এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • মহাভারতের কথা অমৃত সমান। কুলদা রা

    Kulada Roy
    অন্যান্য | ২১ জুলাই ২০১১ | ৫৮৭৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Kulada Roy | 74.72.54.134 | ২১ জুলাই ২০১১ ১০:৪৩483964
  • মহাভারতের কথা অমৃত সমান।
    কুলদা রায় ভনে শুনে শূন্যমান।
    -------------------
    মহাভারত আমার প্রিয় গ্রন্থ। বাল্যে যখন এক ঘরে আমাদের জায়গা হত না, আমার তখন স্থান হত আমার জ্যেষ্ঠ ঠাকুরমা আর ঠাকুরদার মাঝে। জ্যেষ্ঠ ঠাকুরদাকে বলতাম—বড় দাদু। আর জ্যেষ্ঠ ঠাকুরমা—বড়দিদি। এই বড়দাদু ছিলেন পুরো দস্তুর কৃষক। প্রথম স্ত্রী মারা গেলে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন মোল্লাকান্দি। এই বড়দিদি ছিলেন কালো। নি:সন্তান। তিনি জলের মেয়ে। থৈ থৈ কালো জলের। চারিদিকে সবুজ ধানক্ষেত। মাঝখানে একটি বাড়ি। এই জল দেখে বহুবার আমার প্রাণ উড়ে গেছে। এর দুটো গ্রামের পরে আমার মামা বাড়ি। এই জলহাওয়া ছাড়া আমার জীবনে অন্য কোন সত্য নাই।

    রাতে বড় দাদু ঘুমিয়ে পড়ত মুখটি হা করে। ফোকলা মুখ। তখন বড়দিদি আমাকে গল্প শোনাত। দীর্ঘ সেসব গল্প। রূপকথা। রামায়ন। মহাভারত। পুরাণকথা। বড়দিদি শুধু সই করতে জানত। কিন্তু যখন গল্প বলত তখন বইয়ের পাতা থেকে গল্পের চরিত্ররা আমাদের চারপাশে নেমে পড়ত। কখনো গলা গাঢ় করে, কখনো উত্তেজনায় থরথর করে কেঁপে কেঁপে, কখনো হাহাকারে, কখনো কান্নাকণ্ঠে, কখনো হা হা হাসিতে। এত বড় গল্পকার আমার জীবনে এখনো পাই নি। আমার গল্পের ভুবনটি এই বড়দিদির কাছ থেকে পাওয়া।
    এই বড়দিদি একদিন নি:স্ব হয়ে গেল। ততদিনে বড়দাদু মারা গেছে। নি:সন্তান হিন্দু বিধবার জন্য কে কবে চিন্তা করেছে? তার গরুটি, ঢেঁকিটি, ছোট্ট রান্নাঘরটি, পাথরের থালাটি আর কাঁঠাল কাঠের পিঁড়িটি এবং দালানের রুম দুটি দখল হয়ে গেল। তাকিয়ে দেখতে পেল, হা কৃষ্ণ, এই যে এতকাল ধরে যা আমার বলে আঁকড়ে ধরেছিলাম—তা আজ আমার নিজের কিছুই নয়? বড়দিদি চলে গেল কোথায় জানি না। যারা জানতে পারত, তারা তখন ধর্মাধর্ম নিয়ে ব্যস্ত। মানবাধিকার নিয়ে মগ্ন। সে বড় নির্মম গল্প। সে গল্প অন্য সময়ে হবে। শুধু আজ জীবনের মধ্যযামে এসে বুঝতে পেরেছি, লোভই মানুষের প্রকৃত ধর্ম। চারিদিকে শুধু লোভ লক লক করে। লোভের উপরে কথা নেই। ধর্মে তাই আমার অনাগ্রহ। বাতিল। আমার কাছে ধর্ম হল—ভাতৃঘাতি গল্পমাত্র। অন্তর্ঘাতের ললিত বয়ন।

    অক্ষর শেখার আগেই আমার মর্মে গেঁথে গেছে মহাভারতের কথা। যখন একটু একটু বড় হচ্ছি—তখন একবার মৃত্যু আমাকে নিয়ে কিছু হাতে নিয়ে লোফালোফি করেছিল। সে সময়ে আমার বাবা—একদিন ছলছল চোখে জানতে চেয়েছিল—তোর কী ইচ্ছে রে খোকা? ক্ষীণস্বরে কেন জানি বলেছিলাম, মহাভারত। মহাভারত।
    মায়ের কাছে ছিল আমার বৃত্তির টাকা। সেই প্রথম আমার জীবনে বই কেনা হল—মহাভারত আর রামায়ণ। আর প্রেমানন্দ ডাক্তার দিয়েছিলেন লাল একটি পবিত্র বাইবেল।

    ছায়া পড়লে সে সময় আমার মা আমাকে শুইয়ে দিয়েছে পেয়ারা তলায়। হালকা হাওয়ায় জলের মধ্যে পেট ডুবিয়ে শুয়ে থাকি। আর নেড়ে চেড়ে দেখি কাশীরাম দাস ভনের মহাভারত। পেয়ারা ডালে একটি দাঁড় কাক ঝিমোয়। শুনতে পাই আমার বড়দিদি বইয়ের পাতা থেকে বর্ণনা করে যাচ্ছে—ব্যাসদেবের জন্মকাহিনী, মহামতি ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা, যূধিষ্ঠিরের ধর্মের হাত ধরে বেড়ে ওঠা, আর কৌরবদের ক্রুরকথা। কৃষ্ণ এসেছেন রথের রথি ধরে। সারি সারি সৈন্য। অর্জুন বললেন, সখা, থামাও রথ। আমি দেখতে চাই কাদের বিরুদ্ধে আমি যুদ্ধ করতে এসেছি। অর্জুন দেখলেন, তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পিতামহ ভীষ্ম। ভাই দুর্যোধন। মাতুল শল্ব। আত্মীয়স্বজন আর আর বন্ধুজন। অর্জুন হতাশ। অস্ত্র ফেলে বলে উঠলেন, এদেরকে হত্যার বিনিময়ে আমি কিছুই চাই না।

    কৃষ্ণ মানবরূপী ভগবান। তিনি মুহুর্তের মধ্যে দেখালেন বিশ্বরূপ। এই বিশ্বে প্রতিদিন ডুমুর ফলের ন্যায় শত সহস্র লক্ষ প্রাণীর জন্ম হচ্ছে। আবার প্রতিদিন শত সহস্র লক্ষ প্রাণীর লয় হচ্ছে। সবই পূর্ব নির্ধারিত। অর্জুনরা শুধু অভিনয় করে যাচ্ছেন। কৃষ্ণ বলছেন, দেখো অর্জুন, তোমার এই মহাতেজা পিতামহ ভীষ্ম, অই দ্যাখো, তিনি মরে পড়ে আছেন। দেখতে পাচ্ছ—অই যে দুর্যোধন। আর দেখো দেখো, ছিন্ন মস্তকে ধুলোয় লুটাচ্ছেন গুরু দ্রোণাচার্য। তুমি নিমিত্ত মাত্র। যাও, ব্‌ৎস, যুদ্ধ কর। হত্যা কর। ধর্ম রক্ষা কর। ধর্মের জন্য কখনো হত্যাও পবিত্র কর্ম!

    অর্জুন বিষণ্ন বদনে যুদ্ধে যাচ্ছেন। একটানা আঠার দিন যুদ্ধ হল। মৃত্যুর স্তুপ জমে গেছে কুরুক্ষেত্রে—যুদ্ধক্ষেত্রে। ভীম, অর্জুন, নকুল, সহদেব এবং জ্ঞানী যুধিষ্ঠির যুদ্ধ করলেন। কিন্তু রাজা হলেন একা যুধিষ্ঠির। তিনি হলেন ধর্মরাজ। গুরু দ্রোণাচার্যকে হত্যা করতে তিনি মিথ্যে বলেছিলেন। এটাও ধর্মের সূক্ষ তঙ্কÄ বটে। এই ধর্মের নাম কি? লোভ। কেউ ধর্মের নামে লোভ করছেন। কেউ রাজত্বের নামে। কেউ প্রেমের নামে। কেউ যৌনতার নামে। কেউ স্নেহের নামে-- শ্রদ্ধার নামে। কেউ মহত্বের নামে। কেউ অমৃতের নামে। দেবত্বের নামে--ঈশ্বরত্বের নামে। লোভ ছাড়া আর কি আছে এই জগতে?
    আমি তখন দেখতে পাই, জননী গান্ধারী একাকী দাঁড়িয়ে আছেন যুদ্ধক্লান্ত কুরুক্ষেত্রে শ্মশানরক্ষেত্রে। সম্মুখে নিহত শতপুত্র। শিয়ালাদি তার সামনে মৃতদেহগুলি নিয়ে টানটানি করছে। গান্ধারীর চোখ বন্ধ। চোখ খুললেই ক্রোধের আগুনে ভষ্মীভূত হয়ে যাবেন যুদ্ধেজয়ী যুধিষ্ঠিরা, ভীম ,অর্জুন--সবাই। কৃষ্ণ তাকে শান্ত করছেন। আর দেখতে পাচ্ছি, হতভাগ্য পিতা ধৃতরাষ্ট্র কপালে করাঘাত করে হাহাকার করছেন। এই যুদ্ধের আয়োজনে তার অবদান কি কম ছিল!

    জননী গান্ধারী। জন্ম গান্ধারপ্রদেশে। গান্ধার মানে আজকের আফগানিস্তানের কান্দাহার। আর যিনি এই মহাকাব্যের নায়িকা—জন্মমাত্রেই যিনি রজ:স্বলা সেই দ্রৌপদী। দক্ষিণ ভারতের মেয়ে। অতি রূপবতী। কিন্তু কালো বলে তার নাম—কৃষ্ণা। তাঁকে জয় করে আনলেন অর্জুন—কিন্তু পতি হল পাঁচ ভাই। মহাভারতে বাংলাকে শুধু দেখতে পাওয়া যায়—যুক্ষক্ষেত্রে শত্রু সৈন্যের তালিকায় আর অশ্বমেধ যজ্ঞের নিমিত্তে অর্জুনের পরাভূত রাজ্যের স্থানে। মহাভারত বাংলার কাহিনী নয়। প্রাচীন ভারতের কথা। আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং ভারতের মানুষের কথা। পরমাপ্রকৃতির ইতিহাস। এই জীবন স্নেহ-মমতায়, শৌর্য-বীর্যে, মহত্ব-ক্ষুদ্রতা, ক্ষমা-হিংস্রতা, করুণা-নিষ্ঠুরতা, নিষ্কাম কর্ম-ভোগের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে অনন্তের অংশ হয়ে আবর্তিত হচ্ছে। পিছন ফিরে তাকানোর কেউ নেই। আছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান। অস্ত্র নয়—সবাই পরাভূত হয় অবশেষে বাক্যের কাছে।

    এই বাক্যস্বরূপ একটি বক পাখি সরোবরে এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে। ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির জলে নেমে অঞ্জলি ভরে জল পান করতে উদ্যত। বক পাখিটি বলছে, আমার বাক্যের উত্তর দাও। তারপর জলপান করো।
    অঞ্জলি থেকে জল গড়িয়ে পড়ে গেল যুধিষ্ঠিরের। তিনি দেখলেন বাক্যের কাছে পরাজিত হয়ে জলে ভাসছে তার মহাতেজা ভাই—ভীম, অর্জুন, নকুল ও সহদেব। স্বর্গের ইন্দ্রও মাঝে মাঝে এদের সাহায্য নিয়ে থাকেন। আর এখন পরাজিত একটি সামান্য বক পাখির কাছে। যুধিষ্ঠির বললেন, বলুন, কী জানতে চান?
    --এ জীবনে আশ্চর্য কী?
    --‘জন্মিলে মরিতে হইবে’.তবু সবাই বাঁচতে চায়—এই হল আশ্চর্য। আহা, বক পাখিটির কারণে আমরা জীবনের আশ্চর্যটি জানতে পারছি। বুঝতে পারছি, পাখিও কখনো কখনো মানুষের চেয়ে শ্রেয়তর।
    এই তো মহাভারত। অসংখ্য আখ্যান নিয়ে লিখিত হয়েছে এ গ্রন্থটি। একটি মালার মত। পরস্পর সম্পর্কিত। কোন কথা ও উপকথা অনাবশ্যক নয়। বোঝা যায় লেখক বা লেখকবৃন্দ ব্যাসদেব অনেক পরিকল্পনা করে লিখে গেছেন। এ কাহিনী অতি পুরাতন। আবার পুরাতন নয়। এ কাহিনী এ সময়ের। এ কাহিনী আমার তোমার। কোন ছিন্নসূত্র নেই। কেবল জন্মসূত্র হত্যাসূত্রে আবর্তিত হই নিজেই নিজের মধ্যে। অনন্তের মধ্যে।

    মহাভারতকে সংহিতা অর্থাৎ সংগ্রহগ্রন্থ বলা হয়। যে সকল খণ্ড খণ্ড আখ্যান ও ঐতিহ্য পুরাকালে প্রচলিত ছিল তাই সংগ্রহ করে মহাভারত সংকলিত হয়েছে। এতে কিছু দার্শনিক কথাবার্তা আছে। তা আধ্যাত্মবিদ্যার্থীদের অধ্যয়নের বিষয়। প্রত্নন্বেষীদের কাছে মহাভারত অতি প্রাচীন সমাজ ও নীতি বিষয়ক তথ্যের অনন্ত ভাণ্ডার। ভুগোল জীবতঙ্কÄ পরলোক প্রভৃতি সম্বন্ধে প্রাচীন ধারণা কি ছিল তাও এ গ্রন্থ থেকে জানা যায়। রাজশেখর বসু বলেছেন—প্রচুর কাব্যরস থাকলেও মহাভারতকে মহাকাব্য বলা হয় না, ইতিহাস নামেই এই গ্রন্থ প্রসিদ্ধ।

    শাস্ত্রবিশ্বাসী প্রাচীনপন্থী পণ্ডিতগণের মতে কুরুক্ষেত্রযুদ্ধর কাল খ্রীষ্টপূর্ব ৩০০০ অব্দের কাছাকাছি এবং তার কিছুকাল পরে মহাভারত রচিত হয়। ইউরোপীয় পণ্ডিতগণের মতে আদিগন্থের রচনাকাল খ্রীষ্টপূর্ব চতুর্থ ও পঞ্চম শতাব্দের মধ্যে। খ্রীষ্টজন্মের পরেও তাতে অনেক অংশ যোজিত হয়েছে।

    মহাভারতকথা স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক ব্যাপারের বিচিত্র সংমিশ্রণ। পড়তে পড়তে মনে হয় আমরা এক অদ্ভুত স্বপ্নদৃষ্ট লোকে উপস্থিত হয়েছি। সেখানে দেবতা আর মানুষের মধ্যে অবাধে মেলামেশা চলে। ঋষিরা হাজার হাজার বছর তপস্যা করেন এবং মাঝে মাঝে অপ্সরার পাল্লায় পড়ে নাকাল হন। তাদের তুলনায় বাইবেলের মেথুসেলা অল্পায়ু শিশুমাত্র। যজ্ঞ করাই রাজাদের সব চেয়ে বড় কাজ। বিখ্যাত বীরগণ যে সকল অস্ত্র নিয়ে লড়েন তার কাছে আধুনিক অস্ত্র তুচ্ছ। লোকে কথায় কথায় শাপ দেয়। সে শাপ ইচ্ছে করলেও প্রত্যাহার করা যায় না। স্ত্রীপুরুষ অসংকোচে তাদের কামনা ব্যক্ত করে। পুত্রের এতই প্রয়োজন যে ক্ষেত্রজ পুত্র পেলেও লোকে কৃতার্থ হয়। কিছুই অসম্ভব গণ্য হয় না। মনুষ্যজন্মের জন্য নারীগর্ভ অনাবশ্যক। মাছের পেট, শরের ঝোপ বা কলসীতেও জরায়ুর কাজ হয়।

    বড় হলে পড়ি কালীপ্রসন্ন সিংহের মহাভারত। তিনি পণ্ডিতদের দিয়ে গদ্যে অনুবাদ করেছিলেন। অসাধারণ সে গদ্য পড়ে মনে হয়—মহাভারত পদ্যে নয়—গদ্যে প্রস্ফুটিত হয় বিশালত্বের রূপরস গন্ধসমেত। আরও পরে রাজশেখর বসুর মহাভারত সারানুবাদটি হাতে আসে। তাঁর মহাভারতের ভাষা সাধারণের—অমৃত সমান। বাবার সঙ্গে পড়েছি খগেন্দ্রনাথ মিত্রের পাঞ্চজন্য। কৃষ্ণের শঙ্খের নাম পাঞ্চজন্য। কৃষ্ণপ্রধান আখ্যান বর্ণিত এ গ্রন্থে। আমার বৃদ্ধ শ্বশুর কাউকে দিতেন না শাম্ব বইটি। শাম্ব সমরেশ বসু--কালকূটের লেখা। শাম্ব কৃষ্ণপুত্র। আর সুবোধ ঘোষের ভারত প্রেমকথা মহাভারতের প্রেমিক প্রেমিকাদের অজর আখ্যান—বিশেষভাবে নির্মিত ভাষায় রচিত। এ বইটি আয়োজন করে পড়তে হয়। শকুন্তলার জন্য কতবার যে কেঁদেছি—তার বিদায় বেলায় হরিণ শিশুটির জন্য, নীলবর্ণ বন্য লতাটির জন্য, শান্ত আশ্রমটির জন্য। আর রবীন্দ্রনাথের বিদায় অভিশাপ মর্মরিত হয়ে আছে আমার বেড়ে ওঠার কাল।

    মনে পড়ে রাতে চাঁদ উঠেছে। ফুল ফুটেছে। হালকা হাওয়ার মধ্যে আমরা বসে আছি চবুতরায়—শুয়ে আছি বারান্দায়—উঠোনে—মাদুরে অথবা ঘাসে। রেডিওতে শুনতে পাচ্ছি---অশ্বত্থামা ঘোড়া ছুটিয়ে চলে এসেছেন সরোবরের পাড়ে। দুর্যোধন ভগ্ন উরু নিয়ে মৃত্যু প্রহর গুণছেন। তার সামনে পাঁচটিঁ ছিন্নমস্তক রেখে প্রণতি জানালেন অশ্বত্থামা। ততদিনে যুদ্ধ শেষ।

    পাঁচটি ছিন্নমুণ্ড। রক্ত ঝরছে। দুরাত্মা দুর্যোধন হাত দিয়ে ছুঁয়ে ছুঁয়ে আর্তনাদ করে উঠলেন, এরা কারা? কাদের কাটা মুণ্ডু নিয়ে এসেছ অশ্বত্থামা? এরা তো যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জুন, নকুল, সহদেব—পঞ্চভ্রাতা নয়। তুমি আমাকে খুশি করতে কাদের হত্যা করেছ?
    নিষ্পাপ শিশুদের হত্যা করেছে অশ্বত্থামা। নিষ্পাপ শিশু হত্যা ছাড়া এ জগতে আর কোন ইতিহাস আছে কি দুর্যোধন? এটা বুদ্ধদেব বসুর কাব্য নাটক অশ্বত্থামা। তখন আমার হাত ধরে আছে আছে বাবা। বুঝতে পারছি নাটকটি শুনতে শুনতে তিনি কাঁদছেন। চোখ থেকে জল ঝরছে। লোভ করে কী ধর্ম প্রচারিত হল দুযোর্ধন? যুধিষ্ঠির? অথবা কৌশলী ভগবান কৃষ্ণ? দ্রৌপদী যখন নাথবতী অনাথ হয়ে শাঁওলী মিত্রের কণ্ঠে হাহাকার করছেন, তখন আমার বয়স্ক মা উদ্ভ্রান্ত হয়ে পড়েছে। ধর্মাধর্ম কি? হিংসা? ক্রুরতা? নিষ্ঠুরতা? প্রতারণাপূর্ণ যাপন?
    এইখানে এসে থমকে যেতে হয়। এইকালে গবেষক কলিম খান এসে যান। তার বনের মর্ম থেকে বুঝতে পারি—মহাভারত কোন ধর্ম কথা নয়। রবীন্দ্রনাথ যেমন লিখেছেন—‘ইহা কোনও ব্যক্তিবিশেষের রচিত ইতিহাস নহে, ইহা একটি জাতির স্বরচিত স্বাভাবিক ইতিহাস।‘’সে ইতিহাসটি ক্রিয়ার্থবিধিতে লেখা। সে লেখার ভেতরের লেখাটি বুঝতে হলে পরমাভাষা জানা প্রয়োজন। সে ভাষাটি কলিম খান আবিষ্কার করে ফেলেছেন। এখন অপেক্ষা কেবল—নতুন ভাষ্যটি কখন কেবা নির্মাণ করবেন আমার জন্য, আমাদের জন্য—আগামীর জন্য। সে ভাষ্যটি পরমাপ্রকৃতির। মহাপ্রাণের। অনন্তের।

    কেননা সৌতি বললেন , কয়েকজন কবি এই ইতিহাস পূর্বে বলে গেছেন, এখন অপর কবিরা বলছেন, আবার ভবিষ্যতে অন্য কবিরা বলবেন।

  • kallol | 220.226.209.2 | ২১ জুলাই ২০১১ ১১:১৭483975
  • এই প্রসঙ্গে যদি উৎসাহ থাকে, পড়তে ভালো লাগবে।
    ১) ব্যাস - শাহজাদ ফিরদৌস (ব্যাসের জায়গা থেকে। কেন মহাভারত লিখতে উৎসাহিত হলেন)
    ২) বোধ পত্রিকার মহাভারত সংখ্যা
    ৩) পর্ব - এস এল ভৈরাপ্পা (কন্নড় লেখক) - মহাভারত নিয়ে উপন্যাস লিখেছেন শ্বল্যের দৃষ্টিকোন থেকে
    ৪) কৃষ্ণা কুন্তী কৌন্তেয় - নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুরী
    ৫) মিথস এন্ড রিয়েলিটি - ডি ডী কোশাম্বী
    অদ্ভুত একটা প্রশ্ন তুলেছেন। মহাভারতের যুদ্ধে জয়ী হলো কারা? যুধিষ্ঠির সব হারিয়ে নরক ঘুরে এসে দেখেন দুর্যোধন সগ্গে বসে ইজি চেয়ারে পা দুলোচ্ছেন। এই জায়গা থেকে ভারতীয় সমাজে পিতৃতন্ত্র ও মাতৃতন্ত্রের দ্বন্দ্ব।)

  • dd | 124.247.203.12 | ২১ জুলাই ২০১১ ১১:২৬483986
  • কুলদা রায়ের লেখাটা খুব ভাল্লাগলো।

    আসলে আমরা অনেকেই ওরকম ভাবে বড়ো হলাম, ঠাকুমা দিদিমা,রূপকথা, মহাভারত,পুরাণের গল্পো। সব গড়িয়ে মিশিয়ে একদম রক্তের মধ্যে বয়ে যায়।

    তাও ও রসভংগ করি। দ্রৌপদী আদৌ দক্ষিন ভারতের নন। যদি অলৌকিক জন্ম না মেনে দ্রুপদের মেয়ে ভাবি তাহলে মধ্যপ্রদেশী।

    কালো ঠিকই। সত্যবতী,তস্য পুত্র ব্যাস, বাসুদেব কৃষ্ণ,অর্জুন আর দ্রৌপদী- এয়ারা পাঁচজন কেলটুস ছিলেন। মহাভারতে জিতলো কালোরা। এটাই ফাইনাল স্কোর।

    এ সব না লিখলেও ক্ষেতি ছিলো না। কিন্তু এমন ইয়ে পাকা স্বভাব আমার।
  • dukhe | 122.160.114.85 | ২১ জুলাই ২০১১ ১১:৩৩483997
  • মহাভারতের কথা - বু..
    পাঞ্চজন্য তো খগেন্দ্রনাথ নয়, গজেন্দ্রনাথ ।
  • abastab | 61.95.189.252 | ২১ জুলাই ২০১১ ১১:৫৫484008
  • গজেন্দ্রকুমার
  • Kulada Roy | 74.72.54.134 | ২১ জুলাই ২০১১ ১৮:০৮484019
  • ধন্যবাদ কল্লোল দা। মহাভরাতে কেউ জয়ী হয়নি। ধর্মনামের সন্ত্রাস জয়ী হয়েছে বলে আমার মাঝে মাঝে মনে হয়। না হলে ভীষ্মকে দেখুন, তিনি অম্বাকে ছিনিয়ে নিয়ে আসছেন, কিন্তু অম্বা যখন দাবী তুলছেন--তাকে বিয়ে করছেন না। আবার সত্যবতীকে বাবার হাতে তুলে দিচ্ছেন। কারণ সেই ধর্ম। আবার দ্রৌপদী যখন দাবী তুললেন অপমানের বিচার করতে তিনি তখন ধর্মের কথা বলে ধর্মহীন হয়ে রইলেন। সবক্ষেত্রেই কিন্তু এক সর্বনাশা যৌথ সন্ত্রাসের ভবিতব্যের দিকে এগিয়ে দিচ্ছেন। চোখে আঙুল দিয়ে পাঠকদের বোঝানো হচ্ছে--ধর্ম সে যে নামেই হোক না কেন, যে আধারে থাকুক না তাকে এড়ানো যাবে না।

    গজেন্দ্রনাথই হবে। খগেন্দ্রনাথ টাইপো।

    নৃসিংহকুমারের কৃষ্ণা কুন্তি কৌন্তেয় বইটির ভাষ্য আমার খুবই ভাল লেগেছে। ওনার কলিযুগটিও অসাধারণ। ওখানে সন্ত্রাস নিয়ে একটি আলোচনা আছে।
  • kallol | 220.226.209.2 | ২১ জুলাই ২০১১ ১৮:৫৯484030
  • মহাভারতের জয়-পরাজয় নিয়ে নানান দৃষ্টিকোন আছে। আপনি ধর্মের মানে সন্তাসের জায়গা থেকে দেখছেন। কোশাম্বী দেখছেন মাতৃতন্ত্র-পিতৃতন্ত্রের দ্বন্দ্বের জায়গা থেকে।
    বলছেন, মহাভারতের কালে পিতৃতন্ত্র তার জায়গা বানিয়ে নিচ্ছে। চিন্তা বা দর্শন হিসাবে মাতৃতন্ত্র তখনও পুরোপুরি পরাজিত নয়।
    এই সময়, অর্থাৎ এই ট্রানজিশনের সময়, একটা অদ্ভুত বিয়ে চালু ছিলো। সমাজতঙ্কÄবিদরা তাকে নাম দিয়েছেন কনট্র্যাক্ট ম্যারেজ। যার উদাহরন শান্তনু-গঙ্গা, অড়ুন-উলুপী, ভীম-হিড়িম্বা। এই বিয়েতে সন্তান মায়ের কাছে থাকে। পিতা সন্তানের অধিকার দাবী করলে বিয়ে ভেঙ্গে যায় (শান্তনু-গঙ্গা এপিসোড)।
    কৌরবরা পিতৃতন্ত্রের প্রতিভূ, পান্ডবেরা মাতৃতন্ত্রের। প্রমাণ - গান্ধারীর ফেট্টি বেঁধে থাকা, কারন ধতরাষ্ট্র অন্ধ। ওদিকে কুন্তী ও মাদ্রী পান্ডুর অসমর্থতায় পান্ডুর অনুমতিতেই অন্য পুরুষগামী হচ্ছেন। শ্বল্য, নকুল, সহদেবের মামা, যখন কর্ণের সারথী হয়ে পূর্ব প্রতিশ্রুতি মতো তাকে হতোদ্যম করছেন। বলছেন অর্জুনের সাথে লড়তে যেও না, তুমি কচুকাটা হয়ে যাবে। তখন কর্ণ রেগে গিয়ে বলছেন - তুমি যুদ্ধের কি বোঝো হে। থাকো তো এমন একটা রাজ্যে, যেখানে মেয়েরা প্রভূত্ব করে। মদ্রদেশ। কেউ কেউ বলেন আজকের দাক্ষিনাত্যের কোন অঞ্চল। এখানে এখনো সম্পত্তিতে মেয়েদের অধিকার প্রথম। মায়ের সম্পত্তি মেয়ে পায়। বাবার সম্পত্তি বলে কিছু হয় না প্রায়।
    গান্ধারীর কথা কেউ শোনে না। তাঁর পুত্ররা তো নাইই। কুন্তীর পুত্রদের কাছে তাঁর ইচ্ছাই আদেশ। দুর্যোধনের বউয়ের নাম এক আধবার আছে। অন্যদের বৌয়েরা নন এনটিটি। দ্রৌপদী ছাড়া মহাভারতই হয় না।
    কুরুক্ষেত্রের পার্টিকুলার যুদ্ধে পান্ডবরা সামরিক ভাবে জিতেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জিতেছে পিতৃতন্ত্র। তারই উপমা হিসাবে দেখানো হয়েছে দুর্যোধনের স্বর্গলাভ। পান্ডবেরা যুধিষ্ঠির ছাড়া তখনও নরকে। যুধিষ্ঠরকেও নরক ঘুরে আসতে হয়েছে।
  • Kulada Roy | 74.72.54.134 | ২১ জুলাই ২০১১ ২৩:৩৫484041
  • এই ব্যাখ্যাটা অদ্ভুত। মন টানল।
  • siki | 122.162.75.8 | ২১ জুলাই ২০১১ ২৩:৪৮484052
  • অ্যা:। শল্য বানান ভুল লিক্‌চে কেন সবাই?
  • Sumit Roy | 68.192.169.219 | ২২ জুলাই ২০১১ ০২:৪৩483965
  • এই মাথাওয়ালা টইটা বেশ জমে উঠেছে, মোল্লার চকের দইয়ের মতো। অনেকদিন আগে যৌবনের ঔদ্ধত্যে হরিদাস ভট্টাচার্য মশায়ের চল্লিশ খণ্ডে প্রকাশিতব্য মহাভারতম্‌ কিনেছিলাম অগ্রিম দিয়ে -- যেমন যেমন প্রকাশ হবে প্রকাশক তেমন তেমন হাতে গরম পাঠিয়ে দেবেন, এই প্রতিশ্রুতির ওপর ভরসা করে। তা স্রোত কমতে কমতে ১৪-১৫ অবধি এসে একবারে রুদ্ধ হয়ে গেল। কিন্তু তার মধ্যেই যা আবিষ্কার করলাম তা খুবই আশাজনক। দেখলাম যে দ্বাপর থেকে কলিতে এসে আমাদের আধিদৈবিক আর আধিভৌতিক-- দুয়েরই অল্পবিস্তর উন্নতি হয়েছে। আধিদৈবিক-- দেবতারা হয় ফৌত হয়েছেন, আর না হলেও অতো রিরংসু নেই আর ...; আধিভৌতিক -- ভূতেরা জন্মনিয়ন্ত্রণ করতে শিখেছে ...। এই রকম আর কি। কুলদা রায় মশায় কথিত "কলিম-খানী" মহাভারতে আধ্যাত্মিক ব্যাপারটাতেও এমনি সুসমাচার পাওয়া যেতে পারে, সেই আশা নিয়ে রইলাম।
    পুনশচ: প্রতিভা বসুর (মিসেস বু-ব) "মহাভারতের মহারণ্যে" (বিকল্প, ১৯৯৭) চেখে দেখতে পারেন, মজাদার।
  • dd | 124.247.203.12 | ২২ জুলাই ২০১১ ০৯:২৬483966
  • অ্যাট কল্লোল। আরে:, মদ্র দেশ একেবারেই আপগানিস্তান। আদৌ দক্ষিনাত্য নয়। যেমতি চিত্রাংগদার মনিপুর হচ্ছে উড়িষ্যার কাছাকাছি এক অঞ্চল।

    দুর্যোধনের বউএর নাম মহাভারতে নেই। পরে একটি নাটকে (নাম মনে নেই) ভানুমতী নামে দুর্যোধনের বউএর ক্যারাকটার আসে।

    দু:শাসনের ছেলে ছিলো মহাবীর। অভিমন্যুকে সরাসরি যুদ্ধে নিহত করেন। তার নাম ও নেই। আগাগোড়াই শুধু দু:শাসন তনয় বলে উল্লেখিত আছেন।

    গান্ধারীর শতপুতের নামেও গন্ডগোল আছে। তিন চারটে লিস্টি আছে, সব মেলে না।দ্রৌপদীর পাঁচছেলের কোন্‌জন কার কার পুত্র- সেটাও হুবহু মেলে না। এদের মধ্যে বীরত্তোম ছিলেন সুতসোম,তাকে কখনো ভীম আর কখনো অর্জুনুএর পোলা বলা হয়েছে।

    যুধিষ্ঠিরের আরেকটি বউএর কথাও সভাপর্বে আছে, নামহীনা।
  • pi | 72.83.103.132 | ২২ জুলাই ২০১১ ০৯:৪৫483967
  • ডিডিদা ঐ একশোখানা নাম মিলিয়ে মিলিয়ে দেখেছেন !
  • dd | 124.247.203.12 | ২২ জুলাই ২০১১ ১০:০৩483968
  • ইয়েস !!!!

    আর ভীমের হাতে নিহত ভাইগুলোরে গুনতে গিয়ে দেখি সেখানেও একশ হচ্ছে না। এর মধ্যে আবার (বোধয়) ১৭ দিনে লেখা হোলো ফাঁকতালে পেয়ে অর্জুন ও কয়েকজন কৌরব ভাইকে মেরে ফেল্লেন।

    এরম বহু অসংগতি আছে।
  • pi | 72.83.103.132 | ২২ জুলাই ২০১১ ১০:২১483969
  • ক্ষী: ক্ষান্ড !

    আচ্ছা, এটা অনেকদিনের প্রশ্ন। এই সিরিয়াস টইতে যদিও করা উচিত হচ্ছে না। তখনকার দিনে ডাকনাম থাকতো না ?
  • n | 202.54.102.201 | ২২ জুলাই ২০১১ ১১:৪০483970
  • এই প্রসঙ্গে আর একটা বই।
    Pallace of Illusions by Chitra Banerjee Divakruni.

    দ্রৌপদীর চোখে মহাভারত তার নিজের কথনে।
  • dd | 124.247.203.12 | ২২ জুলাই ২০১১ ১১:৪৫483971
  • "সবাই সুদু অমুকের আর তুসুকের বই পড়তে বলেন। নানান সামাজিক থিওরীর একেবারে হদ্দ মুদ্দ। কিন্তু মূল মহাভারত কেউ পড়েন্না।" এই রকম বলে আপশোস করেছেন নৃসিংহ ভাদুড়ি।

    আম্মো তাই কই।
  • pi | 72.83.103.132 | ২২ জুলাই ২০১১ ১১:৫৬483972
  • মহাভারত নিয়ে কাল ভাটে অনেক কূটকচা৯ হচ্ছিল। ওগুলো নিয়ে অন্যরাও কেউ একটু বলুন !
  • kallol | 220.226.209.2 | ২২ জুলাই ২০১১ ১৩:০০483973
  • মূল মহাভারত সংষ্কৃতে। আমার এলেমের বাইরে। কালীবাবুর বাংলা, রাজশেখরবাবুর সংক্ষিপ্ত, কাশীরাম বাবুর পয়ার সবকটাই পড়েছি। উপেনবাবুর শিশুটাও।
    সগলেই কিছু কিছু পড়েছে ধরে নিয়ে এই বইগুলোর কথা বলছিলাম। তা না হলে ঐ বইগুলো পড়ে রস নেওয়া যাবে না।
    Pallace of Illusions হাতে এসেছে, পড়া শুরু করিনি।
    The Pregnent King ও পড়তে পারেন। দেবদূত না দেবদত্ত কার লেখা মনে পড়ছে না।
  • Kulada Roy | 74.72.54.134 | ২২ জুলাই ২০১১ ১৭:২৯483974
  • দাদা, স্বর্গেতো যুধিষ্ঠির একাই গেল। সবাই পথে পড়ে গেল। কিন্তু কুকুরটা পড়ে গেল না কেন? সে কেন দিব্যি যুধিষ্ঠিরের সঙ্গে দরোজা অব্দি পৌঁছে গেল বহাল তবিয়তে? এর ব্যাখ্যা কি?
    ৩দিন আগে আমাদের এক বান্ধবী প্রশ্ন করেছেন, পিতামহ ভীষ্ম এক প্রশ্নের উত্তরে বলছেন, এ জগতে দাম্পত্যমিলনকালে পুরুষের চেয়ে স্ত্রীজাতিরাই বেশি তৃপ্ত হয়। হতে পারে। আবার নাও হতে। এটা ভীষ্মবাবুর মত। কিন্তু ভীষ্মতো বিয়েই করেননি। ওনারতো দাম্পত্য জীবনের অভিজ্ঞতা থাকার কথাই নেই। তিনি এই কথাটা বললেন কিভাবে? বলার জন্য তিনি কি করে কৃষ্ণকথিত উপযুক্ত ব্যক্তি হন?
  • kallol | 220.226.209.2 | ২২ জুলাই ২০১১ ১৭:৪২483976
  • আরে:। সে তো আর এক গল্প। যখন ইন্দ্র যুধিষ্ঠিরকে স্বর্গে আসতে আহ্বান করলেন তখন উনি কুকুরটিকে সঙ্গে নিতে চাইলেন। ইন্দ্র আপত্তি করলেন, কুকুর কেন স্বর্গে যাবে!! যুধিষ্ঠির তখন ইন্দ্রকে প্রত্যাখ্যান করেন। বলেন এই কুকুরটি মহাপ্রথানের সারা পথ আমার সাথ দিয়েছে। একে ছেড়ে আমি স্বর্গে যেতে রাজি নই। তখন কুকুর থেকে উঠে এলেন ধর্ম। উনি খুব খুশী হয়ে যুধিষ্ঠির কে বর দিতে চাইলেন। যুধিষ্ঠির তখন ওঁর চার ভাই ও দ্রৌপদীর স্বর্গ কামনা করেন। ব্যাস। অত:পর সগ্গলে সগ্গে গিয়া সুখে কালাতিপাত কত্তে লাগলো।
  • kallol | 220.226.209.2 | ২২ জুলাই ২০১১ ১৭:৪৬483977
  • ভীষ্মবাবু বিয়ে করবেন না বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। আর কোন প্রতিজ্ঞা তো করেন নি। তবে আর সে সব জানতে বাধা কি!!
  • saikat | 202.54.74.119 | ২২ জুলাই ২০১১ ১৭:৫৫483978
  • মিলনকালে যে স্ত্রী জাতিই বেশী সুখ পায়, সেটা তো ভীষ্ম অনুশাসন পর্বে একটা গল্পের মাধ্যমে বলেছিল না?

    গল্পটা মনে হয় এরকম ছিল -

    এক রাজা ছিল (নাম মনে নেই), পুত্র-কন্যা ছিল। কার কাছ থেকে বর পায় যে, কোন একটা নদীতে ডুব দিলে পুরুষ থেকে নারীতে এবং উল্টোটা হতে পারবে। যেহেতু পুরুষ থেকে নারী হওয়ার পরে আর পুরুষ হতে চায়নি, সেটাই প্রমাণ করে যে মেয়েরা যৌনকার্যে বেশী তৃপ্ত হয় !

    এই গল্পটাই মনে হয় মানব ইতিহাসে একমাত্র প্রমাণ ঐ জটিল প্রশ্নটির সুরাহা করতে।
  • aka | 168.26.215.13 | ২২ জুলাই ২০১১ ১৮:০৩483979
  • ডিডিদা, অভিমুন্য সাত মহারথীর হাতে মারা যায় নি? দু:শাসন পুত্র মহাবীরের হাতে মারা গিয়েছিল? নাকি টাইপো অভিমুন্য মহাবীরকে মেরেছিল? টাইপো না হলে একটু গল্পটা লিখে দিন।
  • dd | 115.184.109.229 | ২২ জুলাই ২০১১ ২১:২০483980
  • গপ্পো আর কি।
    সংশপ্তকেরা অর্জুনকে অন্যত্র বিজি রাখলো।
    ব্যুহের মুখে জয়দ্রথ। সেদিন তিনি দেবী বরে অজেয়। সাত মহারথী অভিমন্যুকে ঘিরে ধরলে খুব মার্পিট হলো।
    শেষ রাউন্ডে দু:শাসন তনয়ের সাথে ডুয়েল। অভিমন্যুর মাথায় গদার বারি মেরে দু: ত'এর জয়লাভ।
    মাঝখান থেকে কেস খেয়ে গেলো জয়দ্রথ।
    যখন ব্যাংআলুরুতে যাবো(ইন্সাল্লা নেক্স' উইকে) তখনো তোমার উৎসাহ থাকলে বিস্তারিত লিখবো।
  • dd | 115.184.109.229 | ২২ জুলাই ২০১১ ২১:২৫483981
  • কৃত্তিবাস রামায়ণেও তেমতি আছে।
    রম্ভাকে ধর্ষন করলেন রাবণবাবু। রম্ভা খুব রেজিস্ট করলেন কিন্তু রাবণ রহো রহো করে "একাসনে শৃংগার করয়ে সপ্তদিন"।
    কবি কইলেন স্ত্রীলোকের রতি পুরুষের আটগুন, রম্ভা নাটক করছিলেন।
    তো কি বলবেন ?
  • Nina | 12.149.39.84 | ২২ জুলাই ২০১১ ২১:৩০483982
  • ডিডি , দ্রৌপদী কেন স্বর্গে যেতে পারলেননা? ওনার মনে মনে কর্ণকেও স্বমীরুপে পাওয়ার ইচ্ছা ছিল বলে? কর্ণের স্ত্রীর কোনো উল্লেখ আছে কোথও?
  • Kulada Roy | 74.72.54.134 | ২২ জুলাই ২০১১ ২১:৫৯483983
  • মহাভারতে কৃষ্ণ এতো গম্ভীর কেন? তার ষোলো শো সখিরা কই? আর রাধাই বা গেল কোথায়?
  • dd | 115.184.28.88 | ২২ জুলাই ২০১১ ২২:০৩483984
  • কর্নের তিন বউ। আট ছেলে। খুব উল্লেখ আছে।
    বৃষসেন ছিলেন মহারথী। বাকীরা এলেবেলে।
    দুর্যোধন বে' করেছিলেন কলিংগর রাজকন্যকে।
  • nk | 151.141.84.114 | ২৩ জুলাই ২০১১ ০০:১৪483985
  • কৃষ্ণের ছেলে শাম্ব হরণ করে নিয়ে বিয়ে করেন দুর্যোধনের মেয়ে লক্ষণাকে। সেই হিসাবে কৃষ্ণ আর দুর্যোধন পরস্পরের বেহাইমশাই। :-)
  • siki | 122.162.75.8 | ২৩ জুলাই ২০১১ ০০:৫৫483987
  • দ্রৌপদী জানতেন না কর্ণ ওনার ভাসুর হন।

    দ্রৌপদী পাঁচ স্বামীর স্ত্রী, কিন্তু অর্জুনের প্রতি ওঁয়ার বিশেষ পক্ষপাতিত্ব ছিল। অর্জুনকে উনি বাকি চারজনের থেকে বেশি ভালোবাসতেন। সেই অপরাধে তিনি সশরীরে স্বর্গে যেতে পারেন নি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন