এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • এত খেয়ে তবু যদি নাহি ওঠে মনটা

    Suki
    অন্যান্য | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১২ | ৫৬৯৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • গান্ধী | 213.110.243.22 | ১৩ মে ২০১২ ১০:৪০530410
  • আচার এখন বিক্রি হয় অন্যভাবে ।। ছুটির দিন বাড়ি থাকলে এখনো খাই। রোল,চাউমিনের স্টল যেমন হয় তেমন গাড়ি করে আসে। ফুল ভলিউমে কুমার শানু বা উদিত নারায়নের গান বাজে। আর অনেক ধরনের আচার।

    বাচ্ছাবেলায় স্কুলে টিফিনে মাঝে মাঝে (যেদিন পয়সা যোগার হত) আচার খেতাম। ছোট কুলের (টোপা নয় কিন্তু) আচার ছিল ফেভরিট। আর ছিল কারেন্ট। ২৫ পয়সায় কারেন্ট পাওয়া যেত, হজমির মত, সাথে বিটনুন । অদ্ভুত ভালো লাগত। এখন কারেন্ট পাওয়া যায়না ঃ(

    ফুলকপির সিঙ্গাড়া

    হা হা !! পাওয়া যায়, আমাদের পাইকপাড়ায় পাওয়া যায়। শীতকালে বাড়িতে থাকলে সকালবেলা এবং বিকেলে চা খেতে বেড়িয়ে ফুলকপির সিঙ্গাড়া মাস্ট
  • সুদীপ্ত | 79.132.108.212 | ১৩ মে ২০১২ ১১:৩৬530411
  • আরে পাইকপাড়া-র কোন দোকান টা সেটা বেমালুম চেপে গেল! কি আক্কেল!! নইলে শীতকালে ফুলকপির সিঙ্গাড়া সারা কলকাতা/মফঃস্বল/পঃবঃ জুড়ে সর্বত্র বহু দোকানে মেলে :(
  • গান্ধী | 213.110.243.22 | ১৩ মে ২০১২ ১১:৪৭530412
  • না না !! চাপলুম কোথা /?? পাইকপাড়ায় ২নম্বর বাসস্ট্যান্ডের কাছে (টালা ট্যান্কের কাছাকাছি) একটি বিখ্যাত কচুরি-সিঙ্গাড়ার দোকান আছে। সব দোকানেই পাওয়া যায় জানি। কিন্তু ওখানেরটা একটু স্পেশাল
  • siki | 151.0.10.54 | ১৩ মে ২০১২ ১৬:৪৪530413
  • pi boro hole Sagormoy Ghosh hobe :-)
  • সোসেন | 125.241.86.185 | ১৩ মে ২০১২ ১৭:৫৯530414
  • কবে যে শীতকাল আসবে! ঃ(
  • kk | 117.3.243.18 | ১৩ মে ২০১২ ২০:০৭530415
  • সোসেনের লেখাটা খুব ভালো লাগলো। লেখার স্টাইল আর বিষয় দুটোই চমৎকার। সুকির লেখা পুরোটা এখনো পড়ে ওঠা হয়নি। কিন্তু যেটুকু পড়েছি তোফা লাগছে। আবার ঐ একই কথা, স্টাইল আর বিষয় নিয়ে। এই টইটা আমার খুব পছন্দের টই হয়েছে। লেখা চলুক।
  • সোসেন | 125.241.72.173 | ১৪ মে ২০১২ ০৯:২২530417
  • এইটা কারেন্ট কিস্তি

    কচু খেলে যা...

    বাঙাল দের সাহসের অন্ত নেই তার প্রমাণ হল তঁাদের খাদ্যাভ্যাস। ওল এবং কচু কে যাঁরা পাতে এবং ভাতে ম্যানেজ করতে পেরেছেন, দুনিয়ায় তাঁদের অসাধ্য কিছু নেই।

    কচু লিখে গুগল সার্চ করতে গিয়ে পেরথমে পেলাম- কচু কেন খাবেন। কেন খাবো না? এমন ইররেলিভ্যান্ট কোশ্চেন জম্মে শুনি নি। খেয়ে প্রাণ তর হয়ে যায় তাই খাবো।

    ঘটিরা পড়বেন/ খাবেন কিনা জানিনে। তবে আমার কথায়, না খেলে ঠকা।

    কচু এখন বাজারে দিব্বি মেলে, কিন্তু নিঃসন্দেহে কচুর স্বাদ বদলেছে গত কয়েক দশকে( বেশি দশকের এক্সপিরিয়েন্স নেই, তাই নিজের কানেই কেমন বেঁড়ে পাকামি শোনালো। এই ধরুন গত দুই দশকে)।

    তার কারণ, সম্ভবত, এখন কচু চাষ হয়। আগে এমনি লোকের বাগান ছাইফেলার জায়গায় হত, তার স্বাদ লা-জবাব। আমার বর্তমান বাসস্থানে যখন আসি, তখন পাঁচ কাঠা জমির এক কানাচে আমাদের বাড়ি, আর বাকি সব জায়গা জুড়ে কচুক্ষেত বল্লেও অতু্যক্তি হয় না। আপনমনে গজিয়ে উঠে তারা শোভা বর্ধন করছিল পৃথিবীর। দুষ্ট মানবজাতি এসে প্রথমেই তাদের আক্রমণ করলো বঁটি নিয়ে। আহা সে পৈশাচিক আনন্দের কথা আর কি বলব। ইয়াব্বড় বড় মানকচু। মানকচু, গলা ধরছে কিনা প্রথমে দেখে নিতে হবে। রোদে শুকোতে হবে অল্প। তারপর, সরষে দিয়ে কচু বাটা, সাথে কাঁচা লঙ্কা বাটবেন। সাদা গরম ভাতে মেখে প্রায় সব ভাত ই আমি খেয়ে ফেলবো, যদি গলা না ধরে। গলা ধরতে পারে, সব পরীক্ষার পর ও। কিছু করার নেই। ত অভাবে তেঁতুল জলে সিদ্ধ করে আলুসেদ্ধর মত মাখলেও হিট। গলা ধরার চান্স ও কম।

    ভয় পাচ্ছেন? নিয়ে আসুন দুধকচু। গলা ধরার চান্স মিনিমাম। একই ভাবে বেটে খেতে পারেন, যদিও মানের মত স্বাদ পাবেন না। আমাদের বাড়িতে সুপ্রচুর দুধ-কচু হত। বড় উপাদেয়। খেয়ে বিলিয়ে ও মাটির নিচের সেই স্বর্ণভান্ডার শেষ করা কঠিন ছিল।

    তা ছাড়া তরকারি রাঁধুন। পিঁয়াজ রসুন দিয়ে কচুর কষা দম। কচু আলু র জিরেবাটা দিয়ে সবজি । তরকারিতে বেশি ভাল লাগে দুধ কচু, মানকচু কিঞ্চিৎ শক্ত।

    একেবারে নিরিমিষ হল গে গাঁটিকচু। গলাও ধরবে না।

    রাঁধবেন কি করে ? কচু কোরমা সেফ প্লে। ভাল লাগবেই। গোল গোল করে ভাপানো কচু কাটুন। সঁাতলে নিন নুন দিয়ে। এবার পিঁয়াজবাটা, রসুন-আদা বাটা, কাশ্মিরি লঙ্কার গুঁড়ো,দু চাম্চে পোস্ত বাটা দিয়ে কষুন, মশলার ওপর তেল উঠে এলে দুধ ঢেলে দিন, কচু দিয়ে দিন। কচু সেদ্ধ হয়ে এলে তেঁতুলের জল, কাঁচা লঙ্কা আর চিনি দিয়ে দমে বসান অল্প আঁচে। ঝোল টেনে এলে অন্য পাত্রে বা হাতায় ঘি গরম করে তাতে তেজপাতা আর দারুচিনি ফোড়ন লাগান, উপরে ঢেলে দিয়ে, ঢেকে রেখে দিন নামিয়ে। অসাম, জাস্ট অসাম।

    ইলিশের মাথা দিয়া মানকচু। কালোজিরে ফোড়ন, আদাবাটা রসুনবাটা পেঁয়াজ কুচি লঙ্কা বাটা দিয়ে মাছের ভাজা মুড়ো কষতে হবে, তাতে সেদ্ধ করা মানকচুর টুকরো দিয়ে বেশ করে ঘাঁটবেন। মিশে এলে নুন ইত্যাদি দিয়ে, লেবুর রস ছড়িয়ে নামিয়ে ফেলুন। আহাহা কি ভাল কি ভাল--

    আর বেশি না বলে কচুর শাক কচুর লতি তে চলে যাই। কচুর শাক নিয়ে আর কি যে বলি, অনেকদিন খাই নি। ইলিশের মুড়ো দিয়ে রান্ধুন বা সিরিফ ছোলা দিয়ে। সরষে দিয়ে ঘন্ট রাঁধুন। কচুর লতির ঘন্ট ও অতি উপাদেয়। কচুর লতির ডাল আমাদের বাড়ির প্রিয় খাদ্য। চচ্চড়িও , সরষে বা চিংড়ি মাছ দিয়ে। কচুর সব প্রেপ এর সাথেই চিংড়ি মাছ বড় ভাল যায়।

    এই সব লিখতে লিখতে কি খাচ্ছি টের ই পাচ্ছি না। খাচ্ছি মুড়ি, মনে হচ্ছে কচুর ডাঁটার স্বাদ পাচ্ছি।

    এবার অন্যরা লিখুন। আমার কলম আইঢাই।
  • সোসেন | 125.241.72.173 | ১৪ মে ২০১২ ০৯:২২530416
  • এইটা কারেন্ট কিস্তি

    কচু খেলে যা...

    বাঙাল দের সাহসের অন্ত নেই তার প্রমাণ হল তঁাদের খাদ্যাভ্যাস। ওল এবং কচু কে যাঁরা পাতে এবং ভাতে ম্যানেজ করতে পেরেছেন, দুনিয়ায় তাঁদের অসাধ্য কিছু নেই।

    কচু লিখে গুগল সার্চ করতে গিয়ে পেরথমে পেলাম- কচু কেন খাবেন। কেন খাবো না? এমন ইররেলিভ্যান্ট কোশ্চেন জম্মে শুনি নি। খেয়ে প্রাণ তর হয়ে যায় তাই খাবো।

    ঘটিরা পড়বেন/ খাবেন কিনা জানিনে। তবে আমার কথায়, না খেলে ঠকা।

    কচু এখন বাজারে দিব্বি মেলে, কিন্তু নিঃসন্দেহে কচুর স্বাদ বদলেছে গত কয়েক দশকে( বেশি দশকের এক্সপিরিয়েন্স নেই, তাই নিজের কানেই কেমন বেঁড়ে পাকামি শোনালো। এই ধরুন গত দুই দশকে)।

    তার কারণ, সম্ভবত, এখন কচু চাষ হয়। আগে এমনি লোকের বাগান ছাইফেলার জায়গায় হত, তার স্বাদ লা-জবাব। আমার বর্তমান বাসস্থানে যখন আসি, তখন পাঁচ কাঠা জমির এক কানাচে আমাদের বাড়ি, আর বাকি সব জায়গা জুড়ে কচুক্ষেত বল্লেও অতু্যক্তি হয় না। আপনমনে গজিয়ে উঠে তারা শোভা বর্ধন করছিল পৃথিবীর। দুষ্ট মানবজাতি এসে প্রথমেই তাদের আক্রমণ করলো বঁটি নিয়ে। আহা সে পৈশাচিক আনন্দের কথা আর কি বলব। ইয়াব্বড় বড় মানকচু। মানকচু, গলা ধরছে কিনা প্রথমে দেখে নিতে হবে। রোদে শুকোতে হবে অল্প। তারপর, সরষে দিয়ে কচু বাটা, সাথে কাঁচা লঙ্কা বাটবেন। সাদা গরম ভাতে মেখে প্রায় সব ভাত ই আমি খেয়ে ফেলবো, যদি গলা না ধরে। গলা ধরতে পারে, সব পরীক্ষার পর ও। কিছু করার নেই। ত অভাবে তেঁতুল জলে সিদ্ধ করে আলুসেদ্ধর মত মাখলেও হিট। গলা ধরার চান্স ও কম।

    ভয় পাচ্ছেন? নিয়ে আসুন দুধকচু। গলা ধরার চান্স মিনিমাম। একই ভাবে বেটে খেতে পারেন, যদিও মানের মত স্বাদ পাবেন না। আমাদের বাড়িতে সুপ্রচুর দুধ-কচু হত। বড় উপাদেয়। খেয়ে বিলিয়ে ও মাটির নিচের সেই স্বর্ণভান্ডার শেষ করা কঠিন ছিল।

    তা ছাড়া তরকারি রাঁধুন। পিঁয়াজ রসুন দিয়ে কচুর কষা দম। কচু আলু র জিরেবাটা দিয়ে সবজি । তরকারিতে বেশি ভাল লাগে দুধ কচু, মানকচু কিঞ্চিৎ শক্ত।

    একেবারে নিরিমিষ হল গে গাঁটিকচু। গলাও ধরবে না।

    রাঁধবেন কি করে ? কচু কোরমা সেফ প্লে। ভাল লাগবেই। গোল গোল করে ভাপানো কচু কাটুন। সঁাতলে নিন নুন দিয়ে। এবার পিঁয়াজবাটা, রসুন-আদা বাটা, কাশ্মিরি লঙ্কার গুঁড়ো,দু চাম্চে পোস্ত বাটা দিয়ে কষুন, মশলার ওপর তেল উঠে এলে দুধ ঢেলে দিন, কচু দিয়ে দিন। কচু সেদ্ধ হয়ে এলে তেঁতুলের জল, কাঁচা লঙ্কা আর চিনি দিয়ে দমে বসান অল্প আঁচে। ঝোল টেনে এলে অন্য পাত্রে বা হাতায় ঘি গরম করে তাতে তেজপাতা আর দারুচিনি ফোড়ন লাগান, উপরে ঢেলে দিয়ে, ঢেকে রেখে দিন নামিয়ে। অসাম, জাস্ট অসাম।

    ইলিশের মাথা দিয়া মানকচু। কালোজিরে ফোড়ন, আদাবাটা রসুনবাটা পেঁয়াজ কুচি লঙ্কা বাটা দিয়ে মাছের ভাজা মুড়ো কষতে হবে, তাতে সেদ্ধ করা মানকচুর টুকরো দিয়ে বেশ করে ঘাঁটবেন। মিশে এলে নুন ইত্যাদি দিয়ে, লেবুর রস ছড়িয়ে নামিয়ে ফেলুন। আহাহা কি ভাল কি ভাল--

    আর বেশি না বলে কচুর শাক কচুর লতি তে চলে যাই। কচুর শাক নিয়ে আর কি যে বলি, অনেকদিন খাই নি। ইলিশের মুড়ো দিয়ে রান্ধুন বা সিরিফ ছোলা দিয়ে। সরষে দিয়ে ঘন্ট রাঁধুন। কচুর লতির ঘন্ট ও অতি উপাদেয়। কচুর লতির ডাল আমাদের বাড়ির প্রিয় খাদ্য। চচ্চড়িও , সরষে বা চিংড়ি মাছ দিয়ে। কচুর সব প্রেপ এর সাথেই চিংড়ি মাছ বড় ভাল যায়।

    এই সব লিখতে লিখতে কি খাচ্ছি টের ই পাচ্ছি না। খাচ্ছি মুড়ি, মনে হচ্ছে কচুর ডাঁটার স্বাদ পাচ্ছি।

    এবার অন্যরা লিখুন। আমার কলম আইঢাই।
  • সুকি | 168.161.176.6 | ১৪ মে ২০১২ ০৯:৩৬530418
  • এত খেয়ে তবু যদি নাহি ওঠে মনটা - ৩
    ----------------------------------------

    বয়-দার ভালো নাম ছিল যতদূর মনে পড়ে বয়্ কেঙ্গেপোকাম্ বা ওই জাতীয় কিছু। আমাদের থেকে ক্লাস-ত এক বছরের বড় ছিল - কিন্তু বয়সে কত সেটা কেউই জানত না। বয়-দা ছিল মিজোরাম কিংবা অরুণাচলের দিকের ছেলে, এক ক্লাশে নাকি বেশ কয়েক বছর করে থাকত। শোনা কথা যে বাৎসরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলে ওদের সরকার ভাবত যে স্কলারশিপে হয়ত কিছু কম পড়ে যাচ্ছে - তাই ফেল করলেই বৃত্তি বেড়ে যেত। তো সেই হিসাবে বয়-দার জমকালো জীবনযাপনের একটা জাগতিক ব্যখ্যা খুঁজে পাওয়া যেত।

    আমরা যে ঘর গুলোয় চারজন করে থাকতাম, সেখানে বয়-দা একা একটা ঘরে থাকত। অন্য হোষ্টেলে সিঙ্গেল রুম প্রাপ্য থাকলেও অত্যধিক আনুসঙ্গি্ক জিনিসপত্রের স্থানসঙ্কুলান হবে না ভেবে বয়-দা আমাদের হোষ্টেলেই থেকে গিয়েছিল। চেহারা খুব ভালো ছিল - গোলগাল ফরসা মুখে ছোট্ট একটা ব্যতিক্রম খুঁজে পাওয়া যেত কপালের মাঝে হালকা কালো দাগ হেতু। দুর্জনেরা বলে দুপুরের পরের বা খুব সকালের ক্লাশগুলিতে বয়-দা নিদ্রাজাত একটা অস্বস্তি অনুভব করত আর তারই ফলস্বরূপ বেঞ্চে ঢুলে ঢুলে পড়ে মাথা ঠুকে ওই দাগটা তৈরী করেছে।

    তো যাই হোক, বাকি সব ব্যাপারে একটু ফ্যাশনেবল্ থাকলেও খাবার ব্যাপারে বয়-দা ছিল একেবারে সাত্ত্বিক প্রকৃতির মানুষ। ওর একটা ছোট্ট প্রেসার কুকার ছিল - দুপুরের ক্লাশ থেকে ফিরে আমরা যখন মাছের ঝোল দিয়ে ভাত সাঁটাতাম - তখন বয়-দার থালায় ওই প্রেসার কুকার ভর্তি সব্জী উপুর করে দেওয়া হত। সেটাই দিনের পর দিন বয়-দা কে নুন দিয়ে খেতে দেখেছি। আর দেখেছি বেলের সরবত জাতীয় কিছু খেতে। হোষ্টেলের ছাদে একটা লাঠি ও নান-চাকু নিয়ে বিকেলের দিকে প্র্যাকটিস করত আর পাশে রাখা থাকত ওই বেলের সরবতের বোতল। বয়-দার ব্যায়াম করা শরীর দেখে বাঙালীদের ভেতো কেন বলা হয় তা মালুম পড়ত।

    আর এই বয়-দার কারণেই আমাদের হোষ্টেল সাপমুক্ত ছিল। এখন যদি আপনি শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন যান, তাহলে মেন গেটের ঢোকার ঠিক বিপরীতে আমাদের ছাত্রাবাস দেখতে পাবেন। আর দেখলেই বুঝতে পারবেন কেন সাপেরা ওই জায়গাটি পছন্দ করত! তা একদিন নীচের ঘরে সাপ ঢুকে পড়ায় আমরা অনেকেই একটু চিন্তিত হয়ে পড়ি, কারণ সাধারণত ঘরের বাইরের সাথে ভিতরের বিশেষ কোন পার্থক্য থাকত না। ঘর থেকে সাপ খুঁজে পাওয়া এক দুঃসাধ্য ব্যাপার। ইতিমধ্যে আমাদের আশ্বস্ত করে বয়-দা সাপটিকে ধরে। বিষধর কিনা বলতে পারব না, কারণ মেজরিটির অনুমান দেখলাম বাইমোডাল ডিষ্ট্রিবিউশন ফলো করছে - ঢ্যামনা নয়ত গোখরো - স্পেকট্রামের দুই প্রান্ত সর্প প্রজাতির। তবে বয়-দা কর্মবীর টাইপের ব্যাক্তি এই সব ব্যাপারে। সাপটিকে মেরে সে রান্নার ব্যবস্থা করল। নিজের ঘরেই সরঞ্জাম থাকায় সুবিধা হয়ে গেল।

    তবে ব্যাপার কি - বয়-দার রান্নার প্রধান প্লাস ও মাইনাস পয়েন্ট দুটোই হল - টেকনিকের সরলতা। সেই আমাদের মেমারী স্কুলের ক্লাস এইটের বন্ধুটির মত - হাইড্রোজেন গ্যাস প্রস্তুতি বর্ণণা করতে গিয়ে যে লিখেছিল - “একটা পাত্রে যা নেবার নিলাম, হিট্ দেওয়ার পর গ্যাস বেরুলে সংগ্রহ করলাম”। বয়-পদ্ধতির রান্না হল - সাপ ছোট ছোট টুকরো করে কেটে কুকারে দিয়ে সিদ্ধ হয়ে এলে পরিমাণ মত নুন দিয়ে ছাল ছাড়িয়ে খেলাম। এই পদ্ধতির সাপ রান্না আমার বিলকুল না-পসন্দ - মশলাই নেই, সে কেমন রান্না !! তো সেই জন্য আমরা অনেকেই সেই দিন সাপের মাংস স্কিপ করলাম। তবে এরপর থেকে আমাদের হোষ্টেলে সাপের আনাগোনা কমে এসেছিল। সর্পকুল মনে হয় টের পেয়েছিল যে শুধুমাত্র মৃত্যুই নয় - প্রিয়জনের ডেডবডিও ফিরে না পাবার সম্ভাবনাও প্রবল বয়-দার দিকে এলে।

    অনেক পরে বিদেশ যাতাযাত শুরু হবার পর বা বিদেশে বসবাস করার সময় মনে হয়েছে আমরা বাঙালীরা কিন্তু মশলার আধিক্যে অনেক সময় স্বাদটাই নষ্ট করে ফেলি। যেমন ধরুণ, আমার বাড়িতে কোলাঘাটের ইলিশ এল - মা সেটা ছাড়িয়ে বেশ করে নুন-হলুদ মাখিয়ে ভাজতে বসল। এই পর্যন্ত ঠিক আছে - কিন্তু সে ভাজা মানে মহাভাজা যাকে বলে আর কি। মাছ গরম তেলে ফুটছে তো ফুটছেই, এর মাঝে জননী সিরিয়ালের একপর্ব হয়ে গেল। যে ভাজামাছ পাতে পেলাম সেটার সাথে কোলাঘাটের ইলিশ তো দূর অস্ত - আমেরিকান রুই বা গ্যাসকার্পেরও কোন সম্পর্ক আছে বলে মনে হল না। যেটুকু সম্পর্ক সে ওই আণবিক লেভেলে - কার্বন, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন ও নাইট্রোজেন। আমার এখনো দৃঢ় বিশ্বাস পাঁড় ঘটিদের বাড়িতে এখনো এই ভাবেই মাছ রান্না হয়।

    বাঙালরা তবু এই ব্যাপারে একটু কেয়ার নিয়েছে - ভাপা ইলিশ এইসবে তবু মূল মাছের স্বাদ একটু পাওয়া যায়। সুখের কথা আজকাল বাঙালী ফ্যামিলি হাইব্রীড হচ্ছে - ঘটি, বাঙালের মিলনে আর কিছু না হোক মাছের স্বাদ বেঁচে থাকার একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বংশপরম্পরায়। তবে যাঁরা বলেন “সর্ষে বাটা দিয়ে পদ্মার ইলিশ খেলাম বুয়লে, কি স্বাদ - কোথায় লাগে আমাদের কোলকাতার ইলিশ” - তাঁরা যানবেন বেবাক মিথ্যা বলছে। সর্ষে বাটা কোন খাদ্যে থাকলে তার মূল স্বাদ আস্বাদন ভগবান দর্শনের মতই অসম্ভব। তবুও শুনি কেউ কেউ দর্শনের মত আস্বাদনেও সাফল্য লাভ করেছে, এদের ঠিক মিথ্যাবাদী বলা যাবে না, এদের যেটা হয় সেটা হল হ্যালুশিনেশন - এই পদ্মার ইলিশ খাচ্ছি ! ভাই একটা আপাত জটিল ব্যাপার এর মধ্যে লুকিয়ে আছে। কিছু্র তুলনা (সত্যজিত রায়, রসগোল্লা, উত্তমকুমার এবং রবীন্দ্রনাথ ছাড়া) করতে হলে একটা বেস বা রেফারেন্স কেস চাই। এই ক্ষেত্রে পদ্মার বা গঙ্গার ইলিশের কোন বেস কেস আছে কি ? জানি না - মনে হয় নেই, পাভলভের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া পরীক্ষার মত কোন এক কল্পিত স্বাদে আমাদের লালা ঝরে।

    তবে আজকাল কিন্তু ঝালের এক রিলেটিভ স্কেল বেরিয়েছে শুনেছি - স্কভিল্ স্কেল। এদের বেস কেস আছে যার আপেক্ষিকে বাকি সব ঝাল ঠিক করা হয়। যেমন হাভানেরো চিলি প্রায় ১০০,০০০ ইউনিট ঝাল, মনে হয় মারাত্মকই হবে। ভয়ে আর ট্রাই করি নি ! আসলে বলতে চাইছিলাম এই রকমই করা উচিত সবকিছুর। ভালো দিক থাকলেও সবকিছুই ছকে বেঁধে দেবার বিপদও আছে। প্রধান আসুবিধা হবে ফুড ক্রিটিকদের - যাদের মত ভেগ্ (আবছা) পাবলিক আমি আজ পর্যন্ত দেখি নি। “তোমার রান্না খুবই ভাল - খালি একটু ইইইইয়ামির অভাব আছে”। ইইইইয়ামি অর্থে বলতে চেয়েছেন তিনি পাঞ্চ - ভাই একটু প্রাঞ্জল (বা প্রাণ জল) করে বল, তেল, ঝাল, নুন, গরম মশালা কি লাগবে ! নাকি একটু লেবু কষে দেব ? সেই সব না বলে পাঞ্চ এর অভাব ! মর্ডাণ আর্ট, মর্ডাণ কবিতার মতন - সবার লেখাই ভালো, কারো ভিতর ‘সেটা’ আছে আর কারো ভিতর ‘সেটা’ নেই, ব্যাস এইটুকুই যা পার্থক্য!

    লোকে পয়সা দিয়ে দামী এবং স্পেশাল মাংস কেনে, ধরেণ আর্জেনটিনার বিফ্ - আর তা দিয়ে আমরা করলাম ‘কারি’ রান্না! দাদা, মাংসের স্বাদ নেব নাকি মশলার ? যদি মশলার স্বাদই নিতে হয় তাহলে দামী মাংস কেনা কেন ? বিদেশী বন্ধুর এই প্রশ্নের জবাব আমি দিতে পারি নি - তবে অলিখিত ঠিক হয়েছে, ফ্রেশ দামী মাংস দিয়ে আমরা বিদেশী রান্না এবং সুপারমার্কেটের ‘রিডিউসড্ প্রাইস’ মাংস দিয়ে ইন্ডিয়ান ‘কারি’ করব। এই পদ্ধতি আমার মনে হয় সাশ্রয়ী এবং সময়োপযোগী। তাই অনুরোধ, দয়া করে দামী মাংস, মাছ কিনে সর্ষে বাটা, মালাইকারি এইসব বানাবেন না। কারণ ওই পদগুলিতে মাছের কোন অবদানই প্রায় নেই। তিমি মাছের সর্ষে বাটা, ভেটকি, পাবদা আর পদ্মার ইলিশের সর্ষে বাটা - সবার স্বাদই এক, যেটুকু পার্থক্য সেটুকু আপনার কল্পনায়। আর টিভিতে অমুক দেবীর, তোমাদের দাদা ওই ওই ভালোবাসত, এই সব বয়ানেও প্লীজ্ ভুলবেন না। পান খেয়ে যেনাদের জিহ্বায় দুই মিলিমিটার স্তর পরে গেছে তাদের স্বাদকোরকের উপর ভরসা করার আমি কোন যুক্তি সঙ্গত কারণ খুঁজে পাই না।

    অন্য প্রসঙ্গে চলে যাচ্ছি বার বার। বোটানিক্যাল গার্ডেনের সামনের দোকানগুলিতে একটি মুখোরোচক খাবার পাওয়া যেত যা পরীক্ষার সময় আমাদের অনেকের বিশেষ কাজে লাগত - ওটার নাম ছিল ‘চন্দ্রপুলি’। পিঠে জাতীয় বস্তু, ভিতরে সুজি আর ময়দার পুর - ভেজে রসে ঢোবানো থাকত। মাল যত বাসি হবে, তেল যত পুরানো - তত তার টেষ্ট! এটা বিকেল ছটা নাগাদ খেয়ে একপেট জল খেয়ে নিলে মোটামুটি পরের দিন রাত পর্য্যন্ত শান্তি - চোঁয়া ঢেঁকুর আপনাকে ডায়েটিং-য়ে সাহায্য করবে। পরীক্ষার আগের রাতেই সব পড়া হয় মূলত ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে, তা সেই রাতের পড়ায় যাতে ক্ষুধা থাবা বসাতে না পারে সেই জন্য চন্দ্রপুলির সাহায্য খুবই উপযোগী ছিল। আর তা ছাড়া চন্দ্রপুলি খাবার পর শারীরিক অস্বস্তি আমাদের ঘুমাতে দিত না - যেটা ছিল পরীক্ষার আগের রাতে একটা এক্সট্রা অ্যাডভ্যান্টেজ।

    পরীক্ষার পর তা সুদে আসলে মিটিয়ে নিতাম আমরা হোষ্টেলে জি। এফ। (গ্র্যাণ্ড ফিষ্ট) খেয়ে [আমাদের কাছে জি। এফ। মানে গার্ল ফ্রেন্ড ছিল না তখনো, তাই অক্লেশে বলে গেছি জি। এফ। খেয়ে জি। এফ। খেয়ে]। এখনো মাঝে মাঝে যেন দেবরাজের কন্ঠস্বর শুনতে পাই, যে রাত নটায় কোল্ড কফি খেয়ে রাত তিনটেয় প্রত্যেক ঘরে নক করে ঢুকে বলছে, “ আঃ, পেটটা ঠান্ডা হল”। জি। এফ। এর এক ছোট ভাই ছিল, যার নাম আই। ডি। । সেই আই। ডি। ঘিরেও লালমোহনবাবুর ভাষায় ঘটনার ঘনঘটা।।।।।।।।।

    (ক্রমশঃ)
  • সুকি | 168.161.176.6 | ১৪ মে ২০১২ ০৯:৫২530420
  • সোসেন, আপনি দারুণ লিখছেন - প্লীজ চালিয়ে যান। অনেক না জানা কথা জানতে পারছি, আবার জানা কথাও ঝালিয়ে নিচ্ছি অন্য এক পারস্পেক্টিভ থেকে। আপনার লেখার স্টাইলও খুব ঝড়ঝড়ে - দারুণ লাগছে পড়তে। আর এই টইতে এসে সময় নিয়ে লেখার জন্য কৃতজণতা।

    বাকিদেরও উতসাহ দেবার জন্য ধন্যবাদ।
  • সোসেন | 125.241.72.173 | ১৪ মে ২০১২ ১০:০২530421
  • সু কি! আপনার লেখা তো দারুণ। মানে বলার অপেক্ষা ই রাখে না, তাই বলতেই কেমন বাধো বাধো ঠেক্ছে! ধন্যবাদ, ধন্যবাদ! টৈ তে ঠেলে দিয়েছে পাই! ও তো আবার বড় হলে...তাই হুকুম ঠেলতে পারা গেল না!
  • সিকি | 132.177.179.81 | ১৫ মে ২০১২ ২২:১৩530422
  • হুঁ, সাগরময় ঘোষ হবে। আর আমি বড় হলে অমৃতলাল হব, আকার সঙ্গে। সোসেন যেন আবার কালকূট হতে যাবেন না, আফনে ঠিক এই সোসেন হয়ে থাকলেই হল, আর কিছু চাই নে আমরা। হাওড়া বর্ধমান মেন লাইনকে এইভাবে তুলে আনার কথা আমি ভাবতেও পারতাম না।
  • | 24.96.148.191 | ১৫ মে ২০১২ ২২:২৩530423
  • ক্কি?! ইলিশ, পাবদা আর ভেটকীর সর্ষেবাটার একইরকম টেস্ট হয়?? দুদ্দুর নির্ঘাৎ স্বাদকোরকগুলো সবকটা কাজ করে না।

    আর মৌরলা যেভাবে করকরে করে ভাজা হবে ইলিশ সেইভাবে ভাজা হবে নাকি? কক্ষণো না।
  • প্পন | 132.252.231.6 | ১৫ মে ২০১২ ২৩:১৩530424
  • দ-কে ক।
  • সুকি | 168.161.176.6 | ১৬ মে ২০১২ ০৮:৩৭530426
  • ইয়ে সোমানাথ, আপনি ঠিকই ধরেছেন - এই লেখাটা থেকে কপি-পেষ্ট করে আমি আগে ল্যামিদার বি।ই কলেজ নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে লাগিয়ে দিয়েছিলাম। তখন লেখাটা এখানে ধারাবাহিক ভাবে পোষ্ট করার কথা ছিল না। তবে লেখক আমিই ছিলাম সেখানে - অন্যের লেখা আমার বলে চালানোর চেষ্টা করছি না কিন্তু (স্মাইলি)

    দ - বেশী সর্ষে থাকলে সত্যিই কি মাছের স্বাদ আলাদা করে পাওয়া যায়! কে জানে - তবে আমার মতামত ছিল যে ভালো মাছ সর্ষে ইত্যাদি বেশী দিয়ে নষ্ট করার কোন মানে হয় না।
  • গান্ধী | 213.110.243.21 | ১৬ মে ২০১২ ০৯:২৯530427
  • ভালো মাছ এবার থেকে কাঁচাই খাবো। একদম হেব্বি অরিজিনাল টেস্ট পব
  • সোমনথ২ | 86.116.65.19 | ১৬ মে ২০১২ ০৯:৪০530428
  • @সুকি আপনার লেখাটা পড়তে পড়তে হঠাৎ-ই deja vu ফিল হল, তাই লিখলাম ..submit করার পর খেয়াল করলাম যে আগের লেখাটাও আপনার ..অ্যাল (সরি স্মাইলি), আপনি চালিয়ে যান, দুর্দান্ত হচ্ছে । অশাকরি তাল কাটলাম না ঃ(
  • সুকি | 168.161.176.6 | ১৬ মে ২০১২ ১০:০০530429
  • এত খেয়ে তবু যদি নাহি ওঠে মনটা - ৪

    একটা ব্যাপার আমি ভাবনা চিন্তা এবং ঈষৎ গবেষণা করে বের করেছি যে খাবার বিষয়ে সভ্য বা অসভ্য শ্রেণীবিভাগ বলে কিছু হয় না। ইহা এমনি একটা বিষয় যেখানে সভ্যেরা অসভ্য হয়ে ওঠে এবং অসভ্যেরা অসভ্যই থেকে যায়।

    আমি নিতান্তই গ্রামের ছেলে - আগে গ্রামের আগে প্রত্যন্ত শব্দটা ব্যবহার করতাম। কিন্তু যখন থেকে শুনলুম, আমার খুড়তুতো ভাই যে কোনদিন গ্রাম ছেড়ে একপা বের হয় নি, তার প্রিয় সঙ্গী্ত সমূহের মধ্যে রোলিং স্টোনস্‌ পড়ে - সেই দিনই বুঝলাম সময়ের নুড়ি গড়িয়ে গেছে। তাই আর প্রত্যন্ত শব্দটা লাগাই না আজকাল। তো সেই গ্রামের ছেলে হিসাবে বিদেশে মিলেমিশে খাবার সময় একটু হীনমন্যতায় ভুগতাম - কি জানি কোথায় ভদ্রজোনিত এটিকেটে ভুল হয়ে যায় ! যেমন, খেতে হবে নাকি সবসময় মুখ বন্ধ করে, তৃপ্তি করে ঢেঁকুর তোলা যাবে না - এই পর্যন্ত ঠিক আছে, কিন্তু চা চুমুক দিয়ে শব্দ করে পান করা যাবে না, সিপ্‌ করতে হবে, এটা আর মানতে পারি না। ফলতঃ আমি চা সহ সমস্ত পানীয় বর্জন করেছি আপাতত। নীরদ সি চৌধুরী ছাড়া কোন বাঙালী স্‌স্‌স্‌ করে চুমুক না দিয়ে কি করে চা পান করতে পারে, আমি সেটাই ভাবতে পারি না! সমস্ত মনোযোগটাই যদি শব্দ না করার দিকে পড়ে থাকে, তাহলে চা আমি উপভোগ করবটা কি করে ?? ‘তৃপ্তির ঢেঁকুর’ শব্দটাই তো তাহলে বাঙলা ভাষা থেকে তুলে দিতে হবে! আজকাল ইংরেজী মাধ্যমে পড়া ট্যাঁস পোলাপানদের ছোট থেকেই শেখানো হচ্ছে ঢেঁকুর তুললেই ‘এক্সকিউজ্‌ মি’ বলতে হবে। কেন হে ভায়া, ওটা না করলে আমি বোঝাবো কি করে যে আয়েশ করে খেলাম !

    চাইনীজ সভ্যতায় (যদি ওটাকে সভ্যতা বলা যায় আর কি !) নাকি পাত চেটেপুটে খেলে অতিথির আরো খিদে আছে মনে করে পুনরায় পরিবেশন করা হয়। তাই চীনে পেট ভরে গেছে বোঝাতে পাতে কিছু ফেলে রাখতে হবে। আবার ইউরোপীয়ানদের বেলায় পাতে ফেলে রাখা মানে, আপনি তার খাবার পছন্দ করেন নি, একটা রূঢ় ব্যাপার আর কি ! কিন্তু তা বলে ইউরোপীয়ানরা তো চীনা সভ্যতা অনুসরণ করে নি। তাহলে আমরাই বা কারও অযথা অনুকরণ করে ঢেঁকুর তোলা বন্ধ করব কেন ? তাই বলছি নিজেদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে ঢেঁকুর চালু রাখুন। কেরানী বাঙ্গালীর এক মহার্ঘ্য বস্তু ঢেঁকুর-কে এই ভাবে হারাতে দেওয়া যায় না।

    হ্যাঁ তা যা বলছিলাম, এই সব নানাবিধ ব্যাপারের জন্য কোন একটা ব্যুফেতে খাবার দেওয়া হলে যেতে ইতস্তত করছিলাম - পাছে ভারতীয়দের হ্যাংলা ভাবে। তখন কি আর জানতাম বাহ্যিক আরম্বড় কখনই জীনের ত্রুটি শোধারাতে পারে না - যে বিদ্যুৎগতিতে কোট-প্যান্টওলারা খাবারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল - তা দেখে টপ ফর্মের মহম্মদ আলিও একটু অবাক হবেন। অনেকে তো দেখলাম খাবারের সামনে থেকে নড়ছেই না, যা আলোচনা কাইনেটিক এনার্জি থেকে শুরু করে জলবায়ু সব ওই খাবারের প্লেটের সাথে ‘হাত বাড়ালেই বন্ধু’ দূরত্বের মধ্যেই। তবে আমিও হাওড়া-বর্ধমান মেন লাইনের ডেলি প্যাসেঞ্জারী করা ছেলে - একবার বুঝে নিতে যা দেরী। প্রথম কনফারেন্সের দু দিন বুঝে নিতে সময় লেগেছিল, তারপর আমি ব্যাপারটাকে লেভেল ফিল্ডে নিয়ে এসেছি। বলে কয়ে খেলো, আমি বেগ দিতে রাজি আছি - মাঝে ওই এটিকেটের দেওয়াল তুলো না প্লীজ্‌। এইসব ব্যুফের ভিডিও ফুটেজ দেখলেই বোঝা যায় আমরা বাঁদর প্রজাতির উদ্ভূতঃই, ডারউইন সাহেব ফালতুই গ্যালাপোগাস দ্বীপে বছর কাটিয়েছিলেন।

    আবার হোষ্টলের আই।ডি। এর কথা ফিরে আসি। আই।ডি। এর অর্থ হল আইডিয়াল ডিনার - ওই দিন খাবার যেন তৈরীই হতে চাইত না ! সুষম খাদ্যে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ভিটামিন সামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে থাকার কথা। সৌভাগ্যবশতঃ আমদের হোষ্টেলে ফূড ইনেসপেক্টর জাতীয় কিছু ছিল না, ফলতঃ খাবার তৈরী হত জিহ্বার চাহিদা মেটানোর জন্য। নানা পারিপার্শিক কারণ হেতু আমাকে অনেকদিন মেস ম্যানেজারি করতে হয়েছে - একবার উইকেট কিপিং-এর মত থ্যাঙ্কলেস্‌ জব। মেনুর বৈচিত্র আনতে গিয়ে আমায় যা বেগ পেতে হয়েছিল, তার এক-দশমাংশ এফর্টে আমি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী পেয়েছিলাম। মাছ কোথা থেকে আসত ট্রেস করা এক দুঃসাধ্য ব্যাপার, হাতে ধরলেই মাংস খুলে যায়, এত টাটকা মাছ! ওই মাছের ঝোল খেয়ে যারা কলেজ জীবন অতিবাহিত করেছে, তাদের পাকস্থলী এখন যে কোন অ্যাটাক প্রুফ।

    আইডিয়াল ডিনার -এ আমাদের মেনু থাকত প্রায়শঃই চিলি চিকেন - ফ্রায়েড রাইস, বা চিকেন চাঁপ-নান কম্বিনেশন। বাঙালী এত উদ্বাভনী শক্তি ধরে, এমনকি আমাদের হোষ্টেলেও ক্রিয়েটিভ জনতা কম ছিল না, কিন্তু ওই কম্বিনেশনের এনভেলপটাকে কেউই প্রসারিত করতে পারে নি। তো এমনি এক আই।ডি -এর রাতে কোল্ড কফি সরাবরাহ করা হয়েছিল। দেবরাজ বেশ আয়েশ করে রাত নটা নাগাদ বেশ কয়েক গ্লাস খেয়েছিল। তারপর দেখি রাত তিনটে নাগাদ সে আমাদের ঘরে নক্‌ করছে, দরজা খোলার পর সোজা ঘরের মাঝখানে এসে “আঃ, পেটটা ঠান্ডা হল” বলেই পাশের ঘরে নক্‌ করে। প্রায় ৩০টা মত ঘর সেদিন ও কভার করে - এ হেন আচরণের ব্যখ্যা আমি আজও পাইনি, একমাত্র গন্ডারের চামড়ার সম্ভাবনা ছাড়া। হয়ত সত্যি করেই ওর পেটটা ঠান্ডা হতে ছয় ঘন্টা লেগেছিল। তবে যাঁরা ভাবছেন ঘটনাটা আপাতনিরীহ তাঁদের দেবরাজের গলা সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। জনশ্রুতি আছে সাহেবপাড়ায় (মোট ছটা হল নিয়ে আমাদের সাহেব পাড়া ছিল) অনেকেরই সকালে ঘুম ভাঙত এই কটি কথা শুনে - “মাখনদা, মাখনদা ।।।।, দুটো টোষ্ট আর ডিমের পোচের সাথে চা দিয়ে যাও”। কিছুই না, দেবরাজ রুম থেকে ফ্লোরক্যান্টিনের মাখানদাকে ব্রেকফাষ্ট অর্ডার করছে যেটা ৮০০ মিটার রেডিয়াসের সাবই শুনতে পেত, এবং সেই টোনের কম্পাঙ্ক ও বিস্তার এমনই ছিল যে খাবার সময় শুনলে গলায় খাবার আটকে যাবার মত হত। তো এর সুবিধা ছিল একটাই যে, বাকি কাউকেই আর অ্যালার্ম ক্লক ব্যবহার করতে হত না।

    চা আর টোষ্টের প্রসঙ্গে মনে পড়ল - এই দুটো আপাত সরল খাবার বানানো কিন্তু মোটেই সহজ কাজ না। লক্ষ্য করে দেখবেন যে, ব্যান্ডেল স্টেশন এলে অনেক ডেলি প্যাসেঞ্জার ‘শর্মার চা’ এই শব্দটি শোনার জন্য ব্যকুল হয়ে থাকে। প্রচলিত কমেডি আছে যে, ‘শর্মার চা’ নাকি এমন টোনে বলা হয় তা প্রায় ‘শূয়ারের বাচ্ছা’-র মত শোনায়। আমি হলপ করে এইটুকুই বলতে পারি যে ইহা সাতিশয় সত্য এবং অনেকেই মনে করে যে ওই ডাকটা আসলে ডেলি প্যাসেঞ্জারদের উদ্দেশ্যেই দেওয়া - আফটার অল্‌ সমগোত্রীয় জীব বলে কথা।

    তা আমাদের ক্যান্টিনের বরূণদা বা মাখনদা এদের টোষ্টেরও বেশ নাম ডাক ছিল - এবং বলতে গেলে এরা প্রায় কোনদিনই লো প্রোফাইলের কাষ্টমার সার্ভই করে নি, সব কাষ্টমারই ইঞ্জিনিয়ার। এমন ভাগ্য কয়জনার হয় - এমনকি গর্ডন রামসেরও না। যাঁরা গর্ডন রামসেকে চেনেন না, তাঁদের বলি ইনি হলেন আমাদের সঞ্জীব কাপুরের ইক্যুইভ্যালেন্ট, তবে ম্যাগনিচিউডে অনেক বড়। এনার কতগুলো টিভি শো আছে, যেমন কিচেন’স নাইটমেয়ার, যেগুলো না দেখলে খাদ্য তথা রেষ্টুরান্ট জগতের অনেককিছুই অজানা থেকে যাবে। পরের কোনদিন গর্ডন প্রসঙ্গে বিস্তারে বলা যাবে, উৎসাহী জনতা এই ফাঁকে ইউ-টিউব থেকে নিজেদের আপডেট করে নিতে পারেন।

    আমাদের হোষ্টেলের নাকু নাকি কানে একটু কম শুনত। ‘নাকি’ শব্দটা ব্যবহার হল এইজন্যই যে নাকুকে গালি দিলে ওর শুনতে কোনই অসুবিধা হত না, বাকি ক্ষেত্রেই যা অসুবিধা। নাকুকে কোন প্রশ্ন করা হলে ও অনেক সময় ভেবে নিত যে ও যে কাজটা তখন করছে সেই বিষয়েই প্রশ্নটা করা হচ্ছে, বিপদজনক অ্যাজামশন্‌ যদিও। নাকুর রুমমেটের বাবা-মা এসেছেন, সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় নাকুর সাথে দেখা - ও তখন বরূণদার ক্যান্টিনে টোষ্ট খাচ্ছিল। নাকু পরিচিত হবার জন্য কাকু জিজ্ঞাসা করলেন, “কি সুদীপ্ত, কেমন আছ”? টোষ্ট খেতে খেতে নাকুর উত্তর, “এই যা পাই - তাই খাই”। এখনো মাঝে মাঝে দৃশ্যটা ভাবলে দেখি, ওর মধ্যে একটা ফিলসফিক্যাল ব্যাপার লুকিয়ে ছিল। আমরা হোষ্টেলে আপাত অর্থেই যা-পাই-তাই-খাইতাম।

    আমার রুমমেট সাধনের জার্মান প্রীতি আমরা সেই তখনই টের পেয়েছিলাম - খুব বিয়ার ভালোবাসত ছেলেটা। আমাদের অনুমান সার্থক করে সে পরে জার্মানিতেই পি।এইচ।ডি করতে গিয়েছিল। সাধনই আমার দেখা একমাত্র ব্যক্তি যে এটিকেটের তোয়াক্কা করত না - তা না হলে ওর বাটিতে করে বিয়ার খাওয়া দেখলে অনেক জার্মান বা ব্রিটিশ মানহানির মামলা ঠুকে দিত। সাধনের আর একটা অবদান ছিল বিয়ারে মুড়ি ভিজিয়ে খাওয়া। সেটা খেতে অনেকেই সাহস না করার জন্য অন্য কোন ডিটেলেড্‌ ফিডব্যাক নেই, তবে সাধনের ভাষায় তুখোড় খেতে! গুড় দিয়ে ছাতু গুলে খাওয়া - এটাও চলত - ছাতু আমার নিজের প্রিয় খাবার হবার জন্য আমি সাধনের সহমর্মী ছিলাম। মেমারী স্টেশনের কাছে ছাতুর লিট্টি বলে একটা জিনিস পাওয়া যেত, আমড়ার চাটনি দিয়ে তার যা টেষ্ট খুলত তেমন সরল খাবার আমি অনেকদিন খাই নি।

    খাবারের যদিও কিছু একটা ভেরিয়েশন ছিল - পানীয়ের রকমফের হোষ্টেল লাইফে খুবই কম। বিয়ার, হুইস্কি, রাম - এই তিন তরলেরই আধিক্য ছিল এবং সিনিয়ারদের মুখে শোনা আমাদের কলেজের জলে ডুবে থাকার একটা ঐতিহ্য আছে। তা সেই ঐতিহ্য বহন করার জন্য স্বেচ্ছাসেবকের অভাব কোনদিনই হয় নি। এটা আমরা সবাই জানি যে, ভারতে একমাত্র বাঙালীরাই সব কিছু খায় - এমনকি জল আর ধোঁয়াও! নিজে অ্যালকোহল মূলকের আওতাভুক্ত না থাকার জন্য, অনেক সময় আমি অ্যালকোহল প্রভাবিত পাবলিক সামলে কাটিয়েছি। খাদ্যের গল্প কি পানীয় ছাড়া হয় নাকি ? পানীয়ের টেকনিক্যাল ব্যাপার নিয়ে বহু মোটা মোটা কিতাব আছে - কিন্তু আফটার এফেক্ট নিয়ে ডাক্তারী বা সাইকোলজিক্যাল আলোচনা ছাড়া বিশেষ কিছু আছে কি? জীবজগতের নিয়ম মত আমাদের হোষ্টেলও তাই নরম্যাল ডিষ্ট্রিবিউশন মেনে - ও রসে বঞ্চিত, ট্রেনি, পাঁড় ও মোক্ষলাভ হয়ে গেছে এমন ভাবে বিভক্ত ছিল ।।।।।।।।।

    (ক্রমশঃ)
  • ঝিকি | 229.83.85.197 | ১৬ মে ২০১২ ১০:০৬530431
  • সুকি, ID মানে Improved Dinner জানতাম যে!

    লেখাগুলো কিন্তু খাসা হচ্ছে।
  • hozo | 82.130.151.116 | ১৬ মে ২০১২ ১০:৫০530432
  • !@#$%^&* এর বড়া ?
    লে লে
    ১/৩ পোস্তো আস্তো
    ৩/৪ পোস্তু বেটে নিন মিহি করে
    অল্পো নার্কেল কুচি ( না থাকলে ক্ষতি নেই ,পাসের বাড়িতে মাসিমা আছে কি ? ও মাসিমা !)
    কাঁচা লংকা কুচি
    অল্পো চালের গুরো
    এক চিমটী আটা
    অল্পো কাচাঁ আলু থেতো
    লুন + চিনি তো লাগবেই আন্দাজ মতো
    মিশেই নিন সব্গুলি ।।।
    ৩৫০ ডিগ্রী টাওআ টা গরম করে
    সাজিএ ফেলুন ২-৩ diameter
    ১৫ মিনিট - ২০ মিনিট লাগবে
  • সিকি | 132.177.163.144 | ১৬ মে ২০১২ ২১:৩৬530433
  • শর্মার চা? কই আমি কোনওদিন শুনি নি তো!
  • Lama | 127.194.228.130 | ১৭ মে ২০১২ ০১:৩০530434
  • ইসে, বিয়ারে এককালে আমারও একটু আসক্তি হয়ে গিয়েছিল। একবার কে যেন বলছিল বিয়ার দিয়ে চুল ধুলে চুল ভালো থাকে, আর তার সত্যতা সম্বন্ধে আরেঅকজন সন্দেহ প্রকাশ করছিল। তাতে আমাদের সন্দীপদা বলেছিল "না না বিয়ার দিয়ে চুল তো অনেকেই ধোয়, ল্যামি তো বিয়ার দিয়ে পোঁদ পর্যন্ত ধোয়।'

    আর ব্যাতাইতলার গার্ডেন বারে (যেখানে চাট হিসেবে একবাটি ভিজে ছোলা দিত, আর দশ টাকা দিলে মাছ্ভাজা) সেখানে এক ছুটির দুপুরে খোলা আকাশের তলায় বিয়ার খেতে খেতে আমরা গান করছিলাম। একটা গান পাশের টেবিলের এক দাদার মনঃপূত না হওয়াতে তিনি আমাদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছিলেন।

    যাকগে সুকি, চালিয়ে যা। দারুণ হচ্ছে।
  • সুকি | 168.161.176.6 | ১৪ নভেম্বর ২০১২ ১০:৪৭530435
  • এত খেয়ে তবু যদি নাহি ওঠে মনটা – ১২ (পর্ব মেমারী স্টেশনবাজার)

    আগের পর্বে কিছু ফল নিয়ে নাড়াঘাটা করেছিলাম যেগুলি আমাদের স্টেশন বাজারে সহজলভ্য ছিল। আরো কিছু সেকেণ্ডারী ফল বা ফলজাত দ্রব্য পাওয়া যেত যা নিয়ে আলোচনা আমি হালকা ভাবে ট্রেনপর্বে করেছি। আমসত্ত্ব, পানিফল ওই প্রজাতিভুক্ত ছিল। আমি ইংল্যাণ্ডে থাকাকালীন ওখানকার সরকার এক ক্যাম্পেন চালু করেছিল – ফাইভ ফ্রুটস এ ডে । ব্রিটিশ ছেলেছোকরাদের ক্রমশঃ খারাপ থেকে নিকৃষ্ট হয়ে যাওয়া রুখতেই সেই প্রচার। তবে যে দেশে দুই হাত অন্তর ফ্রাই, কেবাপশপ আর বার্গারের দোকান এবং যেখানে ফল কিনতে গেলে দুই মাইল দূর দূর সুপারমার্কেটে যেতে হয় সেখানে এই ক্যাম্পেন কতটা সার্থকতা লাভ করবে তা বোঝার জন্য পরিসংখ্যানবিদ হবার দরকার নেই। আমাদের ইউনিভার্সিটির ফুডকর্ণারগুলিতে ছবি লাগানো হল ফলের – আপেল, কলা, লেবু, আঙ্গুর ইত্যাদি। দোকানদার প্রায় সবুজ কলা কিনে ঝুড়িতে রাখল – সেই কলা রঙ পালটে হলুদ হল এবং বার্ধক্যে প্রবেশ করে কালো হতে শুরু করলেও তার কোন ক্রেতা পাওয়া গেল ন! অনেকে দাবী করল পাঁচ পিস আঙুর দানা খেলেও নাকি ফাইভ ফ্রুটস এ ডে সিষ্টেমকে স্যাটিসফাই করা যায়। তবে আমার আশ্চর্য্য লেগেছিল অন্য জায়গায় – বৃটিশদের লেডি ডায়নার প্রতি এক অস্বাভাবিক প্রীতি আছে, তিনি মরে যাবার পরে যেটা আরো বাড়ে। তো সেই ডায়না তাঁর সৌন্দর্য্যের রহস্য বোঝাতে বলেছিলেন পর্যাপ্ত জল আর ফল খেতে। কিন্তু সেই উপদেশ এহেন ডায়নাপ্রেমী ব্রিটিশ পাবলিক নেয় নি। অনেকে এর মধ্যে বহুজাগতিক সংস্থার চক্রান্ত খুঁজে পান – ভিটামিন পিল বিক্রীকারক সংস্থাগুলি নাকি ইচ্ছে করেই সেই ফল জলের রহস্য মিডিয়াকে ঠিকভাবে উন্মোচন করতে দেয় নি। খাবার সংক্রান্ত সেই সব রহস্যগল্প অন্য এক পর্বে।

    বিলেত থেকে ফিরে আসা যাক আমাদের আদি অকৃত্রিম দেশীয় বাজারে। প্রত্যেক বাঙালীর সাথেই কোন না কোন নষ্টালজিক তেলেভাজা ও এগরোলের দোকানের নাম লেগে থাকে। বাঙালীও যে ব্যবসা বোঝে (প্রফুল্ল রায় মহাশয় বেঁচে থাকলে কি খুশীই না হতেন) এই তথ্য যাচাই হত ওই সব এগরোলের দোকানগুলির প্লেসমেন্ট দেখে। বেশীরভাগ এগরোলের ঠ্যালাই স্টেশন বা বাসস্ট্যাণ্ডের পাশে খাড়াই থাকত। মেমারীতে এগরোল শিরোপার লড়াইটা সীমাবদ্ধ ছিল লক্ষ্মী ও গণেশের মধ্যে। লক্ষ্মী স্টেশন বাজার এবং গণেশ বাসস্ট্যাণ্ড। আমি নিজে লক্ষ্মীদার এগরোল খেয়েই মানুষ – তিনটাকা থেকে শুরু করে আজ ১৪ টাকায় এসে ঠেকেছে প্রায় কুড়ি বছরের ব্যবধানে। লক্ষ্মীদা মূলত ঊড়িশার লোক – মূলত বললাম এই কারণে যে ঊড়িশার সাথে এখন লক্ষ্মীদার আর কোন সম্পর্ক নেই। এই গল্প আমাদের বহুশোনা – বহু ছোটগল্প, উপন্যাস লেখা হয়ে গেছে। লক্ষ্মীদা প্রথমে শুধুই এগরোল বিক্রী করত। এগরোলের ব্যাস ছিল প্রায় ছয় ইঞ্চির মতন। এগরোল বিবর্তিত হতে হতে আজকে চার ইঞ্চি ব্যাসে এসে ঠেকেছে। বাঙালী স্বাস্থ্য সচেতন হচ্ছে নাকি বাঙালীর হজম শক্তি কমছে – এই নিয়ে একটা বিতর্কসভার আয়োজন করা যেতেই পারে কোন এক বইমেলায়। আফটার অল বইমেলাতেও এগরোল এক মুখ্য আকর্ষণ, সে জেলা বইমেলা বা বাইপাস যেখানেই হোক না কেন।

    এগরোলের ময়দার নেচি আগে থেকে তৈরী থাকতে হবে। রেফ্রিজারেটেড হলে ভালো হয়, কিন্তু তার অভাবে ভিজে লাল কাপড়ের টুকরো দিয়ে চাপা দিয়ে রাখাটাই রীতি ছিল। কেরোসিনের স্টোভের উপর হালকা অবতল তাওয়াতে সেই এগরোল ভাজা হত। ভাজা বললাম এই কারণে যে এগরোলের বেসটা রুটির মত সেঁকা এবং লুচির মত ছাঁকা এই দুইয়ের মাঝে বলা যেতে পারে। দুই পিঠ হালকা করে সেঁকে নিয়ে, খুন্তীর পিঠে করে মালটাকে চেপে ধরা অল্প তেল থাকা অবতল তাওয়ার কেন্দ্রে। লক্ষ্মীদার তাওয়ার চারিদিকে সাতটা মতন এগরোল ধরত। সব বেসগুলি ভাজার পরেই লক্ষ্মীদা ডিমে হাত দিত, একটা এগরোল পিছু একটা ডিম। কাগজের পেটি থেকে ডিম নেওয়া, অ্যালুমিনিয়াম মগে চামচ দিয়ে ফাটিয়ে ঢালা, তাতে নুন দিয়ে ফ্যাটানো এবং তাওয়ার উপুর করা – সমস্ত কাজটি লক্ষ্মীদা করত ১৫ সেকেণ্ডের মধ্যে। বাই দি ওয়ে, বি বি সি টিভি চ্যানেলে স্যারাটডে কিচেন প্রোগ্রামে ওমলেট তৈরীর ফ্রেণ্ডলী যে প্রতিযোগীতা হয় সেখানে এক ইতালিয়ান শেফ্‌ আগেরবার জিতেছিল ২৮ সেকেণ্ডে ওমলেট তৈরো করে। আমার বদ্ধ ধারণা যে লক্ষ্মীদা এদের সবাইকে বিট্‌ দিতে পারত।

    যাইহোক, সেই ডিম হালকা ভাজা হলে তেতে ময়দার বেস্‌টা থেবরে দাও। তারপর মালটা তৈরী হলে ফাইনাল প্রিপারেশনের জন্য চালান যেত তাওয়া থেকে এক চকচকে মসৃণ জায়গায়। এগরোলের অভ্যন্তরে দেওয়া হত শসা ও পেঁয়াজ এবং ছড়ানো হত ট্যমাটো-চিলি-জিজ্ঞার সস্‌। বলাই বাহুল্য সেট সস্‌ লক্ষ্মীদারই বাড়িতে তৈরী বাজারে বিক্রী না হওয়া ট্যমাটো-লঙ্কা ও নানাবিধ সব্জী দিয়ে। আমার কাছে খাওটাই মুখ্য, তার বাহ্যিক আড়ম্বর নয়। আমি নিশ্চিত আমার দলে বহু বাঙালীই পড়বেন। ফাইন ডাইনিং নামক ভাঁওতায় আজকাল দেশ ছেয়ে গেছে। সেই সময় এইসব লক্ষ্মীদা-দের এগরোল ফ্রেস এয়ার নিয়ে আসে বায়ুমণ্ডলে।

    গাঙ্গেয় সভ্যতার (টেকনিক্যালি আমরা ছিলাম ‘দামোদরীয়’ সভ্যাতার কাছাকাছি) যে টাইম পিরিওডে আমাদের শৈশব কেটেছে, সেখানে এগরোলের সাথে প্রেমের খুব একটা ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল না। স্কুল লাইফে দলবেঁধে ছাড়া কাপল্‌ হিসাবে ছেলে-মেয়ে একসাথে এগরোল বা ফুচকা খাচ্ছে এটা আমাদের মফস্বলে অভাবনীয় ছিল। তাই লক্ষ্মী বা গণেশের দোকানের রমরমা মার্কেটের সাথে প্রেমের তখন কোন সরাসরি সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু কেবল্‌ টিভির আগমণ, এবং মোবাইলের প্রাদুর্ভাব শুরু হবার পর দৃশ্য খুব তাড়াতাড়ি বদলে যায়। এখন তো স্কুল গমণকারী বালক-বালিকাদের পারস্পরিক ভাব বিনিময়ের যায়গা হয়ে দাঁডিয়েছে এই এগরোলের দোকানগুলি। আমাদের সময় লক্ষ্মীদার দোকানের সামনে কোন বেঞ্চ ছিল না – কিন্তু গতবার গিয়ে দেখলাম যে, তিনটি বেঞ্চ বর্তমান, এবং বৌদিও লক্ষ্মীদার সাথে হাত লাগিয়েছে খাবার বন্টনে। আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয় এগরোল খেতে খেতে ভাব বিনিময়ের সুবিধা ফুচকা খেতে খেতে সুবিধার থেকে বেশী। ফুচকা অর্ডার দেবার পর ওয়েটিং নামক কোন বস্তু নেই – সরাসরি শালপাতায় ও তেঁতুলজলে মনোনিবেশ। একজন মেয়ে প্রেম জাতীয় ভাব বিনিময় আর ফুচকার মধ্যে কোনটা বেছে নেবে সেটা অনুমানের ভার আপনাদের উপরেই ছেড়ে দিলাম। অন্যদিকে এগরোলের একটা মিনিমাম ওয়েটিং টাইম আছে, দুইহাত ব্যস্ত হয়ে পড়ে না – এই সব নানাবিধ কারণে নবীন প্রেমের জগতে এগ রোল এক বিশিষ্ট জায়গা দখল করে নিয়েছে আপাতত।

    একটু অপ্রাসঙ্গিক, তবুও এই ফাঁকে বলে রাখি। আমার এক সিনিয়র সেইদিন আই,আই,টি খরগপুড়ে তার পিএইচডি করার সময় চিকেনরোল নিয়ে বিষয়টা উল্লেখ করলেন। তারা নাকি লক্ষ্য করেছিলেন, চিকেন রোলের বিজনেসের রমরমা বাড়ার সাথে সাথে ক্যাম্পাসে কুকুরের সংখ্যা কমে যাবার একটা ক্লোজ সম্পর্ক ছিল। তবে আমাদের মেমারীতে তেমন কিছু ছিল না এটা হলফ করে বলতে পারি।

    লক্ষ্মী রোল কর্ণার প্রথমে এগ এবং চিকেন দিয়ে শুরু হলেও পরে তা চাউ (মিন), ভেজিটেবল চপ্‌ ও মোগলাই-এ বিস্তার লাভ করে। মেমারী স্টেশন বাজারে ক্রমশঃ খদ্দের এত বেড়ে গেল যে আরও একটি স্টল তৈরী হয়। সেই স্টলের স্পেশালিটি প্রথমে চাউ ও মোগলাই পরোটা-ঘুঘনি ছিল। এবং সেও লক্ষ্মীদাকে অনুসরণ করে এগরোল তৈরী শুরু করে – এর ফলে একে অপরের প্রতিদ্বন্দী হয়ে দাঁডালো। ব্যাপারটা হল সেই আশির দশকে কোক-পেপসীর লড়াইয়ের মত। কোক পেপসীর মত স্বাদের এবং পেপসী কোকের মত পানীয় তৈরীর চেষ্টা দিতে থাকে। এর ফলে ক্রেতাদের কি সুবিধা হল বলতে পারব না, তবে মেমারী স্টেশনবাজার রোল লড়াইয়ে পাবলিক বিরক্ত ও বিভ্রান্ত হয়ে অন্য জায়গায় গণেশ রোলে ভিড় বাড়াতে শুরু করে। বেশী কম্পিটিশন অর্থেই যে ভেজাল সেটা এখন আর এম বি এ স্কুল সিলেবাসে পড়ানো উচিত নয়। কেবল্‌ টিভির নিউজ্‌ চ্যানেলগূলো দেখে মধ্যবিত্ত বালক-বালিকাদের মজ্জাতেও উহা ঢুকে গিয়েছিল। খাদ্যবস্তুতে আমাদের তা প্রথম নজরভুক্ত হয় রঙ দেওয়া ভেজিটেবল চপ্‌-এ। গ্রামীণ ঐতিহ্য অনুসারে বীটের প্রাধান্য থাকত ভেজিটেবল চপে। অ্যাভেলেবিলিটি অনুযায়ী তাই শীতকালেই ভেজিটেবল চপ্‌ পর্যাপ্ত পরিমাণে ও সুস্বাদু পাওয়া যেত। কিন্তু অফ্‌ সিজিনেও সেই মাল সাপ্লাই চালু রাখতে গিয়ে আলুকে রং করে বীট্‌ বলে চালানো হতে থাকল চপের পুরে। খেতে গিয়ে মাঝে মাঝে তা মালুম হত – বড় পীস্‌ আলুগুলিতে বাদামী রঙ সবসময় ডিফিউজ হত না। আমরা প্রবলভাবেই সন্দেহ করতাম যে সেই খাবার বাদামী রঙ মার্চ মাসের দোল খেলার রঙের ইক্যুইভ্যালেন্ট ছিল। কিন্তু সন্দেহকে সত্য বলে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা বা প্রয়োজন কোনটাই আমরা অনুভব করি নি।

    বাঙালীর পেট পাতলা করার পিছনে যে চপ্‌ এবং সিঙাড়ার অবদান যুগান্তকারী তা এতটাই সত্য যে সেটা বিশদভাবে লিখে কেউ আর সময় নষ্ট করেন নি। তবে খুব কম জায়গাতেই টাটকা উপকরণ দিয়ে অতীব সুস্বাদু চপ্‌ - সিঙাড়া তোইরী হত- তার এক উদাহরণ ছিল গণার চপ। গণার চপের জায়গা স্টেশনবাজারে খোলা থাকত বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত। আর জায়গা বলতে হল কারণ প্রকৃতপক্ষে গণার কোন স্থায়ী দোকান ছিল না। একটা মুদীখানা দোকানের সামনে গণা একটা কেরোসিনের স্টোভ ও দুই অ্যালুমিনিয়ামের ট্রে ভর্তি করে ভেজিটেবল চপ্‌ নিয়ে বসত। গণার চপে বীট্‌ অর্থে বীট্‌ এবং গাজর অর্থে গাজরই বর্তমান থাকত। গণার ফ্লাইং কাষ্টমার প্রায় ছিল না – সবাই পার্মানেণ্ট। লিমিটেড এডিশন বিজনেস স্ট্রাটেজি আমাদের গঞ্জে পৌঁছবার আগে গণার চপ্‌ ও নীরেন ময়রার রসগোল্লাই ছিল আমাদের কাছে সীমিত সময়ে সহজলভ্য। রসগোল্লার প্রসঙ্গে পরে আসা যাবেক্ষণ। গণার চপের সাথে থাকত শসা (কচি), পেঁয়াজের স্যালাড ও বিটনুন ছিটে – সে এক স্বর্গীয় স্বাদ।

    গণা চপের জগতে ইতালিয়ান রসুই হলে কালু ছিল চাইনীজ ইক্যুইভ্যালেণ্ট। গণার পরিবেশনের মধ্যে স্যালাড জাতীয় সফিস্টিকেসি থাকলে কালুর মধ্যে ছিল চাইনীজ র্যাভপিডনেস – অথচ উভয়ের খাবারই সুস্বাদু। কালু মেমারী স্টেশনবাজারের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সে দোকান দিয়েছিল তথাকথিত ‘রেলের’ জায়গায়। আজ প্রায় ২০ বছর ধরে শুনে আসছি যে কালুর চপের দোকান (ততসহ বাবার ছাত্রদের ফলের দোকানগুলি) রেল তুলে দিল বলে! কিন্তু কালু অবিচলিত অবস্থায় গনিখান চৌধুরী, জৈল সিং, নীতিশ কুমার, লালু, দিদি সবাইকে পার করেছে। অবিশ্যি কালুর দোকান উঠাতে কোন বেগ পাবার কথা নয় (গণপ্রতিরোধ ছাড়া) – কারণ তা ছিল ওপেন এয়ার থিয়েটারের মতন। দিনের শেষে কালুর দোকান উঠলে পড়ে থাকত একটি ভাঙা তক্তা ও মাটির এক স্থায়ী উনুন। কাঁচামাল সহ কালু সকালে আগমণ ও রাতে প্রস্থান করত। কালু পাক্কা বিহারী ছিল, তার বড় ছেলে বিহারী-বাঙালী ও ছোট ছেলে বাঙালী-বিহারী কম্বিনেশনে পরিস্ফুট হয়েছিল।

    আমাদের ঔষুধের এবং কাপড়ের দোকানের সামনেই কালুর দোকান থাকাতে আমরা কিছু বিশেষ সুযোগ সুবিধা লাভ করেছি। কালু সকাল সন্ধেয় আমার জ্যাঠাদের চা এনে দিত, ফায়ফরমাশ খাটত টুকটাক এবং অর্ডার মত চপ্‌ বানাতো। ডাইভারসিটি এ্যণ্ড ইনক্লুসিভনেশ (ডি এ্যণ্ড আই ) নামক মহাধাপ্পার জিনিসটা ক্যান্সারের মত আজকের বহুজাতিক সংস্থাগুলিতে ছড়িয়ে পড়ার আগে, আমার জ্যাঠা কালুকে আদর করে “এই শালা বিহারী” বলেই ডাকত – এবং কালুও তার মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু খুঁজে পায় নি। কালুর থেকে আমাদের সুবিধা অর্থনৈতিক কিছু ছিল না – সম্পর্ক জড়িয়ে ছিল জিহ্বাস সাথেই মূলত। কয়েক বছর আগে আমার জ্যাঠার শরীর রোগ জর্জরিত হয়ে পড়তে শুরু করে, চলা ফেরা ক্রমশঃ কমে আসছিল এবং কোন এক সময়ে ডাক্তার কেবলমাত্র বিকেলে হাঁটাচলা করার উপদেশ দিল। জ্যাঠা সেই সময় উইণ্ডোর সদব্যবহার করে বিকেলে কালুর দোকানে চপ মুড়ি খেতে আসত। ইদানিং সেই চলা ফেরাও বন্ধ – আর জ্যাঠা তাই ঘরে বসে কালুর চপ খেতে না পারার আক্ষেপ করেই সময় কাটায় এখন। বাই দি ওয়ে, পেটের অবস্থায় জন্য জ্যাঠার চপ-তেলেভাজা খাওয়া বহুদিনই বারণ। এক মরণাপন্ন মানুষ মৃত্যুশয্যায় কালুর চপ খেতে না পারার আপেক্ষ নিয়ে দিন কাটাচ্ছে – এর চেয়ে বড় ট্রিবিউট কালুর চপের জন্য আর কি হতে পারে! (খুব কাছাকাছি হয়ত থাকতে পারে রামকৃষ্ণদেবের ক্যান্সার হবার পর জিলিপি খাবার জন্য আকুতি – তবে তিনি স্পেসেফিক কোন দোকানের নাম করতেন কিনা ঠিক এই মুহুর্তে মনে পড়ছে না, ভাবছি ব্যাপারটা শঙ্কর বা নিমাইসাধন বসুর কাছ থেকে যাচাই করে নেব)।

    গামছাকে হিন্দিতে কি বলে জানা নেই, তবে বিহার থেকে কালু লিটারেলী গামছা পড়েই মেমারীতে হাজির হয়েছিল। কথিত আছে যে আমার বড় জ্যাঠা আমার ফুল-জ্যাঠার জন্য মেয়ে দেখতে গিয়ে শুধুমাত্র ল্যাংচার লোভে পড়ে মেয়ে না দেখেই বিয়ে ঠিক করে চলে এসেছিল। তা সে হেন জ্যাঠা যে চপ্‌ কারীগর এক বিহারীকে নিজের দোকানের সামনে রেলের জায়গার তেলেভাজার দোকান করে দেবে, সেটা আর আশ্চর্য্য কি! ওই চপের দোকান থেকেই আজ কালুর তিনতলা বাড়ি, টিভি, ফ্রীজ এবং দুই মেয়ের ‘দহেজ্‌’ সহ বিয়ে দেওয়া। ওর দোকানে সিঙাড়া পাওয়া যেত না – মূল প্রোডাক্ট ছিল চপ্‌, পেঁয়াজী, ফুলুরী, বেগুনী, ছোলাছাঁকা ও মুড়ী। মেমারী স্টেশনবাজারে ২ টাকার জলখাবার দেওয়াতে কালুর জুড়ি কেউ ছিল না। একটা আড়াইশো সাইজ ঠোঙাতে মুড়ি, একটা চপ্‌, কিছু ছোলা ছাঁকা – ইহা বহুলোকের খাদ্যগহ্বরের তৃপ্তিদান করেছে এবং এখনও করছে, বেসনের ফুলুরীগুলি জাম্বো সাইজের ছিল এবং কোন এক কারণ বসত আমরা আমরা সেগুলিকে ‘বোমা’ বলতাম। ঝূরো বেসনের তাল – এক বেসনের ভাজা খোলের মধ্যে সেঁধিয়ে আছে। জলের সাহায্য ছাড়া ওই জিনিস পেটে চালান করা দুঃসাধ্য ছিল। কালুর প্রায় সমস্ত প্রোডাক্টই ওয়ান স্টেপ প্রসেসে তোইরী হলেও, পেঁয়াজী তৈরী হত টু-স্টেপ প্রসেসে। প্রথম স্টেপে পেঁয়াজ বেসনে মেখে গোল বলের মত করে হালকা ভেজে নেওয়ার পর সেমি ভাজা বলগুলি চেপ্টে রাখা হত। সেকেণ্ড ও ফাইনাল স্টেপে সেই চ্যাপ্টা মাল ভাজলে তা পরিপূর্ণ ‘পেঁয়াজি’তে রূপান্তরিত হত।

    খাবার সমস্ত বৈশিষ্ট ছাড়াও কালুর দোকানের (এবং প্রকৃত অর্থে সব তেলেভাজার দোকান) বৈশিষ্ট ছিল সেই তেলে ভাজার কড়াই। ও কড়াই কবে কেনা হয়েছিল কেউ জানে না এবং কড়াই কিসের তৈরী সেটাও অনুমানসাপেক্ষ। এটা আজ নানাবিধ পরীক্ষা ও সমীক্ষার দ্বারা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, তেলেভাজার কড়াই এবং তাতে ফুটতে থাকা তেল উভয়েই পুরানো না হলে তেলেভাজার স্বাদ ঠিক খোলে না। অবশ্য তেলের বয়স ও কড়াইয়ের বয়সের পার্থক্য নিউ আর্থ ক্রিয়েশনিষ্ট দের মতে পৃথিবীর বয়স ও ওল্ড আর্থ ক্রিয়েশনিষ্ট দের মতে পৃথিবীর বয়সের পার্থক্যের মতই সমান ডাইমেনশনের। কড়াই কোনদিন ধোওয়া বা মাজা হত না – একেবারে ইউজ এ্যাণ্ড থ্রো টাইপের যাকে বলে। বাড়ির তেলেভাজার স্বাদ ঠিক এই কারণেই বাইরের তেলেভাজার মত হয় না। আর বাড়িতে তেলেভাজা নাড়তে মূলত খুন্তী ব্যবহার হয় যেখানে ক্ল্যাসিক্যাল চপ্‌ বেগুনী নাড়া হয় সাইকেলের চাকার স্পোক (লোহার সরু শিক) দিয়ে। এই দুইয়ের পার্থক্যের জন্যও চপের স্বাদের ফিলোসফিক্যাল ও সাইকোলজিক্যাল তফাত হয়।

    আমার মনে হয় বেগুন থেকে বেগুনী কথাটা এসেছে (সুনীতি চাটুজ্জে শুনলে খুশী হতেন)। বাজারে বেগুনের দামের উপর নির্ভর করে বেগুনী তৈরী হত বেগুন বা কুমড়োর ফালি দিয়ে। কুমড়ো দিয়ে বেগুনী তৈরী সোনা দিয়ে পাথরবাটি তৈরীর মতনই। অথচ এই কন্ট্রাডিকশনটা এখনও বাংলা পাঠ্য বইয়ে ঠাঁই পেল না। বেগুনী প্রসঙ্গে বহু ছোটবেলার এক কথা মনে পড়ে গেল। নিমো স্টেশনে বোতন-দা তার দোকানে একবার সীমের বেগুনী চালু করেছিল। বোঁটা সহ কচি সীম বেসনে ডুবিয়ে তেলে ভাজা – সে এক অপূর্ব স্বাদ। অবশ্য বেসনে কিছু সিক্রেট মশলা থাকত – উহা ছিল ট্রেড সিক্রেট। আমরা বোতন-দার খুব কাছের লোক হবার জন্য জেনেছিলাম গোপন মশলা আদপে ছিল খাবার সোডা ও লঙ্কাগুঁড়ো। যাই হোক সেই ‘বেগুনী’ সুপারহিট ছিল। তারপর বোতন-দা একদিন সেই দোকান তুলে দিয়ে কলকাতায় মাড়োয়ারী গদিতে কাজ করতে চলে গেলে সীমের বেগুনীর আর্ট লুপ্ত হয়ে গেল। কলকাতা ও মারোয়ারী সংক্রান্ত আমার ব্যক্তিগত দোনামনা সেই তখন থেকে শুরু।

    চপ-বেগুনীর সাথে সিঙাড়ার একটা পার্থক্য ছিল যা অনেক সময় আমাদের জাতিভেদ প্রথার সমতুল্য বলেই মান্য হতে পারত। সিঙাড়া মূলত তৈরী হত মিষ্টির দোকানে। ক্ল্যাসিক্যাল মিষ্টির দোকানে ভিয়েন হত রাতের বেলায় তাই উনুনগুলি সকালে ফাঁকা থাকত এবং তার সদব্যবহার হত সিঙাড়া ও কচুরী তৈরী করে। এই দুই প্রোডাক্টেই ময়দার ব্যবহার ছিল – ময়রা থেকেই ময়দা এসেছে কিনা জানি না তবে ওদের সম্পর্ক বেশ মাখামাখি ছিল। এটা নিশ্চয়ই আপনার জানেন যে আলুর স্বাদের উপর সিঙাড়া (বা চপ্‌) স্বাদ অনেকটা নির্ভরশীল। আমি আলুর প্রকারভেদে এইক্ষেত্রে ঢুকতে চাইছি না, কারণ বাজারে প্রায় পচা ও রদ্দি আলু দিয়েই সিঙাড়া ও চপ্‌ তৈরী হয়। তাই আলুর মূলত প্রকারভেদ করছি ছোট আলু ও বড় আলু দিয়ে। ছোট আলুকে অনেক সময় আমাদের দিকে আবার ‘ক্যাঁট’ আলু বলা হত। আর তা ছাড়া জমি থেকে আলু তোলার সময় দুই অবস্থায় তোলা হত – কাঁচা আলু ও পাকা আলু। কাঁচা আলুর খোসা পাতলা আর তাই কাঁচা আলু সিদ্ধ করে খোসা ছাড়ানোর দরকার হত না। ছোট আলু ও কাঁচা আলু এই দুইয়েরই সিঙাড়া হত খোসা সমেত। আমাকে বলতেই হবে যে খোসার পরিমাণ বেশী না থাকলে, সেই সিঙাড়া অপূর্ব খেতে হত। সিঙাড়ার সাথে অনেক সময় চাটনী দেওয়া হত চাট হিসাবে। আমি আজ পর্যন্ত সেই চাটনীর ট্রেন্ড ঠিক করে উঠতে পারি নি – তার বিস্তৃতি ছিল আমড়া থেকে ট্যমেটো পর্যন্ত। জ্ঞানীজনেরা বলে থাকে ওই চাটনীর পিছনে আগের দিন রাতের ভিয়েনের গেঁজের অবদান ছিল প্রগাঢ়। গেঁজ হল মিষ্টির রস ফুটতে থাকা অবস্থায় সৃষ্ট ফেনা, সেই ফেনা কারীগর ছেঁকে নিয়ে পাশের টিনেতে রাখে সাধারণত। যাইহোক সেই চাটনী অপূর্ব খেতে হত যদিও তার মূল কম্পোজিশন জানার মত কোন ক্যেমিক্যাল অ্যানালিসিস এখনও পর্যন্ত আবিষ্কার হয় নি – এমনকি রামন স্পেক্ট্রোস্কোপি ও ফেল হতে বাধ্য।

    সিঙাড়ার পুর ছাড়া আলু দিয়ে তৈরী হত কচুরীর সহযোগী তরকারী। যাদের জলখাবারের বাজেট একটু বেশী তারা চপ্‌ মুড়ির পরিবর্তে কচুরী তরকারীর দিকে পা দিত। অবশ্য আপনি যদি ওই কচুরির মধ্যে মটরের পুর খোঁজেন তা হলে আপনাকে আপাদমস্তক হতাশ হতে হবে। মটরের পূর না থাকলেও থাকত ডালের পূরের ছিটে। মেমারী স্টেশন বাজারে দুইখানি দোকান সেই কচুরীর যোগান দিতে হিমসিম খেত – এক ছিল ভাইয়ার দোকান ও দুই আগে উল্লিখিত নীরেন ময়রার দোকান। আর তা ছাড়া কচুরীর বেশী চল ছিল ফ্লাইং কাষ্টমারদের মধ্যে – ট্রেন থাকে নেমে বাস ধরার আগে কচুরী দিয়ে জলযোগ। আমি গভীর মনোযোগ দিয়ে এই সমাজতাত্বিধ্ক তথ্য আবিষ্কার করেছি যে, যে পাবলিক নিজের এলাকায় চপ-মুড়ি খায়, সেই আবার অন্য জায়গায় গেলে কচুরী-তরকারী খোঁজে। এর মধ্যে কি কোন মনস্তত্বিক জটিলতা আছে? ভাইয়ার দোকানে ফ্লাইং কাষ্টমার বেশী থাকলেও নীরেন ময়রা মূলত সার্ভ করত বাঁধা খদ্দেরদের। এই বিশ্বায়নের যুগে নীরেন ময়রার ফিলোসফি আমার কাছে আজও বিষ্ময়কর লাগে। রসগোল্লা, জিলাপী, ফুচকা ইত্যাদি সহ সেই গল্প পরের পর্বে
  • SG | 134.124.204.10 | ১৪ নভেম্বর ২০১২ ১৫:০৪530436
  • আমাদের হোস্টেল এর উড়ে রাধুনি গুলো ID , GF হলেই হাত গুটিয়ে বসে থাকত । B E Colleger হোস্টেল এর (হল নই কিন্তু ) রান্না যারা খেছি তারা দুনিয়ার যে কোনো রান্না অমৃত বলে খে নেব ।
  • কৃশানু | 226.113.128.239 | ১৪ নভেম্বর ২০১২ ১৮:০৬530437
  • হেব্বি লেখা হচ্ছে। ফাশ্ক্লাস টই।

    বেগুন পোস্তটা বাদ পড়েছে। দেবভোগ্য জিনিস পুরো। এবং অন্য কেউ অন্য কোথাও রান্না করে থাকলেও থাকতে পারেন, তবে মা নিজবুদ্ধিতেই বানিয়েছিলেন। আম্মো তুলে নিয়েছি। এই প্রথম শীতের তেলচুকচুকে ঢলঢল যৈবন বেগুনগুলিকে পরম মমতায় সংগ্রহ করতে হবে। তাদেরকে বেগুন ভাজার চেয়ে এট্টু ছোট করে কাটতে হবে, ধুয়ে টুয়ে নিয়ে। চাকা পিস বর্জনীয়। নুন আর চিনি (হলুদ কদাচ নয়) মাখিয়ে মোটামুটি ভাজা হলে তার মধ্যে কাঁচা লঙ্কা আর নুন দিয়ে দানা দানা করে বাটা পোস্ত দিয়ে দিতে হবে। তারপর গরম ভাত বা রুটি সহযোগে পতন ও মূর্ছা।

    মান-নাড়া টাও নেই দেখলাম। নিজগুণেই দাবি রাখে। যদিচ এটা এখনো রান্না করিনি কখনো, তবে কেসটা এইরকম হবে। মান সেদ্ধ করে নিয়ে ভালো করে নুন দিয়ে মেখে নিতে হবে। তারপর সর্ষের তেল গরম করে তাতে কালো জিরে, শুকনো ও কাঁচা লঙ্কা আর রসুন ভাজতে হবে। ভাজা হলে তাতে এই মানসেদ্ধটা দিয়ে একটু নেড়ে চাদ্দিক লাল লাল করে নিতে হবে। কম করে একথালা ভাত এইটে দিয়ে না খেলে ভগমান পাপ দেবেন বলে জানিয়েছেন।
  • siki | 24.96.180.158 | ১৪ নভেম্বর ২০১২ ১৯:৩৫530438
  • যাক, আবার শুরু হল তা হলে।

    চলুক, চলুক। আমি আঙুল চাটি।
  • SG | 134.124.204.10 | ১৫ নভেম্বর ২০১২ ১২:৪৫530439
  • গোটা পোস্ত দিয়ে ছোট ছোট আলু ও পটল ভাজা ।
  • ঐশিক | 132.181.132.130 | ১৫ নভেম্বর ২০১২ ১৪:১৬530440
  • কচু খেতে হলে খান কচু ঘষা, মান কচু ঘষে এট্টু নারকোল বাটা দিয়ে ভাজা ভাজা করে নিতে হবে সাথে পর্যাপ্ত পরিমানে লঙ্কা ও সর্ষের তেল চাই,
  • b | 135.20.82.164 | ১৫ নভেম্বর ২০১২ ১৪:৫৯530442
  • লইট্যা শুঁটকি। হইত্য কথা বলি, বাঙালরা শুধু শুঁটকি খায় এমত একটা ধারণা প্রচলিত, কিন্তু কঠিন বরিশালী বাড়িতে শুঁটকির নাম গন্ধ, বিশেষ করে শেষেরটা, পাই নি। অথচ, আমার মায়ের বাড়ি, দিদিমা বড় হয়েছেন রংপুরে, শুঁটকি শিল্পে সিদ্ধহস্ত। মাসির শ্বশুরবাড়ি সিলেট, তথৈব চ। মনে হয় পার্সোনাল টেস্ট ম্যাটার করে, তবে আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ টাট্কা মাছের (অ)প্রাপ্তি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন