা করলাম, মাফ করুন।
    কিন্তু সূর্য কিছুতেই না জেনে চাড়বেন না। অবশেষে ওরা বললো। তারপরে-
    তারপরে কি হলো সে আর বলে কি হবে? অমন আবেগঘন পিতাপুত্র মিলনকাহিনি অমনি অমনি বলে দেওয়া যায় নাকি? ইয়ার্কি? :-)))
    যাই হোক, এরপরে অশুভ আত্মাদের সঙ্গে লড়ার জন্য যাদু তীরধনুক এইসব সূর্য দিলেন দুই ছেলেকে।

  • tan | 131.95.121.132 | ০৯ অক্টোবর ২০০৭ ২১:২২391865
  • আজকে একটা হিট্টাইট উপকথা। হিট্টাইটরা থাকতো আনাতোলিয়ায়(বর্তমান তুরষ্ক),এদের খুব রমরমা ছিলো খ্রীপূ: ১৫৯০ নাগাদ,তারপরে খ্রীপূ ১২০০ নাগাদ আস্তে আস্তে পতন ঘটে, তারো পরে আরো কয় শতাব্দী এরা ছিলো ঐখেনেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে, তবে তখন ক্ষমতা টমতা আর বিশেষ ছিলো না জাতি হিসাবে।
    ইহুদীদের সঙ্গে এদের একসময় কিছু কানেকশান হয়েছিলো, সলোমনের মা বাথশেবা একজন হিট্টাইট, সেই হিসাবে লুপ্ত হলেও এরা লুপ্ত হয় নাই, সলোমনের মধ্য দিয়ে কিছুটা ইহুদী হয়ে বেঁচে গেছে।
    আসলে কোনো জনজাতিই কি একেবারে লুপ্ত হয়ে যায়?
    পুরাকীর্তি প্রচুর রয়ে গেছে এদের,প্রচুর শিলাখন্ডে কীলক লিপিতে লেখা নানা সব জিনিস, প্রচুর গপ্পো টপ্পো সেসব থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

    উপকথায় ফিরে আসি। কৃষির দেবতা তেলেপিনু একদিন গেলেন মহা রেগে,কেন রেগে গেলেন কেউ জানে না, রেগে গিয়ে ডান পায়ের জুতা বাঁপায়ে আর বাঁপায়ের জুতা ডানপায়ে পরে নিয়ে বাড়ী ছেড়ে চলে গেলেন রাগে ফুলতে ফুলতে।
  • tan | 131.95.121.132 | ০৯ অক্টোবর ২০০৭ ২১:৫৪391866
  • এদিকে তিনি গেলেন তো গেলেনই, ফেরার নামটি নাই। মানুষের জমিতে শস্য ফলে না,সব কুয়াশায় ঢাকা,আগুন জ্বলে না কাঠে-সে এক মারাত্মক অবস্থা।মানুষ মরতে শুরু করলো, দেবতারাও মানুষে পূজা না পেয়ে শুকিয়ে যেতে লাগলেন।
    তখন তেলেপিনুর বাবা-ইনি আবহাওয়ার দেবতা-খুব ক্ষেপে গিয়ে প্রথম একটা ঈগল পাঠালেন তেলেপিনুকে খুঁজতে, সে কিছু পেলো না, তিনি নিজেই এসে তেলেপিনুর ঘরে দরজায় দুম দ্দুম দ্দুম দ্দুম করে লাঠিপেটা করলেন, কিন্তু তেলেপিনু তো বাড়ীতেই নেই, শোনে কে?

  • tan | 131.95.121.132 | ০৯ অক্টোবর ২০০৭ ২২:০৭391868
  • তেলেপিনুর মা, মাতৃকাদেবী হন্নহন্না(অন্ন এর সঙ্গে মিলটা দেখেছ?:-)))তখন হন্যে হয়ে এক ছোট্টো মৌমাছিকে শিখিয়ে পড়িয়ে দিলেন পাঠিয়ে,সে মৌমাছি উড়তে উড়তে গিয়ে দ্যাখে বনের মধ্যে ঘুমিয়ে আছে তেলেপিনু।মৌমাছি দিলো ওকে হুল ফুটিয়ে-তাতে তেলেপিনু জেগে উঠলো বটে, কিন্তু গেলো আরো চটে-চটে গিয়ে গেলো ক্ষেপে।রাগের চোটে পৃথিবীতে বন্যা শুরু হলো, মানুষ পশু বাড়ীঘর গেলো ভেসে।
    যাদুর দেবতা কামরুসেপাস তখন পাহাড়ের ধারে এসে বারোখান ভেড়া,চব্বিশ হাঁড়ি ভুট্টা,ছত্রিশ কলস সুরা-এসব দিয়ে তেলেপিনুর অর্চনার ব্যবস্থা করলেন।
    মন্ত্র পড়ে কামরুসেপাস কইলেন ""পাতালের দুয়ারী,সাত দরোজা খোলো,সাত হুড়কা আলগা করো,তোমার ব্রোঞ্জ কল্‌সীতে ধরে নাও তেলেপিনুর রাগ,ক্ষোভ ও দুর্বুদ্ধি।ভেতরে নিয়ে তারপরে সাতদুয়ার এঁটে সাত হুড়কা লাগাও, কোনোদিন আর ওগুলো বেরোতে দিও না।""
    তো,তাই হলো। তেলেপিনুর রাগ ক্ষোধ দুর্বুদ্ধি দূর হলো,সোনালী ঈগলের পিঠে চেপে তিনি ফিরে এলেন ও পূজার্চনা গ্রহন করে খুশী হলেন।

  • Tim | 204.111.134.55 | ১০ অক্টোবর ২০০৭ ০৭:১১391869
  • হন্নহন্না টা শুনতে পুরো অন্নপূর্ণার মত লাগলো । :-))
    দারুণ হচ্ছে গল্পগুলো।
  • Tim | 204.111.134.55 | ১০ অক্টোবর ২০০৭ ১১:৩৮391870
  • নর্দার্ন টেলস এর অনেকটা জুড়ে আছে শামানদের কথা। আর অবশ্যই ক্ষতিকর আত্মারা। শামান কথাটার সাথে সংস্কৃত শ্রমণের যোগসূত্র থেকে থাকতে পারে, লেখকের মন্তব্য। বিচিত্র সব কাহিনী জড়িয়ে আছে শামানদের জীবন নিয়ে। তাদের অলৌকিক ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে গ্রামের লোকেদের রোগব্যাধি সেরে যেত, শিকারের মরসুমে সহজেই মিলত খাবার। আবার শামানরা আত্মাদের সাথে যোগাযোগ করে ক্ষতিও করতে পারত, এরকম দৃষ্টান্ত বিরল নয়। উত্তরের বরফমোড়া গ্রামগুলোতে এখনো শামানদের দেখা মেলে। এখন তাদের ক্ষমতা আগের মত সুবিস্তৃত নয়, কিন্তু একটা সময় তাদের অঙ্গুলীহেলনে একটা জাতির চলাফেরা নির্দিষ্ট হত। শামানদের গল্পগুলোয় দেখা যায়, অশুভশক্তির সাময়িক জয় আর তারপর মানুষের মিলিত প্রতিরোধ।
  • Tim | 204.111.134.55 | ১০ অক্টোবর ২০০৭ ১২:১১391871
  • আজ থেকে অনেক বছর আগে কুকিয়াক নামে এক শামানের কথা মানুষের মুখে মুখে ফিরত। জনশ্রুতি ছিলো, যেসমস্ত মহান শামান একসাথে সূর্য্য-চন্দ্রের দেখা পেয়েছিলেন, কুকিয়াক তাদের মধ্যে অন্যতম। সে যাই হোক, এই গল্প যখনকার, তখন কুকিয়াক নেসিলিকে বসবাস করছিলেন। একদিন শিকারে গিয়ে বরফের মধ্যে ছোট এক ফাটল থেকে একটা সীলকে কায়দা করছেন, এমন সময় হঠাৎ চারদিক আলোয় আলো হয়ে গেল। চমকে ঘুরে তাকাতেই কুকিয়াক দেখলেন একটা প্রকান্ড স্লেজে চড়ে স্বয়ং চন্দ্রদেব হাজির। স্লেজটা চারটে তিমির চোয়াল জুড়ে তৈরী, আর ভয়ংকরদর্শন সব কুকুর সেটা টানছে। কুকিয়াক কিন্তু একটুও ভয় পেলেন না। বরং সোজা স্লেজটার দিকে এগিয়ে গেলেন। অভিবাদন শেষে চন্দ্রদেব কুকিয়াককে স্লেজে চড়তে বললেন। স্লেজে উঠতেই সেটা ঝড়ের বেগে চলতে লাগল। কোনমতে প্রথমদিকে কুকিয়াক চোখটা একটু খুলে রাখতে পেরেছিলেন, কিন্তু কয়েক মূহুর্তেই আবার বন্ধ করতে বাধ্য হন, এমন হাওয়ার তেজ। স্লেজটা উড়ে যাচ্ছিলো কিনা, তাই!
    অনেকক্ষণ চলে অবশেষে চাঁদের দেশ এলো। সেখানে বিশাল এক প্রাসাদে ইয়া বড় বড় সব কুকুরেরা পাহাড়া দিয়ে রাখে চন্দ্রদেবকে। সেই বাড়ির দরজা, জানলা, দেওয়াল সবকিছু থেকেই আলো ঠিকরে বেরোচ্ছে। এঘর সেঘর ঘুরে হঠাৎ কুকিয়াক দেখলেন এক পরমা সুন্দরী তরুণী কোলে শিশু নিয়ে বসে আছেন। আলাপ করে যানলেন, তিনি নাকি সূয্য! বোঝো কান্ড। তা, সূর্য্য, চন্দ্র মিলে কুকিয়াককে বেশ আদরেই রেখেছিলেন। কিন্তু কুকিয়াক তার অলৌকিক শক্তিবলে জানতে পারলেন, এসব আসলে ওদের চাল। সাধারণ মানুষ যাতে দৈবশক্তির বিরুদ্ধে লড়তে না পারে, তাই কায়দা করে কুকিয়াককে সরিয়ে রাখার ছল। একদিন রাতে কুকিয়াক চুপিচুপি পালালেন চন্দ্রপুরী থেকে। অনেক হোঁচট খেয়ে, অনেক বিপদ পেরিয়ে প্রাণ হাতে করে এসে পৌঁছলেন নিজের গ্রামে। শামান না থাকায় গ্রামের লোকেরা বড়ই বিপদে পড়েছিলো। তারা আবার নিশ্চিন্ত হল।
  • tan | 131.95.121.132 | ১০ অক্টোবর ২০০৭ ২২:২৮391872
  • আনান্সি-কোথাও বলে কোয়াকু আনান্সি, বুদ্ধিমান এক মাকড়সা, পশ্চিম আফ্রিকার বিরাট অংশে একে নিয়ে অনেক গল্প,পরে হাইতি টাইতিতে ছড়িয়ে গেছে সেসব গল্প।
    এর গল্প খুব ইন্টারেস্টিং, ইনি আকাশের দেবতা নাইয়ানকনপন এর কাছে গিয়ে হাজির একদিন, চান সব গল্প কিনতে। আকাশের দেবতার যত গল্প আছে, সব কিনে নিতে চায় আনান্সি।
    নিয়ানকনপন তো হেসেই অস্থির,গল্প কিনবে তুমি? কত কত বড়ো বড়ো ধনী ধনী গাঁ এর আগে চেষ্টা করে করে ফেল মেরে গেলো, তুমি কিনবে গল্প? বলি, দাম দিতে পারবে?
    আনান্সি কিন্তু দমে না, কয়, কি দাম দিতে হবে?
    নিয়ানকনপন কন,""ওনিনি পাইথন, ওসেবো প্যান্থার, মোবোরো বোলতাঝাঁক আর মোয়াটিয়া বনপরী। পারবে দিতে এনে?""
    আনান্সি কয়, হ্যাঁ পারবো। সঙ্গে আমার বুড়ী মা ন্সিয়া কেও দেবো এনে।""
    আনান্সি বাড়ী এলো, বাড়ীতে বুড়ী মা ন্সিয়া আর বৌ আসো ছিলো। ওদের আনান্সি জিগায়, ""কিকরে কও তো ওনিনি পাইথনকে ধরি?""
    আসো বুদ্ধি শিখিয়ে দিলো।তখন মস্ত বড়ো এক পামগাছের লম্বা পাতা কেটে, সঙ্গে শক্ত লতা কেটে গোলাপাকিয়ে বনে চললো দুজন। গিয়েই দুজনে ঝগড়া,আসো বলে,""এই পাতা ওর থেকে অনেক বড়ো,অনেক লম্বা।""
    আনান্সি বলে,""আরে ছো: এই পাতা বড়ো? তোমার মাথার ঠিক নেই। সে এই পাতার চেয়ে ঢের ঢের বেশী লম্বা।""
    বচসা তুমুল হয়ে উঠলো, ঝোপ থেকে ওনিনি পাইথন বেরিয়ে কইলো, আরে কি নিয়ে তোমরা ঝগড়া কচ্ছো এত?
    আনান্সি বলে,""আরে আর বলো কেন।এই জেদী মহিলাকে তুমি বোঝাও ওনিনি। আমি হার মেনে গেছি। কিছুতেই ও মানবে না, এই পামপাতার চেয়ে তুমি অনেক লম্বা।""
    ওনিনি প্যাঁচ বোঝে নি, সে বলে ও এই কথা? এ আর এমনকি, মেপেই দ্যাখো, বলে পামাতার ,মাঝদাঁড়া বরাবর শরীর টান করে শুয়ে পড়লো।সঙ্গে সঙ্গে তুরন্ত আনান্সি ওকে শক্ত লতা দিতে টাইট করে পামপাতার সঙ্গে বেঁধে ফেললো।
  • tan | 131.95.121.132 | ১০ অক্টোবর ২০০৭ ২২:৪৬391873
  • এইবারে ওসেবো প্যান্থার, এই ক্ষেত্রেও আসো বুদ্ধি দিলো, আনান্সি গর্ত খুঁড়ে উপরে লতাপাতা বিছিয়ে ঢেকে রাখলো ওসেবো প্যান্থারের যাতায়াতের পথে।পরদিন সকালে এসে দেখলো ভেতরে প্যান্থার।বেঁধে ছেঁদে পুটলি করে বাড়ী।
    কিন্তু ম্মোবোরো বোলতাঝাঁক ধরে কিকরে? কামড়ায় যদি?
    একটা লাউয়ের খোলার কলসী ভরে জল নিয়ে কলাপাতা নিয়ে ম্মোবোরোদের বাসার কাছে গিয়ে আনান্সি সেই জল নিজের গায়ে ঢেলে আশেপাশের গাছপাতায় ঢেলে কলাপাতা মাথায় দিয়ে বসে বসে আপনমনে কইতে লাগলো,উফ্‌ফ, কি বৃষ্টি রে বাবা! বিচ্ছিরি একেবারে।সময় নেই অসময় নেই ঝুপঝুপিয়ে নামলো,আমার তো তবু কলাপাতা আছে,ছাতার মতন ধরে রাখতে পারি,বেচারা বোলতাগুলো ভিজে যাবে আহারে আহারে...আমার এই লাউয়ের কলসীতে ঢুকে পড়ে অবশ্য বাঁচতে পারে।
    বোলতারা শুনে ঢুকে পড়লো লাউয়ের খোলায় আর আনান্সি ঝপাৎ করে কলাপাটা দিয়ে লাউকলসীর মুখ বন্ধ করে বাড়ীতে দৌড়।
    তিনটে হয়ে গেছে, এবারে ম্মোয়াটিআ বনপরী। এরে ধরে কিকরে? বুঝি আর হলো না গো সাধের গল্প কেনা!
    আনান্সি বসে আছে তোম্বামুখে, আসো এসে একটা কাঠের পুতুল ওকে দিলো আর বুদ্ধি শিখিয়ে দিলো।
    বনপরীরা খেলতে আসে এমন এক সুন্দর মাঠের ধারে গিয়ে আনান্সি রাখলো পুতুলটা।পাশে রাখলো সুন্দর মিঠাই ভরা একটা পাত্র।
    বনপরীরা এসেছে, ম্মোয়াটিয়া পুতুলটার কাছে সে জিগায় মিঠাই নেবো একটা?
    পুতুলটা তো আর কিছু বলতে পারে না, ম্মোয়াটিয়া রেগে দিলো সেটার গালে থাপড়, মনি হাত আটকে গেলো আঠায়, আরো রেগে দিলো অন্য হাত দিয়ে আরেকগালে আরেক থাপড়, সেই হাতও আটকে গেলো। ব্যস, ম্মোয়াটিয়াও বন্দী।
    সব নিয়ে আর মা ন্সিয়াকেও নিয়ে নিয়ানকনপনের কাছে হাজির এবারে আনান্সি, কইলো এনেছি হুজুর, সব এনেছি।
    আকাশদেবতা বেজায় অবাক আর খুশী। কইলেন,""কান্ড দ্যাখো। এত এত বড়ো বড়ো লোকে পারলো না, আন্নান্সি এনে দিলো সব! সাবাশ বেটা।""
    সব গল্প তিনি দিয়ে দিলেন আনান্সিকে, সেই থেকে সমস্ত গল্প আনান্সির নামে।
  • tan | 131.95.121.132 | ২৪ অক্টোবর ২০০৭ ২২:০৭391874
  • এইবারে মিশর।

    মিশর-সেই আশ্চর্য রহস্যময় দেশ। এদের উপকথাও আশ্চর্য সুন্দর।
    সৃষ্টির ঊষালগ্নে সূর্যদেবতা রা নিজেকে সৃষ্টি করেন, নিজেকে একা দেখে তারপরে সৃষ্টি করেন বাতাসদেবতা শু কে আর বাষ্পের দেবতা তেফনাতকে। শু আর তেফনাত মিলিত হন, সৃষ্টি হয় গেব,ভূমিদেব আর নাত, আকাশদেবী।
    রা য়ের অশ্রুজল থেকে সৃষ্টি হলো প্রথম মানুষ, তারপরে তিনি বানালেন পাহাড়,বন,পশুপাখি-সবকিছু।
    প্রত্যেকদিন পুব আকাশে উদিত হয়ে তিনি সেক্তেত নৌকায় করে পাড়ি দেন আকাশ,নাত গিলে ফেলে তাকে সন্ধ্যায়, পরদিন ফের জন্ম দেয়।
    সরীসৃপ ওপেপ হলো রা য়ের চিরশত্রু, সারারাত রা সংগ্রাম করেন এই অন্ধকারময় সরীসৃপের সঙ্গে, সকালে একে পরাজিত করে ফের পুবে উদিত হন।
    একদিন রা খুব বৃদ্ধ অশক্ত হয়ে পড়বেন, সেদিন জিতে যাবে ওপেপ,এই সৃষ্টি শেষ হবে।
    আবার নতুন করে নিজেকে সৃজন করবেন রা।

    এই দেবখন্ডের পরে এইবারে মানবখন্ড। সেই মানব---সূর্যের অশ্রুজলজাত সে, তাই তো সে এত উজ্জল!
    আকাশদেবী নাত আর তার স্বামী ভূমিদেব গেব, এরা দুজন এত কাছে কাছে ছিলেন আগে, যে এদের মাঝখানে কিছুই থাকতে পারতো না। বায়ুদেব শু তাই নাতকে তুলে ধরলেন, মাঝে জায়গা হলো, সর্বজীব ঠাঁই পেলো।
    নাত আর গেব এর চারটে ছেলেমেয়ে হলো-দুই ছেলে ওসিরিস আর সেট আর দুই মেয়ে আইসিস আর নেপ্‌থাইস। আইসিস আর ওসিরিস দুজনে দুজনাকে ভালোবাসতো, কিন্তু নেপথাইস সেটকে ভালোবাসতো না, সেও ওসিরিসকে ভালোবাসতো।
    ওসিরিস যখন জন্মেছিলেন তখন দৈববাণী হয়েছিলো "জগতের সম্রাট জন্মেছেন",ওসিরিস দেখতে যেমন স্নিগ্‌ধ সুন্দর ছিলেন,তেমনি তিনি ছিলেন অপরূপ হৃদয়ের অধিকারী।
    কালক্রমে তিনি মিশরের একচ্ছত্র অধিপতি হলেন, বামে রাণী হয়ে বসলেন আইসিস। সকলে হর্ষোৎফুল্ল হলো,শুধু সেথ মনে মনে খুব ক্ষুব্ধ হলো। ষড়যন্ত্র করে সে হত্যা করলো ওসিরিসকে।
    আইসিস পাগলিনীবেশে খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে শরবনে খুঁজে পেলেন প্রিয়তমের কফিন, প্রথামত সমাধিস্থ করার ব্যবস্থা করলেন। কিন্তু সেথ খবর পেয়ে এসে চোদ্দো টুকরো করলো সেই দেহ, ছড়িয়ে দিলো দূরে দূরে। কিন্তু অমর এই প্রাণধারা কি কখনো ওভাবে শেষ করা যায়? মরু কি গ্রাস করতে পারে নীলনদীধারা? আকাশগঙ্গার জল কি শেষ হয়?
    আইসিস গর্ভবতী ছিলেন ,তিনি জন্ম দিলেন হোরাসকে। হোরাস বড়ো হলে সেথের সঙ্গে লড়াই শুরু হলো। এ এক চিরসংগ্রাম-শুভ ও অশুভের সংগ্রাম। কখনো হোরাস জেতে কখনো সেথ, ফয়সালা হয় না।
    ওসিরিস পাতালে আছেন, প্রয়াত মানুষের বিচার করেন, ভালোকে স্বর্গ দেন,যে ভালো থাকতে চেয়েও পারে নি, তাকে আরেকবার সুযোগ দেন।
    বিশ্বাস এইরকম যে একদিন হোরাস জয়ী হবেন, সেথের পরাজয় হবে একদম পুরোপুরি, সেদিন ওসিরিস পৃথিবীতে এসে সত্যযুগের সূচনা করবেন।
  • Tim | 204.111.134.55 | ২৫ অক্টোবর ২০০৭ ১০:২২391875
  • আবার এসকিমোদের গল্প।

    চারদিকে ধূ ধূ তূষারারাবৃত প্রান্তর। আর তার মাঝে ছোট এক গ্রাম। সেই গ্রামে এক ছেলে তার মাকে নিয়ে থাকত। বাপ মারা যাওয়ায় ছেলেটির দু:খের অবধি ছিলো না। গ্রামের সবাই ওদের দুচ্ছাই করত দেখতে পেলেই, ছেলেটিকে একলা পেলেই নানাভাবে উত্যক্ত করে মারত। তাই সেই ছেলে, ধরে নেওয়া যাক নাম তার আয়াজ, সারাদিন গ্রাম থেকে দূরে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াতো। দিনের শেষে সবাই যখন একসাথে বড়ো নাচের ঘরটায় জড়ো হত, তখনও তাকে সেখানে দেখা যেত না।
    এরকমই একদিন, সবাই যখন নাচঘরে জড়ো হয়ে দারুণ মজা করছে, সেই ছেলে অভ্যেসমত গ্রামের বাইরে বেরিয়ে পড়লো। উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটতে হাঁটতে কখন যে সে অনেক দূরে চলে এসেছে, খেয়ালই নেই। যখন খেয়াল হল, দেখে সে এক অচেনা জায়গা। চারপাশের গাছপালা সব অচেনা, মাটির রং অন্যরকম, হাওয়ায় যেন কিসের স্পর্শ। এইসব ভেবে আয়াজ যখন হয়রান, তখনই দূরে কিসের আলো দেখা গেল। মানে, আলোটা ছিলো-ই, এতক্ষণে আয়াজের নজরে এল। কিসের আলো দেখতে আয়াজ যতই এগোয়, সে আলো-ও সরে সরে যায়। এইভাবে অনেকক্ষণ চলার পর অবশেষে আলোটা থেমে এক জায়গায় চুপটি করে বসল। তখন দেখা গেল সেটা একটা আস্ত বড়সড় হলঘরের মত। সেখানে কত লোক জমা হয়ে কিসের যেন অপেক্ষা করছে।
    আয়াজ জানলা দিয়ে উঁকি মারতেই সবাই মহাব্যস্ত হয়ে তাকে ডেকে খাতির টাতির করে বসালো। তারপর জানতে চাইলো, "" তুমিই কি শামান? আজ তোমারই আসার কথা ছিলো? ""
    আয়াজ তো অবাক। এরা বলে কি? শামান হলে সে নিজে কি গ্রামের বদলোকগুলোকে শায়েস্তা করতে পারত না? এমনি করে কি তাকে তাইলে ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে বেড়াতে হয়? অনেক কষ্টে আয়াজ সবাইকে বোঝাতে পারল যে সে শামান না, নিতান্তই এক অনাথ বালক। তখন জনতার মধ্যে থেকে একজন উঠে দাঁড়িয়ে বলল, "" আমি আয়াজের কথা সব জানি। এসো ভাই, আমি তোমায় সাহায্য করব। "" এই বলে সে ঘরের মধ্যিখানে এসে হাঁক দিলো, "" কে আছিস, আমার বর্শা আর বরফ খোঁড়ার আঁকশিটা নিয়ে আয় দেখি!"" সাথে সাথে একজন উঠে এইসব এগিয়ে দিলো। তারপর শুরু হল ঐ শামানের জাদুর খেলা। বিড়বিড় করে কিসব মন্ত্র আওড়াতেই মেঝেতে বৃত্তাকার একটা বরফঢাকা অঞ্চল তৈরী হল। তারপর সেটা বাড়তে বাড়তে একসময় সারা মেঝেটাই ঢেকে ফেলল। সেই বরফে একটুকরো গর্ত দেখা দিলো। আর অমনি সেখানে মাথা তুলল এক সীল। শামান সেই সীল মেরে সবাইকে ভাগ করে দিলেন। এইভাবে একে একে সেই ফাটলে মাছ ধরা হল, এমনকি একপাল হরিণ পজ্জন্ত বেরিয়ে এসে বর্শার ঘায়ে মারা পড়ল। সবাই বাকরুদ্ধ। আয়াজের ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ। এত ক্ষমতা যে শামানের, সেতো ইচ্ছে করলেই একঘর লোককে এই মূহুর্তে পাথর করে দিতে পারে। কিন্তু এসব কিছুই হল না। সবাই মিলে খেয়েদেয়ে, বেজায় মজা করে রাত পার করে দিলো। ভোরের দিকে আয়াজ বাড়ির দিকে রওনা হল।
    এর কয়েকদিন পরের কথা। সেদিনও আয়াজদের গ্রামের সবাই সন্ধ্যের সময় জড়ো হয়েছে নাচঘরে। আয়াজ সেদিনও গ্রাম ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার মতলবে ছিলো। কিন্তু গ্রামের এক উৎসাহী রসিক লোক তাকে পাঁজাকোলা করে তুলে সো-ও-জা নাচঘরে নিয়ে এলো। তারপর তাকে ঘরে মাঝখানে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হল, উদ্দেশ্য একটু রঙ্গ তামাশা করা। তারপর একজন বলল, "" আয়াজ, একটা চমৎকার খেলা দেখাও দেখি। না পারলে বাপু কপালে দু:খ আছে, বলে দিলাম। ""
    আয়াজ এদিক সেদিক চেয়ে হঠাৎ বলে বসল, "" কই দেখিতো আমার বর্শা আর আঁকশিদুটো! "" অমনি সবাইকে অবাক করে দিয়ে কোথা থেকে বর্শা আর আঁকশি এসে গেল। বেজায় অবাক হয়েও সেটা প্রকাশ না করে আয়াজ মেঝের ওপর বসে পড়ল। তারপর চিৎকার করে বলল, "" সব বরফে ঢেকে যাক এক্ষুনি। "" অমনি পুরো মেঝেটা বরফে ঢেকে সাদা হয়ে গেল। তারপর সে মনে মনে কি একটা বলতেই সেই বরফ সরিয়ে একটা ফাটল দেখা দিলো, আর সেইসাথে একটা সীল। সীল মেরে, সবাইকে মাংস ভাগ করে দিয়ে বুক ফুলিয়ে বাড়ি ফিরে গেল আয়াজ।
    সেদিনের পর থেকে কেউ তাকে বিরক্ত করার সাহস করেনি।
    -------------------------------------
  • Tim | 204.111.134.55 | ১৩ নভেম্বর ২০০৭ ০৯:৩৪391876
  • **জাপানের আইনো সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত উপকথা **
    (১)
    ঈশ্বর যখন পৃথিবী সৃষ্টি করলেন, তখন সবাইকে দিলেন জলে-স্থলে-আকাশে বিচরণের সমান ক্ষমতা। যে কেউ যেকোনো রূপ ধরতে পারত। সবাই মিলেমিশে বেশ শান্তিতেই ছিলো। সমস্ত জন্তুজানোয়ারের মধ্যে মানুষেরাই চটপট এগিয়ে যাচ্ছিলো উন্নতির সিঁড়ি বেয়ে। তারা দারুন সব খাবার বানাতে শিখে গেছে ততদিনে, তাদের রসদও প্রচুর। একবার হল কি, দুই ধূর্ত শেয়াল মিলে ফন্দি আঁটল, কি করে ফাঁকি দিয়ে মানুষের খাবার চুরি করা যায়। দুজন মিলে গাছের লতাপাতা দিয়ে কিছু গয়নাগাঁটি বানিয়ে, রবারের ভুয়ো কেক তৈরী করে, মানুষের রূপ ধরে রওনা দিলো। উদ্দেশ্য, পথে প্রথমেই যে গ্রাম পড়বে, সেখানকার লোকদের ঠকানো। এখন, ঐ পাজী শেয়ালদের ওপর লুকিয়ে নজর রেখেছিলেন খোদ ঈশ্বর। তিনি করলেন কি, নিজে এক বৃদ্ধ বণিকের রূপ ধরে শেয়ালদের চলার পথে একটা নকল গ্রাম বানিয়ে অপেক্ষায় রইলেন। আসেপাশের যত পাখপাখালি, তাদের জড়ো করে সব্বাইকে মানুষের রূপ দিলেন তারপর ছদ্মবেশী সেই বণিক। রাতারাতি নকল গ্রাম লোকসমাগমে মুখর হল।
    যথাসময় শেয়ালদ্বয় পৌঁছে গেল সেই গ্রামে। তারপর তাদের যা অভ্যর্থনাটাই হল। জিভে জল আনা ফল আর মিষ্টি দিয়ে তাদের পেট ভরে খাওয়ানো হল। তারপর রাতে আগুন ঘিরে মানুষের ছদ্মবেশী পাখিদের ছন্দময় নাচ দেখিয়ে তাদের মনোরঞ্জন করা হল। ঠগ দুজন তো দারুণ খুশি। পরেরদিন বিদায় নেওয়ার সময়েই ওরা ঠিক করে ফেলল, আবার আসতে হবে।
    দুদিন পরেই আবার তারা ফিরে এল সেই গ্রামে। এবার তারা তৈরী হয়েই এসেছিলো, যাতে অনেক খাবার সাথে নিয়ে যেতে পারে। বুড়ো বণিকের বাড়িতে অনেক মূল্যবান রত্ন ছিলো, সেসবও তাদের চোখ এড়ায় নি। কিন্তু এবার গ্রামটা কেমন চুপচাপ, কোন লোকও দেখা যাচ্ছে না। আই হোক, ইতিউতি চেয়ে ওরা যেই না বাড়ির মধ্যে ঢুকেছে, অমনি দড়াম করে সদর দরজা বন্ধ হয়ে গেল। তারপর সেই বৃদ্ধ দেখা দিলেন। শেয়ালেরা অবাক হয়ে দেখল, ধীরে ধীরে তাঁর রূপ পাল্টে যাচ্ছে। অবশেষে স্বমূর্তিতে ঈশ্বর দেখা দিলেন। তারপর চলল তিরস্কারের পালা। বেশ করে বকুনি দিয়ে ঈশ্বর বললেন, "" এই প্রথমবার বলে কোন কঠিন শাস্তি দিলাম না তোদের। কিন্তু এরপর আবার কাউকে ঠকানোর চেষ্টা করলে যথোচিত ফল ভোগ করতে হবে, বলে রাখলাম। আর, এখন থেকে সবার জাদুক্ষমতাও আমি কেড়ে নিলাম। যে যার নিজের রূপে, নিজের জায়গায় আবদ্ধ থাকবে।""
    শেয়ালদের এমনিতেই ভয়ে বুক শুকিয়ে গেছিলো। বারবার ঘাড় নেড়ে তারা গভীর জঙ্গলের দিকে দিলো দৌড়। আর কখনো তারা চালাকি করার চেষ্টা করেনি।
  • Tim | 204.111.134.55 | ১৩ নভেম্বর ২০০৭ ১০:৪৩391877
  • (২)
    এটাও পৃথিবী সৃষ্টির অব্যবহিত পরেকার গল্প। তখনও মাটি শক্ত হয়নি। হালকা আস্তরণ তৈরী হতে শুরু করেছে, মাঝে মধ্যেই ভূগর্ভস্থিত লাভা বেরিয়ে আসে, মাটিতে খালিপায়ে হাঁটতে গেলে পা পুড়ে যায়। তো, মানুষের দুর্দশার অন্ত ছিলোনা সেইসময়। বাড়ির বাইরে যাওয়ার জো নেই, অনাহারে দিন কাটে। দেখতে দেখতে মানুষ জাতিটাই লুপ্ত হওয়ার উপক্রম। তখন এগিয়ে এলেন সমুদ্রের দেবতা ওকিকুরুমি। তিনি বললেন, "" আমি রোজ সবার জন্য খাবার পাঠিয়ে দেবো আমার স্ত্রী তুরেশকে দিয়ে, কাউকে না খেয়ে মরতে হবে না। তবে একটা শর্ত আছে, কেউ তুরেশের দিকে তাকাতে পারবে না, কেউ তাকে কোন প্রশ্ন করতে পারবে না। করলে উপযুক্ত শাস্তি পেতে হবে।""
    সবাই তখন না খেতে পেয়ে ধুঁকছে, তারা তো একবাক্যে রাজি হয়ে গেল। তারপর কিছুদিন বেশ ভালভাবেই কাটল। তুরেশ রোজ প্রচুর মাছ এনে রেখে যেতেন, আর সেই খেয়ে সবাই দিব্যি সুস্থ হয়ে উঠল। কিন্তু এক অতি-কৌতূহলী ব্যক্তির এইটা কিছুতেই পছন্দ হচ্ছিলো না। কোথা থেকেই বা এত মাছ আসে, কেই বা এসে সেগুলো রেখে যায়, এসব জানার জন্য সে ছটফট করছিলো। ক্রমশ কৌতূহল দুর্নিবার হয়ে উঠলে, একদিন সে জানলার ধারে অপেক্ষায় রইল। গভীর রাতে, সবাই যখন ঘুমিয়ে, তখন দেখা গেল চকিতের জন্য একটা হাত জানলা দিয়ে একটা প্রকান্ড ঝুড়ি রেখেই অদৃশ্য হল। বোঝা গেল সেটাই তুরেশ। পরদিন আবার অপেক্ষায় থাকলো সেই ব্যক্তি। এবার তুরেশ হাত বাড়িয়ে মাছভর্তি ঝুড়ি রাখতেই ঝট করে তার হাত ধরে ফেলল সেই কৌতূহলী। আর এক হ্যাঁচকা টানে তাকে এনে ফেলল ঘরের মধ্যে। ব্যস আর যায় কোথা! চোখের পলকে তুরেশ একটা প্রকান্ড অগ্নীবর্ষী জীবে পরিণত হলেন, তার নি:শ্বাসে আগুন ছুটতে লাগল। ওদিকে ওকিকুরুমিও টের পেয়ে ভয়ানক রেগেমেগে প্রাকৃতিক বিপর্যয় সৃষ্টি করলেন। ঘন ঘন বজ্রপাতে চারিদিকে হাহাকার উঠলো। সোনার জনপদ সমাধিক্ষেত্র বানিয়ে দেব-দম্পতি যখন ফিরে গেলেন তখন আইনোদের কেউই প্রায় বেঁচে নেই। তারপর থেকেই আইনো উপজাতির দুর্দিন শুরু হয়। তারা ক্রমশ অবলুপ্তির পথে এগিয়ে চলে।
    ---------
  • penchi | 84.177.107.84 | ১৩ নভেম্বর ২০০৭ ১২:৩৩391879
  • বা: বা: বেড়ে হচ্ছে গপ্পোগুলো !!!!!!!! চালিয়ে যান মহায়রা।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন