এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ছেলেটা আবার পালিয়েছে

    ranjan roy
    অন্যান্য | ১৪ আগস্ট ২০১০ | ৪৭২১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • M | 59.93.211.21 | ১৪ আগস্ট ২০১০ ২০:৫৪462410
  • কে পালালো? কি মুস্কিল! ও রঞ্জনদা?
  • ranjan roy | 122.168.105.202 | ১৫ আগস্ট ২০১০ ০০:৫০462421
  • ছেলেটা আবার পালিয়েছে। এই নিয়ে কতবার হল?
    ঘরে কেন যে মন টেকে না! ঘর ভর্তি লোক, সব কিছু ঠিক ঠাক চলছিল।
    তবু ওর মন উড়ু উড়ু! কেন?
    কে বলতে পারে! উত্তর একটাই ও এইরকমই।
    সেই ছোটবেলায় বোধ হয় ক্লাস ফোর এ পড়ে। হটাৎ একদিন পার্কসার্কাসের এজমালি বাড়ি থেকে হাওয়া।
    দেশ ভাগের পর সার্কাস মার্কেট প্লেসের তিনকামরার ফ্ল্যাটে বাইশ জন লোক। রান্নাঘরের লাগোয়া ঘরটিতে তপন, দিদি গৌরী মা ও বাবা।
    বাকি দুটো কামরায় দাদু-দিদিমা-দাদুর মা, মামা-মামীর আর তাদের কুচোকাচাদের দল। সেটা বিস্তৃত হয় সিঁড়ির ভাঁজে, ছাদের চিলে কোঠায়।
    তপনের মন টেঁকেনা। ছাদে গিয়ে দেখএ মামাবাড়ির সঙ্গে কয়লা ভাগাভাগি হয়ে গেছে। ওদের রান্নার কয়লা আর মামাদের রান্নাঘরের কয়লা কিছু আধলা ইঁট দিয়ে ঘিরে হিন্দুস্তান-পাকিস্তান করে দেয়া হয়েছে।
    রান্নাঘর একটাই। কিন্তু উনুন দুটো, পাশাপাশি। তবে কয়লা আলাদা কেন?
    সাতসকালে তপন নেই। মা ডেকে ডেকে সারা। ছাদের কোণায়, পাশের বাড়িতে , বাজারে, চেনা দোকানে কোথাও নেই।
    কোথায় আর যাবে! মামারা নিশ্চিন্ত, পার্কসার্কাসের ময়দানে খেলতে গেছে, বা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে । বিকেল নাগাদ ফিরে বকুনি খাবে আর কি, বা রামধোলাই। কিন্তু তপন ফিরল না।
    মা খাওয়া ছেড়ে বিছানা নিলেন।
    এদিকে তপন চড়ে বসেছে শেয়াল্‌দা' স্টেশনের রেলগাড়িতে। পকেটে পাঁচ টাকা।১৯৫৪তে পাঁচটাকায় ছোট ছেলে রাজা-মহারাজা হবার স্বপ্ন দেখে।
    এক আনায় একডজন চাঁপা কলা কিনে মহানন্দে খেতে খেতে তপনের চোখ যায় উল্টোদিকে মুখোমুখি বসা এক গোঁফ-গালপাট্টার মালিক পাগড়ি পরা দশাসই চেহারার দিকে। খোশমেজাজে ভাবে রাষ্ট্রভাষায় আলাপ করলে কেমন হয়?
    --- তুম কাঁহা যায়েগা?
    বাচ্চাছেলের মুখে বাপের বয়সী ভদ্রলোকের জন্যে "তুম' সম্ভাষণ শুনে গালপাট্টাধারী বিরক্ত হয়। কড়া আওয়াজে
    বলে-- তুম বাতাও,কাঁহা যায়েগা?
    তপন অবাক হয়ে বলে-- পহেলে তুম বোলো?
    গালপাট্টাধারীর কিছু বলার আগেই টিকিট চেকার বলেন-- খোকা তোমার টিকিট?
    পরের স্টেশনে উনি খোকাটিকে নামিয়ে স্টেশন মাস্টারের জিম্মায় করে দিয়ে বলেন-- মনে হচ্ছে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে, ভালঘরের ছেলে। দেখুন তো, বাড়ির ঠিকানা জানতে পারেন কি না?
    স্টেশনমাস্টার একটু পরে হাল ছেড়ে দিয়ে বলেন-- খোকা , তুমি যখন বাড়ির ঠিকানা বলবেই না, তখন তোমাকে পুলিশের কাছে হ্যান্ড ওভার করা ছাড়া উপায় নেই।
    তপনের মুখ শুকিয়ে আসে। সন্ধ্যে হয়ে এসেছে।
    একটা শংখ সন্দেশ ও সিঙাড়া প্লেটে করে সাজানো ছিল। খেয়ে জল খেতে নিয়ে ভাবতে থাকে। কিস্যু মাথায় আসে না।
    হটাৎ বেঞ্চি থেকে উঠে পড়ে লাগায় চোঁচা দৌড়। স্টেশনমাস্টার চেঁচান-- পাকড়ো, পাকড়ো!
    ও ধরা পড়ে যায় উল্টো দিক থেকে লন্ঠন হাতে আসা গাঁট্টাগোট্টা গ্যাংম্যানের শক্ত মুঠোয়।
    ও তপনকে টেনে নিয়ে যায় অচেনা স্টেশনের মাঠের শেষে পোর্টার খোলি, অর্থাৎ খুপরি মত স্টাফ কোয়ার্টরে।
    বলে-- খোকাবাবু, তুমার কোনো ভয় নাহি। আমি তুমাকে পুলিশে দিবে না।
    আমি তুমাকে ঘরে পৌঁছিয়ে দিবে।
    বিহারি আধবুড়ো গ্যাংমানের বাড়িতে তপন খায় ডিমের ঝাল ঝাল ঝোল, ডাল আর রুটি। ওরা ওকে তোরঙ্গ থেকে বের করা ন্যপথালিনের গন্ধওলা পুরনো কিন্তু ইস্ত্রিকরা চাদর পেতে শোয়ার জায়গা করে দেয়।
    সকালবেলা গ্যাংমান ওকে নিয়ে রওয়ানা দেয় কোলকাতার উদ্দেশে।কাঁচাপাকা চুলে ধ্যাবড়া করে সিঁদুর লেপা গ্যাংম্যানের অপুত্রক স্ত্রী ওর কপালে চুমো খেয়ে বলে
    -- মা কে পাস লৌট যা রে বাবুয়া! মাকে কুনো কষ্টো দিস নাই।
    শেয়ালদায় নেমে ওর বাড়ির ঠিকানা জিগ্যেস করলে তপন বলে শ্যামবাজার। শ্যামবাজারের ট্রাম এলে ওরা দুজন ট্রামে ওঠে। ট্রাম চলতে শুরু করতেই তপন লাফিয়ে নেমে উল্টো দিকে দৌড়ে এক গলিতে ঢুকে পড়ে। কানে আসে এক আর্তনাদ--খোখাঁ, খোঁখা!
    দুপুরবেলায় বাড়ির কাজের মেয়ে লক্ষ্মীর মা খবর দিল-- তপন দাদাবাবু ছাদের ওপর জলের ট্যাংকিতে চড়ে বসে আছে। বলছে কেউ যদি না বকে তবে নীচে নিয়ে আসবে।
    এর পর তপন আবার পালাল। তখন নাইনে পড়ে। শাম্মিকাপুরের মত জ্যাকেট পরে, আবদার করে হাওয়াইয়ান গিটার কিনেছে।ক্লাস থ্রিতে পড়া মামাতো ভাই রঞ্জনকে একটু একটু ছুঁতে দেয়। একটু পিড়িং পিড়িং।
    কিন্তু বাহরিন থেকে এসে সোনামামা রেগে কাঁই!
    --এসব কি সোনাদি! ছেলের পড়াশুনা শিকেয় উঠেছে, তার পর গিটার! কাল চান্দের আবদার করলে চান্দ কিন্যা দিবা নাকি?
    গিটার বাজেয়াপ্ত হল। তপন বাড়ি ছেলে পালাল।
    এদিকে তপনের বাবার অসুখ বাড়ল। উনি বিছানা নিলেন।সবাই ব্যস্ত, ছেলেটাকে খুঁজে আনতে হবে। কিন্তু কি করে হদিশ পাওয়া যায়।
    ছোটমামা বিছানার তলা থেকে পেলেন একটি ফিল্মের নেগেটিভ। সেই ফিল্ম ডেভেলপ করে ওঁরা অবাক।
    তারপর মিলিয়ে মিলিয়ে গলিগলি খুঁজে এক খতরনাক পাড়া থেকে নিয়ে আসা হল তপনকে। শেষরক্ষা হল।
    এরপর তপন বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ল ওর বড় দুনিয়ায় পালানোর ঝোঁক। কখনও মাউন্টেনিয়ারিং ক্লাবের হয়ে হুগলীর গ্রুপ নিয়ে লাদাখ বা তিব্বত অভিযান। কখনও পুরুলিয়া-বাঁকুড়া সীমান্তে বুনো হাতির পালের পেছনে ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন হয়ে ছোটা।
    এবার এই বয়সে সে আবার ভোঁ-কাট্টা। কিন্তু ছোটবেলার মত ঠিকানা না বলেই গেছে।
    আজ রঞ্জনের দায়িত্ব দাদাকে খুঁজে বের করা। বৌদি-ভাইপো-ভাইঝি যে অনেক আশা করে আছে!
    কি করে খুঁজি?
    আরে, আমার কাছেও তো আছে একটি নেগেটিভ রোল! আমিও ডেভেলপ করে দেখি, হয়তো দাদার কিছু হদিশ পাব।
    (চলবে)
  • kallol | 115.184.102.14 | ১৫ আগস্ট ২০১০ ০৭:৫০462432
  • শাব্বাস। চালিয়ে যাও। ওনাকে পেলে বোলো, ওনার আর এক সাগির্দ ব্যাঙ্গালোরে আছে।
  • sumeru | 117.194.99.210 | ১৫ আগস্ট ২০১০ ১৪:৩৪462443
  • ছেলেটা সত্যি পলিয়েছে?

    কা গু তে বিজ্ঞাপণ দিন। মেল করুন বুলবুলভাজা অ্যাট জিমেলে। নিশ্চিত সাফল্য।
  • ranjan roy | 122.168.184.193 | ১৫ আগস্ট ২০১০ ২২:৪০462454
  • সকাল বেলা, সাড়ে ন'টা বাজে। পার্কসার্কাসের বাজারের সমনের ফ্ল্যাটগুলোতে শব্দদূষণ কমে এসেছে।অফিসযাত্রীর দল হয় বেকবাগানের মোড় থেকে বাসের পাদানিতে লটকে গেছেন , নয়তো ট্রাম ডিপোর থেকে ট্রামের সীটে আরাম করে বসে মুখে পান ঠুসে খবরের কাগজ খুলেছেন।
    তপন আজ স্কুলে যায় নি।অ্যালজেব্রার হোমটাস্ক হয় নি যে!
    তক্তপোষের ওপর একটি চটি বই নিয়ে লম্বা হয়েছে। রঞ্জনের শনিবার দিন মর্নিং স্কুল তাড়াতাড়ি ছুটি হয়েছে। ঘুর ঘুর করছে মেজদার কাছাকাছি। দাদা পাত্তাও দিচ্ছে না।
    কি বই ওটা? রঙ্‌চঙে মলাটে টেবিলের ওপর মুখ থুবড়ে পরা একজন মানুষ। মুখ থেকে রক্ত গড়িয়ে টেবিলের ওপর জমাট বেঁধেছে, আর সামনে ওভারকোট-হ্যাট ও গগলস্‌ পরা লোকটির হাতে ধোঁয়া বেরুনো পিস্তল। বইয়ের নাম ""জীবন মৃত্যু'' , বিশ্বচক্র সিরিজ, লেখক স্বপনকুমার। দাম চার আনা।
    ওর টানাটানিতে দাদা হেসে ফেলে। বলে-- পড়বি? তাহলে আয়, আমার পাশে শুয়ে পড়্‌। তুই একপাতা ধর, আমি আর একটা। যার আগে পড়া হবে সে বলবে-""হয়েছে''। আর শেষের জন পড়া হলে বলবে-- ""ওল্টাও''।
    এই ভাবে শুরু হয় বইপড়ার যুগলবন্দী। একে একে বিশ্বচক্র সিরিজের অনেকগুলো বই পড়া হয়। তাতে গোয়েন্দা দীপক চ্যাটার্জি, সহকারী রতনলাল। এরপর এল ""বাজপাখী'' সিরিজ;-- ""নীল সমুদ্রে বাজপাখী'' ,""মরণফাঁদে বাজপাখী'' ইত্যাদি। তখন মনে হল স্বপনকুমারের মত লেখক লাখে একজনই হয়।
    দীনেন্দ্রকুমারের রবার্ট ব্লেক অত ভাল লাগেনি।
    কিন্তু হেমেন্দ্রকুমারের ""বিশালগড়ের দু:শাসন'', "" যখের ধন''? বিমল-কুমার-বাঘা?
    ""দেড়শ খোকার কান্ড''?
    হটাৎ এল অন্য রকম বই "" সুন্দরবনের আর্জান সর্দার''। এরপর খগেন্দ্রনাথ মিত্রের "" ভোম্বল সর্দার'' আর ""গহন বনের কাহিনী''।
    কিন্তু পড়াশুনোয় মন নেই দেখে নিয়মনিষ্ঠ দাদামশাই বলতেন-- তুই একদিন রঞ্জনের সঙ্গে পড়বি।
    একদিন দুজনে মিলে যাচ্ছে ঘুড়ি কিনতে। সামনে বিশ্বকর্মা পূজো যে। তপন সামনের পানের দোকান থেকে চারমিনার কিনে পাটের দড়ি থেকে ধরাল। ছোটভাইয়ের প্রশ্নসূচক চাউনি দেখে বল্লো-- আমি তো অনেকদিনই খাই।
    কিন্তু কি গেরো! ঝাউতলা লেনের কমিউনিস্ট পার্টি আফিসের সামনে দিয়ে যাবার সময় হোলটাইমার টাকমাথা চিরকুমার হাসি দত্ত ওকে দেখে পেছন পেছন পা চালিয়ে আসতে লাগলেন। তপন ভ্যাবাচাকা খেয়ে ডান্‌হাতটা পেছনে করলো। কিন্তু ভবি ভোলবার নয়। উনি সামনে এসে বল্লেন-- এইডা কি লুকাইলি, দ্যাখা!
    তপন হাত সামনে এনে ধোঁয়া ছেড়ে বল্ল-- আপনাকে সম্মান দিয়ে হাত পেছনে করলাম, সেটা ভালো লাগলো না?
    এই ঔদ্ধত্য দেখে ভাইয়ের মুখে বাক্যি হরে গেল। উনি পবিত্র ক্রোধে জ্বলে উঠে বল্লেন-- কী! আস্পর্ধার সীমা নাই। বড় বাড় বাড়ছস্‌। আইজই তর ন'মামারে কমু। তারপর দ্যাখ্‌।
    --- চুকলি করে দেখুন, মেরে টাক ফাটিয়ে দেবো।
    (চলবে)
  • quark | 202.141.148.99 | ১৬ আগস্ট ২০১০ ১০:৪০462465
  • জ্জিও!
  • Manish | 59.90.135.107 | ১৬ আগস্ট ২০১০ ১৯:৩৪462472
  • ঝাল ঝাল ডিমের ঝোল সঙ্গে চাট্টি রুটি।

    কেলোবাবুর কথা মনে পড়ে গেলো।:-))
  • Nina | 64.56.33.254 | ১৭ আগস্ট ২০১০ ০৩:১১462473
  • ফাটাফাটি!!!দরুণ ।
  • de | 59.163.30.2 | ১৭ আগস্ট ২০১০ ১২:৫৪462474
  • বা:! খুব ভালো!
  • M | 59.93.169.159 | ১৭ আগস্ট ২০১০ ১৩:০৯462411
  • মোট্টে ভালোনা, এইসব অল্পেয়েরা যাদের ঘারে চাপে তাদের হাড়ে দুব্বো গজিয়ে যায়, মনে হয় মুড়ো ঝাঁটা দিয়ে বিষ ঝেড়ে যেদিকে দুচোখ যায় চলে যাই, কিন্তু দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন মানুষ হওয়ায় সবাই তা পারেনা, ইদিকে এটা আবার বংশগত রোগ, তা না হলে কুঁচোটা এখন থেকেই চলে যাবো বলে হুমকি দেয়? যত্তসব!
  • Nina | 64.56.33.254 | ১৭ আগস্ট ২০১০ ২১:০৮462412
  • :-)))) এদের বাঁধতে পারলে তার নেশাই আলাদা --বল কিকিয়া

  • M | 59.93.212.82 | ১৮ আগস্ট ২০১০ ১২:৪১462413
  • বাঁধা যায় না, তাই চেষ্টাও নাই...:P
  • Nina | 64.56.33.254 | ১৮ আগস্ট ২০১০ ১৯:১৩462414
  • কিকিয়া, কেষ্ট পেতে কষ্ট কত্তেই হইব--নইলে রাম শ্যাম যদু-মধু --মাণিক পাইবে না ;-)

  • M | 59.93.204.53 | ১৮ আগস্ট ২০১০ ২০:৪৪462415
  • :P
    কিন্তু রঞ্জনদা কি রেগে গেলেন কি? নইলে আর পর্বরা কই গেলো?
  • ranjan roy | 122.168.21.21 | ১৮ আগস্ট ২০১০ ২০:৫৬462416
  • M,
    আরে না-না! সব ঝামেলাএকসঙ্গে মাথায় চেপেছে। কাল বাড়ি পাল্টাচ্ছি। তরশু দিল্লি যাচ্ছি। সেখান থেকে ২৬শে মুসৌরি গিয়ে ছ'দিন একটা বিহেভিয়ার‌্যাল সায়েন্সের একটা ওয়ার্কশপ অ্যাটেন্ড করে ৩ তারিখ রায়পুর ফিরে ৪ তারিখ বিল্ডরের বিরুদ্ধে কোর্টকেস অ্যাটেন্ড করব।
    এই কদিন আমার কাছে নিজস্ব ইনটার্নেট থাকবে না। মেয়ের ল্যাপিতে বাঙ্গলাপ্লেইন ফন্ট নেই। তাহলে ইপিকে দেয়া আমার কমিটমেন্ট এর কি হবে?
  • M | 59.93.192.153 | ১৯ আগস্ট ২০১০ ০৮:৩৯462417
  • ওহ! ঠিকাছে রঞ্জনদা, আপনি সব সামলেই লিখুন।:)
  • jayanti | 59.178.46.101 | ১৯ আগস্ট ২০১০ ১২:৪১462418
  • রন্‌জনদা,

    দিল্লীতে শুভ স্বাগতম।
  • ranjan roy | 122.162.160.227 | ২৫ আগস্ট ২০১০ ১৬:১৯462419
  • জয়ন্তী,
    ধন্যবাদ। ভালো থেকো।
  • ranjan roy | 122.162.160.227 | ২৫ আগস্ট ২০১০ ১৭:০৩462420
  • পার্কসার্কাসের ভাড়াবাড়ির গায়ে গায়ে লাগা ফ্ল্যাট। জোড়াছাদ পাঁচিল তুলে আলাদা করা। ছাদে খেলে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা। লাট্টু, মার্বেল, এক্কাদোক্কা,ছোট্ট চার আনার রবারের বলে ফুটবল অথবা দেহাতি ক্রিকেটের প্রথম পাঠ। মাঝে মাঝে সিনিয়র ভাইয়েরা শোনায় সিনেমার গল্প। "পথে হল দেরি'', হারানো সুর'', """দীপ জ্বেলে যাই''।
    অনুরোধের গানের আসরের হিট গানের সুর নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়। এভাবেই বাচ্চারা শেখে "" নীল ভাঙা ঢেউ আর নীড় ভাঙা ঘর, তারি মাঝে প্রেম যেন গড়ে খেলা ঘর''; বা
    " প্রেম একবারই এসে ছিল নীরবে''। আর কেউ কেউ আনমনা হয়ে যায়, --"' এইরাত তোমার আমার, এই চাঁদ তোমার আমার''।
    কিন্তু ক্লাস থ্রি'র রঞ্জনের যে বড় বিপদ। সবাই ক্ষ্যাপায়--" রঞ্জন রায়, পাল্কি চড়ে যায়। পাল্কি থেকে বৌ পালালো হায়, হায়, হায়''।
    বাচ্চাটার মাথা কাটা যায়। কেমন পুরুষমানুষ যে বৌকে সামলাতে পারে না?
    কিন্তু কোন ছন্দোবদ্ধ যুতসই জবাব মাথায় আসেনা যে! অগত্যা মেজদা তপনের শরণাপন্ন হওয়া।
    --- কি বলি বলতো?
    --তুইও ছড়া কেটে বল, নাকে কাঁদিস কেন?
    ---কি বলবো? পারি না যে!
    -- কি নাম রে ছেলেগুলোর?
    ---- রতন দত্ত আর স্বপন কুন্ডু, ওরাই বেশি করে বলে।
    তপন ভাবে, দু'মিনিট গড়িয়ে যায়।
    -- এই নে। "" স্বপন কুন্ডু, কাগে নিলো মুন্ডু;
    চিলে নিল ঠ্যাং, ড্যাং ড্যাঙা ড্যাঙ্‌ ড্যাঙ্‌।।''
    --- আরেকটা?
    ---ও:, শুনে নে।
    "রতন দত্ত, পোঁদে তিন গর্ত''।

    রঞ্জন কবিয়াল দাদার আশুকবিতা রচনার প্রতিভায় মুগ্‌ধ, চমৎকৃত।
    প্রাকৃত ভাষার অনায়াস ব্যবহারে কি একটু দ্বিধা? একটু সংকোচ?
    না:, দাদার চেয়ে বেশি কে জানে!
    পরের দিন ছাতে ওই দুই ছড়ার টিআর্পি
    রেট দেখে ও অবাক। দুশমনেরা ছত্রখান। কিছু বালক দাবি করে যে রতন প্যান্ট খুলে দেখাক ওর পেছনে সত্যিই তিনটে গর্ত আছে কিনা!
    ওরা হার মেনে নেয়। পাব্লিকের কাছে রঞ্জনের ইমেজ বাড়ে।
    কারণ ও দাদার কপিরাইট অস্বীকার করে বালকবৃন্দকে জানায় যে ছড়াদুটো ওরই বানানো।
  • ranjan roy | 122.162.160.227 | ২৫ আগস্ট ২০১০ ১৭:৫১462422
  • পার্ক শো' হাউস সিনেমাহলের কাছেই ছেলেদের স্কুল--''মর্ডান হাই স্কুল''।
    তপন পড়ে সেই স্কুলে। ওর ছোটমামাও পড়েছে। কিন্তু রঞ্জনের স্কুল হোলো " শিশু বিদ্যাপীঠ গার্লস্‌''। মেয়েদের স্কুল, সেখানে ওর ছোটপিসি পড়েছে, ছেলেদের নেয়া হয় ক্লাস ফাইভ পর্য্যন্ত। রঞ্জনের ইচ্ছে মেজদার স্কুলে পড়বে, দাদার সঙ্গে একসাথে যাবে। কিন্তু ও যে দাদুর আদরের নাড়ুগোপাল, অমন ন্যালাক্যাবলাকে ভরসা করে দূরের স্কুলে ছাড়া যায় না। ফলে ও ভোগে মেয়েদের স্কুলে পড়ার আত্মগ্লানিতে।
    কিন্তু একদিন একটি মেয়ে জয়শ্রী ওকে শোনায় দাদার স্কুলের ব্যাপারে চমৎকার এক ছড়া।রঞ্জনের আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে।
    সগৌরবে দাদাকে শোনায়---
    মর্ডান পাঠশালা, বিদ্যে শেখায় কাঁচাকলা।
    বেঞ্চিগুলো সরু সরু; মাস্টারগুলো আস্ত গরু''।
    দাদার মুখের চেহারা এমন যেন বক্সিংয়ের রিঙে কোন নতুন ছেলে চ্যাম্পিয়নকে নক্‌ আউট করেছে।
    -- এই ছড়াটা কে বানিয়েছে?
    --- আমি।
    রঞ্জন বেমালুম রয়ালটি ঝেঁপে দেয়।
    পুরস্কার হিসেবে কানে পড়ে আড়াই পাক।
    --- এই সব শিখছিস? মাস্টরমশাইরা গুরুজন, তাঁদের নিয়ে অসভ্যতা?

    রঞ্জন বোঝে, এ নিয়ে নালিশ করা চলবে না। স্ট্র্যাটেজিক ভুল হয়ে গেছে। তারপর থেকে মেয়েদের প্রশ্রয়ে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা দেখলে ও আগেভাগে সতর্ক হয়। বোঝে-- সব জিনিস সবার জন্যে নয়।
    কিন্তু ওর চোখের জল দেখে দাদা গলে যায়।
    --কাঁদিস না, খুব লেগেছে? আরে, আমি তো এমনি একটু---। দাঁড়া, আজ বিকেলে ঘুড়ি ওড়াবো। তুই লাটাই ধরবি।
    বিকেলে সত্যি সত্যি ছাদের থেকে ঘুড়ি ওড়ে। প্যাঁচ খেলা হয়। কখনও নীচ দিয়ে ঢুকে টেনে, কখনও ওপোর থেকে ঢিল দিয়ে। কতো রকম ঘুড়ি।
    --- ওই দ্যাখ, পেটকাট্টি, মোমবাত্তি, চাঁদিয়াল, চৌরঙ্গী।
    আজও রঞ্জনের স্বপ্নে হানা দেয় নানান রঙের ঘুড়ির দল।
    তারপর বাড়ির সবাই একদিন যায় পার্ক শো' হাউস হলে-- মডার্ন স্কুলের বার্ষিক উৎসবে। অন্ধকার হলে আলোকিত স্টেজের ওপর তিনজনের কোরাসে তপন গায় --"সবারে করি আহ্বান। এসো উৎসুকচিত্ত, এসো আনন্দিত প্রাণ''।

    হাততালি। রঞ্জনের চোখে মেজদা তপন স্টারের মর্য্যাদা পায়। ও বোঝে দাদা সত্যি ভালো স্কুলে পড়ে। বোঝে, মেয়েদের মুখের কথা সব সময় ধরতে নেই।
  • Shibanshu | 59.97.232.130 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১১:১৩462423
  • রঞ্জন,
    জিন্দাবাদ...
  • jayanti | 122.163.144.16 | ০২ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১৮:৫১462424
  • ও রঞ্জনদা, তারপর কি হোলো????????
  • Shuchismita | 12.34.246.72 | ০২ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১৯:০০462425
  • কি সুন্দর লেখা! আচ্ছা, এই মার্বেল, লাট্টু এই খেলাগুলো কি করে খেলে?
  • Nina | 64.56.33.254 | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১০ ০১:১৮462426
  • মার্বেল হল গিয়ে রাস্তার ধুলোতে দিব্ব্যি বিলিয়ার্ড কাম গল্ফ খেলা--:-)) কিছু একটা শক্ত জিনিষ দিয়ে মাটিতে খুঁড়ে একটা পকেট (গর্ত) বানিয়ে , তারপর গুলিগুলোকে হাতের টিপ ঠিক করে, পকেটে ফ্যালো।
    মাটিতে হাঁটুগেড়ে বসে ডানহাতের তর্জনী টাকে বাঁহাতে গুলি শুদ্ধু ধরে , মুখ ছুঁচোলো, চোখ সরু করে একেবারে তীর ছোঁড়ার মতন পকেটে গলিয়ে দিতে হবে। আর অন্যজনের গুলিতে টিপ করে সেটাকেও পকেটে ফেলে সেই গুলিটাও তোমার।যত পার রকমারি রঙের বাহারের গুলি জয় করে তোমার বক্স ভরতে পার--ইশ! কোথায় গেল আমার সেই নানারংএর গুলি-ভর্ত্তি দিনগুলি।(ফোঁস)

    আর লাট্টু? কাঠের বেশ গোল শরীর স্টিলেটো হিল পরা একটি পা। ইয়্যা লম্বা লেত্তি ( পাকানো সরু দড়ি) সেই লাট্টুর গায়ে জড়িয়ে , হাতটা ট্যারচা করে ছাড়তে হবে লেত্তি থেকে লাট্টুটাকে--যত গুগলি দিয়ে ছাড়তে পারবে লাট্টু তত্ত জোরে ঘুরবে আর তত দম বেশি-- আবার সাঁই করে ছেড়ে নিজের হাতের চেটোর ওপর ও নিয়ে নেয়া যায়--আহা কি নস্টালজিয়া--কত্তদিন চোখেও দেখিনি এইসব কায়দার খেলাগুলো--
    সেই সঙ্গে গুলতি দিয়ে আম পাড়া, পাখীর বাসা নষ্ট করা (ইস ওটা পাপ, এখন সরি করতাম বলে) পিট্টু খেলা, ড্যাং গুলি--কত্ত সব খেলা ছিল!

    এখন তো শুধু ইঁদুর চেপে চেয়ারে বসে আবালবৃদ্ধবনিতা একঘেয়ে খেলে চলেছে গেমস! ধ্যুস্‌স!
  • ranjan roy | 59.161.18.68 | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১৮:৪৩462427
  • সে বছর পূজোর সময় সলিল চৌধুরির কথা ও সুরে লতার গান সুপারহিট।
    "" বাঁশি কেন গায়, আমারে কাঁদায়, কি গেছে হারায়ে?
    স্মরণের বেদনায় কেন মনে এনে দেয়''!
    রঞ্জনের গানটা ভালো লেগেছে দেখে মেজদা ওকে নিয়ে যায় ছাদের সিঁড়িতে।
    --- আরে, এর প্যারডিটা শোন, আরও জবরদস্ত। "" বেঁচে থাকা দায়---""।
    রঞ্জন অন্তরাটা গুনগুন করে।
    -- তমালকদম্ব আমার গোপিনী সখিনী,
    যমুনা উজান গেছে আর তো দেখিনি।
    এবার তপন মিন্টু দাশগুপ্তের গাওয়া প্যারডিটা শোনায়।
    --- এখন থেকে নিত্য আমি চলবো নানান ছন্দে,
    গিন্নির মন ভরিয়ে দেবো তেল-সাবানের গন্ধে।
    রঞ্জন পুলকিত। একটা দামী পাঠ তখনই সে পেয়ে যায়। ভবিষ্যত জীবনে গিন্নির মন ভরাতে তেল সাবানের গন্ধ বেশ জরুরি।

    কিন্তু ভাড়াবাড়ির তিনটে ঘর আর রান্নাঘরের মধ্যে ষোলজনের ঠাসাঠাসি করে থাকা। এর মধ্যে তপনের হাঁফ ধরে। ও কাপড় কাচতে কাচতে গায়-"' এ আপনা দিল, তু আওয়ারা''। ভাইকে দেখে চোখ টিপে নীচু গলায় গায়--"" আপনা দিল, পোঁদে মারো ঢিল''। নীচু গলায় গাইলে কি হবে, কেমন করে যেন আওয়াজ মাঝের ঘরে দাদুর কানে পৌঁছে গেছে। উনি রে-রে করে তেড়ে আসেন। রঞ্জন যে তাঁর পেয়ারের নাতি! রায়বংশের কুলপ্রদীপ! সংযুক্ত হিন্দু পরিবারের কর্তার বড়ছেলের বড়ছেলে। ওকে বড় মেয়ের ছেলে আজেবাজে জিনিস শুনিয়ে বিগড়ে দিচ্ছে। নিজের তো পড়াশুনোয় মন নেই। তায় এই! চটে গিয়ে উনি দৌহিত্রকে অভিশাপ দেন--- তুই একদিন রঞ্জনের সঙ্গে একক্লাসে পড়বি।
    স্কুলে সেই অভিশাপ ফলেনি। কিন্তু বহুবছর পড়ে রঞ্জন যখন মৌলানা আজাদে ইকনমিক্স নিয়ে ভর্তি হয়েছে, তখন তপন হুগলী জেলায় প্রায় সর্বক্ষণের বাম রাজনৈতিক কর্মী। মহসীন কলেজে ইকনমিক্স একবছর পড়ে ড্রপ নিয়ে কোলকাতায় বিদ্যেসাগর ইভনিংয়ে পলিটিক্যাল সায়েন্স নিয়ে ভর্তি হয়েছে। এক সন্ধ্যেয় ও রঞ্জনকে নিজের কলেজে ডেকে কিছু ইকনমিক্সের বই দেয়। তারপর কাছের দোকান থেকে চপ খাওয়াতে খাওয়াতে হেসে ফেলে-- দাদুর অভিশাপ ফলে গেল রে! আমি এখন তোর সঙ্গে একই ব্যাচে পড়ছি।
    ক্লাস এইট থেকেই তপনের মন উড়ু-উড়ু, বারমুখো। ঘরের কোন ফাই-ফরমাশ খাটতে বল্লে এক পায়ে খাড়া। আস্তে আস্তে সেটা বাড়তে লাগলো। মাঝে মধ্যে রাত্তিরে ঘরে ফেরাও স্থগিত। মধ্যবিত্ত বাঙাল পরিবারে ভাল বাওয়াল।
    কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবার্ষিকী উৎসব। রঞ্জনের ন'কাকা সেই অর্গানাইজিং কমিটির সেক্রেটারি। তপন মামার সৌজন্যে পায় সামনের সারিতে ভি আই পি দের সঙ্গে বসার সুযোগ। বাড়ি ফিরে ভাইকে শোনায়-- জানিস, আলি আকবরের সরোদ শুনছিলাম। পাশে কে ছিলেন বলতো? সত্যজিৎ রায়!
    পিসতুতো দাদার সৌভাগ্যে ভাইয়ের একটুও হিংসে হয় না। বরং ভাবে দাদাও একজন কেউকেটা, সত্যজিৎএর সমান না হোক, কিছুটা তো বটেই।
    পাশের ফ্ল্যাটে থাকতেন নীলুদা। কদাচিৎ ছাদে ঘুড়ি ওড়ানো ছাড়া কুচো-কাঁচারা তাঁকে দেখতেই পেতাম না। ওনার সম্বন্ধে অনেক গল্প বড়দের পরচর্চার ফাঁকে শুনতে পাওয়া যেত।
    ধর্মতলা স্ট্রীটে ওয়াছেল মোল্লার বিখ্যাত কাপড়ের দোকানে ডাকাতি, সেই যে ফিটন গাড়ি করে তিনজন এসে পিস্তল দেখিয়ে ক্যাশবাক্স লুটে নিল তার নায়ক নাকি উনি। আবার গতবছর কোন কুখ্যাত পাড়া থেকে মারামারি করে ফিরেছিলেন--- গায়ে নাকি বাইশটা ছুরির আঘাতের দাগ ছিল!
    সেদিন হটাৎ পাড়ার দুই তরুণ এসে রঞ্জনের ন'কাকাকে ধরল। আপনি চলুন, পাশের বাড়ির নীলুগুন্ডাকে বোঝান। ও দুই ছোকরাকে কোথথেকে ধরে এনে দুদিন ধরে ঘরে বন্ধ করে পেটাচ্ছে। আপনি না গেলে ছাড়বে না।
    ন'কাকাকে নীলু মস্তান বল্লো-- ছাড়বো না। এই দুটো বদমাশ আপনার ভাগ্নে তপনকে বখাচ্ছে। ওকে অমুক বেপাড়ায় নিয়ে গেছিল। আস্পদ্দা দেখুন!

    দাদু রঞ্জনকে বোঝান--- বেশি মেজদা-মেজদা করিস না। হ্যার পড়াশুনায় মন নাই। ভাদাইম্মাগিরি করত্যাছে। তুই পড়াশুনা কর। আমরা দ্যাশ ছাইড়্যা আইছি, পড়াশুনা ছাড়া আমাদের কুন ভবিষ্যৎ নাই।
    রঞ্জন কষ্ট পায়, ও যে দাদাকে খুব ভালোবাসে।

    হায়! দাদু যদি জানতেন যে আহ্লাদের নাতি রঞ্জনও একসময় বড় হইয়া রাম ভাদাইম্মা হইবো!
  • Lama | 203.99.212.54 | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১৫:১১462428
  • টইটা কি আবার পালালো? রঞ্জনদা?
  • ranjan roy | 122.168.200.40 | ১০ সেপ্টেম্বর ২০১০ ০০:৪৪462429
  • মেজদা আবার অনেকদিন বাড়িতে নেই। কোথায় গেছে? কেউ জানে না। ক্লাস এইটের পরীক্ষা দেয় নি। কিন্তু পিসেমশায় মনে ওর বাবা যে খুব অসুস্থ। ডাক্তার-কোবরেজ সব হয়ে গেছে। এখন বেড্‌সোর এর লক্ষণ দেখা দিয়েছে। বাড়িতে টেনশন্‌। সামনে দিদির বি এ পরীক্ষা।
    তপনের মা'র মৌন অনুরোধ ভাইদের কাছে,-- শেষসময়ে ছেলেটার হাতের গঙ্গাজল পাবেন না, উনি?
    মামারা এত সক্রিয়। পার্টি অফিস, মডার্ন স্পোর্টিং ক্লাব। এত চেনাশুনো। একটা কিশোরের খোঁজ পাওয়া যাবে না?
    পাওয়া গেল খোঁজ। ক্যামেরা-প্রেমী তপনের বালিশের তলায় একটি ফিল্মের নিগেটিভ রোল। ডেভেলপ করে দেখা গেল একটা পাড়া, বাড়ি, সঙ্গীসাথী। শাম্মি কাপুরের ঢংয়ে জ্যাকেট পড়ে গীটার হাতে তপন।
    মামারা নিয়ে এলেন তপনকে। বাবার সঙ্গে দেখা হল শেষ সময়ে। রঞ্জনের চোখে মেজদা যেন কিছুটা দুরের হয়ে গেছে, কিন্তু যেন আরো রোম্যান্টিক, আরো আকর্ষণীয়।
    ন্যাড়ামাথা কাচাপড়া মেজদা, গলায় একটা লোহার চাবি ঝুলছে।ছাদে কাককে খেতে দিচ্ছে। অন্য একটা দুনিয়ার পর্দা উঠছে। প্রথম কাছের থেকে দেখা মৃত্যু, পারলৌকিক ক্রিয়া কর্ম।
    এরপর দিদির শিক্ষাবিভাগে চাকরিসূত্রে তপন গেল হুগলী। আর রঞ্জন বরানগর রামকৃষ্ণ মিশনের হোস্টেলে। দুজনের আলাদা দুনিয়া, নিজের মতন করে চেনালোকজনকে আবার গড়ে তোলা।
    তবু মাঝে মধ্যে বেড়াতে যাওয়া মোগলটুলী, শিবগঞ্জ, পিপুলপাতি, চকবাজার, হুগলীঘাট।
    কিন্তু তপন বড় হয়ে গেছে। ভাইয়েরা আসলে খুশি হয়। মাংস কিনে আনে। তবু কথাবার্তা-আলাপচারিতায় নতুনত্ব নেই, নেহাৎই নিয়মরক্ষার মত।-- ভাল আছিস তরা? কুন ক্লাসে পড়তাছস্‌?

    তপন নিজে কি পড়ছে? ব্যান্ডেলের নাম করা স্কুলে ভরতি হয়েছে। বন্ধু জুটেছে সোমেশ্বর, ভোম্বল মান্না, মনোজিৎ। কিন্তু পড়ায় মন কোথায়? উল্টে ঝোঁক বাড়ছে বামপন্থী ছাত্র আন্দোলনের দিকে। স্টুডেন্ট ফেডারেশনের শাখা গজালো স্কুলে। তপনরা হেডমাস্টারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে ওপর মহলে।
    উনি ঠিকমত ক্লাস নেন না। স্বজনপোষণ করেন। স্কুলের জন্যে সরকার থেকে দেয়া রেডিও বাড়িতে নিয়ে গেছেন, ইত্যাদি।
    তদন্ত কমিটি এলো। ওদের ডেকে পাঠানো হল হেডমাস্টারের রুমে।
    দোর্দন্ডপ্রতাপ স্যার গম্ভীর আওয়াজে বল্লেন--- কে বলেছে রেডিও আমি বাড়িতে নিয়ে গেছি? ওই তো আমার অফিস রুমে টেবিলের ওপর রাখা রয়েছে।
    সত্যি তো! তপনেরা হতবাক্‌।
  • Samik | 122.162.75.186 | ১০ সেপ্টেম্বর ২০১০ ০৯:৩০462430
  • ই কী? ই কী? এ তো আমার পাড়া! আপুন কা ইলাকা!! ব্যান্ডেলের নামকরা স্কুল ... ডন বস্‌কো?
  • Samik | 122.162.75.186 | ১০ সেপ্টেম্বর ২০১০ ০৯:৩২462431
  • নাহ্‌, ডন বস্‌কো নয়। ন্যাড়া চাটুজ্জের স্কুল?? কিন্তু সেটা তো ঠিক ব্যান্ডেলে নয়!
  • shibraj | 115.240.220.68 | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১০ ২০:২৯462433
  • স্‌চূল ত হূঘ্‌ল্‌য় ব্রন্‌চ।।।।।।।।।।।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন