এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর

  • বৈদিক সাহিত্যে দেবতা অসুর রাক্ষস ইত্যাদি

    d
    বইপত্তর | ৩০ এপ্রিল ২০০৮ | ১৪৫৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • dd | 122.167.34.204 | ৩০ এপ্রিল ২০০৮ ২১:৪৪395830
  • ঋগবেদের সংহিতা অংশের প্রথম দিকে দেবতা ও অসুর সমার্থক ছিলেন। পরে মধ্য ও বিশেষত: শেষ ভাগে তারা আলাদা গোষ্ঠী হয়ে যান। তখন অসুর আর দানব ক্রমশ: একই গোষ্ঠী হয়ে পরেন। র্বং তারা হয়ে যান দেবশত্রু।

    প্রথম মন্ডলেই বারোবার অসুর কথাটি ব্যবহৃত হয়েছিলো। প্রতিবারই দেবতা হিসাবে।

    কয়েকটি শ্লোক উল্লেখ করি : প্রথমটি ইন্দ্রের উদ্দেশ্যে:
    "কেননা তিনি প্রভুতযশশালী ও অসুর, এবং শত্রুদের দূর করেন" (১। ৫৫। ৬)

    হে অগ্নি, তুমি মহৎ আকাশের অসুর রুদ্র, ... তুমি অন্তের ঈশ্বর" (২।১। ৬)

    "যজ্ঞের পিতা ,স্ত্রোতৃগনের অসুর,ঋত্তিকগনের জ্ঞান হেতু যজ্ঞাদি কর্মের্সাধনভূত অগ্নি, পার্থিব ও বৈদ্যুতাদি রূপদ্বারা দ্যাবা পৃথিবীতে প্রবেশ করেন" (৩। ৩। ৪)
    এইরকম আরো অনেক শ্লোক।
    কখনই অসুর কথাটি দেববিরোধী হিসাবে ব্যাবহৃত হয় নি। একবারও নয়।
  • d | 121.247.67.202 | ৩০ এপ্রিল ২০০৮ ২২:০২395841
  • দীপ্তেনদা,

    যখন প্রথম, মধ্য ও শেষ অংশ বলছেন, তখনকার সময়কালটাও যদি একটু বলেন তো বড় ভাল হয়। ঋগ্বেদ তো বোধহয় খ্রীষ্টপূর্ব্ব দ্বাদশ শতক থেকে রচিত হতে শুরু হয় এবং দশম শতকের শেষ বা নবম শতকের শুরুতে সমাপ্ত হয়।

    তাহলে এর "সাহিত্য' অংশের্প্রথম, মধ্যম বা শেষ বলতে মোটামুতি আনুমানিক কোন কোন সময় বুঝবো?
  • b | 78.137.144.235 | ৩০ এপ্রিল ২০০৮ ২২:১৯395852
  • মূল সংস্কৃত শ্লোকগুলি উল্লেখ করতে পারবেন কি?
  • b | 78.137.144.235 | ৩০ এপ্রিল ২০০৮ ২২:৩৪395854
  • সরি, ভাষাটা তখনো "সংস্কৃত" নয়।
  • Blank | 59.93.195.4 | ৩০ এপ্রিল ২০০৮ ২৩:২৮395855
  • প্রথম থেকে নবম মন্ডল অব্দি অসুর আর দেবতা সমার্থক হিসেবে আছে। দশম মন্ডল থেকে মনে হয় সব আলাদা হওয়া শুরু।
  • N | 131.95.121.107 | ৩০ এপ্রিল ২০০৮ ২৩:৪২395856
  • মিলিয়া মিশিয়া ছিলো অসুরে ও দেবতায়
    ডিভাইড অ্যান্ড রুল আসি ফেলিলো বেকায়দায়।

    ডি: তাবলে ভাববেন না ঘটিবাঙালে ও অসুরদেবতায় সূক্ষ্ম মিলের ইঙ্গিত করছি।

  • aja | 207.47.98.129 | ৩০ এপ্রিল ২০০৮ ২৩:৪৭395858
  • দেবতা আর অসুরদের মত গ্রীক মিথোলজিতেও টাইটান আর ওলিম্পিয়ান আছে না?
  • N | 131.95.121.107 | ৩০ এপ্রিল ২০০৮ ২৩:৫১395859
  • স্ক্যান্ডিনেভিয়াতেও ওরকম আছে-দেবতা ও দৈত্য।
    কেমন কেমন করে কারা নাকি বার করেছে এই ভারতীয়, গ্রীক আর নর্স নাকি একই গাছের তিনটি শাখা।
    টরেটম বনে যাবার দশা হয়েছিলো দেখে,কোথায় ভারত, কোথা গ্রীস আর কোথায় বা সুইডেন!
  • Blank | 59.93.195.4 | ৩০ এপ্রিল ২০০৮ ২৩:৫৫395831
  • ডিডি দা আর একটু লিখুক। ততক্ষনে নিশ্চয় এই আল্পীয় আর নর্ডিক দের গপ্প আসবে।
  • shyamal | 64.47.121.98 | ০১ মে ২০০৮ ০১:২৫395832
  • এন,

    ভারত, গ্রীস আর সুইডেন যতটা আলাদা মনে হয় ততটা নয়। সবই ইন্দো-ইউরোপিয়ান।

    http://www.geocities.com/Paris/LeftBank/6507/chronicle120.html
  • tatin | 24.254.42.164 | ০১ মে ২০০৮ ০৫:৫২395833
  • কলিম খান অনুসারে আদি সমাজতন্ত্রী-রা অসুর ও আদি ধনতন্ত্রী-রা দেবতা।
  • dd | 122.167.14.232 | ০১ মে ২০০৮ ২০:২৩395834
  • বিশেষত: মিত্র ও বরুণ ছিলেন অসুর। এই মিত্রই পরে এন আর আই হয়ে পারস্যে গিয়ে মিথ্‌থ্‌রা হন। এক ঐতিহাসিক বলছিলেন যে খ্রীষ্ট ধর্ম না হলে মিত্রধর্মই পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ধর্ম হয়ে উঠতো। এতোই ছিলো তার রমরমা।

    মিত্র আর বরুণকে নিয়ে দুটি শ্লোক।

    "হে অসুর বরুণ! তোমার যজ্ঞে যাহারা অপরাধ করে, তাহাদিগকে যে আয়ুধ হিংসা করে, আমাদিগকে যেন সে আয়ুধ হিংসা না করে"। ঋগ্বেদ। ২। ২৭। ১০ (অনুবাদ রমেশ চন্দ্র দত্তের)।

    "হে অসুর মিত্র। আকাশ যাহাকে প্রসব করিয়াছেন অর্থাৎ সূর্য, তিনি তোমা হইতে ভিন্ন"।
    মিত্র ও বরুণকে বহুবারই সরাসরি অসুর বলে সম্বোধন করা হয়েছে।

    দশম মন্ডল থেকেই ইউ টার্ন। অসুরেরা তখন দেব শত্রু। ঋগ্বেদ। ১০। ১২৫। ৫। এক ঋষির উক্তি "আমি আসলেই অসুরেরা শক্তিহীন হয়ে যায় "।

    আরো অরিষ্কার। "দেবতাগন যখন অসুরদিগকে বধ করিয়া প্রত্যাগমন করিলেন ,তখন তাহাদের অমরত্ব পদ রক্ষা পাইলো।" ১০। ১৫৭। ৪
    "যখন অসুরেরা প্রবল হইলো, তখন দেবতারা বিশ্বাস করিলেন যে ইহাদিগকে বধ করিতে হইবে"। ১০। ১৫১। ৩

    এইরকম শ্লোক আরো আছে। রমেশচন্দ্র দত্ত বলেন "দশম মন্ডলের সূক্তগুলি প্রায়ই অপেক্ষাকৃত আধুনিক। সুতরাং সেই সূক্তে অসূর শব্দ অনেকটা পৌরাণিক অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছে।"

    সংখ্যাতঙ্কেÄ যারা আগ্রহী,বেদে ১৫০ বার অসুর শব্দ আছে। সবই ভালো অর্থে প্রযুক্ত। কেবল ১৫ বার দুষ্ট অর্থে প্রযুক্ত।
  • dd | 122.167.14.232 | ০১ মে ২০০৮ ২০:৫০395835
  • দেবতাদের নানা শ্রেনী বিন্যাস ছিলো, আলাদা আলাদা স্থান।
    পৃথিবী স্থানের দেবতা: অগ্নি, পৃথিবী, অপ, সোম
    অন্তরীক্ষ : ইন্দ্র, রুদ্র,পর্জন্য
    দ্যুলোক : সূর্য, সবিত, বিষ্ণু, মিত্র,বরুণ, দ্যু, পুষ্য,রাত্রি,যম (ইত্যাদি)

    প্রচুর,প্রচুর দেবতা ছিলেন যাদের নাম (ঋগ্বেদ ও যজুর্বেদে) একবারই উলেখ করা হয়েছে।

    সুধন্বার তিন পুত্র মানুষ হয়ে জন্মেও দেবত্ব পেয়েছিলেন (ঋ: ১। ১৬১। ১।)

    অথবা অথর্ব বেদে ( ১০ম কান্ড, প্রথম সূক্ত, ৩৫ ঋক)বর্নীত স্কম্ভ। এই স্কম্ভ দেবতা ছিলেন জেষ্ঠ্য ব্রহ্ম। অর্থাৎ সনাতন দেবতা যিনি ব্রহ্মাকেও সৃষ্টি করেছিলেন।

    মিত্র,বরুণ ও অর্যমা - একই সাথে উল্লিখিত হতেন। ক্রমশ: অর্যমা বাদ পরে গেলেন এবং মিত্র ও বর্ণ প্রায় একই দেবতা (মিত্রাবরুণ) হয়ে গেলেন।

    অসুরদের মতন দেবতাদেরও উথ্‌থান পতন ঘটেছিলো।
  • dd | 122.167.14.232 | ০১ মে ২০০৮ ২১:১৭395836
  • এইসব দেবতাদের কি চিনতে পারা যায় ? একবারই উল্লেখ হয়েছে শুক্ল যজুর্বেদে।
    ধাতৃদেবতা, পথ দেবতা, অরণ্য দেবতা, মন্যু, মায়ু, প্রতিশ্রুৎক, ত্বষ্টু, হ্রী দেবী,ত্বষ্টা,অপাং নপাৎ, বিশ্বদেব।
    এইরকম প্রচুর হারিয়ে যাওয়া দেবতা।

    শুক্লযজুর্বেদেই রয়েছে আশ্চোর্য্য সব উপাখ্যান দেবতা ও অসুরদের নিয়ে।
  • dd | 122.167.7.83 | ০১ মে ২০০৮ ২৩:১৫395837
  • কিন্তু তার আগে রাক্ষসদের সাথে আলাপটা হয়ে যাক।

    অথর্ববেদের অষ্টম কান্ড, ২য় অনুবাক। পুরোটাই রাক্ষস (ও যাতুধানদের) নিয়ে।

    কেমন ছিলো এই রাক্ষসেরা ?
    এরা ছিলো কৃষ্ণবর্ণ। মাংসাশী। খেতো কাঁচা মাংস এমনকি নরমাংসও। একাধিকবার উল্লেখ করা হয়েছে সুকেশী বলে। কেনো এতো চুলের প্রশংসা? বাংলা দেশের আটপৌরে গ্রাম্য ভুতের মতন, গোড়ালী থেকে পায়ের পাতা উল্টো দিকে ( ৮। ৩। ৪)।

    বহুবার উল্লেখ করা হয়েছে রাক্ষসেরা শব্দকারী। কেমন শব্দ করতো এরা ? রাক্ষসেরা কু কু করে শব্দ করতো, মোরগের মতন আওয়াজ করতো, কিষ কিষ করে শব্দ করতো। এরা বলাৎকারী। চোখে নখ দিয়ে আঘাত করতো। এদের অস্ত্র ব্যবহারের কোনো উল্লেখ নেই।

    মুনি ঋষিরা, মানুষ তো কোন ছাড়, দেবতাদেরও শাপ দিতেন। কিন্তু যজ্ঞ বিঘ্নকারী এই রাক্ষসদের কেনো শাপ টাপ দিয়ে বশে রাখতে পারতেন না,এটা এক রহস্য।

    কিন্তু অথর্ব বেদেই আছে অথর্ব ঋষির কথা, যিনি শাপ দিয়েই রাক্ষসদের দগ্‌ধ করেছিলেন। এটা বোধহয় একমাত্র উদাহরন।
  • Somnath | 59.93.254.133 | ০২ মে ২০০৮ ০৫:০৮395838
  • একটা জিনিস বোধয় একটু কনফিউজ করছে। বেদে, অন্তত ঋগ্বেদে, দেবতা বলতে মোস্টলি বিষয় বোঝানো হত। পথ দেবতা মানে পথ বিষয়ের শ্লোক, জল দেবতা মানে জলের বিষয়ে ---- এইরকম। তেমনি ইন্দ্র দেবতা, মানে ইন্দ্রের উপরে, ইন্দ্রের বিষয়ে লেখা শ্লোকগুলো।

    অন্তত হরফে এমনটাই বলা আছে। তার বেশি বই তো আমি পড়ি নাই।
  • Blank | 203.99.212.224 | ০২ মে ২০০৮ ১০:৩৭395839
  • সোমনাথের কথা বুঝলাম না।
  • dd | 122.167.29.252 | ০২ মে ২০০৮ ২১:৪৫395840
  • এবার যজুর্বেদ ।
    প্রথমে শুক্লযজুর্বেদ।

    প্রথম অধ্যায়েই কম্যান্ডমেন্ট। "মন তুমি ... অসুরদের প্রতি কর্কশভাষী কিন্তু সজ্জনের সম্বন্ধে মধুরভাষী"।

    আছে হিরণ্যপাণি সবিতার কথা। দৈত্যগনের প্রাশিত্র নামে অস্ত্রের প্রহারে সবিতাদেবের পাণিদ্বয় ছিন্ন হলে দেবগন তাকে সোনার হাত গড়িয়ে দেন। বোঝা যাচ্ছে অসুর (দৈত্য) আর দেবতাদের মধ্যে লড়াই তখন শুরু হয়ে গেছে।

    পঞ্চম অধ্যায়ে আছে পরাজিত অসুরেরা তপস্যা করে (কার তপস্যা করেন তাঁরা?)ত্রৈলোকে তিনটি পুরী নির্মান করেন। "দেবগন কত্তৃক অরাধিত" অগ্নি সেগুলি দগ্‌ধ করেন।

    এই অগ্নি কে নিয়ে দুই যজুর্বেদেই অনেক উপাখ্যান রয়েছে। মনে হয়েছে অগ্নি একটু দোনোমনো ছিলেন। এবং খুব উবিধের লোক ছিলেন না।

    ২৫ শ অধ্যায়ে উল্লিখিত হয়েছে অপরিচির দেবতাদের নাম। যেমন শাদ, স্তনয়িত্নু, উৎসা, বৃষণ, মশক, কপিঞ্জল, তেদানী,পার,অবার ও আরো অনেক দেবতার। আছে ঈশান দেবের নামও।

    দেবীদের নামও আছে। পুর্বা,পৈষা,দাত্রী,উজ্জা ও আহুতি। ৪০ অধ্যায়ে আছে আরো নতুন দেবতার নাম যেমন, উগ্রদেব,শিংগি, ভব,সর্ব,সাধ্য, শর্ব ও ঈশানদেবের নাম। প্রসংগত জানাই অশ্বের ক্রোধকে নিবেদন করা হয়েছে ঈশান দেবের উদ্দেশ্যে।

    তুলানায় অসুরদের নামের অপ্রতুলতা। নমুচি, বৃত্র।
  • dd | 122.167.29.252 | ০২ মে ২০০৮ ২১:৫৩395842
  • আর কৃষ্ণজযুর্বেদে দেবাসুরের যুদ্ধের অনেক বর্ননা রয়েছে।

    ১ম খন্ড, ৫ম প্রপাঠক। "দেবতা ও অসুরদের মধ্যে যুদ্ধ আরম্ভ হয়েছিলো। দেবগন জয়লাভ করে অসুরদের মণি মুক্তা প্রভৃতি শ্রেষ্ঠ ধন রক্ষার জন্য অগ্নিতে নিক্ষেপ করলেন,কারন যদি কোনো প্রকারে অসুরদের জয় হয় তবে এ ধন তাদের বিপদে কাজে লাগবে। অগ্নি সেই ধন আত্মাসাৎ করবার ইচ্ছায় সেই ধন নিয়ে পলায়ন করলো। পুণ্‌য়্‌বশে দেবগন অসুরদের জয় করে অগ্নির কাছ থেকে বল পুর্বক সে ধন পেতে ইচ্ছে করেছিল। সে অগ্নি রোদন করেছিলো। ... তখন থেকে অগ্নির নাম রুদ্র হয়েছিলো।"

    আরো। ২য় কান্ড, ৩য় প্রপাঠক। দেবতা ও উরদের মধ্যে যুদ্ধ হয়, তাতে দেবতাদের অসুররা জয় করে।দেবতারা পরাজিত হয়ে অসুরদের অধীনে সেবকদের মত কাজ করে। তাতে তাদের ইন্দ্রিয় ও শারীরিক সামর্থ্য ,দুই ই চলে যায়। ইন্দ্র তা জেনে সে সামর্থ্য ফেরাতে চেষ্টা করেও পারেন না।"
    ২য় কান্ড, ৪র্থ প্রপাঠক। এটি বেশ বড় গল্প।

    "দেবতা ও অসুরগন যুদ্ধের জন্য সৈন্য সমাবেশ করেছিলো। একদিকে, মনুষ্য ও পিতৃগণ, অপরদিকে অসুর, রাক্ষস ও পিশাচগন। অসুরেরা ছিলো রাক্ষসদের অবান্তর জাতি। সে যুদ্ধে সামান্য প্রহারে দেবগনের শরীরে যে ক্ষত হয়, প্রতিদিন রাতে এসে অসুরেরা গোপনে সে ক্ষতস্থানে বিষাদি প্রয়োগ করে দেয়। ফলে দেবতারা মারা যেত(!!!)। রাত পোহালে দেবতারা বুঝল, এ অসুর্দের কাজ। তারপর দেবতারা রাক্ষসদের উৎকোচ দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের অধীন করে। রাক্ষসেরা বিজয়ের ভাগ চেয়ে সসৈন্যে দেবতাদের সাথে যুক্ত হল।

    তারপর দেবতারা যুদ্ধে অসুরদের জয় করে রাক্ষসদেরও তাড়িয়ে দিল। "দেবতারা মিথ্যা কজ করেছে"- এই বলে রাক্ষসেরা তাদের ঘিরে ফেলে। দেবতারা তখন অগ্নির আশ্রয় নেয়। .... রাক্ষসেরা বিতাড়িত হয়। "

    তাহলে দেখা যাচ্ছে দেবতারা আদৌ ধর্মযুদ্ধে বিশ্বাস করতেন না, মারাও যেতেন। আর উৎকোচের ইতিহাসটা বৈদিক যুগ পর্যন্ত্য পিছিয়ে দেওয়া যায়।
  • dd | 122.167.29.252 | ০২ মে ২০০৮ ২২:২১395843
  • ২য় কান্ড , ৫ম প্রপাঠক।
    "ইন্দ্র বৃত্রবধ করে অসুরদের কাছে অপরাধী মনে করে পলায়ন করেছিলো"। তখন দেবতারা খুঁজে পেতে ইন্দ্রকে ফিরিয়ে আনলেন। শুরু হলো সান্নায্য যাগ। তখন "ব্রহ্মবাদিগন জিজ্ঞাশা করলেন সান্নায্য যাগের দেবতা কে হবেন ? তাতে কেউ কেউ বলল - বিশ্বদেব। অন্যে বলল ভীত অন্যদেশগত ইন্দ্রকে ভয় নিবারনের জন্য এনে দেবগন মিলিত হয়েছেন, অতএব ইন্দ্র সান্নায্য যাগের দেবতা - এ বুদ্ধিমানের অভিমত।"

    এই বিশ্বদেবতাই কি বিশ্বরূপ?

    ২য় কান্ড, ৫ম প্রপাঠক।
    "ত্বষ্টার পুত্র বিশ্বরূপ ছিলো দেবতাদের পুরোহিত ও অসুরদের ভাগিনেয়। তার ছিল তিনটি মাথা, এক মুখ দিয়ে সোমপান, এক মুখ দিয়ে সুরাপান ও অপর মুখ দিয়ে অন্ন গ্রহন করত। সে প্রত্যক্ষ ভাগে হবির ভাগ দেবতাদের ও পরোক্ষভাবে তা অসুরদের দিতে বলত। লোকে প্রত্যক্ষ অপেক্ষা পরোক্ষে গোপন কথায় বেশী বিশ্বাস করে। এ জন্যে ইন্দ্র তা জেনে ভয় পেল - এতে রাষ্ট্রে বিপর্য্যয় দেখা দেবে।" এরপর ইন্দ্র বিশ্বরুপের মাথা গুলি কেটে ফেলেন।

    কিন্তু বোঝা যাচ্ছে দেবতারা এখন মানুষের মতনই দোষে গুনে ব্যক্তিত্ব।

    দেব আর অসুরের মধ্যে শুধু ই যুদ্ধ হতো? না, সাময়িক শান্তি ও ছিলো। সেখানে সন্ধি প্রস্তাব। দেবতাদের দুত ছিলেন অগ্নি, অসুরদের ছিলেন কবিপুত্র উশনা। "তারা দুজন প্রজাপতির কাছে গিয়ে জিজ্ঞাশা করলেন - আমাদের মধ্যে সন্ধি বিগ্রহাদি কার্য্যে কার দৌত্য উপযুক্ত বলে বিবেচনা কর। তখন প্রজাপতি অগ্নিকে দুত রূপে বরণ করেছিলো। তাতে দেবগনের জয় ও অসুরদের পরাজয় ঘটে।"

  • dd | 122.167.30.139 | ০২ মে ২০০৮ ২৩:৫২395844
  • উপনিষদের মূল সুর দর্শনের। কিন্তু দেব ও অসুরদের নিয়ে "ট্রিভিয়া" কিছু কম নেই।

    ছান্দোগ্য ও বৃহাদারণ্যক - এই দুই উপনিষদেই আছে দেবতা ও অসুর, উভয়েই প্রজাপতির সন্তান। বৃ.উ তে আরো আছে, অসুরেরাই জেষ্ঠ্য ও দেবতারা কনিষ্ঠ সন্তান।

    ছা. উ তে ( সপ্তম খন্ডে) এক উপাখ্যানের মাধ্যমের দেবতা ও অসুরদের এক প্রতীকি প্রতিযোগিতার পর ভাষ্যকার বলছেন " এইজন্য আজও দানহীন ও যজ্ঞহীন ব্যাক্তিকে অসুর বলা হয়। তাহারা গন্ধমালা, বস্ত্র ও অলংকার দ্বারা মৃত ব্যক্তিকে সাজায়। কারন তাহারা মনে করে যে ঐ ভাবেই পরলোক জয় করিবে।"
  • N | 131.95.121.107 | ০৩ মে ২০০৮ ০০:৪৫395845
  • প্রাচীন মিশরীয় ফ্যারাও ট্যারাও রা তাইলে কি অসুরগোত্রে পড়ে যাবে? তারা তো শবদেহকে গন্ধপ্রলেপ টলেপ দিয়ে মমি করে ফেলে শেষে প্রচুর সোনাদানা ইত্যাদি দিয়ে সমাধি দিতো?

  • Blank | 59.93.197.150 | ০৩ মে ২০০৮ ০১:৩০395846
  • এই ব্যপারটা কিন্তু বেশ ইন্টারেস্টিং। আর্য দের ছিল মুলত দুটো বড় গোষ্ঠী। নর্ডিক আর আলপাইন। আলপাইন রা কিন্তু কৃষি ভিত্তিক জীবন বেছে নিয়েছিল। তাই এদের আরাধ্য দেবতারা ছিল সামাজিক। এই দেবতা দেরই এরা 'অসুর' বলতো। আর নর্ডিক রা ছিল যাযাবর, প্রকৃতি নির্ভর। এরা তাই মুলত প্রকৃতি পুজা করতো, আর এরা এদের দেবতাদের বলতো 'দেব'।
    যেহেতু আলপাইন আর নর্ডিক রা একই জায়গা থেকে এসেছিল, তাই বেদের প্রথম দিকে অসুর আর দেব মোটামুটি সমার্থক। অসুর শব্দের অর্থ প্রানময়, আর দেব হলো দীপ্তিমান।
    এখন প্রাচীন যেকোনো সভ্যতা, যেখানে সমাজ গড়া শুরু হয়েছে, সেখানকার সব জায়গাতেই কিন্তু মৃতের সাথে গয়না, বা অন্যান্য জিনিস পত্র দেওয়া টা প্রথা। তো আলপাইন গোষ্ঠী যে ঐ ভাবে শব সংস্কার করবে তা বলাই বাহুল্য। পরে যখন নর্ডিক রা পুরো আলাদা হতে থাকলো, তখন অসুর কথাটার সাথে খারাপ জিনিস জুড়তে লাগলো। আর আলপাইন রীতিনীতি গুলো খারাপের প্রতীক হয়ে দাড়াতে লাগলো।
  • dd | 122.167.25.9 | ০৩ মে ২০০৮ ২১:৫০395847
  • উপনিষদ মূলত: আখ্যানধর্মী নয় তবে যেটি খুব কনসিস্টেন্ট সেটা হচ্ছে ব্রহ্মবাদীদের চোখে দেবতাদের (ও যজমানদের) অবজ্ঞা।
    " এই জগতে দেবতাগনই সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী। তাঁহারাই সমস্ত প্রাকৃতিক শক্তির প্রভু ও পরিচালক। কিন্তু দেবতাদের নিজস্ব কোনো শক্তি নাই। ব্রহ্মের শক্তিতেই তাহারা শক্তিমান।" (কেন। ৪। ২৮)
    এমন কি "যাহা পড়িলে ব্রহ্মজ্ঞানী হওয়া যায় না" তার মধ্যে চতুর্বেদের সংহিতা অংশও উল্লিখিত (মুন্ডক। ১। ১। ৫)

    পুরুত মশাইরাও বাদ যান নি।

    "যে অষ্টাদশ ব্যাক্তিকে আশ্রয় কর‌্য নিকৃষ্ট কর্ম (যজ্ঞাদি)বিহিত হইয়াছে সেই যজ্ঞ সম্পাদক অষ্টাদশ ব্যাক্তিই (ষোলোজন ঋত্তিক,ও সস্ত্রীক পুরোহিত) বিনাশী এবং অনিত্য। ... অতএব যে সকল মূর্খলোকেরা এই কর্মকে শ্রেয়োলাভের উপায় বলিয়া সমাদর করে তাহারা... জরামৃত্যু প্রাপ্ত হয়। (মুন্ডক। ১। ২। ১৬)
  • dd | 122.167.25.9 | ০৩ মে ২০০৮ ২২:০২395848
  • ছন্দোগ্য উপনিষদের দ্বাদশ খন্ডে আছে এক উপাখ্যান। গ্লাব নামের ঋষি পাহাড় চুড়োয় উঠে দেখেন একটি সাদা কুকুর, তাকে ঘিরে আরো কুকুর।
    "সামগায়ীদের মতন হিংকার উচ্চারন করে তারা গান ধরলো , ওম। আমরা ভাত খাবো। জল খাবো। দেবতা বরুণ প্রজাপতি সবিতা এখানে অন্ন নিয়ে আসুন। অন্নপতি এখানে অন্ন নিয়ে আসুন। অন্নপতি এখানে অন্ন নিয়ে আসুন। ওম।

    ভাষ্যকারদের কান লাল হয়ে গেছে এই অসমাপ্ত গল্পটির গুরু গম্ভীর ব্যাখ্যা করতে। ঋগ্বেদের ৯। ১১২ সূক্তেও এই ধরনের parody আছে।
  • dri | 75.3.201.43 | ০৩ মে ২০০৮ ২২:১৮395849
  • ডিডিদার বেদের ইন্টারপ্রিটেশান শুনতে খুব ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে এক্ষুনি পড়ি। আরো অন্য লোকের ইন্টারপ্রিটেশান শুনি। ডিডিদা আপনি একটা বেদ মেড ইজি লেখার কথা ভাবতে পারেন। সিরিয়াসলি।
  • dd | 122.167.25.9 | ০৩ মে ২০০৮ ২২:২৪395850
  • তবে উপনিষদে দেবতাদের কোন চোখে দেখা হতো তার শেষ কথা অবশ্যই বৃহদারণ্যক উপনিষদে। ১২। ৪। ৪৭

    পরিষ্কার লেখা আছে দেবতারা চান না মানুষ ব্রহ্মজ্ঞানী হোক। মানুষের কাছে যেমন পালিত পশু , দেবতাদের কাছে তেমনই তার ভক্ত, উপাসকেরা।

    "যেমন বহু পশু মানুষের সেবা করে , তেমন এক এক ব্যাক্তি দেবতাদের সেবা করিয়া থাকে। একটি পশু গেলেই মানুষের দু:খ হয়,বহু পশু চলিয়া গেলে তাহার কত বেশী দু:খ হইবে। এই জন্য মনুষ ব্রহ্মতঙ্কÄ লাভ করে ইহা দেবতাদের ইচ্ছা নয়।"
  • Bratin | 66.228.83.75 | ১০ মে ২০০৮ ০১:৩৪395851
  • এই thread টা আগে দেখিনি। দীপ্তেন দা অসাধারণ লেখা । আমার ছোট বেলা থেকে দেবতা অসুর এই সব পৌরানিক গল্প খুব ভলো লাগে । আপ নার লেখা পড়ে খুব ভালো লাগ ল । আন্তরিক ধন্যবাদ নেবেন।

    ব্রতীন
  • nyara | 64.105.168.210 | ১৩ মে ২০০৮ ১০:২৬395853
  • ডিডিদাদা, অতুল সুর মশাই 'বাঙলার সামাজিক ইতিহাস'বইতে দেব আর অসুরের যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন (নর্ডিক, আলপাইন - ব্ল্যাংক ওপরে যে লিখেছে, সেই লাইনে) সেটা কি মোটমুটি চালু ও গ্রাহ্য?
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন