গত ৫ তারিখে হোলি ফ্যামিলি হাসপাতালে মারা গেলেন স্ট্যান স্বামী; ৮৪ বছরের এক বুড়ো, যার পার্কিনসনগ্রস্ত হাতে জলের গেলাস ধরা মুশকিল, চামচ ধরে রাখতে পারেন না, লেখা বা টাইপ করা তো দূরের কথা। আদালত মেডিক্যাল রিপোর্ট থেকে জেনেছে যে উনি কানেও কম শুনছেন, চোখে দেখেছে যে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে অভিযুক্ত লোকটি একজন দুর্বল অশক্ত বৃদ্ধ। তবু তার জামিনের আবেদন বারবার খারিজ হয়। ... ...
একটা রক্তজমানো চিৎকার অন্ধকারকে খান খান করে দিল। আবার, আবার! তারপর সব চুপ। দু’সেকেন্ড। পকেট থেকে রিভলবার বের করে আমি দৌড়ুতে থাকি যুবরাজের আবাসের দিকে। চিৎকারটা ওদিক থেকেই আসছে, প্রথম আওয়াজটি স্পষ্টতঃ কোন নারী কন্ঠের। ... ...
দরজার গুমগুম আওয়াজ থামল। আমি কান খাড়া করে রয়েছি। ওপাশে একটু ফিসফিস কথাবার্তা। তারপর উঁচুগলায় — আমরা, সৌরভবাবু। দরজা খুলুন। ডাইনিং হলে গিয়ে একসঙ্গে চা খাব। আমি চটপট রিভলবার আমার এয়ারব্যাগে চালান করে দিয়ে দরজাটা খুলি। প্রায় ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়েন দুই বোন - শৈবলিনী ও কুন্দনন্দিনী। ... ...
সত্যি কথা, পার্কসার্কাসের ওই ১/সি সার্কাস মার্কেট প্লেসের তিনকামরার ছোট্ট ফ্ল্যাট, যার ভেতরে গাদাগাদি করে আমরা অন্ততঃ আঠেরো জন থাকি, তাতে চলতে ফিরতে কারও না কারও গায়ে ধাক্কা লাগার কথা। লাগত না, তার দুটো কারণ। এক, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরুষের সংখ্যা কমতে থাকত। সবাই এক এক করে স্কুল-কলেজে বা অফিস-কাচারিত, একেবারে ‘যাও সবে নিজ নিজ কাজে’। ... ...
হ্যাঃ, এই নাকি যুবরাজ। সঙ্গে গতকাল পরিচয় হওয়া রাজবাড়ির ড্রাইভার শান্তিরাম না থাকলে বুশশার্ট ও প্যান্ট পরা বছর চল্লিশের ভদ্রলোকটিকে যুবরাজ বলে ভাবতে কষ্ট হত। প্ল্যাটফর্মে বেশ ভীড়, তবে ফার্স্টক্লাস কোচের সামনে তেমন কিছু না। কালো কোট গায়ে কন্ডাকটরের সঙ্গে শান্তিরাম টিকিট দেখিয়ে কিছু কথা বলছিল। তারপর দেখি ঢোলা খাকি ইউনিফর্ম পরা ... ...
এই গাঁয়ে গয়াদীন বলে এক ভদ্রজনের নিবাস। ও যোগ-বিয়োগ, গুণ-ভাগের হিসেবে ভারি দক্ষ, কারণ ওর পেশা হোল সুদখোরি। ওর একটা দোকান আছে, তাতে কাপড় কেনাবেচা হয়, আবার টাকাপয়সার লেনদেনের কারোবারও খুব চলে। ঘরে আছে যুবতী মেয়ে, ওর নাম বেলা। আর আছে এক বিধবা বোন। এক বৌ ছিল, যে মরে হেজে গেছে। বেলা মেয়েটি, দেখতে সুন্দর, স্বাস্থ্য ভাল, রামায়ণ আর মায়া-মনোহর কহানিয়া (নবকল্লোল ধরণের পত্রিকা) জাতীয় ম্যাগাজিন পড়ার মত লেখাপড়া জানে। ... ...
ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুর শহরের পেনসনবাড়া এলাকায় সরকারি কোয়ার্টারের সারি। এফ ব্লকে শুধু কলেজের প্রফেসারদের দুই বেডরুমের আবাসন, সঙ্গে একটু বাগানের জায়গা। একটির গেটে লেখা - এফ/৪, শৈবলিনী চট্টোপাধ্যায়, সংস্কৃত বিভাগ। ভেতর থেকে টিভির আওয়াজ আসছে। ... ...
বাবা আমার নাম রেখেছিল কুন্দনন্দিনী, বিষবৃক্ষের নায়িকা। কিন্তু আমার বয়ে গেছে অমন ন্যাকাবোকা মেয়ে হতে। আমি একেবারে রোহিণী, হ্যাঁ, ‘কৃষ্ণকান্তের উইলে’র রোহিণী। আমি যা চাই তা আদায় করে নিতে পিছপা হই না।আমি দিদির মত অত ভাবের ঘোরে থাকি না। বেশি সংস্কৃত সাহিত্য আর বৈষ্ণব পদাবলী পড়লে অমন হয়। দিদির ওই ‘মথুরা নগরে প্রতি ঘরে ঘরে যাইব যোগিনী হইয়ে’ ভাব আমার পোষায় না। আসলে ওই যারা অমন ‘ধরি ধরি মনে করি ধরতে গেলে আর পেলাম না’ ভাবে থাকে তারা হয় নিজেকে ঠকায়, নয় হিপোক্রিট। ... ...
দলগঞ্জন সিং কোসলে বা ডি এস কোসলে রিটায়ার হওয়ার আগে বিলাসপুর জেলার ক্রাইম ব্র্যাঞ্চের বড়কর্তা ছিলেন। র্যাঙ্ক ছিল ডেপুটি সুপারিন্ডেন্ট অফ পুলিস, সংক্ষেপে ডিএসপি। উনি আইপিএস ন’ন; খেটেখুটে সারাজীবন পরিশ্রম করে রিটায়ার হবার তিনবছর আগে ডিএসপি র্যাংক পান। চাকরি আরম্ভ হয়েছিল অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টর হয়ে। কোসলে রিটায়ার করেছেন বছর পাঁচ, কিন্তু এখনও ‘ডিএসপি স্যার’ সম্বোধন শুনতে ভালবাসেন। ... ...
একমাস আগের কথা।তারিখটা স্পষ্ট মনে আছে - মার্চের ২৬। সেদিন ঠিক বেলা একটার সময় আমার কাছে একটা ফোন এসেছিল।- ওয়াচ অ্যান্ড সিকিউরিটিজ? বিলাসপুর, লিংক রোড?-জী হ্যাঁ, বোল রহা হুঁ। - মিঃ কোসলে? ডায়রেক্টর?- না, আমি ওঁর অ্যাসিসট্যান্ট বিশ্বাস বলছি।উনি একটা কাজে একটু বাইরে গেহেন। কাল রাত্তিরে ফিরবেন।-- সৌরভ? সৌরভ বিশ্বাস? বাবুমোশায়? জাস্ট দ্য ম্যান আই ওয়ান্ট!--জী হ্যাঁ, আপ কৌন?-- কাজের কথাটা আগে শুনে নিন। আগামীকাল আপনাকে ইন্দোর এক্সপ্রেসে বুড়ার যেতে হবে। বুড়ার হোল জবলপুর লাইনে শাহডোলের আগের স্টেশন। পরশুদিন বিকেলে একই ট্রেনে করে ফেরতের ব্যবস্থা। টিকিট, অন্য খরচা এবং কিছু অ্যাডভান্স একটু পরে আজ রাত্তির আটটার মধ্যে আপনাদের ... ...