‘চাঁপাডাঙার বউ’ উপন্যাস ভাঙনের কাছাকাছি গিয়ে আবার এক হয়ে যাওয়ার কাহিনি। নয় বছর বয়সে বিয়ে হয়ে বাড়িতে এসেছিল ‘বড়বউ’। দেওর মহাতাপ তখন আট বছরের বালক। তাই তারা পরস্পরের বাল্যসঙ্গী। ধীরে ধীরে তাদের সম্পর্ক নিবিড় ভালোবাসা ও ভরসার সম্পর্কে পরিণত হয়েছিল। সেই ছিল ছোটবউ মানদার রাগের কারণ। গ্রামের পাঁচজনে বউদি-দেওর সম্পর্ক নিয়ে পাঁচ কথা বলতে শুরু করায় সেতাবেরও মনে সন্দেহ জাগে। একথা শুনে বড়বউ রাগ করে তার স্বামীকে বলত, ‘ইতর’। বলত, পটোয়ারি-জালিয়াতি বুদ্ধিতে এই সম্পর্কের হিসেব বোঝা যায় না। ... ...
এখন যখন আমরা পত্রিকার পাতায় পড়তে বাধ্য হই তিন দিনের সদ্যজাত শিশুকে ডাস্টবিন হতে তুলে বাঁচাল ক্ষুধার্ত কুকুর, তখন আমাদের মনে পড়ে যায় ৬১ বছর আগে লেখা হাসান আজিজুল হকের ‘শকুন’ নামের গল্পটির কথা। যদিও সেই গল্পে কাদু শেখের বিধবা বোনকে চিহ্নিত করা গিয়েছিল, চিহ্নিত করা গিয়েছিল শকুনদের, কিন্তু এই ২০২১ সালে যখন নগরের ডাস্টবিনে বা নালায় মাঝে মধ্যেই সদ্যজাত শিশুকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় তখন সেই মা-দের আর চিহ্নিত করা যায় না। চিহ্নিত করা যায় না শকুনদেরও। এই ৬১ বছরের ব্যবধানে দেশটা ছেয়ে গেছে কাদু শেখের বিধবা বোন আর অসংখ্য শকুনে! কিন্তু হাসান আজিজুল হক আর নেই! ... ...
আসলে, মেধা-যুক্তি-বিতর্কের সঙ্গে কায়েমি স্বার্থ কোনওদিনই পেরে ওঠে না। তখন, সব কালে, একটি পথই অনুসৃত হয়। চরিত্রহনন আর কুৎসা রটনা। একেবারে, এক জিনিস ঘটেছিল খ্রীস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের গ্রীক দার্শনিক এপিকিউরিয়াসের সঙ্গে। মূলতঃ লুক্রেশিয়াসের রচনা থেকে তাঁর দর্শন রেনেসাঁসের সময় ইওরোপ জানতে পারে। এবং পরম শক্তিশালী, জ্ঞানবিপণির চাবিকাঠির রক্ষক চার্চ, তাঁর দর্শন - যার সঙ্গে যাবজ্ জীবং সুখং জীবেৎ - এর আশ্চর্য মিল - কে অসংযত বেলেল্লাপনার সমার্থক বলে দেগে দেয়। ইংরিজিতে এপিকিউরিয়ান বলতে লাগামছাড়া ইহসুখবাদী (হেডনিস্ট) এক মানুষকে বোঝানো হয় আজও। ... ...
কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের (২ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৯ – ১৫ নভেম্বর ২০২১) সাহিত্যকর্মের হিসাব দিতে গেলে আমরা সাধারণত তিনটি উপন্যাসের নাম বলি – ‘আগুনপাখি’ (২০০৬), ‘সাবিত্রী উপাখ্যান’ (২০১৩) এবং ‘শামুক’ (২০১৫) । এর মধ্যে ‘আগুনপাখি’ সর্বাধিক আলোচিত, ‘শামুক’ প্রায় অনালোচিত। আপাতদৃষ্টিতে ‘আগুনপাখি’ তাঁর প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস হলেও ‘শামুক’ লেখা হয়েছে ১৯৫৭ সালে এবং এক সময়ের বহুল আলোচিত পত্রিকা ‘পূর্বমেঘ’-এ ১৯৬২ সালে সেটির তিন কিস্তি প্রকাশিতও হয়েছিল, কিন্তু পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয় কেবল ২০১৫ সালে। এসব তথ্য নিয়ে কথা বলার সময় যে সত্যটিকে উপেক্ষা করা হয় সেটি হচ্ছে, হাসান আজিজুল হকের পুস্তকাকারে প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস হচ্ছে ‘লাল ঘোড়া আমি’। ... ...
বিতর্ক আর আলোচনার কেন্দ্রে থাকা এই ত্রয়ীর নাম ডেভিড কার্ড, জশুয়া আনগ্রিস্ট এবং গিডো ইম্বেন্স। পুরস্কারের অর্ধেক কার্ডের এবং অর্ধেক বাকি দুজনের। এঁদের কর্মক্ষেত্র যথাক্রমে ক্যালিফর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় বার্কলে, এম আই টি এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। একাডেমির বিবৃতিতে বলা হয়েছে এঁদের বিশেষ অবদান যথাক্রমে শ্রম বিষয়ক অর্থনীতি (labour economics) ও কার্যকারণ সম্পর্ক বিশ্লেষণের পদ্ধতিতে (analysis of causal relationships)। তিনজনেই করেন পরিসংখ্যান (data) ভিত্তিক গবেষণা (empirical research)। চারপাশের দৈনন্দিন ঘটনাবলী আসলে একেকটি স্বাভাবিক পরীক্ষা (natural experiment)। তাকে বুঝতে হলে এবং তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হলে তার কারণ ও ফল বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। ... ...
কুমুদি রইলেন তাঁর গ্রন্থিত-অগ্রন্থিত গল্পে, প্রবন্ধে, কবিতায়, স্মৃতিতে। স্মৃতিস্তম্ভের স্থবিরতাকে ভালবাসিনি আমরা, চাইছি স্মৃতির চলমানতা। অক্ষর বেয়ে বেয়ে পরের প্রজন্মে পৌঁছে যাক কুমুদি- তারা চিনুক আমাদের কুমুদিকে, ভালবাসুক, লেখা পড়ুক, পড়াক বন্ধুদের। কুমুদিও তাদের চিনতে চাইবেন- বলাই বাহুল্য। স্মিত সহাস্য মুখে জিগ্যেস করবেন- কই , কী লিখচ , শোনাও দেখি। এই সব অলীক চেনাজানাকে বাস্তব করতে গুরুচণ্ডা৯ শুরু করছে বার্ষিক 'কুমুদি পুরস্কার' - কিশোর কিশোরীদের গল্প লেখার প্রতিযোগিতায়। ... ...
গামছা-সুকানকে চিনতে হলে আপনি হাওড়া থেকে বর্ধমানের মেন লাইনের লোকালে চেপে বসুন। মেমারির গায়ে গায়ে একটি ছোট স্টেশন নিমো। আগে ছিল দুটো লাইন – আপ-ডাউন প্ল্যাটফর্ম, ইদানীং মাঝে একটা তিন নম্বর শুরু হয়ে লোকের ভোগান্তি বেড়েছে। কারণ, পুরুষানুক্রমে যে স্টেশন মাস্টারের দায়িত্ব সামলায়, সে হরদম অন্যমনস্ক হয়ে ভুল প্ল্যাটফর্মের ঘোষণা করে। আর শেষ মুহুর্তে তার কোর্স-কারেকশনের পাল্লায় পড়ে বুড়োবুড়ি-মেয়েমদ্দ সবার হেনস্থা, দৌড়োদৌড়ি। তাই দৌড়তে দৌড়তে বাউরি বউ চেঁচিয়ে ঘোষণা করে – এবার গোপালকে ক্যাল দিতে হবে। নিমো গ্রামের গল্প - পড়লেন রঞ্জন রায়। ... ...
জাঞ্জিবার এমন একটা জায়গা যেখানে যারা দাস ছিল তারা নিজেরাই দাসব্যবস্থাকে সমর্থন করত, ‘প্যারাডাইস’ উপন্যাসের এক চরিত্র এরকমটাই বলছে। এই দ্বীপপুঞ্জে ভারত মহাসাগরের নীল নোনা জল খেলা করে যার মধ্যে অবস্থিত প্রাচীন, ভগ্নপ্রায় বহু বন্দর যেখানকার নোঙর করা ভাসমান যানগুলি থেকে এখনো শোনা যায় শৃঙ্খলিত দাসদের মর্মান্তিক আর্তনাদ, হাহাকার। এটি তানজানিয়ার অধীনে একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল যা ২০২১ সালে সাহিত্যে নোবেল প্রাপ্ত আব্দুলরাজাক গুর্নাহর কল্পনার আঁতুড়ঘর। ... ...
‘সন্দীপন পাঠশালা’র আগে তারাশঙ্কর তাঁর ছোটগল্পে শিক্ষক-মহাশয়দের কথা অল্প অল্প তুলে ধরেছেন। ১৯৩৩ সালে বঙ্গশ্রীর অগ্রহায়ণ সংখ্যায় ‘মধু মাস্টার’, ১৯৩৬ সালে দেশ পত্রিকার চৈত্র সংখ্যায় ‘পণ্ডিত মশাই’ এবং ১৯৪১ সালে প্রবাসীর বৈশাখ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল ‘হরি পণ্ডিতের কাহিনি’। ‘পণ্ডিত মশাই’এর যতীন চাটুজ্জে এবং ‘হরি পণ্ডিতের কাহিনি’র হরিনাথ চাটুজ্জে যে একই ব্যক্তি তা বুঝতে পাঠকের অসুবিধা হয় না। দুজনেই পল্লীগ্রামের পণ্ডিত। দুজনেরই পাঠশালা বসে জমিদারের কাছারি বাড়িতে। ছেলে পড়ানোর চাকরির অঙ্গ হিসেবে দুজনকেই গ্রাম দেবতার পুজো করতে হয় এবং জমিদারের আগমন হলে রাঁধুনির ভূমিকা পালন করতে হয়। এঁদের দুজনেরই কাজে প্রবল নিষ্ঠা। খেটেখুটে একেকটি ছেলেকে এঁরা তৈরি করেন বৃত্তি পরীক্ষার উপযুক্ত করে। আর পার্শ্ববর্তী পাঠশালা সেই ছাত্রকে লোভ দেখিয়ে ভাঙিয়ে নিয়ে যায় পরীক্ষার আগেই। তাই এঁদের পাঠশালা সরকারের কাছ থেকে সাহায্য পাওয়ার যোগ্যতায় পিছিয়ে থাকে। যতীন অথবা হরি পণ্ডিতকে এই কারণে লোকে ‘কাক-পণ্ডিত’ বলে। চিরকাল কাকের মতো তাঁরা অপরের বাচ্চাকে উপযুক্ত করেই যান। ... ...
২০১৯ র দিল্লি বইমেলাতে কুমুদির এতাবৎ প্রকাশিত লেখাগুলোর থেকে কিছু লেখা একসঙ্গে করে একটা বই বেরোল। কুমুদির রোমহর্ষক গল্পসমূহ। গুরুচন্ডা৯-র থেকেই। এই বইতে সব গল্পই অতি প্রিয়। আর বইটা নিয়ে কথা বলতে গেলে আমার ইচ্ছে করে পুরো বইটাই কোটেশন হিসেবে তুলে দেই। গল্পগুলো মানে প্লটগুলো মজাদার তো বটে, কিন্তু প্লটের অন্তর্নিহিত মজা আর চরিত্র বর্ণন কুমুদির অননুকরণীয় সরস বর্ণনায় যে কোথায় উঠে গেছে তা আর কি বলব। ই যেমন ধরুন না সাইকেল চালাতে শেখার গল্পটাই – প্রথম সাইকেল চালাতে শেখার অনেক মজার মজার গল্প আমাদের অনেকেরই স্টকে আছে, কিন্তু সেই গল্পই একবারটি পড়ে দেখুন কুমুদির বয়ানে, “একটি সাইকেল ও দেহলিজ” । দেখবেন কখন যেন আপনিও আওড়াতে শুরু করেছেন, “ডরাইলেই ডর”। কোন গল্প ছেড়ে কোন গল্পের কথা বলি! কেবলীর কলেজ জীবন, গোবু মহারাজের সঙ্গে তার প্রেম জীবন এবং বিবাহপর্ব - এসব তো আমাদেরই গল্প, শুধু নিজেরা যেন দেখতে শিখি নি – কুমুদি হাতে ধরে দেখিয়ে দিলেন। ... ...
এটি পড়া বই বিভাগের বিশেষ একটি প্রকাশনা। একটি একটি সাক্ষাৎকার, কিন্তু লেখা নয়। দৃশ্য শ্রাব্য। নিয়েছেন ইন্দ্রাণী দত্ত। যাঁরা শুনতে বা দেখতে চান, চালিয়ে দেখে বা শুনে নিন। ... ...
ইউভাল নোয়াহ হারারির দুটি বিখ্যাত বই 'স্যাপিয়েন্স' এবং 'হোমো দিউস' যথাক্রমে মানবসভ্যতার ইতিহাস এবং ভবিষ্যতের ওপর আধারিত। কিন্তু সাম্প্রতিক বই 'টুয়েন্টি ওয়ান লেসন্স টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি'তে তিনি বর্তমান এবং নিকট ভবিষ্যতের অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। আমি তাঁর মতামতের একটা সংক্ষিপ্ত রূপরেখা তুলে ধরার চেষ্টা করব কয়েকটি পর্বে। ... ...
মাটি ভাগ হয়, দেশ ভাগ হয়, মানুষ, পাড়াপড়শি, আত্মীয়স্বজন, পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। জন্ম জন্মান্তর ধরে গড়ে ওঠা গ্রাম, ঝিল, পুকুর, বনবাদাড়, ঘরবাড়ি বিদীর্ণ করে দেয় দিল্লির শাসকের কাঁচি। দীর্ঘদিনের প্রতিবেশী আসিফ সামিনার পরিবার এপার-ওপার হয়ে যায়, তাদের সদ্য প্রস্ফুটিত প্রেমের মাঝে রাষ্ট্র খুঁটি পুঁতে দেয়। প্রবল ঝুঁকি নিয়ে তারা খণ্ডিত হয়ে যাওয়া নাজির বিলের কাছে দেখা করে, সুখী দাম্পত্যের স্বপ্ন দেখে, তারপর একদিন সীমান্তরক্ষীর গুলিতে দুই উজ্জ্বল তরুণ তরুণী পাচারকারীর লাশ হয়ে যায় .... সম্পাদক বিমল চক্রর্তীর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ, কারণ ত্রিপুরার দেশভাগের গল্প একসাথে গ্রন্থিত হয়েছে এরকমটা অন্তত এই প্রতিবেদকের আগে কখনো নজরে আসেনি। সেদিক থেকে এই সংকলনটি অনন্য ... ... ...
সূর্য দীঘল বাড়ি। যে আয়তাকার বাড়ির দুই সমান্তরাল দীর্ঘ বাহু পূব থেকে পশ্চিমে টানা। এই ধরণের বাড়িতে থাকে স্থায়ী অমঙ্গলের ছায়া। এখানে কেউ বেশিদিন টিকতে পারে না, নইলে নির্বংশ হয়। এইখানটায় এসে আমি থমকে যাই। জীবনে একটাই বাড়ি বানিয়েছিলাম – আরে সেটাও তো ছিল এক সূর্য দীঘল বাড়ি! সে বাড়িতে কতদিন ছিলাম? মাত্র দশ বছর। আমার পেছনের আরেক সূর্য দীঘল বাড়িতে দুই ছেলে মারা যাওয়ায় বাড়ি বিক্রি হয়ে যায়। কেনে আমার পরিচিত এক উদীয়মান কবি। একবছরের মধ্যে মারা যায় রক্তবমি হয়ে। তবে কী - ! ... ...
লেখক সঠিকভাবে দেখিয়েছেন যে বৃটিশ কলোনিয়ালিস্টদের ভারত দখল করার লড়াইয়ে ক্রমশঃ দিল্লির মুঘল, দাক্ষিণাত্যের টিপু আদি মুসলিম শাসক ও বঙ্গে সিরাজদৌল্লাদের প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। তাদের কাছে মুসলিম শাসকেরা ছিল ভবিষ্যতের কাঁটা। সেই মানসিকতায় এশিয়াটিক সোসাইটিতে উইলিয়ম জোন্সের নেতৃত্বে ভারতাবিদেরা গড়ে তোলে হিন্দু রাজত্বের স্বর্ণিম যুগ ও মুসলিম রাজত্বের মধ্যযুগীয় অন্ধকারের এক সরলীকৃত আখ্যান যা চলে আসে ২০০ বছর ধরে আমাদের পাঠ্যপুস্তকে। এদিকে হ্যালহেড বাংলাভাষার কাঠামো বাঁধতে গিয়ে ব্যাকরণ লিখলেন, কিন্তু প্রচলিত বাংলাভাষার থেকে (অশুদ্ধ?) ফারসী ও দেশি শব্দ ছেঁটে বাংলা ভাষাকে সংস্কৃতের কন্যা সিদ্ধ করে সংস্কৃত শব্দ ঢুকিয়ে ‘শুদ্ধ’ করতে উঠে পড়ে লাগলেন। এ’ব্যাপারে তাঁদের প্রবল সমর্থক ও সহায়ক হলেন ফোর্ট উইলিয়ম ও সংস্কৃত কলেজের পন্ডিতেরা। এঁদের চোখে ভাষাকে হতে হবে উচ্চবর্ণের এলিট, কাজেই সংস্কৃত ঘেঁষা। ... ...
মুর্শিদাবাদের একটি বর্ণাঢ্য ইতিহাস ছিল। একসময় দিল্লিকে পাল্লা দেবার ক্ষমতা রাখত মুর্শিদাবাদ। ব্যাংকিং হাউস হিশেবে তার এতো প্রতিপত্তি ছিল যে খোদ দিল্লির বাদশা তার দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সুরম্য সৌধ মিনার অট্টালিকা, নহবতের সুর, আড়ম্বর বিলাসব্যসন নিয়ে যে একটি জবরদস্ত জনপদ গড়ে উঠছিল ভাগীরথীর তীরে তার ছায়া বিলীনপ্রায়। সংরক্ষণের অভাব কেড়ে নিচ্ছে বহু গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান। সংরক্ষণের জন্য সচেতনতার অভাব তার থেকে অনেকগুণ বেশি। কত মূল্যবান স্মারক এইভাবেই আমরা হারাতে বসেছি এককালীন বাংলার রাজধানী মুর্শিদাবাদে। ... ...
উনি কি আমাদের পি জি উডহাউস? না; উনি একান্ত ভাবে আমাদের অনাবিল বাঙালি হিউমারের ঘরানার। অল্প শিব্রাম, অনেকটা পরশুরাম আর একটুখানি প্রভাত মুখুজ্যে। ওঁর ধর্মবিশ্বাস কী ছিল জানিনা, কিন্তু সমস্ত রচনার শেষে মধুরেণ সমাপয়েৎ আমাদের ভাবতে বাধ্য করে –আছে দুঃখ আছে মৃত্যু; কিন্তু এ’সবের মধ্যেও আনন্দ ও সুন্দরের খোঁজ পাওয়া যায়। লেখার মধ্যে ফুটে ওঠে লেখকের প্রশান্তি । এই প্রশান্তির খোঁজ আমি আজও পাইনি, কিন্তু উনি আমার চেয়ে বয়েসে অনেকটা ছোট হয়েও পেয়ে গেছলেন। কীভাবে? সে রহস্য সমাধানের চাবি বরাবরের মত হারিয়ে গেছে। ... ...
আমাদের সবাইকে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত অনেকগুলো অধ্যায় অতিক্রম করতে হয়। প্রতিটি অধ্যায় হলো এক একটি জীবন। হোক তা ক্ষণস্থায়ী বা দীর্ঘস্থায়ী। ছোট্ট এই জীবনে সুখে দুঃখে পাশে থাকার কত আলপনাই আমরা এঁকে ছিলাম, কত ছেলে মানুষই না করেছি, ভাবলে এখন অবাক হই। এই লেখাটি কোনো একাডেমি ধাঁচের রচনা নয় জাস্ট একটা ডায়েরির মতো। জয়ন্তীকে নিকট থেকে দেখার এবং ওর গভীর সান্নিধ্যের কিছু বিশেষ সময়ের, বিশেষ মুহূর্তকে, ছোট ছোট গদ্যের কোলাজে এক ফ্রেমে তুলে ধরার প্রয়াস। ... ...
আমি কুমুর প্রেমে পড়েছিলাম। শুধু আমি নয়, আমরা সবাই, যারা গুরুতে লিখতাম, গল্প করতাম, ২০০৯ ও তার পরবর্তী কিছু বছর। কী ইচ্ছে ছিল, দিল্লী যাব, সামাসামনি আড্ডা মারব, অনেক অনেক ক্ষণ। তা হল না, গুরুতে আড্ডার স্মৃতি-ই রয়ে গেল। অমন বন্ধু আর হয় না। কুমু-র লেখা ছিল মজাদার, রসে টইটম্বুর। মজার আড়ালে থাকত এক প্রীতিময়, মানবিক মুখ, স্নেহার্দ্র, ভালবাসায় জরজর - মানুষের ওপর বিশ্বাস ছিল অটল। মন খারাপের দিনে, বহু আঘাতে রক্তাত্ত সময়ে, ওর লেখা বিশল্যকরণীর কাজ করত ... ...
আরো অনেক গল্প শোনার ছিলো কুমুদি'র কাছে। ভেবেছিলাম একদিন সময় করে বসে বলবো "বলো এবার বড়কুমার ছোটকুমারের তারপর কী হলো'। আর আরো বাকিসব। কিন্তু বলা নেই কওয়া নেই, কুমুদি গিয়ে উঠলেন তাঁর নৌকোয়। এখন আমাদের এই ঘাটে আর খেয়াতরী বাইবেন না! এর কোনো মানে হয়? তবে তারার পানে চেয়ে তাঁকে ডাকতে হয়না আমার। যে অমন করে মনের ভেতরের কলসীটা ভরে দিতে পারে, তাকে আবার বাইরে কোথাও খুঁজতে যেতে হবে নাকি? ... ...