ঐ লাইব্রেরিয়ান নিচু ক্লাসের ছেলেদেরকে মারাত্মক মারতেন। কিন্তু ক্লাস সেভেনের চাইতে উঁচু ক্লাসের ছেলেদের গায়ে হাত দেওয়া তো দুরের কথা, তাদেরকে দেখলে উল্টোদিকে হাঁটতেন ভয়ের চোটে। এমন দৌরাত্ম করেছি ওনার সঙ্গে একটু সিনিয়র হয়ে যাওয়ার পর যে বলার নয়। আমাদর স্কুলে ট্রাডিশন ছিল পূজোর ভ্য়াকেশেনের পর স্কুল খুললে টিচারদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করার। তো আমরা প্রনাম করছিলাম একে একে। এরপর প্রায় ১৫-২০ জন একসাথে প্রণাম করতে যাই ,আর আমার দেওয়া দুর্বুদ্ধিতে টেবলের তলা দিয়ে ওনার একপাট জুতো খুলে নেয় আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে বদ ছেলে হেমন্ত। আর তারপর বাস্কেট গ্রাউন্ডে ওনার জুতো নিয়ে গোটা ক্লাসের ফুটবল খেলা আর একপায়ে জুতো পরে স্যরের করুণ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকা। ফিজিক্স আর কেমিস্ট্রির দুই টীচার এরপর আমাদেরকে তাড়া করেন মুখে প্রশ্রয়ের হেসে। ফিজিক্সের স্যর কেমিস্ট্রির স্যরকে বলছেন শুনলাম "বাঁদরগুলোর মাথায় আসেও"।
মামা মনে হয় শল্য। শাল্ব না।
:|:, মহাভারতে এত শাল্ব, এত শাল্ব, সব ঘুলিয়ে ঘেঁটে যায়। পান্ডবদের কীরকম এক মামাও তো শুনি শাল্ব! তারপরে দ্বারকা আক্রমণ করতে এসেছিল, সেও এক শাল্ব। আবার অনেক আগের সেই অম্বার প্রেমিক ছেলেটি, সেও শাল্ব। সমস্ত ঘুলিয়ে দেওয়া কেস।
স্যান্ডি, খুব সহজ, তেল মেরে মেরে, স্ট্রিং টেনে টেনে । এরাই তো হয়।
হ্যাঁ হুতো, দুর্বলের উপরে পাওয়ার এক্সারসাইজ করত আরকি । আমাদের প্রাইমারি স্কুলে সবচেয়ে লো কোয়ালিটি টিচাররা ছিল সব বেশি মারকুটে। মাধ্যমিক আমলে আর অবশ্য মারকুটে টিচার দেখিনি, অপেক্ষাকৃত "সুসভ্য" পরিমন্ডলে গিয়ে পড়েছিলাম হয়তো বা। অথবা এও হতে পারে যেসব সেকশানে ওরকম হত, সেসব দেখা হয় নি আমাদের। হয়তো আমরা ছিলাম জিয়ানো কই, বৃহত্তর স্বার্থে সংরক্ষিত। বহুরকম সম্ভাবনা।
কিন্তু শেষ পজ্জন্ত শুভঙ্কর ছেলের নাম কী রাখলো?
শাল্ব সংক্রান্ত কোশ্নোটা খুবই ভালো।
তখন রীতিমত ছোট আমরা। বন্ধু চেনার ঐসব প্য়ারামিটার বলে যে কিছু আছে তা জানতামই না তখন। সত্য়ি বলতে কি শুভঙ্কর মারাত্মক রকমের ন্য়াকা ছিল, আর এজন্য় আমার বন্ধু কোনদিনই ছিল না। কিন্তু তাই বলে পিছনে লাগার মওকা তো ছাড়া চলে না। পরে সে স্কুল পরিবর্তন করায় মাঝে অনেক বছর কোনো যোগাযোগ ছিল না। ইউনিতে গিয়ে আবার মোলাকাত, কিন্তু বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে নি। আরো দেখলাম সেই আগের মতই ন্যাকাটিই আছে। ঐ ন্যাকামি নিয়ে আই পি এস অফিসার কি করে হল ভগাই জানে।
শঠে শাঠ্যং। যাকে বলে একেবারে কাঠে কাঠে পড়া।
গুপী খুব ভালো ছেলে( অবশ্য সেইজন্যেই ভূতের রাজা বর দিয়েছিলেন, 'সব' জানতেন তিনি ওদের ), আমার মতন ত্যাদোড় হলে পরে হাল্লার ওই মন্ত্রীটাকে কাজে লাগাতো ঐ আমলকীর লোকগুলোকে মোক্ষম টিট করার ব্যাপারে। আর ব্যাটাদের ট্যাঁ ফোঁ কত্তে হত না, একেবারে সোজা হয়ে যেত সব।
দুষ্টুমি, পড়া না শেখা, সব মিলিয়ে, কিছু অহৈতুকীও মনে হয় ছিল। এখন বোধয় উঠে গেছে - সচেতনতা বেড়েছে অনেক। আর ওই, পুলিশ কেসও হবে।
বাকী জীবনটা ওই ব্যাটাকে আর ট্যাঁ ফোঁ কত্তে হবে না।
স্যান্ডি, যদি কিছু মনে না করেন, আপনার বন্ধু চেনার ব্যাপারে কিছুটা খামতি ছিল বলতেই হবে। ওরকম একটা নালিশকুটে নেকুনেকু আপদ আপনার বন্ধু হয় কী করে? ওকে দেখামাত্র উল্টোদিকে যাবার কথা তো!
তবু লাইব্রেরিয়ানের অপরাধ কিছু কমেনা। আজকের দিনে সন্তানের উপরে এরকম হলে ঐ লাইব্রেরিয়ানকে থানা হাজতে রাত কাটাতে হবে তেমন তেমন অভিভাবকের পাল্লায় পড়লে। পুলিশগুলোকে বলা থাকবে বাঁশের ব্যবহার কী করে করতে হয়, সে ওরা রাত জুড়ে করবে। সুদে আসলে ঋণশোধ।
কোলেস্টেরল ইত্যাদি হলেও জানার উপায় নেই, মাপার ব্যবস্থাই ছিল না। পয়েন্টটা সেইখানেই। এইসব অসুবিধাগুলো যা আধুনিক হাই ফ্যাট হাই প্রোটিন ডায়েট আর অত্যল্প শারীরিক পরিশ্রমের ফল, সেই ব্যাপারগুলো ছিল না বা কম ছিল।
আমি ক্লাস সিক্সে একবার লাইব্রেরিয়ানের কাছে সারা পিরিয়ড ধরে মার খেয়েছিলাম। আমাদের এক ক্লাসমেট ছিল যার নাম ছিল শুভঙ্কর। তো তার বাবার নামটা আমি কোন একটা পরীক্ষার ফর্ম ফিল আপ করার সময় জানতে পারায় মাথায় বদ বুদ্ধি খেলে যায়। প্রসঙ্গত ওর বাবার নাম ছিল দীপঙ্কর। লাইব্রেরি পিরিয়ডের আগে আমি শুভঙ্করকে জনান্তিকে ডেকে পরম সুহৃদের মত পরামর্শ দিলাম যে সে যখন ভবিষ্যতে বাবা হবে তখন যেন ছেলে হলে ছেলের নাম রাখে ভয়ঙ্কর। আর যায় কোথা? শুভঙ্কর ছিল সাঙ্ঘাতিক রকমের নালিশপ্রিয় ছেলে। পরের পিরিয়ড ছিল লাইব্রেরিয়ানের, আর ঐ পিরিয়ডে আমাদেরকে স্কুল লাইব্রেরি থেকে গল্পের বই ইস্য়ু করা হত। যথারীতি শুভঙ্কর লাইব্রেরিয়ানকে কমপ্লেইন করে আর আমি সারা পিরিয়ড ধরে মার খাই। লাইব্রেরিয়ান ইন্সটলমেন্টে মারতেন। এখন ভাবি কি পরিমান ডেঁপো ছিলাম! ক্লাস সিক্সে পড়া অবস্থায় বন্ধুকে ছেলের নামকরণের ব্যাপারে পরামর্শদান!
কিন্তু চন্দরগুপ্তের অম্বল বা কোষ্ঠকাঠিন্য হলেও সেটা লিখবে কেডা ?কার এতো সাহস ? তো জানা যাবে কোদ্দিয়ে ?
হয়তো কোনোদিন টাইম মেশিনে চেপে অতীতে গেলে দেখতে পাবেন এতো মান্যগন্য রাজা-গজার দল বিরস , হতাশ মুখে হাতে গাড়ু নিয়ে পুকুরপাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পেছনে গামছা হাতে ভৃত্যরা।
ডিডিদার অবর্তমানে একটি পিতৃতান্ত্রিক ডবল হাইকু লিখিলাম।
নীরা নীরে
ন্যাড়া নীড়ে
নোড়া নাড়ে।
নেড়ু নর
নড়েনা রে,
নারী নারে।
পোলাও, বিরিয়ানি খেলে ঘোড়ায় চড়ে মাইলের পর মাইল ছুটতে হয় আর যুদ্ধের প্র্যাক্টিস করতে হয়। নাহলেই কোলেস্টেরল হার্টে ধকমক ব্লাডপ্রেশার উর্ধলাফ পিঠে ব্যথা মাজা ব্যথা অম্বল মেজাজ খিঁচড়ে মর্মপীড়া। পুরানো ক্ষত্রিয়দের এসব কিছু হতে দেখেছেন? চন্দ্রগুপ্তের অম্বল হয়েছে কোনোদিন? ঃ-)
আটজ প্রতিদিন পোলাও, বিরিয়ানি এসব গুডব্যাড খেয়ে থাকেন যা বুঝলাম । কারন আতপ চাল তো এগুলো রান্না করতেই লাগে।
"এক ব্রহ্ম দ্বিধা ভেবে
মন আমার হয়েছে পাজি।
জেনেছি জেনেছি তারা
তুমি জানো ভোজের বাজি"
ঃ-)
বিষেশজ্ঞ, বিশেষজ্ঞ, বিষেষজ্ঞ, বিশেশজ্ঞ সবই একই হরির বিভিন্ন রূপ। সুতরাং ও নিয়ে ভাববেন না :-)
আচ্ছা হুতো, এই যে ক্লাস ফাইভের বাচ্চাকে ক্লাসের মধ্যে বেধড়ক পেটানো---এ কি দুরন্তপনার জন্য নাকি পড়া না পারার জন্য? নাকি অন্য কোনো গুরুতর কারণে?
এইসব উচ্চন্ড ছাত্রপেটানো মাস্টারদের কথা যত শুনি, ভাবি এখনকার দিনে সন্তানদের উপরে এরকম হলে কী করবে সেইসব অভিভাবকরা? পুলিশ কেস হয়ে যাবে মনে হয়।
আচ্ছা, মহাভারত পুরাণ ইত্যাদি বিষয়ে খুব বিস্তারে পড়া লোক কেউ থাকলে একটা প্রশ্নের জবাব দিতে পারেন? সেই যে ছুটে আসছিল অম্বার জন্য, সেই রাজা শাল্ব, সে তো অম্বাকে পরেও ফেরৎ নিল না ভীষ্মের ভয়ে। কিন্তু লোকটা কাকে বিয়ে করল? লোকটার কী হল?
:D :D
না, তা তো জানি না।
হুতো, মনে আছে সমবেত প্রণাম। ঃ-) অক্ষদা কেমন আছেন, জানেন?
কী টাইপো! বিশেষজ্ঞ। কিছু মনে করবেন না স্যান্ডি।
স্যান্ডি, কী যে বলেন! আপনি নিজেই তো বিষেশজ্ঞ, আপনার নাড়া বাঁধার তো প্রয়োজন নেই। আতোজের দিন যায় হরিন্নাম করে আর দু'টিখানিক আলোচাল ফুটিয়ে, তাই আতোজ নাড়া বাঁধার আশায় থাকে। "হরি দিন তো গেল সন্ধ্যে হল পার করো আমারে" কেস আরকি।
কেলোদার কমেন্ট অরিনেরও খুব পছন্দ হবে মনে হয়। উনিও এই প্রশান্ত দর্শনের কথা বলেন। ঃ-)
অপূর্ব, অপূর্ব কেলোদা। অতি অতি অতিশয় ধন্যবাদ। মানসিকতার ফারাকটাই আসল। ঐ যে কেইন্স না কোন সাহেবের গ্রীড ইজ গুড ফিলোসোফি, বর্তমানের ইকোনোমিকে ক্যানিবালিস্টিক করে দিয়ে দুনিয়াটার কী হাল করেছে!
ঐ মোটা মোটা জাহাজ তাহলে গোলাবারুদ মাংসের যোগান বিস্কুটের পাহাড় এইসবে ভারী হয়ে যেত। মানুষমারা নাও। ছি ছি। তারপরেও শোনা যায় নাবিকদের স্কার্ভি হত, ভিটামিন সি এর অভাবে।
সমবেত প্রণাম বলে একটা ব্যাপার ছিল, আতোজের মনে থাকবে, অক্ষদার কয়েনেজ ঃ)
আটোজ, আপনার দরকার নেই কারো কাছে নাড়া বাঁধার। আপনি অনুমতি দিলে বরং আমরা আপনার কাছে নাড়া বাঁধাব।