ছেলেটি আগামীকাল “ভোর” চলে যাবে গ্রামের বাড়িতে। ওর বাড়িতে নাকি ‘দুর্গো’ পুজো হয়। শুনেছিলাম দুর্গের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলেন দুর্গা। তবে এমন সরাসরি দুর্গোপুজো করতে কাউকে দেখিনি। ওর কথাবার্তায় বাংলাটা অন্যরকম। ও ভোরে বেরোয় না, ভোর ভোর বেরোয় না, ‘ভোর’ বেরোয়। কচুরির দোকান থেকে খায় না। কচুরি দোকান, মিষ্টি দোকান, পান দোকান, মুদি দোকান থেকে জিনিস কেনে, ষষ্ঠী বিভক্তির অস্তিত্ব ওর বাংলায় নেই। ল্যাবে আড়ালে সবাই মজা করে। সে অবশ্য, জগাদার কথাও এরকম। ‘চলে গেলাম’ – বোঝাতে বলে, ‘পালিয়ে গেলাম’। চলে যাওয়া আর পালিয়ে যাওয়া আমাদের কাছে আলাদা, ওদের কাছে এক। ... ...
কিছুদিন পরে ল্যাবের বড় দাদা মানে জগাদা আমাকে ডাকল – - কি রে! TUMPA-র সঙ্গে এত গল্প করছিস, ব্যাপার কী? - টুম্পার সঙ্গে গল্প মানে? আমার নাম তো টুম্পা। - কী! তোর ডাকনাম টুম্পা? তুই তাহলে টুম্পা ওয়ান। অমনি সবাই হো হো হা হা করে হাসতে লাগল। - কী ইনোসেন্ট রে, তুই TUMPA জানিস না?.... ... ...
.... এই পাতুরি ভাজার সব চেয়ে সুবিধে হল, কোনো সুতো, দড়ি কিচ্ছু লাগবে না। এমনিই সুন্দর মুড়ে থাকবে, কিন্তু মচমচে হবে। পরে আমার এক অধ্যাপিকা বন্ধু একটা খুব দরকারি পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেইমত বাড়িতে ইলিশের পাতুরি করতে গেলে আমি আর বাজারওলাদের পিছনে পড়ি না একটু কলাপাতার জন্য। আমার কর্তামশাইয়ের বাগানের শখ। ফ্ল্যাটের বারান্দায়, জানলায় মাচা বেঁধে শাকপাতি, শসা সব ফলান। তাই চালকুমড়ো, কুমড়ো, লাউ যখন যেমন পাই, টুক করে পাতা কেটে নিয়ে ওতেই পাতুরি বানাই। একেবারে পাতাসমেত খাওয়া যায়। শহরে কলাপাতা পাওয়া ভীষণ মুশকিল। তাই ইলিশ পাতুরির জন্য অন্তত আমার বাড়িতে এখন নো কলাপাতা বিজনেস। ... ...
গাঁজা গাছের ডগার কচি পাতাগুলোকেই সিদ্ধি পাতা বলে। সেই পাতা সরবত করার আগে বারবার খুব চটকে চটকে ধুয়ে নিতে হয়। সব কষ বেরিয়ে গেলে পাতা ধোয়া জল একেবারে স্বচ্ছ হয়ে যায়। তখন সেই পাতা বেটে সরবত বানানো হয়। পাতা বাটার সঙ্গে আরও কয়েকটা জিনিস বাটতে হয়, যেমন – গোলমরিচ, চারমগজ আর মৌরি। এই বাটাটা একেবারে চন্দনের মত মিহি করে বাটতে হয়, তারপর ছেঁকে নিতে হয়, যাতে কোনো দানা না থাকে। এখন মিক্সার গ্রাইন্ডারের যুগে মিহি করে বাটা খুব সহজ, তবে যে যুগের কথা বলছি, তখন তো যন্ত্রের ব্যাপার ছিল না। শিলনোড়ায় মেয়েদের হাতের জোরেই এসব কিছু করতে হত। এর সঙ্গে পরিমাণমত দুধ, চিনি আর জল মিশিয়ে পাতলা সরবত বানানো হত। এতে ওষধি গুণ আছে, ঘুম এসে যায়। দশমীতে এই সিদ্ধির সরবত বানানো খুব প্রাচীন প্রথা। কি জানি, আমার মনে হয়, .... ... ...
... - ভালো ভাজা হল কিনা, বুঝব কি করে? - আঁচ বাড়িয়ে প্রথমে নাড়বি, তারপর আঁচ কমিয়ে ঢাকা দিয়ে দিবি। একটু পরে আবার খুন্তি দিয়ে নিচের আনাজ ওপরে করে দিবি। ভাজা হয়ে এলে দেখবি, একটা সুবাস পাবি। কড়ায় আনাজের পরিমাণ কম মনে হবে। মানে, আয়তন কমে আনাজগুলো জরে যাবে। আনাজ কড়ায় দেবার আগে হলুদ মাখিয়ে নেয় অনেকে। না নিলেও অসুবিধে নেই। হলুদ পরে দেওয়া যাবে। কাঁচা রাঁধুনির হাতে হলুদে পোড়া ধরে যেতে পারে। আর নুনটা প্রথমেই দিবি না। একটু ভাজা হবার পর দিবি। নুন দেবার পর আনাজ থেকে জল বেরিয়ে যায়। - বাবা! অনেক কিছু মাথায় রাখতে হয় দেখছি। - অনেক কিছুর ব্যাপার নয়। ধারণা হয়ে গেলে দেখবি থোড় বড়ি খাড়া। রান্নাও তো বিজ্ঞান, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান। নিয়ম, সূত্র, পরিচ্ছন্নতা, শৈলী, ঘরানা সব মিশে আছে। ... ... ...
কুমোরটুলিতে দুটো বড় পুজো। সেখান থেকে রাস্তা পেরিয়ে মদনমোহনের বাড়ি। ও’ বাড়ির সিঁড়ি দিয়ে উঠে, বিশাল ঠাকুর-দালান পেরিয়ে, অপরূপ মদনমোহন দর্শন করতাম আমরা চারজন – বাবা, মা, আমি, বোন। তখন ঘুণাক্ষরেও জানতাম না – ইনি বিষ্ণুপুরের মল্লরাজাদের মদনমোহন, যিনি দলমাদল কামান দেগে শত্রু তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। একদিন ঐ বিষ্ণুপুরে আমি দাঁড়াব, বালুচরী নিয়ে পিএইচডি করার জন্য। আর মদনমোহনের মন্দিরে দাঁড়িয়ে শুনব, তিনি তো এখানে নেই, বাগবাজারের গোকুল মিত্রের বাড়িতে বাঁধা পড়ে আছেন। দু’কুড়ি বয়সে মন্দির-চত্বরে এ কথা শুনে ক্ষণিকের জন্য হলেও মাথা দুলে গিয়েছিল আমার। বালিকা-বেলায়, অবোধ বয়সে দেখেছিলাম তোমায়, বড় সুন্দর। তুমিই কি নিয়ে এলে আমায় এখানে গবেষণার জন্য! ... ...
প্রাণকৃষ্ণ দত্তের কলিকাতার ইতিবৃত্ত বইতে পড়লাম, কলকাতার বহু প্রাচীন পরিবারে এখনও সতীর সিঁদুর পুজো করা হয়। তার অর্থ, আমার মামার বাড়ির পরিবার, বইয়ে বর্ণিত তেমনই একটি পরিবার। জেনে-ইস্তক আমার শরীরের শিরা উপশিরা কাঁপছে। চোখে ভাসছে সেই দৃশ্য – বইতে যেমন পড়েছি, সালঙ্কৃতা, মাথায় সিঁদুর, পায়ে আলতা, আলুলায়িত কেশ, খালি পা, বধূকে পথ দিয়ে ধরে নিয়ে চলেছে নাপিতানীরা। সিদ্ধি জাতীয় কিছু খাইয়ে চেতনা কিছুটা বিস্রস্ত করে দেওয়া হয়েছে। পথে মাঝেমাঝেই লোকেরা এসে সতীর সিঁদুর নিয়ে যাচ্ছে। চিতার ওপরে মৃত স্বামীর মাথা কোলে নিয়ে চিতায় বসেছেন বধূ, ডালপালা দিয়ে ঢাকা দেওয়া হল। অগ্নিসংযোগ করা হল, লোক ভেঙে পড়েছে, চারিদিকে ঢাক-ঢোল বাজছে, জয়ধ্বনি উঠেছে – লেলিহান আগুনের শিখায় জ্বলে যাচ্ছে বাংলার উজ্জ্বল ইতিহাস, চৈতন্যের ভক্তিবাদ, সন্ন্যাসীদের শিবজ্ঞানে জীবসেবা – কান মাথা ফেটে যাচ্ছে আমার। ছি ছি ছি! আর আমি ভাবতে পারছি না। ছয় প্রজন্ম আগে, কে মা তুমি প্রাণ দিয়েছ? তোমার মৃত্যু নয়, জীবন জানতে চাই আমি। তুমি কোন বাড়ির মেয়ে, কি তোমার নাম? কোনো সূত্র তো নেই। ... ...
বড়জ্যাঠাইমা খুব ভালো গুড়-আমের মোরব্বা করতে পারত আর সেজজ্যাঠাইমার মা দারুণ চিনি দিয়ে আমের মোরব্বা করতে পারতেন। মোরব্বার ক্ষেত্রে কাঁচা আমের নির্বাচন যদি ঠিক না হয়, তবে ব্যর্থ হতে হবে। আমের আঁটি হয়নি – এতটা কচি আম যেমন চলবে না, তেমন আঁটি শক্ত হয়ে গেছে – এমন আমও নিলে হবে না। দুইয়ের মাঝামাঝি দরকার, মানে নরম আঁটি যুক্ত আম চাই। এবারে আঁটির কষি বাদ দিয়ে আমগুলোকে লম্বায় চারফালি বা ছয়ফালি করতে হবে। কয়ফালি কাটা হবে, সেটা আমের আকারের ওপর নির্ভর করবে। এবারে বড়জ্যাঠাইমা আমগুলো নুনে জরিয়ে রোদে শুকিয়ে নিত। এবারে কড়াতে পরিমাণমত ঘি দিয়ে ঐ শুকনো আমগুলো ভাজত। ভাজা হয়ে গেলে গাঢ় চিনি বা গুড়ের রসে আমগুলো ফুটবে। কারোর ইচ্ছে হলে ঐ পাকে আদার রস মেশানো যায়। মোরব্বা তৈরি হলে আঁচ থেকে নামিয়ে এলাচ গুঁড়ো মেশাতে হবে। ... ...
আমাদের গ্রামের বাড়ি বসিরহাটের আড়বালিয়ায়। সেখানে একরকম ছোটো দানা লালচে কমলা রঙের পাতলা পাতলা ভাঙা মুসুর ডাল পাওয়া যেত। দোকানে বলত, মারুতি-ভাঙা ডাল। ঐ ডালে মা ফোড়ন না দিয়ে, শুধু ডালসেদ্ধ করত। কাঁচা ডালে জল দিয়ে, তাতে কাঁচা সর্ষের তেল, নুন, মিষ্টি, কাঁচা লঙ্কা দিয়ে বসিয়ে দিত। সে ডালে কি যে ছিল! ঐ সেদ্ধ ডাল যেন অমৃত লাগত খেতে। আমার বিয়ের পরেও কিছু বছর আড়বেলেতে ঐ ডাল পেয়েছি। আমার কর্তাও ঐ ডালসেদ্ধর প্রেমে মজেছিলেন। কিন্তু এখন আর পাই না। আর মাঝে মাঝে মা রাতে সাদা কাপড়ে ডাল বেঁধে ফুটন্ত ভাতের হাঁড়িতে ফেলে দিত। তারপর সেই টাইট ডালের বল কাঁচা সর্ষের তেল আর নুন দিয়ে মাখা হত। বেশ খেতে লাগত। ... ...
আমরাও বাবার শুনে শুনে খুব জোরে জোরে চেঁচিয়ে আলক্ষ্মী বিদায় করে দিতুম। তারপর বাবা তালপাতার পাখা আর বেতের কুলো নামিয়ে আনত। এগুলো ঠাকুরের জায়গায় তোলা থাকত। তিনজন মিলে সেগুলো নাড়িয়ে নাড়িয়ে ছড়া কেটে বাতাস দিয়ে দিয়ে রাস্তায় গিয়ে অলক্ষ্মীকে তাড়িয়ে দিতুম। কুলোর বাতাস আর পাখার বাতাস দিতে আমাদের দু’ বোনের এত উৎসাহ আর তিড়িং বিড়িং লাফালাফি দেখে বাবা হা হা করে হাসত। বাবা খুব শান্ত, চুপচাপ মানুষ ছিল। কিন্তু ঐ লক্ষ্মীপুজোর দিন বাবা যেন আমাদের সমবয়সী ছেলেমানুষ হয়ে যেত। এখন বুঝি, ঐ সব রীতি বাবার ছোটবেলার স্মৃতিতে মিশে ছিল। আমাদের সঙ্গে নিয়ে বাবা নিজের ছোটবেলায় ফিরে যেত। ... ...
মা রকমারি সরবৎ বানাতে পারত। দেশি লেমোনেড – লেবু চিনির সরবৎ তো ছিলই, এছাড়া কাঁচা আমপোড়া সরবৎ, পাকা আমের ভাজা মশলা দেওয়া সরবৎ, রোজ সিরাপ মিশিয়ে তরমুজের সরবৎ, মিষ্টি দইয়ের ঘোল, টক দই আর পুদিনার সরবৎ - এইসব। হাতিবাগানে সিনেমা দেখতে গেলে, বাবা একটা দোকানে গুঁড়ো বরফ দেওয়া আম আর দইয়ের সরবৎ খাওয়াত। আর ধর্মতলায় গেলে প্যারামাউন্টের সরবতের ভাণ্ডার তো ছিলই। সর্দি-কাশি হলে মা মিছরি, গোলমরিচ, তেজপাতা আর আদা ফুটিয়ে, গরম সরবৎ বানিয়ে, কাপে করে নিয়ে এসে বলত, খেয়ে নে। গলায় খুব আরাম হত। ... ...
১৯৬৫ সালেই লুডভিগ বলে চরিত্রটিকে কেন্দ্র করে মিলান কুন্দেরা তাঁর ‘দ্য জোক’ উপন্যাসটি লিখে ফেলেছিলেন। তবে রাষ্ট্রীয় সেন্সরশিপের আওতায় তা তখন প্রকাশিত হয় নি। ১৯৬৭ সালে সেটি প্রকাশিত হল। অনতি পরেই অবশ্য সেটি আবার নিষিদ্ধ হয়ে যায় চেকস্লোভাকিয়ায়। পরবর্তীকালে মিলান কুন্দেরাকে দেশও ছাড়তে হয়। আশ্রয় নিতে হয় প্যারিসে। আমৃত্যু সেটাই ছিল তাঁর শহর। একসময় তিনি চেক ভাষায় লেখালিখিও ছেড়ে দেন। লেখার ভাষা হিসেবে বেছে নেন ফরাসী। চেক কমিউনিজম ও কুন্দেরার সম্পর্ক নানা পর্বে ওঠানামা করেছে। যে কুন্দেরা কমিউনিস্টরা চেকস্লোভাকিয়ায় ক্ষমতায় আসার আগেই নিয়েছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ, কমিউনিস্টদের চেকস্লোভাকিয়ার ক্ষমতা দখলের লড়াইতে ছিলেন প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী, তিনি অচিরেই এর বিরোধী হয়ে উঠলেন। এতটাই কড়া সমালোচনা শুরু করলেন কমিউনিস্ট পার্টির যে ১৯৫০ সালেই তাঁকে পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হতে হল ? ১৯৫৬ সালে আবার তাঁকে পার্টিতে ফেরানো হল। ১৯৬৭ – ৬৮ র পালাবদলের সময়ে তিনি হয়ে উঠলেন পার্টির এক প্রধান বুদ্ধিজীবী লেখক। তৎকালীন সংস্কার কর্মসূচীর পক্ষে চলল তাঁর সওয়াল ও লেখালিখি। কিন্তু সংস্কারকে যখন আবার আটকানো হল, কুন্দেরা আবার চলে গেলেন কালো তালিকায়। তাঁকে আবার কমিউনিস্ট পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হতে হল। নিষিদ্ধ হল তাঁর উপন্যাসও। কুন্দেরার প্রথম উপন্যাস ‘দ্য জোক’ এর বিলম্বিত প্রকাশ, সাময়িক সাফল্য ও পুনরায় রাষ্ট্রীয় সেন্সরশিপের আওতায় পড়ার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে চেকস্লোভাকিয়ার রাজনীতির নানা পালাবদল। বিশেষ করে ১৯৬৮ র প্রাগ বসন্ত। প্রাগ বসন্তের সেই ইতিহাস বাদ দিয়ে কুন্দেরা, তাঁর লেখালিখি পড়াই সম্ভব নয়। বোঝা সম্ভব নয় কুন্দেরার রাজনৈতিক দর্শনকেও। ... ...
- "মা, তুমি গান জানো, আমাকে তো কোনদিন বলোনি। - গান জানিনা তো। - তাহলে বাজাচ্ছো কি করে? - আমার মায়ের কাছে শিখেছি। শুরু করেছিলাম। তারপর আর হলনা। - হলনা কেন? - হারমোনিয়ামটা হারিয়ে গেল। - কীকরে? - সে অনেক কথা, পরে বলব।" ছোটো করে একটা ধাক্কা লাগল মনে। লাবণ্যর হারমোনিয়াম হারিয়ে গিয়েছিল? কি এমন কথা আছে, মা বুকে চেপে আছে? ... ...
ব্যথা যে অন্য রোগের উপসর্গ মাত্র নয়, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথাকে রোগ হিসেবে গণ্য করা দরকার এই উপলব্ধি আসে এই চিকিৎসকের মননে। তারপর নিজেকে শিক্ষিত করা, স্বীকৃতি অর্জন করা, সরকারি ব্যবস্থার লাল ফিতে ছিঁড়ে ব্যথা চিকিৎসার এক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা ইএসআই হাসপাতালে, ভারতের প্রথম ব্যথা চিকিৎসা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র-ই এস আই ইনস্টিটিউট অফ পেইন ম্যানেজমেন্ট। ব্যথা চিকিৎসার এই পুরোধা পুরুষ চলে গেলেন ২০২৩-এর ৫ই জুলাই। ... ...
সবচেয়ে বেশি বছর ধরে, সবচেয়ে বেশি করে ত্রিদিব এটা বুঝেছে, তার নিজের জীবনে সবচেয়ে কদর্য ব্যাপারটা আসলে সে নিজেই। কিন্তু, যখন শেষ অব্দি এটা বুঝল, তখন বড্ড দেরি হয়ে গেছে, আর, নিজেকে নিজেই বদলানো মানে নিজেকে দিয়ে বদলানো, যে নিজের মধ্যেই রয়েছে গন্ডগোলটা। ওসব আসলে হয় না। কিন্তু এসব জেনে টেনে গেলে সুবিধে একটা হয়ই। নলেজ ইজ পাওয়ার। সুঠাম সঙ্গত দক্ষ সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক সহজ হয়। ... ...
থ্রি নট থ্রি রাইফেল বাগিয়ে ধরে আড়ষ্ট কনস্টেবল বললেন- 'স্যার, আমাকে একটু গার্ড দিয়ে রাখুন। গুলি চালানোর অর্ডার নেই, শুনেছি এইসব অঞ্চলে বন্দুক ছিনতাই হয়। বন্দুক গেলে চাকরিতে টান পড়বে' ২০২৩ এর ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোটকর্মীদের নিরাপত্তা দিতে আসা রাজ্যপুলিশের নিরাপত্তারক্ষীরা নিজেরাই নিরাপত্তাহীনতায় অস্থির, ভোটার বা ভোটকর্মী কোন ছাড়? অঞ্চলটি আমডাঙা। পুলিশের মুখে এ-কথা শুনে ভোটকর্মীরা হাসবেন না কাঁদবেন বুঝে উঠে পারছেন না। কিংকর্তব্যবিমূঢ় দশা তাঁদের। ... ...
নাহ, সীতা ও বোধহয় এঁদের থেকে ভালো ছিলেন, ওনার আসে পাশে রাবণ নিযুক্ত চেড়ি রা সর্বদাই মুখের কাছে খাদ্য বস্তু, এটা ওটা ধরছেন, রাবণ মাঝে মধ্যে এসে মিষ্টি কথায় চিঁড়ে ভেজাবার চেষ্টা করছেন আর সীতার সেখানে কাজ বলতে যাকে বলে "ল্যাদ" খাওয়া আর মাঝে মাঝে রামের নাম ধরে ডুকরে কেঁদে ওঠা। "এঁরা" বলতে এদেশে অর্থাৎ আমেরিকায় যে সমস্ত সদ্য বিবাহিতা নারী ভারত থেকে স্বেচ্ছায় এসে উপস্থিত হন তাঁদের গল্প কিন্তু অন্য। সিনেমায় দেখা আমেরিকা আর শিকড় উপড়ে আসা অভিবাসী ভারতীয়দের জীবনযাত্রার মধ্যে বিশাল ফারাক। কুড়ি বছর আগে সেটা আরোই কঠিন ছিল কারণ বর্তমানে ইন্টারনেট, হোয়াটসঅ্যাপ, বিভিন্ন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, স্থানীয় অঞ্চলে ভারতীয় দোকানের সংখ্যা বৃদ্ধি, ভারতীয়দের জোট বেঁধে নির্দিষ্ট শহরে থাকা ইত্যাদি বহুল পরিমাণে বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারত যেন একেবারে হাতের মুঠোয় এসে গেছে, তবুও যে সমস্ত সমস্যা রয়ে গেছে তা চিরন্তন। ... ...
কাফকা কেন এখনও প্রাসঙ্গিক, এবং পূর্বইউরোপেও ভীষণভাবে সমসাময়িক, তা নিয়ে কুন্দেরা একদা একটি লম্বা প্রবন্ধ লিখেছিলেন। সে পূর্ব ইউরোপ অবশ্য আর নেই। কুন্দেরাও আর নেই। তাই এবার আমাদের লেখার সময়। ওইসব পুরোনো পুরোনো লেখা, যার বহুলাংশই সোভিয়েত-যুগ নিয়ে লেখা, সেসব কি আদৌ প্রাসঙ্গিক আর? মার্কেজ, কুন্দেরা আর একো, এই তিনজন আমাদের যৌবনের বিদেশী হিরো ছিলেন, হলিউডি ক্লিন্ট ইস্টউড যেন, কিন্তু সেটা তো কুন্দেরা পড়ার কোনো কারণ হতে পারেনা। সেই সোভিয়েত নেই, সেই বার্লিন পাঁচিল নেই, সেই লৌহ-যবনিকা আর নেই, এমনকি প্রাহার সেই বসন্তও আর নেই। তাই, কেন কুন্দেরা? ... ...
ডে স্কুলে একবার আমাদের স্কুলে একজন অঙ্কের টিচার এলেন। সারনেম মান্ডি। অর্থাৎ শিডিউলড ট্রাইব। তিনি যে কিছুই জানেন না—সেটা প্রমাণ করার জন্যে আমাদের চেষ্টার খামতি ছিল না। সেই বয়সে মব মেন্টালিটিতে তাঁর প্রতি কী মনোভাব ছিল আমার—সেটা ভাবলে এখনো লজ্জাই পাই।এমন নয় যে আমাদের স্কুলে বাকি অঙ্কের মাস্টাররা সকলে রামানুজনের মত ব্রিলিয়ান্ট ছিলেন, কিন্তু ঐ যে জাত—ঐতেই আমরা বুঝে গেছিলাম, যে উনি কিচ্ছু জানেন না। জাতের দোহাই দিয়ে চাকরি পেয়েছেন। এ নিয়ে কথাও হত আমাদের মধ্যে। একটু উঁচু ক্লাসে উঠলে অনেক বলত এসব কথা। ... ...