এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • পায়ের তলায় সর্ষে ৯ : রাজস্থান

    Samik
    অন্যান্য | ১৩ অক্টোবর ২০০৮ | ৪৮৫৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • siki | 203.122.26.2 | ১৩ অক্টোবর ২০০৮ ১৪:৪২406671
  • রাজস্থান ট্রিপ মারবেন? সামনের লম্বা ছুটিতে? ট্যুরিস্ট গ্যাঁড়ার কাছ থেকে আঁখো দেখি হাল হকিকত জেনে নিন, আর দুগ্গা দুগ্গা বলে বেরিয়ে পড়ুন।

    হুঁ, বেরিয়ে পড়েইছিলাম দুগ্গাপুজোর ঠিক তিনদিন আগে। জয়পুর দিল্লির পাশের পাড়া। বাঙালি যত বছরই দিল্লিতে থাকুক, সে দিল্লিওয়ালা হতে পারে না এক বছরে। ফলে, বছর দুয়েক আগে যখন জয়পুর বেড়াতে গেছিলাম, টিপিকাল ট্যুরিস্টের মত কেবল কটা কেল্লা আছে আর কটা প্যালেস আছে তার খতিয়ানই নিয়ে গেছিলাম। জয়পুর যে শপিংয়েরও স্বর্গরাজ্য, সেটা ওখানে গিয়ে বুঝেছিলাম, কিন্তু তখন আর কিছু করার ছিল না।

    তাই এবারের ট্রিপ শুরু করার আগে গুগল থেকে প্রচুর পড়াশোনা করে নিয়েছিলাম, শুধু কেল্লার ব্যাপারে নয়, অন্যান্য ব্যাপারেও। তাতেও কি আর ঝামেলা আর ঠকার হাত থেকে নিস্তার আছে? তাই নিজেরা যে যে জায়গায় ঝাড় খেয়েছি, মুগ্‌ধ হয়েছি, সমস্ত ডিটেলে লিখে রাখছি, যাতে অনুসারীরা স্মুদলি ঘুরে বেড়াতে পারেন।

    রাজস্থান জুড়ে সাদা চামড়ার ট্যুরিস্টদের ভিড়। এঁয়ারা টুপি পরে হাতে ক্যামেরা নিয়ে এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত চষে বেড়ান, আর গেরামে ফিরে ল্যাপটপ খুলে ট্র্যাভেলগ ল্যাখেন। জয়সলমের জোধপুর দিয়ে সার্চ মারলেই এ রকম প্রচুর ট্র্যাভেলগ পাবেন, তার বেশির ভাগকেই রিলাই করার একেবারে দরকার নেই। কটা থাম্ব রুল শুধু বাঙালি হিসেবে মনে রাখবেন, তা হলেই হবে।

    এক। মার্কেটে প্রচুর হোটেল গেস্ট হাউসের রেফারেন্স পাবেন "রেকমেন্ডেড বাই লোনলি প্ল্যানেট' বলে। লোনলি প্ল্যানেটকে দোষ দিচ্ছি না, আসলে যারা এই রেটিংগুলো দেন, তাঁদের বেশির ভাগেরই চামড়া সাদা, আর সাদা চামড়ারা আজও রাজস্থানের যে কোনও হোটেল বা গেস্ট হাউসে রাজার খাতির পেয়ে থাকেন, ডলারের কল্যাণে, বেস্ট রুম তথা বেস্ট রুম সার্ভিস। একই হোটেল / গেস্ট হাউসে থেকেও আপনি হয় তো অত আপ্যায়ন পাবেন না, কারণ আপনার চামড়া সাদা নয়। ফলে লোনলি প্ল্যানেট দেখে লালা টপকায়িত হয়ে আপনি যদি হোটেল বুক করে তাদের সার্ভিস / খাতির যত্নে হতাশ হন, জানবেন, সে আপনার চামড়ার রংয়ের দোষ। ফলে, ও সব লোনলি প্ল্যানেট ফ্যানেট দেখে হোটেলের প্রায়োরিটি বাছবেন না, বরং ট্র্যাভেলগুরু টুরু অনেক বেশি রিলায়েব্‌ল। আর হ্যাঁ, আপনি যদি এনারাই হন, পকেটে ডলার থাকে, তা হলে যে কোনও ভালো জায়গায় ভালো রুম বুকিং করে ফেলতে পারেন। আদারওয়াইজ, জোধপুরের সমস্ত খাট বিছানা খাটিয়া রেকমেন্ডেড বাই লোনলি প্ল্যানেট। খাটিয়ার সামনে ষাঁড়ের হাগু পড়ে থাকলেও।

    দুই। আপনার যদি ফোটো তোলার সখ টখ থাকে, রাজস্থান সে সবের জন্য ঘ্যামা জায়গা। নিজের সবচেয়ে পছন্দের ক্যামেরাটি নিয়ে যাবেন, ট্রাইপড নিয়ে যাবেন। আর মনে রাখবেন, ক্যামেরার দাম আপনার জীবনের চেয়ে বেশি। রাজস্থানের সমস্ত ট্যুরিস্ট সাইটে আপনার এϾট্র ফি হয় তো ফ্রি, দশ টাকা, পনেরো টাকা, বড়জোর পঞ্চাশ টাকা। কিন্তু ক্যামেরার ফি শুরু পঞ্চাশ টাকা থেকে শুরু। দুশো টাকায় শেষ। স্টিল ক্যামেরার আলাদা, মুভি ক্যামেরার আলাদা। সুতরাং ক্যামেরার যত্ন বেশি নেবেন, নিজের থেকে।

    তিন। হোটেলকে কখনও বলবেন না কোনও সাইটসিয়িং ট্রিপ অ্যারেঞ্জ করতে। নিজে হোটেলের আশেপাশে ঘুরুন, প্রচুর এজেন্সি ঝাঁপ খুলে বসে আছে, দু চার জায়গায় দরদস্তুর করুন, তারপর পকেটে যেমন পোষায়, সেই বুঝে বুকিং করুন, হোটেলের বুকিংয়ের থেকে অনেক শস্তা হবে।

    এইবার তাহলে হুইশল বাজিয়ে সবুজ পতাকা নাড়িয়ে দিই, যাত্রা শুরু হোক।
  • siki | 203.122.26.2 | ১৩ অক্টোবর ২০০৮ ১৭:১১406682
  • দিল্লি থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ছাড়ে জয়সলমের ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস। ভোর সাড়ে পাঁচটায় জোধপুর, আর বেলা বারোটা নাগাদ জয়সলমের। জোধপুরের পরেই হঠাৎ হঠাৎ বালিয়াড়ি কি ছোট্ট কেল্লার রুইন্‌স রেললাইনের একেবারে পাশে এসে উঁকি দিয়ে যাবে, যদি আপনি দিল্লিবাসী না হন, মানে মোটামুটি নিয়মিত উট দেখার ওভ্যেস না থাকলে এইবেলা দেখে ফেলুন চলন্ত ট্রেন থেকে। ময়ূরও দেখবেন প্রচুর। ন্যাশনাল বার্ড!

    এই কত্তে কত্তেই এসে পড়বে রামদেওড়া। মনে পড়ছে তো সোনার কেল্লা? সেই যেখান থেকে ফেলুদা জয়সলমের যাবার ট্রেন ধরেছিল? সেই রামদেওড়া। দিনের আলোয় আর পাঁচটা স্টেশন থেকে আলাদা করে বোঝার কিছু নেই, তবে অনেক পরে ফিরে আসার পথে এক রাজস্থানীর মুখে শুনেছিলাম, ওখানে রামদেওজীর মন্দির আছে, আর সেখানে নাকি এক লাইব্রেরি আছে, সেটা নাকি এশিয়ার বৃহত্তম লাইব্রেরি। সত্যিমিথ্যে জানি না, ঢপও দিয়ে থাকতে পারে, আপনি যেন এই শুনেই ফস্‌ করে ট্রেন থেকে নেমে পড়বেন না। আপনার রিজার্ভেশন জয়সলমের পর্যন্ত।

    পরের স্টেশন পোকরান। বাজারী ভাষায় পোখরান, সেই যেখানে বুদ্ধ আর অটলদাদু হেসেছিলেন। খালি চোখে আর্মির ট্রাক ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না। চতুর্দিকে কেবল ফনিমনসা আর ক্যাকটাসের আধিক্য বাড়ছে ... বাড়ছে ... এমনি সময়ে দুক্কুর বেলায় ঝকাস করে ট্রেন এসে থামল জয়সলমের স্টেশনে।

    আ-হা! কী স্টেশন। রাজকীয় জিনিস। সেই সোনালি পাথর কুঁদে বানানো স্টেশন। শরতের দুপুরের রোদে ঝকমক করছে। ফোটো তুলে রাখার মতন সুন্দর। তবে, ফটো তোলার এই তো সবে শুরু। ব্যাটারি যেন সবসময়ে চার্জ্‌ড থাকে। তবে সত্যজিৎ রায় একটা বড় ঢপ দিয়েছিলেন সিনেমায়, ট্রেন থেকে মোট্টেই সোনার কেল্লা দেখা যায় না।

    হোটেল নয়, গেস্ট হাউস নিয়েছিলাম কেল্লার ভেতরেই। একটা হাভেলিকে গেস্ট হাউসে কনভার্ট করা হয়েছে। সরু গলি, ভেতরে মানুষের থেকে ষাঁড় আর গরুই বেশি, সেই গলির শেষে গেস্ট হাউস। চারপাশে আরও শয়ে শয়ে গেস্ট হাউস। ষাঁড় ডিঙিয়ে গোবর টপকে এসে তো উঠলাম সেখানে। রুমটা ছবির তুলনায় বেশ রদ্দিই দিয়েছিল, বাথরুমও তথৈবচ, কেবল পশ্চিমদিকে একটা সুন্দর জানলা দিয়েছিল, সেখানে বসে আমার পাতি ক্যামেরায় যা ফাটাফাটি সূর্যাস্তের ছবি তুলেছিলাম না, পিকাসায় গিয়ে দেখে আসুন।

    কেল্লার হিস্টোরি শোনাব না, ও গুগুল করলেই পেয়ে যাবেন। ভাটি রাজাদের কেল্লা ছিল মুঘলদের আটকানোর জন্য। চারটে দরজা পেরিয়ে কেল্লায় ঢোকার রাস্তা। প্রথমটা মেন এϾট্র, অক্ষয়প্রোল, মহারাবল অক্ষয় সিংহ বানিয়েছিলেন (রাবলের ব-টা অন্তস্থ্য ব, জয়সলমেরের রাজাদের রাণা বলে না, বলে মহারাবল, মানে মহাবলশালী)। এর পর সূরজপ্রোল, গণেশপ্রোল, লাস্টে দশহরাপ্রোল। একটা দরজা থেকে পরের দরজাটা দেখা যায় না, অথচ কেল্লার ভেতর থেকে সবকটা দরজাই দেখা যায় একসাথে। ফলে শত্রু বুঝতেও পারত না সামনে কতগুলো দরজা আছে, কোথায় আছে, কিন্তু রাজার আর্মি দিব্যি দেখত আর বন্দুক কামান পাথরের গোলা গরম তেল ইত্যাদি দিয়ে শত্রুনিধন করত।

    কী দেখবেন: প্রথমেই বলে রাখি, দশহরা-পোল পেরোতেই যে ছোট্ট চাতালটা পাবেন, সেই চাতালের ঐ কোণায় দেখুন ডিরেক্ট ট্র্যাভেল সার্ভিস এজেন্সি নামে একটা দোকান। ওদের কাছ থেকে কোনও সাফারি বা গাইড বুক করবেন না। বরং দশহরা পোল থেকে একটু পিছিয়ে আসুন, চার পা মত। আরও একটা দুটো ট্র্যাভেল এজেন্সি দেখতে পাবেন, ওদের থেকে বুক করুন। আর কেল্লার বাইরে তো অজস্র ট্যুর ট্র্যাভেল অপারেটর, পকেট বুঝে দরদস্তুর করুন, আর পকেটে ডলার থাকলে যা ইচ্ছে তাই করুন, আমাকে জিগ্যেস করতে আসবেন না।

    কেল্লার ভেতরে আছে চামুন্ডা মন্দির, রাজার বাড়ি, রানীর বাড়ি, আর জৈন মন্দির। প্রান ভরে দেখুন, নিজের চোখে আর ক্যামেরার চোখে, এই ফাঁকে জেনে রাখুন, প্রায় ৮০০ সাল আগে তৈরি এই অনুপম জৈন মন্দিরে আছে ভগবান তীর্থঙ্করের ৬৬০০ মূর্তি। সাতটা মন্দির মোট। এই মন্দিরেরই হুবহু নকল, অবশ্যই অনেক ইমপ্রোভাইজ্‌ড, হল মাউন্ট আবুর দিলওয়াড়া জৈন টেম্পল। কেবল এই জয়সলমেরের মন্দির সোনালি পাথরের তৈরি, আর মাউন্ট আবুর মন্দির তৈরি শ্বেতপাথরে। ছবি তুলে নিন, যত ডিটেইল্‌সে পারেন, কারণ দিলওয়াড়া মন্দিরে ক্যামেরা নিয়ে ঢোকা নিষিদ্ধ। সে আপনার পকেটে হাজার লাখ ডলার থাকলেও আপনি ক্যামেরা নিয়ে ঢুকতে পারবেন না। ব্যাপারটা জানার পরে মন্দিরের দরজায় আমার ভ্যাঁ করে কাঁদার জোগাড় হয়েছিল, কিন্তু কী করা যাবে! যাক, সে মন্দিরের খবর পরে বলব, এখন জয়সলমের শুনুন।

    সোনার কেল্লা, "সোনার কেল্লা" নামেই বিখ্যাত। সত্যজিৎ রায়ের সিনেমাটা তৈরি হবার আগে জয়সলমের তেমন হট ট্যুরিস্ট স্পট ছিল না। ঐ সিনেমাটাই বিখ্যাত করে দিয়েছে জয়সলমেরকে। আপনি ঘ্যানঘ্যান করলে গাইড হয়তো আপনাকে "মুকুলবাড়ি' দেখিয়েও দেবে, কিন্তু আমরা দেখি নি, শুনলাম, সেটা পুরোই রুইন্‌সে পরিণত হয়েছে।

    কেল্লার বাইরে তিনপিস হাভেলি আছে। তারা একত্রে সোনার কেল্লাকে দুয়ো দিতে পারে। দেখেছি আর কেবল একটা কথাই মনে হয়েছে, কী করে বানিয়েছিল! কোনও মানুষের পক্ষে এটা বানানো অসম্ভব! এত্তো সুন্দর, এত্তো পিক্‌চারেস্ক।

    সেলিম সিং হাভেলী, আর পাত্‌য়োঁ কি হাভেলী একেবারে গায়ে গায়ে লাগানো। ভেতরে ঢোকার দরকার নেই, ভেতরে সরকারি মিউজিয়াম আছে। ছবি তুলুন বাইরের চাতাল থেকে। প্রাণ ভরে যাবে। চাতালের ওপর এক বৃদ্ধ সারেঙ্গী নিয়ে দারুণ সুরেলা গলায় গাইছেন রাজস্থানী লোকগীতি: মুমল আর ঝুমলের প্রেমকাহিনি। তাঁর গান রেকর্ড করুন আপনার ক্যামকোর্ডারে, লাস্টে কিছু সম্মানদক্ষিণা তাঁকে দিলে তিনি সসম্মানে তা গ্রহণ করবেন, আর আপনি গাইডের কাছ থেকে জানতে পারবেন ইনি রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পাওয়া লোকসঙ্গীতশিল্পী, বার কয়েক ইওরোপ আমেরিকা ঘুরে এসেছেন, কিন্তু সবচেয়ে পছন্দ করেন এই হাভেলীর সামনের চাতালে বসে গান গেয়ে পর্যটকদের আনন্দ দিতে।

    ওখান থেকে এই পাঁচশো মিটার দূরে নাথমল কি হাভেলি। এই তিনটে হাভেলি দেখে একটা অটো নিয়ে আপনি চলে যান গদিসার লেক।
  • siki | 203.122.26.2 | ১৩ অক্টোবর ২০০৮ ১৭:৩৯406693
  • আরে দাঁড়ান দাঁড়ান! জয়সলমের এসেছেন, সোনার পাথর বাটি কিনবেন না? ঐ বৃদ্ধ যেখানে বসে গান গাইছেন, পাতয়োঁ কি হাভেলির সামনের চাতালে বসে, তার ঠিক পেছনেই দেখুন একটা দোকান। দোকানের মালিক মিস্টার পারিখ জন্ম থেকে বড় হওয়া সমস্তই মুর্শিদাবাদে, বউও বাঙালি। নির্দ্বিধায় বাংলায় কথা বলুন। সোনার পাথরবাটি ছাড়াও জেম্‌সের সম্ভার দেখুন, জুয়েলারি দেখুন। সোনালি পাথরের তৈরি ঘর সাজাবার থেকে ডেলি ইউজের সমস্ত উপকরণ ওঁর দোকানে পাবেন। বন্ধুবান্ধব কেউ জয়সলমের গেলে আমায় খবর দেবেন, আমি ওঁর ঠিকানা ফোন্নং দিয়ে দেব, যাবার আগে ওঁকে রিকোয়েস্ট করলে উনি আপনার জন্য শস্তায় হোটেল বুক টুক করে দিতে পারেন। খুব মাই ডিয়ার লোক।

    গডিসার লেক। স্টেশনের কাছে। জয়সলমেরের একমাত্র লেক। জল আছে, জলে প্যাডেল বোটও চলে। আধ ঘন্টা পঞ্চাশ টাকা। এখান থেকেই আগে জয়সলমেরের জলের সাপ্লাই হত, এখন অন্য সব যোজনা টোজনা হয়েছে। বেশ সুন্দর লেক। সন্ধ্যেবেলায় এখানে পুতুল নাচ শো হয় রাজস্থানী। লেকের ইতিহাস গুগলে পড়ে নিন। ও সব আমি আর লিখছি না।

    কী খাবেন: রাজস্থান মূলত ভেজ এলাকা। চিকেন টিকেন পাওয়া টাফ। যদিও ট্যুরিস্ট বলতে ৬০ পার্সেন্ট ফরেনার, ৩০ পার্সেন্ট বাঙালি আর বাকি অন্য সব প্রভিন্সের লোক। কিন্তু খাবার দাবারের দাম অত্যন্ত বেশি। কেল্লার ভেতরে জৈন মন্দিরের পেছনেই একটা বাঙালি রেস্টুরেন্ট আছে, ছাদের ওপর শামিয়ানা বিছিয়ে খাওয়ায়, ওখানে বাঙালি খাবার পাবেন। তবে মূলত জয়সলমেরে খাবার দাবারের দাম বেশ বেশি। পুরো রাজস্থানেই। কেল্লার পেছনে নিচের দিকে আছে ডেজার্ট বয়েজ' ঢানী। অটোকে বল্লেই ওখানে নিয়ে যাবে। খেয়ে আসতে পারেন। নয় তো কেল্লার সামনেই প্রচুর রেস্টুরেন্ট।

    প্রচন্ড শুকনো জায়গা। প্রতি মুহুর্তে জলের বোতল ক্যারি করুন, নইলে ঘুরতে পারবেন না। হোটেলের কথা জানি না, গেস্ট হাউসে ঘরে জলও দেয় না। চাইলে দেয় অবশ্য। কিন্তু প্রতি দু ঘন্টায় চাইতেও তো খারাপ লাগে।

    পরের দিনের জন্য বুক করুন একটা গাড়ি। স্যান্ড ডিউন্‌স যাবার জন্য। ভালো করে জেনে নিন, গাড়িটা কেবল আপনাদের জন্যেই কিনা, নাকি অন্য ট্যুরিস্টের সাথে শেয়ারিং। যদি বাঙালি সহযাত্রী পড়েছে তো আপনার বেড়ানোর অর্ধেক আনন্দ চৌপাট হয়ে যাবে। এক্সক্লুসিভলি নিজেদের জন্য গাড়ি নিন, আর বলবেন অতি অবশ্যই যেন লোদুর্ভা নিয়ে যায়। লোদুর্ভা ভাটি রাজাদের পুরনো রাজধানী, সোনার কেল্লা তৈরি হবার আগে, সেখানকার কিছু জৈন মন্দির তাক লাগানো সুন্দর। আমাদের কপাল খারাপ, আমাদের যাওয়া হয় নি, ঐ যে বললাম, কেল্লার ভেতরের চাতালে ডিরেক্ট বুকিং ট্র্যাভেল্‌স, গুছিয়ে মুরগি করেছিল। খবরদার ওদের থেকে গাড়ি বা গাইড নেবেন না।

    লোদুর্ভা দেখে সূর্যাস্তের ঠিক আগে পৌঁছে যান শম গ্রামে। থর মরুভূমি এখান থেকেই মোটামুটি শুরু। লাইন দিয়ে উটের দল বসে প্যাসেঞ্জারের অপেক্ষায়। আপনার যদি বাতের ব্যথা থাকে, পিঠে স্পন্ডেলাইটিস থাকে, কোই বাত নহি, উটগাড়ি আছে, উটের থেকে তাড়াতাড়ি পৌঁছে দেবে বালিয়াড়িতে।
  • Blank | 203.99.212.224 | ১৩ অক্টোবর ২০০৮ ১৭:৫৮406704
  • লজিক টা কেমন ঘাঁটা,
    'আপনার যদি বাতের ব্যথা থাকে'/'কৈ বাত নেহি'
  • siki | 203.122.26.2 | ১৩ অক্টোবর ২০০৮ ১৮:০৬406714
  • বালিয়াড়িতে পৌঁছে আপনি দেখবেন মাছের বাজার। ট্যুরিস্টে ট্যুরিস্টে ছয়লাপ। আর একগুচ্ছ ন্যাড়ার দল। তার মধ্যে থেকেই আপনাকে সূর্যাস্ত দেখতে হবে।

    ন্যাড়া হল একদল নাছোড়বান্দা লোকাল রাজস্থানী। তারা কেউ আপনাকে গান শোনাবে, কেউ আপনার মেয়ে বউয়ের হাত ধরে রাজস্থানী নাচগান দেখাবে ক্যানেস্তারা ফাটানো গলায়। শুনবো না বললেও নিস্তার নেই, ঘ্যানঘ্যানঘ্যানঘ্যানঘ্যানঘ্যান ... শেষমেশ একটা পার্টিকে এন্টারটেইন করতেই হবে, পকেট থেকে পঞ্চাশ একশো বের করতেই হবে, তার সাথে থার্মোকলের বাক্সো নিয়ে "সাব ঠান্ডা পানি কোল-ডিরিংস?' যদি "না' বলেন, তা হলে পরের প্রশ্ন, "বাদমে'? এই বাদমে-র রহস্যটা আমি এখনও ভেদ করে উঠতে পারে নি। ঐ অসংখ্য ট্যুরিস্টের মধ্যে থেকে ওরা কী করে কাউকে বাদমে-ওয়ালা কাস্টমার হিসেবে চিনে রাখে, কে জানে!

    এদের হাত থেকে বাঁচবার একটাই উপায়, ভিড়ে মিশে যান। একলা আলাদা বালিতে বসার চেষ্টা করলেই এরা একের পর এক এসে ছেঁকে ধরবে। পুরো এঁটুলির মত। অত্যন্ত বিরক্তিকর।

    সূর্যাস্ত দেখেছেন তো? মরুভূমিতে? হ্যাপি? সোজা বাড়ি ফিরে যান, মানে হোটেলে। চাইলে রাতে এন্টারটেইনমেন্টেরও ব্যবস্থা আছে, বালিয়াড়ির ধারে খাটানো অজস্র ক্যাম্পের একটিতে আপনাকে নিয়ে যাবে, কষা স্বাদের জল আর চিপ্‌স দিয়ে আপ্যায়ন করবে, আর তারপর লোকাল রাজস্থানী ফোক সিঙ্গার আর নাচিয়েদের দিয়ে এন্টারটেইনমেন্টের আপ্রাণ প্রচেষ্টা। আর রাতে অখাইদ্য ডিনার। টোটাল ঝুল মাল। ওর চেয়ে জয়পুরের চোখিধানী অনেক অনেক ভালো।

    এতেও যদি আপনি এন্টারটেনিত না হন, তা হলে রাতে আপনার জন্য ক্যাম্প করে মরুভূমিতে শোওয়ানোর ব্যব্‌সথাও আছে। ক্যাম্প করে।

    দাদা, সোজা কথা বলব? অ্যাডভেঞ্চার করার অনেক জায়গা আছে, হরিদ্বারে যান, মানালিতে যান, কেরালায় যান, কিন্তু এই সব ক্যাম্পে রাত কাটায়েন না। কী মশা, টয়লেটের সুবন্দোবস্ত নেই, জল মুখে দেওয়া যাচ্ছে না। পরের ট্রিপগুলোর জন্য যদি শরীর সুস্থ রাখতে চান, কী প্রবলেম? আপনার হোটেলে তো রুম বুক করাই আছে, যান না তোফা ঘুমিয়ে রাত কাটান। সানসেট হয়ে গেলেই ফিরে যান, পারলে সেই রাতের ট্রেন ধরেই জোধপুর চলে যান। রাত ১১:১৫তে ট্রেন। জয়সলমেরে আর কিছু দেখার নেই।

    এ সেই ট্রেন, যার ফিরতিটা ধরে মন্দার বোস, ফেলুদা আর ডক্টর হাজরা জয়সলমের পৌঁছেছিলেন।

    কাল জোধপুর শোনাব। আজ বাড়ি যাই।
  • siki | 203.122.26.2 | ১৩ অক্টোবর ২০০৮ ১৮:০৮406715
  • :-))

    বাতোঁ বাতোঁ মে ...
  • shyamal | 64.47.121.98 | ১৩ অক্টোবর ২০০৮ ১৮:৫৮406716
  • খুব ভাল লাগছে শমীকের ভ্রমণ কাহিনী।
  • arjo | 168.26.215.54 | ১৩ অক্টোবর ২০০৮ ১৯:১৮406717
  • হ্যাঁ খাসা হচ্ছে।

    দুটি প্রশ্ন:

    ১। জোধপুর না যোধপুর

    ২। সোনার কেল্লায় যে ট্রেণ থেকেই সোনার কেল্লা দেখিয়েছিল সেটা কেং করে? সেটা কি অন্য কোনো কেল্লা যেটা ট্রেণ থেকে দেখা যায়?
  • Shuchismita | 98.228.118.141 | ১৪ অক্টোবর ২০০৮ ০৫:০৯406661
  • ট্রেন থেকে দেখেছিলাম তো সোনার কেল্লা। ক্লাস এইটে পড়ার সময় যখন রাজস্থান গেছিলাম মা-বাবার সাথে। নাকি সেটা অন্য কিছু! শমীক, তুমি সিওর ট্রেন থেকে দেখা যায় না? অনেকদিন অগের কথা। ভুল হতেও পারে। কেমন যেন আবছা মনে পড়ে ফেরার সময় যতক্ষন দেখা যায় কেল্লার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।

    চিতোর গেছিলে? চিতোরগড়ে এক বুড়োকে তার যন্ত্রে অদ্ভুত এক সুর তুলতে দেখেছিলাম। এখনও তার রেশ রয়ে গেছে। রাজস্থানের কথা ভাবলেই সেই বুড়োকে দেখতে পাই।

    আর মনে আসে বুঁদির কেল্লা। খুব কম টুরিস্ট যায় ওখানে। তাই পুরোনো গন্ধটা এখনো মুছে যায়নি গা থেকে। ওখানে বোধহয় গাড়ি যায়না। আমরা পুরোটা হেঁটেই ঘুরেছিলাম। বুনো জঙ্গল - ভাঙ্গা দেওয়াল - ছুঁচোর গন্ধ - অন্ধকার কুঠুরী - সব মিলিয়ে একদম অন্যরকম।

    লেখাটা খুব ভালো হচ্ছে। পরের কিস্তি শিগগির চাই।
  • siki | 203.122.26.2 | ১৪ অক্টোবর ২০০৮ ১০:২০406662
  • ফেলুদা এসেছিল রামদেওড়া থেকে জয়সলমের। ওটা জোধপুর জয়সলমের রুটে পড়ে। সেই রুটে সোনার কেল্লা দেখতে পাবার কোনও চান্স নেই। হ্যাঁ, জয়সলমেরেই রেললাইন টার্মিনেট হয়ে যায় নি। লাইন সোজা আরও এগিয়ে গেছে, কোনদিকে কে জানে। সেই লাইন ধরে ট্রেনে করে আর দেড় কিলোমিটার এগোলে সোনার কেল্লা ট্রেন থেকে দেখতে পাওয়া উচিৎ। কিন্তু রামদেওড়া টু জয়সলমেরের রাস্তায় সোনার কেল্লা দেখতে পাওয়া যায় না।

    মানে, সোজা বাংলায় রামদেওড়া থেকে যেদিকে জয়সলমের, সেদিকেই জয়সলমের স্টেশন থেকে আরও একটু এগোলে সোনার কেল্লা।

    আর আজ্জো, ওটা জোধপুর, যোধপুর নয়। দেবনাগরী লিপিতে "য' মানে বাংলার "য়'। ওটা হিন্দি / রাজস্থানীতেই "জোধপুর', "য়োধপুর' নয়।
  • siki | 203.122.26.2 | ১৪ অক্টোবর ২০০৮ ১০:২৫406663
  • আরেকটা ইন্টারেস্টিং জিনিস। জয়সলমের সিটির বিদ্যুতের জোগান দেয় অজস্র উইন্ডমিল। ঐ পরিবেশে না থার্মাল, না হাইড্রো পাওয়ার প্ল্যান্ট হবার সম্ভাবনা। কিন্তু মরুভূমি থেকে বয়ে আসা অপ্রতুল হাওয়া তো আছে। সেই উইন্ডমিলই জয়সলমেরের বিদ্যুতের চাহিদা মেটায়। এই বিদ্যুতের ভোল্টেজ খুব কম হয়। গেস্ট হাউসে আমার চার ব্যাটারির চার্জার চলছিলই না, চারতে ব্যাটারি চার্জ দেবার মত ক্ষমতা নেই প্লাগ পয়েন্টের। দুটো ব্যাটারি কমিয়ে দিতে চার্জ নিল। লাইট ফ্যান সব টিমটিম করে চলছে। মজার ব্যাপার দেখছিলাম, যখনই বাইরে হাওয়া দিচ্ছিল কেমন যেন ভোল্টেজ বেড়ে যাচ্ছিল, আবার যখন একেবারেই হাওয়া দিচ্ছিল না, দুটো ব্যাটারিও চার্জ হচ্ছিল না, লেড নিভে যাচ্ছিল।
  • siki | 203.122.26.2 | ১৪ অক্টোবর ২০০৮ ১১:১৭406664
  • http://www.mapsofindia.com/maps/rajasthan/railways/jaisalmer.htm এই লিংকে বলছে ট্রেন লাইন জয়সলমেরেই টার্মিনেট করছে। জানি না সত্যজিৎ রায় কী করে তুলেছিলেন। হতেই পারে সেট সাজিয়ে ডামি ট্রেন থেকে তুলেছিলেন।

    যাক। ভোর পাঁচটায় পৌঁছলাম জোধপুর স্টেশনে। বেশ বড়সড় স্ট্রাকচার্ড জংশন স্টেশন। জয়সলমেরের মত কুট্টি সুন্দরী রূপসী নয়।

    বাইরে বেরিয়ে একটা অটো নিয়ে নিন, অত্যন্ত শস্তায় আপনাকে নিয়ে পৌঁছে দেবে আপনার হোটেলে। দিল্লিতে থেকে থেকে আপনি হয় তো অটোওলাদের ভদ্র-মানুষ ভাবতেই ভুলে গেছেন। জোধপুর জয়সলমেরে ঘুরলে আপনার সে ধারণা পাল্টে যাবে। যে ডিসটেন্স আপনাকে অটোওলা কুড়ি টাকায় নিয়ে এল, সেটা আসতে দিল্লির অটো কিছু-না-হোক সত্তর টাকা চাইত। তাও ভোর পাঁচটার মত অড টাইমে। ঘুরঘুট্টি অন্ধকার। সূর্য উঠবে সেই সকাল সাড়ে ছটায় কি পৌনে সাতটায়।

    হোটেলে পৌঁছে একটু ফ্রেশ হয়ে নিন। সাড়ে আটটা কি নটা নাগাদ বেরিয়ে একটা চলন্ত অটো ধরুন। তিনশো টাকায় সে আপনাকে সিটি ট্যুর করিয়ে দেবে।

    কী দেখবেন: জোধপুরের ওপর একেবারে ঝুঁকে আছে এক ছোট পাহাড়, আর পাহাড়ের মাথা জুড়ে, মেহরানগড় ফোর্ট। প্রথমে যাবেন সেখানেই। ইতিহাস উইকিপিডিয়ায় ফ্রিতে পাওয়া যাচ্ছে, পড়ে নিন। আর ওখানে পৌঁছে একজন গাইড নেবেন। টিকিট কাটুন, নিজের, ক্যামেরার, আর লিফটের জন্য পারহেড পনেরো টাকা। হ্যাঁ, এই কেল্লা ভারতের একমাত্র কেল্লা যেখানে লিফট আছে। সোজা আপনাকে ওপরে নিয়ে যাবে, সেখান থেকে দেখতে দেখতে নামুন। পাথর কেটে এই লিফট বানাতে লেগেছিল পাঁচ বছর, কারণ পাথর ফাটানোর জন্য ডাইনামাইট ব্যবহার করা যায় নি। কেল্লার ক্ষতি হতে পারত। পুরো পাঁচতলা সমান উঁচু পাথর হাতে কাটা হয়েছিল।

    প্রথমদিকে আপনার মনে হবে, দূর, এ কোথায় এলাম! কোথায় জয়সলমেরের চোখ ধাঁধানো সোনালি কেল্লা আর হাভেলি, নয়নমনোহর সূক্ষ্ম কাজ দেওয়ালের গায়ে, ঝারোখার গায়ে। এখানে তো তেমন কিছুই দেখছি না। কিন্তু ধীরে ধীরে এই ঘর থেকে ঐ ঘর, এই তলা থেকে ঐ তলায় আপনি যখন ঘুরতে শুরু করবেন, মেহরাণগড় কেল্লা আস্তে আস্তে পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে আপনার সামনে এসে দাঁড়াবে, তার নিজের রূপ নিয়ে। সোনালি বালিপাথর নয়, এই কেল্লা বানানো লাল পাথর দিয়ে, যা জোধপুরের বৈশিষ্ট্য। হঠাৎ দেখলে কাঠের তৈরি মনে হতে পারে। দেখুন, দু-চোখ ভরে দেখুন। আর দেখুন, কেল্লা থেকে পুরনো নীল রঙের জোধপুর শহরকে।

    রাও জোধা যখন মন্দোর থেকে রাজধানী শিফট করলেন জোধপুরে আর মেহরানগড়ে বানালেন নিজের প্রাসাদ, অনেক ঘর ব্রাহ্মণকে তিনি জমি দিলেন পাহাড়ের নিচে, ঘর বসানোর জন্য। তারা ঘর বানাল, বাইরেটা রাঙিয়ে নিল নীল রঙে। ইন্ডিগো। পাহাড়ের মাথা থেকে এই নীল রঙের পুরনো শহর এখনও নয়নমনোহর।

    কেন নীল রঙ? রাজস্থানের মধ্যে সবচেয়ে গরম নাকি পড়ে জোধপুরেই। বাড়ির বাইরে নীল রঙ এই হিট শুষে নিত প্রভূত পরিমাণে, ফলে ঘর থাকত ঠান্ডা। আর নীল নাকি পোকামাকড়ও আটকায়। গরমের দেশ মানেই পোকামাকড়ের উপদ্রব। এইটাই বাড়ি নীল রঙে রাঙানোর একমাত্র কারণ ছিল।

    এই ফোর্টের ভেতরেই আছে চামুন্ডা দেবীর মন্দির, এই ৩০শে সেপ্টেম্বর নবরাত্রের দ্বিতীয়ার দিনে যেখানে স্ট্যাম্পিড হয়ে মারা গেছেন প্রায় দুশো লোক। বুকে প্রচুর ভক্তি না থাকলে ওদিকে যাবেন না। আমরা যেদিন গেলাম, সেদিন ছিল অষ্টমী। জাস্ট অকারণে প্রশস্ত পথকে ব্যারিকেড দিয়ে অপ্রশস্ত করে রাখা হয়েছে। আর যাওয়া-আসার ঐ একটাই রাস্তা। না দেখলে কোনও ক্ষতি নেই।

    কেল্লা থেকে বেরিয়ে এবার এগোন জশবন্ত থাড়ার দিকে। এটা রাওদের সমাধিক্ষেত্র। কেল্লা থেকে জাস্ট এক কিলোমিটার।
  • Blank | 203.99.212.224 | ১৪ অক্টোবর ২০০৮ ১১:২৯406665
  • সত্যজিতের শুটিং এর ডিটেলস আছে একেই কি বলে শুটিং বই টা তে। যদ্দুর মনে পরছে ঐ গাড়ি ট্রেন টা আলাদা করে চালানো হয়েছিল শুটিং এর জন্য।
  • Tim | 24.127.39.26 | ১৪ অক্টোবর ২০০৮ ১১:৩৭406666
  • একেই কি বলে না..... বইটার নাম ""একেই বলে শুটিং""।
  • Arijit | 61.95.144.123 | ১৪ অক্টোবর ২০০৮ ১১:৪৩406667
  • ভারি তো একটা শব্দ - সভ্যতার বদলে শুটিং - টিমি তাই নিয়ে বাওয়াল দিচ্ছে;-)
  • Tim | 24.127.39.26 | ১৪ অক্টোবর ২০০৮ ১১:৫৩406668
  • :-)
  • siki | 203.122.26.2 | ১৪ অক্টোবর ২০০৮ ১২:৩৩406669
  • লাল পাথর আর শ্বেতপাথরের কম্বিনেশনে তৈরি জশবন্ত থাড়া। রাজা জশবন্ত রাও তৈরি করেছিলেন। গুছিয়ে ফোটো তুলুন।

    এদিকে মুশকিল, সবসময়েই ক্যামেরার পেছনে আপনি থেকে যাচ্ছেন, আপনারও তো ইচ্ছে করে নাকি, বউ-বাচ্চার সঙ্গে অমন শ্বেতপাথরের মহলের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে? তা, ট্যুরিস্টের তো অভাব নেই, সামনেই এক ভদ্রলোককে ক্যামেরাটা দেখিয়ে আপনি অনুরোধ করতেই পারেন আপনাদের একটা ছবি তুলে দিতে। আর সেই ভদ্রলোক যদি শুদ্ধ বাংলায় বলেন, দাঁড়াইয়ে, হামারা লেড়কাকো ডাকতা হ্যায়, তা হলে জনান্তিকে খিক্‌খিক্‌ হাসার একটা মওকাও আপনি পেয়ে যেতে পারেন।

    ফটো তোলা হয়েছে? দেখুন, সামনে ছায়ায় বসে হারমোনিয়াম আর ঢোলক নিয়ে দুটো বাচ্চা রাজস্থানী ছেলে কেমন গাইছে রুণা লায়লার গলায় বিখ্যাত হওয়া সেই গান : ও লাল মেরি, পত্‌ রাখিও ভালা ঝুলে লালন / সিঙ্গরি দা / সেভন দা সফি শাবাজ কে অন্দর / দমাদম মস্ত কালন্দর ... আপনি জানতেন গানটা আসলে পাকিস্তানি, কিন্তু এখানে রাজস্থানী লোকগীতির সুরে ... কান পেতে শুনে দেখুন, গানটা সেটাই, কিন্তু লিরিক এক নয়, আর সুরেও যেন খানিকটা আলাদা। হাতে সময় আছে অনেক, দাঁড়িয়ে শুনে যান পুরো গানটা।

    পরের গন্তব্য, মান্দোর।
  • Blank | 203.99.212.224 | ১৪ অক্টোবর ২০০৮ ১২:৩৮406670
  • আমি তো বইখানার নামের ভাবার্থ লিকেচিলুম। আমি কি কোটেশান মার্ক দিয়েচি ওতে? হু:
  • siki | 203.122.26.2 | ১৪ অক্টোবর ২০০৮ ১৪:৫৪406672
  • বইটা পড়ে ফেল্লুম : http://www.esnips.com/web/EkeiBoleShootingbySatyajeet জানি না পুরো আছে কিনা, কিন্তু এখানে সোনার কেল্লার ছবি তোলার কোনও গল্প নেই।
  • Blank | 203.99.212.224 | ১৪ অক্টোবর ২০০৮ ১৫:৩৫406673
  • আমি বাড়ি গিয়ে (যদি ঠিক ঠাক ফিরি, রাতে) সোনার কেল্লার পার্ট টুকু তুলে দেবো নেটে
  • siki | 203.122.26.2 | ১৪ অক্টোবর ২০০৮ ১৭:৩৩406674
  • অটোকে বলুন মান্দোর নিয়ে যেতে। গেট পেরিয়ে খানিক ঢুকলেই আপনি বিস্ময়ে হাঁ হয়ে যাবেন। আবার কয়েক পিস জৈন মন্দির। লাল পাথরে বানানো, পাগলা করে দেওয়া স্ট্রাকচার। পেছনে কোথায় যেন তারস্বরে চলো ইশ্‌ক লড়ায়ে সনম চলছে, কিন্তু আপনার কানে সেসব ঢুকবে না। ভিডিও ক্যামেরা ফ্যামেরা এখানে পাত্তা পায় না, স্টিল তুলুন, স্টিল। না, এখানে মানুষ বা ক্যামেরা, কারুরই কোনও চার্জ নেই।

    মন্দির পেরিয়ে আরও খানিকটা ভেতরে গেলে হয় তো কোনও চামুন্ডা মন্দির বা ধ্বংসাবশেষ ছিল, আমরা আর ভেতরে যাই নি। আকন্ঠ পান করেছি মান্দোরের মন্দিরের সৌন্দর্য। মন ভরে গেছিল। কেবলই কানের মধ্যে গুণগুণ করছে ঐ একটাই ফ্রেজ। কোনও মানুষের পক্ষে এ তৈরি করা অসম্ভব! কী করে করেছিল?

    মন তো ভরল, কিন্তু পেট? পেট তো চুঁইচুঁই করছে। দেখা বাকি আর উমেদ ভবন প্যালেস। অটোকে বলুন ধাঁ করে প্রিয়া হোটেল চকে নিয়ে আসতে। বর্তমান জোধপুর শহরের মাঝখানে এই চারমাথার মোড় সদাব্যস্ত, অনেক রাত পর্যন্ত। যত বড় বড় রাজস্থানী এম্পোরিয়ামের ভিড় এইখানে। তাকলাগানো বাঁধনী শাড়ি / চুড়িদার / সালোয়ার আর জোধপুরী স্যুটের (ছেলেদের) আর পাগড়ির সম্ভার, রাস্তার দুদিক জুড়ে। কিন্তু এখন ওদিকে তাকানোর সময় নেই। মোড়ের মাথায় প্রিয়া হোটেলের রেস্তোরাঁয় ঢুকে পড়ুন। শস্তায় লুটেপুটে খান। জোধপুরের স্পেশাল হল মালাই লস্যি। আদপেই লস্যি নয়, বাটার মিল্কশেক। ঘ্যামা খেতে। খান। খেয়ে দেখুন।

    খাওয়া হলে চলে যান উমেদ ভবন প্যালেসে। ওখান থেকে একটু দূরেই। আপনার জোধপুরের লাস্ট গন্তব্য। ইতিহাসে যাবো না, তবে যেতে যেতে শুনে নিন, ইহা পৃথিবীর বৃহত্তম প্রাইভেট প্যালেস। পৃথিবীর প্রথম প্যালেস যাতে ইলেকট্রিসিটি এসেছে, পৃথিবীর প্রথম প্যালেস যাতে লিফট লেগেছে, প্রায় ৬৭৭ খানা রুম আছে। মহারাজা উমেদ সিংহ এটি তৈরি করেছিলেন চার্লস ল্যুটিয়েনকে চ্যালেঞ্জ করে।

    বিশ শতকের গোড়ার দিক। ল্যুটিয়েনের হাত দিয়ে তখন ধীরে ধীরে রূপ পাচ্ছে আজকের নিউ দিল্লি। ভারতের নতুন রাজধানী। ল্যুটিয়েনের অনুপম কীর্তি হল রাষ্ট্রপতি ভবন, রাইসিনা হিল্‌সের ওপর। রাজা উমেদ সিং ভাবলেন, আমি এর চেয়েও ভালো একটা প্যালেস বানাবো। যে কথা সেই কাজ। বরাত পেলেন আরেক বাঘা আর্কিটেক্ট, ল্যাঙ্কেস্টার। তখন জোধপুরে চলছে ভয়ঙ্কর খরা। বৃষ্টি নেই, ফসল নেই, খাবারের জন্য হাহাকার।

    রাজা উমেদ সিং প্রথম শুরু করলেন "ফুড ফর ওয়ার্ক' যোজনা। ৫০০০ লোক ১৫ বছর ধরে বানিয়েছিল এই প্রাসাদ, কাজের বদলে খাবারের প্রতিশ্রুতিতে। ১৯৭৭ সালে এই প্রাসাদ জণগণের জন্য খুলে দেওয়া হয়, একটা অংশ। এর মূল অংশটা এখন তাজ হোটেল। ভারতের অন্যতম মহার্ঘ হোটেল। এর মহারাণী স্যুটে এক রাত্রি থাকার দাম দেড় লক্ষ টাকা। পেছন দিকে থাকেন রাজবংশের বর্তমান বংশধররা। তাঁরা দর্শন দেন টেন না লোকজনকে। তবে বাকি প্যালেসটায় উমেদ সিং থেকে এখনকার রাজা পর্যন্ত সকলের সমস্ত কালেকশন ডিসপ্লে করে মিউজিয়াম করে দেওয়া হয়েছে। প্যালেসের মাথায়, সামনের রোটারিতে ওড়ে রাজার ধ্বজা। হলুদ লাল নীল টাইপের রঙের একটা পতাকা। রাজা যখন প্যালেসে থাকেন, পতাকা ওড়ে। রাজা প্যালেসে না থাকলে পতাকা নামিয়ে নেওয়া হয়। ঐ পতাকা দিয়েই জানানো হয় রাজা ঘরে আছেন না নেই।

    কালেকশন দেখার মত। বাচ্চাদের দোলনা, ঘড়ি ইত্যাদির সম্ভার মাথা ঘুরিয়ে দেবার মত। প্যালেসের গঠনও অত্যন্ত সুন্দর। পাগড়ি পরা লম্বা চওড়া গাইড দাবি করলেন যে এটা নাকি রাষ্ট্রপতি ভবন যে পাথরে বানানো, সেই একই পাথরে বানানো, কিন্তু আমার অন্তত তা মনে হল না।

    উমেদ ভবন প্যালেস সত্যিই রাষ্ট্রপতি ভবনকে টেক্কা দিতে পেরেছে কিনা, সেটা বিচার করবেন আপনি। তবে আমার মনে হয়, তুলনা না-করাই ভালো। তাজমহল আর মাউন্ট এভারেস্টে কি তুলনা চলে?

    গুছিয়ে টায়ার্ড হয়েছেন আপনি, এইবারে। হোটেলে ফেরৎ চলুন। বেলা তিনটে বাজে সবে। একটু জিরিয়ে নিন।
  • Blank | 59.93.245.192 | ১৫ অক্টোবর ২০০৮ ০১:৩৯406675
  • এটা ফেলুদার সাথে কাশী তে, সেখানে দু লাইন রেফারেন্স আছে রাজস্থানে ট্রেন ভাড়া করার। বড় লেখাটা কোথায় খুজে পাচ্ছিনা, মনে হয় সেরা সন্দেশে ছিল
  • arjo | 168.26.215.54 | ১৫ অক্টোবর ২০০৮ ০১:৪১406676
  • উল্টে গেছে কিচ্ছু পড়া যাচ্ছে না।
  • Blank | 59.93.245.192 | ১৫ অক্টোবর ২০০৮ ০২:০১406677
  • কাল সোজা করে ফের দেবো।
  • Blank | 203.99.212.224 | ১৫ অক্টোবর ২০০৮ ১০:৪৬406679
  • আছে আছে, আমাকে এই pdf টা মেলে পাঠাও, আমি বলে দিচ্ছি কোথায় আছে। এখান থেকে আমি ইস্নিপস খুলতে পারি না
  • shrabani | 124.30.233.105 | ১৫ অক্টোবর ২০০৮ ১১:০৩406680
  • উট বনাম ট্রেনে আছে স্পেশাল ট্রেনের কথা। ফেলুদার সঙ্গে কাশীতে ট্রেনে শ্যুটিং এর ব্যাপারটা আছে
  • Blank | 203.99.212.224 | ১৫ অক্টোবর ২০০৮ ১১:০৬406681
  • এই উট বনাম ট্রেন টাই বলছিলাম। এটা মনে হয় সেরা সন্দেশে ছিল।
  • siki | 203.122.26.2 | ১৫ অক্টোবর ২০০৮ ১১:২৯406683
  • ব্ল্যাংকিকে মেলে পাঠিয়ে দিলাম দুটো পিডিএফই। খুঁজে দিস।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে প্রতিক্রিয়া দিন