এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হেদুয়ার ধারে - ১২৭

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ৩০ এপ্রিল ২০২৪ | ৯২ বার পঠিত
  • সেদিন রাত্রে সঞ্চারী অমলের ঘরে ঢুকে দেখে অমল একটা ডায়েরিতে কি সব লিখছে।
    তাকে দেখে ডায়েরিটা বন্ধ করে দিল না। পাতা খোলাই রইল।
    সঞ্চারী বলল, ' কিরে ... গিয়েছিলি রাত্রির সঙ্গে ? '
    অমল বলল, ' হ্যাঁ হ্যাঁ ... গিয়েছিলাম। নিখিল ব্যানার্জী বলে এক ভদ্রলোকের কাছে নিয়ে গিয়েছিল ... সিটি কলেজে ম্যাথসের প্রফেসর ... '
    ----- ' কি জন্য নিয়ে গিয়েছিল ওখানে ? '
    ----- ' ওই... ওদের একটা অর্গানাইজেশন আছে। সেই ব্যাপারেই... মানে ... মিশনটা ঠিক ক্লিয়ার না। তবে ভদ্রলোকের নলেজ এবং কথাবার্তা শুনে আই অ্যাম হাইলি ইমপ্রেসড ...'
    ----- ' কিরকম ? '
    ----- ' নিখিল স্যার তার নিজস্ব অ্যাঙ্গল অফ ভিউ থেকে দেশবিদেশের সোশিওইকনমিক এবং পলিটিক্যাল পারস্পেটিভে নানারকম চিন্তাশীল কথা বলতে লাগলেন, যার কোনটাই ফেলে দেওয়া যায় না। আবার চট করে হজম করাও আমাদের পক্ষে মুশ্কিল কারণ আমাদের মতো গড়পড়তা লোকের চিন্তাধারার থেকে অনেক দূরে ওনার ভাবনার জগৎ। একটা রেবেলিয়াস আসপেক্ট আছে ওনার বক্তব্যে। ওসব নিয়ে আমরা কোনদিন ভাবিইনি ... '
    ----- ' কিন্তু তার অ্যাকচুয়াল অবজেক্টিভটা কি ? '
    ----- ' অ্যাকচুয়াল অবজেক্টিভ বলতে .... তিনি তার সংগঠন ক্রমশ বিস্তারিত করে সমাজে এবং দেশে একটা পরিবর্তনের সূচনা করতে চান .... আর সেটা, তার মতে অহিংস রাস্তায় সম্ভব নয়। আমি এইরকমই বুঝেছি। ভদ্রলোকের মিশনটা পরিষ্কার বুঝতে না পারলেও এটা স্বীকার করতেই হবে ওনার ডেলিভারি দুর্ধর্ষ। যে কেউ মেসমেরাইজড হবে। অ্যাট লিস্ট ফর দ্য টাইম বিয়িং আমাদের ব্যক্তিগত সুখ দুঃখগুলো খুব তুচ্ছ মনে হবে ... '
    ----- ' যেমন তোর হয়েছে .... '
    ----- ' তা বলতে পারিস। স্বীকার করতে অসুবিধে নেই। অনেক কিছুই তখন তুচ্ছ মনে হচ্ছিল ... '
    ----- ' তাই নাকি ? কিরকম কিরকম ? '
    ---- ' অত না জানাই ভাল। কখনও কখনও ইগনোরেন্স ইজ ব্লিস ... এটা জানিস তো ? '
    ----- ' ও ব্বাবা .... এ তো অতি জটিল তত্ত্ব দেখছি ! কালটিভেট করতে হচ্ছে ... '

    নিতাইবাবুর খুব শখ হল বিভূতিবাবুর সঙ্গে একদিন থিয়েটার দেখতে যেতে। তিনি শুনেছেন যে দীনবন্ধু ওনার সঙ্গে গিয়ে মিনার্ভায় অঙ্গার দেখে এসেছে। সেদিন সন্ধেবেলায় রাস্তায় দেখা বিভূতিবাবুর সঙ্গে। দুচারটে এ কথা সে কথার পর নিতাইবাবু বললেন, ' দত্তবাবু, এখন আর থিয়েটার দেখতে যান না ? '
    ----- ' অ্যাঁ ... কি বললেন, থিয়েটার ? যেগুলো চলছে সেগুলো তো সবই দেখা হয়ে গেছে। নতুন নাটক লাগলে যাব। রঙমহলে শুনলাম আদর্শ হিন্দু হোটেল নামে একটা নাটক লাগবে। এলে যাব দেখতে ... '
    ----- ' আচ্ছা আচ্ছা ... তা যাবেন যখন বলবেন। দীনুও তো খুব আগ্রহী। ওকেও বলব ... ওদের ওদিকে তো এসব দেখার সুযোগ নেই। '
    ----- ' হ্যাঁ হ্যাঁ ... নিশ্চই নিশ্চই ... ওকে তো জানাবই। ছোকরা বেশ সমঝদার কিন্তু ... '
    ----- ' তা একটু আছে ... আমার গিন্নী খুব ব্যস্ত হয়েছে ওর জন্য একটা পাত্রী যোগাড় করার জন্য। মেয়েদের যা স্বভাব আর কি ... হেঃ হেঃ .... '
    ----- ' তা বেশতো ... ছেলে দেখতে শুনতে ভাল, রোজগারপাতি ভাল। একটা উপযুক্ত পাত্রী দেখে দিন না ঝুলিয়ে ... আমরা কব্জি ডুবিয়ে খাই ... '
    ---- ' সে তো বটেই ... আপনাদের বাদ দিয়ে কি আর ... যাক, সে দেখা যাবে'খন ... এখন যাচ্ছেন কোথায় ? '
    ----- ' কোথায় আর যাব ... ওই গঙ্গার দোকানে গিয়ে একটু বসব। ওখানে বসে লোকজন দেখতে দেখতে বেশ সময় কেটে যায়। ', বিভূতিবাবু বললেন।
    ----- ' তা বটে ... '
    বিভূতিবাবু তার পরেও দাঁড়িয়ে রইলেন। কিছু ভাবছিলেন বোধহয়।
    হঠাৎ বললেন, ' সাগরের কোন খবর পাচ্ছি না বেশ কিছুদিন ধরে ... কোন বিপদ আপদ হল না তো ...'
    প্রচন্ড বিরক্তির স্বরে নিতাইবাবু বললেন, ' সাগর ... মানে সাগর মন্ডল ? ওসব গুন্ডা বদমাশের খবর আমি রাখি না ... '
    বিভূতিবাবু এ কথা শুনে চুপ করে রইলেন। একটু পরে ধীর গলায় বললেন, ' কি বলছেন নিতাইবাবু ! ... এখানে দাঁড়িয়ে একটা কথা বলে যাচ্ছি, আপনি একদিন নিজের ভুল নিজেই বুঝতে পারবেন। শুনলাম সাগর একজন জীবনসঙ্গী পেয়েছে। আমি অবশ্য নিজের চোখে দেখিনি। যারা দেখেছে, তারা বলল, মেয়েটি নাকি উচ্চশিক্ষিত, ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। জেনে আমি খুব আনন্দ পেয়েছি। এটা ওর প্রাপ্য ছিল। খবরটা আমি পঞ্চমীর মাকেও দিয়েছি। শুনে পঞ্চমীর মা বলল, দাদাবাবু ... ওপরওয়ালা একদিন সব হিসেব মিলিয়ে দেন ...
    এ কথাটা আমি অবশ্য মানিনা। ওপরওয়ালা বলে যদি কেউ থেকে থাকেন, কোন হিসেব মেলানোর ক্ষমতা তার নেই। মানুষ নামক এরকম একটা
    সাঙ্ঘাতিক প্রাণী সৃষ্টি করে তিনি নিশ্চয়ই অহরহ নিজের হাত নিজেই কামড়ান ... '
    নিতাইবাবু এসব কথার মাথামুন্ডু কিছুই বুঝলেন না। জীবনসঙ্গী কথাটা তার কানে লেগেছে। তিনি বললেন, ' আরে ... দূর, জীবনসঙ্গী না ছাই ... একসঙ্গে ঘোরাঘুরি করছে কিছুদিন, কবে সরে পড়বে তার ঠিক আছে ... ওই তো আমাদের দূর সম্পক্কের আত্মীয় হয়। গোয়াবাগানে থাকে ... '
    ---- ' কে থাকে ... মেয়েটা ? '
    ----- ' হ্যাঁ, আবার কে ? '
    ----- ' তাই নাকি ? জানতাম না তো ... আমি ভাবছিলাম ... ', বলে বিভূতিবাবু আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলেন।
    নিতাইবাবু, ' ঠিক আছে, এখন যাই ... পুজো বাকি আছে ... পরে কথা হবে দত্তদা ... '
    নিতাইবাবু বাড়ির দিকে চলে গেলেন।

    রাত্রির মনটা খচখচ করতে লাগল। সে ভাবল, অমল ওরকমভাবে চলে গেল কেন ? অমল তো বেশ শান্ত প্রকৃতির ছেলে। সে কি নিজের অজান্তে কোন দুর্ব্যবহার করে ফেলেছে। অনেক চিন্তা করেও সে তেমন কিছু মনে করতে পারল না। তারপর ভাবল, এ ধরণের সংগঠনে তাকে টেনে আনার জন্য সে কি বিরক্ত বোধ করেছে। নিখিল স্যারের বক্তব্য বা মিশন সবাইয়ের যে পছন্দ হবে তার তো কোন মানে নেই। সব জিনিস তো সবার জন্য নয়। নিখিল স্যারের ওয়েভ লেংথ হয়ত তার মেয়েটার ওয়েভ লেংথের সঙ্গে মেলেনি। এতে বিব্রত বোধ করা স্বাভাবিক। কিন্তু তাতে সে এতটা অস্থিরতা দেখাবে কেন ? সম্পর্ক ছিন্ন করার তো আরও অনেক সুশীল উপায় আছে।
    সে রাস্তায় বেরিয়ে সাগরকে জিজ্ঞাসা করল, ' আচ্ছা ... অমল ওভাবে চলে গেল কেন ? তোমার কি মনে হয় ? '
    সাগর বলল, ' আমিও সেই কথাই ভাবছি। স্যার কি মনে করল বল তো ... তোমার বন্ধু সঞ্চারীকে একবার জিজ্ঞাসা কোর তো ... ব্যাপারটা কি হল ... '
    তারপর বলল, ' কাল আবার অভয় পালের মেয়ের কেসটার ব্যাপারে অলোকেন্দু মিত্রের সঙ্গে দেখা করতে হবে। এফ আই আর টাও লজ করে নিতে হবে বটতলা থানায় .... '
    রাত্রি বলল, ' হুমম্ ... ঠিক ঠিক ... '

    পরদিন দুপুরে ইউনিভার্সিটির ক্যান্টিনে রাত্রি কোন প্রসঙ্গ তোলার আগেই সঞ্চারী বলল, ' আরে, তুই তো ভালরকম মগজ ধোলাইয়ের ব্যবস্থা করেছিস দাদাভাইয়ের। তোদের নিখিল স্যারের কথা শুনে সেদিন তো ও একেবারে ফিদা হয়ে গেছে। দেখিস বাবা, বেচারি ভোলাভালা শিল্পী গোছের মানুষ। কলকব্জা যেন পুরোপুরি বিগড়ে দিস না ... হাঃ হাঃ হাঃ ... '
    রাত্রি হাঁ করে সঞ্চারীর মুখের দিকে তাকিয়ে নানা গোলকধাঁধায় পাক খেতে থাকল।

    ( চলবে )

    ********************************************
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন