এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • ভাটিয়ালি

  • এ হল কথা চালাচালির পাতা। খোলামেলা আড্ডা দিন। ঝপাঝপ লিখুন। অন্যের পোস্টের টপাটপ উত্তর দিন। এই পাতার কোনো বিষয়বস্তু নেই। যে যা খুশি লেখেন, লিখেই চলেন। ইয়ার্কি মারেন, গম্ভীর কথা বলেন, তর্ক করেন, ফাটিয়ে হাসেন, কেঁদে ভাসান, এমনকি রেগে পাতা ছেড়ে চলেও যান।
    যা খুশি লিখবেন। লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়। এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই। সাজানো বাগান নয়, ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি। এই হল আমাদের অনলাইন কমিউনিটি ঠেক। আপনিও জমে যান। বাংলা লেখা দেখবেন জলের মতো সোজা। আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি।
  • গুরুভার আমার গুরু গুরুতে নতুন? বন্ধুদের জানান
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • &/ | 151.141.85.8 | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০১:৫৫517769
  • নেতাজীর বিয়ের ব্যাপারে লোকে যে আপত্তি করে সেটাই আশ্চর্য। ভারতের আন্দোলনের প্রায় সব নেতৃস্থানীয় লোকই তো বিবাহিত। স্বয়ং বাপুজীর তো বাল্যবিবাহ (সেই আমলে তাঁদের অঞ্চলে তাই হত)! এদিকের চিত্তরঞ্জন তো বিবাহিত বটেই, স্ত্রী বাসন্তীদেবীও পুরোদমে আন্দোলনে। শরৎচন্দ্র টরৎচন্দ্র সবাই বিবাহিত।
    (অবশ্য নেতাজীকে বিবেকানন্দের মতন হতে হবে এরকম একটা দাবী জনসাধারণের থাকলে অন্য কথা। )
  • @ এম এম | 2409:40e7:c:8070:8859:e2ff:fe41:9c71 | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০১:৪৪517768
  • প্রিম মগনলালবাবু,
     
    আপনার মনে হয় স্মৃতিভ্রংশ হয়েছে।   এই কদিন আগেই তো এনিয়ে কথাবার্তা হল। আপনি সলাড্ডু মুবারকবার্তা জানিয়ে গেলেন।  দেখুন তো,  প্রকাশিতব্য বই থেকে দেবীপক্ষ,  অংশবিশেষ দিলাম। মনে পড়ে কিনা?  তাও না মনে পড়লে ডা:হাজরা ( আসল) কে দেখান।  এই অসামান্য কেতাব e টি পড়ুন ও পড়ান। 

    ——————————-
    পর্ব ১১ঃ মেঘরাজ
    ——————————

    “বাধাই হো মিঃ মিত্তর, সাদী মুবারক ভাবীজী !” এক বাক্স লাড্ডু নিয়ে আমাদের টেবলে রাখল মগনলাল ।
    “কি ব্যাপার মগনলালজী, আপনি এখানে?”
    “আমি বলছি আমি কেন এখানে। লেকিন আপকো ভি বতানা পড়েগা। ফেয়ার এক্সচেঞ্জ হোনা চাহিয়ে!”
    “সেই কাঠমান্ডুর মত?” ফেলুদার ঠোঁটের কোনে হাসি।
    “আরে মিঃ মিত্তর, আপনি তো জানেন কি আমার কার্য়োবার পুরা ইন্ডিয়াতে আছে।”
    “সে তো বটেই। বিশেষ করে শিবধামে। এখানেও তো কাছেই জল্পেশ, কি বলেন?”

    “শিউজীকে শরণমে হাম হর জাগা রহতে হ্যায়। লেকিন এখানে উসব লিয়ে হামার কোনো কাম নাই। হামি তো আসিয়েছিলাম হামার গোডাউন দেখতে। জেল থেকে ছুটলাম, এখুন তো সারা বিজনেস উজনেসের হাল দেখতে হোবে, কি বোলেন?”
    “তাই তো দেখছি। ছাড়া পেয়ে গেলেন কেদারের কেসটা থেকে?”
    “আরে আপ তো ঝুটমুট এতো পরিশ্রম কোরেন…হামাকে আটকাতে পারবেন না। দেখিয়ে আপনি আমাকে জেল ভেজলেন এতে আমার কুছু দুখ নাই। মগর সাদী মে হামাকে বুলালেন না, ইয়ে তো মুঝে সাচ মে বুরা লাগা! পর যো ভি হো, হামি কিন্তু আপনার ঔর ভাবীজীকে বাস্তে লাড্ডু আনলাম!”

    একটা চেয়ার টেনে এবার বসলেন মেঘরাজজী।

    “সুক্রিয়া মগনলালজী। কিন্তু আপনি কি শুধু লাড্ডু দিতেই এখানে এলেন?” ফেলুদার মুখে একপেশে হাসি।
    “আরে হামি তো বোলে দিলাম কি কেন এলাম, লেকিন আপনি বলুন তো আপনি কি করছেন এখানে? হানিমুন তো নেহি হো সাকতা, ইয়ে দোনো হাড্ডিয়াঁ যো হ্যায় কাবাব মে…”

    জটায়ুর মুখ সাংঘাতিক গম্ভীর। কাবাব মে হাড্ডির উপমাটা মোটেই পছন্দ হয়নি!

    “আভি আভি তো দেখা বাজারমে পুলিশ স্টেশনের পাশে ঘুমছিলেন। কুছ নয়া কেস?”
    “না মগনলালজী। গেছিলাম তো এই দোকানে।” ফেলুদা হাতের প্যাকেটটা দেখিয়ে বলে।
    “আররে মিঃ মিত্তর! ইয়ে ক্যায়া হাল বানায়া আপকা হামারি ফেমিনিস্ট ভাবীজী নে! আপনার এত এক্সট্রার্ডিনারি বুদ্ধি এখুন শাড়ি পসন্দ করতে বেওহার হচ্ছে! আমি তো আপনার বড়া ফ্যান আছি…খারাব লাগছে হামার।”
    “আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন মেঘরাজজী। কেউ বজ্জাতি করলেই আমার বুদ্ধির আবার সঠিক প্রয়োগ হবে। আপনি তেমন কিছু করছেন না তো আবার?”

    “আরে, আপনি বিসয়োস নাই করবেন তো পুছেন কেন হামাকে? বোলা না, বিজনেস হ্যায় মেরা ইধার, গোডাউন ভী…ফুললি লাইসেন্সড! তো সচ মে ইখানে কুনো কাম লিয়ে আসেন নাই?”

    “আমরা এসেছিলাম এমনি বেড়াতে। পুজোর ছুটি তপেশের। লালমোহনবাবুর নতুন বই বেরিয়ে গেছে। আমরা তিনজন প্রতিবারই এরকম বেরোই। এবার শুধু চারজন এই যা!”
    “হাঁ, হাঁ…সে তো আমি জানি। ছুট্টি মানানে নিকলতে হ্যাঁয় ঔর ইনভেস্টিগেশন শুরু করিয়ে দেন…কাশী মে ভি তো তাই হোল, কি বোলেন?”

    “সে তো অনেক সময় ঘটে মগনলালজী, কি করব! তা এখানে আপনার গোডাউনটা কোথায়? শিকারপুরে নয়তো?”
    “জী নেহি। আমার বেওসা আছে তিস্তা কি কিনারে, আদি ভামরী মন্দিরের একদম বগল মে। শিকারপুরের বেপারে পুছলেন কেন, মিঃ মিত্তর?”

    “না, ওখানে  তো ঐ বিখ্যাত শঙ্করীপ্রসাদের আশ্রম।যাননি কখনো?”
    “হাঁ আমি শুনেছি জরুর, কিন্তু যাই নি কখুনো। উনকি উয়ো মেডিটেশন, রিহ্যাব মে মেরা কোঈ ইন্টারেস্ট নেহি হ্যায়।”
    “তবে কি অরফানেজে ইন্টারেস্ট? কলকাতায় গেছিলেন তো ওঁদের সভায়, বিবেকানন্দ পার্কে?”

    “আরে অরফানেজে আমার কেনো ইন্টারেস্ট হোবে বোলেন তো? সুরজকে তো আপনি দেখিয়েছেন। উসকে ইলাবা ভি মেরা তিন ঔর বাচ্চে হ্যায়। আ্যডপশন তো আমার কুনো দরকার নাই। আমাকে যেতে হল কিঁউকি আমার বিবি দেখা করবে বলল মাতাজীকে সাথ। তো যেতে হল হামাকে। আমার বিবি তো ভাবীজীর মতন ওরকম ফেমিনিস্ট নয়…ঘরেলু কিসিম কি হ্যায়..ফিরভি, কভি কবহার তো একটু কথা শুনতে ভি হয়!”

    “তাহলে আপনি মাতাজীকে চেনেন? দেখা করেছেন?”
    “দেখিয়ে মিঃ মিত্তর, হামি তো কুছ পাঁচ মিনট কে লিয়ে দেখা করলাম।লেকিন ইতনা জানি কি এখানে ও অনেক বড় নাম আছে। উয়ো বহোৎ পূণ্য কা কাম কর রহি হ্যায়। যব কোঈ বড়ে আদমী আ্যডপ্ট করতে হ্যায় তো লাইফ বন যাতি হ্যায় উন বাচ্চোকি! লোগ পুজতে হ্যায় উনকো!”

    “তাহলে আপনি ঐ অরফানেজ সম্পর্কে জানেন!  ঠিক কি ভাবে আ্যডপশন হয় ওখানে”? ফেলুদার ঠোঁটের কোনে হাসি।
    “মিঃ মিত্তর, আভি আভি তো সাদী হুয়ি আপকি! পহলে খুদ ট্রাই তো কিজিয়ে! আভি সে ইয়ে আ্যডপশন কি বাতেঁ কিঁউ!”

    মণিদির মুখের চেহারাটা দেখার মত হয়েছে।

    “ঠিক হ্যায়, আব তো মুঝে যানা হোগা।আশা করব কি ইসবার সাচমুচ কা হলিডে করবেন আপনি। ঔর ইয়ে লাড্ডু খাইয়েগা জরুর…আসলি ঘিউ কা হ্যায়। আঙ্কলজি, আপ ভি খানা!”

    “না না। আমি খাই না”, জটায়ু নিশ্চয়ই কাঠমান্ডুর সুগার কিউবের কথা ভাবছেন।

    “আরে মোহনবাবু, এ কেমন কথা হল? খাবেন না কেন? ঘাবড়াইয়ে মৎ, এতে ভিষ নাই! ড্রাগস ভি নাই…ড্রাগস বোহৎ কিমতি চীজ আছে। পুছিয়ে আপ মিঃ মিত্তর সে, পুছিয়ে।”

    জটায়ু তাও চুপ!

    “ফির ভি তসল্লি নেহি হুয়া না? লাইয়ে ম্যয় খা কে দিখাতা হুঁ।”
    বলে প্যাকেট খুলে একটা লাড্ডু অল্প ভেঙে খেলেন উনি।
    “শিউজী কা পরসাদ সমঝকে খা লেনা। ম্যয় আব চলতা হুঁ।

    “আপনার হাতের আংটিটা তো বেশ ইন্টারেস্টিং মগনলালজী? ইজিপ্ট গেছিলেন নাকি?”
    মগনলাল উঠতে গিয়ে মাঝপথে থেমে গেলেন। ফেলুদার দৃষ্টি ওঁর বাম হাতের মধ্যমায় সোনার আংটিটায়, যার ওপর মিনে করা আই অফ রা!
    চোখ বটে ফেলুদার। দুহাতে ঐ আটটা আংটির মধ্যে ওটা দেখেছে!

    “ইয়ে ইজিপ্সিয়ান হ্যায় ক্যায়া? পাতা নেহি। এটা তো আমাকে আমার ভাঞ্জা দিল…আশিষ। ও তো যায় অনেক জাগা…হামি জানি না।”
    বলে রওনা দিলেন মগনলাল মেঘরাজ।

    “ওর ফেমিনিস্টদের ওপর এত রাগ কেন বল তো?” মগনলাল বিদায় নিতেই মণিদি বলে উঠল।

    “কি ভেবেছিলে? মগনলাল উইল বী এ টর্চ বেয়ারার অফ জেন্ডার ইকোয়ালিটি? মিসোজাইনিটাই ওর চরিত্রের সঙ্গে ভাল যায় না কি? আর তুমি কবে থেকে নিজের মতামতের ব্যাপারে লোকের আ্যপ্রুভাল চাইতে শুরু করলে? 
             মগনলাল চিরকালের বুলি। লালমোহনবাবুকে সম্পূর্ণ অকারণে ও বহুবার নাকাল করেছে। দুর্বলের ওপর ক্ষমতার দম্ভ দেখানোকেই ও পৌরুষ ভাবে।”
                
    “সে নাহয় হল। কিন্তু তুমি কি করে জানলে ও কলকাতায় মাতাজীর সঙ্গে দেখা করেছিল?” মণিদি ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল।
    “ধুতি আর শেরওয়ানি পরা মোটা মারোয়ারি, পুকাই বলেছিল!” বিদ্যুৎ ঝলকের মত মনে পড়ল আমার।

    “সাবাশ তোপসে!চল এবার গোশালা মোড়ের কালীমন্দির।”
    “হঠাৎ এত ভক্তি জেগে উঠল যে তোমার?”
    “যা প্যাঁচে পড়েছি এখন দেবীমাই ভরসা।”

    এই মন্দিরটা জলপাইগুড়ি ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজের কাছেই। শহরের মধ্যেই, অথচ দিনে দুপুরে গা ছমছম করে। বিশাল একটা বটগাছের অজস্র ঝুড়ি নেমেছে। তার পাশেই মন্দির। তাতে কালীমূর্তি। বাইরে বিরাট হাড়িকাঠ, কালীপুজোয় বলি হয় এখনো। লোকজন বেশী নেই এখানে । মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে করলা নদী।

    বটগাছের তলায় ধুনি জ্বেলে বসেছেন এক লাল আলখাল্লা পরা বাবাজী এবং পাশে লাল শাড়ি পরা ভৈরবী মা। পাশের মাটিতে পোঁতা ত্রিশূল।

    “এই মন্দিরটা কিসের ফেলুবাবু?”
    “এটাও দেবী চৌধুরানীর মন্দির। কথিত আছে এখানে পুজো দিয়ে ডাকাতিতে বেরোতেন দেবী। দেবীর বজরা ঘুরত করলা নদীতে। করলা নদীর এমন মজা দশা তখন ছিল না।গর্ভগৃহের সঙ্গে নাকি সুড়ঙ্গপথে নেমে যাওয়া যেত করলা নদীতে।”
    “বলেন কি? ঐ কালীমূর্তির কাছেই তাহলে সেই সুড়ঙ্গমুখ?”
    “না লালমোহনবাবু। সেই আদিমন্দিরের গর্ভগৃহ আর এটা এক নয়। সে মন্দির অনেক আগেই ভেঙেচুরে গেছে। সেই সুড়ঙ্গের মুখ যে কোথায় এখন তা বলা মুশকিল। অবিশ্যি এমনও হতে পারে যে পুরোটাই গল্প!”

    বলতে বলতে চলে এলাম মন্দিরের পিছনের দিকে। এদিকে বিশেষ কিছুই নেই, কেবল একটা অস্থায়ী ছাউনি, সেটায় বোধহয় ঐ বটতলার সাধু থাকেন। ছাউনির পেছনে একটা মজা কুয়ো আর একটু দূরে একটা পরিত্যক্ত হাড়িকাঠ।

    “ক’টা হাড়িকাঠ মশাই? “ বলে উঠলেন জটায়ু!
    “এটা মনে হয় না আর ব্যবহার হয়…দেখছেন না কেমন ভগ্নদশা।”
    “কি-কিন্তু ফেলুদা, ঐ দেখ…” আমি আঙুল তুলে দেখাই হাড়িকাঠের নীচে পাথরে খোদাই করা আ্যঙ্খ।
    “দেখেছি! রহস্যটা বোধহয় এবার পরিস্কার হয়ে আসছে রে তোপসে…সাইডগুলো সব মিলে যাচ্ছে এখন বাকী শুধু মধ্যিখানটা…”।
    বলতে বলতে  ও এগিয়ে গেল কুয়োর দিকে। আমরা ওর পেছনে। উঁকি মেরে দেখলাম কুয়োর মধ্যে আগাছা আর জংলী ডালপালায় ভর্তি। তার পরেই দেখলাম কুয়োর পার থেকে কি একটা কুড়িয়ে নিল ফেলুদা।

    “আপনারা কি কলকাতা থেকে এসেছেন, বেড়াতে?”
    ভৈরবী মা বটতলা থেকে উঠে এসেছেন।
    “আজ্ঞে হ্যাঁ ।” জটায়ু জবাব দিলেন।
    “সন্ধ্যে হয়ে এসেছে, এখানে থাকবেন না…সাপ খোপের আড্ডা ঐ মজা কুয়ো। ঐ দেখুন, শঙ্খচূড়ের খোলস পড়ে আছে …” ভৈরবী আঙুল দিয়ে দেখালেন।
    “ওরে বাবা, কি সব্বনাশ! ভাগ্যিস আপনি বললেন। চলুন মশাই, যাই এখান থেকে। শঙ্খচূড়ের এক ছোবলেই মৃত্যু!”
    “এখানে দেখার কিছু নেইও। মন্দিরের ভেতরে যান, প্রতিমা দর্শন করুন, ভাল লাগবে।”
    ভৈরবী বলে চলে গেলেন।

    আমি জিজ্ঞেস করলাম,
    “আচ্ছা ফেলুদা, ওটা তখন তুমি কি কুড়িয়ে নিলে?”
    “এই দ্যাখ”, ফেলুদার হাতের তালুতে একটা খয়রী গোল জিনিস।
    “রুদ্রাক্ষ নাকি মশাই? এত স্মুথ যে? খাঁকড়া কাটা হয় না?”
    “নর্মালি তাই হয়।”
    “ঐ ভৈরবী কিম্বা সাধু বাবাজীর গলা থেকে খুলে পড়েছে , নাকি?”
    “কারো না কারো গলা থেকে তো খুলে পড়েছে বটেই…!চল, এবার যাওয়া যাক। এবার হোটেলে ফেরত। কাল তো ক্লাইম্যাক্স।”
    অবশেষে বলল ফেলুদা।

    “আচ্ছা কাল যদি ক্লাইম্যাক্স হয় তো মারামারির চান্স আছে? মণিদি হঠাৎ বলে উঠল।
    “হতে পারে। কেন, ঘাবড়ে গেলে?”
    “শাড়ি পরে কি করে মারামারি করব?”
    “কেন দেবী দূর্গার মত!”

    ____________________

    পর্ব ১২ঃ বাবার প্রসাদ
    ——————————————-
    হোটেলে ফিরে লালমোহনবাবু বললেন 
    “তাহলে লাড্ডুগুলো কি হবে ফেলুবাবু?”
    “বিয়ের হট্টগোলে হিজিবিজি খেয়ে খেয়ে আমার দেড় কেজি ওজন বেড়ে গেছে লালমোহনবাবু। ওটা আবার আগের জায়াগায় না নামা অব্দি আমি মিষ্টি ছুঁচ্ছি না।”
    “আমিও তাই। লো কার্ব, নো সুগার।” মণিদি সায় দেয়।

    “সবেতেই বাড়াবাড়ি মশাই আপনাদের! বিয়ের পর অমন একটু আধটু ওজন সবার বাড়ে…”
    “…এবং তারপর বাড়তেই থাকে আর অচিরেই একটি নেয়াপাতি ভুঁড়ি। ওসব হলে গোয়েন্দার চলে না মশাই।
    যোগব্যায়ামের সময় বাড়িয়ে দিয়েছি এবং কার্ব কমিয়ে দিয়েছি।চান তো আপনি খেতে পারেন। অবিশ্যি যদি ভরসা হয়…”

    “ভরসা তো করা যায় মনে হয়…খেয়ে দেখাল যে মগনলাল। বেশ বড় বড় ঘিয়ের লাড্ডু কিন্তু ! আমাদের ঘরেই নিয়ে যাই, কি বল তপেশ? তোমার আবার লো কার্ব, নো কার্ব এসব নেই তো?”
    “না লালমোহনবাবু, তবে আমার এখন পেট ভরা। নিয়ে চলুন আমাদের সঙ্গে। খাব না হয় একটু পরে।”

    কিন্তু আমার আর খাওয়া হল না। লালমোহন বাবু ঘরে ফিরে টপাটপ দুটো খেয়ে ফেললেন। আমি গেলাম বাথরুমে ভাল করে চান করতে, সারাদিন অনেক হুজ্জুতি হয়েছে।

    আমি স্নান সেরে এসে দেখি লালমোহনবাবু নিজের বিছানার চাদরটা টেনে টেনে সোজা করছেন।জিজ্ঞেস করতে বললেন বিছানাটা নাকি ভীষণ নরম লাগছে। তখনও ভাল বুঝিনি কি হচ্ছে, তাই একটু অবাক হয়েই বললাম,
    “বিছানা তো নরম হওয়াই ভাল লালমোহনবাবু!”

    তাতে উনি ভয়ঙ্কর হাসতে শুরু করে দিলেন, হাসির দমকে কথা আটকে যেতে যেতে বললেন,
    “বি-ই-ই-ছানা—-হো হো হো—ন-অ-অ-রম —হো হো হো—হওয়া ভা-আ-আ-ল—হো হো হো হো..!”

    “কি মুশকিল! আপনি ওরকম মাতাল কুট্টুসের মত করছেন কেন?”
    “কুট্টুস মাতাল নাকি ক্যাপটেন হ্যাডক মাতাল ভাই? ব্লিস্টারিং বার্নাকলস… খুকুর কুকুর / ঠাকুর পুকুর/ মেঘলা দুপুর/টাপুর টুপুর…হিক…হে হে!”
    “কি জ্বালা! বসুন দেখি এসে এখানে! চুপ করে বসুন। কোন কথা নয়।”

    “শ-শ-শ”, ঠোঁটের ওপর তর্জনী দিয়ে বললেন ভদ্রলোক।
    “কোন প্রশ্ন নয়, কোন প্রশ্ন নয়! কেবল উট সম্পর্কে প্রশ্ন চলবে।”
     বলে টলে আয়নার সামনে রাখা টুলটায় ঘোড়ায় চাপার মত দুদিকে পা দিয়ে বসলেন। বোধহয় উটে চাপা হচ্ছে। কারণ আপার বডিটা ওরকম আগুপিছু করতে লাগলেন।

    “লালমোহনবাবু, এরকম করলে কিন্তু আপনাকে এবার বেঁধে রাখতে হবে।” আমি কড়া গলায় বলি।
    “আমারে বাঁধবি তোরা, সে বাঁধন কি তোদের আছে-এ-এ-এ…”
    “উঃ, এখন আবার বেসুরো গলায় গান ধরলেন?”
    “বেসুরো কেন হবে ভাই? আমি একজন কোকিলছানা ডাকছি কু-উ-উ, কু-উ-উ!” 
    এতো পারা যায় না, আবার ক্যাপ্টেন হ্যাডক!

    “এই গানটা দয়া করে থামান না!”
    “তাহলে কোনটা গাইব? শিখিপাখা মিশিমাখা নাকি রামভজনের গিন্নীটা/বাপরে যেন সিংগীটা…”

    ভারী বিপদ,টিনটিন, রবীন্দ্রনাথ, সুকুমার রায় সব একসঙ্গে ঘেঁটে ঘন্ট! ব্যাপার সুবিধের নয়। লাড্ডুতে নিশ্চয়ই কিছু ছিল। কি করি এখন!  ভাবলাম ফেলুদাদের একটা ফোন করা যাক। 

    কিন্তু সবে ডায়াল করেছি আর উনি ছুটে এসে আমার হাত থেকে রিসিভারটা ছিনিয়ে নিয়ে ঠোঁটের ওপর তর্জনী রেখে মুখে অমায়িক হাসি টেনে বললেন,
    “শ-শ-শ! ওদের ডিস্টার্ব কোর না তপেশ! কাবাব মে হাড্ডি—বুরা বাৎ—আমরা বুড়া না তপেশ—তুমিও না, আমিও না—আমার বয়স সবে সাড়ে তেরো…”।

    এই সেরেছে, একি হ য ব র লর উধো হয়ে গেল নাকি! মহা মুশকিল! রিসিভারের ওদিকে ফেলুদার গলা শুনছি,
    “হ্যালো, হ্যালো!”

    জটায়ু দেখি এক পায়ে দাঁড়িয়ে কাত হয়ে বলছেন “হেলেছি, হেলেছি…আর কত হেলব?” 
    বলতে বলতে কাত হয়ে বিছানায় পড়ে গেলেন। আবার দম ফাটা হাসি।

    এর মধ্যে দরজায় টোকা। ফেলুদা বোধ হয়। গিয়ে দরজা খুলতেই দেখি ফেলুদা আর মণিদি দুজনেই।

    “আপনার স্বামী ডাঃ ব্যানার্জিকে ডেকে দিন তো…ফেলুবাবুকে দেখাতে হবে, কাঁধে চোট লেগেছে।”
    হাসি হাসি মুখে মণিদিকে বললেন জটায়ু।

    মণিদি অবাক চোখে তাকাতেই আমি বাক্সটা দেখিয়ে বললাম “লাড্ডু!”
    “দিল্লীকা লাড্ডু…ফেলুবাবু খাকে পস্তায়া, হাম নেহি খাকে পস্তায়া…” আবার শুরু করেছে!

    মণিদি এর মধ্যে লাড্ডুর বাক্সটা খুলে বলে উঠল, 
    “কি কান্ড, চারটে খেয়ে ফেলেছেন নাকি?”
    আমি তো দেখেছিলাম দুটো! তাহলে তারপর আরো দুটো খেয়েছেন যখন আমি বাথরুমে ছিলাম তখন।

    “দারুণ খিদে পেয়েছে মশাই। আর একটা দিন তো!” জটায়ু হাত বাড়ান।
    “সব্বনাশ! একদম না!” মণিদি চকিতে সরিয়ে নিল প্যাকেট।
    “তাহলে আপনার ক্যারামেল পুডিং কিম্বা প্রন পকোড়া“?
    “এখন ওসব কিচ্ছু হবে না। যান গিয়ে শুয়ে পড়ুন।” মণিদি কড়া গলায় বলে।
    “ধুর, আপনি মশাই উপোস করিয়ে রাখেন বড় লোককে।” বাচ্চাদের মত ঠোঁট ফুলিয়ে বললেন জটায়ু। “কাল ফেলুবাবু অমনি বরফের মধ্যে সারা রাত রইলেন আপনার কাছে, কিন্তু কিছু খাওয়ালেন না , ভারী অন্যায়!”

    ভদ্রলোকের টাইম -স্পেস সব ঘেঁটে গেছে।

    “ফেলুবাবু কিন্তু ভারী ভাল। আমাদের খাওয়ালেন অপেরাশালেনে, তারপর আংটি দিলেন… আনিকাকে দিলেও হত আংটিটা…”
    “আনিকাকে কে আংটি দিত লালমোহনবাবু? ও?”
    মণিদির দিকে কড়া চোখে তাকাল ফেলুদা।

    “আ্যল, ছি ছি ছি…তাই কি হয়”, বিশাল জিভ কাটলেন ভদ্রলোক।
    “আনিকাকে দেবেন প্রখর রুদ্র, আপনাকে দেবেন প্রদোষ মিত্র….আমাকে দেবে মগনলাল …”
    “কি দেবে? আংটি?” 
    এবার ফেলুদার দৃষ্টি আরো কড়া কিন্তু মণিদি পাত্তা দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না।

    “আরে না না, আংটি কেন…সুগার কিউব, লাড্ডু…খাবেন নাকি?” জটায়ুর মুখে আবার অমায়িক হাসি।
    “না ও খাবে না। আমরা কেউ খাব না। যান গিয়ে শুয়ে পড়ুন। কাল আবার ঐ আ্যডপশনের ব্যাপারে—“

    ফেলুদার কথা শেষ হবার আগেই জটায়ু বলে ওঠেন
    “আভি সে আ্যডপশন কিঁউ? যান মশাই, ঘরে গিয়ে ট্রাই করুন তো নিজেরা…”

    “উফ! ইমপসিবল...যা খুশী বকে যাচ্ছে”, ফেলুদা চেয়ারে গিয়ে বসে পড়ল।

    “কি বুঝছ মণি? ভাং লাড্ডু তো?”
    “সে তো বটেই। শিউজীর প্রসাদ বলে কথা। সেই জন্যই এত খিদে।”
    “কিছু কি করার আছে?”
    “বিশেষ না। ইট উইল রান ইটস ওন কোর্স। তুমি বরং এদের বার থেকে একটু লেমনেড নিয়ে এস। আমি একটা মাইল্ড ক্যাম্পোজ দিয়ে দিচ্ছি। ঘুমটাই সবচেয়ে দরকার।”
    “ঠিকই। আমি বরং কিছু খাবার দাবারও নিয়ে আসি।না হলে আবার খিদের চোটে উঠে পড়বে। তোপসে, ঘুমিয়ে পড়লে তুই হ্যান্ডেল করতে পারবি তো?”

    “হ্যাঁ, তা পারব। কিন্তু মগনলাল যে খেয়ে দেখাল?”
    “খেল তো ঐ টুকু ভেঙে। ওতে ওর কি হবে?”
    “কারণটা কি?”
    “কিছুটা হয়তো নিছক জব্দ করা…জেলে পাঠানোর শোধ। তবে হয়তো ভেবেছিল হ্যাংওভারের ঠেলায় যা করতে এসেছি সেটা খানিকটা হলেও পন্ড হবে।”
    “ও কি জানে আমরা কি করতে এসেছি?”
    “মিঃ আ্যন্ড মিসেস ব্যানার্জি যে আমরা তা নিশ্চয়ই জানে না। তবে হয়তো আমাদের দেখে আন্দাজ করেছে ওর কোন কুকর্মের ব্যাপারে আমরা খোঁজ করছি কিনা। ওর সঙ্গে এই আশ্রমের লিঙ্কের ব্যাপারে এখন আমি নিশ্চিত।ওর আংটিটা দেখার পর থেকেই।”

    “আমার সঙ্গে এস প্রদোষ। ক্যাম্পোজ আছে আমার ব্যাগে। দিয়ে দিই তোমাকে। এনে খাইয়ে দাও।”
    মণিদিরা বেরিয়ে গেল। একটু পরে ফেলুদা একা ফিরে এল ট্যাবলেট আর লেমনেড নিয়ে।

    “এই নিন লালমেহনবাবু, খেয়ে ফেলুন এটা”, মণিদির দেওয়া ট্যাবলেটটা হাতে নিয়ে বলল ফেলুদা।
    “দূর মশাই, কেন খাব? এখনো তো জলের গ্লাসে ভিবজিওর দেখছি না।” কাঠমান্ডুর রেফারেন্স বোধ হয়।
    “তাও খেয়ে ফেলুন। মণি বলেছে এটা আপনার দরকার।”
    “ধুর, আপনি বড় হেন পেকড হয়ে গেছেন। ম্যাডাম যা বলবেন তাই। উনি কি আপনার জীবনের সেন্টার অব গ্র্যাভিটি নাকি?”

    ফেলুদা হাতে ওষুধ নিয়ে থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল মিনিট খানেক। ও কি অফেন্ডেড হল নাকি জটায়ুর কথায়? ভদ্রলোক তো সেন্সে নেই এখন…

    “আপনি জিনিয়াস লালমোহনবাবু! সেন্টার অফ গ্র্যাভিটি! অফ কোর্স! ধাঁধার উত্তর মিলে গেল…শেষে দিল রা!”

    মাথামুন্ডু কিছু বুঝলাম না।ফেলুদাও কি ভাঙের লাড্ডু খেল নাকি?

    ফেলুদারা ক্যাম্পোজ দিয়ে নিজেদের ঘরে চলে যাবার কিছুক্ষণ পর জটায়ুও নিদ্রা দিলেন। মাঝে আর বিশেষ গোলমাল করেননি। লেমনেডের পর ঐ দমকা হাসির প্রকোপটা কমে গেছিল।

    শুধু ঘুমোনোর আগে একবার বললেন 
    “দেবী চৌধুরানীর সাত ঘড়া মোহর কোথায় পোঁতা আছে বলতো? সেই যে জঙ্গলের মধ্যে ভাঙা বাড়ি?”
    “সে কি আর এদ্দিনে আছে নাকি”?
    “নেই বলছ?…পায়ে ধরে সাধা, রা নাহি দেয় রাধা…ধারাগোল…গন্ডগোল, বিস্তর গন্ডগোল…”
    বিড়বিড় করতে করতে ভদ্রলোক চোখ বুজলেন। ঘড়িতে তখন রাত্রি সাড়ে এগারোটা।

    ————————————
    পর্ব ১৩ঃমাতৃতন্ত্র
    —————————————
    পরদিন সকাল সাতটা নাগাদ আমাদের ঘরের ফোনটা  বেজে উঠল।

    “তোপসে মন দিয়ে শোন। ঘন্টা খানেকের মধ্যে রেডি হয়ে তোরা দুজন গাড়ি নিয়ে বেরোবি। গাড়ি ঠিক করা আছে। তোদের রিসেপশন থেকে ডেকে নেবে। আড়াল থেকে শিকারপুরের মন্দিরের ওপর নজর রাখবি। মন্দিরের মধ্যে যাবি না। যদি বাই চান্স গুবলুকে ওরা ওখানে নিয়ে আসে…চান্স কম, তাও গুবলুর ব্যাপারে আমি কোন রিস্ক নিতে চাই না…তাহলে ড্রাইভারকে সঙ্গে সঙ্গে ডেকে নিবি। ও পুলিশের লোক, আর্মস থাকবে ওর সঙ্গে। যদি গুবলুকে ওরা ওখানে না আনে তো দশটা নাগাদ গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়বি। ড্রাইভারকে বলা আছে কোথায়।”
    “আর তোমরা?”
    “আমরা বেরিয়ে পড়েছি। অন্যদিকে।”
    “কিন্তু তোমাদের সঙ্গে আবার কোথায় যোগাযোগ হবে?”
    “সময় হলেই জানতে পারবি। এখন ছাড়ছি।”

    কি যে হচ্ছে কিছু তো বুঝতে পারছি না।
    “এ তো সেই কৈলাসের মত ব্যাপার মন হচ্ছে তপেশ ! তোমার দাদা আড়াল থেকে ইন্সট্রাকশন দিয়ে যাচ্ছেন!”

    কথাটা জটায়ু ঠিকই বলেছেন। যাই হোক ও যেমন বলল সেইমত আমি আর লালমোহনবাবু বেরিয়ে পড়লাম।

    মন্দিরের দর্শনার্থীরা যেখানে গাড়ি রাখে সেখানে রেখে জঙ্গলে ঢুকে গেলাম। এত সকালে বিশেষ কেউ নেই।
    শরৎ কালের সকালে ডুয়ার্সের জঙ্গল দারুণ সুন্দর লাগছে। মন্দিরের থেকে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালাম।
    সামনে দুটো বড় শাল গাছ আছে, এছাড়া ছোটখাট ঝোপঝাড়।আড়াল ভালই হবে। একটা জায়গা বেছে দাঁড়ালাম যেখান থেকে মন্দিরের দরজা ভাল করে দেখা যায়।

    বেলা বাড়তে থাকল। একজন এসে ঝাঁটপাট দিল, তার কিছুক্ষণ পরে একজন পুজারী এসে ভেতরে ঢুকে মিনিট পনের কুড়ি পর বেড়িয়ে গেলেন। বোধহয় পুজো হল। তারপর আবার শুনশান। কোন ট্যুরিস্ট এখনো আসে নি। খুব একটা জনবহুল ট্যুরিস্ট স্পট তো এটা নয়!

    এখন প্রায় নটা। এমন সময় দেখলাম কালকের ঐ অপর্ণা, শম্ভু আর আরো একজন মন্দিরের দিকে আসছে। অন্য লোকটি বাইরে দাঁড়িয়ে থাকল। অপর্ণা আর শম্ভু ভেতরে চলে গেল। তারপর মিনিট দশেক পরে অন্য লোকটা চলে গেল। উঁকি মেরে দেখলাম ও গাড়িতে উঠে স্টার্ট দিয়ে বেরিয়ে গেল।

    “কি হল বলুন তো লালমোহনবাবু? বাকী দুজনকে মন্দিরের মধ্যে রেখে গেল নাকি?”
    “সেই তো ভাবছি তপেশ ভাই । একবার ভেতরে গিয়ে দেখব নাকি?”
    “ওরা চিনে ফেললে? কাল তো দেখেছে আমাদের…”
    “তাহলে?”
    “আর একটু দেখি।”

    কিন্তু আরো প্রায় আধঘন্টা হয়ে গেল কেউ বেরোল না।
    “চল ভাই , একটু গিয়ে দেখি। নেহাৎ সামনে পড়ে গেলে বলে দেব যাহোক কিছু…মন্দিরে পুজো দিতে এসেছি…”
    “চলুন তবে!”

    ভেতরে গিয়ে দেখি কেউ কোথাও নেই। ভবানী পাঠক আর দেবীর দুটো মূর্তি পাশাপাশি বসানো। আর কোন দরজাও নেই।
    “কি হল বলতো তপেশ? ওরা দুজন ভ্যানিশ করে গেল নাকি?”
    “তা তো হতে পারে না…নিশ্চয়ই অন্য কোন রাস্তা আছে…”
    “কিন্তু কোথায়?”

    “বাবা, সাপ নাকি ওটা?” বলে লাফ মেরে মূর্তিগুলোর পেছনে সরে গেলেন লালমোহনবাবু।

    আমি ততক্ষণে দেখে নিয়েছি সাপ টাপ নয়, ওটা নেহাতই শুকনো ফুলের মালা।ভদ্রলোকের হ্যাংওভার বোধহয় এখনো পুরো কাটেনি, তাই এটাকে সাপ ভেবেছেন!

    কিন্তু তার মধ্যেই লালমোহনবাবু টাল সামলানোর জন্য পেছনের দেওয়ালে আটকানো মশালের হুকটা ধরেছেন। 

    হুকে টান পড়তেই একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটে গেল। দেবী আর ভবানী পাঠকের মূর্তি দুটো দুদিকে সরে গেল…মাঝখানে মেঝেতে একটা দরজা। ট্র্যাপডোর।
    উঁকি মেরে দেখলাম সিঁড়ি নেমে গেছে। মশালের হুকটা মূর্তির পেছনে হওয়ায় এমনিতে লোকে ওটা ধরে টানবে তার চান্স কম। নেহাৎ লালমোহনবাবু সাপের ভয়ে অমন লাফ দিয়ে উঠলেন তাই।

    “যাব, ভাই?”
    “অবশ্যই। চলে আসুন।”
    নামতে গিয়ে দেখলাম ভেতরের দেওয়ালে আর একটা মশালের হুক। টানতেই দরজাটা ওপরে বন্ধ হয়ে গেল। ওপরে দেবী নিশ্চয়ই আবার নিজের জায়গায় ফিরে গেছেন।

    সিঁড়িটা দিয়ে একতলা মত নামতেই একটা করিডোর। 
    দুপাশে তালা দেওয়া বন্ধ ঘর। মিটমিটে বাল্ব জ্বলছে কয়েকটা।কয়েকটা ঘরের দরজায় আবার ঐ ক্যাডুসিয়াসের চিহ্ন। দরজাগুলোয় কান পেতে শুনলাম, কিন্তু কোন আওয়াজ পেলাম না।তারপর করিডোর ধরে আঁকাবাঁকা পথে বেশ কিছুটা গিয়ে দেখলাম আবার একটা সিঁড়ি উঠে গেছে। সেটা দিয়ে কিছুদূর উঠতেই একটা দরজা। দরজার বাইরে এসে দেখি জঙ্গল এখানে আরো ঘন আর সামনে একটা ছোট নালার মত। সেখানে ছোট একটা ঘাট এবং নৌকা বেঁধে রাখার জায়গা আছে।

    “এখান দিয়ে নৌকা করে গেছে নাকি ওরা?”
    “তাই তো মনে হচ্ছে। কিন্তু কেন?”
    “সে তো বোঝা মুশকিল। তবে এত গোপনীয়তা যখন একটা কিছু ব্যাপার তো আছেই।”
    “কি করবে এখন তাহলে ?”
    “এখন তো আর কিছু করার নেই। চলুন ফেরা যাক। গাড়িতে পৌঁছতে হবে শীগ্গীরই। দশটা প্রায় বাজে।”
    “যে পথে এলুম সেখান দিয়েই ফিরব?”
    “না রিস্কি হয়ে যাবে। মন্দিরের মধ্যে যদি কেউ দেখে ফেলে?”
    “তাহলে?”
    “চলুন না, জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে, ঐ মন্দিরের পেছনের দিকে।খুব বেশীদূর তো হবে না…চার পাঁচশ মিটার বড় জোর। পৌঁছে যাব।”

    ফিরতে বিশেষ অসুবিধে হল না।একটু এগোতেই মন্দিরের চূড়ার ত্রিশূল দেখতে পেলাম। পার্কিং-এ এসে ড্রাইভারকে বললাম যেতে।

    গাড়ি জলপাইগুড়ির রাস্তা ধরল। কালকের সেই কালীমন্দিরে এসে গাড়ি থামল। ফেলুদারা কি তাহলে এই মন্দিরে? 

    দেখলাম আজ এখানে কিছু ট্যুরিস্ট আছে। কয়েকজন দেশী-বিদেশী ট্যুরিস্ট বাইরে বটগাছের নীচে গোল হয়ে বসে সেই সাধুবাবা আর ভৈরবী মায়ের বাণী শুনছে। মনে হল বেশ মুগ্ধ। মন্দিরের ভেতরে কেউ নেই।

    এবার কি করতে হবে ফেলুদা তো বলে দেয়নি। হয়তো এসে পড়বে শীগ্গীর, অপেক্ষা করা ছাড়া গতি নেই। একটু দূরে দাঁড়ালাম যাতে মন্দিরের দরজাটা চোখে পড়ে। বটগাছের বিশাল গুঁড়ি আর ঝুড়িতে মোটামুটি আড়াল হচ্ছে।সাধুবাবার বাণী শোনার কোন ইচ্ছে আপাতত আমাদের নেই, তাই ওদিকে ঘেঁসলাম না।

    একটু পরেই দেখি মন্দিরের পেছন থেকে বেরিয়ে এল শম্ভু আর অপর্ণা। দেখেই আমরা বটগাছের গুঁড়ির আড়ালে ভাল মত সরে গিয়ে উঁকি মেরে দেখতে লাগলাম। ওদের সাজ পোশাক এখন একদম আলাদা। আশ্রমের গেরুয়া-সাদা পোশাকের বদলে সাধারণ প্যান্ট শার্ট আর শাড়ি। শম্ভুর কাঁধে একটা বড় ব্যাগ। অপর্ণার কোলে একটি বাচ্চা—দূর থেকে মুখ দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু আমি বাজি রাখতে পারি ওটা গুবলু।

    কিন্তু ওরা গুবলুকে পেল কোথা থেকে? যখন শিকারপুরের সুড়ঙ্গে নেমে গেল তখন তো শুধু দুজন ছিল! এখন ঐ পেছনদিক থেকে এল, মানে নদীর দিক থেকে। তবে কি ঐদিকে কোন ঘাট আছে? আর নদী দিয়ে আসার পথে গুবলুকে কোথায় পেল?

    “কি করবে তপেশ? সোজা গিয়ে চার্জ করবে?”
    “না লালমোহনবাবু! ফেলুদা সেরকম কিছু করতে বলেনি। ওদের কাছে অস্ত্র থাকতে পারে, গুবলু আমাদের চেনা এমন কোন প্রমাণ নেই, ওরা উল্টো ওর আসল বাবা-মা বলে চেঁচিয়ে সীন ক্রিয়েট করতে পারে।”
    “তবে?”
    “দাঁড়ান, আর একটু দেখি।”

    বলতে বলতেই দেখি উল্টোদিকের পার্কিং এর জায়গা থেকে আসছেন পার্বতীমাঈ আর সঙ্গে মগনলাল।

    দুজনে এগিয়ে গেল ঐ বটতলার সন্ন্যাসী আর ভৈরবীর দিকে। এদিক থেকে শম্ভুরাও গুবলুকে নিয়ে এগিয়ে গেল ওদিকে। চারজনেই বেদীতে উঠেছে, তখনি হঠাৎ একটা ব্যাপার ঘটে গেল।
    সন্ন্যাসীর কোঁচড় থেকে বেরিয়ে এল একটা রিভলবার। সেটা সোজা ওদের দিকে তাক করে সন্ন্যাসী ভৈরবীকে দেখিয়ে বললেন “বাচ্চাটাকে ওর হাতে দিন, ক্যুইক!”

    ফেলুদা! আর পাশে ভৈরবী বেশে মণিদি!
    রাধাগোবিন্দ এম্পোরিয়ামের প্যাকেটে তাহলে এই ছদ্মবেশের পোশাকই ছিল!

    জমায়েত হওয়া ভক্তদের মধ্যেও দুজন রিভলবার বের করেছেন। নিশ্চয়ই পুলিশ।

    অপর্ণা ভ্যাবাচাকা খেয়ে একটু এদিক ওদিক দেখে গুবলুকে মণিদির দিকে বাড়াচ্ছিল, হঠাৎ মাতাজী ওকে অপর্ণার কোল থেকে ছিনিয়ে নিলেন একহাতে। অন্য হাতে ঝকঝক করছে কোমরের গেঁজে থেকে বের করা ছুরি। ছুরিটা গুবলুর গলার কাছে ধরে উনি বললেন,
    “আপলোগ সব আপনা হাতিয়াড় নীচে রাখখো ঔর হাত উপর। হাম সব কো জানে দো, নেহি তো ইস বাচ্চে কো জান সে মার দুঙ্গি। সচ কহতি হুঁ ম্যয়।”
    ভয়ঙ্কর পৈশাচিক লাগছে এখন মাতাজীকে।

    কিছু করার নেই, ঐটুকু বাচ্চাকে হোস্টেজ বানিয়েছে। মাতাজীর চেহারাই বলে দিচ্ছে উনি নিজেকে বাঁচানোর জন্য যা খুশী করতে পারেন।আস্তে আস্তে সবাই রিভলবার মাটিতে রেখে দিল।শম্ভু মাটিতে রাখা অস্ত্রগুলো এক এক করে তুলে নিল।ওরা চারজনে যাচ্ছে গাড়ির দিকে। মাতাজীর কোলে গুবলু, ডান হাতে ধরা ছোট, বাঁকা ছুরি ওর গলার খুব কাছে…দেখেই আমার পেটের ভেতর কেমন জানি করছে।

    মগনলাল আর অপর্ণা প্রায় গাড়ির কাছে চলে গেছে। মাতাজী ঐ বেদী থেকে নেমে এগোচ্ছেন। শম্ভু ওঁকে গার্ড করে আছে।

    ওরা এখন মাথার ওপর হাত তুলে থাকা দুজন পুলিশকে পেরিয়ে মণিদিকে ছাড়িয়ে হেঁটে যাচ্ছে। এমন সময় মাটিতে পোঁতা ত্রিশূলটা এক ঝটকায় তুলে নিয়ে শম্ভুর মাথায় বেদীর ওপর থেকে মোক্ষম ঘা মারল ভৈরবী বেশী মণিদি।

    শম্ভু হুমড়ি খেয়ে পড়ল মাতাজীর ঘাড়ে। মাথার পেছনে ফেটে রক্ত ঝরছে ওর। ফেলুদা লাফিয়ে বেদী থেকে নেমে শম্ভুর হাত থেকে পড়ে যাওয়া রিভলবারগুলো তুলে নিল।এদিকে শম্ভু ঘাড়ে পড়ায় মাতাজীর ব্যালেন্স হারিয়ে ছুরিটা হাত ফস্কে মাটিতে।এক হাতে গুবলুকে ধরে উনি ছুরিটার দিকে নীচু হয়ে আবার হাত বাড়ানোর আগেই মণিদি বেদী থেকে ত্রিশূল নিয়ে লাফিয়ে নেমে মাতাজীর গলায় ঠেকিয়ে বলে উঠল,
    “বাচ্চাটাকে ছেড়ে না দিলে এই ত্রিশূল কিন্তু আপনার ক্যারোটিড আর্টারী ভেদ করবে মাতাজী!”

    লাল শাড়ি, গলায় রুদ্রাক্ষ, খোলা চুল, হাতে ত্রিশূল আর অগ্নিবর্ষী দৃষ্টিতে মণিদি তখন সত্যিই রণচন্ডী!
    পঞ্চমীর সকালে দূরে কোথাও ঢাক বাজছে।

    মগনলাল আর অপর্ণা কিন্তু গাড়িতে উঠে এর মধ্যে রওনা দিয়েছে। অবস্থা বেগতিক দেখে আর বাকী দুজনের জন্য দাঁড়ায়নি।
    এদিকে পুলিশ যতক্ষণে মাতাজী আর শম্ভুকে হাতকড়া পরাচ্ছিল ততক্ষণে লালমোহনবাবু গুবলুকে কোলে তুলে নিয়েছেন।

    “মণি ক্যুইক, ওদের পিছু নিতে হবে। লালমোহনবাবু, আপনি গুবলুকে নিয়ে এখানেই থাকুন, পুলিশের সঙ্গে। তোপসে তুই আমাদের সঙ্গে আয়।”
    বলতে বলতেই আমরা ছুটলাম গাড়ির দিকে। এটাতে করেই এসেছিল মণিদিরা সকালে।
    “কোন দিকে যাব?”
    “রংধামালি বাজারের দিকে চল।”
    “শিওর তুমি ? শিকারপুরের উল্টো দিকে তো?”
    মণিদি থার্ড গিয়ারে শিফট করে বলল।
    “হ্যাঁ।ওদিকেই ভামরী মন্দির!”

    ড্রাইভিং সীটে ভৈরবীকে দেখে অনেকেই চমকে যাচ্ছিল। তবে শহর থেকে বেরিয়েই মণিদি স্পীড তুলে দিল। লোকালয় ছাড়িয়ে দুপাশে ঘন জঙ্গলের মধ্যে কালো পিচের রাস্তা ধরে মিনিট দশেক যেতেই দূরে দেখতে পেলাম মগনলালদের সাদা ফিয়াট।
    “তুমি কি চাকায় গুলি করবে ভাবছ?” ফেলুদাকে রিভলবার বের করতে দেখে প্রশ্ন করল মণিদি।
    “হ্যাঁ, দেখ যতটা কাছে যেতে পার।”
    “একটু ওয়েট কর…ওরা আমাদের দেখে আ্যকসিলারেট করছে। আমাকেও করতে হবে। স্টেডি পেস না হলে তুমি মিস করে যাবে।” মণিদির ডান পা গ্যাস পেডালটাকে একেবারে গাড়ির মেঝেতে চেপে ধরেছে।
    “এবার…” সামনের গাড়ির বিশ হাতের মধ্যে গিয়ে গ্যাস পেডালের ওপর থেকে প্রেসার কমিয়ে বলল মণিদি।
     ফেলুদা জানলা দিয়ে মুন্ডু বের করে পেছনের বাঁ চাকাটা লক্ষ্য করল।কানফাটানো আওয়াজের সঙ্গে সঙ্গে গাড়িটা বিপজ্জনক ভাবে এঁকে বেঁকে গিয়ে রাস্তার পাশের নালার মুখে গিয়ে কাত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল।

    “আমরা কি বেরোব?” গাড়িটা থামিয়ে গিয়ারটা নিউট্রালে দিয়ে জিজ্ঞেস করল মণিদি।
    “না। ওদের কাছে অস্ত্র থাকতে পারে। ওরা জখম হয়েছে বলে তো মনে হয় না। আমি নামছি।তোমরা এখানে বোস।”

    কিন্তু ফেলুদা নামার আগেই হঠাৎ দেখলাম ওদের গাড়ির সামনের, পেছনের দুটো দরজাই খুলে গেল আর ড্রাইভার, মগনলাল, অপর্ণা তিনজনেই গাড়ি থেকে বেরিয়ে আমাদের দিকে না তাকিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড় লাগাল রাস্তার উল্টোদিকের জঙ্গলে।

    কি হল ব্যাপারটা, ভাল করে বোঝার আগেই দেখলাম এপাশের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এল একটা কালো পাহাড়। হাতি!

    রাস্তার মাঝখানে এসে ওদের গাড়িটাকে শুঁড়ে করে একটা ঠেলা দিতেই ওটা খেলনার মত গড়িয়ে গেল পাশের সরু নালাটার মধ্যে । তারপর আমাদের গাড়ির দিকে একবার তাকাল আর শুঁড় তুলে চিৎকার করে উঠল। বৃংহণ! আমরা দম বন্ধ করে বসে আছি।

    তারপর হাতি বাবাজি রাস্তার ওপারের জঙ্গলে চলে গেলেন যে পথে মগনলালরা গেছিল সেদিকে। আশাকরি মগনলাল ভুঁড়ি দুলিয়ে ভাল ছুটতে পারবে, না হলে ওর কপালে দুঃখ আছে।

    ফেলুদা চাপা গলায় বলল “এপাশে দেখ।”
    তাকাতে চোখে পড়ল সামনের গাড়ির হাত কয়েকের মধ্যে জঙ্গলের ভেতর একটা হাতির বাচ্চা! মা হাতি তার বাচ্চা নিয়ে জঙ্গলে যেখানে ছিল, টায়ার ফেঁসে মগনলালদের গাড়ি তার হাত পাঁচেকের মধ্যে গিয়ে কেতরে দাঁড়িয়েছে।সেই জন্যই মা হাতি খেপে ওদের তাড়া করেছে। 

    “বেশ হয়েছে। অনেক মানুষ মায়ের কোল খালি করেছে ওরা। হাতি মা এবার ওদের উচিত শিক্ষা দেবে। বজ্জাতের দল সব!” মণিদি বলে উঠল।
    “হাতিদের মাতৃতন্ত্র, জান তো? তোমাকে ফেমিনিজিমের  খোঁটা দেবার শোধটাও ঐ হস্তিনীই নেবে ‘খন।” ফেলুদা এখন রিল্যাক্সড।
    “চল তাহলে ফেরা যাক। আরো অনেক কাজ বাকী।”

    “ আর কি কাজ বাকী ফেলুদা? গুবলুকে তো পাওয়া গেছে। মাতাজীও ধরা পড়েছে। হাতির তাড়ায় নাকাল মগনলালকেও নিশ্চয়ই পুলিশ এসে ধরবে শীগ্গীর।”
    “আর বাকী বাচ্চাগুলোর কি হবে? পালের গোদাটাকেও তো ধরতে হবে।”
    “কে, শঙ্করীপ্রসাদ? জান তুমি ও কোথায় আছে?”
    “দেখা যাক! মিশরীয় চিহ্নগুলো তো সব ক্ল্যুই ঠিকঠাক দিল, এখন অব্দি! “
    “একটু বুঝিয়ে বলবে কিসের থেকে কি ক্ল্যু পেলে? জানলে কি করে গুবলুকে ওখানে পাওয়া যাবে বা মগনলাল এই পথে আসবে? শিকারপুরের মন্দিরের তলাতেই বা কি আছে?”
    “জলের মত সোজা। ভাবতে থাক, পেয়ে যাবি তোপসে। আর নেহাৎ না পারিস তো ওয়েট কর শেষ দৃশ্যের জন্য।”

    “ফেলু মিত্তিরের তারাবাজি আবার?”
    “সে তো আছেই। তবে গোদাটাকে ধরার পরে।মণি, তোমার নার্ভ স্টেডি আছে তো? চালাতে পারবে?”
    “পারব। ” গাড়ি ঘোরাতে ঘোরাতে বলল মণিদি।

    ————————————
    পর্ব ১৪ঃ  কালকেউটে
    —————————————

    কালীমন্দিরে ফিরে এসে মাতাজী আর শম্ভু কাউকেই দেখলাম না। লালমোহনবাবু বললেন ওদের কাস্টডিতে নিয়ে পুলিশের একটা জীপ বেরিয়ে গেছে আগেই।

    হাতির হাতে মগনলালের নাকাল হবার গল্প শুনে জটায়ু যারপরনাই খুশী।
    “হুঁ হুঁ বাবা, ভাঙের লাড্ডু খাওয়ানো…এবার দেখুক মজা!”

    তারপর মণিদির দিকে ঘুরে বললেন, 
    “তবে যে বললেন শাড়ি পরে মারামারি করা যায় না?”
    “আপনাদের পাল্লায় পড়ে আরো কত কিছু যে কপালে আছে কে জানে! তবে আমি চান্স নিই নি, এই দেখুন”
    মণিদি শাড়িটা পায়ের ওপর একটু তুলতেই দেখলাম তলায় কালো স্ল্যাক্স।”
    “জাস্ট ইন কেস। তাই নির্ভয়ে লাফাতে পারলাম।”
    “মেক আপটা কিন্তু জবরদস্ত হয়েছিল আপনাদের দুজনেরই। চিনতেই পারিনি।”

    “সেটা এক্সপেক্ট করেননি বলে।” ফেলুদা বলে উঠল। “আর বেশ খানিকটা দূরেও ছিলেন।তবে আমার তো এসব অভ্যেসই আছে, সেই মছলীবাবার সময় থেকেই। মণিকে মেকআপ দিতেই যা সময় লাগল…নিউরোসার্জনকে ভৈরবী বানানো তো নেহাৎ সোজা কাজ নয়। তাও তো শেষ পর্যন্ত সেই ক্যারোটিড আর্টারী বেরিয়ে গেল…স্বভাব যায় না ম’লে।” 

    ফেলুদা এতক্ষণে আয়েস করে একটা চারমিনার ধরিয়েছে।

    “বাজে বকো না, বুঝলে। যে পরিমাণ ছাই মাটি আমার চুলে চাপিয়েছ জটা বানাতে গিয়ে, এবার বোধহয় ন্যাড়া করতে হবে।”
    “হুম। তাতে আবার সেই চাইল্ডহুড ট্রমার পুনরাবৃত্তি হবে না তো? সেবার থেকে তো বাচ্চা ফোবিয়া, তা এবার তাহলে কি হবে, বর ফোবিয়া? তাহলে কিন্তু…”

    মণিদির ভৈরবী চাউনি দেখে ফেলুদা মাঝপথে থেমে গেল।আমি উল্টোদিকে তাকিয়ে হাসি চাপলাম।

    “তা ফেলুবাবু, অতঃকিম?”
    “এখনো অনেক কাজ বাকী আছে। আসুন সবাই।”

    আমরা তিনজন গুবলু সমেত ইন্সপেক্টর দত্ত আর দুজন কনস্টেবলকে নিয়ে ফেলুদার পেছন পেছন গেলাম। ও দেখি মন্দিরের পেছনের দিকে ঐ মজা কুয়ো আর হাঁড়িকাঠের দিকে এগোচ্ছে।
    “ও মশাই , আবার ঐ সাপের বাসার দিকে না গেলেই নয় নাকি আপনার? সঙ্গে গুবলু আছে…”জটায়ু নার্ভাস গলায় বলে ওঠেন।
    “ঘাবড়াবেন না, মিশরীয় সভ্যতায় সাপ তো খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী।”
    “তার সঙ্গে আমাদের কি?”
    “কেন? ভুলে গেলেন চিহ্নগুলোর কথা?”
    “চিহ্ন ছাড়াই তো গুবলু উদ্ধার হয়ে গেল, আবার তবে কেন…”?
    “তাই বুঝি? কে বলল আপনাকে?” 

    বলতে বলতে আমরা হাড়িকাঠের কাছে। 
    “তোপসে, তুই ঐ হাঁড়িকাঠের ‘ওয়াই’ অংশটাকে লিভারের মত টেনে নামিয়ে আন মাটিতে, যাতে ঐ আ্যঙ্খ খোদাই করা পাথরে এসে ঠেকে একটা দিক।”

    “আর আপনারা আসুন আমার সঙ্গে।”
     বলে বাকীদের নিয়ে ও এগিয়ে গেল কুয়োর দিকে। 

    “হে মা মনসা, হে বাবা বিষহরি…হুঁ হুঁ বাবা…মান রেখ বাবা…হে বাবা চাঁদ সদাগর…ও না না, স্যরি স্যরি, চাঁদ সদাগর তো সাপের শত্রু…হেই মা মনসা, দোষ নিও না মা…”
    বিড়বিড় করতে করতে লালমোহনবাবু গুবলুকে কোলে নিয়ে সাপের খোলসটা ফ্যাকাসে মুখে ডিঙিয়ে গেলেন। 

    এদিকে ফেলুদার কথা মত আমি হাঁড়িকাঠের লিভারটা টানতেই ওদিকে কুয়োর মধ্যে ঘড়ঘড় শব্দ করে একটা ট্র্যাপডোর খুলে গেল। শিকারপুরের মতই এখানেও নীচে সিঁড়ি নেমে গেছে।

    ট্র্যাপডোরের ওপরে নেহাৎ আলগাভাবেই কিছু আগাছা আর ডালপালা রাখা ছিল যাতে কারো সন্দেহ না হয়। এমনিতেও এটা মন্দির আর সাধুর ছাউনির পেছনে হওয়ায় চট করে কারো চোখে পড়ে না। অন্যদিকগুলো গাছপালা আর আগাছায় ভরা জঙ্গুলে। সাধুবাবা আর ভৈরবী ছিল এদের লোক। ঐ হাঁড়িকাঠ আর ট্র্যাপডোরে নজর রাখত। কেউ বাই চান্স এসে পড়লে ভাগিয়ে দিত,সেদিন যেমন আমাদের দিল, সাপের ভয় দেখিয়ে।

    “চলুন মিঃ দত্ত। এই সিঁড়ি দিয়ে নীচে গেলে আরো অপহৃত বাচ্চাদের সন্ধান পাওয়া যাবে বলে আমার বিশ্বাস। কিন্তু একজন কেউ গুবলুকে নিয়ে বাইরে থাকুক, ওকে নিয়ে ওখানে আবার যাবার কোন দরকার দেখি না। মণি, তুমি রাখতে পারবে গুবলুকে?”

    শুনে মণিদি জটায়ু সাপের খোলস দেখে যতটা লাফ দিয়েছিলেন তার চেয়েও বড় একটা লাফ দিল।

    “বোঝা গেছে! লালমোহনবাবু আপনি?” 
    “হ্যাঁ মশাই, আমি গুবলুকে নিয়ে এখানে থাকি। ঐ কুয়োতে নামার বিশেষ শখ আমার এমনিও নেই…দু চারটে সাপখোপ কি আর নেই ওখানে!”

    আমরা ওখানে নেমে দেখলাম শিকারপুরের মতই সুড়ঙ্গের করিডোর আর দুপাশে অনেক ঘর। শুধু পুরো জিনিসটাই আরো অনেক বড় স্কেলে। একটা ঘরের দরজা হাট করে খোলা। ঢুকে দেখলাম একটা হলের মত বড় ঘর। সেখানে পাঁচ ছটা বেবী কট। তার তিনটেতে তিনটে বাচ্চা…বয়স সব দুই এর নীচে। সঙ্গে লাগোয়া রান্নাঘর, তাতে বেবীফুড ইত্যাদি আছে। বড় ঘরে কিছু খেলনা।
    “যারা এদের দেখাশোনা করত তারা নিশ্চয়ই গোলমাল দেখে পালিয়েছে। কিন্তু কোনদিক দিয়ে বলুন তো?” ইন্সপেক্টর দত্ত বলে উঠলেন।
    “সম্ভবতঃ পেছনের নদী দিয়ে। আসুন দেখা যাক। কিন্তু এই বাচ্চাগুলোর কি হবে?”
    “আমি খবর দিচ্ছি। আরো ফোর্স আসবে। এদের নিয়ে যেতে হবে। তারপর ওদের ফ্যামিলিকে খোঁজার কাজ।”
    বলতে বলতে আমরা সুড়ঙ্গের শেষে এসে দেখলাম দরজা খোলা। বাইরে করলা নদী।

    “চলুন মিঃ দত্ত। এবার পালের গোদাটাকে ধরতে হবে। শঙ্করীপ্রসাদ ওরফে মন্টু গুহকে!”
    “মন্টু গুহ কি ওর পূর্বাশ্রমের নাম নাকি মশাই?”
    “হ্যাঁ। তবে পূর্বাশ্রমকে ও একেবারে ত্যাগ করতে পারেনি।”

    বেরিয়ে এসে আমরা গুবলুকে ইন্সপেক্টরের কোয়ার্টারে কিছুক্ষণ রাখার ব্যবস্থা করে বেরিয়ে পড়লাম।
    “মিঃ মিত্র, আপনি শিওর তো? গুরুজী কিন্তু ভীষণ ইনফ্লুয়েন্সিয়াল।” যেতে যেতে বললেন মিঃ দত্ত।
    “হান্ড্রেড পারসেন্ট। অঙ্কের হিসেবে ভুল হবে না।” ফেলুদা কনফিডেন্ট।

    পুলিশের জিপ চলল জঙ্গলের উদ্দেশ্যে। আমরা কেউ জানিনা কোথায় যাচ্ছি, ফেলুদা ছাড়া ।ম্যাপ দেখে ওই ডাইরেকশন দিচ্ছে। প্রায় ২০ কিলোমিটার গিয়ে ফেলুদা বলল জীপ থামাতে। 
    “দাঁড়ান, একটা জিনিস আগে নিয়ে নিই।” বলে ফেলুদা  জিপের পেছনে রাখা একটা ব্যাগ থেকে একটা বেঁটে, স্টীলের লাঠি হাতে নিয়ে নিল। মনে হচ্ছে ওটা টেলিস্কোপিক, মানে গুটিয়ে রাখা আছে, টানলে আরো বেশ খানিকটা লম্বা হবে। কিন্তু লম্বা হোক বা বেঁটে, একটা স্টীলের লাঠি কি কাজে লাগবে বুঝলাম না। ও কি এবার দেবী চৌধুরানীর দলবলের মত লাঠি নিয়ে মারামারি করবে, রিভলবার ছেড়ে?

    এবার পায়ে হেঁটে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকতে হবে। অন্যদের কথা জানি না, আমার কেবল মনে হচ্ছিল হাতির কথা। জটায়ুর মুখও ফ্যাকাশে।
    “একদিনে মগনলাল, মাতাজী, সাপ আর আবার এখন হাতি…আ্যডভেঞ্চারের বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে তপেশ ভাই!”
    “সাপ তো ছিল না লালমোহনবাবু, আপনি শুধু শুধু ভয় পাচ্ছিলেন।” আমি না বলে পারলাম না।

    “সাপ এখনো শেষ হয়নি লালমোহনবাবু!” 
    সবার আগে এগিয়ে যেতে যেতে বলল ফেলুদা। এত কনফিডেন্ট যেন জানে এক্স্যাক্টলি কোথায় যেতে হবে।

    “আপনি কোথায় যাচ্ছেন বলুন তো মশাই?”
    মুখের সামনে থেকে একটা মাকড়সার জাল সরিয়ে বললেন লালমোহনবাবু।
    “তেঁতুল বটের কোলে/দক্ষিণে যাও চলে/ঈশান কোণে ঈশানী/কয়ে দিলাম নিশানী।” ফেলুদা খোশমেজাজে।
    “তেঁতুল, বট কোনটাই তো দেখছি না”। মণিদি বলল।
    “আর এটা দক্ষিণ দিকও না, পুব দিক”। ইন্সপেক্টর দত্ত বললেন।
    “সে তো বটেই। সূর্যদেব তো পূর্বেই উদিত হন”। 
    ফেলুদার হেঁয়ালী অব্যাহত।

    “রবীন্দ্রনাথের ছড়াটা তো মেটাফরিক্যাল। তবে একটা ভাঙা বাড়ি টাড়ি কিছু পাওয়া যাবে বলেই মনে হয়।” 
    “সে কি মশাই গুপ্তধন? বললেন যে নেই সেদিন?”
    “গুপ্ত তো বটেই, তবে ধন কিনা সেটা তর্কসাপেক্ষ। …মাথা বাঁচিয়ে…, অশ্বত্থের ঝুড়ি নেমে জায়গাটা হাঁটার অযোগ্য হয়ে আছে।”

    “ও মশাই, আপনার অস্ত্রটা সঙ্গে আছে তো?” কাঁপা কাঁপা গলায় বলেন জটায়ু।
    “কোনটার কথা বলছেন লালমোহনবাবু?  একটা তো খুলির ভেতর থাকে, তাই খোলা যায় না!” 
    এখনও দিব্যি ইয়ার্কি করে যাচ্ছে ও।
    “আর কোল্টটাও পকেটে। তবে এটাও আছে…হয়তো সেটাই কাজে লাগবে সবার আগে!” বলে ওর হাতে ধরা বেঁটে স্টীলের লাঠিটা দেখাল ফেলুদা।ওতে কি উপকার হবে আমি বুঝলাম না যদিও।

    আরো কিছুটা এগোতেই জঙ্গল হঠাৎ পাতলা হয়ে গেল। সামনে একটা গোল মত চত্তর। বোঝাই যাচ্ছে জঙ্গলের মধ্যে গাছ টাছ কেটে পরিস্কার করে জায়গাটা বানানো।সেই চত্তরের মাঝে একটা ভাঙা বড় বাড়ি। ছাত টাত বেশীরভাগ ভাঙাচোড়া। থামগুলো ইঁট বের করা , অশ্বত্থ গাছে জড়ানো। চারিদিক ভীষণ শুনশান।
    সামনে ভাঙা দালান। আধভাঙা পাঁচিল গোল যায়গাটাকে প্রায় দুভাগে ভাগ করেছে। এককালে হয়তো এটা বার মহল ছিল। পাঁচিলের ওধারে অন্দরমহলের উঠোন।

    ফেলুদা জানল কি করে এখানে এটা আছে? আর এলই বা কেন এখানে? 
    “আচ্ছা, এবার সাবধানে আসুন আমার পেছনে। তোপসে, লালমোহনবাবু, মণি…তোমরা চাইলে এখানে দাঁড়াতে পার।”
    “আমি যাব তোমার সঙ্গে।” আমরা কেউ কিছু বলার আগেই মণিদি বলে উঠল।
    “আমিও ফেলুদা।”
    “আর আমি কি এই জঙ্গলের মধ্যে সাপের বাসায় একা দাঁড়িয়ে থাকব নাকি? চলুন সবাই মিলেই যাই।” বললেন জটায়ু।

    ফেলুদা এগিয়ে গেল ভাঙা বাড়ির দিকে। দালানের একদিকের দেওয়াল মোটামুটি অক্ষত। সেটার মাঝখানে একটা দরজা। ঠেলা মারতে দেখা গেল বন্ধ। মিঃ দত্ত ছিটকিনিতে একটা গুলি করতেই ওটা খুলে গেল। ঠেলে ঢুকতেই দেখলাম আধো অন্ধকার একটা বড় ঘর। ছাতটা এখানে মাথায় আছে। কিন্তু ঘরে কোথাও কিছু নেই। উল্টোদিকে কেবল একটা বন্ধ জানলা। এবার যাব কোথায়?

    ইন্সপেক্টর দত্তের টর্চের আলোয় দেখা গেল মেঝের  মার্বেলের ওপর বিশাল এক বাজপাখির মাথার ডিজাইন। দেখে ফেলুদার মুখে হাল্কা হাসি খেলে গেল।
    পাখির গলাটা বেড় দিয়ে একটা পাথরে কোঁদা সাপ, যার ফণাটা নীচের দিকে পাখির গলার কাছে।ফেলুদা ভাল করে দেখে সাপের মাথাটা ধরে টান দিতেই ওটা ঘড়ির কাঁটার মত ঘুরতে শুরু করল। ও ফণাটাকে টেনে নিয়ে এল উল্টোদিকে, মাথার ওপরে বাজপাখির দুই চোখের মাঝখানে, ঠোঁটের ওপরে। অমনি পাখির গলার নীচের অংশটা দুভাগে সরে গিয়ে নীচে নামার সিঁড়ি বেরিয়ে এল। 

    এই নিয়ে সকাল থেকে এটা তৃতীয় গুপ্ত দরজা আর সুড়ঙ্গ, ভাবলাম আমি। তবে এই সিঁড়ি বেশ চওড়া আর ঝকঝকে। নীচে নেমে দেখলাম এক বিশাল হলঘর। রাজকীয় ভাবে সাজানো। কিন্তু মিশরীয় ডিজাইনে। মনে হচ্ছিল যেন ক্লিওপেট্রা সিনেমার সেটে আছি।দেওয়ালে বিশাল সব ফ্যারাওদের ছবি, শো কেসে মিশরীয় আনুবিস, নেফারতিতির মাথা—এই সব জিনিস। মেঝেতে ইজিপ্সিয়ান কার্পেট। পালিশ করা কাঠের ফার্নিচার। কিন্তু কেউ কোত্থাও নেই।

    একদিকের দরজা দিয়ে আবার একটা করিডোরে এসে পড়লাম। এটাও দামী কার্পেট, ঝাড়বাতি, পেইন্টিং ইত্যাদিতে বেশ সাজানো গোছানো। দুদিকে ঘর।
    “ইন্সপেক্টর দত্ত, এই ঘরগুলো আপনার লোককে নিয়ে পরে ভাল করে খুঁজে দেখবেন। আমার ধারণা সোনা, ক্যাশ, বিদেশী মুদ্রা সবই পাবেন। তবে আমাদের আগে খুঁজতে হবে এর মালিককে। তিনি এবং তাঁর চেলারা গেলেন কোথায়?”

    এমন সময় করিডোরের অপর প্রান্ত থেকে একটা ঘটঘট আওয়াজ ভেসে এল। আমরা ছুটলাম ওদিকে। আওয়াজ কমেই বাড়ছে। ছুটতে ছুটতে বুঝতে পারলাম করিডোরটা ওপরের দিকে উঠছে ঢালু হয়ে। হয়তো সিঁড়ির বদলে এদিকে করিডোরটাই ঢালু হয়ে উঠে গেছে মাটির লেভেল অব্দি।শেষপ্রান্তে এসে দেখি আর একটা বড় লবির মত ঘর। তার জানলা দিয়ে দেখা যাচ্ছে বাইরের উঠোনে দাঁড়িয়ে আছে একটা হেলিকপ্টার। ওটারই পাখার আওয়াজ কানে আসছিল। 

    কিন্তু ঘরে পা দিয়েই ফেলুদা থমকে গেল। সুতরাং ওর পেছনে আমরাও। আমি ততক্ষণে দেখছি মেঝেতে দুটো লোক পড়ে গোঙাচ্ছে। ফেলুদার আঙুল ঠোঁটের ওপর। 
    ওর চোখ অনুসরণ করে মেঝেতে চোখ পড়তেই মাথাটা ঘুরে গেল। মার্বলের সাদা মেঝেতে খেলে বেড়াচ্ছে হলুদ কালো হিলহিলে লম্বা এক সরীসৃপ। কিং কোবরা।
    পৃথিবীর অন্যতম বিষাক্ত সাপ। সাপটার লম্বা দেহের অংশবিশেষ মেঝেতে, কিন্তু বাকীটা পড়ে থাকা একটা লোকের বুক আর গলায় জড়িয়ে। চেরা জিভ বের হচ্ছে লোকটার গলার কাছে।লোকটা এখনো বেঁচে।

    আমার পেটের ভেতর খালি খালি লাগছে। সেই বাদশাহী আংটির র্যাটল স্নেকের কথা মনে হচ্ছে। ফেলুদার রিভলবার আছে, মিঃ দত্তেরও। কিন্তু ঠিক মত টিপ করে লাগাতে হবে। লোকটার গায়ে না লাগিয়ে কি করে সেটা সম্ভব? কিং কোবরা আ্যটাক করে, বিশেষ করে কোনঠাসা হলে।

    জটায়ু আমার হাত খিমচে ধরেছেন….হাতের তালু ঘামে ভেজা। মিঃ দত্ত থমকে দাঁড়িয়ে। মণিদির মুখও ফ্যাকাশে।কিন্তু ফেলুদা দেখলাম এক পা এক পা করে এগিয়ে গেল।

    কি করতে চাইছে ফেলুদা…ভাবতে ভাবতেই ফেলুদা ওর হাতের ছোট লাঠিটা ক্লিক শব্দ করে খুলে ফেলল। ঐ টেলিস্কোপিক লাঠটা এখন পুরো লম্বা। কিন্তু লাঠি কি ওটা? তাহলে ওটার ডগায় ঐ হাঁ করা ক্লিপের মত ওটা কি? চট করে মাথায় এল ওটা একটা স্নেক ক্যাচিং স্টিক!

    ওটা ফেলুদা বিদ্যুতের মত চালিয়ে দিল কেউটের মাথা লক্ষ্য করে। বিশাল লম্বা সাপটা এখন গলা থেকে ঝুলছে ঐ লাঠির ডগা থেকে। লাঠির অন্যপ্রান্ত ফেলুদার হাতে ধরা।হাতটা ও লম্বা করে বাড়িয়ে ধরে আছে যাতে সাপটা যথা সম্ভব দূরে থাকে।বাইরে হেলিকপ্টারের পাখার শব্দে কান পাতা যাচ্ছে না।

    সাপটাকে লাঠির ডগায় ধরে ফেলুদা ছুটে গিয়ে দরজাটা খুলে দিল। দিতেই ওদিক থেকে ছুটে এল পরপর গুলির শব্দ। গেরুয়া পরা বাবাজী ছুটছেন হেলিকপ্টারের দিকে, ভেতরে বসা পাইলটের হাতে রিভলবার।

    আমরা খোলা দরজা থেকে দেওয়ালের দিকে সরে এলাম। দরজার একদিকের পাল্লার আড়ালে দাঁড়িয়ে ইন্সপেক্টর দত্ত গুলি চালালেন। দরজার পেছন থেকে ভাল লক্ষ্য করতে পারেননি।পাইলটের গায়ে লাগেনি, কিন্তু লেগেছে ওর পাশের কাচে। পরমুহূর্তে আর একটা, এটা এবার পাখাতে। ঝনঝনে ধাতব শব্দ। 

    গুরুজী হেলিকপ্টারে উঠে পড়েছেন। পাইলট এবার পিস্তল ছেড়ে কন্ট্রোলে মন দিয়েছে। গুরুজী নিজের হাতে রিভলবার নিয়ে তাক করতেই একটা গুলি ওঁর হাত থেকে অস্ত্রটা উড়িয়ে দিল। এটা করেছে ফেলুদা। সাপ সমেত লাঠি এখন ওর বাঁ হাতে ধরা, ডান হাতে রিভলবার।

    গুরুজী হাত চেপে ধরে বসে পড়েছেন। ফলে দরজাটা বন্ধ করতে পারেননি এখনো। ফেলুদা আর দত্ত এখন ঐ উঠোনে। কনস্টেবল দুজনও ছুটেছে ওদিকে। কিন্তু পাইলট আবার গুলি চালিয়েছে। এবার ফেলুদার হাতের রিভলবার ছিটকে মাটিতে। ওর হাতেও লেগেছে নিশ্চয়ই, যেভাবে হাতটা ঝাড়ল মুখ কুঁচকে, তাতেই পরিস্কার। এদিকে দত্তের রিভলবারের একটা শুধু খচ শব্দ হল, গুলি শেষ।উনি পকেট থেকে বুলেট বের করছেন,কিন্তু এবার হলিকপ্টার উঠতে লেগেছে, গুরুজীর দিকের দরজা খোলা অবস্থাতেই। 

    হেলিকপ্টার মাটি থেকে প্রায় চার-পাঁচ ফুট উঠে গেছে। ফেলুদা ছুটেছে ওদিকে। কি করবে, এবার কি হেলিকপ্টার ধরে ঝুলবে হিন্দি সিনেমার মত?
    কিন্তু না, হঠাৎ দেখলাম ফেলুদা সাপ ধরা লাঠিটা বাড়িয়ে ধরে, ক্লিপটা আলগা করে সাপটাকে ছুঁড়ে দিল কপ্টারের ভেতরে। 
    পাখার শব্দ ছাপিয়ে ভেসে এল আর্ত চিৎকার। তারপরেই বিকট শব্দ। পাইলট কন্ট্রোল হারিয়ে কপ্টার মাটিতে ক্র্যাশ করেছে। এত অল্প হাইট থেকে অবশ্য তাতে কিছু হয় নি। কিন্তু সাপের ভয়ে গুরুজী আর পাইলট দুজনেই মেরেছে ঝাঁপ। কিং কোবরার সঙ্গে ঐটুকু জায়গায় বন্ধ থাকার থেকে ঝাঁপ মারা ভাল।

    এবার মিঃ দত্ত সাপটার মাথা লক্ষ্য করে গুলি চালালেন । দুবার ছটফট করে স্থির হয়ে গেল ওটা। কনস্টেবল দুজন এরমধ্যে হাতকড়া পরিয়ে দিয়েছে ওদের দুজনকে।

    মণিদি ছুটে গিয়ে ফেলুদার ডান হাতটা ধরে গম্ভীরভাবে দেখছে। রক্ত ঝরছে দেখাই যাচ্ছে।
    “ভাঙেনি থ্যাঙ্কফুলি। ইমপ্যাক্টটা তোমার কোল্টের ওপর দিয়েই গেছে। হাতে জাস্ট ছুঁয়ে গেছে। কিন্তু হাতের চেটো ভর্তি ব্লাড ভেসেলস। ফলে রক্ত পড়বে বেশ….”
    বাঁ হাতে পকেট থেকে রুমাল বের করে ফেলুদা বলল
    “হিন্দি সিনেমার মত তোমার আঁচল ছিঁড়ে পট্টি বাঁধতে না চাইলে এটা নাও।”
    মণিদি আর একটা অগ্নিদৃষ্টি ওর দিকে দিয়ে তাই করল।

    “মিঃ দত্ত, আপনি ওর ঐ সুটকেস দুটো নিয়ে সবার আগে থানায় জমা করুন। ওটার মধ্যে ওর কুকর্মের যাবতীয় প্রমাণ, ডোপিং এবং কিডন্যাপিং র্যাকেটের ডিটেইলস, সুইস ব্যাঙ্কের নম্বর ইত্যাদি পাবেন বলেই আমার বিশ্বাস। সঙ্গে হয়তো বেশ কিছু ডলার, জাল পাসপোর্ট ইত্যাদি। “
    “হ্যাঁ মিঃ মিত্র। আমি এখুনি ওয়াকি টকিতে জেলার সুপারকে ধরব। এত বড় রাঘব বোয়াল জালে পড়েছে। এর আগে প্রত্যেক বারই ওর চ্যালা চামুন্ডারা জেলে গেলেও ও পিছলে বেরিয়ে গেছে।”
    “হুম। এবার যথেষ্ট প্রমাণ আছে। ঘরগুলো সার্চ করলে আরো প্রমাণ পাবেন। মিঃ দত্ত, আপনার প্রমোশন এবার বাঁধা।”
    “জানি প্রদোষবাবু। যদি হয় তার জন্য মূল কৃতিত্ব হবে আপনার। কি বলে যে আপনাকে ধন্যবাদ দেব…”
    “কিছুই বলতে হবে না। মণি, এবার আমার হাত ছাড়। বিশেষ কিছু হয়নি। বরং ভেতরের লোকদুটো বেঁচে আছে কিনা দেখ। আমার দুফোঁটা রক্ত দেখেই হিপোক্র্যাটিক ওথটা ভুলে মেরো না।”

    “আমার সঙ্গে আ্যন্টি ভেনোম নেই”, গম্ভীর গলায় বলে মণিদি ঐ লোকদুটোকে দেখতে চলে গেল।
    “ওরা কি এই গুরুজীর চ্যালা ফেলুদা?”
    “খুব সম্ভব। বিপদের সম্ভাবনা দেখেই গুরুজী ওদের সাপে কাটিয়ে পালানোর তাল করছিলেন। হয়তো ওরা অনেক কিছু জানে আর তাই পুলিশের হাতে পড়া বিপজ্জনক। এদিকে ওদের সঙ্গে করে বেনামে দেশ ছাড়াও যায় না… বিগ লায়াবিলিটিজ। তাই শেষ করে দেওয়াই ভাল। আর ছাড়া সাপ আমাদেরও ঠেকিয়ে রাখবে কিছুক্ষণ।”

    “তুমি কিভাবে কি বুঝলে বলতো? আমি তো টোটালি ব্ল্যাঙ্ক!”

    মণিদি জিজ্ঞেস করল। আ্যন্টি ভেনোম না থাকায় ও অবশেষে আঁচল ছিঁড়েই লোকদুটোকে বাঁধন দিয়েছে। বাঁচবে কিনা হাসপাতাল বলতে পারবে।ওদের আর হাতকড়া পরানো আসামীদের নিয়ে জীপের দিকে এগিয়ে গেছেন মিঃ দত্ত আর কনস্টেবলরা।  আমরা চারজন একটু পেছনে।

    “যাক মণিকঙ্কণা, আপনিও! ভেবেছিলাম আমিই একা কিছু বুঝিনি।”
    “না লালমোহনবাবু, ও আমাকেও কিছুই বলেনি। খালি বলে গেছে এখন এই ছদ্মবেশ, তখন ঐ ছদ্মবেশ! শুধু হুকুম তামিল করে গেছি!”
    “সেটা পুরোটা ঠিক নয় মণি। দরকার মত ভালই ইম্প্রোভাইজ করেছ, বুদ্ধি আর সাহস দেখিয়েছ, নয়তো এতদূর আসতে হত না আমাকে। তবে বাকী ক্ল্যুগুলো প্রায় সবই তোমাদের সামনে ছিল, তাকিয়ে দেখনি। এখন চল, মিঃ দত্তের বাড়িতে গুবলুকে নিতে যাব যখন তখন সব বুঝিয়ে বলছি। উনিও কৌতুহলী!”

    “আমারও একটা কৌতুহল আছে।এভাবে সাপ ধরতে শিখলে কোথায়?” মণিদি বলল।

    “অনেকদিন আগে। আমার ইউনিভার্সিটির জুনিয়র ছিল নাতাশা। ইকোলজি ডিপার্টমেন্টে। ওদের একটা গ্রুপ ছিল। সাপ বেরোলে না মেরে ওরা ধরত। ওই শিখিয়েছিল আমাকে। সেগুলো অবশ্য ঢোঁড়া। কেউটে এই প্রথম।” ফেলুদা বলল।
    “ইন্টারেস্টিং! এই নাতাশার কথা শুনিনি তো আগে? তুমি শুনেছিলে তপেশ?”
    “না মণিদি!”
    “অথচ তোমাকে সাপ ধরা শেখালো….অনেক সময় লেগেছিল নিশ্চয়ই?”
    “বেশী না। দিন তিনেক! ও আমাকে আরো অনেক কিছু শিখিয়েছিল, খুব স্মার্ট মেয়ে। এখন ব্যাঙ্গালোরে আছে।এন সি বি এস ইন্সটিটিউটে।”

    “তা তোমার তো ইকোলজি না, এক ইয়ারেও না…ভাব হল কি করে?”
    “ও তো ব্যাডমিন্টনে আমার পার্টনার ছিল মিক্সড ডাবলসে। গুড হাইট। পাঁচ আট। ফলে সুবিধে হত আমার সঙ্গে খেলতে।বেশীরভাগ বাঙালী মেয়ে তো পাঁচ দুই কি তিন…পার্টনার হলে অসুবিধা !”
    “হুম, আমিও পাঁচ তিন তো! তা দেখতে কেমন এই নাতাশা?”
    “মিস ক্যালকাটা সেকেন্ড রানার আপ। ফ্যাবুলাস!”
    “মশাই চুপ করুন না আপনি!” ফিসফিস করলেন জটায়ু।
    “চুপ করতে বলছেন কেন লালমোহনবাবু? আরো কি কি শিখিয়েছিল ওকে শুনি একটু!”
    “সে তো লম্বা লিস্ট। কাজ কম্ম সব মিটুক তারপর তোমাকে ভাল করে বুঝিয়ে বলব’খন!”

    বলে ফেলুদা মণিদির চন্ডিকা মূর্তি অগ্রাহ্য করে একটা চারমিনার ধরিয়ে লম্বা টান দিল।
  • &/ | 151.141.85.8 | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০১:৩৫517767
  • ভাইপো ভাইঝি'র সম্ভাবনা তৈরী হল তোপসের। ঃ-)
  • jsl | 165.1.172.197 | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০১:২৯517766
  • ইয়ে, মানে এঁরা তো জানতাম সোশ্যাল কনটেন্ট ছাড়া এক টিপ নস্যিও নেন না - সেশ পর্যন্ত ফেলুদা?! 
    অবশ্য ফেলুদার বিয়ে দিলে কিছু সোশ্যাল কনটেন্ট তৈরি হবার সম্ভাবনা থাকতে পারে।

    ওদিকে পাঠক সমাজ খচে বোম - নেতাজীর বিয়ের পরেই ফেলুদার বিয়েও ভক্তিগদগদ বাংলা বাজারকে পুরো ছাপরা হিলে লাল বালিয়া হিলে লাল করে দিয়েছে।

    কিন্তু আমি ভাবছি বাবুবাবু মামলা করবেন কিনা।
    আমি একটা বাংলা সিরিয়েল দেখি, অনিয়মিত - নিম ফুলের মধু। হ্যাঁ হ্যাঁ, জানি, ভয়াবহ মিসোজিনি কুরুচিকর ব্যাপার কিন্তু বাংলা সিরিয়েলের পাশেও কাউকে তো দাঁড়াতে হবে। তো সেখানে অন্যতম প্রধান পুরুষ চরিত্রের অতি পজেসিভ মা তথা অন্যতম প্রধান খল নারী চরিত্র বলেন আমার বাবু
    আমার খালি মনে হয় এরা কি সাঁট করে আওয়াজ দিচ্ছে?
  • এম এম | 2409:40e7:c:8070:309f:22ff:fe74:8ea5 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২২:১৮517765
  • আরে আরে  ইয়ে কিতাব- e,   গুরুভা-e আছে না? 
     
    গুরুভা-e নে ফেলুবাবুকা শাদি লাগা দিয়া, হামকো বুলায়া নহি, ইয়ে তো বহুত না-ইনসাফি হুয়া গুরুদেভজী!   
     
  • দীপ | 42.110.139.53 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:৪৭517764
  • অনলাইন বাজার!
  • copy pasta | 37.235.49.61 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:০৪517763
  • পর্ব ২
    স্ত্রী চাকরি করলে সন্তানের হক আদায় হয় না...। দেখা যাক, কথাটা ভুল না ঠিক?
    [ক]
    সুতরাং গত পর্বে আমরা দেখেছি, কীভাবে ও কেন একই পরিমাণ স্ট্রেস পুরুষের চেয়ে নারী শরীর ও মনের উপর বেশি প্রভাব ফেলে। আবার একটু স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।
    নারীর নিজের ক্ষতি :
    - পুরুষের চেয়ে স্ট্রেসে থাকা একজন নারীর শারীরিক ক্ষতি বেশি হয়, মানসিক অসুখও বেশি হয়। [Stress and your health, Office on Women’s Health, U.S. Department of Health and Human Services]
    - স্ট্রেসের প্রভাবে লক্ষণগুলো নারীদের বেশি প্রকাশ পায়। কারণ, একই স্ট্রেসে নারীদের স্ট্রেস-হরমোন কর্টিসল বেশি বের হতে থাকে’(Verma, 2011)
    উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, টেনশন-জাতীয় মাথাব্যথা ও মানসিক রোগগুলো নারীদের বেশি হয়। (Hammen, 2009) এবং কমবয়েসী নারীদের হার্টের সমস্যাগুলো মূলত হার্টের ওপর এই স্ট্রেসের কারণেই হয়। (Vaccarino, 2014)
    এবং আমরা আরও দেখেছি, পুরুষের তুলনায় একে তো তাদের স্ট্রেস সামলানোর শারীরিক প্রক্রিয়াগুলো দুর্বল। তার উপর আবার পুরুষের তুলনায় তারা অধিক স্ট্রেসে এক্সপোজড। নারীদের এই অতিরিক্ত স্ট্রেসের উৎস আমরা দেখেছি। আবার বলছি। নারীর এই অতিরিক্ত স্ট্রেসের উৎস কর্মস্থল :
    - অফিসে ও বাসায় নারীর ‘দ্বৈত ভূমিকাই’ তাদের কর্মস্থলে পুরুষের চেয়ে বেশি স্ট্রেস অনুভব করার মূল কারণ। (Prasad, 2016)
    - পুরুষের মাঝে কাজ করতে সে বেশি স্ট্রেস ফিল করে, সেখানেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ২০১২ সালে ২২,০০০ নারীর ওপর এক রিসার্চে এসেছে, যেসব নারীদের চাকুরি-কেন্দ্রিক স্ট্রেস (job-related stress) বেশি, তাদের ৪০% বেশি সম্ভাবনা হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক (cardiovascular event) হওয়ার [Alexandra Sifferlin (August 25, 2015) Women in Male-Dominated Jobs Have More Stress, TIME]
    - নারী কর্মকর্তারা বেশি স্ট্রেস, উদ্‌বেগ ও মানসিক সমস্যার সম্মুখীন [Why Women Feel More Stress at Work (Harvard Business Review 2016)]
    - ব্রিটেনের মতো দেশেই ৭৯% নারী কর্মক্ষেত্রের স্ট্রেসে ভুগছেন, ৭৮% নারী কর্মজীবীর ঘুমে সমস্যা, মোটের ওপর ৮৭% নারী চাকুরি নিয়ে স্ট্রেসে আছেন বলে জানিয়েছেন। [Louise Chunn (Mar 26, 2019) Women Are at Breaking Point Because of Workplace Stress : Wellbeing Survey from Cigna, Forbes.com]
    কিন্তু গর্ভকালে এই অতিরিক্ত স্ট্রেসটা সন্তানের জন্য বিপুল ক্ষতি নিশ্চিত করে। স্ট্রেসের কারণে মায়ের হৃদস্পন্দন থেকে শুরু করে স্ট্রেস হরমোন, অতিমাত্রায় অক্সিডেন্ট তৈরি, রক্তচাপের বৃদ্ধি সকল জিনিস গর্ভস্থ শিশুর গঠন ও বৃদ্ধিতে নেগেটিভ প্রভাব ফেলে। যেমন: [University of Missouri-Columbia. (2016, June 7). Stress exposure during pregnancy observed in mothers of children with autism : More research needed to understand gene-stress interaction. ScienceDaily.]
    - গর্ভকালীন নানান জটিলতা যেমন আগে আগেই ব্যথা ওঠা, আগে আগেই বাচ্চা হয়ে যাওয়া, কম ওজনের বাচ্চা, প্রি-এক্লাম্পশিয়া, গর্ভকালীন ডায়বেটিস ইত্যাদি এখন বেশি হচ্ছে (Coussons-Read, 2013) এই স্ট্রেসের দরুন।
    - আগের চেয়ে বাচ্চাদের জন্মগত ত্রুটিও বেশি হচ্ছে। বাচ্চা হওয়ার পরও বাচ্চার সমস্যা রয়ে যাচ্ছে তার গর্ভকালীন স্ট্রেসের ফল হিসেবে। (Carmichael, 2007) বাচ্চার সম্পর্ক স্থাপনে সমস্যা, খিটখিটে মেজাজ, আবেগিক সমস্যা, অ্যাজমা, অ্যালার্জি, কম রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা, বুদ্ধিবিকাশে বাধা, স্মৃতিস্বল্পতা ইত্যাদি। (Coussons-Read, 2013)
    - অটিজম রোগাক্রান্ত শিশুও বেশি জন্মাচ্ছে এই গর্ভকালীন স্ট্রেসের কারণে। (Varcin, 2017)
    সিজারের জন্য শুধু ডাক্তারদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমাদের লাইফস্টাইল সিজারের ইন্ডিকেশন (প্রয়োজন) নির্মাণ করে, প্রসবকে জটিল করে ফেলে। এবং এই ইস্যুগুলো প্রতিরোধযোগ্য ছিল। নারীরা পুরুষের সাথে প্রতিযোগিতায় না নামলেই এই অঘটনগুলো প্রতিরোধ সম্ভব। বিশেষত ১ম ট্রাইমেস্টার, যখন সন্তানের মূল গঠন হচ্ছে, তখন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে মেয়েরা যায় না। হরমোনের ওঠানামায় অভ্যস্ত হয়ে ওঠে না শুরুর সময়টা। ফলে স্ট্রেস বেশি পড়ে, যেসময় তার বিশ্রাম বেশি প্রয়োজন ছিল। অনেক মেয়ে সন্তান হবার পর মাতৃত্বকালীন ছুটিতে যায়। ততদিনে যা হবার হয়ে গেছে। শরীরের বিরুদ্ধে গিয়ে কর্মঘন্টা চালিয়ে যাওয়া, কর্মস্থলে স্ট্রেস-পলিটিক্স-প্রেসার পুরুষের সমানই তাকে সহ্য করতে হয়। পুরুষকে টেক্কা দিতে তারা সেটা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে করে শরীর সায় না দিলেও। এভাবেই অনাগত সন্তানের হক নষ্ট হয় মায়ের উচ্চাভিলাষের দ্বারা।
    [খ]
    এবার আগত সন্তান। মানুষের বাচ্চা গরুছাগলের বাচ্চার মত না। জন্তু-জানোয়ারের বাচ্চা হয়েই দৌড় দেয়। আর মানুষের বাচ্চা? কত দুর্বল, কত অসহায় থাকে ৩-৪ বছর পর্যন্ত, তাই না? এমনকি বান্দরের বাচ্চার সাথেও মানুষের বাচ্চার তুলনা চলে না। বাঁদরের বাচ্চাও এটলিস্ট মাকে আঁকড়ে ধরে রাখতে পারে। মানুষের বাচ্চার সেটুকু শক্তিও থাকে না। মানুষের বাচ্চার তুলনা করতে পারেন ক্যাঙ্গারু ইত্যাদি মারসুপিয়াল প্রাণীদের বাচ্চার, যারা অপরিণত হয়ে তৈরি হয়। এজন্য থলে দেওয়া থাকে মায়ের পেটে। বা ইঁদুর-কুকুরের বাচ্চার মত, যাদের চোখ ফোটে না। মানুষের বাচ্চারও হবার পর বেশ কিছুদিন সময় লাগে ক্লিয়ার দেখতে। তাই তার আরও বেশি দরকার মা-কে। দরকার আরও ক্লোজ টাচ। আমরা দেখব এই সময়টা দাদী-নানী-বুয়া দিয়ে কাজ চালানো যায় কিনা।
    ১৯৮৬, ১৯৮৮ ও ১৯৯০ সালে পর পর ৩ টি রিসার্চের ফলাফলের উপর University of London-এর প্রোফেসর Jay Belsky সিদ্ধান্তে আসেন: বাচ্চার ১ম বছরে যেসব মায়েরা জবে থাকে ফুলটাইম, সেসব বাচ্চার ৩ বছর, ৪ বছর ও গ্রেড-১ এ বুদ্ধিবৃত্তিক গ্রোথ তুলনামূলক কম। এবং এসব মায়েদেরও ডিপ্রেশন হবার হার ‘বেকার’ মায়েদের চেয়ে বেশি।
    সহজ করে ওনার ফাইন্ডিং-গুলো বলি: ছোটবয়েস থেকে দীর্ঘসময় বাচ্চাকে মা ছাড়া অন্য কারও কাছে রেখে পাললে (early and extensive nonmaternal care), পরবর্তীতে পিতামাতার সাথে সন্তানের দূরত্ব বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। সন্তানের ভিতরে রাগ-জেদ ইত্যাদি আগ্রাসী স্বভাব বৃদ্ধি পায়। বাচ্চা বয়সে, স্কুলে যাবার আগের বয়সে এবং প্রাথমিক ক্লাসগুলোতে কাঙ্ক্ষিত স্বাভাবিক বিকাশ হয় না (noncompliance)।
    পুঁজিবাদী-নারীবাদী মতের বিরুদ্ধে গেল তো? এরপর বেচারাকে ধুয়ে দেয়া হল। কেচে নিঙড়ে রোদে মেলে দেয়া হল। তারপরও ২০০১ সালে Journal of Child Psychiatry and Psychology-তে তিনি নিজ মতের উপর অটল থাকেন।
    আগ্রহীরা মূল পেপার দেখতে পারেন:
    Belsky J. Emanuel Miller lecture developmental risks (still) associated with early child care. J Child Psychol Psychiatry. 2001 Oct;42(7):845-59.
    Brooks-Gunn, J., Han, W. J., & Waldfogel, J. (2010). First-Year Maternal Employment and Child Development in the First Seven Years. Monographs of the Society for Research in Child Development, 75(2), 7–9.
    [গ]
    অনেকে বলেন: বাবার দায়িত্বটা কি? সন্তান কি বাবার নয়? মা-ই কেন স্যাক্রিফাইস করবে? সন্তান অবশ্যই দুজনের। এবং সন্তানের স্বার্থেই বাবা বাইরে বাইরে কাজ করবে এবং মা সন্তানের সাথে লেপ্টে থাকবে ঘরে। এটাই শিশু-নারী-পুরুষের বায়োলজি। এবং বায়োলজির স্রষ্টা (ইভোল্যুশন মনে করলে করেন) সেই দায়িত্বই তাদের বণ্টন করেছেন যেটা বায়োলজির অনুকূল। এখানে কোনো কম্প্রোমাইজ, কোনো স্যাক্রিফাইস-এর প্রশ্নই নেই। মা মায়ের কাজটা করছে, বাবা বাবার। এখানে কোনো স্যাক্রিফাইস-টাইস নেই।
    রিসার্চ বলছে— মাতৃস্নেহ বিষয়টা সরাসরি অক্সিটোসিন হরমোনের সাথে রিলেটেড (Babchuk, 1985), যা একজন নারীর শরীরে থাকে অনেক বেশি। প্রসবের সময় জরায়ুর ক্রমাগত সংকোচনের ফলে ব্রেইন থেকে বন্যা-জলোচ্ছ্বাসের মত অক্সিটোসিন হরমোন নির্গত হতে থাকে। আবার চক্রাকারে এই হরমোন উত্তরোত্তর জরায়ু সংকচন বাড়াতে থাকে যে পর্যন্ত না বাচ্চা বের হচ্ছে। এই হরমোনের সাইকো-ইফেক্ট হল: বাচ্চার প্রতি মায়া। হরমোন নিঃসরণ চলতেই থাকে বাচ্চার স্তনপানের প্রতিটি চোষণে। অর্থাৎ মা-শিশুর টান কেবল মানসিক না। টান শরীরে, রক্তে, হরমোনে। এজন্য মিলিয়ে নিন:
    - বাচ্চার কান্নায় মায়ের অক্সিটোসিন হরমোনে বান ডাকে, ফলে মায়া উথলে ওঠে, মা ব্যাকুল হয়ে ওঠে।
    - বাচ্চাকে ছাড়া মায়ের খালি-খালি লাগে, মনে হয় শরীরের একটা অঙ্গ নেই।
    - বাচ্চার অস্ফুট কান্না-নড়াচড়া-চেহারার ভঙ্গি-কান্নার অর্থ মা বুঝতে পারে।
    - কর্মস্থলে গিয়ে বাচ্চার টান, আবার বাচ্চার কাছে থাকলে কর্মস্থলের টেনশন মাকে একটা দ্বন্দে ফেলে দেয়। না এটা হয়, না ওটা। জবের প্রোডাক্টিভিটিও কমে, ওদিকে মায়ের কাজটাও আধখেঁচড়া হল।
    এখানে কারও দোষ নেই। এটাই আমাদের বায়োলজিক্যাল নকশা। মেয়েদের ব্রেইনম্যাপ এভাবে হয়ে ওঠে। একে অস্বীকার করলেই ব্রেইনম্যাপ বদলে যায় না। ছেলেদের ব্রেইনম্যাপ এমন না। একজন বাবা বড়োজোর সন্তানের সাথে খেলতে পারে। ছেলেদের ব্রেনের নকশা সবকিছুকে ‘অবজেক্ট’ হিসেবে নেয়, বাচ্চাকেও সে একটা খেলনার মতোই মনে করে। বড়োজোর কষ্ট করে কয়েকদিন কিছু যত্ন নিতে পারে, যা বাপকে শিখিয়ে পড়িয়ে দিতে হয়। কিন্তু মা-শিশু যে স্পেশাল বন্ধন, সেটা মেয়েদের শিখিয়ে দিতে হয় না। এগুলো সব মেয়েদের ব্রেনের নকশায়ই থাকে।
    ছেলেদের টেস্টোস্টেরন হরমোন এই ‘বাচ্চা-পালা’-র ঝোঁক কমিয়ে দেয়, যা বাবাদের বেশি (Udry, 2000)। উদাহরণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, একজন কর্মজীবী বাবা নিজের ছেলের সাথে যে পরিমাণ সময় দিয়েছে, কর্মজীবী দাদা হবার পর নাতিকে সময় দেয় বেশি। কারণ তার টেস্টোস্টেরন এখন পড়তির দিকে।
    সুতরাং সন্তানের মায়ের প্রয়োজন বাবা-বুয়া-দাদী-নানী দিয়ে হবেনা, এটা বিজ্ঞান বলছে। কিছু মানুষ আছে যারা ধর্মও মানে না, বিজ্ঞানও মানে না। কৌন হ্যায় ইয়ে? কাঁহা সে আতে হ্যায় ইয়ে লোগ?
    [ঘ]
    অনেক মা বুকের দুধ বের করে রেখে কর্মস্থলে যান। ভাবেন, দায় শেষ। দেখা যাক।
    ১.
    বুকের দুধের উপাদানগুলোর যে অনুপাত, পুরো দিনের নানা অংশে তার বৈচিত্র হয় শিশুর প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখে (circadian variation)। সন্ধ্যার দুধে ফ্যাট ও ট্রিপ্টোফ্যান বেশি থাকে। এমনি করে প্রোটিন-শর্করা-ক্যালসিয়াম-ফসফরাস-ম্যাগনেসিয়াম-আয়রন-নিউক্লিওটাইড- কর্টিসল – মেলাটোনিনের উঠানামা হয়। একেক সময় শিশুর একেক লেভেলের চাহিদা থাকে যা ঐ সময়কার কম্পোজিশন ঠিক করে দেয়। আমি আসলে জানিনা ৯টা-৫টা ডিউটি করলে শিশুর এই চাহিদা কীভাবে মেটে? অনেকে তো চাকরির জন্য ২ বছরের আগেই দুধ ছাড়িয়ে দেন। বাহ।
    ২.
    অনেক মা কমপ্লেইন করেন, বাচ্চা যথেষ্ট দুধ পায় না বা দুধ উৎপাদন কমে গেছে। নানান কারণেই হতে পারে। আমাদের আলাপের সাথে প্রাসঙ্গিক যেটা সেটা হল, যখন স্তন দুধে পূর্ণ থাকে তখন দুধ উৎপাদনের গতি কমে আসে। খালি অবস্থায় দুধ তৈরি হয় বেশি বেশি। মানে, মা যত বেশি বার বাচ্চাকে খাইয়ে খালি করবে, ততবেশি দুধ উৎপাদন হবে। লম্বা সময় না খাওয়াতে খাওয়াতে এটাই স্বাভাবিক ফেনোমেনা যে, প্রোডাকশন কমে যাবে। ২ বছরব্যাপী যে পরিমাণ দুধ বাচ্চার জন্য জরুরি ছিল, তা সে আর পেল না।
    ৩.
    আমরা যদি খরগোশের দুধের উদাহরণ দিই, মা-খরগোশের দুধে চর্বি ও প্রোটিনের ঘনত্ব এতটাই বেশি থাকে যে, বাচ্চা-খরগোশকে দিনে একবার দুধ পান করালেই চলে। অন্য স্তন্যপায়ীদেরও ঘনঘন দুধ পান করানোর প্রয়োজন পড়ে না। তবে মানুষের ব্যাপারটি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। যেহেতু মানুষের বুকের দুধে পুষ্টি কম থাকে এবং খুব দ্রুতই হজম হয়ে যায়, ফলে মায়ের তার শিশুকে দিনে কয়েকবার (কমসে কম দিনে ৮-১২ বার বা তারও বেশি হলে ভালো) বুকের দুধ পান করাতে হয়। কারও কারও মতে প্রতি ২০ মিনিটে একবার। কেননা দ্রুত হজম হয়ে যায়।
    মানুষের দুধে ফ্যাটের পরিমাণ ৩-৫%, যেখানে অন্যান্য প্রাণীর ৪০% এর উপরে। সুতরাং আমরা এমন একটা প্রজাতি যাদের বেশি ঘন ঘন দুধপানের দরকার পড়ে। এভাবেই আমরা তৈরি। এজন্যই বারংবার দুধপান করানোর গুরুত্ব এতো বেশি। যত বেশি দুধপান করানো হবে, মায়ের তত বেশি প্রোডাকশন হবে। তত বেশি ফ্যাট বাচ্চা পাবে, যা তার মস্তিষ্ক বিকাশের জন্য জরুরি।
    [Emma Pickett, Guest blog: breastfeeding - the dangerous obsession with the infant feeding interval, www.unicef.org.uk]
    এই ব্যাপারটির গুরুত্ব সম্পর্কে ইনস্টিটিউট অফ হিউম্যানিস্টিক সাইন্সের (Institute of Humanistic Science) মনোবিজ্ঞানী ড. জেমস ডাব্লিউ. প্রেসকট (James W. Prescott PhD) বলেন,
    "আমরা কেবল মানুষের মধ্যেই দেখতে পাই, জন্মগ্রহণের সময় নবজাতককে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে এবং মা তার সন্তানকে স্তন্যপান করাচ্ছেন না। আমরা আবিষ্কার করেছি, লাখ লাখ বছর বিবর্তনের ফলে গঠিত দৈহিক ও মনোদৈহিক গঠনকে লঙ্ঘন করে এ জাতীয় আচরণগুলো। ফলে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে নবজাতককে তার শৈশব-কৈশোর-তারুণ্যে এক ভয়ানক মূল্য চুকাতে হচ্ছে— যেমন বিষণ্ণতা, নিয়ন্ত্রণহীন আবেগ, সহিংসতা এবং মাদকসেবন"।
    [Prescott, James W. (Spring 1997). Breastfeeding: Brain Nutrients in Brain Development for Human Love and Peace. Touch The Future Newsletter.]
    আমি আসলে জানিনা, বিনা প্রয়োজনে, নিজ আত্মতৃপ্তির জন্য সন্তানকে বঞ্চিত করা মায়েরা কীভাবে এই পরিণতি জাস্টিফাই করবেন। (বাধ্য হয়ে করা বা উম্মাহর খেদমতের জন্য করাটা একটা সাউন্ড জাস্টিফিকেশন। মেয়েদের চাকুরি কেমন হওয়া দরকার, সেটা নিয়ে আলাপ করবো সামনে ইনশাআল্লাহ)
    আরও বহুকিছু আছে। মায়ের গন্ধ, মায়ের টাচ, মায়ের হার্টবিট, মায়ের স্বর শিশু মিস করে। এবং শিশুর ভবিষ্যত মনোজগত গঠনে এর ভূমিকা কী, তার ব্রেইনের সাইন্যাপস (কানেকশন) তৈরিতে এসবের কী রোল, তা নিয়ে আগ্রহীরা অনুসন্ধান করতে পারেন।
  • দীপ | 42.110.147.46 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:৩৬517762
  • আসলে ঐ জানোয়ার গুলোই নামে বেনামে এসব করে বেড়ায়!
  • দীপ | 42.110.147.46 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:৩৫517761
  • সব ছাগু আর তার পোষ্য সারমেয়রা দলবেঁধে ছুটে আসছে!
    এসময় অবশ্য কেউ প্রতিবাদ করেনা! 
    অন্যসময় নাকি ট্রোলিং হয়!
  • কামাল পাশা | 65.49.2.38 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:২৯517760
  • তোর কটা ছাগুর সাথে যোগাযোগ আছে রে দীপচাড্ডি?  
  • দীপ | 42.110.147.46 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:০৮517759
  • চাড্ডি আর ছাগু ঠিক নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রেখে চলে।
  • দীপ | 42.110.147.46 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:০২517758
  • "আমি আজ পর্যন্ত যতগুলো সংঘি দেখেছি সবাই সৌদি গিয়ে কাজ করতে চায় | সৌদি মেয়ে বিয়ে 
    করতে পারলে এরাই সবার আগে কলমা পড়বে | "
     
    চাড্ডি ও ছাগু; এক‌ই মুদ্রার এপিঠ ও ওপিঠ। আর এদের একমাত্র দাওয়াই কামাল পাশা!
  • Bratin Das | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:২৩517757
  • এলসিএম দা ,<FIR> 
    টা দারুণ হয়েছে 
  • Joshita | 194.56.48.107 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:২১517756
  • জুরিখ ক্ষমা চাইল শেষ পর্যন্ত।

    Die Stadt Zürich entschuldigt sich bei den Opfern fürsorgerischer Zwangsmassnahmen und Fremdplatzierungen vor 1981
    Empfehlen
    Kommentieren
    Drucken
    62
    Merken
    Mitteilungen des Stadtrats | Erstellt am 20.09.2023 16:00

    Fürsorgerische Zwangsmassnahmen und Fremdplatzierungen vor 1981 sind eines der dunkelsten Kapitel der Schweizer Sozialgeschichte. Die Stadt Zürich entschuldigt sich bei allen Opfern, die durch Stadtzürcher Behörden Unrecht erlitten haben.

    ​Im Zusammenhang mit fürsorgerischen Zwangsmassnahmen und Fremdplatzierungen vor 1981 wurde auch durch Stadtzürcher Behörden Unrecht getan. Kinder und Jugendliche wurden in Heimen weggesperrt, fremdplatziert und als billige Arbeitskräfte ausgebeutet. Frauen und Männer kamen zur «Nacherziehung» in Arbeitsanstalten oder wurden gegen ihren Willen in psychiatrische Kliniken eingewiesen. «Liederliche» und «arbeitsscheue» Menschen wurden entmündigt und sterilisiert. Die Möglichkeit, gerichtlich gegen diese staatlichen Massnahmen vorzugehen, blieb den Betroffenen verwehrt.

    Entschuldigung, Solidaritätsbeitrag und Aufarbeitung
    Die Stadt Zürich stellt sich diesem düsteren Kapitel ihrer Geschichte und wird die spezifische Rolle der Stadtzürcher Behörden in den kommenden Jahren im Rahmen einer Forschungsarbeit umfassend aufarbeiten. Zusätzlich zu dieser historischen Aufarbeitung ist es dem Stadtrat wichtig, das Unrecht, das den Opfern von fürsorgerischen Zwangsmassnahmen und Fremdplatzierungen vor 1981 angetan wurde, anzuerkennen und die Betroffenen zu unterstützen. Dazu wurde eine gesetzliche Grundlage für die Ausrichtung eines kommunalen Solidaritätsbeitrags in Höhe von 25 000 Franken pro Person geschaffen, der seit Anfang September 2023 auf Gesuch hin ausgerichtet wird. Darüber hinaus werden im Rahmen des Projekts auch Massnahmen zum Gedenken an das Leid der Betroffenen erarbeitet.

    ​Den Auftakt zur Auseinandersetzung mit dem Thema bildet eine Veranstaltung unter Beteiligung von Betroffenen heute Nachmittag, 20. September 2023. An dieser Veranstaltung wird sich der Stadtrat, vertreten durch Stadtpräsidentin Corine Mauch und Sozialvorsteher Raphael Golta, bei den Betroffenen für das Unrecht, welches ihnen im Zusammenhang mit fürsorgerischen Zwangsmassnahmen und Fremdplatzierungen vor 1981 angetan wurde, entschuldigen sowie über den kommunalen Solidaritätsbeitrag und weitere Massnahmen informieren.

    Im Namen des Stadtrats​
    Corine Mauch, Stadtpräsidentin​
    Raphael Golta, Vorsteher des Sozialdepartements​
  • lcm | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:২৮517755
  • আমি জানি, আমি জানি - এফআইআর খাওয়া মানে হল ফ্রিজের ঠান্ডা খাবার খাওয়া, এফআইআর হল ফুড ইন রেফ্রিজারেটর।
  • test | 2607:fb91:140e:8383:e829:36cd:444:f351 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০২:৩৩517754
  • Test
  • দীপ | 2402:3a80:a0e:b680:0:60:b3e1:da01 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০১:১৬517753
  • দীপ | 42.110.138.7 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০০:০৬517752
  • বাংলাদেশের অসহায় মানুষের হয়ে কথা বললে অনেকের খুব সমস্যা হয়!
  • র২হ | 2607:fb91:dca:1412:f5da:349b:21c1:d26 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০০:০৪517751
  • আচ্ছা এই এফআইআর খাওয়ার ব্যাপারটা কী? অনুমান করি এসব অনেক পুরনো ব্যাপার, কিন্তু বিশদ জানি না। কিছু পুরনো ঝামেলার কথা জানি কিন্তু এটা নিয়ে একেবারে অন্ধকারে। অন্তত কবেকার কথা তা জানলেও পুরনো ভাটের আর্কাইভে গিয়ে একটু খুঁজতে পারি।
  • :|: | 174.251.162.60 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:৪২517750
  • সাতটা ৫৯: "নেতাজীর ব্যাপারে" আমার জন্য বলার থেকে শোনা এবং পড়া ভালো। এটুকুমাত্র বুঝি। সে আর টইতে কি লিখবো! 
  • &/ | 107.77.236.125 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:৩১517749
  • হুতেন্দ্র, সেই এফআইর খাওয়া নিননিছাটা আবার এসেছে, ঘুর ঘুর করছে 
  • &/ | 151.141.85.8 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৭:৫৯517748
  • চতুর্মাত্রিক, নেতাজীর ব্যাপারে আপনার কী মনে হয়? টইটাতেও বলতে পারেন। ঃ-)
  • :|: | 174.251.162.60 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৪:০০517747
  • আচ্ছা "আসন" লেখা কি খুবই কষ্টসাধ্য? যেখানে আফটার অল ওনাদের রক্ষণ বা সংরক্ষণ কোনওটাই করা হচ্ছে না! 
  • :|: | 174.251.162.60 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৩:৫৭517746
  • নটা ৩৪: ওদের এক নেতা এক নাইকাকে বিয়ে করছেন। সেই সুবাদে মাঝে মধ্যেই দলের নাম কাগজে আসে। দেখি -- সুন্দর সুন্দর ফটো। 
  • !? | 2405:8100:8000:5ca1::1b3:24ce | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২৩:৫৪517745
  • বিলে সংশোধন চেয়ে বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন মাত্র দু’জন। ‘অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই- ইত্তেহাদুল মুসলিমিন’ (এআইএমআইএম)-এর প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি এবং তাঁর দলেরই সাংসদ ইমতিয়াজ জলিল।
  • aranya | 2601:84:4600:5410:a17d:b6e1:d3fb:a6e8 | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২৩:১৭517744
  • এই বিলটা বিরোধীরাও সমর্থন করেছে 
  • যোষিতা | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২১:৩৬517743
  • মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ হয়ে গেল।
  • Name | 24.206.65.29 | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:২৮517741
  • কী হলো সত্যি জানতে চাইলে অনেক উপায় আছে। ফোড়ন কাটার হলে কাটুন। ঠিক করে লেখাও যায় অবিশ্যি, "আপ পার্টি"র নামে অলরেডি পার্টি আছে, সে সব খেয়াল না করে উটের পাকস্থলী করলেই হবে? 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত