সুন্দরবন ডেল্টা আজ অস্তিত্বের সঙ্কটের মুখে। একদিকে গোটা সুন্দরবন ভূমিরূপ গঠনের দিক দিয়ে যেমন নবীন, অন্যদিকে বিশ্ব উষ্ণায়নের সঙ্গে তীব্র হচ্ছে সংলগ্ন জনবসতির ‘ক্লাইমেট রিফিউজি’ হওয়ার সম্ভাবনা। বিশ্ব উষ্ণায়নের সঙ্গে একদিকে যেমন বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের তীব্রতা। একই সঙ্গে তীব্র হয়ে উঠছে বাড়তে থাকা জনবসতির বেঁচে থাকার আর্তি। পরিবেশবিদ ও ভুতাত্ত্বিকেরা সুদুরপ্রসারি দৃষ্টি দিয়ে বাঁচাতে চাইছেন গোটা প্রকৃতি। আর স্থানীয় মানুষ চাইছেন বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় আশু উন্নয়ন। গণদাবী হয়ে উঠছে কংক্রিট বাঁধ। ফলে, ‘বনাম’ হয়ে মুখোমুখি দাঁড়াচ্ছে 'উন্নয়ন’ আর ‘নিসর্গ’। ‘বনাম’ হয়ে মুখোমুখি দাঁড়াচ্ছে ‘কংক্রিট বাঁধ’ আর ‘মাটির বাঁধ’। ... ...
খুবই আশ্চর্যের বিষয়, রাষ্ট্র কোনভাবেই পরিবেশ প্রতিবেশের আরো অবনতি হতে পারে এমন বিষয়কে ছাড়পত্র দেবে না, যদি না পক্ষে খুব শক্তিশালী যুক্তি থাকে, এটা এদেশের পরিবেশ আইনের একেবারে মূল কথা। কিন্তু গত জানুয়ারি মাসে সুপ্রিম কোর্ট সেন্টাল ভিস্তার ওপর যে রায় দিয়েছে তাতে এর কোনো ছাপ নেই। যদিও পিটিশনাররা সবিস্তারে জানিয়েছিলেন কিভাবে দিল্লি ডেভেলপমেন্ট এক্টকে কলা দেখিয়ে জমির ব্যবহারে দ্রুত পরিবর্তন করা হয়েছে, কিভাবে হেরিটেজ এবং আর্কিটেকচারাল বিবেচনাকে জলাঞ্জলি দেওয়া হয়েছে এবং পরিবেশের পক্ষে এই প্রজেক্ট কতখানি ক্ষতিকারক সে সম্বন্ধে কোনোরকম বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা না করেই এনভায়রনমেন্টাল ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হয়েছে,তবুও সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে কোনো পরিবর্তনে বাধ্য না করেই পুরো প্রজেক্টকে ছাড় দেয়। শেষ পয়েন্টটিতে তাদের মনে হয়েছে বৃক্ষ সংরক্ষণের সরকারি প্রতিশ্রুতিতেই কাজ হবে এবং পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে খানকতক স্মগ টাওয়ার বসালেই যথেষ্ট হবে। পরিবেশ ভাবনা এবং দূষণ কমানো যে এক ও অভিন্ন বিষয় নয়, সেটা বোঝার মানুষ ও প্রতিষ্ঠান আমাদের দেশে দেখা যাচ্ছে বিরল। ... ...
রাষ্ট্রসংঘ বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার পাশাপাশি আমাদের দেশের জাতীয় পরিবহন-নীতিসহ কেন্দ্র বা রাজ্যনিয়ন্ত্রিত সংস্থার বিভিন্ন সুপারিশে বারবার সাইকেলকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা থাকলেও বিড়ালের গলায় ঘন্টাটি এখনও বাঁধা যাচ্ছে না। কোভিড-পরবর্তী সময়, যখন বিশেষভাবে আমাদের সাইকেলমুখী করেছে – শহরে সাইকেলের পক্ষে পদক্ষেপ নেওয়ার এটাই সঠিক ও সুনির্দিষ্ট সময়। শহর বদলালে বদলাবে পৃথিবী। রাষ্ট্র বা প্রশাসনের বাইরে যে বৃহত্তর পৃথিবী ও সমাজ – যে সমাজ ধনী-দরিদ্র, নারী-পুরুষ বিভিন্নভাবে বিভক্ত ও বিপন্ন, যে পৃথিবী উষ্ণায়ণ ও জলবায়ু পরিবর্তনে জর্জরিত – সাইকেল তাতে কিছুটা মুক্তির হাওয়া আনুক। ... ...
পশ্চিমবঙ্গের কাছ থেকে বাংলাদেশ যেমন তিস্তার জল পাওয়ার দাবী তুলেছে, তেমনি আমাদেরও একটি উল্টো দাবী জানানোর জায়গা রয়েছে বাংলাদেশের কাছে। সেটাও নদীর জল নিয়েই। যে সমস্ত নদী বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢোকে, তার মধ্যে যেমন দক্ষিণ দিনাজপুরের আত্রেয়ী, যমুনা আর উত্তর দিনাজপুরের কুলিক রয়েছে। এই নদীগুলোর ওপর ‘রাবার ড্যাম’ দিয়ে জল আটকে রেখেছে বাংলাদেশ। এটি হল জাপানি টেকনোলজি। দেখতে অনেকটা লম্বা টিউবের মত। যেখানে বাতাস ভরে ড্যামের আকৃতি তৈরি করে নদীর জলের প্রবাহ রোধ করা হয়। আর তার ফলে ভারতের দিকের নদী পাড়ের স্থানীয় এলাকার মানুষেরা জল সংকটে ভুগছে। চাষের ক্ষতি হচ্ছে। ... ...
সম্পর্কস্থাপন কার কার মধ্যে? মানুষ/না-মানুষের মধ্যে সম্পর্কস্থাপন? আমরা এই সম্পর্কস্থাপনের এক বয়ান দেখি পশ্চিম/উত্তরের তূলনামূলক নৃতত্ত্বে। সেখানে আমরা প্রাচ্য/দক্ষিণের নির্মাণ হতে দেখি - প্রাচ্য/দক্ষিণের মানুষ (সংস্কৃতি) যেন প্রকৃতির সাথে এক সঙ্গতিতে, হারমনিতে অবস্থান করছেন। প্রাচ্য/দক্ষিণের মানুষ যেন প্রকৃতির সন্তান - প্রকৃতির কোন এক কুলুঙ্গিতে তাদের ঠাঁই। এই ভাষ্যে প্রকৃতি/সংস্কৃতির বিভাজন স্বত:সিদ্ধ কারণ, এই বিভাজনের বাস্তবতা ব্যাতিরেকে দুটি ক্যাটিগরীর সঙ্গতির গল্প বলাই যায় না। ... ...
আবার পরিবেশ আন্দোলনের অংশ হিসেবে পরিবেশবাদ স্বদেশী/সংরক্ষণবাদের সাথে ধারণাগতভাবে জীববৈচিত্র রক্ষার কর্মকাণ্ডে মিশে যায়। এই ধারণাতেও এক অপরিবর্তনশীল প্রকৃতির কল্পনা করা হয় যেখানে বহুবিচিত্র জীবজগতের অস্তিত্ত্ব যেন শুধুমাত্র মানুষের কর্মকাণ্ডের মধ্যে সীমিত। এই ধারণায় স্বাভাবিকভাবেই বাদ পড়ে যায় ইকলজির বিবর্তনের সম্ভাব্যতার কথা, ইকলজির চলমান গতিশীলতার কথা। বাদ পড়ে যায় সেই সব জীবাশ্মের কথা যারা আমাদের অন্তত কিছুটা দুর্বলভাবে হলেও জানিয়েছে যে বিবর্তনের ইতিহাসে পৃথিবীতে মানুষ আসার আগেই ৯৯.৯ শতাংশের বেশী জীবকূল লুপ্ত হয়ে গেছে। ... ...