বিদ্যা ভারতী নিজেদের “বিশ্বের সর্ব বৃহৎ শিক্ষা সংগঠন” হিসাবে দাবী করে থাকে। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে “একটা জাতীয় শিক্ষা পদ্ধতি নির্মাণ করা যেটা নারী পুরুষের একটা তরুণ প্রজন্ম গড়ে তুলবে যারা হিন্দুত্বর প্রতি দায়বদ্ধ, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ এবং যারা প্রাণবন্ত ও শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক ভাবে পরিপূর্ণ উন্নত………” ... ...
"আমরাই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত। তাই স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়বে সেটাই স্বাভাবিক। তার জন্য সরকারকে দায়ী করা মোটেই উচিত নয়!” – ভক্তদের এই প্রচার নিশ্চয়ই আপনার মোবাইলস্ক্রিনে ভেসে উঠেছে বেশ কিছু বার। ভক্তদের চরিত্রই হল অর্ধসত্যর উপর নিজেদের নির্মাণকে খাড়া করা। ওপরের তথ্যটাই যদি আপনি দেশের জনসংখ্যার নিরিখে দেখেন, তাহলে, একদম শুরু, মানে ২০২০-র প্রথম থেকে ৬ মে ২০২১ পর্যন্ত ভারতে ১০ লাখ মানুষ প্রতি (per million) সর্বমোট আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা *১৫,৪২৯ / ১৬৮*। বিশ্বে আমাদের স্থান *১১৩ / ১১০* নম্বরে। এই পরিসংখ্যান অর্থাৎ প্রতি ১০ লাখ জনসংখ্যার কতজন সংক্রমিত / মৃত - অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে একবার দেখে নেওয়া যাক। ... ...
সর্বভারতীয় বলে পরিচিত যে ইংরেজি কাগজগুলো, সেগুলোর শিরোনামে প্রায়শই হিন্দি শব্দ/শব্দবন্ধ নিয়ে খেলা লক্ষ্য করা যায়, রোমান হরফে পুরোপুরি হিন্দি শিরোনামও দেখা যায়। নীতীশ কুমারের নেতৃত্বে ২০১০ এর বিহার বিধানসভা নির্বাচনে এন ডি এ জোট জয়ী হওয়ার পর ‘দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ এর শিরোনাম ছিল ‘Rajnitish’। ‘দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া’ র পাতায় অভিনেত্রী জেসি রনধাওয়া সম্বন্ধে প্রতিবেদনে ‘Jesse jaisi koi nahin’ শিরোনাম ব্যবহৃত হয়েছে। স্পষ্টতই এইসব কাগজের হিন্দিভাষী সম্পাদকরা ধরে নেন যে পাঠকের মাতৃভাষা হিন্দি নয়, সে-ও হিন্দি বোঝে। বাংলা, ওড়িশা বা দক্ষিণ ভারতের পাঠকদের অসুবিধার কথা ভাবা হয় না। ... ...
কৃষি-বিলের ফলে কৃষকের অবস্থা এক থাকলেও শস্য ব্যবসার উদ্বৃত্ত যদি স্থানীয় ব্যবসায়ীর পরিবর্তে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পুঁজির পকেটে ঢোকে তাতে আর্থিক অসাম্য আরো বাড়বে যেটা মোটেই কাম্য নয়। দ্বিতীয়ত সমস্যাটি দেশের রাজনৈতিক ভারসাম্য সংক্রান্ত। স্থানীয় পুঁজির বদলে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পুঁজির হাতে টাকা গেলে দেশের রাজনৈতিক ভারসাম্য বদলে যাবে। স্থানীয় পুঁজি আঞ্চলিক দলের অর্থের জোগানদার, যেখানে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পুঁজি অর্থ যোগায় জাতীয় দলগুলিকে। কৃষিতে স্থানীয় পুঁজির আধিপত্য শেষ হলে লাভ বিজেপির মত জাতীয় দলের, ক্ষতি আঞ্চলিক দলগুলির। এতে অনেক ক্ষেত্রেই স্থানীয় স্বার্থ বিঘ্নিত হতে পারে। ... ...
উদ্দেশ্য আমার কাছে অন্তত খুবই স্পষ্ট ছিল। এন আর সি, সি এ এ এবং ছাত্র ছাত্রীদের উপরে পুলিশ তথা সরকার সমর্থক গুন্ডা দের হামলা ইত্যাদি নিয়ে সারা দেশে যে নানা প্রতিবাদ হচ্ছে, কলকাতায় থেকে তার যতটুকু আঁচ পাওয়া যায়, সেটা অনুভব করার , চাক্ষুষ করার চেষ্টা করা। এবং গুরুচন্ডালি তে লিখে ফেলা, যতটা পারা যায়।। ... ...
প্রফুল্লচন্দ্রের রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে ব্যস্ত অধ্যায় ছিল খুলনার দুর্ভিক্ষ, উত্তরবঙ্গের বন্যায় কংগ্রেসের হয়ে সেবাকার্যে প্রবেশ করা। সুভাষচন্দ্র বসু প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ায়, এই সেবাকার্যের মূল দায়িত্ব প্রফুল্লচন্দ্রের উপর আসে। তিনি মন্তব্য করেন যে এর মাধ্যমে কংগ্রেস বাংলার সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারবে এবং ভোটদেওয়া হোক বা আন্দোলন হোক, এই জনসাধারণ ‘গান্ধী মহারাজের’ শিষ্যদের হাত ছাড়বে না। এর পাশাপাশি তিনি এও দেখেন, যে এই সব দুর্গতিই সরকারি নীতির প্রত্যক্ষ ফল। যেমন, রেলের জন্য অবিবেচনাপ্রসূত বাঁধ দেওয়া বন্যার জলকে নামতে দিচ্ছে না। সাধারণ মানুষ তাঁদের প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতায় এই সমস্যাগুলি বোঝেন, কিন্তু হোয়াইট ম্যানস বার্ডেন কাঁধে নেওয়া সরকারি অফিসাররা বোঝেন উল্টোটা। গ্রামের নিজস্ব সামাজিক সংগঠন ভেঙে যাওয়াই এই বিভিন্ন দুর্গতির পিছনে একটা বড় কারণ হিসেবে তিনি চিহ্নিত করেন। এবং সেই সংগঠনের উপর জোর দেওয়া, কংগ্রেসের কর্মসূচীর মূল ফোকাসে গ্রামপুনর্গঠনের কাজকে গুরুত্ব দেওয়া, ইত্যাদির উপর তিনি জোর দেন। হিন্দু-মুসলিম বৈরিতার সমাধানের পথও এর মধ্যে তিনি দেখতে পান। আসলে, গান্ধি-রাজনীতি বলতে আমরা যা বুঝি, তার একজন চ্যাম্পিয়ন ছিলেন প্রফুল্লচন্দ্র। গান্ধিজি প্রচারের জন্য, আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য যে যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তার অনেকগুলিকে বৈজ্ঞানিকের অনুসন্ধিৎসা দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র। এর একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ আত্মচরিতে চরকা বিষয়ক অনুচ্ছেদটি। চরকা এমন এক প্রশ্ন, যেখানে জাতীয়তাবাদী বিজ্ঞানী প্রফুল্লচন্দ্র বিশ্বমানবতাপন্থী সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথকে রেহাই দেন নি। চরকা-খদ্দরে অনাস্থাশীল কবি প্রফুল্লচন্দ্রের পত্রাঘাতের উত্তরেই চরকার সমালোচনায় নিয়ে তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধটি লেখেন। কিন্তু, রবীন্দ্রনাথের চরকা-স্মালোচনা যেখানে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের, মুক্ত মানবতার প্রশ্নে, প্রফুল্লচন্দ্রের আত্মচরিতের চরকা অধ্যায়টি বস্তুনিষ্ঠ। ... ...
এখন বুঝতে পারি যে সেবার কানকুনে গিয়ে আমি এই ভিন্নায়নেরই জালে পড়েছিলাম। সেখানে সবই আছে, একেবারে দস্তুরমতো, ঝাঁ-চকচকে, কিন্তু, আমি যেন থেকেও নেই। আমি যেন সব পেতে চাই, কিন্তু কোথায় যেন বাধে। আমার একইরকম পোশাক-পরিচ্ছদ, একই বুলি, একই পড়াশুনো, একই গবেষণা - তবুও আমি আর সবার থেকে দূরে, আর সবার থেকে ভিন্ন। দস্তয়েভস্কির লেখায় যেন এক ভিন্নায়িত মানুষেরই মনের গোপন অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা ভয়মিশ্রিত বিস্ময়বিষাদের অনুরণন ধরা পড়ে। ... ...
কোভিড-১৯ অতিমারী আমাদের সমাজের বহু বিভাজনকে আরও বেশি প্রকট করে দিয়েছে। অতিমারী একদিন বিদায় নিলেও তার ক্ষতচিহ্ন কিন্তু অত সহজে বিদায় নেবেনা। অনলাইন শিক্ষার সোনার পাথরবাটির সন্ধান ভারতবর্ষের ডিজিটাল ডিভাইডকেও একই ভাবে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। ... ...
এই তথ্যগুলোর বিচারে বলা যায়, নীতি আয়োগের কৃষি, কৃষক ও কৃষিপণ্য মূল্য নিয়ে যে ধারণা তা অত্যন্ত মায়োপিক। আমাদের কৃষির সমস্যা সমাধানের জন্য নয়, শুধুমাত্র কৃষিপণ্য বাজারে কিছু অ্যাগ্রিগেটরকে জায়গা করে দেওয়ার জন্য এই আইন করা হয়েছে। নতুন আইন কোনো সমাধানই নয়। তেমনি এখনই এর জন্য কৃষকের ভয়ানক সর্বনাশ হয়ে যাবে এমনও নয়। আবার ফড়ে বলে যে সম্প্রদায়কে চিহ্নিত করা হচ্ছে, তারা ভয়ানক অপরাধ করে যাচ্ছে তাও নয়। এটা ঠিক মধ্যস্বত্বভোগী বা ফড়েরা ভোক্তা যে মূল্য পণ্যের জন্য দেয় তার ১০-৭০% বিভিন্ন পণ্যের জন্য পেয়ে থাকে। কিন্তু এই ব্যবস্থা একটি অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে জন্ম নিয়েছে। অর্থনীতিতে কিছু ভূমিকা এরা পালন করেছে, তা নানা কারণে কৃষকের পক্ষে যায়নি। যতক্ষণ না সেই প্রক্রিয়ার পরিবর্তন হয় মধ্যস্বত্বভোগী থাকবেই, তা সে ধুতি পরা গ্রাম্য হোক আর কর্পোরেট সংস্থাই হোক। এই মুহূর্তে কর্পোরেট সংস্থার মাধ্যমে কৃষিপণ্যের বাজারজাত করা শুরু হলে খুব দ্রুত হওয়ার সম্ভাবনা নেই, পণ্যসংগ্রহের জন্য কর্পোরেটকে সেই ফড়েদের ওপরেই নির্ভর করতে হবে। নীতি আয়োগের আলোচনায় আরও যা লক্ষ করা হয়নি তা হল অকৃষি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ। ভারতের অর্থনীতির যা চেহারা তাতে একে লুম্পেন অর্থনীতি আখ্যা দেওয়াই যায়। কৃষিতে অবাঞ্ছিত শ্রমিক বা এরপর উপার্জন হারানো ফড়ে (ধরে নিলাম হবে) কোথায় যাবে? গ্রামে শুধু নয়, আমাদের শহরেও লুকোনো রয়েছে বেকারত্ব। এসব দেখেও না দেখার ভান করা কৃষিনীতি ও তার ওপর ওপর বিরোধিতা আসলে নিজেদের সামগ্রিক ব্যর্থতা ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা, সরকারের এবং বিরোধী পক্ষের। ... ...
গাঁজা জিনিসটা সেইসময়ে যেহেতু খুব সস্তার নেশা ছিল, সেটা নিয়ে পার্লামেন্ট আগে খুব মাথা ঘামায় নি। মুঘল আমলেও গাঁজার ওপর কোনোরকম নিয়ন্ত্রণ বসেনি। তবে ১৭৭০-এ কোম্পানি যখন প্রায় দেউলিয়া হয়ে পার্লামেন্টের দ্বারস্থ হয়, বেল আউট প্যাকেজের পাশাপাশি কোম্পানির থেকে লাভ বাড়ানোর অপশনগুলো পার্লামেন্ট বিচার করে। ১৭৯০ এ ভারতের ইতিহাসে প্রথমবার গাঁজা-চরস-ভাং-এর ওপর ট্যাক্স বসানো হল। এই ট্যাক্স বসানোর ব্যাপারে পরবর্তীকালে কিছু মজার ঘটনা ঘটেছিল। গাঁজা ভাং-এর ব্যাপক ব্যবহারে কালেক্টররা বুঝে উঠতে পারছিল না কীভাবে ট্যাক্সেশন করলে সবচেয়ে বেশি রেভিনিউ আসে। ফলে কখনো দোকানগুলোকে গুণগত তারতম্যে বিক্রির ওপর ট্যাক্স দিতে হয়, কখনো ট্যাক্সের নিয়ম পালটে দৈনিক ফিক্সড ট্যাক্স করা হয়, কখনো দামের ফারাক না দেখে সব ধরণের গাঁজা ভাং-এর ওপর ওজন অনুযায়ী ট্যাক্স ধরা হয়। ১৭৯০ এর নির্দেশনামায় কালেক্টররা সরাসরি ট্যাক্স নিতেন না, নিজের এলাকায় গাঁজা ভাং চরস বিক্রির থেকে জমিদারদের ট্যাক্স কালেক্ট করতে হত। ১৭৯৩ এ ৩৪ নং রেগুলেশন অনুযায়ী কোম্পানির অধীনস্থ এলাকায় গাঁজা ভাং চরস চাষও ব্যবসা করার জন্য আলাদা করে লাইসেন্স বাধ্যতামূলক হয়। বলাবাহুল্য, লাইসেন্সিং ছিল রেভিনিউ আদায় করার সবচেয়ে সহজ পন্থা। লাইসেন্স পাওয়া এবং রাখার জন্য নিয়মিত ফি দিতেই হত। রেগুলেশনের কারণ হিসেবে সেটা উল্লেখও করা হয় যে লাইসেন্সের মাধ্যমে অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার কমবে এবং সরকারের অর্থাগমও সম্ভব হবে। ১৮০০ সালে আরেকটা রেগুলেশন বের হয়, যাতে বলা হয় এগুলোর মধ্যে চরস সবচেয়ে ক্ষতিকারক এবং চরস বানানো বা বিক্রি সম্পূর্ণরূপে বেআইনি ঘোষণা করা হয়। আর মজার ব্যাপার, ১৮২৪এ আরেক নির্দেশনামায় বলা হয় যে গাঁজা বা অন্যান্য নেশার জিনিসের থেকে মেডিকেলি চরসের কোনো বেশি ক্ষতিকারক প্রভাব নেই, ফলে ব্যান তুলে নেওয়া হল। ১৮৪৯এ বেশি আবগারি শুল্ক আদায়ের জন্য খুচরো গাঁজার ব্যবসার ওপর নিয়ন্ত্রণ আনা হয়। এই সময় থেকে পরের কয়েক দশক ট্যাক্স দৈনিক হিসেবে হবে না ওজনের ওপর হবে এই নিয়ে বিভিন্ন আইন আসে। ফলে দ্যাখা যাচ্ছে যে কোম্পানির শাসনের আমলে গাঁজা ভাং-এর ব্যাপারে অর্থাগমের সুযোগ নিয়েই বেশি মাথা ঘামানো হয়েছিল। গাঁজা নিয়ে আফিং-এর মতন ব্যবসার সুযোগ ছিল না। কারণ গাঁজা সস্তা, প্রায় ঘরেই চাষ করে ঘরেই খাওয়া যায়, আর লোকে যেরকম সেরকম ভাবে জোগাড় করে নিতে পারে। সুতরাং চাষ আর পাইকারি ব্যবসাতে ট্যাক্স বসানোই এক্ষেত্রে একমাত্র উপায় ছিল। একই কারণে খুচরো গাঁজার ব্যবসাকে নিয়ন্ত্রণও করতে চেয়েছিল কোম্পানি। ... ...
"রিকশ নিয়ে না বেরিয়ে উপায় নেই। সরকার চাল দিচ্ছে, কিন্তু তাতে মাস চলবে না৷ তাই দু'বেলাই বেরচ্ছি। পুলিশ দেখতে পেলে কখনও কখনও হাওয়া খুলে দিচ্ছে, মারছে, আবার টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে হাওয়া ভরে নিচ্ছি।" সংক্রমণের বিষয়ে বললেন, "হলে হবে। কী আর করা যাবে! এমনিও তো বেঁচে থাকতে কষ্ট হচ্ছে, মরে গেলে যাব। অসুবিধা কী!" আরও বললেন, "খিদেতে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। আপনি তিনদিন না খেয়ে থাকলে এমনিই অসুখে পড়বেন। পেট ভরা থাকলে ভাইরাস কিছু করতে পারবে না। খালি পেটে থাকলে ভাইরাস আরও কাহিল করে দেবে। ঘরে থাকলে না খেতে পেয়ে এমনিই দুর্বল হয়ে যাব।" ... ...
অষ্টম শতাব্দীতে আমাদের দেশের চরক সংহিতায় বর্ণিত শল্যবিদ্যা আরবি ভাষায় অনূদিত হয়ে ক্রমে ইতালি অবধি পৌঁছয়। সেই বিদ্যার চর্চা করেই আবার ষোড়শ শতকে ইতালির শল্য চিকিৎসক গ্যাসপার তাগলিয়াকোজি বা তালিয়াকোতিয়াস নাসিকা পুনর্গঠনের পথিকৃৎ হয়ে ওঠেন। সিফিলিস-আক্রান্ত রোগীরা জীবনে নতুন আশার আলো দেখতে পান। তালিয়াকোতিয়াসের খ্যাতি, পসার ও জনপ্রিয়তা এমন তুঙ্গে ওঠে যে তিনি পরিচিতি পান "লাভ ডক্টর" হিসেবে। "ট্যাটলার"-এ স্টিল নিজের বক্তব্য প্রকাশ করতে গিয়ে তাঁর কথাই উল্লেখ করেছেন। ... ...
ভারতের কৃষি সমস্যা বুঝতে গেলে আমাদের প্রথম বুঝতে হবে ভারতের কৃষকের সমস্যা। ওপরের টেবল থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের প্রায় ৮৭% কৃষক আংশিক শ্রমিক। আর তাঁদের প্রায় ৩৫% মূলত মজুরির ওপরেই নির্ভর করেন ক্ষুণ্ণিবৃত্তির জন্য। উচ্চতর কৃষকেরও কৃষি বহির্ভূত শ্রম আয় থাকে, কিন্তু তা কায়িকশ্রমের আয় না, মেধাশক্তির আয়। নিম্নতম ৮৭% কৃষকের জমির পরিমাণ দুই হেক্টরেরও কম। পরিবার পিছু গড় জমির পরিমাণ ১.২ হেক্টর, আর মিডিয়ান আরও কম। অধ্যাপক রঙ্গনাথনের রিপোর্টে আমরা আরও দেখতে পাই যে সমাজের কোন বর্ণের হাতে কত জমি আছে আর তাদের পারিবারিক আয় কত। এই দুই তালিকা থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, দরিদ্র কৃষকরা সমাজের কোন স্তরে পড়ে। ... ...
প্রতীককে একটি সংক্ষিপ্ত চিঠি ধরিয়ে তাতে সই করে দিতে বলা হয়। চিঠিতে লেখা আছে ‘ব্যক্তিগত কারণে প্রতীক সান্যাল আজ এই মুহূর্তে এই সংস্থা থেকে পদত্যাগ করছে’। প্রতীকের বিভ্রান্ত মুখ দেখে উপস্থিত দুজনের একজন বলেন, কোভিডজনিত কারণে সংস্থার ব্যবসায় মন্দা দেখা দেওয়ায় তাঁরা প্রতীককে আর রাখতে পারছেন না। ... ...
সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের সৌন্দর্য কোনো জন্মান্ধ মানুষকে ব্যাখ্যা করে বোঝানো যেমন অসম্ভব, তেমনি, মন যদি সঠিকভাবে গ্রহণক্ষম না হয়, তা হলে রসপোলব্ধি দুষ্কর। ধীশক্তিও সাধারণভাবে বুদ্ধি বলতে যা বোঝায় তা নয়। ধীশক্তি বলতে বোঝানো হচ্ছে প্রজ্ঞা। প্রজ্ঞা দুর্লভ বস্তু, বোধ ও বুদ্ধির এক অতি উন্নত স্তরকে প্রজ্ঞা বলে। বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার মধ্যে তফাতটা গুণগত, পরিমাণগত নয়। ধীশক্তির ফসল বিজ্ঞান, দর্শন ইত্যাদি। রসের ফসল সাহিত্য, সঙ্গীত, চিত্রকলা, চলচ্চিত্র ইত্যাদি। এটা খুবই আশ্চর্যের যে এই মাধ্যমগুলির উৎপত্তির মূলে যে সংস্কৃতি নামক জিনিসটি কাজ করছে, তা যে ‘জৈবিক’, নিছক আবেগের ব্যপার নয়, তা মানবসমাজ বহু যুগ পরেও বুঝতে পারে নি। ... ...
চাঁদরাত কথাটা খুব মিষ্টি। মায়ের ভালোবাসার মতন মিষ্টি। আলতো করে চোখ বুজলাম। আমি আমাদের বর্ধমানের গোলাপি বাড়িটার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে। পুরো পাড়াটা সবুজ নীল টুনি বাল্বে মায়াময়। ক্লাবের সামনে প্যান্ডেল... সুভানসাহেবের বাড়ি সামনেও প্যান্ডেল। ছোটো ছোটো বাচ্চারা নতুন জামা পরে সেজে গুজে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের কাছে ছোট্ট টাকার ব্যাগ। তাতে আছে জমানো টাকা। কাল অনেকে ঈদ সালামি পাবে। ... ...
আফ্রিকার একটি ছোট্ট দেশ উগান্ডার উদাহরণ দিয়ে লেখা শুরু করা যাক। কোটি কোটি উগান্ডাবাসী সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, কারণ তাঁদের অনেকেরই ডিজিটাল পরিচয়পত্র নেই। উগান্ডা সরকারের আইন অনুযায়ী এই ডিজিটাল পরিচয়পত্র জাতীয় সুরক্ষার জন্য একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা, কিন্তু সেই ব্যবস্থাকে যখন সরকারি পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে, তখন দেখা যাচ্ছে তা থেকে বহু মানুষ বাদ পড়ছেন। ... ...
মাতৃভাষার সঠিক সংজ্ঞা নিয়ে ভাষাতাত্ত্বিকদের মধ্যে নানারকম বিতর্ক আছে। কিন্তু যদি কোন ব্যক্তির প্রথম বুলিকেই তার মাতৃভাষা বলা যায়, তাহলে এই মহিলার মাতৃভাষা বাংলা। বাড়িতে বাবা এবং মায়ের সঙ্গে উর্দু এবং ইংরেজিতে কথা বললেও চট্টগ্রামে বাড়ির কর্মচারীদের কাছে বড় হওয়ায় এঁর প্রথম বুলি কিন্তু বাংলাতেই ফোটে। ... ...
আমি মনে মনে ভাবি কি লিখবো? সবজী ওয়ালার ধর্ম দেখে সবজী কেনার ঘটনা? কী লিখবো? এক ডাক্তার তার প্রিয় বন্ধুর শেষ কৃত্য করতে গিয়ে মার খাচ্ছেন? কী লিখবো? স্বাস্থ্য কর্মীদের বলা হচ্ছে বাড়ি ছেড়ে দিতে। কী লিখবো? ধর্ম দেখে রোগ ভাগ করা হচ্ছে? কী লিখবো? কাতারে কাতারে শ্রমিক চলেছেন বারোশো চোদ্দোশো মাইল হেঁটে। এক মা তার সন্তানের মৃতদেহ নিয়ে ছুটছেন। গ্রামের কাছে এসে মারা যাচ্ছে আর হাঁটতে না মারা ছোট্ট মেয়েটি। ডাক্তার সাজিয়া বাংলাদেশ থেকে জানাচ্ছেন “আমি জানি না আমার আড়াই বছরের সন্তানকে দেখতে পাবো কিনা ভাইয়া। ওরা বলছে শেষ পর্যায় না আসলে প্রটেকশান কিট দেবে না”। রবীশ কুমার প্রত্যেকদিন প্রাইম টাইমে আসছেন। আমার ভারতবর্ষের যে ছবি তুলে ধরছেন সোশ্যাল ডিসটেন্সের নামে, যে অসভ্যতা হচ্ছে, এই ভারত আমি আগে দেখিনি। আমার চারপাশের লোকজন অচেনা হয়ে যাচ্ছে। আমি নিজেও কি? ... ...
বিজ্ঞান মানে তো শুধু যুগান্তকারী আবিস্কার নয়, রোজ একটু একটু করে প্রদীপের সলতে পাকানোটাও বিজ্ঞান, যাতে পরের আবিষ্কারের কাজটা সহজতর হয়। তবে আমাদের সাধারণ হিরো-নাহলেই-জিরো ভাবার মানসিকতার প্রেক্ষিতে এই সলতে পাকানোর কাজটাও যে গুরুত্বপুর্ণ, এ না হলে বিজ্ঞানের এগোন বন্ধ হয়ে যাবে এই বোধ তৈরি করা খুব দরকার। এই বইটা খুঁজে খুঁজে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন শাখার বিজ্ঞানীদের নীরব কাজ তুলে এনে কিছুটা সেই ধারণাও তৈরি করতে পেরেছে। আর বহুদূর দেশের বিদেশিনী না বা ইতিহাস খুঁড়ে বার করে আনা আগের যুগের বিজ্ঞানী না, আমারই সময়ে আমারই দেশে এই বিজ্ঞানীরা এত কিছু কাজ করছেন, এটা পড়ে বুড়োরাও এক্সট্রা উজ্জীবিত বোধ করছেন, বাচ্চারা এ লেখা পড়ে মোটিভেটেড হবে বলেই মনে হয়। কোন কোন বাচ্চা হয়তো এই বইএর চরিত্রদের মধ্যে থেকে রোল মডেল খুঁজে নেবে। ... ...