পর্ব-৩
স্নেহের বরেণ,
মানিকচকের বাজারসরকার মারফৎ সংবাদ পেলাম তোমার একটি পুত্র সন্তান হয়েছে। বংশের পিদিম জ্বালাবার লোকের যে অভাব ছিল তা বুঝি এবার ঘুঁচলো। সঙ্গে একটি দুঃসংবাদে হতবাক হলাম।
সন্তান প্রসবকালে তোমার স্ত্রী রানীর অকাল মৃত্যু। তুমি আর কি করবে বাবা? সবই বিধির বিধান। শোকে পাথর হবার সময় এটা নয়। বুক বেঁধে আবার গড়ে তোলো সংসার। পত্র মারফৎ বাজার সরকারের কনিষ্ঠা কন্যা শিউলী রানীর একটি ফটো তোমাকে পাঠালাম। কন্যা রূপবতী না হলেও গুণবতী বটে। সেলাই ফোড়াই, রান্না-বান্নার কাজে সিদ্ ... ...
পর্ব-২
ঝাঁ-চকচকে শহরের সবচেয়ে বিলাসবহুল বহুতলের ওপরে, সৌর বিদ্যুতের অসংখ্য চাকতি লাগানো এ্যান্টেনার নীচে, একটা গুপ্ত ঘর আছে। সেটাকে ঠিক গুপ্ত বলা যায় কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ থাকতে পারে। যাহা চোখের সামনে বিরাজমান, তাহা গুপ্ত হয় কেমনে? ভাষা-বিদ্যার লোকজনেরা চোখ পাকাতেই পারেন। প্রশ্ন করতেই পারেন। কিন্তু এতসব সত্ত্বেও চোখের সামনে দন্ডায়মান ঘরটা গুপ্তই। কেউ ওখানে প্রবেশ করেনা সচরাচর। সভ্য জামাকাপড় পরা পাহাড়াদাররা ওটাকে বলে মেশিন ঘর।
নীচের উঠোন থেকে বাইশতলার মেশিন ঘরের হদিশ তারাও খুব একটা রাখে না ... ...
পর্ব-১
মন্টু ছুটছিল।
যেভাবে সাধারণ মানুষ বাস ধরার জন্যে ছোটে তেমনটা নয়।
মন্টু ছুটছিল।
যেভাবে ফাস্ট বোলার নিমেষে ছুটে আসে সামনে ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে থাকা প্রতিপক্ষের পেছনের তিনটে উইকেটকে ফেলে দিতে তেমনটা নয়।
মন্টু ছুটছিল।
যেভাবে সাইকেল চালানো মেয়েটার হাতে প্রথম প্রেমের চিঠিটা ধরিয়ে দিতে হয় তেমনটা নয়।
মন্টু ছুটছিল।
ইমারজেন্সি ওয়ার্ডে সিরিয়াস পেশেন্টকে ভর্তি করানোর জন্য যেভাবে ডাক্তারের সন্ধানে দৌড় দিতে হয় তেমটা নয়।
আসলে মন্টু ছুটছিল পেছন থেকে ঠিক পিঠ বরাবার এ ... ...
“ছোট্টমোরগ ঘাড় উঁচু করে স্বপ্ন দেখে
প্রাসাদের ভেতর রাশি রাশি খাবার!”
(একটি মোরগের কাহিনী/সুকান্ত ভট্টাচার্য)
মাথার কাছে অনবরত বেজে চলেছে মোবাইলটা। আমি তখনো ঘুমের ঘোরে। আমি তখনো স্বপ্নে। হাতড়ে হাতড়ে খুঁজে চলেছি তাকে যে আমার এই মুহূর্তের ঘুম নষ্ট করছে। স্বয়ংক্রিয় দূরাভাষের যন্ত্রটি জানাচ্ছে এই এতো ভোরের সংবাদ সুখের নয়। পূর্বের অভিজ্ঞতা বলছে এই বার্তা এনে দিতে পারে অমোঘ নিষ্ঠুর পরিণতি। ঠিকুজি, কুলজি বলছে এই বংশের বেশিরভাগ মৃত্যু শীতকালীন। এবং ঊষা লগ্নে। জড়তা, স্বপ্ন, আখ্যানের অঙ্গ ... ...
ওরা তোমাকে হত্যা করে কোথায় কবর দিয়েছে
আমাকে কিছুই জানালো না
সেই থেকে পুরো স্বদেশ তোমার কবর হয়ে গেলো
মাতৃভূমির প্রতি ইঞ্চি মাটিতে, যেখানে তুমি নেই
সেখানেও তুমি জেগে উঠলে।
ওরা ভেবেছে, তোমাকে গুলি করে হত্যা করবে
কবর দিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেবে।
কিন্তু ওরা মূলতঃ
বিপ্লবের বীজ বপন করেছে।
(এপিটাফ/ এর্নেস্তো কার্দেনাল/ অনুবাদ-পারভেজ চৌধুরী)
এক অন্তর্বতী আলোর গহ্বরের মধ্যে দিয়ে এঁকে বেঁকে চলেছে যে স্মৃতির মালা সেই উপাখ্যানের পুরোভাগে এক মানুষ জ্যোতির্বলয়ের মাঝখান ... ...
“ও আলোর পথ যাত্রী...এযে রাত্রি...এখানে থেমো না...”
এমনিতেই পড়াশুনো আমার ধাতে সয় না। তার ওপর গরমের ছুটি। সকালে একপাতা হাতের লেখা আর সন্ধ্যেবেলা ঢুলতে ঢুলতে দাদার পাশে বসে কোনো মতে কয়েকটা ভাগ, দুই তিনটে যোগ আর মুষ্টিমেয় আনা খানেক গুণ করলেই আমাকে আর দেখে কে। মা সরস্বতী তখন আমার এ্যালুমোনিয়ামের পড়ার বাক্সে বন্দি। আর নকশাল তখন গরমের চোটে নীচের বারান্দায় নামা দূর অস্ত, দানা পানি খেতেও ভুলে যায়। কন্টিদের বাড়ির ছোটো পেয়ারা গাছটার ওপর বসে থাকে। আর মাঝে মাঝে একটু একটু উড়ে গিয়ে পুকুরপাড়ে বিজয় কাকু ... ...
একজন কিশোর ছিল, একেবারে একা
আরও একজন ক্রমে বন্ধু হল তার।
দুয়ে মিলে একদিন গেল কারাগারে;
গিয়ে দেখে তারাই তো কয়েক হাজার!
(জেলখানার কবিতা/বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)
জানলা গুলো ছিল একদম ঘরের মাথার কাছে। মানে যেখানটায় কড়িকাঠ। ওখান দিয়ে দিনের প্রথম আলো এসে পড়ে। এক ফালি আলো মেঝেতে লুটোচ্ছে। দিনের প্রথম সূর্যের আলো। একটা লোক দুমড়ে মুচড়ে পড়ে আছে মেঝেতে। আধো আলো আধো অন্ধকারে ভালো করে দেখা যায় না তাকে। লোকটার ঠোঁটের পাশ দিয়ে মানে কষ বেয়ে পড়ছে রক্ত। মাঝে মাঝে কেঁপে উঠছে শরীরটা। আবার স্থ ... ...
চার
“গাছেরা ঘুমিয়ে পড়লে কি ফুলেরাও ঘুমিয়ে পড়ে?”
খেলার মাঠে হরেক রকমের আচার নিয়ে আসে চুনু হজমিওয়ালা। তার নানারকম কাচের বয়ামের মধ্যে থাকে টক জলে চোবানো লাল কুল। মাটির ডেলার মতো লাল হজমি। তেঁতুলের আচার। বিলাতী আমড়া। কারেন্ট নুন। এগুলো প্রত্যেকটাই আমার কাছে খুব লোভনীয়। প্রত্যেকটি আমার বায়নার জিনিষ। এদের কোনো না কোনটা আমার রোজ বিকেলের সঙ্গী না হলেই মনটা খারাপ হয়ে যায়। ঠিক আজ যেমন হয়েছে। ঠাম্মার কাছে পয়সা চাইতে যাওয়ার সময়ের একটু গন্ডগোল হওয়াতেই বিপত্তিটা ঘটেছে। ঠিক এমনটা হতো না, যদি ... ...
পর্ব-১
একটা বই একটা গোটা মাস কেড়ে নিয়ে কখোনো এমন ভাবে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেনি। একটা বই আগে কোনোদিন এমন ভাবে বলেনি, বাংলার হরফে যা পড়লে বাংলা সাহিত্যে শুধু তা প্রথম নয় একেবারেই বিরল। শুধু বাংলা সাহিত্যে কেন? বিশ্বের সাহিত্যের ভান্ডারে এই বই খুঁজে বের করা দুঃসাধ্য। এক মা লিখছেন যুদ্ধের দিনলিপি। এক মা লিখছেন এমন এক নিদারুণ সময়ের কথা, ব্যাথার কথা, আনন্দের কথা যা পড়তে বসলে আজ এতোদিন পরেও স্থির থাকতে পারাটা দুষ্কর।
আপনি “একাত্তরের দিন গুলির” কথা বলছেন দাদা?
আমার হাতে মেলা বইয়ের ... ...
এক
'কিছুটা থাক আলগোছেতে...কিছুটা থাক কাছে...কিছু কথা ছড়িয়ে পড়ুক...চেনা আলোর মাঝে...।''
খুব সকালে ঘুম ভাঙতে চাইতো না আমার। লেপের পরে লেপ, চাদরের পরে চাদর এর গা থেকে ওর কাছ থেকে, ছেড়ে যাওয়া বিছানা থেকে টেনে টেনে গায়ে চলে আসতো আমার। লম্বা চাটাইয়ে স্যাঁতসেঁতে পলেস্তারা খসা ঘরে শুয়ে থাকতো ওপার বাংলা থেকে অনিচ্ছায় আসা উদ্বাস্তু মানুষ গুলো। আমিও তাদের মধ্যে কুন্ডুলী পাকিয়ে লেপ, চাদর আর কাঁথার পাহাড়ের মধ্যে সেঁধিয়ে থাকতাম। সকালের রোদ আমাদের বালীর বাসায় ঢুকতো না একটুও। কিন্তু মায়ের উনুনের ধো ... ...