ও-জে-সিম্পসন নিজের স্ত্রীকে খুন করার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন, বহুদিন ধরে বহুল-চর্চিত ট্রায়াল হয় তার, সে ট্রায়ালের সম্প্রচার হয় সারা আমেরিকা জুড়ে টেলিভিশনে। এবং আশ্চর্যজনকভাবে, প্রথমবার ট্রায়ালে গুচ্ছ গুচ্ছ প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ছাড় পেয়ে যান ওজে। প্রসিকিউশন প্রমাণ এনে দেন ওজে নিজের স্ত্রীকে মারধোর করতেন, কিন্তু ডিফেন্স অ্যাটর্নি অ্যালান ডেরশোউইজ সওয়ালে বলেছিলেন, তাতে কী? প্রতি ২৫০০-এ নির্যাতনকারীর ১ জন খুন করেন শেষমেশ। জুরির লোকেরা একটু বেইজ থিয়োরেম জানলেই দেখতে পেতেন এই তথ্য বরং প্রমাণ করে যে ওজে সিম্পসনের দোষী হওয়ার সম্ভাবনা ৯০% এর উপরে! ... ...
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক থেকে প্রচারিত 'প্রোনিং' বিষয়ক পরামর্শ - বাংলা অনুবাদ। ... ...
বাঙালি এতকাল ভোটমগ্ন ছিল। ঘুম ভাঙছে এতদিনে! যখন বলা হচ্ছিল, মহারাষ্ট্র দিল্লি গুজরাট মধ্যপ্রদেশ থেকে আসা ট্রেনের যাত্রী দের সবাইকে অন্তত 'ৱ্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট' করে ট্রেনে ওঠানো হোক, সবাই ভোটধ্যানে ছিলেন। আগেরবারের অভিজ্ঞতা বলছে, একমাস আগে থেকে এবার অন্তত এয়ারপোর্টে টেস্ট করানো বাধ্যতামূলক হলে এত রোগ ছড়াতে পারত না বাঙলায়। এসব বলতে গিয়ে 'জিঙ্গল বেল আইটি সেল' এর খাতায় নাম তুললেন যারা, তাদের গাল দিন মনের সুখে। শুধু মাথায় রাখুন, পাপ বাপকেও ছাড়ে না। মাস্ক না - পরে, দূরত্ববিধি না মেনে যারা ঘুরে বেড়িয়েছি যত্রতত্র, দিল্লি বাঙলা ডেলি প্যাসেঞ্জারি করে গেলেন যারা, সঙ্গে আনা বহু স্ট্রেনের করোনা ভাইরাস তাদের অনেককেই রেয়াত করবে না। 'ভাইরাসের স্মৃতি নেই', বিলকুল ঠিক, তবে ভাইরাসটা কিন্ত মানুষ মারতে আসে নি, এসেছে নিজেদের বাঁচাতে। নিজে বাঁচতে মরণকামড় এবারও হয়তো দেবে না, এখনো পর্যন্ত সংক্রমিত মানুষের মৃত্যুহার কুড়ি সালের তুলনায় সামান্য বেশি, খুব বেশি নয়। তবে, এই ঢেউই শেষ নয়, লাইনে আছে আরও অনেক বাস্তুচ্যুত ভাইরাস, গোটা বিশ্ব জুড়ে তান্ডব চালাচ্ছে একের পর এক স্ট্রেন, কোনটা নবজাতক, কোনটা হাইব্রিড, বুঝে উঠতে হিমশিম খাচ্ছেন ভাইরাস নিয়ে কাজ করে চলা বিজ্ঞানীরা। ... ...
আরেকদল বলে চলেছে, সরকার কী করবে? মানুষগুলোই বদ। মানুষগুলোই কোনও কথা শোনে না। তাই তো বটে। রাজনৈতিক প্রচার থেকে কুম্ভমেলা, তাতে তো সরকারের কোনও দায় নেই। যাবতীয় সচেতনতার প্রচার যে জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মাসে শূন্যে পৌঁছে গিয়েছিল, তাতে সরকারের দায় নেই। দাবাই ভি আওর কড়াই ভি বলে চলা নেতা মাস্ক না পরে ব্রিগেডে সভা করছে, সরকারের কোনও দায় নেই। কোভিড টাস্কফোর্স যে গত দু-মাস কোনও মিটিং করে নি তাতেও সরকারের দায় নেই। মানুষ যে আজ লকডাউন শব্দটা শুনলে রেগে যাচ্ছে, তাতেও রাষ্ট্রের দায় নেই। অক্সিজেন বিদেশে এক্সপোর্ট হল, সরকারের কোনও দায় নেই। খাদ্য থেকে ওষুধ, কোনও কিছুতেই সুরক্ষা দেওয়ার কোনও দায় রাষ্ট্রের নেই। সব মানুষদের দোষ। এর বিপ্রতীপে দাঁড়িয়ে আছে আরেক যুযুধান পক্ষ। মাস্ক পরতে বললে তারা নিয়ে চলে আসছে গরীব মুটে-মজুরদের অসহায়তার কথা। তারা দুটো কথা ভুলে যাচ্ছে। এক, মহামারীতে সব থেকে বেশি কষ্ট সহ্য করবে ওই নীচেরতলার মানুষগুলোই। যে যত ওপরে, তার চিকিৎসা পাওয়ার সুরক্ষা তত বেশি। দুই, একথা অর্থনীতিতে প্রমাণিত সত্য যে গরীবদের চিকিৎসা ও তৎসংক্রাম্ত আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা কম। ... ...
সাফল্যের ইতিহাস উল্লেখ্য বিষয় হলেও সেই ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা এই প্রবন্ধের মূল উদ্দেশ্য নয়। প্রবন্ধের প্রধান উদ্দেশ্য পাঠকদের কাছে এই সত্য পরিবেশন করা যে প্রাণঘাতী জীবাণুর সঙ্গে মানব সভ্যতায় সংঘাত এই প্রথম নয়। একশ বছর আগে ১৯১৮-র আর একটি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস যাকে স্প্যানিশ ফ্লু বলা হয়, এক বছরে প্রায় পাঁচ কোটি (৫০,০০০,০০০)মানুষের প্রাণ হরণ করেছিল। শিশু, বৃদ্ধ, তরুণ, জওয়ান কেউ রেহাই পায়নি ভাইরাসের কবল থেকে। ১৯১৮র ভয়াবহ প্যান্ডেমিকের পর এক শতাব্দী পেরিয়ে গেছে। সামাজিক, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক, এবং প্রযুক্তিগত বিদ্যায় অভাবনীয় উন্নতি সত্ত্বেও, স্প্যানিশ ফ্লুএর চেয়ে শতভাগ দুর্বল কোভিড-১৯-এর হাতে এক বছরে সাতাশ লক্ষ (২,৭২০,০০০)মানুষের প্রাণনাশ কি এই প্রমাণ করে যে রক্তপিপাসু প্রকৃতির হাতে মানুষ আজও অসহায়? ... ...
ফাইজারের বায়োটেকনোলজি-জাত ভ্যাক্সিন এদেশে এখনও আসেনি। সে ভ্যাক্সিনে নরওয়েতে তেইশ জন মারা গিয়েছেন। সকলেই ভ্যাক্সিনের কারণেই মারা গিয়েছেন কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয় - তবু, ধরেই নেওয়া যাক, এঁদের মৃত্যুর কারণ ওই টিকা। এই ভ্যাক্সিন সম্পূর্ণ নতুন পদ্ধতির এম-আরএনএ ভ্যাক্সিন - পৃথিবীতে প্রথম। আগামী দিনে এই পথেই হয়ত আসবে অজস্র সংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধী টিকা। ... ...
আয়ুর্বেদ সহ বিভিন্ন প্রাচীন চিকিৎসাবিধিতে বিভিন্ন সময়, পরিবেশ ও কালে স্থিত মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে কেমন আচরণ হওয়া উচিত এ নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা আছে। আমি আয়ুর্বেদ খানিকটা জানি। অন্য দেশের এবং চিকিৎসাব্যবস্থার কথা কথা দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারবোনা। এজন্য আয়ুর্বেদে সীমাবদ্ধ থাকছি। আয়ুর্বেদে “সাত্ম্য” বলে একটি ধারণাকে ব্যবহার করা হয়েছে। ধারণাটি হল – বিপুল বিশ্ব জগৎ বা (macrocosm)-এর মাঝে মানুষ বা অন্য যেকোন জীবিত কণা হচ্ছে অণুবিশ্ব বা microcosm। এ দুয়ের ভারসাম্য দিন, ঋতু, স্থান, সময়, ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে বিঘ্নিত হয়। এ ভারসাম্যকে সমস্ত দিক থেকে রক্ষা করতে পারলে মানুষ সুস্থ থাকে, না পারলে অসুখের আবির্ভাব হয়। ... ...
স্বাস্থ্য বাজারের সওদাগররা – অর্থাৎ কিছু বেসরকারি হাসপাতাল - এই সার্বজনীন বিমা ব্যবস্থার পুরো ফয়দা তোলার জন্য নানারকম রাস্তা নিতে পারে যার সবগুলিই খুব স্বচ্ছ বা সৎ নয়। বস্তুত এরকম ব্যবস্থায় চিকিৎসার ব্যয় আরও দ্রুত ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়, কারণ হাসপাতাল বা রোগী কারোরই খরচ কমানোর কোন উৎসাহ থাকে না। উভয়েই জানে সরকার টাকা দিচ্ছে; সেক্ষেত্রে একটি অসাধু হাসপাতাল প্রয়োজনের তুলনায় বেশি চিকিৎসা দেখিয়ে বিল ফাঁপিয়ে তুলতে পারে রোগীর অজান্তেই বা রোগীর প্রচ্ছন্ন সমর্থনে। এই দুর্নীতির রাস্তা বন্ধ করা খুবই কঠিন, বিশেষত যেখানে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির অস্তিত্ব খুব দৃশ্যমান নয়। ... ...
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিদান অনুযায়ী, প্রথম ধাপে প্রতিটি দেশ তাদের জনসংখ্যার ২০ শতাংশকে যাতে টিকাকরণ করাতে পারে সেই অনুপাতে ভ্যাক্সিন হাতে পাবে। কিন্তু ফারমা-কোম্পানি গুলি অনেক ক্ষেত্রেই তাদের ব্যাবসার সুযোগ সুবিধের ক্ষেত্রে দেশীয় সরকারের ওপর নির্ভরশীল। বহু দেশেই কোভিড মোকাবিলা, যার একটি চূড়ান্ত পর্যায় হল ভ্যাক্সিন নিশ্চিত করা, রাজনৈতিক নির্বাচনে নির্ণায়ক ভূমিকা গ্রহণ করবে। ... ...
আমাদের দেশে এবং সমগ্র বিশ্ব জুড়ে দাপিয়ে বেড়ানো করোনা-কাহিনী স্বাস্থ্য নাগরিকত্বের এই দ্বিত্বতা প্রকট করেছে। ইউরোপ আমেরিকায় একভাবে প্রকটিত, ভারতবর্ষে আরেকভাবে। নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন-এর মতো বিশ্ববন্দিত মেডিসিনের জার্নালে আমেরিকায় কালো এবং অন্যান্য গোত্রভুক্ত মানুষের স্বাস্থ্যের সাথে সাদা মানুষদের প্রকট স্বাস্থ্য বৈষম্যকে বলা হয়েছে “স্ট্রাকচারাল রেসিজম” বা সমাজের কাঠামোগত বর্ণবিদ্বেষ। ... ...
প্রতিবন্ধকতা নিয়ে ততক্ষণই মাথা ঘামাব, যতক্ষণ তা সেলেবল, এবং যতক্ষণ তা টোকেনিজমের গন্ডীর ভেতরে থাকে- উৎসবের প্রাঙ্গনে এর চেয়ে বড় বৈষম্য আর কী হতে পারে? যাক্, যেকথা দিয়ে শুরু করেছিলাম, "অন্যরকম পুজো" বা চলতি কথায় নিউ নর্মালের পুজো, অনেক নেই-এর পুজো -এ আমাদের, প্রতিবন্ধী মানুষদের বাৎসরিক অভিজ্ঞতা। ... ...
ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখতে পাওয়া যাবে যে সেলফের বিষয়টা আদতে আধুনিক। আজকের আধুনিক মানুষ যেভাবে তার সেলফ নিয়ে ভাবে মধ্যযুগের রাজা বা দাসেরা কিন্তু সেভাবে ভাবিত ছিলেননা। আধুনিক যুগের একদম গোড়ায়, মোটামুটি ১৫০০-১৮০০ শতকের মধ্যে অভ্যন্তরীণ আর বাহ্যিক সেলফের একটা পার্থক্যের ধারণা গড়ে উঠতে থাকে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবোধকে মূল্য দিতে আর মানবিক বিকাশ ও পরিবর্তনের ধারণাকে স্বীকৃতি দিতে। প্রাচীন গ্রীক দর্শনে যে “know thyself” এর ধারণা গড়ে উঠেছিল সেটা ছিল একজনের প্রতিভা আর দক্ষতাকে সঠিকভাবে যাচাই করার জন্য যাতে সে তার কর্তব্য ঠিকভাবে পালন করতে পারে এবং উপযুক্ত বিচার করার ক্ষমতা অর্জন করতে পারে। একে আজকের আধুনিক মানুষের সেলফের ধারণার সাথে এক করে দেখা যায় না। ... ...
অ্যাম্বুলেন্সের বদ্ধ জায়গার মধ্যে একটু শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। তাছাড়া মোটামুটি নির্বিঘ্নেই পুরো ব্যাপারটা মিটে যায়। প্রথম রাতে ডক্টরস' কেবিন খালি পাওয়া যায় নি। জেনারেল ওয়ার্ডেই রাত্রিবাস। আহা! 'জেনারেল ওয়ার্ড' বলে নাক শিঁটকোবেন না যেন.. এই হাসপাতালের 'জেনারেল ওয়ার্ড' বহু কর্পোরেট হাসপাতালকে গুনে গুনে খান পাঁচেক গোল দেবে। এসি ওয়ার্ড, দামী বেড, পরিষ্কার চাদর, পাশে ড্রয়ার সহ র্যাক। বেডগুলোর মাঝে ছ'ফুটের বেশি দূরত্ব বজায় রাখা। সিল করা পানীয় জলের বোতল, কৌটোয় সাজানো খাবার, দু-বেলা চা। সাথে স্টাফেদের আন্তরিক ব্যবহার। নিজের কথা বলছি ভেবে বাঁকা হাসি দেবেন না। সবার কথা ভেবেই বলছি। যেহেতু সাথে বাড়ির লোক কেউ নেই তাই বয়স্কদের বকেঝকে নিজেদের হাতে করে খাইয়ে দেওয়া, সময়মতো ওষুধ-জল পৌঁছে দেওয়া ইত্যাদি সবটাই অত্যন্ত দক্ষতা আর মানবিকতার সাথে তাঁরা করে চলেছেন। নিয়মিত জুনিয়র এবং সিনিয়র ডাক্তাররা দেখভাল করছেন। সবটাই ওই পিপিই-র অসহ্য কষ্ট নিয়ে। প্রাথমিক অব্যবস্থা কাটিয়ে সরকার কোভিড নিয়ে যে রকম ইতিবাচক ভূমিকা নিচ্ছেন তাতে তাঁদের অকুন্ঠ প্রশংসা প্রাপ্য। এখনো অনেক অভাব, অনেক অভিযোগ আছে জানি। তবু, এই সময়ে দাঁড়িয়ে তাঁরা যতখানি করেছেন সেটাও অনেক। ... ...
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে (এখানে ইউরোপ ধরে নিতে হবে) ১৮৪৮-এর রাজনৈতিক অস্থিরতা, মানুষের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ আন্দোলন (বিশেষ করে ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ও জার্মানিতে) স্বাস্থ্যের জন্য একটি জাতীয় আন্দোলনের জন্ম দিয়েছিল। নতুনভাবে জনস্বাস্থ্যের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং আইন-কানুন, সোশ্যাল মেডিসিন এবং এপিডেমিওলজির মতো স্বাস্থ্যের নতুন শাখা তৈরি হল। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হল মেডিসিনের দর্শনের জগতে – নতুন করে বিশিষ্টতা পেলো প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বা আগাম রোগ-প্রতিরোধের বিষয়। টমাস কুনের অনুসরণে বলা যায় মানুষের গণ আন্দোলন এবং স্বাস্থ্যের দাবীতে সোচ্চার হওয়া মেডিসিনের দর্শন ও ভাবনার জগতে একটি “প্যারাডাইম শিফট” ঘটালো – বেড সাইড মেডিসিনকে অতিক্রম মেডিসিন এলো জনসমাজে এবং জনস্বাস্থ্য একটি আলাদাভাবে চিহ্নিত অবস্থান হল। ... ...
বৈজ্ঞানিকদের পুর্ব-লব্ধ জ্ঞান এক্ষেত্রে বিশেষ কাজে লেগেছে। সেগুলো হল – (১) করোনা ভাইরাসের দেহের স্পাইক প্রোটিনের ভূমিকা সম্বন্ধে আগাম ধারণা থাকা, (২) ইমিউনিটির ক্ষেত্রে স্পাইক প্রোটিন প্রতিরোধের ক্ষেত্রে “নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি”-র ভূমিকা, (৩) নিউক্লিক অ্যাসিড (যেমন আরএনএ বা ডিএনএ) ভ্যাক্সিন প্ল্যাটফর্মের উন্নত চেহারায় বিবর্তন এবং (৪) ভ্যাক্সিন তৈরির প্রক্রিয়াকে ধাপে ধাপে (sequentially) করার পরিবর্তে সমান্তরাল ভাবে (parallel) করা, কিন্তু যারা ভ্যাক্সিন স্টাডিতে অংশগ্রহণ করেছে তাদের ক্ষেত্রে কোন ঝুঁকি না নিয়ে। পূর্বোল্লেখিত সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে – “কার্যকারিতা কেবলমাত্র তখনই নির্ধারণ করা যাবে যখন যাদেরকে ভ্যাক্সিন দেওয়া হয়েছে এবং অতিমারির হটস্পটের মধ্যে তুল্যমূল্য বিচার (match) করা যায় ... এজন্য প্রাথমিক এন্ড পয়েন্টগুলোকে সতর্কতার সাথে নির্বাচন করতে হবে (এ বিষয়ে এর আগে বিস্তারিত আলোচনা করেছি), নির্বাচন করতে হবে স্টাডি-ডিজাইন এবং স্যাম্পেল সাইজের (অর্থাৎ কতজনের ওপরে ট্রায়াল দেওয়া হবে) সম্ভাব্যতার পুনর্মূল্যায়ন বিবেচনায় রাখতে হবে।” ... ...
মা যে হল ঘরে ছিলেন, তার এ মাথা থেকে ও মাথা এত দূর যে শেষ অব্দি মা'র চোখ পৌঁছাতো না। সারাদিন লাঠি দিয়ে ঘর আর বাথরুম মোছা হতো। নার্সদের ব্যস্ততার কোনো সীমা ছিল না। সকাল থেকে রাত তাঁরা এ রোগী থেকে ও রোগীর মাথার কাছে ছুটে বেড়াচ্ছেন।হাগিজ পাল্টে দেওয়া, পরপর ঘড়ি ধরে ওষুধ খাওয়ানো, ইনজেকশন দেওয়া, অনেককে খাইয়েও দিতে হতো। দুপুরে বাড়ির লোকদের সাথে ভিডিও কলে দেখা করিয়ে দিতেন তাঁরাই। সারারাত তাঁরা কেউ না কেউ হলঘরে পায়চারি করতেন। মা'র হাসপাতালে থাকাকালীন ওই ওয়ার্ডে একজনেরও মৃত্যু হয়নি। খান দশেক বেড ফাঁকা ছিল বেশ কিছুদিন। ... ...
নিউমার্কেট এবং কলকাতা কর্পোরেশনের নিকটেই রক্সি সিনেমা হলটা নিশ্চয় অনেকেই চেনেন। ওর সামনে দিয়ে কতোবার হেঁটে গেছেন অতীতে,যেখানে ওই সিনেমা হলটার উলটোদিকের ফুটপাতে সাব্বির ব্যাগওয়ালা বসতো নানানরকমের জুটের এবং কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে! মনে আছে? যেটাতেই হাত দিতেন, ঝাঁকড়াচুলো সাব্বির বলতো "ওনলি থ্রি হান্ড্রেড।" ওই রক্সি সিনেমা হলটা এখন কলকাতা কর্পোরেশনের স্থায়ী কোভিড টেস্টের সেন্টার। দারুণ ব্যবস্থা। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। প্রত্যেক কর্মীই ভীষণ সহানুভূতি সহকারে এবং সুশৃঙ্খলভাবে নিজের নিজের কাজ করে যাচ্ছেন। অনেকে এই সেন্টারটার কথা জানেন না বলে গিজগিজে ভীড় নেই। আর সবচেয়ে বড়ো কথা ওই বড়ো বড়ো ঘরগুলোর কোথাও কোনো মন খারাপের ছায়া বা বিষণ্ণতা লুকিয়ে নেই। যাঁর কোভিড পজিটিভ ধরা পড়বে, তিনি ওখান থেকে ভয় নিয়ে বেরোবেন না। তাঁর মনে হবে কোয়ারেন্টিনে থাকলেই সুস্থ হয়ে যাবো। আর হবেনও তাই। উচ্চবিত্তরাও কিন্তু নিশ্চিন্তে যেতে পারেন। পুরসভা,সরকারি,ঘিনঘিনে, গন্ধ,জানোয়ারের মতো ব্যবহার, ছোটলোকদের জায়গা...ওখানে গিয়ে দাঁড়ালে এসব কথা মনেই হবে না। ছুটি এবং লকডাউনের দিন ছাড়া বাকি সব দিন খোলা। ... ...
কেরালার সেন্টার ফর পাবলিক পলিসি রিসার্চের সিনিয়র ফেলো জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ রিও জনও দ্য ল্যান্সেট এর কাছে একই রকম সন্দেহ প্রকাশ করেছেন কোভিড - ১৯ এর টেস্টিং এর তথ্য নিয়ে। তাঁরমতে বিভিন্ন রাজ্য বিভিন্ন ধরনের টেস্ট ব্যবহার করছেন; ক্রমশঃ র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টিং করার ঝোঁক বাড়ছে। এই ধরনের টেস্টে ফলস নেগেটিভের অনুপাত বেশি। অনেক রাজ্য ঠিক কী কী ধরনের টেস্ট কতবার করেছেন সেই তথ্য স্পষ্ট করছেন না। ফলে বিভিন্ন রাজ্যের তুলনা করার কোনো মানে দাঁড়াচ্ছে না। সব ধরনের টেস্টিংকে একত্রিত করে যে সংখ্যাটি প্রকাশিত হচ্ছে রোজ তার থেকে আমরা কেমন আছি, সেটা স্পষ্ট করে বোঝা যাচ্ছে না। ... ...
রিপোর্ট অনুযায়ী ৬৫টি পেমেন্টের ক্ষেত্রে রোগীদের ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা দিতে হয়েছিল। অডিট করার পরে ৩৮ লাখ টাকা কমে যায়। আরেকটি ক্ষেত্রে ৩১টি ক্ষেত্রে ৫১ লাখ ৮৪ হাজার টাকার থেকে অডিটের পরে ১২ লাখ ৬ হাজার টাকা কম দিতে হয়। দুটো মিলে ৫০ লাখ টাকা। ব্যাঙ্গালোরের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় জানা যায় ৭ দিন হাসপাতালে থাকার বিল হয়েছিল ৯৩ লাখ টাকা। বিদেশে, একমাত্র আমেরিকা ছাড়া, ইউরোপের দেশগুলোতে এরকম বিলের কথা ভাবা যায়না। নিউজিল্যান্ড সহ অধিকাংশ দেশেই স্বাস্থ্যব্যবস্থা সরকারের পরিচালনায়। ফলে এ্ররকম ঘটনা ঘটেনা বললেই চলে। পুণেতে তাও সরকারি একটা অডিট হয়েছে, বিলের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। পশ্চিমবঙ্গে ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের মতো সংগঠনের তরফে বারংবার চিঠি দেওয়া এবং হস্তক্ষেপের পরেও অবস্থার খুব কিছু ইতরবিশেষ হয়নি। ... ...
কোভিড থেকে বাঁচার জন্যে সুরক্ষাসামগ্রীর দাম বেড়েছে বহুগুণ। N95 মাস্কের দাম কোভিড পরিস্থিতির আগে যা ছিল, কিছু ক্ষেত্রে দাম বেড়েছে তার দশগুণ - পরবর্তীতে দামে কিছুটা লাগাম টানা গেলেও, কোভিড-পূর্ব দামে পৌঁছানো যায় নি। পিপিই কিট বা হেড শিল্ড সবকিছুর ক্ষেত্রেই তা-ই। এর সাথে বাড়তি বিপদ, নিম্নমানের সামগ্রীকেও চড়াদামে বেচে দেওয়া। সরকারি কমিটি, যাদের দায়িত্ব গুণমান যাচাই করা, তাঁরা প্রবল উদ্যোগে এবিষয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন - এমন অপবাদ কেউই দিতে পারবে না। যাঁরা এইধরণের সুরক্ষাসামগ্রী তৈরী করেন, যাঁদের এবিষয়ে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে - বিশ্বজুড়ে কোভিড মাথাচাড়া দেওয়ার সময়েই তাঁরা সরকারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ঠিক কী পরিমাণ বাড়তি সামগ্রী প্রস্তুত করে রাখা প্রয়োজন - অভিযোগ, সরকার তাঁদের একাধিক চিঠির উত্তরটুকুও দেননি। ... ...