সবাই জানে, বাংলাদেশের মানুষ ভাষার জন্য লড়াই করেছিল। অনেকেই জানে না যে, বাংলাদেশের মানুষ একজন কবির জন্যও লড়াই করেছিল। গেল বছর মুক্তিযুদ্ধের পঞ্চাশ বছর পাড়ি দিচ্ছিল যখন বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তী লড়াইগুলোর ইতিহাস আলোচনায় প্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়িয়েছিল সে আন্দোলনও। মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন আর রবীন্দ্রনাথ- জাতীয় ইতিহাসের এই পালকগুলোর কোন একটিকে বিচ্ছিন্ন করলে যেন খসে যাবে অন্য পালকগুলোও, কংকালসার এক বাংলাদেশ পড়ে থাকবে চোখের সামনে। কিন্তু কেন তিনি নাড়ি ছেঁড়া ধন আমাদের? কেনই বা তার ‘সোনার বাঙলা’ আমাদের জাতীয় সঙ্গীত? বাংলাদেশের একটি নদীর উপর একটি নৌকোয় চড়ে বসুন আর ক্ষণিক ছিন্নপত্র ও ক্ষণিক চারপাশের জীবন ও প্রকৃতির মাঝে ডুবে থাকুন। আস্তে আস্তে একটি ছবি ভেসে উঠবে আপনার অক্ষিপটে; অবাক বিষ্ময়ে আবিষ্কার করবেন, পুরো বাংলাদেশটাই রাবীন্দ্রিক! ... ...
এই ঘটনা শুরু আরও কয়েকদিন আগে থেকে। বাংলাদেশ থেকে নতুন দুইজন এসেছেন আমাদের কোম্পানিতে। তারা যে এজেন্টের মাধ্যমে এসেছেন আমি সেই একই এজেন্টের মাধ্যমে এসেছি। আমাকে বলা হল আমি যেন এই দুইজনকে আমাদের সাথে রাখি, খাওয়া দাওয়া আমাদের সাথে করাই। আমার সঙ্গী রাজি ছিল না। আমার মনে হল আমরা যখন প্রথম আসছিলাম তখন আমরা নানাজনকে বলছিলাম যে তাদের সাথে যেন আমাদের রাখে, এক সাথে খাওয়া দাওয়া রান্নাবান্না করে খাব। কেউ রাজি হয়নি। তখন আমার খুব খারাপ লেগেছিল। আমি সেই কথা চিন্তা করে বললাম, ঠিক আছে, উনারা থাকুক আমাদের সাথেই। ... ...
রঙ! শব্দটা শুনলে একটা অদ্ভুত অনুভূতি জাগে মনে। হঠাৎ যেন মনে হয় কেউ এক মুঠো লাল - হলুদ আবির ছড়িয়ে দিল হাওয়ায়। রঙ শুনলে আমার কেন জানি মনে হয়, একটা ক্যানভাসে খুব পাৎলা করে কেউ ক্রিমসন রেডের একটা শেডের উপরে ক্রোম ইয়োলোর এক পোঁচ ভেজা রঙ লাগিয়েছে। আপনাদের কি মনে হয়? নিশ্চই অন্য কিছুর সাথে আপনারা রঙকে রিলেট করেন। রঙ শুধু একটা শব্দ, একটা বিশেষ্য পদ, যা দিয়ে সব রকম রঙের কথা বলা যায়। শব্দটি সাবজেক্টিভ নয় কোয়ালিটেটিভ। কিন্তু আমি যদি বলি আপেল কিম্বা স্ট্রবেরী? অমনি আপনার মনের মধ্যে লাল রঙের একটা ছবি ভেসে ওঠ ... ...
হ্যারি বেলাফন্টেদের কাছে সময় হার মানে...সবসময়!! ..আর জিতে যায় ক্লান্ত ক্লান্তিহীন মানুষের নিয়ত ভেসে চলার গান!! ... ...
আমরা সবাই – মানে ছ’জনই - তো পরীক্ষা আর রেজাল্টের মাঝখানে ঝুলে আছি। আমাদেরই এক জন যে আরও একটা ব্যাপারে দিল্লি আর কলকাতার মাঝে ঝুলে আছে তা আর কে জানত। আর সেই ঝুলে থাকা মানে টেনিদার ভাষায় ‘পুঁদিচ্চেরি’ – মানে ব্যাপার অত্যন্ত সাংঘাতিক । অফিসের একজন বলেই ফেললেন যে এটা একেবারেই ‘অবিশ্বাস্য’। একেবারে জীবন আর মৃত্যুর ব্যাপার, ‘লাভ’ আর লোকসানের ব্যাপার। ... ...
যুগাবতারদের কর্মকাণ্ড ... ...
যুদ্ধ বা সামাজিক পরিবর্তন কি শিল্পকে পালটায়, না শিল্পীকে পালটায়? নাকি কোনো কিছুই পালটায় না, সবই সাময়িক? ... ...
আমাদের প্রথম চিন্তাই, আরে ওরা বাংলা বলবে? কী আশ্চর্য! 'আমনে আমাত্তে বেশি বুঝেন' আমাকে বুঝাল আরে আমরা হিন্দি পারি, এইটা আমদের একটা কৃতিত্ব না? ওরা একটা ভাষা জানে বা ইংরেজি সহ দুইটা জানে, আমরা ইংরেজি সহ তিনটা জানি, এইটা ভাল না? অবশ্যই ভাল! এর চেয়ে ভাল উত্তর আর কী হতে পারে? ... ...
প্রতিটা জায়গায় বিভিন্ন তথ্য রোমানিয়ান, ইংরেজি আর হিব্রু ভাষায় দেওয়া আছে। একটা বিষয় আমার কাছে খুব ভাল লাগল যে রোমানিয়ানরা গণহত্যার জন্য কোন দলকে, মতাদর্শকে দায়ী করেনি। স্পট লেখা আছে, সারা ইউরোপ জুড়ে যখন ইহুদি নিধন শুরু হয় তখন রোমানিয়ান সরকারও ইহুদি নিধনে যোগ দেয়। ওরা ইচ্ছা করলে নাৎসিদের উপরে কিংবা কোন দলের কথা লিখতে পারত। আমরা জানি সে সময়ের সরকার নাৎসি সমর্থক ধরণের কিছু ছিল বলেই এমন একটা কাজে উৎসাহী হয়েছিল। কিন্তু তা না লিখে সরাসরি লেখটা আমাকে অবাক করেছে এবং মুগ্ধও করেছে। সত্যকে আড়াল করে লাভ নাই। ওরা এভাবে লিখেছে এবং পরবর্তী প্রজন্ম যেন জানে সে কথাও লিখেছে। অন্যদিকে পাকিস্তান আজ পর্যন্ত সত্যটা লিখতে পারেনি। পাঠ্যবইয়ে লেখা ভারত ষড়যন্ত্র করে দুই পাকিস্তান আলদা করেছে! আর পশ্চিম পাকিস্তান দুধে ধোয়া তুলসী পাতা! ... ...
অই ননচ্যালান্স! বাংলার আদি ইমোশন। গনেশ জননী হোক বা সতীর দেহত্যাগ বা বটতলার হত্যাকাণ্ডের গপ্প -- পটের মুখাবয়ব জুড়ে সেই টানা টানা চোখ, শরীরে মন্থর রেখার আনাগোনা। যেন অবাক চোখে শুধু দেখে যাওয়া। তাতে ক্রোধ - দুঃখ - ভয় কিছুরই আধিক্য নেই। যেন সব চোখই শিশুর চোখ। তার সামনে কখনো দাদুর বুড়ো আঙুল কেটে নিয়ে যায় নেংটি ইঁদূর, কখনো ট্রেনের ধাক্কায় নিহত হয়ে চিরঘুমের দেশে পাড়ি দেয় হাতির পাল, কখনো বা পুষি বেড়ালকে গিলে খায় পাড়ার হুমদো কুকুর। ... ...
খাবার আসতে দেরী আছে বলে উইলিয়ামকে গণার চপের গল্প শোনানো গেল। মেমারী স্টেশন বাজারে পুরানো দিনে নীরেন ময়রার দোকানের পাশে বিকেলে গণা এক ট্রে ভেজিটেবল চপ বিক্রী করত। সেই ট্রে খালি হতে আধ ঘন্টা আর প্রচুর খদ্দের ফিরেও যেত। কিন্তু গণা কোনদিন এক ট্রের বেশী চপ বানালো না! যত সহজে লিখলাম উইলিয়ামকে ভেজিটেবল চপ বোঝানো তত সহজ ছিল না। চপের ইংরাজি কি?? সে বোঝাতে গিয়ে যা সময় লাগল তাতে ধাড়ি ছাগলের মাংস কড়াইয়ে সিদ্ধ হয়ে যাবে! এবং সেই ততক্ষণ বাদেই সেই মেয়ে এই কারী এনে দিল! এক চামচ খেয়ে উইলিয়ামকে বললাম, নারকেলের দুধ আর কাজু মেশালেই কি আর থাই রান্না হয়! এর থেকে নিমোর তাপস, লাল্টু বা মুকুল অনেক ভালো রান্না করে! উইলিয়াম জানতে চাইল মুকুল কি কোন বড় শেফ? তাকে জানালাম মুকুলের গল্প করতে গেলে রাত কাবার হয়ে যাবে, এখন খিদের মুখে সেসব হবে না। তবে এটা জেনে যাও মদের চাট বানাতে মুকুলের ধারেপাশে কেউ আসবে নে! ... ...
আজ সেই রাত।পার্কে গিয়ে তাই করি, বেঞ্চটা খুঁজে বার করে বসি । একটা ফাঁকা সিগারেটের প্যাকেট ফেলে গেছে কেউ বেঞ্চটার ওপর, সেটা দুমড়ে পাশে সরিয়ে দিলাম। পার্কটা ফাঁকা । ঘড়ির দিকে চোখ রাখি, সেকেন্ডের কাঁটাটা ঘুরছে । এখনো পনেরো মিনিট বাকি আছে। হেলান দিয়ে বেঞ্চে মাথাটা তুলে ওপরে তাকালাম। ঝিকমিক করছে নানারকম তারা। একটা কৃত্রিম উপগ্রহ সপ্তষিমণ্ডলকে পিছনে রেখে আকাশ পেরিয়ে যাচ্ছিল। ... ...
‘’আপকা পেমেন্ট হো গয়া স্যার,’’ কাউন্টারের ভদ্রলোক জানালেন। মানে ? কে করল আমাদের পেমেন্ট ? ভদ্রলোক যাঁকে আঙুল তুলে দেখালেন, তাঁকে আমরা অনেকক্ষণ আগেই দেখেছি বসে আছেন একটা সোফায়। উনিই হলেন অমুক বাবু। আমরা অবাক হয়ে এগিয়ে গেলাম ওনার দিকে, উনি উঠে দাঁড়ালেন। একটু হাসাহাসি হল এই নিয়ে যে প্রায় পাশাপাশি আধ ঘণ্টা থেকেও আমরা কেউ কাউকে চিনতে পারিনি। পারার অবশ্য কথাও নয়, আমরা একে অন্যকে কোনও দিন দেখিনি। ... ...
মামা উড়নচন্ডি স্বভাবের জন্য শৈশবে তাকে ‘ঘোড়া’ উপাধি দিয়েছিল, সে খুব ক্ষেপে যেত দুষ্টুমির ছলে কেউ এই নামে ডাকলে…. অথচ সে প্রায়ই দাঁড়িয়ে ঘুমোত এবং তা কেউই জানতো না। ছোট থেকেই সে খুব সোজা হাঁটে, একই রকম করে কদম ফেলে; তার চোখ দেখে, সবই তো সরল পথ, যেখানে পথ বেঁকেছে বলে মনে হয়, সেখানেই তো নতুন পথের খোঁজ পেয়ে যায় সে। বেতার তরঙ্গের মত সে সোজা ছুটে, মাঝে মাঝে মহাকাশের কাছে পৌঁছে যায়, বায়ুমন্ডলের সর্বোচ্চ সীমায় বাঁধা খেয়ে আবার ফিরে আসে পৃথিবীতে। একদিন সে-ই নানাজানের হাতের বাঁধনে পিষ্ট হতে হতে এক গনজমায়েতের মুখে দাঁড়িয়ে জানলো, ‘এক রত্তি মাংস নাই শরিলে…সাধারন বৃত্তি না…ট্যালেন্টপুল…সবই তাঁর কেরামতি!‘ তীর্যক চোখে তাকিয়েছিল তারা সবাই, সম্মিলিত একটি ফিসফিসানি ঢেউয়ের মত আবর্তিত হয়ে প্রায় পিষে ধরছিল তাকে। ... ...
গল্প পরে। আগে পটভূমি। সমুদ্র দিয়ে ঘেরা এক ভূখণ্ড ছিল—উর্বর, শ্যামল। বহু কাল আগে, বাইরের দেশ থেকে আরবি ঘোড়ায় চড়ে আসা মুসলিম ঘোড়সওয়াররা সেই দেশ দখল করেছিল। তারা খাওয়ার আগে হাত ধোয়; শুয়োর খায় না, অন্য প্রাণীর মাংসও—বিশেষ কায়দায় না মারলে খায় না; জন্মের পরে খৎনা আর মৃত্যুর পরে গোর দেওয়ার নিয়ম পালন করে; তাদের পুরুষরাও হাতে-পায়ে রঙিন হেনা পরে—যার ফলে অন্যের চোখে তাদের ‘মেয়েলি’ মনে হয়। সব মিলিয়ে—এক অদ্ভুত, বিজাতীয় সংস্কৃতি। ... ...