এই বাড়ির সামনের গলিটা থেকে বেরিয়ে বড়োরাস্তা ধরে একটু এগোলে রাস্তাটা আড়াআড়িভাবে আরেকটা রাস্তা কেটে দিয়ে বেরিয়ে গেছে, ঐ চৌমাথা জায়গাটা একটু বাজার মত, চায়ের দোকান, মুদিখানার দোকান, সেলুন, ডাক্তারখানা — এইসব আছে, ডাক্তারখানাটার পাশে 'সুহাসিনী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের' লাগোয়া একটা ছোট্টো কালী মন্দির; দুবেলা ঐখানে গিয়ে একটু ফুল-বাতাসা দিয়ে আসা — ব্যাস, এইটুকুই জয়প্রকাশের কাজ সারাদিনে, এইকাজটাই তিনি গত পঞ্চাশ বছর ধরে করে আসছেন। এছাড়া আর কোনো পার্থিব ব্যাপারের সঙ্গে তাঁর কোনো সংস্রব নেই, লোকেও মাঝেসাঝে যদি পুজোটুজো দিতে আসে তো এল, এছাড়া তাঁকে কেউ পাত্তা দেয়না। পুজোও কমে গেছে মন্দিরটায়, নমো নমো করে টিকে আছে; মন্দিরটার পিছনে একটা বটগাছ মাথার ওপর ঝাঁকড়ে রয়েছে ছাতার মতো, ফলে মন্দিরটার সারা গায়ে শ্যাওলা, অযত্নের ছাপ, দেয়ালগুলোর চুনখসে ইঁটের পাঁজরা বেরিয়ে পড়েছে এখানে-সেখানে, মফস্বল শহরের অন্যান্য বড়ো বড়ো চমৎকার মন্দিরগুলোর তুলনায় নেহাতই একটা উপদ্রব মাত্র। লোকের আর দোষ কি, খামখা পুজো দিতে আসবে কেন? তবু ঐখানটাতেই সারাজীবন জয়প্রকাশ পুরোহিত হয়ে রয়ে গেলেন, ঐখানটাতেই ঘন্টা নেড়ে টুং টুং করে গেলেন — ছেলের কথাটা মনে পড়ল তাঁর — লোকের কারোর মুরোদ বেশি হয়, কারোর কম, কিন্তু তা বলে তোমার মত নিমুরুদে বাপ যদি একপিস দেখেছি মাইরি! ... ...
প্রতিবারই এটিএম থেকে টাকা তোলার পর আচমকাই নিজে থেকে কিছুটা সতর্ক হয়ে যায় সুজয়। জায়গাটা এমনিতে দিনমানে জমজমাট বেশ কয়েকটা ব্যাঙ্ক ও তাদের এটিএম রয়েছে। সামনে অনেকটা পার্কিঙ এর জায়গা। ব্যাঙ্ক গুলো ছাড়াও বেশ কিছু বীমা কোম্পানি, শেয়ার কোম্পানির অফিস, মোবাইলের ঝকঝকে দোকান এমনকি ভালো রেস্তোরাঁও রয়েছে এখানে। কিন্তু সুজয়ের টাকা তোলার সময়টায় জায়গাটা বড় শুনশান হয়ে যায়। অফিস থেকে ফেরার পথে এখানে গাড়ি থামিয়ে টাকা তোলার সময় পার্কিং এ একটাও গাড়ি থাকে না। কচ্চিত একটা দুটো এটিএমে নড়বড়ে সিক্যুরিটি গার্ড থাকে, তারা গরমের দিনে এটিএমের মধ্যেই টুলে বসে ঝিমোয়। খুব একটা রাত্তির নয় যদিও, শহরে রাত সাড়ে ন’টা মানে সন্ধ্যাই। বাজার এলাকা এইসময়ে জমজমাট। এদিকের অফিস পাড়া যেন বড় বেশি ফাঁকা। ... ...
চিঠি লেখা যে এমন রুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে তা দেখিয়েছেন তিনি । নিজের জীবনে তিনি শুধু চিঠিই লিখেছিলেন হাজার পাঁচেক, যে লো পড়ে, ট¥কে, বিশ্লেষণ করে শত শত বাঙালী বিদ্বান হয়ে গেছে । যেকোন ব্যক্তির লেখা চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করতেন, জবাবও দিতেন নিজের দুর্দান্ত হÙ¡¹ক্ষরে, কিন্তু জনসাধারণের উদ্দেশ্যে খোলাচিঠি লেখেননি কখনও । নিজের জীবনের দেড়শো বছরে এস এম এস, ব্লগ, স্ক্র্যাপ নির্ভর আধুনিক বাঙালীকে নিজের ভাবনার কথা ফেসবুক মারফৎ জানালেন রবীন্দÊনাথ । ... ...
আমরা মূলত সুখস্মৃতিটুকু নিয়েই নস্টালজিক হই। এবার দেখি সাইকোলজিস্টরা কি বলেন এই ব্যাপারে। তারা বলেন আপনার নস্টালজিয়া কেবল আপনিময়। অর্থাৎ আপনার স্মৃতি, আপনার অতীত, যা আপনি ছিলেন, যা আপনি হয়েছেন, এই সবে মিলে আপনহারা। সব মিলিয়ে নস্টালজিয়া হল আপনার ‘আমি কে?’ প্রশ্নের উত্তর। সত্যি কথা বলতে আপনি হলেন এমন একটি সময়রেখা (timeline) যে তার অতীতের কিছু স্মৃতি মনে ধরে রেখে দেয় এবং অতীত ও বর্তমানের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করে একটি কন্টিন্যুয়াম তৈরি করে। খুব কঠিন হয়ে গেল? সাইকোলজিস্টরা বলেন আপনার অতীতের ঘটনার সাথে বর্তমানের যে যোগসূত্র সেটিকে শক্ত করে এই নস্টালজিয়া। সময়ের সাথে সাথে আপনি পালটান, আপনার অভ্যাস পালটায়, বন্ধুরা পালটে যায়, কাজকর্ম, পরিবেশ, চিন্তাভাবনা সবই পালটাতে থাকে। কিন্তু নস্টালজিয়া আপনাকে সাহায্য করে এই সব ঘটনার সাথে যুক্ত রাখতে। এই নস্টালজিয়াই আপনাকে সাহায্য করে বয়ঃসন্ধি কালে বা বার্ধক্যে এসে পৌছোলে, ভূতপূর্ব জীবনের সাথে ব্যালেন্স বজায় রাখতে। ... ...
অণুগল্প - ধরা যাক, আকাশে চাঁদ ফুটে আছে। কদমগাছের তলায় সেই আলো ডাবের শাঁসের মত ঘন। অদূরে ঝোপঝাড়। সেইখানে জোনাকির আলো। জ্বলছে, নিভছে। পাশেই ঝিল। চাঁদের আলোয় তা চকচকে। হাওয়া দিলে ঢ্যামনা সাপের মত জলের উপরিতল নড়ে। হাওয়া দিচ্ছে। নিঃশব্দে লক্ষ্মী পেঁচা উড়ছে। ইঁদুরেরা গর্তে ঢুকে যাচ্ছে। আরও ধরে নেওয়া যায়, ঐখানে, চাঁদের ঐ গোলাকার থালা দেখে মানবেতর প্রাণীটি আবাক, আশ্চর্য্য হয়েছে। ... ...
সূচীপত্র ... ...