তবে ঘোরতর অবাক লাগে শাহুর ১৯১৯-২০ সালে আনা খান-কতক আইনে। ব্রাহ্মণ্যবাদের – তথা – বর্ণভেদ প্রথার যে সব থেকে বড় সামাজিক প্রয়োগ, সেই বিয়ে ব্যাপারটার গোড়া ধরে টান মারলেন। এর আগে ১৯১৭ সালে নিজ রাজ্যে বিধবা বিয়েকে আইনতঃ সিদ্ধ বলে আইন চালু করেছেন। এবার এক কলমের খোঁচায় অসবর্ণ বিবাহ এমনকি আন্তঃধর্ম বিবাহকে আইনসিদ্ধ করে দিলেন। আর যেহেতু অসবর্ণ বিয়ে তখন ধর্মমতে করানো দুস্কর, তাই বিবাহ রেজিস্ট্রেসনের ব্যবস্থা করলেন। ভাবা যায়! যদিও ভারতে আন্তঃবর্ণ বিয়ে সমর্থন করে আইন হয়েছে ১৮৭২ সালে, তবু তার ১৩০ বছর পরে ২০০৫-০৬ সালের ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভের থেকে জানা যাচ্ছে যে গোটা ভারতে অসবর্ণ বিয়ের ঘটনা মাত্র ১১% সেখানে মহারাষ্ট্রে অসবর্ণ বিয়ের ঘটনা ১৭%। সহজেই অনুমেয় যে শাহু মহারাজের এর পিছনে দুই সেন্ট হলেও অবদান আছে। এই আইনে তিনি আরো বললেন যে বিয়ে করতে হলে মেয়ের বয়েস ১৪ বা তার বেশি হতেই হবে – গোটা ব্রিটিশ ভারতে তখন বিয়ের বয়স কিন্তু ১২। ১২ র থেকে ১৬ হতে আরো প্রায় তিরিশ বছর অপেক্ষা করতে হবে। মনুস্মৃতির নারীর স্বতন্ত্র অস্তিত্ব না থাকার বিধান উড়িয়ে দিয়ে বললেন যে মেয়ের ১৮ বছর হয়ে গেলে বিয়ের জন্য কারোর অনুমতি লাগবে না। ডানা মেলল স্বাধীনতা। এই আইনের আর একটা ইন্টারেস্টিং দিক হল এখানে সম্পর্ক-বিচ্ছিন্ন বা একপক্ষের মৃত্যুর আগেই বিবাহ করলে সেটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে ধরা আছে। যেহেতু এই মূল গেজেটগুলির ইংরাজী আন্তর্জাল ভার্সন অমিল, তাই বোঝা যায় নি এই মোনোগ্যামির ধারাটা কি ছেলে মেয়ে দুই এর জন্যেই প্রযোজ্য কি না। এই আইন যত না মেয়েদের উপকারের জন্য, তার থেকে অনেক বেশি অবশ্য ব্রাহ্মণ্যবাদকে আঘাত করার জন্য। তবু মেয়েদের স্বাধীনতাকে তিনি বেশ অনেকটা জায়গা করে দিলেন। ... ...
পৃথিবীর অনেক দেশে সরকার নাগরিকের স্বাস্থ্য রক্ষার দায়িত্ব নিলেও আমাদের দেশে তেমনটা নয়। 2010 সালে তৎকালীন যোজনা কমিশন সবার জন্য স্বাস্থ্যের লক্ষ্যে এক উচ্চস্তরীয় বিশেষজ্ঞ দল তৈরি করে, এই দলের কাজ ছিল সরকার কিভাবে সমস্ত নাগরিকের স্বাস্থ্য রক্ষার দায়িত্ব নিতে পারে সেই সম্পর্কে সুপারিশ করা। ডা শ্রীনাথ রেড্ডির নেতৃত্বাধীন এই বিশেষজ্ঞ দল হিসেব করে দেখায় সরকার যদি জিডিপির 2.5 শতাংশ 2017 এর মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে খরচ করে এবং 3 শতাংশ 2022 এর মধ্যে খরচ করে তাহলে সরকারি পরিকাঠামো এমন ভাবে গড়ে তোলা সম্ভব যা দিয়ে নাগরিকের প্রয়োজনীয় অত্যাবশ্যক প্রাথমিক স্তরের পরিষেবা, দ্বিতীয় স্তরের পরিষেবা এবং তৃতীয় স্তরের পরিষেবা দেওয়া যায়। তাদের সুপারিশ ছিল কোন ক্ষেত্রে সরকারি পরিকাঠামো যদি তৈরি না থাকে তাহলে বেসরকারি হাসপাতালের কাছ থেকে পরিষেবা কেনা যেতে পারে, তবে বর্তমানের মত সেই পরিষেবা ব্যক্তি রোগী কিনবেন না, কিনবে সরকার নিয়োজিত এক স্বায়ত্তশাসিত কমিটি। ... ...
ঘনঘন কান্দিরপাড়ে বসবাসের মধ্যেই নজরুল-আশালতা তীব্র এক সম্পর্কের কুঁড়ি। ১৯২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস। গোমতীর তীরে দুজন মানুষ মানুষী। প্রকাশ্যে চলে এল প্রেম। অন্যরকম বিরজাসুন্দরী, সাহসিনী তেজস্বিনী মায়ের মতো এই নারী নজরুলের পাশে থাকলেন না। সামাজিকতার বেড়াজাল। ছোবল। গিরিবালা একা। সঙ্গে মেয়ে। অপমান। বাড়ি থেকে পালিয়ে বাপের বাড়ি বিহারের সমস্তিপুরে চলে এলেন মা-মেয়ে। অন্যদিকে ব্যস্ত নজরুল আশালতার সঙ্গে ভালবাসছেন দেশকে। ধূমকেতু। নিষিদ্ধ দিওয়ালি সংখ্যায় ‘ম্যায় ভুখা হু’- মতো প্রবন্ধ লিখে ফেরার। ব্রিটিশ রোষে। একটা সময়ে কুমিল্লায় গ্রেপ্তার। ক্রমশ আলিপুর সেন্ট্রাল জেল এবং কুখ্যাত হুগলী জেল – অনশন। ‘দোলনচাঁপা’ কাব্যগ্রন্থ। যার দোলন খোদ দুলি অর্থাৎ আশালতা। একটা সময়ে মুক্ত নজরুল সমস্তিপুর থেকে কলকাতায় নিয়ে এলেন গিরিবালা-আশালতাকে। বিয়ের সিদ্ধান্ত। তীব্র বিরোধিতা উগ্র মুসলিম সমাজ থেকে। স্বামী ইন্দ্রকুমারের অসম্মতি – উপায়ান্তর না দেখে প্রকৃতই পাশে থাকলেন না বিরজাও। ‘প্রবাসী’ পত্রিকার দপ্তরের প্রকারান্তরে ‘হিন্দু’ হয়ে পড়া ব্রাহ্মদের থেকেও ক্ষোভের শিকার। প্রবাসীতে নজরুলের লেখা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল। বিয়ের দিন। ... ...
অনুভব সিনহা র সিনেমাটির শুরুতে কৃতজ্ঞতা স্বীকারের তালিকায় সবার প্রথমে নাম উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর। "সব চরিত্র কাল্পনিক" বলে দেওয়াও আছে। দেখতে দেখতে অনেকবার মনে হবে - এই রকম সিনেমা ছাড়পত্র পেল কীভাবে? সরকার কি এতই প্রগতিশীল যে সিনেমায় খুল্লামখুল্লা সরকারী কর্মচারীদের মধ্যেও জাতপাতের নোংরামি দেখাতে দিচ্ছে। তারপর অবশ্য বোধদয় হয়। আজকাল এইসব সিনেমা সমুদ্রে এক বোতল বিসলেরি ঢেলে তাকে পেয় জল বানানোর চেষ্টার মতো। ২৮ শে জুন মুক্তি পাওয়া সিনেমা ৬ই জুলাই শনিবারের সন্ধ্যায় ফরিদাবাদের মাত্র তিনটে হলে চলছে। যেটায় আমরা গেলাম তাতে টিকিটের জন্য ৩০০ টাকা চাইল। এত দাম কেন জানতে চাইলে জবাব এল - গোল্ড ক্লাস। ... ...
কি রকম বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে পশ্চিমবঙ্গে আজ? ডাক্তার আলট্রাসনোগ্রাফি করাতে বললেন, সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে হবে, কিন্তু হয়তো তিন মাস পরে। অপারেশনে কোন ইমপ্ল্যান্ট লাগবে, সেই ইমপ্ল্যান্ট ডাক্তার বাইরে থেকে কেনাতে পারবেন না, এক মাস বাদে ইমপ্ল্যান্ট সরবরাহ হলে অপারেশন হবে। তবু বিনামূল্যে চিকিৎসা র সুবিধা পাচ্ছেন অনেক গরিব মানুষই। আমার মূল ক্লিনিক হাওড়া জেলার উলুবেরিয়া মহকুমায়, রোগীরা প্রায় সবাই শ্রমজীবী মানুষ।১৯৯৫ থেকে ২০১৪ অব্দি আমার মাত্র দুজন রোগী হার্টের অপারেশন করাতে পেরেছিলেন, বাকিদের ওষুধ পত্র দিয়ে চালিয়ে যেতে হয়েছে। ২০১৪র পরে যাদের প্রয়োজন তাঁদের মেডিকেল কলেজে পাঠালে এনজিওপ্লাস্টি হয়েছে, জনা দুয়েকের বাইপাস অপারেশন ও। ... ...
বিজেপির ‘ভারতীয় মানব’ নির্মাণের বিপরীতে আমাদের দেশের বুর্জোয়া লিবারেল, সরকারী বাম, অনগ্রসরদের প্রতিনিধি সকল পার্টিই মনে করেছিলেন ‘সংবিধান’ হবে একটি সমকক্ষ ভাবনা। ‘সংবিধান’ অর্থাৎ “আম্বেদকর এবং তাঁর রচনা করা আধুনিক, ধর্মনিরপেক্ষ, প্রগতিশীল, সামাজিক ন্যায় সুরক্ষিত করা রাষ্ট্রকাঠামোটিই শেষ হয়ে যাবে বিজেপির হাতে”, এই ছিল তাদের বয়ান এবং প্রধান বয়ান। অর্থাৎ এর মধ্যে দিয়ে যাকে উঁচুতে তুলে ধরা হয় তা হল আধুনিক ভারতের রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং তার ভাবনা। বলা বাহুল্য এই আইডিয়াটির গায়ে এখনো পর্যন্ত যতটা পরিমাণ আমদানি করা মালের গন্ধ লেগে আছে এবং ভারতের সিংহভাগ জনমানসে এটা এখন পর্যন্ত এতটাই অসম্পৃক্ত যে, এটার মধ্যে দিয়ে কখনই বিজেপির সাধারণীকৃত ভারতীয়ত্বের ভাবনাটিকে প্রতিহত করা যায় না। এর জন্য ভারতীয় সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য এবং ভারতবর্ষে বিকৃত এবং অসম পুঁজিবাদী উন্নয়নের ইতিহাস একান্তভাবে দায়ী। বরং বলা যায়, এই সংবিধান যে বিষয়টিকে ভারতবাসীর মনে এবং আর্থ-রাজনৈতিক ব্যবস্থায় জগদ্দল পাথরের মতন অপরিহার্য করে তুলেছে তা হল সংসদীয় গণতন্ত্র। ... ...
ইউনিভার্সাল হেলথ কেয়ার অর্থাৎ সরকার সমস্ত নাগরিকের স্বাস্থ্য রক্ষার দায়িত্ব নিক এই দাবি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রচার শুরু হয়েছিল 2013'র ফেব্রুয়ারি মাসে।শুরুতে পিপল ফর হেলথকেয়ার নামে একটি ঢিলেঢালা নেটওয়ার্ক প্রচার শুরু করলেও 2014 থেকে মূল দায়িত্ব ছিল শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগ এবং ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির ওপর। 26 আগস্ট 2015 গঠিত হয়েছিল সারাবাংলা সবার জন্য স্বাস্থ্য প্রচার কমিটি বা অল ওয়েস্ট বেঙ্গল হেলথ ফর অল ক্যাম্পেন কমিটি। গত 23 শে জুন রবিবার শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগের প্রয়াসে ক্যাম্পেন কমিটির এক শিক্ষাশিবির অনুষ্ঠিত হলো ওয়েস্ট বেঙ্গল ভলান্টারি হেলথ অ্যাসোসিয়েশন এর সভাগৃহে। 2017-তে পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য সাথী আর 2018'র দেশ জোড়া আয়ুষ্মান ভারত এই দুটি বীমা প্রকল্প নিয়ে প্রচার রত সংগঠনগুলির বোঝাপড়া পরিষ্কার করাই ছিল শিক্ষা শিবিরের উদ্দেশ্য। ... ...
মহীনের ঘোড়াগুলির যখন জন্ম হয় তখন তাদের সামনে কিছুই ছিল না, শুধু ছিল ধু ধু ফাঁকা বিস্তীর্ণ অঞ্চল আর ছিল তাদের ফেলে আসা পথের অভিজ্ঞতা। এই ফেলে আসা পথের অভিজ্ঞতা নিয়ে তারা বিস্তীর্ণ চারণ ভূমিতে সবাই মিলে এলোমেলো ভাবেই ছোটাছুটি শুরু করে দিয়েছিল। তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছোটার আরও ছিল বিভিন্ন ঘরানার জনা তিরিশেক ছুটন্ত ঘোড়া যারা মূলত ছেলেবেলায় একসাথে বেড়ে উঠেছিল কোন অঞ্চলে। ঘোড়াদের আস্তাবল ছিল নাকতলায় এবং তার দেখাশুনো করতেন আমাদের মা ও পিসি, যথাক্রমে বিভা দেবী ও রতনপ্রভা – যাঁরা স্নেহ দিয়ে, ঘোড়াদের সবরকম বেপরোয়া দুরন্তপনাকে উৎসাহ দিয়ে, তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছিলেন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল ঘোড়াদের কোন কোন বান্ধবীরাও। তারাও সমান তালে ছুটতে শুরু করেছিল দলের বিভিন্ন রকম দায়িত্ব নিয়ে। ... ...
এই যাযাবর থিতু হল এমন দেশে যেখানে তারা পেয়েছিল বৃষ্টির গন্ধ । মরুভূমির মধ্যে সেই সুবাস তাদের অভ্যস্ত নাক চিনে নিতে দেরি করলো না। বৃষ্টির জল ধরে রাখার কৌশল রপ্ত হল। তারা বানিয়েছে বাঁধ , জলাধার , সিরামিকের পাইপ লাইন , বিস্ময়ের পর বিস্ময়।মরু অঞ্চলে জলধারাকে তারা ইচ্ছেমত ব্যাবহার করেছে অতুলনীয় মেধা আর দক্ষতা দিয়ে। পাইপ দিয়ে , নালা দিয়ে , পাহাড়ের গায়ে ধাপ বানিয়ে সারা শহরকে জলসিক্ত করে গেছে। পেত্রা আরো রহস্যময় এই কারণে যে এখনো অনেক কিছু আবিষ্কার করা বাকি ! শিলালিপি আর গ্রাফিত্তি কতটুকুই বা ধরে রাখে ? রোমান এবং গ্রিকদের লেখা থেকে অনেক তথ্য জানা যায় , বিশেষ করে ইতিহাসবিদ ডিওডোরাস আর ভূগোলবিদ স্ট্র্যাবোর লেখা থেকে। তবে এই কৌশল তারা বেশ ভালো করে গোপন রাখত বলে ডিওডোরাস লিখে গেছেন। ... ...
সমাজতত্ত্ব, রাজনৈতিক-অর্থনীতি বা পোলিটিক্যাল সায়ান্সের সামান্য পাঠও আমাদের অবহিত করে যে সামাজিক অনিশ্চয়তা, অর্থনৈতিক সুরক্ষা বা চাকরির সম্ভাবনাহীনতা যখন প্রাধান্যকারী জায়গায় থাকে তখন একদিকে জনমোহিনী রাজনীতির সামান্য অনুদানও জনসমাজ খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরতে চায়, আবার অন্যদিকে শূণ্যদিশা জনসমাজের প্রবল ক্ষোভ এবং অপূর্ণতা mob violence বা গণহিংসার চেহারা নিয়ে আছড়ে পড়ে। স্মরণ করতে পারি সত্যজিতের “জনঅরণ্য”, মৃণালের একাধিক ছবি, শ্যাম বেনেগাল বা গোবিন্দ নিহালনি-র বিভিন্ন চলচ্চিত্রের কথা। আমরা দেখেছি নিস্ফলা ক্রোধ এবং আক্রোশ কিভাবে জনসমাজে প্রতিবিম্বিত হয়। এখানে ডাক্তারকে স্থাপন করলে দেখবো সে একজন সফল, ঈর্ষণীয়ভাবে স্বচ্ছল এবং ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ। এর বিপরীতে রোগীটি আর্ত, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উপযুক্ত সম্বলহীন এবং ক্ষমতাকেন্দ্র থেকে দূরে থাকা একজন ব্যক্তি মানুষ। একদিক থেকে দেখলে এ দ্বন্দ্ব ক্ষমতা এবং ক্ষমতাহীনতার মধ্যেকার দ্বন্দ্বও বটে। কিন্তু ক্ষমতাসম্পন্ন হলেও একজন আমলা বা পুলিস বা শিল্পপতি বা রাজনৈতিক নেতার সাথে ডাক্তারের পার্থক্য হল একজন আমলা বা পুলিস বা রাজনৈতিক নেতা সরাসরি ক্ষমতাকেন্দ্রের অংশীদার, এর উপাদান। একজন শিল্পপতি বহুলাংশে এদের নিয়ন্ত্রক। কিন্তু একজন ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মী ক্ষমতাকেন্দ্রের সাথে যুক্ত নয়। এবং এ অর্থে “ক্ষমতাচ্যূত”, ফলে এরা জনরোষের ক্ষেত্রে একটি soft target যাকে সহজেই আক্রমণ করা যায়, নিজেদের প্রবল ক্ষোভকে সহজে উগড়ে দেওয়া যায় এদের ওপরে। ... ...
২০১৮ সালের জুলাই মাসে অধ্যাপক পান্ডে এবং এবং তাঁর ছাত্র দেব কুমার থাপা একটি গবেষণাপত্রে ঘোষণা করেন যে তাঁরা এমন একটি পদার্থের সন্ধান পেয়েছেন যা ঘরের উষ্ণতায় অতিপরিবাহী [1]। এইরকম একটি পদার্থের খোঁজ বিজ্ঞানীরা অনেকদিন ধরেই করছেন, কাজেই পরীক্ষার ফল প্রকাশ করার পরেই গবেষকমহলে ব্যাপক সাড়া পড়ে। এবং খুব ভালো কোন কাজের ক্ষেত্রে যেমন হয়, বিশেষজ্ঞরা নানাভাবে খতিয়ে দেখার চেষ্টা করতে থাকেন, যে দাবিটি যথেষ্ট সঙ্গতিপূর্ণ কিনা। সেই সঙ্গতি খুঁজতে গিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠে এসেছে যা তীব্র বিতর্কের জন্ম দেয়। এই বিতর্কের মীমাংসা এখনও সম্পূর্ণভাবে হয়নি, তবে ২০১৯ সালের মে মাসে ঐ একই গবেষণাপত্র আরো বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। এই পরিবর্ধিত সংস্করণে পূর্বোক্ত গবেষকেরা ছাড়াও আরো কয়েকজন যুক্ত হয়েছেন। কিন্তু এই বিতর্কের আরো গভীরে ঢোকার আগে আমাদের গবেষণার বিষয়টি নিয়ে সামান্য একটু জেনে নেওয়া দরকার। সুপারকন্ডাক্টিভিটি বা অতিপরিবাহিতা খুবই জটিল তত্ত্ব, তাই আমরা যথাসম্ভব সহজ করে, যতটুকু না জানলেই নয় ততটুকুই জানবো। ... ...
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দিয়ে যুদ্ধ জয় করা যায়, উপনিবেশ গড়া যায়। কিন্তু তা দীর্ঘকালীন হবার সম্ভাবনা কম। বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চোখে আঙ্গুল দিয়ে এ সত্যকে দেখিয়ে দিয়েছে। ফলে মানসিক, বৌদ্ধিক ও চিন্তার উপনিবেশ তৈরি করাও সমধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলো। পরিণতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং চিন্তার ইতিহাস সংক্রান্ত তত্ত্ব নির্মাণেরও কারখানা হয়ে গেলো। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এডওয়ার্ড সইদ তাঁর সুবিখ্যাত বহু আলোচিত Orientalism গ্রন্থে দেখিয়েছেন কি বিপুল পরিমান অর্থের বিনিয়োগ হয়েছে শুধুমাত্র ওরিয়েন্টালিজম-এর ধারণা নির্মাণের জন্য। আমাদের জন্য এ আলোচনায় এটা খুব প্রাসঙ্গিক নয়। শুধু উল্লেখমাত্র। ... ...
ঈদের পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে আমার কাছে সেরা লাগে হচ্ছে ঈদের বাড়ি ফেরা। ঈদের দুই একদিন আগে কেউ যদি মফস্বল কোন শহরের বাসস্ট্যান্ডের দিকে খেয়াল করে তাহলে দেখতে পাবে ঘরে ফেরা কিছু মানুষের মুখ। এই মুখ গুলো ভ্রমণের ধকলে ক্লান্ত। সাথে কয়েকটা ব্যাগ, আণ্ডা বাচ্চা নিয়ে বিধ্বস্ত একেকজন। বাস থেকে নেমে রিক্সা নিলো হয়ত, ব্যাগ নিয়ে গুছিয়ে রিক্সায় বসার পরে রিক্সা ছেড়ে দেওয়ার অল্প কিছুক্ষণ পরে এই যাত্রীদের যে চেহারা হয় তা আমার কাছে সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য। ক্লান্ত কিন্তু কী একটা আলাদা আনন্দ, আলাদা সুখানুভূতি খেলা করে যায় একেকজনের চেহারায়। হয়ত ঢাকায় থেকে পড়াশোনা করে কোন তরুণী, একটা ব্যাগ নিয়ে রিক্সায় ক্লান্ত চেহারা নিয়ে যখন বাড়ির দিকে যেতে থাকে তখন তার মনের অনুভূতি ব্যাখ্যা করে এমন কেউ কী আছে? ... ...
রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ছিল, আনাজপাতির দাম বাড়ছিল, অটোভাড়া বাড়ছিল, চাকরির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। সুমনের পুরোনো গান ভেসে আসছিল, কন্ঠ জোরে ছেড়ে খুব একটা লাভ হচ্ছিল না, কারণ আমরা হেজে গেছি। আমাদের মতো এরকম হাজার হাজার পরিবার যারা দেখেছে কিভাবে ভিড়ের মানুষ ক্রমশ প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতে বয়ে নিয়ে যায় উলঙ্গ রাজার পোশাক, আমরাই যারা ঝেড়েমুছে সে পোশাক পরিয়েছি বারবার রাজার গায়ে, সেইসব মানুষেরা ততদিনে হাল ছেড়ে দিয়েছে। আলো আকাশের নীচে যেদিকেই হেঁটে গিয়ে তারা দাঁড়িয়েছে, তারও খানিক আগে এসে পথরোধ করেছে শস্য নয়, মাংস নয়, তাদেরই নিজস্ব ছায়া। বয়েসের তুলনায় অরুণ বড়ো হয়ে গেছিল অনেক, শুনতে পেতাম রাজনীতির সঙ্গে তার যোগাযোগ বাড়ছে, কলেজের দিনগুলো তাকে সময়ের অশনি চিহ্ন ও সংকেতগুলোর মধ্যে সমাচ্ছন্ন করে তুলছিল। মানচিত্রের গায়ে আঁকা দেশ নয়, আমাদের হৃদয়ের গভীরের দেশ পালটে যাচ্ছিল ক্রমশই। মানুষের শ্রম নয়, নিবিড়তা নয়, অন্য কোনো অন্ধকার অনুভূতিকে সম্বল করে দেশের ভেতরে এক দেশ গড়ে উঠছিল, যেখানের জল-আবহাওয়ায় আমার প্রজাতি ক্রমে দানব হয়ে যায়। ... ...
এবার কিন্তু অল্প সময়ে যোগার ঠিকমত না করতে পারায় মাত্র দুটি পদ রেঁধেছি। মূলত আমি ও আমার চাচাতো ভাই বরকত ঈদের রান্নার দায়িত্ব নিই। বরকত পড়াশোনা বেশি করে উঠতে পারেনি। মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে ও অনেক বছর কাজ করেছে। এখন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ফ্রি রান্নার কাজ করে। আসলে রান্নার বিষয়ে ওর একটা আবেগ কাজ করে। আমি ওর সহকারী হিসেবে কেনাকাটা থেকে ঈদের রান্না যায় খাওয়া অবধি থাকি। বড় দালানে বিছানা পেতে বাড়ির সকলে একসাথে খাওয়া দাওয়া হয়। যত অন্য আনন্দ কমে আসছে আমরা তত খাওয়াকে আঁকড়ে ধরছি। ... ...
যেখানে যেখানে আদিবাসী বাস্তুচ্যুত হয়ে ভারি শিল্প গড়ে উঠেছে, জলাধার তৈরি হয়েছে, ট্যুরিস্ট হাব বা নগরায়ণ হয়েছে সর্বত্র আদিবাসী জনবসতি দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হতে বাধ্য হয়েছে। সস্তার শ্রমিক হয়ে কর্পোরেট পুঁজি বৃদ্ধির সহায়ক হয়েছে। আর একটা প্রবণতাও ইদানীং বিভিন্ন রাজ্যে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে বাড়ছে। ডেলি দু টাকা কেজি দরে চাল দিয়ে আদিবাসীদের ভিখারিতে পরিণত করা। সব জায়গায় গেলে ট্যুরিস্ট হয়ে দেখবেন সন্ধ্যে হতে না হতে শহর থেকে যাওয়া মুক্ত অর্থনীতির দৌলতে জন্ম নেওয়া আর্বান এলিট, নব্যবাবুদের মনোরঞ্জনে আদিবাসী তরুণ তরুণী মনোরঞ্জনে ব্যস্ত। ... ...
১৯৩৫ খ্রীষ্টাব্দে বিখ্যাত সোভিয়েত বিজ্ঞানী ভ্যাভিলভ তাঁর বিখ্যাত গবেষণায় পৃথিবীর নয়টি অঞ্চলকে চিহ্নিত করেছিলেন যেগুলিকে জিনসম্পদের উৎস বলা চলে। ভারতসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, চীন, ইরাকঅঞ্চল, দক্ষিণ আমেরিকার চিলি ও আন্দিজঅঞ্চল, মেক্সিকো—অঞ্চলগুলি ছিল এরকম। পরবর্তীতে মার্কিন বিজ্ঞানী হারল্যান-এর গবেষণাতেও (১৯৭১খ্রীষ্টাব্দ) এই ব্যাপারটা প্রমাণিত হয়। মানুষ যতরকমের শস্য বা প্রাণী ব্যবহার করে, তার কতগুলো নির্দিষ্ট উৎসকেন্দ্র রয়েছে অর্থাৎ সেন্টার অফ অরিজিন। মানে জিনসম্পদ সারা পৃথিবী জুড়ে সমানভাবে ছড়িয়ে নেই। জিনসম্পদের সাথে খনিজ তেল বা কয়লার পার্থক্য রয়েছে। সেগুলি একান্তই প্রকৃতির দান। মানে, পৃথিবীর কোথায় খনিজ তেল বা কয়লা আছে, সে ব্যাপারে মানুষের কোনও হাতই নেই; তবে এগুলি উত্তোলনের প্রযুক্তি তার করায়ত্ত হতে পারে। জিন সম্পদ কিন্তু নিছক প্রকৃতির দান শুধু নয়। ... ...
সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অফ ডেভেলাপিং সোসাইটি” এবছর লোকসভা ভোটের পর সমীক্ষা চালায় বিভিন্ন রাজ্যে কত শতাংশ হিন্দু বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন [১]। আসাম প্রথম হয়েছে, রাজ্যে ৭০% হিন্দু পদ্মফুলে ছাপ দিয়েছেন। গুজরাটের মত পাঁড়-বিজেপি রাজ্যেও ৬৭% হিন্দু বিজেপির পক্ষে ছিলেন (পশ্চিমবঙ্গে ২১% থেকে ৫৭% হয়েছে, সে অন্য প্রসঙ্গ)। আসামে মেরুকরণের এই অভাবনীয় সাফল্যের কারণ কী? ... ...
'হিন্দি' একটি ভাষাবিশেষ নয়। এটি একটি সংস্কৃতি। উত্তর ও মধ্যভারতের বিশাল এলাকা এই সংস্কৃতির অঙ্গ। পঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল,জম্মু, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, গুজরাট, মহারাষ্ট্র এর অন্তর্ভুক্ত। এই সমস্ত প্রান্তেরই অসংখ্য নিজস্ব ভাষা রয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি স্বীকৃত সরকারি ভাষা। কিন্তু যোগাযোগ রক্ষাকারী ভাষা হিসেবে এই সমস্ত জায়গায় হিন্দির কোনও বিকল্প নেই। হিন্দিবলয়ের কেন্দ্র হিসেবে যদি উত্তরপ্রদেশ ও বিহারকে নেওয়া যায় তবে দেখা যাবে এই দুটি রাজ্যেও বহু নিজস্ব ভাষা আছে। বিহারে ভোজপুরি (দুরকম, গঙ্গার উত্তর ও দক্ষিণে), মগহি, মৈথিলি, অঙ্গিকা প্রধান। উত্তরপ্রদেশে ভোজপুরি, অবধি,বুন্দেলখণ্ডি, পহাড়ি ইত্যাদি। একইভাবে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের হিন্দি, হরিয়ানভি, পূর্বি পঞ্জাবি (মনে রাখতে হবে পশ্চিম পঞ্জাব থেকে যাঁরা এসেছিলেন তাঁদের ভাষা আলাদা ছিলো)। ... ...
যে নিরন্তর গণ আন্দোলন এখানে রাজনীতিকে সাম্প্রদায়িকতা, দুর্নীতি, ইত্যাদি পাপ থেকে মুক্ত রেখেছিল, সেই আন্দোলন – যে চাপেই হোক – স্তিমিত হয়ে পড়ল, তাকে গতিময় রাখার কোনো চিন্তাগত প্রয়াস দেখা গেলনা। বাম নেতৃত্বের তরফে এই বিকাশ বিষয়ে কোনো অনুসন্ধান হয়েছে বলে জানা নেই। হয়তো তাঁরা এই পর্যবেক্ষণের ভার ছেড়ে রেখেছিলেন পেশাদার বুদ্ধিজীবীদের ওপর, বিস্মৃত হয়েছিলেন, বাম রাজনৈতিক দর্শনে বুদ্ধির চর্চাটা সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মীদেরই করতে হয়, ঠিকাদার নিয়োগ করে এ কাজ চলে না, এবং বুদ্ধিজীবীদেরও কর্মী হয়ে উঠতে হয়। ফল হয়েছে মারাত্মক, পেশাদার বামপন্থী বুদ্ধিজীবীরা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি যে সাম্প্রদায়িক বিভাজন এ-রাজ্যে একটা বিপদ হয়ে দেখা দিতে পারে। ... ...