এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • একটি এক্সপেরিমেন্টাল গল্প

    Sankha
    অন্যান্য | ৩১ আগস্ট ২০১১ | ৪৭২৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • Sankha | 71.187.134.121 | ৩১ আগস্ট ২০১১ ০৮:১১491099
  • শিবাংশুদা যেইখানে শেষ করলেন আমি ঠিক সেইখান থেকে ধরে নিলুম....

    ... শুধু নায়ক দৌড়োলো না, অস্ফুটে বললো, চিঠি দিও ...
    নায়িকা শুনতে পেলো কি না ঠিক বোঝা গেলোনা ...

    এই এতো ভোরে পুবের দরজা খোলেনি, আবছা অন্ধকার আর কুয়াসায় মাখামাখি হয়ে আছে এই ছোট্ট হল্ট। ঠিক স্টেশনও বলা যায় না একে, কয়েকটি ট্রেন, অল্প কিছু সময়ের জন্য এখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলে। এই ট্রেন, যাতে করে নায়িকা চলে যাচ্ছে তার দেশের বাড়ির দিকে, সেটি এই কিছুদিন হল এখানে স্টপেজ দিচ্ছে। ভোরবেলাতে। আর ফিরতি ট্রেন সেই রাঙা বিকেলবেলায়।

    ট্রেনের দিকেই তাকিয়েছিলো সে, একদৃষ্টিতে, পলক ফেললে যদি হারিয়ে যায়। কেউ কি তার মতই পাল্টা তাকিয়ে আছে এদিকপানেই, এই হল্টটির দিকে? তার দিকে?
    যখন আস্তে আস্তে নির্দিষ্ট বাঁক, কুয়াসা আর গাছপালায় মিলিয়ে গেল ট্রেন, ততক্ষণে তার চোখ কর কর করতে শুরু করেছে, একদৃষ্টিতে এতক্ষণ তাকিয়ে থাকার জন্যে।

    কংক্রিটে বাঁধাই ছোট্ট প্ল্যাটফর্ম, ইতিউতি মাথা চাড়া দিয়েছে ঘাস আর চারাগাছ। পাখির আবর্জনায় ভরা কয়েকটা কাঠ আর লোহার বেঞ্চি। অনেকটা উঁচু জমির ওপরে বানানো এই রেলপথ। লোকে বলে রেলপাড়। দুপাশে নেমে গেছে ঢাল, মিশেছে নিচের ধানজমিতে। সেই ঢালটুকু নানা রকম ঝোপঝাড়ে আর ছোটবড় গাছে ভর্তি। গাছের পাতায় পাতায় সারারাতের শিশির জমে টলটল করছে। কিটকিট করে কি একটা পোকা একঘেয়ে ডেকে চলেছে।

    দু'পা হেঁটেই একটা বেঞ্চিতে বসে পড়লো সে। এতক্ষণের জমে থাকা অস্বস্তিটাকে মুছে দিতেই যেন চোখের পাতা বুজলো, বুকের মধ্যে কোথাও একটা ভারি কপাট বন্ধ হতে অনুভব করলো সে। চোখের কোল বেয়ে একটা শীর্ণ ধারা নেমে এসে গালের ওপর জমল।

    পরে অনেকক্ষণ সেই শুকিয়ে যাওয়া জলের চড়চড়ে অনুভূতিটাকে নিয়ে, পুষে রেখে দিয়েছিলো। না, সে চোখ মোছেনি।

    (১) পূর্বরাগ
    -----------

    ক্লাস ইলেভেনের সায়েন্সের রুমটা একেবারে তেতলায়। ইস্কুল বাড়ির মগডালে। বাঁদিকে টুয়েলভ কমার্স, ডানদিকে টুয়েলভ সায়েন্স। বেশ বড়-সড় রুম। ভেতরে বিশাল বড় ব্ল্যাকবোর্ড। ক্লাসের একদিকে ঢোকার দরজা। উল্টোপিঠের দেয়ালে রুজু রুজু জানালা। সেই জানালা দিয়ে নিচে তাকালে দেখা যায় রাস্তা। স্কুলের দেয়াল আর বাউন্ডারীর পাঁচিলের মধ্যে ফাঁক সামান্যই। মাঝে মধ্যে এই সব উঁচু ক্লাস গুলো থেকে চক, কমলালেবুর খোসা এইসব হাবিজাবি ছোঁড়া হয় নিচের পথচলতি মানুষদের মাথায়। বদলে ফ্রিতে কাঁচা কাঁচা খিস্তি মেলে, পূর্বপুরুষ বা প্রজনন সংক্রান্ত জটিল বিষয় নিয়ে, কখনো সখনো কমপ্লেন। কেউ একবার বায়োলজির কাটা ব্যাঙ ছুঁড়েছিলো, সেই নিয়ে একবার সুরাসুরে সমুদ্র মন্থন হয়ে গেছে।

    স্যার বললেন, আজকে তোদের সরণ আর গতির অঙ্ক করাবো। আগে ফর্মুলা গুলো লিখে নে। ভি ইকোয়ালটু ইউ প্লাস এটি। যেখানে এ হল ত্বরণ। ভি হল ...

    কিছুই ভালো লাগছে না। তার মাধ্যমিকে মেকানিক্স অ্যাডিশনাল ছিলো। এই সব তার জানা সিলেবাস। ঘ্যাঁস ঘ্যাঁস করে বোর্ডে চকের পিন্ডি চটকানো চলছে। তার চোখ বারে বারে চলে যাচ্ছে বাঁ দিকে মেয়েদের বেঞ্চিগুলোর দিকে।

    এই অ্যাক মফস্বলি কায়দা হয়েছে। ক্লাসের বাঁদিকের বেঞ্চিগুলোয় মেয়েরা বসে। ডানদিকের বেঞ্চিগুলোয় ছেলেরা। এই অলিখিত আইন বোধহয় স্কুলের সেই জন্মকাল থেকে চলে আসছে।

    এই স্কুল খুব পুরোনো আর এই তল্লাটের সবচেয়ে নামকরা। এমনিতে কোএড না। কিন্তু ইলেভেন টুয়েলভ কোএড। ইলেভেনে এতো রাশি রাশি ভর্তির ফর্ম কি পড়ে এমনি এমনি। তবে হ্যাঁ, বহু সফল কৃতী ছাত্রের জন্ম দিয়েছে এই স্কুল। সেদিকে বললে হবে না। টিচাররাও যথেষ্ট নামিদামি।

    আর সেই রকমের রক্ষণশীল। পড়ানোর থেকেও যেন কে কার সঙ্গে একটু কথা বলে নিলো, নোট আদানপ্রদানের ফ্রিকোয়েন্সি মাত্রাতিরিক্ত কিনা, চোখে চোখে (হাহ) কথা বলো, মুখে কিছু বলো না (হায়রে), এই সব পাকড়াও করতে বেশি আগ্রহী।

    সে এখন যাকে দেখার চেষ্টা করছে, সেই মেয়েটি এই তল্লাটেরই। খুব ফর্সা, বড় বড় চোখ, সেই চোখে লুকিয়ে আছে যেন অতল জলের আহ্বান। তার রোগা কণ্ঠার হাড় একদুবার ওঠানামা করলো। মুখ ঘুরিয়ে তাকানো সম্ভব না, ভরসা হল বিশাল ব্ল্যাকবোর্ডের বাঁদিকে মুখটা রেখে চোখটাকে যতখানি বাঁয়ে ফোকাস করা যায়। বেশিক্ষণ এই ভাবে রাখলে চোখ-কপাল টনটন করে, ধরা পড়ে যাবারও সম্ভাবনা। দুদিন আগেই তারা এই নিয়ে ফিজিক্সের স্যারের কাছে প্যাঁক খেয়েছে, ওরে এইভাবে চললে তো চোখের পাওয়ার বেড়ে যাবেরে। ক্লাসসুদ্ধু সবাই ট্যারা হয়ে গেলি কি করে?

    স্যারের কথা শেষ হতে না হতেই বামফ্রন্ট থেকে ভেসে এসেছিলো হুহুহিহি হাসির রোল। যেন সবাই এতক্ষণ চেপে রেখেছিলো, এই কথাতে ড্যাম রিলিজ হয়ে গেলো। অগত্যা তারাও হাসলো, বোকার মত খ্যাক খ্যাক করে। স্যারের হাতেই ল্যাব। দু একজন খুব লাজুক ভাবে মাথা নিচু করে ফেললো। এই গুলো শালা ক্যালানে আতা।

    সে একটু আহত হয়েছিলো, কেননা সে মুহূর্তে সেও তাকিয়েছিলো সেই চোখদুটির দিকে, সেই কালো দিঘির নিথর জলে ছায়া, মুখে কি একটুকরো রোদের আভাস? কে জানে ... চোখের ভুল। প্রেমের খেলা কে বুঝিতে পারে, ও বাতাসীরে ...

    স্যারকি বনলতা সেন পড়েননি? ঐযে লাইনটা, পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে ...

    নিচের তলা থেকে ঢ্যাং ঢ্যাং উত্তাল বেল বাজার শব্দ আর সঙ্গে সঙ্গে নিচু ক্লাসের ছেলেপিলে দের হট্টগোলে জানান দিলো: টিফিন।

  • kiki | 59.93.160.170 | ৩১ আগস্ট ২০১১ ১৪:২৭491110
  • :)
  • Nina | 12.149.39.84 | ৩১ আগস্ট ২০১১ ১৮:৪৬491121
  • সাধু! সাধু!

  • Sankha | 71.187.134.121 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১১ ০৭:৪৯491132
  • (২) লাভ ইন দা টাইম অফ ...
    ----------------------------------

    সিনেমা মোড়কে লোকজন ঐ নামে ডাকে কেন সে ঠিক বোঝে না। মানে এখনও কেন ডাকে।

    বহু আগে এই মোড়ে ঠিক না, মোড়ের খানিকটা দূরে একটা সিনেমা হল ছিলো। ছিলো মানে যাকে বলে একেবারে পাস্ট পারফেক্ট টেন্স। তবু এই চৌমাথার মোড়ের সেই ত্রেতাযুগের নামটাই চলে আসছে।

    বিকেলের দিকে মোড়ের মাথায় ভিড় যেন উপছে পড়ে। একের পর এক লোকাল বা দূরপাল্লার বা স্টেট বাস গাদাগুচ্ছের লেন্ডি পেন্ডিকে উগরে দিয়ে চলে যায়। বদলে তুলে নেয় আরেক লট। বাদুড়ঝোলা ভিড়ের মধ্যে থেকে কন্ডাক্টার তারস্বরে চেল্লাতে থাকে, 'খালি বাস, খালি বাস,সিট আছে'। হেল্পার গন্তব্য আর মেন মেন স্টপেজের নাম ধরে ধরে রোলকল করে।

    ঘাড়ের ওপরেই নিশ্বাস ফেলছে ভ্যান আর রিকশার লাইন। গলার গালের হাড় বেরোনো শীর্ণ চালকেরা সিটের ওপরে বসে গামছা ঘুরিয়ে হাওয়া খায়। চাকার পেছনে কালো রঙের রবারের মাডগার্ডে দোল খায় বোম্বাইয়ের নায়িকার ছবি। ধুলো কাদাতে মুখ না চেনা গেলেও শরীরী বিভঙ্গের আবেদন প্রাণে পুলক জাগায়।

    রাস্তার পাশেই লম্ফ বা কুপি জ্বালিয়ে বসে খুচরো আনাজ বিক্রেতা, ইটালিয়ান সেলুন, সস্তার মনিহারি দোকান, লে লে বাবু ছ আনা। এক পাশে একটা যাত্রী প্রতীক্ষালয় আছে, সেটা এক রোল চাউমিনের দোকান ব্যক্তিগত ডাইন ইন করে নিয়েছে। সন্ধ্যের পর বুভুক্ষু জনতা সিমেন্টের বেঞ্চিতে যাহোক করে পেছন ঠেকিয়ে লাল রঙে ভরা কুমড়ো দিয়ে বানানো 'টমাটো সস' আর হলদেটে কাসুন্দি মাখিয়ে তেলতেলে হড়হড়ে চাউমিন গোগ্রাসে খায়। গনেশ দালদার হলুদ প্লাস্টিকের কৌটো খোলা থাকে ক্লান্তিহীন রোল ভাজার জন্যে। একটা কম বয়েসী বাচ্চা সারা সন্ধ্যে ময়দা ঠেসে ঠেসে লেচি বানায় রোলের। গা বেয়ে নামা গঙ্গা যমুনার ধারা জুড়োতেই হয়ত মাঝে মধ্যে তাকে বিরতি দিয়ে প্লেট, চামচ এই সব ধুতে পাঠায় দোকানি। দোকান খালি গেলে বাচ্চাটা ঐ সিমেন্টের বেঞ্চিতে বসে পা দোলায়। তখন বাচ্চাটাকে জগতের অন্যতম খুশি মানুষের একজন মনে হয় তার। প্রতীক্ষালয়ের ভেতরে ঝুল কালি পানের পিকে ভর্তি দেয়ালে সাঁটা থাকে পাতলা কাগজে লাল নীল সবুজ গেরুয়া কালিতে ছাপা ব্রিগেডে চলার তামাদি আহ্বান আর তার পাশেই ইউনানি চিকিৎসার হলুদ ছোট্ট বিজ্ঞপ্তি। পাশের শহরের ব্যস্ত সিনেমাহলে সগৌরবে ২য় সপ্তাহে চলা অনিল কাপুরের কোন সিনেমার নাম লেখা পোস্টার। এসবের মাঝখানে বাচ্চা ছেলেটার পা দোলানি দেখতে দেখতে তার কেন জানি সিলেবাসের দোরোখা একাদশী কবিতাটার কথা মনে পড়ে।
    সে এই দোকানের রেগুলার খদ্দের। ছিলো। কদিন আগেও।

    বহুবার ভেবেও সে মাথার মধ্যে মোটা নীল মাছির মত ভোঁ ভোঁ করে ঘোরা এই সব দৃশ্য চিন্তাকে গোবরচাপা দিতে পারে না। শুয়ে শুয়ে এই সবই সে খালি ভাবে। এখন তার হাতে অফুরন্ত সময়।

    তার জন্ডিস হয়েছে। এতদিন কায়দা মেরে 'কেস জন্ডিস' বলার সময় সে জানতো না, কেস আসলে কি। এবারে সে টের পাচ্ছে। একটু দেরিতে ধরা পড়েছে। এক প্রস্থ বমি, জ্বর, তলপেটে ব্যথা নিয়ে সে পাড়ার ডাক্তার বাবুকে দেখাতে আসে। তিনি বিশেষ দেরি না করে তাকে অষ্টপ্রহর নজরে নজরে রাখার জন্য নিজের খালি নার্সিং হোমে ঢুকিয়ে নিয়েছেন। তার রিকভারি প্রগ্রেস নাকি খুব স্লো।

    বাড়ি থেকে এই নার্সিং হোম পাঁচ মিনিটের হাঁটাপথ। ডাক্তার বাবুর বাড়িও পাশেই। তবু কেন এখানেই তাকে থাকতে হবে এই উত্তর ডাক্তারবাবু ছাড়া কেউ জানে না। কিন্তু গল্পটা এখানেই শেষ হচ্ছে না, তাকে নার্সিং হোমের খাবারও খেতে হচ্ছে, যেটাতে তার তুমুল আপত্তি। তার বাড়িতে ভালো রান্না হয়। সে সুখাদ্য খেয়ে অভ্যস্ত, সেখানে এই নার্সিং হোমে তাকে প্রায় জেলের খাবারে রাখা হয়েছে। দুপুরে খাবারের পর সে শুয়ে শুয়ে তেতো জিভ নিয়ে আকাশ পাতাল ভাবতে থাকে। সেইসব চিন্তার মধ্যে সিংহভাগ জুড়ে থাকে চেনা কোনো কালো হরিণ চোখের চাউনি, মুখের ডৌল, থ্রি কোয়ার্টার কামিজের মধ্যে থেকে বেরিয়ে থাকা সরু গোল কবজি, রেনল্ডসের ডটপেন দ্রুত ছোটে খাতায়, শান্তি আর বিদ্যার জন্য আঙ্গুলে বড় মুক্তোর আংটি তিরতির করে কাঁপে। তারও আছে আংটি ঐ রকম একটা।

    আর থাকে খাবারের চিন্তা। মুখরোচক, বাইরের খাবার। আগে রবিবারে সকালে তার বাবা বাজারের নামী দোকান থেকে আনতেন রাধাবল্লভী। এই মোটা মোটা তেল বা দালদা চপচপে রাধাবল্লভীতে কামড় মারলেই হিং আর ডালের সুবাস মাখা ভাপ ওঠে, জিভের মধ্যে একশো আহ্লাদে উথলে ওঠে নোলার জল। প্যাকেটের তলায় একটা ছোট্ট প্ল্যাস্টিকের প্যাকেটে আলুর দম। গায়ে মাখা মাখা। কোন কোন দিন এর সঙ্গে থাকে টাটকা ভাজা জিলিপি। সেই সব দিনগুলো তার যেন পূর্বজন্মের স্মৃতি বলে মনে হয়।

    কোন কোন দিন বিকেলে সে নিজেই টিউশনি সেরে ফেরার পথে সিনেমামোড়ের চপ-ঘুঘনির গলিতে ঢুকত। কয়েকটা দোকান সেরেফ এই সব বেচেই লাখপতি। সব যেন একেকটি আদর্শ হিন্দু হোটেলের হাজারি ঠাকুর।

    চপের দোকানে গনগনে উনুনে বিশাল কড়া আর সেই কড়াতে প্রায় জাতীয় কংগ্রেসের সমসাময়িক সরষের তেল টগবগ করে ফুটছে। এদের একটা নিবেদন প্রথা আছে, সে জানে। দোকানে এসে দোকানি সবার আগে উনুন ধরায়। আঁচ বুঝে তারপর চাপায় তেলের কড়া। সেটা দোকানেই বসানো থাকে মস্ত অ্যালুমিনিয়ামের ঢাকনা দিয়ে। দোকানি বাড়ি থেকে নিয়ে আসে আলুর পুর, মোচার পুর, সেদ্ধ ডিম। তেল গরম হতে হতে সে বেসন গুলতে শুরু করে মস্ত গামলায়। এই ধাপে এসে বড্ড সময় লাগে। কিন্তু কেন জানি তার এই প্রতীক্ষার সময় বিরক্তি আসে না। সে একমনে দেখতে থাকে চপ দোকানির নিষ্ঠা, তার নির্দিষ্ট সময় ধরে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বেসন ফেটিয়ে যাওয়া।

    তারপর সব রেডি হলে প্রথম চপটি বানিয়ে দোকানি আঁচের মধ্যে গুঁজে অগ্নিকে নিবেদন করে।

    এই নিবেদনের ফান্ডাটা সে কাজে লাগিয়েছিল।

    সে যে কেমিস্ট্রির টিচারের কাছে টিউশনি পড়ে, মেয়েটিও সেখানে ঢুকেছে। স্যারের নির্দেশে মেয়েটি তারই খাতা থেকে পুরোনো নোটস টুকে নেয় এবং কেমিস্ট্রি টিচারের ঐ তোতাপাখির মত হোটেলের মেনু আউড়ে যাবার স্পীডে নোটস দেবার সময়েও হাতের লেখা এতটা নীট দেখে অস্ফুটে বিস্ময় প্রকাশ করে। জনান্তিকে।

    সেটাই সে একটা মস্ত কমপ্লিমেন্ট হিসেবে নিয়েছে। এবং তারপর থেকে টিউশনি পড়তে গেলে মনে মনে নোটগুলি মেয়েটিকে নিবেদন করে, স্বপ্ন দেখে সে একে একে বাকি টিউশনির জায়গাতেও আসবে। আর সে তার হাতে তুলে দেবে সযত্নে লিখে রাখা এই সব নোটস। সে হয়ত অবাক চোখে এই সব দেখে বলবে ....

    মাঝে মাঝে নিজেকে অপু আর গান্ডুর মধ্যে বেছে নিতে বড় দ্বিধা হয় তার।

    টিউশনি গুলো এগিয়ে যাচ্ছে, সে পিছিয়ে পড়ছে, ক্লাস যেখানে ছিলো সেখানেই আছে। অন্তর্জলী যাত্রা করা বুড়োর মাথার পাশে বসে থাকা শকুনের মত জয়েন্ট নামের একটা কালো ছায়া সে মাঝে মধ্যে অনুভব করে নিজের মাথার মধ্যে। কয়েকটা বই সে এনেছে, কিন্তু মোটা মোটা বইতে কিলবিলে থিওরি আর গুপ্তধনের ম্যাপের মত সাংকেতিক অঙ্ক করতে একদম উৎসাহ পাচ্ছে না।
    তার মনটা একটু খারাপ।

    কিছুদিন হল তার বন্ধু ফিরে এসেছে। না, মেলায় হারিয়ে যাওয়া বন্ধু না। সেই নার্সারিতে শুরু, হাফ আর ফুলপ্যান্টের আমলে জোর থেকে জোরদার হওয়া বন্ধুত্ব। তারই সহপাঠী। মাধ্যমিকের পর বাইরে পড়তে গেছলো, মন টেঁকাতে আর ধুতি পরতে পারে নি (বন্ধু উবাচ: 'লোজ্জা করে'। টাইপো না)। ফিরে এসেছে। সেও ভালো স্টুডেন্ট, এই স্কুলেরই ছাত্র। স্কুল মিড সেশনে লুফে নিয়েছে।

    সবই ঠিক ছিলো, কিন্তু এই অসুস্থ হবার কিছুদিন আগে বন্ধুর হাবভাব দেখে আর কথাবার্তা শুনে তার মাথার চুল খাড়া হয়ে গেছলো।

    গতিক সুবিধের না। হেই মা কালী দেখিস মা...

    দেবদেবীদের নজরানা, শুকরানা ইত্যাদি নানারকম ঘুষ দেবার ফন্দিফিকির করে সে। একবার সুস্থ হয়ে বেরোলে হয়। ঐ রবিবারের দুপুরের মূক ও বধিরদের সংবাদ পাঠের মত হাবে ভাবে না, একেবারে ব্রিফ অ্যান্ড টু দি পয়েন্টে বলে দেবে ...

    একটা অস্থির উত্তেজনা যেন চ্যাটচেটে মাকড়শার জালের মত তাকে আটকে ফেলছে...

    সামনের দেওয়ালে মর্চে ধরা পেরেকে ঝোলানো ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে রামকৃষ্ণ তাঁর উদাত্ত হাসি নিয়ে চেয়ে থাকেন আবেগের চুড়োতে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বসে থাকা এই তরুণটির দিকে।

  • kiki | 59.93.198.31 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১১ ০৮:৫৬491143
  • ব্রেশ! ব্রেশ! :P
  • sayan | 160.83.97.84 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১৮:০৭491153
  • লিখে চল্‌ শঙ্খবাউ, গোগ্রাসে পড়ছি। :-)
  • Nina | 12.149.39.84 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১৮:৫৭491154
  • উফ!!! একেই বলে থামতে জানার আর্ট--& লিখতে জানার আর্ট----
  • de | 59.163.30.2 | ০২ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১৫:১০491155
  • ছবির মতো বর্ণনা! চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি যেন -- থেমে গেলো কেন?
  • pi | 128.231.22.133 | ০২ সেপ্টেম্বর ২০১১ ২৩:০০491156
  • এক্সপেরিমেন্ট বন্ধ হয়ে গেল নাকি ? ল্যাব থেকে ঠুকঠাক ঠুনঠান আওয়াজ আর আসেনা যে !
  • Sankha | 96.234.98.74 | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১১ ০৪:২২491100
  • থেমে যাওয়াটাও এক্সপেরিমেন্টের অন্তর্গত। ;-) পরীক্ষা তার পরে পর্যবেক্ষণ, এই রকম কি সব ছিলো না, স্টেপ গুলো?

    একটু থমকেই যখন গেছি, এইখানে ছোটখাট ডিসক্লেইমার দেওয়া যেতে পারে।

    ভূমিকম্পের লেখাটা ট্রায়াল বল ধরে নিলে এটাই আমার প্রথম লেখা এই পাড়ায়। অন্য যেখানে আমি মাঝে মধ্যে লিখি (মাঝে মধ্যে আন্ডার লাইন), সেখানে বন্ধুরা মোটামুটি আমার ফ্রিকোয়েন্সি জানেন। একটানা লেখার ধাত বা ক্ষমতা একেবারেই নেই। এই সপ্তাহে লিখলুম তো ঐ সপ্তাহে ভাঁড়ে মা ভবানী। এই বিষয় থেকে ঐ বিষয়ে লাফিয়ে যাই। সেটাও একটা এক্সপেরিমেন্ট করতে চাইছি, কেননা এখানে মেন একটা থিমের ওপরে লেখাটা দাঁড়িয়ে।
    থেমে যাওয়ার এই পুরনো রোগটা ক্ষমা ঘেন্না করে দেবেন।
    গল্পটা এবারে কোন দিকে মোড় নেয়, সেটা আমারও নিজের জানার ইচ্ছে।

    আপনাদের কয়েকজনের ভালো লাগছে জেনে খুশি হলুম। পরিশ্রম সার্থক। তবে তাঁদের অনেকেই পুরোনো প্রতিবেশি, নতুন পড়শিরা কে কি ভাবছেন জানার জন্য উৎসুক থাকলুম।
  • pipi | 173.161.6.201 | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১১ ০৫:১৬491101
  • বাহ! খুব ভাল লাগছে পড়তে। চলুক, চলুক।
  • Du | 14.96.67.74 | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১১ ০৮:৫১491102
  • নতুন প্রতিবেশীরা অনেকেই পুরোনো নীরব প্রতিবেশী। এবং তোমার লেখা চিরকালই পছন্দ করে :)
  • indrani | 124.171.12.145 | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১৭:২৭491103
  • কার কেমন লাগছে তা নিয়ে উৎসুক থাকলে কিন্তু একসপেরিমেন্ট হয় না ঠিকঠাক। আমার মতে।
  • indrani | 124.171.12.145 | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১৭:৩৪491104
  • মন্তব্যটা করে ভাবছি আপনি দু:খ পান যদি আমার কথায়। না লিখলেই হত। কিছু মনে করবেন না। একান্ত আমার মত।
    একসপেরিমেন্টাল শব্দটা না থাকলে হয়তো এরকম বলতাম না। আবারও দু:খপ্রকাশ করলাম।
  • Sankha | 96.234.98.74 | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১০:০২491105
  • (৩) PG-13 অথবা U/A এপিসোড
    -----------------------------------
    Rated PG-13 for language, sexuality and drug content

    - তুই আর নিস না।
    - ... (সে কাঁধ ঝাঁকায়)
    - এটাই লাস্‌স্‌ট কিন্তু!
    - শুয়োরের বাচ্চা! আর আনিসনি?
    - না বে ***। খিস্তি দিলি যে **!! তোর বাপের খাই না পরি? কাল থেকে নতুন *** খুঁজে নিবি! ইয়েতে ...

    তাদের এই অপ্রত্যাশিত গলাবাজিতে, একটু দূরে, সামনে ঝোপের পাশে বেশ ঘনিষ্ঠ ভাবে বসে থাকা কাপল একটু নড়ে চড়ে বসলো। অল্প বয়েসী মেয়েটি নিপুণ হাতে তার স্খলিত ওড়না ঠিক করে পরে নেয়। ঝামেলা খুব সংক্রামক জিনিস। সঙ্গী ছেলেটি এতক্ষণ অন্য এক জগতে ছিলো যেন। ধড়াম করে এই স্বেদ ও চেল্লানিতে ভরা প্রেমহীন কর্কশ পৃথিবীতে অবতরণ করে সে যেন একটু হতভম্ব ও শংকিত হয়ে পড়ে। যে প্রয়োজনে এসেছে তা মোটামুটি মিটে যাওয়াতে আর বেশিক্ষণ সঙ্গিনীর নেকু মৌখিক আবদারের ঘামাচিতে তার স্পর্শজনিত আদরের নাইসিল বোলাতে রাজি না সে। মেয়েটি ছাড়বে কেন?

    কিছু কথা কাটাকাটি হল বোধহয় নিজেদের মধ্যে। তারপর আগে ছেলেটি এবং পিছু পিছু মেয়েটি উঠে দাঁড়ালো। ছেলেটি দৃশ্যত:ই য: পলায়তি স জীবতি মোডে স্যুইচ করে গেছে। ঠিক তখনই তার বন্ধু একটা কুৎসিত হাসি হেসে অত্যন্ত আপত্তিজনক কিছু একটা মন্তব্য করে বসলো।

    চলে যাবার আগে মেয়েটি হঠাৎ তাদের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে দাঁতে দাঁত পিষে কিছু একটা বলে থু: করে একদলা থুতু ফেলেছিলো সামনের ঘাসে।

    সন্ধ্যেবেলার ঝুঁঝকো আঁধার ব্লটিং পেপারের মত সেই ঘৃণার উষ্ণ ক্লেদটুকু চেটেপুটে নি:শেষ করে নিয়েছিলো নিজের মধ্যে, লেশটুকুও রাখেনি দৃষ্টিগোচরে; কিন্তু ইথারের মত অশরীরী ভাবে ছোঁড়া অবজ্ঞাটুকু সপাটে তাকে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে যায়।

    তার সঙ্গের ছেলেটিকে হাত ধরে টেনে না থামালে একটা নোংরা বাওয়ালি শুরু হয়ে যেত সে জানে। গাঁজার ধুমকিতে আরক্ত ঘোলাটে নজরে মেয়েটির চলে যাওয়া দেখতে দেখতে সে প্রথমে নিজেকে নিয়ে হাসতে শুরু করে, হাসির দমকে ফুলে ফুলে উঠেছিলো সে, তারপরে সেটা কাশিতে পরিণত হয়। শুকিয়ে কাঠ বুকে গলায় কাশির দমকের প্রতিধ্বনি নিজের প্রতিটা রক্তকণিকায় শুনতে পাচ্ছিলো সে।

    স্থান: গড়। কাল: সন্ধ্যের চৌকাঠ ডিঙিয়ে রাত্তিরের দিকে। পাত্র: সে আর একজন। একা এবং কয়েকজন।

    সিনেমা মোড় থেকে যে পিচের রাস্তাটা একটু দক্ষিণমুখী হয়ে বেরিয়ে গেছে তার দুপাশে ঘড়ি সারাই ও বিক্রির দোকান, আলু-মুলোর মেক-শিফট সবজি মান্ডি, অষ্টপ্রহর রেডিও বাজানো একটা সেলুন, আলকাতরায় স্নান করা একটা পানগুমটি, পেপার-ম্যাগাজিনের দোকান যারা সিজন মাফিক রাখি ও রাখে, গ্রীটিংস কার্ড ও রাখে আবার বিশেষ সুরে 'আছে না-কি?' বলতে পারলে হলুদ রঙের মলাটে চটি বই ও যোগান দেয়। তার কাছে কোথায় লাগে সচিত্র সহস্র এক আরব্য রজনীর গল্প!
    সেই রাস্তা গিয়ে মিশেছে ওদিকে গার্লস হাইস্কুলের দিক থেকে আসা মোরাম বিছানো রাস্তার সঙ্গে।

    ধৌলিগঙ্গা আর অলকানন্দার প্রয়াগের মত দুটি রাস্তার সংযোগস্থল পুণ্যভূমি হয়ে আছে একটি জুতোর দোকানে। না, রসিকতা না। স্থানীয় দু একটি কলেজের অধ্যাপকরা, (দুর্জনে বলে, যাঁদের সেরকম টিউশনি জোটেনি) সন্ধ্যের ঝোঁকে এই জুতো দোকানে মিলিত হয়ে রাজা-উজির, অভাবে বামফ্রন্ট-কংগ্রেস মারেন। লোকে আদর করে এই আঁতেল ঠেকটিকে 'শু-ইউনিভারসিটি' বলে ডাকে। তাকে ছাড়িয়ে এগিয়ে গেলে রাস্তাটা একটা 'হ' এর মতো বাঁক নিয়ে এগিয়ে গেছে আঞ্চলিক কলেজ ও তাদের স্কুলের দিকে। এই রাস্তার বাঁ দিকে একটা মস্ত পরিখা কাটা আছে। সেটা পেরোলেই 'গড়' এর মস্তবড় স্বতন্ত্র ভূখন্ড।

    গড় অর্থে পূর্বেকার সামন্ত রাজাদের রাজবাড়ি ও তৎসংলগ্ন এলাকা। সেই রাজাদের রবরবা আর কিছুই এখন নেই, ক্ষত্রিয় যুগ পেরিয়ে বৈশ্যদের এখন বোলবোলাও। তবুও মরা হাতি লাখটাকা।
    তাদের স্কুলের ঠিক সামনে দিয়ে একটা ছোট ব্রিজ পেরিয়ে এই গড়ে ঢোকার মস্ত বড় ফটক। কাঠ আর লোহার সুপ্রাচীন ঔরসজাত এই ফটকের নিচে একটা ছোট দরজাও আছে। কখনো ফটক বন্ধ থাকলেও ঐ দরজা খুলে রাখা হয়। গরু, ছাগল, সাইকেল-সওয়ারি সবই গলে যায়।

    দুপাশে মস্ত মস্ত পাম গাছের সারি নিয়ে ভেতরের রাস্তাটা এগিয়ে গেছে বাহিরমহলের দিকে। বাহিরমহল অর্থাৎ কিনা সার্ভেন্টস কোয়ার্টার।

    বাহির মহল আগে থেকেই ম্যাড়ম্যাড়ে ছিলো, এখন তার জেল্লা আরো উবে গেছে, বাজারের একটা চালু মিষ্টির দোকান একটা বড় রুম নিয়ে তাদের রসুইঘর বানিয়েছে। অনেক বিকেলে সে আর তার বন্ধুরা এই রসুইঘরে এসে ঠাকুরের সঙ্গে সাঁট করে সদ্য ভাজা সিঙ্গাড়া কিনেছে ভেতরে রাজাদের দীঘির পাশে ভাঙ্গা পাড়ে আয়েশ করে বসে মারা আড্ডার রসদ হিসেবে। এই জায়গাটা পেরোনোর সময় রসুইঘর থেকে মাঝে মাঝে ভেসে আসে ছানার টোকো গন্ধ বা চিনির রসে পাক দেবার মিষ্টি গা গোলানো সুবাস।

    ভেতরে দুপাশে দুই সিংহের পাথুরে মূর্তি থাপুস আরামে বসে আছে অনন্তকাল। ছোটবেলায় সে এদের পিঠে চেপে হেই হ্যাট হ্যাট করতো। দুই সিংহের মাঝখানে প্রায় কুড়িফুটের বিস্তার নিয়ে ধাপে ধাপে উঠে গেছে পুরনো রাজবাড়ির মহার্ঘ্য শ্বেতপাথরে মোড়া সিঁড়ি। মূল দালানও মোড়া ঠান্ডা নিস্পৃহ এই ধবল অহংকারে। দালানের দুই ধারে অনেকগুলো গম্ভীর থাম বহু উঁচুতে উঠে গিয়ে মিশেছে খিলান আর কড়িবরগার জ্যামিতিতে। সিংহের পিঠ থেকে নেমে এক দৌড়ে এই দালানে উঠে এসে সে জড়িয়ে জড়িয়ে ধরতো এই সব থামগুলো। ছোট্ট দুই হাতে সে যেন অনুভব করতে চাইতো এই সব খাঁজকাটা থামগুলোর বিস্তার, ঘাড় উঁচু করে ওপরের কড়ি বরগা দেখতে দেখতে সে একপা একপা করে হেঁটে যেত দালানের হিমশীতল স্পর্শ পায়ে মাখতে মাখতে।

    কদিন আগেও সিগারেটের ছাই ফেলে তাতে গাঁজা পাতা ঠাসতে ঠাসতে এই সব আগেকার কথা গুলো তার মনে কোলাজের মত ভিড় করে আসছিলো।

    জীবনের রিওয়াইন্ড বাটনটা যদি কেউ টিপতো পারতো!

    যো জিতা ওহি সিকন্দর।

    পরের দিনে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে, ডাক্তার বাবু সেই আশ্বাস দিয়েছিলেন, পরের কদিনের ওষুধ আর পথ্য নিয়ে একপ্রস্থ কচকচানির পর। সেই ঝলমলে রোদের বিকেলে কখন একটুকরো মেঘ এসে ভাসছে সে টেরও পায়নি।

    বন্ধু দরজায় পা দিয়ে মুঠো করা হাত ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে যখন প্রথম কথা বলেছিলো, 'ইয়েস্‌স্‌স', সে একটা হার্টবিট স্কিপ করে।

    'লাভ' দিয়ে শুরু এই খেলায় সে আগে স্কোর করতে শুরু করলেও তার বন্ধু ফিরে আসার পর তারা মোটামুটি 'ডিউস' অবস্থানেই ছিলো বেশ কিছু দিন। তারপরেই তার 'কেস জন্ডিস' হয়ে যায়।

    এই অনুপস্থিতির কদিনের ক্রমাগত তোতাই-পাতাই, একসঙ্গে টিউশনি থেকে ফেরা, ভালো ছাত্র হিসেবে মেয়েটির বাড়িতে খাতির ইত্যাদি মিলিয়ে তার বন্ধু 'অ্যাডভ্যান্টেজ' ডিক্লেয়ার্ড ছিলো। বন্ধুর বাবা টিচার, মেয়েটি তাঁর কাছে টিউশনি পড়তে আসে। ঐদিনের দুপুরে ঘটনা মোড় নেয়। মেয়েটি কোনকারণে বাড়ি থেকে খোঁটা খেয়ে বা ঐ রকম কোন কারণে ছলছলে চোখে নির্দিষ্ট সময়ের একটু আগেই পড়তে চলে আসে। বন্ধুর বাবা সেদিন একটু বাইরে ছিলেন। বন্ধু এই সব দিনে নাওয়া খাওয়া ভুলে রোদ পোহানো কুমীরের মত আপাত নির্লিপ্ত ভাবে আড়চোখে জানালা দিয়ে চেয়ে বসে থাকত। সেদিনের ড্যামজেল ইন ডিসট্রেসকে দেখে তার ধ্যানভঙ্গ হয়, সে তাকে নিজের ঘরে এনে সবকথা মন দিয়ে শোনে, নানাবিধ লোকসভা এবং বিধানসভা সুলভ আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি দেয়, নিজের ভবিষ্যতের উঙ্কÄল পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা শোনায়, এবং উপছে পড়া চোখের জল আঙ্গুল দিয়ে মুছিয়ে দেবার সময় মূলাধার চক্রের তীব্র তাড়নায় চকাম করে মেয়েটিকে একটা চুমু খেয়ে বসে।

    তার বন্ধুর একটু তোতলামি আছে। উত্তেজিত হলে সেটা বেড়ে যায়। দুহাতেই বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে মধ্যমা, অনামিকা আর কনিষ্ঠার বিভাজিকা ঘষতে ঘষতে সে হড়বড় করে বলতে থাকে তার কথা। স্বাভাবিক সংস্কারের বশবর্তী হয়ে একটু ছিটকে গেলেও মেয়েটি নাকি তার গাল থেকে পিপারমিন্টের স্বাদ হাতের চেটো দিয়ে মুছে নেয় এবং নিজের জন্য একটা লজেন্সের ভাগ দাবি করে।

    বিরিঞ্চিবাবা পড়ে থাকার কারণে 'যা:' বললে তার ইন্টারপ্রিটেশন কি করতে হয় বন্ধু জানত, কিন্তু এই 'আউট-অফ-বক্স' লজেন্সের ভাগ চাওয়াতে সে এক লাফে সপ্তম স্বর্গে আরোহণ করে, তার পিঠ থেকে উদ্ভূত কাল্পনিক ডানার তলায় সে বাতাস পায়।
    তার বাবা ফিরে আসার কারণে মেয়েটির টিউশনি শুরু হয় আর সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে সবার আগে জিগরি দোস্তকে এই খবর জানিয়ে একটু হালকা হতে আসে।

    গেম 'বন্ধু'।

    তার সুস্থ হয়ে ওঠা কয়েকদিন পিছিয়ে যায়। সুস্থ হয়ে বেরিয়ে আসার পর সে নিজেকে আস্তে আস্তে সরিয়ে নিতে থাকে সবকিছু থেকে, নিজের মধ্যে গুম হয়ে যেতে থাকে, কোন এক বিকেলে রেলপাড়ের পাশে খুঁজে পায় গাঁজার এক ঠেক এবং সবকিছু, বিশেষকরে নিজেকে হারিয়ে দেবার দুর্দম ইচ্ছেতে আস্তে আস্তে গড়, রেলপাড়ের ঠেকের নিয়মিত হাজিরা ছাড়া আর কোনরকম ব্যাপারে আগ্রহ হারাতে থাকে।

    পরবর্তী জীবনে এই অন্ধকার দিনগুলোর শিক্ষা তার অনেক কাজে লেগেছিলো। সেটা সে পরে অনুভব করে। কিন্তু ততদূর যাবার অনেক আগেই, মাত্র একবছর পরে সে টের পায়,
    ১ এই গানটা স্রেফ তার জন্যই লেখা হয়েছিলো:

    'যে আমার নতুন খেলার জন/ তারি এই খেলার সিংহাসন
    ভাঙারে জোড়া দেবে সে/ কিসের মন্তরে ...
    খেলাঘর বাঁধতে লেগেছি
    আমার মনের ভিতরে..'

    এবং ...
    ২ রোলার কোস্টার রাইডের সবেমাত্র প্রথম লুপটা সে নেমেছে ...

  • Nina | 12.149.39.84 | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১১ ২৩:০০491106
  • উইকএন্ড এসে গেল --তাই শঙ্খ-সাহেবকে ডাক দিয়ে গেলাম---গল্পটা এবার একটু এগোবে তো??!!
  • Sankha | 198.45.19.50 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১১ ০০:৪৯491107
  • নিনাদি,

    হ্যাঁ, মোটামুটি খসড়া রেডি। কয়েকটা জায়গা একটু বাকি আছে, সেগুলো সেরে খুব শিগগিরিই পরের কিস্তি(s) আসিতেছে।
  • Tripti | 128.210.80.42 | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১১ ২০:২৮491108
  • শঙ্খ,

    গল্প এবং লেখা দুটো ই এক্ষপেরিমেন্টাল, মানে তোর যে ধরনের লেখা পড়ে অভ্যস্ত ছিলাম, তার থেকে একদম নতুন ধরনের।
    নবীন কিশোরের আনন্দ দু:খ দারুণ ফুটে উঠছে তোর কলমে। চালিয়ে যা------
  • Sankha | 96.234.98.74 | ২০ সেপ্টেম্বর ২০১১ ০৩:৩৫491109
  • (৪) স্প্রিং, সামার, ফল, উইন্টার ... অ্যান্ড স্প্রিং
    ----------------------------------------------

    স্প্রিং
    ****

    সিনেমা মোড়ের সেই 'ছাত্রবন্ধু' বইয়ের দোকানটা থেকে তারা একটা হলুদ চটি তুলে এনেছে। দোকানি তাদেরকে প্রথমটা খুব একটা পাত্তা দিতে না চাইলেও পরে যখন কনভিন্স হয় যে এরা লাইনেরই লোক, নতুন খদ্দের, একটু কিন্তু কিন্তু করে তাদেরকে একটা চটি দিয়েছে। 'ভালো?' এই প্রশ্নের জবাবে সে (দোকানি) একটু হাসে।

    কদিনের না কামানো খোঁচা খোঁচা দাড়ি নুন-গোলমরিচের মত ছড়ানো আছে তার মুখময়। কালচে খয়েরী ঠোঁটের ফাঁকে ময়লাটে দাঁত উঁকি মেরে যায়, কেমন রহস্যময় ঠেকে তার হাসি। বিশেষ করে তার চোখ হাসে না। সে বলে, 'বাবু, ময়রা মিষ্টি খায় না। তোমরা চাও, তাই আমি রাখি। এসব সখ আমাদের জন্য না গো।'

    পরে একটা কুচো বাচ্চা নটরাজের পেন্সিল রাবার কিনতে এলে তাকে নিয়ে দোকানি ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তাদের দাম মেটানো হয়ে গেছলো, তারা প্যাডেলে পা চালায়।

    গড়ের ভেতরে নতুন আর পুরনো দুটো রাজবাড়ি আছে। সামনে সিংহ নিয়ে পুরোনো রাজবাড়ি। অযত্নের ছাপ সর্বাঙ্গে। সেখান থেকে বহু পুরনো ছোট ছোট ইঁটে বাঁধানো, মাটি আর ছোট ঘাসে ভর্তি রাস্তাটা ডানদিকে বেঁকে গেছে। সেই রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলে পুরনো রাজবাড়ির বিস্তার বোঝা যায়।

    একটু এগোলে রাস্তাটা দুদিকে ভাগ হয়ে গেছে। ডানপাশে রাজাদের গোপাল-রাধার মন্দির। লোকে বলে গোপালজীর মন্দির। তার পাশ দিয়ে রাস্তাটা চলে গেছে নতুন রাজবাড়ির দিকে।

    বাঁ দিকে গেলে রাজদীঘি আর মস্ত বড় মাঠ। ওদিকটা বড় নির্জন আর খোলামেলা। তারা নতুন রাজবাড়ির দিকেই এগিয়ে গেলো।

    সে পথে ডানদিকে একটা মস্ত বড় ঢিবি। কেউ বলে ওর ওপরে কামান রেখে দাগা হত, কেউ বলে ওর তলায় অনেক মানুষ পোঁতা আছে। মানুষ রহস্য বড় ভালোবাসে। নিজে নিজে তৈরি করে নেয় মিথ, গল্প, উপকথা। নতুন প্রজন্ম সেই সব গল্প খুব মন দিয়ে, গালে হাত রেখে শোনে, অবচেতনে তাতে মেশায় নিজের পছন্দের রঙ। একটু একটু করে পাল্টে যায়, অগমেন্টেড হয়ে যায় গল্প। এই ভাবেই চলে নির্মাণখেলা।

    ঢিবির উল্টোদিকে সারি সারি গাছ বেশ প্যাটার্ন মেনে লাগানো আছে। তাদের নিচু নিচু ডাল, বাঁকানো গুঁড়ি, এই সব অল্পবয়েসী স্থানীয় ভাটুরেদের রোয়াকের কাজ করে। এর মধ্যে আছে এঁচড়ে পাকা স্কুলের ছাত্র থেকে কলেজের রাজনৈতিক দাদা, বেকার হতাশ যুবক থেকে মধ্যবয়েসী ধান্দাবাজ উটকো লোক।

    এই জায়গাটা তাদের বেশ পছন্দের, কোন দিন এখানটা বেদখল দেখলে তাদের মটকা গরম হয়ে যায়। আজকে মাঠ ফাঁকা, তারা এমনিতেই উত্তেজিত, এবারে একটু খুশিয়াল হয়ে ওঠে।

    সবাই মিলে চাঁদা করে বই কেনা হয়েছে, কিন্তু কেউ একা পড়বে তা তো হয় না। ঠিক হয়েছে কেউ একজন পাঠ করে শোনাবে, বাকিরা জায়গা মতো ফুট কাটবে। পাঠের দায়িত্ব সে নিজে থেকেই নেয়।

    একেবারেই বিশেষত্বহীন সেই বই। এবিটিএ-র টেস্ট পেপারের মত বাজে রদ্দি কাগজে ছাপা। মলাটে কোন নাম নেই। খুলতে প্রথম পাতাতে নাম লেখা 'মধুর মিলন'। নিচে লেখক রসিকলাল বা ঐ রকম কিছু, আর কি একটা আলফাল প্রেসের নাম-ঠিকানা ইত্যাদি।

    বেশি ভনিতা না করে পরের পাতা থেকেই গল্প। প্রচুর চেনা অচেনা টার্ম, স্ল্যাং, মাখো মাখো বিবরণ। একেকটা লাইন পড়ে আর জনগণ খোরাক শুরু করে।

    প্রথম গল্পটি বেশ দ্রুত শেষ হয়ে যায়। সবাই বেশ জমিয়ে বসে, কাছকাছি এগিয়ে আসে। কার্টেন রেইজারেই চমকে দিয়েছো মামা, পরে তাহলে কি আছে!

    পরের গল্পটিও সে পড়তে শুরু করে।

    শুরু করেই তার কেমন একটা খটকা লাগে। তবুও সে পড়ে যায়। পড়তে পড়তে সে সঙ্গীদের দিকে তাকায়। তারা উশখুশ করে। একজন আর অসোয়াস্তি চাপতে না পেরে বলেই দেয়, 'আগের গল্পটাই পড়ছিস নাকি **? ছেলে *** জানে, পাতা উল্টোতে জানে না।'

    বাকিরা খুকখুক হাসে। সে বক্তার বিশেষ অঙ্গে লাথি মারার একটা ভঙ্গি করে। বইটা খুলে তাদের সামনে ধরে, '**-র ভাই, এটা কোন পাতা? শেখাতে এসেছেন *** ঠাকুর!'

    সেই আগের গল্পটাই ছাপা হয়েছে। যাহ্‌ শালা!! সে পাতা উল্টোয়। আবারও উল্টোয়। তারপর উল্টেই যায়।

    বিস্মিত সবার সামনে সে নিজেও একটা অবিশ্বাস আর উত্তেজনা নিয়ে দেখে কোন ছাপাখানার ভূত না, কোন প্রিন্টিং মিসটেক না, ঐ একটা গল্পই মোট ছবার ছাপা হয়েছে।

    তারা মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। এ ওর দিকে তাকায়। একটা দমবন্ধ করা সাসপেন্স তাদের মধ্যে। এভাবে টুপি পরানো? বই দোকানিকে ক্যালানো হবে নাকি? বাকিরা কে কি বলে?

    তারপর প্রচন্ড জোরে হো হো করে হাসিতে ফেটে পড়ে তারা। কে শুরু করে জানা নেই, কিন্তু সবাই সঙ্গে সঙ্গে যোগ দেয় তাতে। এ ওর গায়ে পড়ে যায়, সবাই সবাইকে জাপটে ধরে হাসে। ঘাসজমিতে গড়াগড়ি দেয় তারা। তাদের হাসিতে একটু দূরে একটা চড়াই আর তার গিন্নি আরো দূরে লাফিয়ে লাফিয়ে পালিয়ে যায়।
    মাঝে মাঝে 'মুর্গি বনে গিয়েও' মানুষের ছানার এই সব অর্থহীন হাহা হিহি, তাদের প্রতিদিনের খুঁটে খুঁটে খেয়ে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে নিয়োজিত, নিমজ্জিত বোধগম্যতার বাইরে।

  • Nina | 12.149.39.84 | ২০ সেপ্টেম্বর ২০১১ ২০:৪২491111
  • আর একটু হাত চালাকে ভাই----সুন্দর হচ্ছে :-))
  • Sankha | 96.234.98.74 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১১ ০৪:২২491112
  • সামার
    ****

    বালির ওপর দিয়ে হাঁটছে ওরা চারজন। চুপচাপ। কারো মুখে কোনো কথা নেই। পায়ে স্যান্ডালের মধ্যে বালি ঢুকে কিচকিচ করছে। নরম অনভ্যস্ত পায়ে, আঙ্গুলের ফাঁকে ফাঁকে সব জায়গায় বালি ঘষা খাচ্ছে নির্মম জুতোর দেওয়ালে, নুনছাল উঠে গিয়ে সবারই পায়ের পাতা অল্পবিস্তর জ্বলছে। তবুও যেন এক ঘোরের মধ্যে দিয়ে ওরা হাঁটছিলো।

    বাঁদিকে হাতছানি দিয়ে ডেকে ডেকে আগুপিছু করছে কুমিরডাঙ্গা খেলতে চাওয়া সমুদ্র। ডানদিকে বেশ অনেকটা দূরে এগোলে বালিজমি আস্তে আস্তে উঁচু হয়ে টিলার আকার নিয়েছে, তারও ওপাশে সবুজের আভাস। কোন বন টন হবে। সমুদ্রের তীরবর্তী মোটামুটি নামকরা এই ছোট অঞ্চলটিতে বেড়াতে এসেছে ওরা।

    যেখানটায় সবাই জলে নেবে হুটোপুটি করছে সে জায়গাটা বড্ড নোংরা। রাস্তা বালিয়াড়ির টিলার ওপরে, বেশ একটু দূর আছে, সেখান থেকে সাগরের সফেন শীতল সীমানাটুকু পেতে গেলে বোল্ডার, মানুষ বা অন্য প্রানীর বিষ্ঠা, জঞ্জাল, পচা কাঠ, মরা মাছ, সামুদ্রিক প্রাণীর খোলা, শাঁখের টুকরো, স্নানে নামা আমোদগেঁড়ে পাবলিকের চটি, ডাবদোকানি, নুলিয়া, 'রামতেরি গঙ্গা মৈলি' স্টাইলে সিক্তবসন/বসনা টুরিস্টের ছবি তুলে দেবার ফোটোগ্রাফার এই সব হাজার একটা বাধা বিপত্তি পেরিয়ে আসতে হয়। তারা এই সব থেকে দূরে যেতে চায়।

    তাই তারা সাগরের সীমানা ধরে ক্রমাগত হেঁটে চলেছে। প্রথমটা একটু একা-বোকা লাগছিলো, তাই নিজেদের মধ্যে হুটোপাটি করে তারা ভরিয়ে রাখছিলো তাদের শহুরে কানে তালা লেগে যাওয়া এই নীরবতা।
    প্রথমটায় সবাই নানান আকৃতির শামুক-ঝিনুক বা আরো নির্দিষ্ট করে বললে সেসবের ভাঙা-আধভাঙা খোলা কুড়োচ্ছিলো। কে হঠাৎ করে একটা হলুদ ছিটছিটে ফুটকি ওয়ালা আস্ত ঝিনুক পেয়ে গেলো, বাকিরা একটু হতাশ, সবাই ইউনিক কিছু পেতে চায়, সে একটু খোঁজাখুজি করে পেয়ে গেলো একটা বেশ বড়ো প্যাঁচলাগানো শাঁখ। বেশ হালকা কমলা তার রঙ। সবাই একবার করে কানে নিয়ে শুনতে চায় তার গর্ভে চিরদিনের মত প্রতিধ্বনিত হয়ে যাওয়া সমুদ্রের গর্জনের শব্দ। এক বন্ধু বললো, 'অ্যাই এটা কিন্তু দক্ষিণমুখী না।'
    - 'তাই নাকি, সেটা আবার কি জিনিস'?
    - 'আরে সেই যে গল্প ছিলো না, লীলা মজুমদারের, গুপির মেশোমশায়ের দক্ষিণমুখী শাঁখ, ডাকাতি আটকে দিয়েছিলো'।

    এই ভাবে কথার পিঠে কথা এসে বসে। চলতে থাকে আড্ডা। মাঝে মধ্যে দু এককলি গান। তার গলায়। সে গান ভালো গায়।

    আকাশে মেঘে রোদে ঠেলাঠেলি চলেছে। সেই ছায়া পড়ে ঘোলাটে নীল গম্ভীর সমুদ্রের ওপর। তখন কেমন একটা বিষণ্নতা ভেসে আসে। বহুদূরে জলের ওপরে একটা বয়া ভাসছে। তার কালো শরীর যেন হাবুডুবু খাওয়া কোন সামুদ্রিক দানবের মাথা বলে মনে হয়।

    তৃতীয়জন বললো, 'চল একটু বসে যাই'।

    একটু দূরে একটা মস্ত বড় কাঠের গুঁড়ি মুখ থুবড়ে পড়ে আছে বালির মধ্যে। সেইটেতে তিনজন বসলো। ভাঁটার টান শুরু হয়েছে, জলের সীমানা যেন একটু পিছিয়ে গেছে। সে নিজের জুতোটা খুলে ভেজা বালির ওপরে রেখে তার ওপরে বসলো।

    সামনে বেশ অনেকটা ছড়ানো যায়গায় একটা অদ্ভুত দৃশ্য। জমি এখানে অজস্র ছোটবড় গর্তে ভর্তি। সেই সব গর্তের চারিদিকে একচিলতে করে বালি আর মাটির বেড়। সমস্ত জমিটাকে যেন ব্রেইলে লেখা একটা মস্তবড় বইয়ের পাতা মনে হবে অনেক ওপর থেকে দেখলে।

    আর সেই সব গর্ত দিয়ে পিলপিল করে আনাগোনা করছে অজস্র লাল রঙের ছোট ছোট কাঁকড়া। তারা একদৃষ্টিতে চেয়ে রইলো সেই দিকে।

    অনেক পরে সে আস্তে আস্তে গান ধরেছিলো, 'আমার যেদিন ভেসে গেছে চোখের জলে/ তারি ছায়া পড়েছে শ্রাবণ গগন তলে'।

    তার বন্ধুরা চেয়ে থাকে দূরে সমুদ্রের অতল জলের দিকে। সে তাদের চোখ এড়িয়ে আনমনে হাতের শাঁখের কোণা দিয়ে ভেজা বালিতে একটা খুব চেনা নাম লিখতে থাকে আস্তে আস্তে। একবার লেখা হয়ে গেলে সে খুব মমতা ভরে প্রতিটি অক্ষরে, প্রতিটি টানে, প্রতিটি সরল বা বক্র রেখায় বুলিয়ে দেয় তার আঙ্গুল। নখের ফাঁক থেকে ঝরে ঝরে পড়ে আধভেজা বালির রেণু।

    গান শেষ হবার পরেও তার রেশ ফুরোয় না। শুধু একটু দূরে ঝাউ বা অন্য কোন গাছের বনে শনশনে বাতাস বয়। সমুদ্রের ঢেউ মাথায় করে বয়ে আনা ফেনা রেখে যায় পাড়ে। একসময় একটা ঢেউ একটু বেশিই এগিয়ে এসে ধুয়ে নিয়ে যায় তার লেখা নাম। বাকিটুকু সে হাত দিয়ে মুছে দেয়।

    অনেকক্ষণ বসা হয়েছে, উঠে দাঁড়িয়ে সে প্রস্তাব দিলো, সবাই মিলে আগ্রাসী ঢেউ এর ওপর দিয়ে দৌড়ানোর। বেশ মজা! সবাই রাজি। জল ছপছপিয়ে তারা তারা ছুটছে, পায়ের তলা থেকে সরে সরে যাচ্ছে বালি, পায়ের লোমে জড়িয়ে যাচ্ছে সাদা ফেনা, কেমন একটা কিরকিরে ভালোলাগার অনুভূতি।

    একটুও না হাঁপিয়ে তারা অনেকটা দৌড়ে গেলো। তারপর একজন বুদ্ধি দিলো ব্যাপারটাকে আরো মজার করে তোলার জন্য।

    এখন চারটে ছেলে জলের ওপর দিয়ে ছুটে চলেছে, পরনের অন্তর্বাসটুকু ছাড়া তারা বাকি সব জামা কাপড় খুলে রেখে দিয়েছে পাড়ের কাছে। উদোম খালি গায়ে চুমু খেয়ে যাচ্ছে সতেজ নোনা হাওয়া আর তাতে মিশে থাকা আর্দ্রতা। কাপড় ভিজে যাবার পিছুটানটুকু না থাকায় তারা অনেকবেশি সাবলীল, ঘোড়ার মতই ক্ষিপ্র, পরোয়াহীন। এইভাবেই ছুটতে ছুটতে তারা হয়তো পার হয়ে যাবে তাদের সব ভুলতে চাওয়া ক্ষতমুখ, বিষণ্নতা, জমে থাকা সব তুচ্ছতা।

    আপাতত তারা দৌড়েই চলেছে, সব কিছু ভুলে। আর ভাঁটার টানে ভেতরের দিকে সরে যাওয়া সমুদ্র তাদের জন্য যেন একটু একটু করে জায়গা ছেড়ে দিচ্ছে।

  • kiki | 59.93.169.197 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১৭:৫৯491113
  • গান শুনবো......... এখানে কিছু টই আছে, যাতে গুরু ও চন্ডালদের নিজেদের গলার গান লোডিয়ে লিং দেওয়া আছে।:P

    শিগ্গিরি দিয়ে দাও।
  • Sankha | 198.45.19.50 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১৯:৪২491114
  • কিকিদি,
    খাইসে, কার গান শুনবে? :-))
  • Nina | 12.149.39.84 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১১ ২০:৩৯491115
  • বাহ! খুব সুন্দর , শঙ্খ।জমে গেছে! চলুক চলুক--

    কিকি ;-) ঘুম্পায় নাকি রে তোর --টইটা "আমাদের গান" দেখি তুলতে পারি কিনা
  • Sankha | 96.234.98.74 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১১ ০৪:৩৭491116
  • ফল
    ***

    মশারির বাইরে থেকেই মার হাঁকডাকে আর হাতের ঠেলা খেয়ে তার ঘুম ভেঙ্গে গেলো।

    বাইরে এখনো অন্ধকার। পাখিটাখি কেউই খুব একটা হল্লাগুল্লা জুড়ে দেয়নি এখনো। এতো সকালে ঘুম থেকে ওঠা তার কস্মিন কালের অভ্যেস নয়। তবু আজকে উঠতে হবে, বা বলা ভালো সে উঠবে।

    আজকে মহালয়া। প্রতি বছর রেডিওতে মহিষাসুরমর্দিনী শুনে তাদের পরিবারের এই দিনটি শুরু হয়। কোনো ব্যতিক্রম নেই।

    চোখে এখনো গঁদের আঠার মত ঘুম লেপটে আছে, বাঁ হাত দিয়ে পিচুটি ছাড়াতে ছাড়াতে সে পাশের ঘর থেকে সন্তোষের মাঝারি সাইজের রেডিওটা নিয়ে এলো। লাল কাঁটা কততে আছে দেখতে গেলে আবার টিউবলাইট জ্বালাতে হয়, তার চেয়ে অন্ধের মত চাকা ঘুরিয়ে গেলেই হয়, একসময় না এক সময় স্টেশন আসবেই।

    মায়ের আর তর সয় না, তার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে নিয়েই রেডিও সেট করেন, একটু পরে ঘর গমগমিয়ে ওঠে, ইয়া চণ্ডী, মধুকৈটভাদি দৈত্যদলনি... র গায়ে কাঁটা দেওয়া স্তোত্রপাঠে।

    ঈষৎ বুড়োটে সেই চেনা গলাটা যখন অমোঘভাবে 'আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জির' ঘোষণা করে, সে বাতাসে কাল্পনিক শিউলির গন্ধ পায়। পুজো শুরু হয়ে গেল।

    মহিষাসুরমর্দিনী শোনার সময় আবার ঘুমিয়ে বা শুয়ে পড়া তাদের বাড়িতে নিষেধ, তবুও বেশ আয়েশ করে শোনার অছিলায় সে পিঠের বালিশে হেলান দিয়ে আবার নিমীলিত নয়ন হয়ে পড়ে। এই ভোরের আধো ঘুম, আধো জাগরণ বড় মিষ্টি লাগে তার।

    গলাবুক জ্বালিয়ে দেওয়া একটা চোঁয়া ঢেকুরের ঠেলায় তাকে অবশ্য একটু বাদেই ধড়মড়িয়ে উঠতে হল। মুখভর্তি তেতোভাবটা চেপে রেখে পুরো অনুষ্ঠানটা শুনলো সে। ইতোমধ্যে পাশের কয়েকটা বাড়িতেও গাঁক গাঁক করে রেডিও চালিয়ে দিয়েছে, তারা নিজেরা শুনেই ক্ষান্ত না, পাড়াতুতো যাদের রেডিও নেই, বা কানে কালা, সব্বাইকে শুনিয়ে ছাড়ার মহৎ পণ করে ফিল্ডে নেমেছে।

    লুচি আলুভাজা হালুয়া সাঁটিয়ে যখন গেট থেকে সাইকেলটা বের করছে নিজেকে একটু সুস্থ মনে হল তার। সেই হাকুচ তেতো ভাবটা আর নেই মুখের মধ্যে। তবুও মায়ের বানানো, বিটনুন আর লেবু দিয়ে জারানো, একচিমটে যোয়ান মুখে রেখেছে সে।

    মিনিট পনেরো বাদে যখন সে তার টিউশনের স্যারের বাড়ির গেট দিয়ে সাইকেল ঢোকাচ্ছে, অবাক হয়ে দেখলো তার ব্যাচের সবাই ইনক্লুডিং স্যার, বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। তাড়াতাড়ি মুখ থেকে যোয়ানের চেবানো দলা ফেলে দিলো সে। তার গলার কাছটা আবার একটা পাক মেরেছে।

    ***********
    আকাশ আজকে ঝকমকে নীল একটা শাড়িতে খুব সেজেছে। সেই শাড়ির আঁচলে ছোপকা ছোপকা অনেক সাদা সাদা মেঘের কারুকাজ। রোদের আলো সারাদিন অনেক প্রশংসা করে এখন ফুরিয়ে এসেছে, তবুও আকাশের গালে রাঙা লাজুক ছোপ এখনো পড়ে নি।

    নীলরঙা ম্যাটাডোরের পেছনে পেট সমান উঁচু পাটাতন থেকে তাদের লাইব্রেরি টিচারের সাদা কাপড়ে মোড়া নিথর দেহটা নামাতে নামাতে তার দৃষ্টি কেন জানি ঐ ওপরে আকাশের দিকেই চুম্বকের মত কেউ টেনে নিচ্ছিলো। অথবা এও হতে পারে, এর আগে এতো কাছ থেকে মৃত্যুমাখানো মুখের জ্যামিতি সে আগে কখনো দেখেনি বলে তার নার্ভাস সিস্টেম বারবার বিদ্রোহ করছিলো। মাথার দিকটাই সে ধরে আছে। মাত্র ফুটকয়েকের ব্যবধানে জীবিত আর মৃত দুটো সঙ্কÄ¡ একে অন্যকে দাবাবোর্ডের ঘুঁটির মত নিবিষ্ট ভাবে জরিপ করে নিচ্ছে অদ্ভুত এক টেলিপ্যাথি দিয়ে।

    ম্যাটাডোরের চালক যখন তার হেল্পারটাকে খেঁকিয়ে উঠলো, 'বডি নামানো হয়ে গেছে। যা পেছনটা একবার দেখে নে, বাবু গোডাউন হয়ে আসতে বলেছে', সে একবার শিউরে উঠলো। 'বডি' কথাটা তার অনভ্যস্ত কানে পেন্সিলের খোঁচার মতে লাগলো। তাহলে এই মানুষটা আর কারো স্যার নয়, আর কারো কোন কাজে আসবেনা, সবার সব হিসেব-নিকেশ চুকিয়ে মানুষটা কি নিদারুণ খরচা হয়ে গেলো!! এই শরীরটা যখন কোন এক অজানা শক্তির দেওয়া দমে চলছিলো, কতবার তাকে এ র‌্যাক সে র‌্যাক থেকে ঝেড়ে ঝুড়ে খুঁজে এনে দিয়েছে পুরনো দুÖপ্রাপ্য বই, সে কতবার এই মানুষটাকে তার সাইকেলের রডে বসিয়ে স্কুলে নিয়ে গেছে, স্যারের হাঁটতে বড্ড কষ্ট হত নাকি, সে মাঝে মধ্যে চালাকি করে ভিড়ের অছিলায়, অন্যমনস্কতার ভান করে, সোঁ করে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে গেছে, পাছে এই মানুষটাকে ক্যারি করতে হয়।

    সেই লোক আজকে 'বডি' হয়ে শুয়ে আছে তাদের স্কুলের সামনে। অনেক লোক জমা হয়ে গেছে। সবার মুখে মুখে ঘুরছে মৃত্যুর কবর, জল্পনা-কল্পনা।

    সকালে এই খবরটা শুনে তার শরীর খারাপ লাগা বেড়ে যায়। একটা সময়ে সে আর থাকতে না পেরে ঝরঝর করে বমি করে ফেলে। আগের সপ্তাহেই স্যারকে নিয়ে সে সাইকেল চালিয়ে গেছে।

    স্যারের শরীর ভালো ছিলো না এটা স্যার মুখে না বললেও কাছে পিঠের সবাই মোটামুটি বুঝতো, মহালয়ার আগের রাতে সেই খারাপ লাগা চরমে ওঠে। আভ্যন্তরীন কোন এক খিঁচুনিতে নাকি শরীরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছিলো। তাঁর স্ত্রী পাড়ার ক্লাবের ছেলেদের হাতে পায়ে ধরে মাঝরাত্তিরে কাছের হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে সব নিয়মকানুন চুকিয়ে ভালোমত চিকিৎসা শুরু হবার আগেই তিনি সব কিছুর অনেক দূরে চলে যান। যাবার আগে বড্ড কষ্ট পেয়ে গেলেন কয়েক ঘন্টা ধরে।

    সেই মানুষটা এখন শুয়ে আছে তাদের স্কুলের সামনে। অনেক ছাত্র জড়ো হয়েছে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। এরপর এখান থেকেই তাঁকে শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হবে।

    ভিড়ের একপাশে স্যারের রোগা, ছোটখাটো স্ত্রী মাটিতে থেবড়ে বসে আছেন, এই পৃথিবীর কোন কিছুই তাঁকে যেন ছুঁতে পারছে না। তাঁর আঁচলের খুঁট ধরে মুখ লুকিয়ে আছে তাঁর ছোট্ট ছেলে। এত সব হট্টগোল, মায়ের কান্না সে কিছুই ভালো করে বুঝছে না। তার ভীরু চোখ একটা খুব চেনা নিজের মানুষকে খুঁজছে, যে মানুষটা হয়ত বিকেলে ফিরে তাকে কোলে তুলে নেয়, হয়ত তাকে রাত্তিরে হালকা চাপড় দিয়ে ঘুম পাড়াতে পাড়াতে একটা কোনদিন শেষ না হওয়া গল্প বলে, সে ঘুমিয়ে পড়লে আস্তে করে তার মুখ থেকে তার বুড়ো আঙ্গুল বের করে মুছিয়ে দেয় গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়া লালা।

    একটা অদ্ভুত তীব্র অনুভূতিতে ধুয়ে গেল তার মন মাথা, গলার কাছটা দলা পাকিয়ে উঠলো। কয়েক পা হেঁটে এসে সে তার মায়ের পাশ থেকে বাচ্চাটাকে টেনে নিয়ে বসলো। কোলের ওপর বাচ্চাটাকে বসিয়ে তার মাথার ওপরে সে নিজের থুতনি ঠেকিয়ে বসে থাকলো, তার খুদে খুদে ঠান্ডা হাতগুলো নিজের মুঠোতে ধরে।

    আজ মহালয়া, পিতৃপক্ষের শেষ, দেবীপক্ষের শুরু। তার কোলের মধ্যে ধুকপুক করছে যে শিশু সে যে জানেই না, তার পিতৃপক্ষ ইহজন্মের মত শেষ।

  • Nina | 68.45.76.170 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১১ ০৮:৩৪491117
  • বাহ! শঙ্খ!
    এখন না আর কিচ্ছু বলতে ইচ্ছে করছেনা! সবটুকু এখন চুপকথারা বলুক!
  • pi | 72.83.92.218 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১১:২৫491118
  • ভাল লাগছে, শঙ্খদা।
  • Sankha | 198.45.19.50 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১১ ২৩:১৩491119
  • টই তলিয়ে যায় দেখি!
  • pi | 72.83.92.218 | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১১ ০৯:৫৪491120
  • না লিখলে তো তলিয়েই যাবে :)
  • Shibanshu | 59.90.221.5 | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১০:৩১491122
  • তলায়নি, তলায়নি... এটা ব্রেশ্‌টীয় বিচ্ছিন্নতা...:-)
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন