বিশ্বজুড়ে সম্পদের একটি সাধারণ প্রবণতা হল, গরীবদের কাছে থেকে সেই ধনীদের কাছে চলে যাওয়া যারা ভোগ করে কম, যার স্বাভাবিক পরিণতি- প্রনোদণার অভাবে চাহিদায় বন্ধ্যাত্ব তৈরী হওয়া এবং ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে অর্থনীতির তলা ফুটো হয়ে যাওয়া। প্রখ্যাত ভারতীয় অর্থনীতিবিদ রঘুনাথ রাজন মনে করেন, করোনা মহামারী এ চিত্র কিছুটা হলেও পালটে দিয়েছে, চাহিদা এই মুহুর্তে এতটা পরিপুষ্ট যে, আয় ও সম্পদের সমতা কিছুটা হলেও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে? ব্র্যাকের একটি গবেষনায় উঠে এসেছে, করোনা মহামারির আগে যেখানে ১ শতাংশ হারে দারিদ্র্য বিমোচন হত, সেখানে করোনাকালে ৪ শতাংশ হারে নতুন দরিদ্র সৃষ্টি হয়েছে। স্পষ্টতই অর্থনৈতিক চাহিদার বলবর্ধক ঔষুধগুলো দরিদ্র জনগোষ্ঠির শরীর অবধি পৌঁছুতে পারেনি আমাদের দেশে। ... ...
আমেরিকান অর্থনীতির বিশাল মন্দার সময়ে তাঁকে হ্যাঙ্ক পলসন যা আদেশ করেছিলেন সেটাই বেরনানকে পালন করেন , তল্পি বাহক বা করণিকের মতন । বেরনানকে ব্যাঙ্কিং জগতে কোন গোলযোগের হদিশ পান নি। ২০০৫ সালের আগস্টে রঘুরাম রাজন সতর্কবাণী দিয়েছিলেন , কানে যায় নি । ২০০৭ সালের আগস্টে ফ্রান্সে ব্রিটেনে স্বল্প মেয়াদি আমানত প্রায় বন্ধ হলো। এর সঙ্গে ওয়াল স্ট্রিটের জুয়ো খেলার কোন সম্পর্ক তিনি দেখতে পান নি । অনেক খুঁজেও ব্যাঙ্কিং সুপারভিশন, অডিট , ইনসপেকশন নিয়ে বেরনানকের কোন মন্তব্য আমার চোখে পড়ে নি বরং হ্যাঙ্ক পলসন করেছেন। ... ...
এর নাম রান অন দি ব্যাঙ্ক ? ব্রিটিশ করদাতার টাকাকে উড়ো খই গোবিন্দায় নমঃ বলে বিলিয়ে দিয়ে কিছু কাউবয় ব্যাঙ্কার এবং তাদের ব্যাঙ্ককে বাঁচাতে চান নি মারভিন কিং। শেষ পর্যন্ত অর্থনৈতিক বিবেচনার চেয়ে রাজনৈতিক স্বার্থ বড়ো হয়ে উঠল । তবু মারভিন কিং লড়াই করেছিলেন তৎকালীন লেবার প্রধানমন্ত্রী গরডন ব্রাউনের সঙ্গে । বলেছিলেন আমি সরকারের আদেশে চলি না । আপনারাই ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ডকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন এই মাত্তর দশ বছর আগে । সেই সঙ্গে দেশের ব্যাঙ্কের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দিয়েছেন আলাদা দফতর , ফাইনানশিয়াল সার্ভিসেস অথরিটিকে । তারা এতদিন কি করছিল ? দেখেনি স্বল্প মেয়াদের ধার নিয়ে লম্বা মেয়াদে মর্টগেজ দিয়েছে এরা । ভাবে নি বাজারি জমার (হোলসেল ডিপোজিট ) স্রোত বাজারি গুজবেরই কারণে শুকিয়ে যেতে পারে ? এই দেখাশোনার কাজটা এককালে আমরা করেছি, সাফল্যের সঙ্গে । ... ...
জেকিল আইল্যান্ডে কতিপয় ধনী ব্যক্তি সমবেত হলেন ডলার নামক দ্রব্যটির দর ( সুদ ) এবং সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের বাসনায় । নিউ মেক্সিকোর তাওস শহরে কোনো ব্যাঙ্ক ধার দেবে তিন শতাংশ সুদে আর নিউ জার্সির হোবোকেনে ধার দিতে ছ শতাংশ সুদ চাইবে , এটি হতে পারে না। যে যা খুশি দর চাওয়ার ফলে সিটি মরগান ওয়ারবুরগ রকিফেলারের নিত্য লোকসান হচ্ছে। এঁরা পরস্পরের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী ঠিকই কিন্তু চোরে চোরে মাসতুতো ভাই প্রবাদটিও তো সমান সত্যি। ১৯১৩ সালে ফেডারাল রিজার্ভ অ্যাক্ট দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হলো ফেডারাল রিজার্ভ । ১৯১৪ সালে এক বক্তৃতায় সেনেটর অলডরিচ বললেন, “ এই আইন পাস হবার আগে অবধি নিউ ইয়র্কের ব্যাঙ্কারদের প্রভুত্ব ছিল কেবলমাত্র নিউ ইয়র্কের ধন সম্পদের ওপরে , এখন গোটা দেশের সম্পদের ওপরে *। ... ...
মন্দা কাটিয়ে আমেরিকান অর্থনীতি সেরে উঠছে , লোকের আয় বাড়ছে – ফল স্বরূপ বাড়িঘরের চাহিদাও। হার্ভার্ড হোয়ারটনের মতো বাণিজ্য বিদ্যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নানান বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গে জুয়া খেলাটা শিখেছেন ওয়াল স্ট্রিটের উজ্জ্বল তারকারা। ফাইনানশিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং ( এককালে হয়তো এরই নাম ছিল অ্যালকেমি) দ্বারা সোনাতে সোহাগা মেশালেন – সোনার নাম হাজার বাড়ি বন্ধকের সমষ্টি ( মর্টগেজ ব্যাকড সিকিউরিটি) , নতুন সোহাগার নাম হরেকরকমবা ঋণের জামানত ( কোল্যাটারালাইজড লোন অবলিগেশান) । মিলকেন বলেছিলেন ছোট হতে পারে কিন্তু কোন ব্যবসা বা ঋণ তুচ্ছ নয় , জাঙ্ক বলিয়া কোরো না হেলা। সলোমনের রানিয়েরির খাতায় ছিল মর্টগেজের সমারোহ । ঋণ রইল বাড়ি বন্ধক দ্বারা সুরক্ষিত, সুদ এলো ই এম আই থেকে । এবার সকল অধীর লগ্নিকারকের শিরে যে পুষ্প বর্ষিত হলো তার নাম জামানত কৃত মর্টগেজ সমষ্টি ( কোল্যাটারালাইজড মর্টগেজ অবলিগেশনস ) । কাল পূর্ণ হলে এই পুষ্প দেখা দেবে অগ্নিবৃষ্টি রূপে। ... ...
আমার ভারত , জার্মানি, ইংল্যান্ডে শেখা ব্যাকিং পাঠ -খদ্দেরকে চেনো, তার খানা তল্লাশি করো, মাঝে মধ্যে ব্যাঙ্কে ডেকে খবরাখবর নাও এসবই অবান্তর গল্প। আমি মূর্খের মতো ভাবি এটা আমার বাড়ি – যতদিন না ধার শোধ হয়, এটা আসলে ব্যাঙ্কের বাড়ি । ব্যাঙ্ক ধার দেয় না, কেনে একটা সম্পত্তি যার দাম বাড়ে প্রতি দিন। তার জন্য আবার মাসে মাসে সুদ পায়, একদিন সেই পুরো ১২০,০০ ডলার ফেরত পাবে। আমেরিকায় লক্ষ লক্ষ বাসভবনের প্রয়োজন । বাড়ি জমির দাম কখনো কমে না। ... ...
নোবেল কমিটির হান্স এলেঘ্রেন জানালেন ডায়মন্ড / ডিবভিগ নির্দেশ দিয়েছেন ব্যাঙ্কের সমস্যা কোথা থেকে উৎপন্ন হয় । আরসেই সঙ্কট থেকে পরিত্রাণের পথ দেখিয়েছেন বেরনানকে। কি সেই পথ ? টাইটানিক জাহাজে সকলের জন্য লাইফ বোট ছিল না। এবার জ্বলন্ত হাওয়াই জাহাজ থেকে প্রাণ বাঁচানোর জন্য প্যারাসুটের ঘোষণা করলেন বেরনানকে। । বেল আউট । সেটি কি নতুন আবিষ্কার ? ... ...
ব্যাঙ্ক না হয় ঘরে বসে আপনার টাকা পেলো, সেখানে আপনি ঝুঁকি নিলেন। এবার এক গুচ্ছের লোকের কাজ হলো খদ্দের খুঁজে সেই টাকা এবং তা থেকে বর্ধিত টাকা ধার দিয়ে জুতসই সুদ আদায় করা –ব্যাঙ্ক ঝুঁকি নেবে সেই খদ্দেরের ওপরে । তবেই না সেই জমা টাকা থেকে কোনো আয়ের মুখ এবং আপনার প্রসন্ন হাসি দেখা যাবে। এই বিভাগের কর্মী চায় বেশি ঋণ দিতে - সেটি নগদ উধার, ক্রেডিট কার্ড, বাড়ি জমি কেনার মর্টগেজ , গাড়ি কেনা, বিদেশ ভ্রমণ যাই হোক না কেন । কারণ ব্যাঙ্কের মুনাফা, তাদের দক্ষতা এবং বোনাস মাপা হবে ঋণদানের পরিমাণ ও তা থেকে উৎপাদিত আয় দ্বারা। স্বভাবতই তাদের অ্যান্থেম হলো- প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে , আরও আরও দেবো ধার । ... ...
১৮৯৫ সালে মৃত্যুশয্যায় লিখিত উইলে আলফ্রেড নোবেল এই বাসনা প্রকাশ করেছিলেন যে তাঁর মৃত্যুর পরে নিজ জীবৎকালে সঞ্চিত অর্থ ও তা থেকে ভবিষ্যতে অর্জিত সুদ ব্যবহার করে সেই সব মানুষকে যেন পদক ও অর্থ দ্বারা সম্মানিত করা হয় যারা বিগত বছরে পদার্থ বিদ্যা, রসায়ন, চিকিৎসা শাস্ত্র , সাহিত্য এবং শান্তির ক্ষেত্রে মহতী কর্ম করেছেন। ১৮৯৬ সালে তিনি দেহ রক্ষা করেন। নোবেল পুরস্কার দেওয়া শুরু হয় ১৯০১ সাল থেকে। নোবেল একসঙ্গে তিন জনের বেশি মানুষকে দেওয়া যায় না – ব্যতিক্রম শান্তি পুরস্কার।প্রায় সত্তর বছর বাদে , ১৬৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত সুইডেনের রিকসবাঙ্ক ( পৃথিবীর প্রাচীনতম কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ) তাদের তিনশ বছরের পূর্তি উৎসবে ঘোষণা করেন তাঁরা আলফ্রেড নোবেল পুরস্কার সংস্থাকে কিছু অর্থ দান করবেন । সেই অর্থ ও তার সুদ দিয়ে নোবেল সংস্থা যেন প্রতি বছর এমন মানুষদের নির্বাচিত ও সম্মানিত করেন যারা অর্থনীতিতে কোন বিশেষ অবদান রেখেছেন। আলফ্রেড নোবেলের অর্থ বা অভিলাষে এটির সূচনা হয় নি তাই এই পুরস্কারের সঠিক নাম : আলফ্রেড নোবেলের স্মৃতিতে প্রদত্ত সভেরিগেস রিকসবাঙ্ক পুরস্কার। ... ...
অনিশ্চিত ছোট অন্যান্য উদ্যোগের মতন এখানেও অনিশ্চিত অংশটুকু সমাজ না দেখলে মানুষ সেটা সামলে উঠে উৎপাদনের সামাজিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন কী করে? সরকার সমাজের হয়ে সেই ভূমিকাটা একটা মাত্রা নিচ্ছেন বলেই মনে হয়। অর্থাৎ, আমরা দেখলাম এই রাজ্যে সাধারণ মানুষের রোজগার নেই এরকম না। কিন্তু সেই রোজগার নিশ্চিত করতে সরকার কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন, যার মধ্যে বিভিন্ন ভাতা অনুদানও এসেছে। ... ...
কোভিডের পর থেকে শুধু আমেরিকায় ‘ওয়েল ফিল্ড সার্ভিস’ এর সাথে যুক্ত চাকুরী হারা হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ লোক। শুনেছি আমেরিকায় আগে মেটাল-মাইনিং ইন্ডাষ্ট্রিতে ইউনিয়ান ইত্যাদি কিছু ছিল, হালকা টাকা কড়ি দিয়েছে। কিন্তু ওয়েল ফিল্ড সার্ভিসের লোকগুলোর কি হয়েছে? সব পিচবোর্ডের বক্সে করে সার্টিফিকেট আর ছবি প্যাক করে বাড়ি গেছে। দুঃখজনক? নিশ্চয়ই! কিন্তু কিছু করার আছে? না – নেই, এটাই বাস্তব। তবে এই নিয়ে তেল ব্যবসার সাথে যুক্ত যাদের চাকুরী গেছে তারা বিশাল আন্দোলন ইত্যাদি কিছু করার কথা ভাবে নি। কারণ তারা চাকুরী করতেই ঢুকেছিল এই অনিশ্চয়তা জেনে। যেকোন দিন চাকুরী চলে যেতে পারে – ৩০ বিলিয়ন ডলারের প্রোজেক্ট রাতারাতি বন্ধ হয়েগেছে ৩৫০০ কনট্রাক্টর রাতারাতি নোটিশ পেতে পারে বিল্ডিং, এবং এক্সপ্যাত হলে শহর ছাড়ার জন্য। অনেকে রোটেশন বেসিস এ কাজ করে – মানে ২৮ দিন টানা কাজ, ২৮ দিন বাড়িতে ছুটি। কোভিডের সময় অনেকে ওই ২৮ দিনের ছুটিতে বাড়িতে এসে মেল/কল পেয়েছে যে আর আসতে হবে না! ... ...