মধ্যমানের ও তুলনামূলক কম অভিজ্ঞ কর্মী নেওয়ার একটা বিশেষ সুবিধাও রয়েছে। তা কম খরচসাপেক্ষ। একটু কম দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী নিয়োগ করা এবং নির্ভুল হতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা না-রাখা, অনেকটা খরচ বাঁচায়। এর ফলে অত্যুচ্চপদস্থ উপরওয়ালা, কম লগ্নির মাধ্যমে আরও একটি আঞ্চলিক ভাষায় ব্যবসা সম্প্রসারণ ঘটিয়ে দিয়ে তস্য উপরওয়ালার সুনজরে থাকতে পারেন এবং নিজস্ব উচ্চ বেতন ও অন্যান্য সুযোগসুবিধার রক্ষাকবচ বজায় রাখতে পারেন। আরও একটি দৈনন্দিন সুবিধাও এর ফলে ঘটে। কম দক্ষতাসম্পন্নরা অনেক বেশি ইয়েস ম্যান গোত্রের হয়ে থাকেন। তাঁদের তর্ক করার প্রবণতা কম থাকে, যে তর্ক একদা নিউজরুমকে জাগরূক রাখত। ... ...
ফ্রম আলপিন টু আল কায়দা – বিবিধ বিষয়ে প্রবন্ধ ফাঁদতে ঘুরে-ফিরে আসতে লাগল সম্পাদকের পছন্দের তালিকায় থাকা একই নাম। ফলে অধিকারীভেদ রইল না, বই কিংবা উইকি-টোকা রচনায় মৌলিকতা পৌঁছোল তলানিতে। লেখক-সম্পাদক ভাই-ভাই হয়ে উঠল আর বিনা বাক্যব্যয়ে লেখা আসামাত্রই চলে গেল কম্পোজে, সামান্যতম কাটাছেঁড়া ছাড়াই। কফির টেবিলে তুফান উঠল না, উঁকি দিয়ে গেল না সারস্বত মতান্তরের লেশমাত্র। কেবল অধ্যাপকের চাঁদমারি হয়ে প্রচ্ছদে আইএসএসএন আর ভিতরে আমাদের নাম ছাপা হতে থাকল ঈষৎ বড়ো পয়েন্টে, সম্পাদক হিসেবে। ... ...
সর্বভারতীয় বলে পরিচিত যে ইংরেজি কাগজগুলো, সেগুলোর শিরোনামে প্রায়শই হিন্দি শব্দ/শব্দবন্ধ নিয়ে খেলা লক্ষ্য করা যায়, রোমান হরফে পুরোপুরি হিন্দি শিরোনামও দেখা যায়। নীতীশ কুমারের নেতৃত্বে ২০১০ এর বিহার বিধানসভা নির্বাচনে এন ডি এ জোট জয়ী হওয়ার পর ‘দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ এর শিরোনাম ছিল ‘Rajnitish’। ‘দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া’ র পাতায় অভিনেত্রী জেসি রনধাওয়া সম্বন্ধে প্রতিবেদনে ‘Jesse jaisi koi nahin’ শিরোনাম ব্যবহৃত হয়েছে। স্পষ্টতই এইসব কাগজের হিন্দিভাষী সম্পাদকরা ধরে নেন যে পাঠকের মাতৃভাষা হিন্দি নয়, সে-ও হিন্দি বোঝে। বাংলা, ওড়িশা বা দক্ষিণ ভারতের পাঠকদের অসুবিধার কথা ভাবা হয় না। ... ...
বই ছাপতে গেলে প্রথমে কী লাগে? বা কী কী লাগে? মাল মানে অর্থ লাগে, লগ্নি লাগে – তার পর তো অন্য কথা। অর্থাৎ একজন ইনভেস্টর চাই – কিন্তু তাঁকে তো ইনভেস্ট করিয়ে ডুবিয়ে দেওয়া যায় না – সুতরাং…। তাহলে দাঁড়াচ্ছে, একজন গাইড করার লোক চাই, এবং সেই মালটিই আসল মাল যে মাল এনে দেওয়ার রাস্তা দেখাবে। হ্যাঁ, ইনিই হলেন এডিটর বা সম্পাদক – আসলে দুকান কাটা এবং চার অক্ষর। ... ...
রাঘব বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা মানেই কিছুটা আলো-আঁধারি ভাষা এবং স্মার্টনেস। এই-ই মোটামুটি বোঝাপড়া। আরেক ধাপ এগোলে বড়জোর রাঘব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরানা কমলকুমার মজুমদারের। আলোচনা মোটামুটি এই স্তরেই ঘোরাফেরা করে। কমলকুমারের ভাষাশৈলী নিয়ে রাঘব বন্দ্যোর কাজকর্মও সেই ভাবনাটিতেই জল-হাওয়া দেয় বটে। এই লেখা সেই ভাবনাধারা থেকে একটি ছেদ ঘটায়, অন্য আরেক চিন্তাভুবনে পাঠককে নিয়ে যেতে চায়। সে বৃত্তান্ত অন্য বটে, এবং অনন্যও। ... ...
ব্যাপার হল গিয়ে রাঘবের সাহিত্যে কী আছে আমি তার কতটুকুই বা জানি! অথবা নিজেকে যদি এমনভাবে বোঝাই যে, আমিই একমাত্র জানি যে রাঘবের সাহিত্যে কী আছে, তারপরও রাঘবের সাহিত্যে যা আছে, তা কিন্তু রাঘবের সাহিত্যেই থেকে যাবে। ... ...
ছক বহির্ভূত, নামবিহীন, সময়স্তব্ধ শূন্য কোনো পরিসর তৈরি করতে চেয়েছিলেন রাঘব? নাকি, অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ-বছর-মাস প্রভৃতি খোপে বদ্ধ কথার ভগ্নাংশ কুড়িয়ে, জুড়ে তাকে অসীম, মুক্ত ক্রমনির্মীয়মাণ পরিসরে স্থাপন করেছেন? কথা যেখানে অমর, সম্পৃক্ত, অবিনির্মিত, অনুক্ষণ! ... ...
রাষ্ট্রসংঘের একাধিক মানবাধিকার ঘোষণায়, সনদে ‘জরুরি অবস্থায়’ রাষ্ট্রের হাতে (ইউ এন এর পরিভাষায় নেশন) কিছু বিশেষ ক্ষমতার ব্যবহার ও কিছু নাগরিক/মানবাধিকারের উপর নিয়ন্ত্রণের অনুমোদন দেওয়া আছে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতি সেই ধরনের বিপর্যয়ভুক্ত। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে এ কথাও বলা জরুরি যে, এই ‘বিশেষ ক্ষমতা’ মোটেই নিরঙ্কুশ নয়। ... ...
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সরকারি কর্মীর হাতে, পুলিশের হাতে, সেনাবাহিনীর হাতে, বিচারকদের হাতে, সাংবাদিকদের বা প্রচার মাধ্যমের হাতে, ব্যবসায়ীদের হাতে, এমনকি জঙ্গিদের হাতেও থাকে স্বেচ্ছাচারিতার অগাধ ক্ষমতার উপস্থিতি। তারাই ক্ষমতা বৃত্তের ভরকেন্দ্র। সাধারণ মানুষ এখানে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। ... ...
এ দেশে মহৎ স্থাপত্যকে গুঁড়িয়ে দেওয়া কিছু মানুষ কর্ম বলে বিবেচনা করেন, আদালত সে ঘটনায় দোষী খুঁজে পায় না, অন্যদিকে কাল্পনিক মহাকাব্য স্থান পায় লক্ষ্মীর আসনের নিত্যকর্ম পদ্ধতির পাশে। হিন্দুর পুজোকে এদেশে সামাজিক উৎসব আখ্যা দিয়ে দেওয়া হয়, ধর্মীয় আচারকে সামাজিক নাম দিয়ে তাতে মেতে ওঠেন লিবারাল, সেকুলার, মায় নাস্তিক বলে দাবি করা লিবারেলরা। ... ...
মৃত্যুদণ্ড বা ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড, এসব অপরাধ কমাতে কতটা কার্যকর, সে পৃথক তর্কে না গিয়েও এই যে তাৎক্ষণিক ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষা, তা কোনও আইন বা সংহিতা (কোড)গ্রাহ্য হতে পারে না। আইনের রাস্তায় কোনও অপরাধ প্রমাণে সময় লাগে, তা সে যত ন্যূনতমই হোক না কেন। এখন একটা সওয়াল প্রায়শই ওঠে, যে এই তাৎক্ষণিক শাস্তিদানের আকাঙ্ক্ষা আসলে বিলম্বিত বিচারের অতিপ্রতিক্রিয়া। ... ...
সেপ্টেম্বরের এক রাত্রিবেলা যাদবপুর শ্রমজীবী ক্যান্টিনে স্বেচ্ছাশ্রমিকরা প্যাকেট তৈরির কাজ শেষ করে ক্যান্টিন থেকে বেরোচ্ছে, তখন তিনি এলেন। দরজার সামনে রাস্তার ওপর জটলার মাঝে এসেই বললেন- 'আপনারা কি কমরেড?' সম্মতিসূচক উত্তর পেয়ে মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে রেড স্যালুট দিয়ে জানালেন - 'আমিও কমরেড।' ... ...
বাম আন্দোলনের ঐতিহ্য ব্যতিরেকেই বলতে পারি সংকটের সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ইতিহাস বাংলার সমাজে আছে এবং তা পাপপুণ্যের ভাবনার বদলে সামাজিকতা, সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে করার বিষয়টাই বাঙালির মনে ঢুকে আছে। অতীতেও দেখেছি হরেক কিসিমের সামাজিক সংগঠন, বিদ্যালয়, ক্লাব, রাজনৈতিক দল কিংবা গণসংগঠন এই কাজে নেমে পড়ে, হয়তো বা কোনো রাজনৈতিক দিশা ছাড়াই। ... ...
আগে লকডাউন, পরে আমফান। পরপর দুই ভয়াবহতায় আক্রান্ত বাংলার মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখা গেল বহু মানুষকে। এ ব্যাপারে কেউ অভিজ্ঞ, কারও প্রথমবার উদ্যোগী হওয়া। সব মিলিয়ে সোশাল নেটওয়ার্কে দেখা গেল এক অভূতপূর্ব হাত ধরার ছবি। এরকম উদ্যোগ ছিল অসংখ্য। সেসব উদ্যোগের প্রত্যেকটিই অন্তত পৃথক রচনার বিষয় হয়ে উঠতে পারে। এখানে কেবল কয়েকটিমাত্র তেমন উদ্যোগের কথা বিধৃত থাকল, রইল না অনেক বেশি সংখ্যক উদ্যোগের কথা। এ বাছাইয়ের কোনও নির্দিষ্ট হেতু নেই, সাধ্য ও সাধের ফারাকই রয়েছে কেবল। ... ...
অসাম্য, হিংসা, জাতি-লিঙ্গ দ্বেষ রাষ্ট্রীয় বিচারব্যবস্থায় কম নেই। বস্তুত রাষ্ট্রীয় ন্যায় প্রতিষ্ঠাই করা হয় ‘পুলিশ’ নামক হিংসা সংগঠনটির মাধ্যমে। রাষ্ট্রের বিচার ব্যায়বহুল, নিম্নতর পুলিশ থেকে উচ্চতম প্রধান বিচারপতি সকল পেশাজীবীর জন্য রাষ্ট্র যা ব্যয় করে তা সাধারণ মানুষের কাছে অকল্পনীয়। প্রশান্ত ভূষণের এক টাকা জরিমানার পিছনে দেশের মানুষের কয়েক লক্ষটাকা নিশ্চিতভাবে খরচ হয়েছে আদালত-পদ্ধতিতে। ... ...
যতজন ভারতীয় বলিউডি ছবি দেখেন, ততজন নরেন্দ্র মোদীর বক্তৃতা শোনেন না। ফিল্মের মাধ্যমে কোন বার্তা দিলে সে বার্তা যে অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছায় এবং বার্তার জোর অনেক বেশি হয় সেকথা বামপন্থী, মধ্যপন্থী, দক্ষিণপন্থী --- সকলেই বোঝেন। উপরন্তু বলিউড ভারতের মানুষের কাছে পুরাণকথিত স্বর্গলোক, যেখানে দেবদেবীদের বসবাস। সুতরাং বলিউডি ছবির বার্তা বিরাট অংশের মানুষের কাছে বেদবাক্য --- কখনো সচেতনভাবে, কখনো অবচেতনে --- এ কথা বুঝতে আধুনিক চাণক্য হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ... ...
এম জে আকবর কতটা দোষী আর কতটা মিথ্যা অভিযুক্ত, এর আনুপুঙ্ক্ষিক তদন্ত হওয়া দরকার। এবং সবিশেষ বাদী প্রতিবাদী শিবিরের বাইরে বিষয়ের নানা দিক খতিয়ে দেখা প্রয়োজন, কারণ ভারচুয়াল যোগসূত্র আমাদের কাছ থেকে নিরপেক্ষ রায় দেবার স্বাভাবিক ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে। কেবল সত্যের জন্য কোনো দরদ নেই আমাদের, তবু আমরা গসিপ থেকে সরে আসবো না। প্রতিদিন যেন এই স্ক্যান্ডালের বাটি পূর্ণ থাকে। ... ...
১৯৪৭-এর পরবর্তী নানারূপ কৃষি সংস্কার, আইন করে জমিদারি প্রথার বিলোপ সত্ত্বেও ভারতরাষ্ট্রের উৎপাদন সম্পর্কের সামন্ততান্ত্রিক চেহারাটি বদলায়নি, সামন্ততান্ত্রিক সম্পর্কের উপর আইনি আঘাত এলে, অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে নতুন ধরনের উপরিকাঠামোর সংগঠন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সামন্তবাদ নিজেকে প্রাসঙ্গিক করে রেখেছে। বুর্জোয়া আইনের মাধ্যমে জমি হাতবদল আটকাতে আইনি ব্যবস্থার নাকের ডগায় গড়ে ওঠে সামন্ততান্ত্রিক সশস্ত্র সংগঠন। ... ...
খাপ কিন্তু শিল্প। চপসিল্পোর মতো খাপসিল্পো। এখানে এডিট স্ক্রিনিং স্ক্যানিং--- ইত্যাদির ব্যাপক কারুকাজ চলে। তো, ওই সুচারু ইন্টেলেকচুয়াল কারুকাজে কমেন্টের 'বাবা উক্ত' শেষের 'ভালোবাসা' 'মানবিক মুখ' কথাটথা ঝড়াকসে বাদ চলে গেলো। এবং ন্যাজাবিযুক্ত স্ক্রিনশটটি পোস্ট হইতে পোস্টান্তরে বাহিত হইতে লাগিলো। ... ...
অগাস্টের আট তারিখ, লকডাউনের দিন বেহালার এক পরিচারিকা হেঁটে কাজে যাচ্ছিলেন। পর্ণশ্রী থানার পুলিশ তাঁকে আটক করে। রাতে তিনি ছাড়া পান। পরের দিন ওই বাড়িতে কাজে গেলে লকডাউনের দিন না আসার অজুহাত দেখিয়ে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। ... ...