[ কাঠ্ঠোকরা পাখীর জলে ছোঁ মারার মতো কেড়ে নিলেন কাগজখানা ক্যান্টিন ম্যানেজারের হাত থেকে। দেখলেন কি লেখা আছে তাতে ! এরপরে অর্ডার বেরোলো, - ‘আমি বসে আছি এখানেই। সকালের চা, ব্রেকফাস্ট, তারপরের ফলের রস আর আজকের নন-ভেজ লাঞ্চ এক্ষুনি আনান এখানে’ ইয়েসো ম্যাম ইয়েসো ম্যাম করতে করতেই ক্যান্টিন ম্যানেজার প্রায় পালাতে পারলে বাঁচেন। এর মধ্যে পেশেন্ট বলে উঠল ‘ম্যাম, অতো আমি এখন খেতে পারবো না ! কিছু একটু হলেই হবে আমার !’] ... ...
[ এবারে প্রশ্ন হলো আমার শরীরে এই হেপাটাইটিস ‘বি’ এলো কোত্থেকে ? এই দুই নার্সিং হোমের মাঝের সময়্টায় আমি তো নিই-ই নি কোনো রক্ত, বা ফুঁড়তেও হয়নি কোনো সিরিঞ্জের ছুঁচ ! তাহলে ? এ তো আর হাওয়ায় বা জলে ভেসে আসার জীবানু নয়। একমাত্র সেই লখীন্দরের বাসর ঘরের ছ্যাঁদার মতো আমার শরীরে এই বিষ নিঃসন্দেহে এসেছিল ওই সেই দক্ষিণ কলকাতার বিশিষ্ট নার্সিং হোমের - সেই স্টকে থাকা বিশেষভাবে পরীক্ষিত রক্তের থেকেই। আর তো কোনো মাধ্যমই ছিল না হেপাটাইটিস ‘বি’ আগমনের।] ... ...
[ এমনিতেই যে কোনো এমার্জেন্সিতে আমরা যে রক্ত নিয়ে আসি তার কোনো কাগজপত্তর পেশেন্ট পার্টির হাতে দেওয়াই হয় না। একমাত্র বর্তমানে ওই রক্তের পাউচের ওপরে যে কাগজ বা লেবেলটি সাঁটা থাকে সেটা যদি কেটে রেখে দিতে পারেন, তাহলে অন্তত ভবিষ্যতের আইন আদালতে কাজে লাগলেও লাগতে পারে। তবে সে সম্ভাবনা খুব কম। এই প্রসঙ্গে আমি কথা বলেছিলাম কলকাতার এক প্রাইভেট ব্লাড ব্যাঙ্কের এক বন্ধুর সাথে। সে অনেকদিন ধরেই জড়িয়ে আছে এই ব্লাড ব্যাঙ্কের সাথে। আমার প্রশ্ন ছিল যে ওদের থেকে নেওয়া রক্ত থেকে আমার যদি হেপাটাইটিস বি হয় তাহলে প্রমাণ করবো কি উপায়ে ? ] ... ...
[ তিড়িং করে সে বাসের ফার্স্ট গেটে এক লাফ ! কি যে হলো অচিরেই ! ডান পা’খানা নীচের সিঁড়িতে লাগলই না আমার। হড়কে যেতে যেতে বুঝলাম রড ডান হাতে ধরা থাকলেও পা স্লিপ খেয়ে ঘষ্টাচ্ছে রাস্তায়। বাস থামল না। কণ্ডাক্টর দেখলো। গতি বাড়াল বাস। আমার হাত ছেড়ে গেল বাসের রড। চিৎ হয়ে সটান রাস্তায়। বাসের পেছনের চাকা অবলীলায় ঘষ্টে দিল আমার ডান উরু। একটা বিকট যন্ত্রণার মধ্যেই দেখলাম বাস চলে যাচ্ছে দূরে।] ... ...
[ আমার এমআরডি (ওখানকার ৬৯ঙ) নাম্বার জিজ্ঞেস করলেন ডাক্তার। গোটা শঙ্কর নেত্রালয় তখন সুন্নুনাটা। ডাক্তার এক সিকিউরিটিকে ডেকে আমার নাম্বার দিয়ে ফাইলটা আনতে বললেন। বিশ্বাস করুন ঠিক পাঁচ মিনিট। আমার সেই “এ্যালারজিক টু সালফার” লেখা ফাইল ডাক্তারবাবুর টেবিলে। তখন ডানচোখ পুরো অন্ধকার। কালো – নিকষ কালো।] ... ...
[ প্রথম কেনা এই ফেকো মেশিনটি বসেছিল ডাক্তার মেহতার বাড়ির বৈঠকখানায়। মেশিন বসানোর পরে যখন ডাক্তার মেহতা এই মেশিনের একটা ম্যানুয়াল চাইলেন তখন তাদের কর্মকতা নাকি বলেছিলেন যে এ মেশিনে মাত্র চারখানা কানেকশন। তার জন্যে আবার ম্যানুয়াল কি হবে ? ১৯৮৮ তে তিনি উড়ে যান আমেরিকা যুক্তরাস্ট্রে ডাক্তার উইলিয়াম এফ ম্যালোনির কাছে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান অর্জন করতে। তারপর থেকে আর পেছনে তাকাননি ডাক্তার মেহতা। ভারতও অর্জন করল এই নতুন মেশিনটার সুবিধে।] ... ...
প্রাচীনকাল থেকেই সম্মোহন বিদ্যা প্রচলিত রয়েছে মানব সমাজে। সেকালে এই বিদ্যাকে যাদুবিদ্যা, বশীকরণ বিদ্যা বা অলৌকিক ক্ষমতা বলে মানুষ বিশ্বাস করা হতো। অষ্টাদশ শতকে সম্মোহন বিদ্যার নামকরণ হয় ‘মেজমেরিজম’। অষ্ট্রিয়ার ভিয়েনা শহরের ড. ফ্রাঞ্জ ফ্রেডরিখ অ্যানটন মেসমার সম্মোহন বিদ্যার চর্চা শুরু করেন। ফলে এর ব্যাপক প্রচার শুরু হয় এবং পরবর্তীতে তার নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় ‘মেজমেরিজম’। ... ...
[ আমার রেজিস্ট্রেশন নাম্বার পড়ে গেল সে ফাইলে। আর ফাইলের ওপরে মোটা কালো স্কেচ পেন দিয়ে লেখা হ’ল ‘Allergic to ……” সালফার। এই মামুলি অথচ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইনফরমেশন এর আগে আর কোথাও এত গুরুত্ব দিতে দেখিই নি। আর এই এ্যালার্জির কারণেই দেখি কতো পেশেন্টের কতো রকমের সমস্যা হ’তে।] ... ...
[ আমার চোখে দেখা আর হৃদয়ে্র অনুভবে জারিত এই ছোট্ট ছোট্ট চিকিৎসা সংক্রান্ত ঘটনাগুলি এখনো মোছেনি আমার মাথার স্মৃতিকোষগুলোর থেকে। তার থেকে তুলে আনা এই মণি-কাঞ্চনগুলোয় যেমন পেয়েছি সাক্ষাৎ ভগবানদের, তেমনি কিছু কিছু সাংঘাতিক ঘটনা নেহাৎ-ই সহ্য করেছি উপায়ান্তরহীন যাপনে। ক্রোধে ফেটে পড়েছি মননে। রক্তচাপ বাড়িয়েছি বারংবার – মধ্যবিত্ত মনোভাবনায়। পেয়েছি আচম্বিত বাড়ানো হাত - অকাতর অকৃপন স্পর্শে। কৃতজ্ঞতাও হয়তো অব্যক্ত ছিল আমার পক্ষে সে সময়। তো এইসব ছিন্নবিচ্ছিন্ন ঘটনার কিছু রেশ গ্রন্থিত করছি প্রাণের আনন্দে। এখনো বেঁচে আছি, বেঁচে আছে আমার প্রজন্ম। তাই ভগবানের নামকীর্তন যেমন করেছি অক্লেশে, আবার সেই ‘আতঙ্ক’ চলচিত্রের মতো যেন কিছুই দেখিনি আমি হয়ে পাল্টেছি চরিত্র কিম্বা স্থান-নাম। মহাবীর-বুদ্ধ-নানক-রামকৃষ্ণের পুণ্যভুমিতে আজ হিংসা পৌনঃপুনিকতায় ছড়াচ্ছে বিদ্বেষের লাল আগুন। যে আগুন শুধুই ভস্ম-জন্ম আহ্বান করে। নিরুপায় আমি করজোড়ে মার্জনা চাইছি আমার এটুকু অপৌরুষেয়তার।] ... ...
[ আমার চোখে দেখা আর হৃদয়ে্র অনুভবে জারিত এই ছোট্ট ছোট্ট চিকিৎসা সংক্রান্ত ঘটনাগুলি এখনো মোছেনি আমার মাথার স্মৃতিকোষগুলোর থেকে। তার থেকে তুলে আনা এই মণি-কাঞ্চনগুলোয় যেমন পেয়েছি সাক্ষাৎ ভগবানদের, তেমনি কিছু কিছু সাংঘাতিক ঘটনা নেহাৎ-ই সহ্য করেছি উপায়ান্তরহীন যাপনে। ক্রোধে ফেটে পড়েছি মননে। রক্তচাপ বাড়িয়েছি বারংবার – মধ্যবিত্ত মনোভাবনায়। পেয়েছি আচম্বিত বাড়ানো হাত - অকাতর অকৃপন স্পর্শে। কৃতজ্ঞতাও হয়তো অব্যক্ত ছিল আমার পক্ষে সে সময়। তো এইসব ছিন্নবিচ্ছিন্ন ঘটনার কিছু রেশ গ্রন্থিত করছি প্রাণের আনন্দে। এখনো বেঁচে আছি, বেঁচে আছে আমার প্রজন্ম। তাই ভগবানের নামকীর্তন যেমন করেছি অক্লেশে, আবার সেই ‘আতঙ্ক’ চলচিত্রের মতো যেন কিছুই দেখিনি আমি হয়ে পাল্টেছি চরিত্র কিম্বা স্থান-নাম। মহাবীর-বুদ্ধ-নানক-রামকৃষ্ণের পুণ্যভুমিতে আজ হিংসা পৌনঃপুনিকতায় ছড়াচ্ছে বিদ্বেষের লাল আগুন। যে আগুন শুধুই ভস্ম-জন্ম আহ্বান করে। নিরুপায় আমি করজোড়ে মার্জনা চাইছি আমার এটুকু অপৌরুষেয়তার।] ... ...