কুড়িদিন কলকাতা ঘুরে এলাম। কলকাতা গেলে অবধারিত আমার শরীর খারাপ হয়। হয় পেট নয় ফুসফুস। এবারে দুটোই হয়েছিল। পেট রোগা বাঙালির পেট পশ্চিমের হাওয়ায় বিলাসী হয়ে গেছে। তার মধ্যে-ই বোলপুর শান্তিনিকেতন , কোলাঘাট , ডায়মন্ডহারবার রোডের রিসর্টে ঘুরে এলাম।নস্টালজিক আদিখ্যেতা মনে করে ফুচকা আলুকাবলি খেলাম। প্রচুর মিষ্টি খেলাম। সোনাঝুরিতে বাউল আর সাঁওতালি নাচ দেখলাম। মাদলের তালে মন উড়ু উড়ু হলো। কোলাঘাটের রূপনারায়ণের পাশের পিকনিক স্পটে পিকনিক পার্টির ছেলেদের দিন দুপুরে মদ খেয়ে অদূর গায়ে উদ্দাম নাচ-ও দেখলাম। শক্তিগড় ... ...
সত্তরের শেষে বা আশির দশকের প্রথম দিকে , যখন-ও পর্যন্ত আনন্দবাজারের কভার পেজে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের ময়দানি গুঁতোগুঁতি আর ব্যাকপেজে আর্জেন্টিনা বা ইতালির বিশ্বকাপ জয় ছাপা হতো , প্রণয় রায়ের 'ওয়ার্ল্ড দিস উইক' চায়ের দোকানের মাতব্বর খোকন-দা কে পেরেস্ত্রৈকার বোদ্ধা করে তোলে নি তখন-ও পর্যন্ত, সেই সময় আমার মতো একনিষ্ঠ খুদে বাঙালের ইস্টবেঙ্গলের উয়াড়ির কাছে এক গোলে হেরে যাওয়া কে শ্মশানে-র হাহাকার মনে হতো। সেটাকেই বলে সমর্থন ... ...
কিউবায় মোট পনেরোটি প্রভিন্স আর একটি যাকে ওরা বলে স্পেশাল মিউনিসিপ্যালিটি। আমরা যেখানে গেছিলাম সেই প্রভিন্সের নাম ভিলাক্লারা। আর যে শহরের এয়ারপোর্টে নামলাম বা উঠলাম , সেটা সান্টাক্লারা। এইটুকু ইনফরমেশন অবশ্য যাবার আগেই জানতাম। আর তার সাথে যেটা আমার শিকড়গত বামপন্থা জানিয়ে রেখেছিলো, যে এই সেই সান্টাক্লারা, গেরিলা যুদ্ধের তীর্থক্ষেত্র। চে'র মাত্র সাড়ে তিনশ গেরিলা বাহিনী হারিয়ে দিয়েছিলো আমেরিকান মদতপুষ্ট পাঁচ হাজার সেনা , ট্যাংক , কামান বন্দুক আর সবচেয়ে বড়ো কথা পুঁজিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা-কে। রক্তপা ... ...
( দ আর কেউ কেউ একজায়গায় চেয়েছিলেন লেখাটা , কিন্তু আজকে কি জানি কেন আমার 'add to first post' অপশনটা পাচ্ছি না , কাল কিন্তু পেয়েছিলাম। ক্ষমাপ্রার্থী। )
--------------------------------------------------------------------------------------------------------
জীপসাফারি-র বাকি গল্পটুকু-তে এখন থাক। তার আগে বলি , এই পর্যন্ত পড়ে যারা ভাবছেন , সমাজতান্ত্রিক দেশ হিসাবে কিউবা স্বর্গরাজ্য , বিশেষতঃ যাঁরা পারিশ্রমিক আর কাজের সুযোগ-এ অথবা উচ্চশিক্ষার উৎকর্ষে , আমেরিকার সুবৃহৎ দক্ষতার বাজারে প্যাম্পার ... ...
ছোট খাটো মুদিখানা বা কিউবান মেমেন্টো বিক্রির হকারি মার্কা দোকান ছাড়া কিউবাতে ব্যক্তিগত মালিকানায় কোনো ব্যবসা নেই। এটা নিয়ে অবশ্য কারো সন্দেহের অবকাশ থাকার কথা নয় , কারণ এটাই নিয়ম হওয়ার কথা। আমরা অবশ্য বাজারহাট , কপোরেটিভ স্টোর সেরকম করে দেখিনি। জামা কাপড়ের দোকান-ও দেখিনি। তবে বড়োবাজারী মাড়োয়ারি-র গদি-র মতো কোনো দোকান যে নেই তা নিশ্চিত। এমনকী ওই কনসিয়ারজবাবু-ই বললেন , বিদেশিদের পাসপোর্ট ছাড়া ট্যাক্সি-তে নেওয়াও বারণ ছিল এই সেদিন পর্যন্ত। কারণ দুটো , এক বিদেশী নাগরিকদের নিরাপত্তা আর দুই , ট্যাক ... ...
কিউবা বেড়াতে গেছিলাম বলে দাবি করছিনা যে কিউবা দেখে ফেলেছি। সমাজতান্ত্রিক একটা দেশ দেখা বলতে যেরকম দেশটার মেঠো পথে পথে ঘুরে বেড়ানো বোঝায় , মানুষ কে ছুঁয়ে দেখা বোঝায় , সংস্কৃতিকে নেড়েঘেঁটে দেখা বোঝায় , বিশেষ করে এমন একটা দেশে , যেখানকার বৈশিষ্ট-ই পশ্চিমি বাজারসভ্যতার সঙ্গে ছুঁতমার্গ , তার আমি কিছুই করিনি। কিউবা বললেই আমাদের মতো আশি/নব্বই-এর দশকে বামপন্থী রাজনীতি করা বা বিশ্বাসকরা মানুষ যেমন করে রুকস্যাক কাঁধে মোটরসাইকেলে চে-গেভারার মেঠো পথে ঘুরে বেড়ানো মনে করে , সেরকম কোনো তীর আমি মারিনি। আমি ... ...
মৎস্য পুরান (১)
----------------------
সেদিন ভোররাতে একটা পুরোনো সপ্ন দেখলো মিতুল। স্বপ্ন না বলে বহুযুগ আগের স্মৃতি ভেসে ওঠার মতো ব্যাপার মনে হলো। একটা আড়েবহরে তিনফুট বাই চারফুটের একুরিয়ামের কাঁচের ওই পাশে একটা গোল্ডফিস। প্রায় স্থির চোখে তাকিয়ে আছে। সাইজে প্রায় মিতুলের মাথার সমান বড়ো।
***
একুরিয়ামটা যেরকম মিতুলদের পুরোনো বনেদি বাড়ির টানা বারান্দার পশ্চিম কোনে থাকতো। ইস্কুল থেকে বিকেল তিনটের দিকে ফিরে কাঁধের ব্যাগ (যার ওজন প্রায় মন খানেক মনে হতো তখন) হেঁইও বলে ঘরে ছুঁড়ে ফেলে , একু ... ...
দশ বছরের জন্মদিন-এর কাছাকাছি সময়ে, অরুনাংশুদাদুর কাছ থেকে একবাক্স টিনের পুতুল পেয়েছিলো মিতুল। একটা মজবুত কাঠের বাক্সে এক একটা ইঞ্চি ছয়েক লম্বা, প্রায় কুড়িটা পুতুল। অরুনাংশুদাদু কাজের সূত্রে দেশ বিদেশ ঘুরতেন তখন। অতশত ভালো করে মনে নেই মিতুলের, তবে খুব সম্ভব পেশায় সাংবাদিক ছিলেন অরুনাংশুদাদু। তো পুতুলের বাক্সটা খুব সম্ভবত : জর্জিয়া, হাঙ্গেরী বা ইউক্রেন এরকম কোনো পূর্ব ইউরোপের দেশের হবে-ও বা। এটাও যে সেইসময় মিতুলের বোঝার কথা, তা নয়। ... ...
ইস্টবেঙ্গল , ব্রাজিল আর যখন ক্রিকেট-এ উৎসাহ ছিল , তখনকার ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দল ছাড়া , কোনো খেলোয়াড়ি যুদ্ধে , আমি সব সময় দুর্বল দলের পক্ষে। ইস্টবেঙ্গল ছাড়া আমি সব সময় মহমেডান স্পোর্টিং কে সাপোর্ট করে এসেছি , কলকাতার ফুটবল-এ। অথবা টালিগঞ্জ অগ্রগামী , বা খিদিরপুর স্পোর্টিং। কোনো এক ফিফা বিশ্বকাপে , ক্যামেরুন কে খুব সাপোর্ট দিয়েছিলাম। নাদাল বা ফেডেরার কোনো অনামী দুর্বল , ৱ্যাঙ্কিন-এ যোজন দুরে-র কোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে কোর্টে নামলে , মনে প্রাণে চাই দুর্বল অনামী খেলুড়ে-ই জিতুক। এই ব্যাপারটা সুধু ... ...
পোলিওমাইলাইটিসের এফেক্ট-টা পল্টনের শরীরে এমন কিছু মারাত্মক নয়। ছয়মাস বয়সে ওর পোলিও জ্বর হয়েছিলো সেটা বাবা-মা-দিদিমার মুখে অনেক শুনেছে। তারপরে সারা জীবনের জন্য অবশিষ্ট প্রভাব বলতে একটা কমজোরি আর দৈর্ঘ্যে সামান্য খাটো ডান পা। খুব ছোটবেলার স্কুল জীবনে খেলাধুলো প্রায় বন্ধ-ই ছিল পল্টনের। ঐ কমজোরি পায়ের জন্য। দশ-বারো বছর বয়সে , পালঙ্ক-আলু জীবনে অভস্ত্য হতে হতে শরীরের ওজন-ও বেড়ে গেছিলো সাধারণের চেয়ে অনেক গুন। শেষে ওর বাবা ওকে ধরে নিয়ে গিয়ে , পাড়ার 'স্বাস্থ্য ও শক্তি' ব্যায়ামাগারে ভর্তি করে দেয়। সেখানে ... ...