দলাই লামা বোধিসত্ব অবলোকিতেশ্বরের অবতার, তাঁকে কেউ সিলেক্ট করেন না, নির্দিষ্ট করতে পারেন মাত্র। তিনি হয়ত জন্মেছেন, হয়ত জন্মাননি। ত্রয়োদশ দলাই লামা যখন মারা যান, তখন ১৪শ দলাই লামা কে হবেন ঠিক ছিল না, ১৩ তম দলাই লামা হঠাৎ করে মারা যান। তখন সিনিয়র সাধুদের একটি কাউন্সিল বসে। এই সময় একদিন দেখা যায় মৃত দলাই লামার মাথা পুব দিকে সামান্য হেলে, আর তাঁর সমাধির কাছে একটি নির্দিষ্ট দিকে (আমার মনে নেই কোনদিকে, মন থেকে লিখছি পরে দেখে বলব)। তখন লামাদের সার্চ পার্টি সেই দিকে যাত্রাকরে আমদো নামে একটি জায়গায় বর্তমান দলাই লামা কে নানারকম লক্ষণ দেখে নির্দিষ্ট করেন। সে শিশুর তখন খুবই অল্প বয়েস।
জাপান কখনো পরাধীন ছিল না। বিদেশীদের সেদেশে নামারও নিষেধাজ্ঞা ছিল । ১৮৫৩ সালে কমোডর পেরি সে নিষেধ না মেনে নেমে ছিলেন। জাপানের সম্রাটদের কিছুই করার ছিল না, দেশ ছিল একে মধ্যযুগীয় স্তরের পশ্চাদপদ তায় শোগুন দের ওয়ারলর্ডদের মধ্যে বিভক্ত। ১৮৬৮ সম্রাট মেইজি, শোগুনদের দমন করে সম্রাটের ক্ষমতা পুনপ্রতিষ্ঠা করলেন আর দেশকে উন্নত করতে পুরো শিক্ষা, বিচার, প্রশাসন, সামরিক কর্মকান্ড ঢেলে সাজালেন। ২০ শতকের শুরুতে জাপান এশিয়ার উদীয়মান শক্তিতে পরিণত হলো। ১৯০৫ সালে ব্যাটল অফ ৎসুশিমা স্ট্টেইটের যুদ্ধের রুশ নৌবহরকে সম্পূর্ণ বিদ্ধস্ত করে (ট্রাফালগারের পরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নৌযুদ্ধ) জাপান প্রমাণ করল ইউরোপিয়ানদের তাদের 'খেলা'য় হারানো যায়, তাদের প্রযুক্তি দিয়েই।
এখন মেইজি ও জাপান একটা আউটলায়ার বলতে পারেন। এরকম এক্সপেরিমেন্ট সফলভাবে কোনো প্রাচ্য দেশ ১৯শতকে থেকে বিশ শতকে মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত করতে পারেনি। ১৮৩০ এ মিশরের খেদিভরা, ১৮৮০ তে তরুন তুর্কিরা, সাফাভিদ-পাহলাভি শাহরা, করার চেষ্টা করেছিলেন। বা ১৯১২তে চিনে ড. সান ইয়াতসেন মাঞ্চু ডাইনাস্টি উল্টে চিনে প্রথম জাতীয়তাবাদী বিপ্লব আনলেন। কিন্তু কোনোটাই জাপানের মতো সফল নয়, জাতীয় একীভবন, প্রায় একশোভাগ সাক্ষর জনগোষ্ঠি সৃষ্টি, জাতীয় ভারী শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণতা আনা। সশস্ত্রবাহিনীর শক্তি এতটা বাড়ানো কোনো বিদেশী পাশ্চাত্য শক্তিকে রুখে দিতে পারে (১৯৪৫ এ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সম্পুর্ন পরাস্ত হওয়া বাদ দিলে) এসব কোনোটাই আর কোনো আফ্রিকি-এশিয় দেশ করে দেখাতে পারে নি। মাও এর চিন বিশ্ব শক্তি হিসেবে হাঁটি হাঁটি পা ফেলতে শূরু করেছে ১৯৫০ এর দশকে ১৯৪৯ সালে গৃহযুদ্ধে জয়ী হয়ে কমিউনিস্ট শাসন কায়েম করার পরে।
এলেবেলে যদি এভাবে বলে থাকেন যে ঔপনিবেশিকরা আমাদের ছিঁটেফোটা অনিচ্ছাস্বত্বে দিয়ে গেছে এবং তাতে শিল্পবিপ্লব বা সার্বজনীন শিক্ষাবিস্তার কিংবা বিজ্ঞানের উচ্চতর চর্চা কোনোটাই ঠিক মতো হয় নি। কয়েক ব্যতিক্রমী মনিষী ওই ব্যবস্থা অতিক্রম করে নিজদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন, পিএইচডি, ডি.লিট, নোবলে এনেছেন তবে তিনি খুব ভুল বলেন নি। তবে যদি বলে থাকেন, ইংরেজ একেবারেই আধুনিক শিক্ষা বা বিজ্ঞানের কিছু আনে নি বা আনতে চায়ও নি (একটা বড় অংশ আনতে চায় নি সত্য) তবে সেটা একেবারেই ঠিক নয়।
আর যারা বলছেন ইংরেজ শাসন না আসলে বা ইউরোপীয় শিক্ষা-বিজ্ঞান-ধ্যানধারণার কিছুই আসত না। সতীদাহ, টোল, বিচার ব্যবস্থা, রাজনীতি সবই একই রকম থাকত, তারাও একেবারে ঠিক বলছেন না। অন্তত ইতিহাস বলছে কিছু এনোমালি ঘটেছে, কলোনি - প্রটেক্টোরেট হতে হয় নি এমন দেশ, খুবই মনোযোগ ও আগ্রহের সাথে ইউরোপীয় প্রযুক্তি ও এনলাইটেনমেন্টের ধারণা চর্চা করেছে গত দুশো বছর ধরে, এবং অনেক ব্যাপারে তারা সফল্ও হয়েছে। মানুষ ও মানুষের সমাজ বিবর্তিত হয়। বাইরের আই্ডিয়া শিকড় গাড়ে, বাইরের প্রযুক্তি দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে ওঠে (বাইসাইকেল, টিউবওয়েল এর কথা ভাবুন) তারজন্য পরাধীন হতে হয় না ।
বাহাদুর শাহ জাফর বা তাঁর অগ্রবর্তীরা যদি কেউ মেইজি সুলভ সংস্কারবাদী পথে হাঁটতেন (ঐতিহাসিক সম্ভাব্যতার নিরীখে প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার, জাপান মূলত তিনটি দ্বীপ, একটি দ্বীপ প্রধান, ১৩০ হাজার ব. মাইল আয়তন, প্রায় একই ভাষা, একই রাজভক্তি, একই সংস্কৃতির অংশীদার। অবিভক্ত ভারত সাড়ে ১৭ লক্ষ ব.মাইল, ভাষা ধর্মগত, গাত্রবর্ণের পার্থক্য ছোঁয়াছুয়ি ও পারস্পরিক ধর্মগত বিদ্বেষ আকাশ-স্পর্শী) তাহলে অন্যরকম হলেও হতে পারত।
দীর্ঘশ্বাস, আমাদের কোনো মেইজি আসেন নি। তারপরেও ভাগ্যিস ইংরেজ এসেছিল, তাই তাদের দেবভোগ্য ধ্যানধারণাগুলো জানতে পেরেছি। এই বণ্কিমসুলভ বন্দনা থেকে বের হওয়া দরকার।
বুদ্ধথিওরির আর কি ডেফিসিয়েনসি, বুদ্ধের সবটাই তো সেই দ্বাদশ নিরদানচক্রে জরামরণ আর কম্মের আর জন্য়ানতরের খেলা। লামা এ জন্মে টাকা খাচ্ছে, পরের জন্মে এটিএম হয়ে ফিরে আসবে, লোকে লামার কাছ থেকে টাকা তুলে নিয়ে যাবে।
এ খেলা চলছে নিরন্তর।
@এতোজ ও টিম,
আরেকটা দিক আছে। বাবা-মা ছেলের আদর্শকে সঠিক না ও মনে করতে পারেন। ১৯৪৮ সালে কাশ্মীরের যুদ্ধ করা বাবা ৬২তে চীনের কাছে পরাজয় মেনে নিতে পারেননি । 'চীনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান' শ্লোগান ওঁর মতে মূর্খামি ও অন্তঃসারশূন্য। পরবর্তী সময়ে এটা প্রমাণিত যে উনি ঠিক ছিলেন , আমরা ভুল।
অনেক আগে গুরুর বুলবুলভাজায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত "বাঙালবাড়ির কিস্যা"য় (পরে গাঙচিল থেকে বই হয়েছে) এ নিয়ে একটা পরিচ্ছেদ লিখেছি।
"এই যে লামারা টাকা খাচ্ছে - এটা কি বুদ্ধথিওরির ফান্ডামেন্টাল কোন ডেফিসিয়েন্সির জন্য - এমত বলা চলে?"
--- দুটো স্তরে ভাবা যাক ।
১ থিওরি মানেই ( আমার স্বল্পবুদ্ধিতে) রিয়েলিটিকে একটা স্ট্যাটিক কাঠামোর মধ্যে বেঁধে ফেলার চেষ্টা। কিন্তু জীবন ও বাস্তবতা ডায়নামিক, ক্ষণে ক্ষণে বদলাচ্ছে, বয়ে যাচ্ছে নদীর মত ( এটা বৌদ্ধ দর্শনের ক্ষণিকবাদ থেকে চুরি করলাম)।
ফলে সমস্ত থিওরি-- ঋগবেদ, আরিস্ততল, বুদ্ধ,মনু, মার্ক্স , লেনিন মায় মাও, কার্ল পপার, অমর্ত্য সেন, জন রলস, মার্থা নুসবাউম, হারারি-- সবই অ্যাপ্রক্সিমেশন, আংশিক। অর্থাৎ জন্মলগ্নেই কিছু না কিছু ফান্ডামেন্টাল ডেফিশিয়েন্সি থাকবে। বৌদ্ধসংঘের কড়া আচরণবিধির অচলায়তন এবং বাস্তবজীবনে সমাজে যা চাহিদা তা মেটানোর প্রচেষ্টার অন্তর্বিরোধ এই সব সমস্যা প্রতিনিয়ত তৈরি করবে। রামকৃষ্ণ মিশনের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। কমিউনিস্ট পার্টিও ইলেকশন লড়ার তাগিদে শিল্পপতিদের ডোনেশঙ্কে অগ্রাহ্য করতে পারে না ।
২ অন্য স্তরেঃ
যা কিছু চকচক করে তাই সোনা--- ইত্যাদি।
ফলে বাবা রাম রহীম , রামদেব বা আশারাম বাপুকে দিয়ে হিন্দুধর্মের ফান্ডামেন্টাল ডেফিশিয়েন্সি মাপতে গেলে খচ্চা আছে। তেমনই নর্থ কোরিয়ার উন্মাদকে দিয়ে কমিউনিস্ট আদর্শকে ।
দলাই লামার নির্বাচন হয় না, পরবর্তী দলাই লামা "নির্দিষ্ট" হন । এ কাজ বর্তমান দলাই লামা তাঁর মৃত্যুর আগে স্থির করেন কে তাঁর পরে আসবেন। চীনের টাকা ঢালা বেকার (যদি আপনার খবর ঠিক হয়)
@এতোজ ও অমিত,
আদৌ জয়তিলকের প্রশ্ন নয় ।
তখন মৌলানা আজাদে ইকনমিক্স পড়ি, বয়েস ১৮। তাই ক্যালানোর প্রশ্ন নেই কিন্তু বাবা মার রাগ ও আতংক ছিল।
বাবা স্বপ্ন দেখতেন ছেলে বড় হয়ে বিদ্যাদিগগজ মহাধনুর্ধর হবে (হয়েছে একটি মহা বা* )। হাহাকার করেছিলেন-- এরা আমারে বুড়া বয়সে রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করতে বাইধ্য করব্ , দেইখ্যা নিও।
আর ভয় ছিল ছেলের জন্যে পুলিশের রিপোর্টে ভিলাই স্টিল প্ল্যান্টের চাকরি হারানোর, আবার নিজভূমে পরবাসী হওয়ার । এবং কোনদিন ছেলের চিতেয় ওঠার খবর পাবার।