এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • লাবণির গল্প, আকাশবাণী দিদির জন্য

    xi
    অন্যান্য | ১২ জুন ২০১২ | ২৩৯০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • ব্যাং | 132.167.74.12 | ১২ জুন ২০১২ ২০:৩৮548405
  • :-))
  • xi | 161.141.84.239 | ১২ জুন ২০১২ ২০:৪১548416
  • ব্যাং দি, একটা মেয়ের গল্প বলি তোমায়।

    ওর নাম ছিলো লাবণি। বাড়িতে ডাকতো বনি।ও যখন জন্মালো, ওর মায়ের তখন বাইশ/তেইশ বছর বয়স, সে তো মেয়ে হয়েছে দেখে কেঁদে একশা। মেয়েজীবন নাকি খুব দুঃখের। একে তো মেয়ে তার উপরে আবার কালো মেয়ে। লাবণির মা নিজে বেশ ফরসা, বাঙালির মেয়েদের মধ্যে ব্যতিক্রমী রকম ফরসা। উনি ফরসা ছাড়া অন্য মেয়েদের বেশ করুণাযোগ্য মনে করতেন।

    লাবণিকে হসপিটাল থেকে ঘরে আনার পরে তাকে বুকে টেনে নিল লাবণির ঠাকুমা, ষাট বছরের এক বৃদ্ধা, নিজের চারটি মেয়ে আর তিনটি ছেলে সর্বমোট এই সাতটি আপন সন্তান মানুষ করার পরেও যার নাতিনাতনি হিসাবে নতুন শিশু কোলে পাবার ও মানুষ করার আকাঙক্ষা এতটুকু কমে নি।নিজের ছেলেমেয়েরা সব বড় হয়ে গেছে, তাদের সবার বিয়ে হয়ে গেছে, মেয়েরা শ্বশুরবাড়িতে, ছেলেদের বিয়ে হয়েছে, তবে বড়ছেলের ঘরে কোনো সন্তান নেই, মেজোছেলের ঘরে এই প্রথম সন্তান, বুড়ি লটারি জেতার মতন এই নাতনিকে টেনে নিলো কাছে।ছেলেমানুষ বৌমা কচিছানাকে স্নান টান করাতে ভয় পেতো, বুড়ি নিজেই দেখিয়ে দেখিয়ে দিতো কী করে কী করতে হবে। আশ্চর্য ব্যাপার, বৌমার থেকে চল্লিশ পয়তাল্লিশ বছর আগে জন্মানো মানুষ হয়েও বৃদ্ধা কিন্তু মনে করতেন না মেয়েদের জীবনদুঃখের। তার নিজস্ব স্থির বিশ্বাসের ভূমি ছিলো।

    লাবণি মনে করে সে যে বেঁচে আছে সেটা এই ঠাকুমার পুণ্যে।যতদূর সে মনে করতে পারে সবসময় সে ঠাকুমার সাথে, রাতে ঘুমাতো ও ঠাকুমার সাথে। পাশের ঘরে বাবা মা আর ছোটো ভাইটা ঘুমাতো। লাবণির ভাই ওর থেকে সাড়ে তিন বছরের ছোটো ছিলো। ভাই জন্মানোর পর থেকে মা আর লাবণিকে একেবারে কাছেই রাখতে চাইতো না, সাথে ঘুমাতে চাইলে রেগে যেতো। তবে লাবণি পাত্তা বিশেষ দিতো না, তার ঠাকুমা আছে।বাবা লোকটি একেবারে ভোলেভালা সাংসারিক ব্যাপারে, নিজের চাকরি বাকরি হাটবাজার করা আর ছুটির দিনে বাড়ির সীমানার মধ্যে নানা ফুলফলের গাছের তদারক, এই সবের বাইরে আর কিছুতে তাকে বিশেষ দ্যাখে নি লাবণি। তবে হ্যাঁ, মাঝে মাঝে ছোট্টো লাবণিকে বাজারে নিয়ে যেত রবিবারের সকালে।

    ছোটোবেলা থেকে নানা অসুখে ভুগেছে লাবণি, প্রধান ছিলো ঠান্ডা লেগে বসে গিয়ে ভয়ানক শ্বাসকষ্ট, সেসব রাতে বালিশের পর বালিশ দিয়ে তাকে আধাবসা অবস্থায় শোয়ার ব্যবস্থা করতো ঠাকুমা, নিজে প্রায় সারারাত জেগে যত্ন করতো, লাবণি মনে করে ঐ সব অনিশ্চিত সম সেয় যে পার হয়ে আসতে পেরেছেতা কেবল ঠাকুমার আশীর্বাদে। মা সেইসব সময় ওকে নিতান্ত একটা ঝামেলা মনে করতেন, মনে করতেন মাইয়ার ছাতা, তার আবার যত্ন। মরলে বাঁচি।

    এদিকে ইস্কুলে ভর্তি টর্তি একসময় হয়ে গেল লাবণি, কিন্ডারগার্টেন থেকেই বোঝা যেতে লাগলো সে খুব সহজে আর খুব তাড়াতাড়ি শিখে ফ্যালে, সব মনে রাখতে পারে, এইসব। যতদিন ওর ভাই স্কুলে ভরতি হয় নি, ততদিন এতে অসুবিধা ছিলো না, কিন্তু লাবণির ভাই ভর্তি হলে বোঝা গেল ভাই নিতান্ত সাধারণ, লাবণির তীক্ষ্ন মেধার পাশে নিতান্ত ম্যাড়মেড়ে।এইখানেই লেগে গেলো কনফ্লিক্ট, প্রিয় ছেলে পড়ে যাবে ছায়ায় আর মাইয়ার ছাতা কালিকুটকিটা এগিয়ে যাবে লাফে লাফে? এইসব সময়ে "মর মর তুই মরলে আমার হাড় জুড়ায়, তরে যমে নেয় না কেন? " এইরকম অভিশাপও পেয়েছে লাবণি মায়ের কাছ থেকে। একবার ওর ঠাকুমা শুনে ফেলে মোক্ষম পালটা ওষুধ দিয়ে দিয়েছিলেন বৌমা কে, "এত কইও না বৌমা, এত কইও না, ঠাকুর কইবে রহ রে , তরে মজাটা দেহাই" এই কইয়া হয়তো তোমার পুতখানরে টান দিয়া লইয়া গেল গা! তহন কাইন্দাও কূল পাইবা কি? "

    লাবণির মা তারপর থেকে সাবধান হলো, ওর ঠাকুমার সামনে ওকে আর কিছু বলতো না। আর মারধোরের ব্যাপারেও সুবিধা করতে পারতো না, কারণ ঠাকুমা ওকে আত্মরক্ষার কৌশল শিখিয়েছিলেন, "তোর যদি ন্যায্য না মনে লয়, গুরুজন কিছু করতাছে বইলা পাইত্যা দিয়া থুবি না, পালটা মাইর কি খামচি দিতে পারলে দিবি, না পারলে দৌড়াইয়া পলাইবি।" এই সোজাসরল কথা কয়টা যে কী কাজে লেগেছে লাবণির গোটা ছোটোবেলাটা, তা বলে বোঝানো যায় না। পাতলা পাতলা ধারালো নখ ছিলো ওর, ঝামেলায় পড়লেই বিড়ালির মতন আঁচড়ে দিতো। বাইরে বুলি করতে যারা চাইতো, তারাও এই ভয়েই পারতো না। ঠাকুমা শুধু ওকে দৈহিক আঘাত থেকেই রক্ষা করে নি, মানসিক আত্মসম্মান বজায় রাখার উপা্য়ও পরিষ্কার দেখিয়ে দিয়েছিলো। বলং বলংবাহুবলং , পশুশক্তির সঙ্গে যেখানে লড়াই সেখানে ঠিক তার মতই লড়তে হবে। তারপরে বড় হয়ে গেলে তো নীতি বুদ্ধি যুক্তি এইসব অন্য শক্তি এসেই যাবে। এই ভাষায় এইভাবে বোঝায় নি বটে, কিন্তু তাতে মূল বোঝাপড়ার কিছুমাত্র ক্ষতি হয় নি।

    ছোটোবেলার ঐ দিন গুলো, প্রাইমারি স্কুলের ঐ দিন গুলো লাবণির কেটেছে একটা ভীষণ অনিশ্চয়তায়, ঠাকুমা চিরদিন থাকবে না, তখন সে কী করবে? নানা অসুখে বিসুখে পড়াশোনাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করেছিলো , অন্ধকারের দিকে তলিয়ে যাচ্ছিলো লাবণি, সেইসব সময়ে তার পাড়ার তার প্রায় সমবয়সী এক বন্ধুনি তার সব সুখদুঃখের সাথী হোলো, সেই বন্ধুনিকে সে সব কথা বলতো। পতন অভ্যুদয় বন্ধুর পন্থা পেরিয়ে সারাজীবন সেই তার একমাত্র প্রকৃত বন্ধু হয়ে আছে আজও।

    পথ খুঁজছিলো লাবণি, সে গান শেখে না নাচ শেখে না, তার বাপমা এই বাড়তি খরচ তার জন্য করতে রাজি না, তাহলে সে কী করবে? খেলুড়ি সঙ্গীসাথীরা সবাই যখন নাচ গানের স্কুলে চলে যায় শনিবারে রাবিবারে বিকালে, সে কী করবে? এমন কিছু কি আছে যা দিয়ে তার শূন্য সময় ভরে যায়?

    (চলমান)
  • xi | 161.141.84.239 | ১২ জুন ২০১২ ২০:৫৬548427
  • এইভাবে দিন যায়, রাত কাটে। লাবণি তেমন কিছু খুঁজে পায় না কিছুতেই। এত সময়, এত সময়, এত সময় তার কেন? সবাই যখন গানের ক্লাস নাচের ক্লাসে চলে যায়, তখন সে কী করবে? খেলার মাঠ পড়ে আছে চুপচাপ, খেলুড়ি ছাড়া তো তার প্রাণ নেই! বাড়ীতে রন্নাবাটি কি পুতুল খেলার মতন ছোটো সে আর নেই, বড় হয়ে গেছে, ক্লাস থ্রী তে উঠে গেছে।

    এই থ্রী তে লাবণির জীবনে দুটো ঘটনা ঘটলো, সেগুলো জীবনের মোড় ফিরিয়ে দিলো। প্রথম ঘটনাটা হলো স্কুলে ক্লাস টিচার হিসাবে এলো এক আশ্চর্য দিদিমণি, করুণা দিদিমণি। এই ভদ্রমহিলার মধ্যে এমন একটা শান্ত কারুণ্য আর ভালোবাসা ছিলো, যে কেবল তাকে দেখতে পাবে বলেই লাবণির স্কুলে যেতে ইচ্ছে করতো আর পড়াশোনাগুলো করতে ইচ্ছে করতো। দ্বিতীয় ঘটনা হলো একদিন লাবণিকে একদিন একটা সায়েন্স ম্যাগাজিন এনে দিলো লাবণির বাবা, কিশোর জ্ঞান বিজ্ঞান। সে বই খুলে একেবারে বালিভরা মরুভূমিতে যেন ছায়াশীতল এক মরূদ্যান খুঁজে পেলো লাবণি। এমন জিনিস আছে পৃথিবীতে? এমন সুন্দর ছবি দেওয়া এমন সুন্দর সব গল্প আর গল্পের মতন প্রবন্ধ সব? এ নাকি আবার প্রত্যেক মাসেই বেরোয়? আরে! এই তো সেই জিনিস যা তার শূন্য সময় ভরে ভরে ভরে দিতে পারে, শুধু ভরে না, উপচে দিতে পারে। গান নাচ না করার দুঃখ কোথায় মিলিয়ে গেলো, লাবণি যেন পেয়ে গেলো দুই অদৃশ্য ডানা, উপর থেকে সে যেন দেখছে কত্ত বড়ো একটা পৃথিবী!
    (চলমান)
  • xi | 161.141.84.239 | ১২ জুন ২০১২ ২১:১২548438
  • এর পরে আর লাবণির পথ খুঁজতে হোলো না, পথ তাকে দিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। সেই পথ ছাড়া আর কোনো রাস্তা এরপরে সে কন্সিডার করে নি।

    পাড়ায় বা ইস্কুলে বন্ধুরা রইলো চারিপাশে, সে ঐ সেই একটিমাত্র বন্ধুনি ছাড়া আর কাউকে সেভাবে কাছে নিলো না, তারা সবাই বন্ধু, কিন্তু বাইরের।

    লাবণি নিজের ঘরের কোণ, আপনমন ও বইয়ের রাশ নিয়ে নিজের জগৎ তৈরী করে নিলো। টিভি নেই বাড়ীতে, তাই টিভি দেখার ও সেইসব নিয়ে কথা বলার সূত্রে যে বন্ধুরা তৈরী হয়, সেই সুযোগও লাবণির ছিলো না। সামাজিক হয়ে ওঠার বেশীরভাগ রাস্তাই তার বন্ধ ছিলো। কিন্তু লাবণি গ্রাহ্য করতো না, তার পথ সে পেয়ে গেছে।

    প্রাইমারি স্কুল ছেড়ে যখন সেকেন্ডারি স্কুলে উঠলো, তখন থেকে সে ক্লাস টপার হতে শুরু করলো। বাড়ীতে টেবিলও ততদিনে বদলে গেছে, লাবণির মা ততদিনে বুঝতে শুরু করেছে ছেলেকে শত ননী মাখন খাওয়ালেও সে মেয়ের ধারেকাছে পৌঁছতে পারবে না, পান্তা শাকপাতা খাওয়া কালিকুটকি লম্ফে লম্ফে এগিয়ে যাবে। ভোল পাল্টে ফেলে মা যত্ন করতে শুরু করলো মেয়েকে। মুখে কিন্তু কোনোদিন প্রশংসা করেনি, ওর সামনে তো না ই, বাইরের লোকের কাছেও না, বেড়াতে টেড়াতে যারা আসতো, আত্মীয়স্বজন বা বন্ধু, পরিচিত স্বল্প পরিচিত, কারুর কাছে লাবণির নামে ভালো কিছু বলে নি, সবসময় ওর নানাবিধ দোষের কথা কিছুটা সত্যি কিছুটা বানিয়ে কিছুটা রঙ চড়িয়ে বলতো। লাবণির ঐ সাংঘাতিক রেজাল্ট, প্রায় সব সাবজেক্টে হায়েস্ট পাওয়া ছিলো সূর্য পূর্বদিকে ওঠার মতন স্বাভাবিক, এই নিয়ে কোনো প্রশংসার কথা কোনোদিন বলে নি মা ও না বাবাও না। বহুকাল পরে বহু অভিজ্ঞতার পরে লাবণি এর আসল অর্থ বুঝেছে।

    (চলমান)
  • aranya | 154.160.226.53 | ১২ জুন ২০১২ ২১:৩৫548449
  • বাচ্চাগুলো কত কষ্টের মধ্যে দিয়ে গেছে ঃ-( ।
    ছোটবেলায় আমার একমাত্র দুঃখ ছিল বাবার অসুস্থতা, এদের কষ্টের ধারে কাছে আসে না।
  • xi | 161.141.84.239 | ১২ জুন ২০১২ ২১:৪০548455
  • এইভাবে মুহূর্ত যায়, প্রহর যায়, দিন যায়। "দিবস দিবস করি মাসা/মাস মাস করি বরষ ---" এই আরকি যেমন কবিরা বলে থাকেন।

    লাবণি দুর্গাপূজায় নতুন জামা না পাওয়া, ওর জন্মদিন পালন না হওয়া, সেভাবে সাজগোজ ভরা উৎসব কিছু না পাওয়া গ্রাহ্য করে না, কোনো উপহার চায় না, শুধু পড়াশোনার ব্যাপারে ওর লড়াইগুলো অ্যাবসোলিউট। পড়ার ঘর, বইটই, প্রয়োজনীয় টিউটর---এইসবের জন্য একেবারে যোদ্ধার মতন উচ্চ শব্দে লড়তে ওর কোনো সংকোচ হোতো না, কারণ এগুলোকেই তো লোকে মোক্ষের পথ বলে। সে তো তার কর্তব্য পালনে ত্রুটি করেনি, সে তো চাপ নিয়ে একটি কথা কয় নি, সেতো সাজগোজ ও উৎসব সুযোগ না পাবার জন্য কোনো অভিযোগ করে নি, তাহলে মোক্ষপথের যোগ্য দাম তাঁরা দেবেন না কেন যখন সেটা তাদের কর্তব্য? গ্লোরি তো শুধু তার একার নয়, ওনারাও তো তার ভাগ পান! সে তো কোনোদিন তাঁদের হতাশ করেনি!

    এইভাবে একলা বড়ো হতে হতে কত বছর চলে গেলো, স্কুল ছাড়িয়ে কলেজ পাশও করে গেলো লাবণি। সাধারণত সন্তানের মনে বাবামায়ের কাছ থেকে যে ভরসার জায়গাটা তৈরী হয়, সেটা লাবণির হয় নি, সে একটা সময়ের পর থেকে মনে করতো ওরা পালক পিতামাতা, সে নিজের কর্তব্য করেছে, ওঁরা নিজেদের কর্তব্য করেছেন। ওঁরা ওর মানসিক আশ্রয় হন নি। হয়তো সেটা তাঁরা চানও নি। ওদের সঙ্গে লাবণির একটা নিরাসক্ত ভালোবাসার সম্পর্ক হয়েছে শুধু, মানসিক মুক্তির পথ এতে সহজ হয়েছে।

    সেই যে বন্ধুনি, বিয়ে হয়ে সে দূর শহরে চলে যাবার আগে দেখা করতে এলো, সে বন্ধুনি খুব ভালো রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতো। কত গান লাবণিকে সে শুনিয়েছে ওদের ছাদে বসে সন্ধ্যেবেলার তারাফোটা আকাশের নিচে। যাবার আগে সে শুনিয়ে গেলো সেই পৃথিবী আকাশ মহাকাশ এক করা ব্যাকুল "মহাবিশ্বে মহাকাশে মহাকাল মাঝে---"

    তার মাত্র কয়েক মাস পরে লাবণির ডাক এসে গেল দূর থেকে, হ্রদের জলে ভাসা হাঁস যেভাবে ডানা ঝেড়ে সব জল ফেলে দিয়ে উড়ে যায় তত সহজেই লাবণি সব ছেড়ে গেলো। সেই যে আট বছর বয়স থেকে তার সব ছেড়ে পালিয়ে যাবার আকুল আকাঙ্ক্ষা, যা এতকাল সে মনের কোন গহীনে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছিলো, সেই আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠে তার হাত ধরে তাকে নিয়ে চললো মুক্তির পথে। সে পথে আজও সে চলছে, আস্তে আস্তে মায়া মুছতে মুছতে----

    (শেষ)
  • hu | 22.34.246.72 | ১২ জুন ২০১২ ২১:৪৩548456
  • এইসব গল্প পড়ে মন খারাপ লাগে। সবচেয়ে দুঃখ লাগে এই ভেবে যে বাবা-মায়ের বৈষম্যমূলক আচরন ভাই-বোনেদের সম্পর্কেও প্রভাব ফেলে। একটা সময় আসে যখন বাবা-মার সাথে সব কথা বলা যায় না। সেসময় ভাই-বোন সবচেয়ে বড় বন্ধু। অনেক কিছু নিয়ে ক্ষোভ থাকলেও এই জায়গাটাতে খুব ভাগ্যবান - এক মুহূর্তের জন্যও কখনও মেয়ে হওয়ার জন্য বৈষম্য পাইনি মা-বাবার কাছে। অন্যত্র পেয়েছি। কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে না।
  • hu | 22.34.246.72 | ১২ জুন ২০১২ ২১:৪৫548457
  • শেষ প্যারাগ্রাফটা খুব ভালো লাগল।
  • ব্যাং | 132.178.252.193 | ১২ জুন ২০১২ ২১:৫৮548458
  • অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থাকলাম, লেখাটা পড়ে। ভালোমন্দ কিছু বলার বোধটুকুও হারিয়েছি। তবে অপরিচিতা সেই ঠাকুমার উদ্দেশ্যে প্রণাম জানালাম। ভাগ্যিস তিনি ছিলেন, তাই লাবণির কোথাও হলে এইটুকুও জুড়োবার জায়গা ছিল। অনেক বাচ্চারই সেটাও থাকে না।
    আর যেই মেয়েটা আজও চলছে, চলেই চলেছে, থামছে আর কিছুতেই না, তার মাথায় হাত রাখলাম, বড় দিদির হাত, যেই হাত অনেক আশীর্ব্বাদ আর শুভকামনা নিয়ে এসেছে। আরেকটা হাত রাখলাম তার পিঠে। ভরসার হাত সেটা। আর তার কানে ফিসফিসিয়ে বললাম "এগিয়ে চল, থামিস নে। আছি, তোর কাছাকাছিই থাকব, যেই ডাকবি, অম্নি সাড়া দেব"
  • ব্যাং | 132.178.252.193 | ১২ জুন ২০১২ ২২:০১548407
  • শেষ প্যারাগ্রাফটা পড়ে থেকে ঠিক জানি - আজ রাতে অনেক রাত অব্দি বারন্দায় বসে থাক্ব। নিজের সঙ্গেও একটাও কথা বলব না। চুপ করে বসেই থাকব। শুধু মনটা যে কোথায় কোথায় উড়ে বেড়াবে!
  • aranya | 154.160.226.53 | ১২ জুন ২০১২ ২২:০১548406
  • বাবা, মা-র ভালবাসাটা আমরা যারা সহজে পাই, তারা অনেকেই ওটাকে গ্রান্টেড বলে ধরে নি।
    জাই বড় ভাল লিখেছে, কষ্টের লেখা কিন্তু মন ছুঁয়ে গেল। লাবণি ভাল থাকুক এখন, তার সব স্বপ্ন যেন সত্যি হয়ে যায়।
  • titir | 138.210.80.42 | ১২ জুন ২০১২ ২৩:৩৯548408
  • XI,
    লাবণি খুঁজে পেয়েছে তার ডানা মেলার যায়গা। ভালো থাকুক সে।
    আচ্ছা এই লেখাটা কি আগে কোথাও লেখা হয়েছিল? মনে হচ্ছে লেখাটা আগেও পড়েছি।
  • xi | 161.141.84.239 | ১২ জুন ২০১২ ২৩:৪৪548409
  • তিতির, এই লেখাটা এক্ষুনি লেখা। কিন্তু এই ধরনের আখ্যান আগেও কোথাও শুনে থাকতে পারেন বৈকি। সেই অনেক অনেক অনেক কাল আগের বালা মজলিশে।
    ভালো থাকবেন।
  • titir | 138.210.80.42 | ১২ জুন ২০১২ ২৩:৫২548410
  • Xi,
    যদিও আজকাল অনেককথা ভুলে যাই, কিন্তু এই লেখাটা পড়ে বারবার মনে হচ্ছিল, কোথায় যেন আগে পড়েছি।
    যাক,বালার মজলিশে লেখাটা পড়েছি জেনে নিজের প্রতি আস্থাটা ফিরে এলো।
  • maximin | 69.94.2.228 | ১২ জুন ২০১২ ২৩:৫৭548411
  • আহা বড় সুন্দর লাগল। তোমার লেখা আরও পড়ার ইচ্ছে রইল।
  • ব্ল্যাঙ্ক | 69.93.201.66 | ১৩ জুন ২০১২ ০০:০০548412
  • লেখাটা পড়েছি সেটা জানিয়ে গেলাম।
  • maximin | 69.94.2.228 | ১৩ জুন ২০১২ ০০:০৪548413
  • কিন্তু আমার কেন এটাকে কষ্টের গল্প মনে হল না?
  • xi | 161.141.84.239 | ১৩ জুন ২০১২ ০০:০৬548414
  • ম্যাক্সিমিন, ঠিক বলেছেন, এটা আসলে জীবনের গল্প, একটা বিশেষ জীবন যেমন, তাতে আলাদা করে কষ্টের কী বা সুখের কী? বরং বলা যায় পথ খোঁজার আর খুঁজে পাবার গল্প।
    পড়র জন্য থ্যাংকু।
  • xi | 161.141.84.239 | ১৩ জুন ২০১২ ০০:১১548415
  • একটা কষ্ট অবশ্য আছে এর মধ্যে, সুরের অমৃত নিজের মধ্যে না পাবার দুঃখ, লাবণি সুরের রাজ্যে প্রবেশ করতে পারলো না, অ-সুর রয়ে গেলো।
    তবে শোনাও তো এক ধরনের পাওয়া, আই পুরোপুরি অসুররাজ্যও বলা যায় না।
  • Tim | 208.82.20.42 | ১৩ জুন ২০১২ ০১:০৪548417
  • পড়লাম। জাইয়ের এরকম অনেক অনেক লেখা আছে। তবু সবকটাই কোথাও একটু করে আলাদা।
  • সায়ন | 111.63.186.110 | ১৩ জুন ২০১২ ০১:৫৪548418
  • এমনি এমনি কেউ এমন কবিতা লিখতে পারে না। ক্ষি, চুটিয়ে বাঁচো!
  • ডিডি | 120.234.159.216 | ১৩ জুন ২০১২ ১১:১০548419
  • হ্যাঁ পড়লাম। ম্যাক্ষিমিনের সাথে একমত - এটা দুঃখের গল্পো ক্যানো হতে যাবে।

    এই যে এখন ভামভেটকি হয়ে বসে আছি চলার পথে এরকম যেনো বড্ডো বেশী দেখেছি - এই মেয়ের প্রতি মায়ের একটা রুদ্ধ রাগ। পরে ভাই হয়েছে বলেই তো নয়, বা মেয়েটির গায়ের রং ও তার কারন নয়। অন্য কিছু। সব ক্ষেত্রে তো ঐ সিম্পটমগুলি মেলে না।

    যথেষ্ট প্রচলিত ঘটনা। এটাকি আমাদের সমাজের একটা সহজাত ঘটনা - শ্বাশুড়ী বউএর রেষারেষির মতন চিরন্তন? কিন্তু সিরিয়াসলি লেখালেখি হয়ছে কোথাও ? গল্পে টল্পেও লেখা থাকে না - অন্ততঃ চোখে পরে নি। কিন্তু বাস্তব জীবনে কমন পরে যায়, খুব কমন।
  • xi | 161.141.84.239 | ১৩ জুন ২০১২ ২১:৫৮548420
  • ডিডি, সেইটাই। গল্পে টল্পে এইসব কথা থাকে না, পুরুষ লেখকেরা মেয়েদের প্রেম ট্রেম বিষয়ে আর সেইসবের গভীর সমস্যায় খুব তাড়াতাড়ি শিফ্ট করে যান, কিশোরী থেকে তরুণী হতে না হতেই বা আরো আগেই দেখা যায় সে কারুর সঙ্গে প্রেম করে পালালো,তখন সমস্যাগুলোর ধরণ বদলে যায়। এমনকি লেখিকারাও প্রায় একই টাইপের অবস্থা করেন, কারণ পাঠককূল ঐগুলোই বেশী গুরুত্ব দেন।
    পথের পাঁচালিতে দুর্গার উপরে সর্বজয়ার মারধোর বকাবকি আর "অপুকে পায়েস করে দেবো, তুই বাতাসা নিয়ে আয় দুগ্গা" এই ধরণের প্রত্যক্ষ অপমান ও অবহেলার কথা থাকলেও কেন জানি আপামর বাঙালির ওসব জায়্গা চোখেই পড়ে নি। হয়তো এসব ও এক ধরনের গা বাঁচানো ব্যাপারই, কারণ ব্যখ্যা অন্যভাবে করলেই আর সমস্যাটা প্রকট হয় না। দুর্গা মরে গিয়ে বেঁচে গেছিলো।
  • riddhi | 74.134.148.140 | ১৩ জুন ২০১২ ২৩:৪৩548421
  • ডিডি দা এখনো ছায়া দেবীর যুগে পড়ে আ্ছেন। অনেকদিন আগে থেকেই, প্রায় বার্লিন ওয়াল ভাঙ্গার সময় থেকে শাশুড়ী বৌ এর ভাব হয়ে গেছে। যাকে বলে 'বেস্টেস্ট ফ্রেন্ড ফরেভার '। ফেসবুকে একে অপরকে পোক করা হচ্ছে। আরো কত ফাজলামি, আধুনিক রকমের ইয়ারকি। এর আগাম পূর্বাভাস ক্লাস সেভেনে আমারি লেখা একটা যুগান্তকারী এসে 'মাই বেস্ট ফ্রেন্ড'-এ ছিল - 'ওন দ্য থ্রেশোল্ড ওফ টোয়েন্টি ফার্স্ট সেন্চুরি, ফ্রেন্দশিপ ইস নো লঙ্গার রুল্ড বাই ফিজিকাল প্রক্সিমিটি। ফর এক্সাম্পল, মায় বেস্ট ফ্রেন্ড্স আর দ্য এলিএন্স। আই ডু নট নিড টু সি ওর ফিল ডেম। ইট গিভ্স মি ইমেন্স প্লেসার যাস্ট টু নো ড্যাট ডে এক্সিস্ট।'
  • xi | 161.141.84.239 | ১৩ জুন ২০১২ ২৩:৪৯548422
  • অ্যান্ড দ্য ডে উইল কাম হোয়েন উই'ল মীট দেম।
  • riddhi | 74.134.148.140 | ১৩ জুন ২০১২ ২৩:৫৭548423
  • লেট আস নট বি সো শিওর এবাউট ড্যাট। ইট ইস সো এক্সাইটিং এনিওয়ে।
  • riddhi | 74.134.148.140 | ১৪ জুন ২০১২ ০০:০০548424
  • ডিডি, জাই, -- গপ্পো সিনেমায় আসেনি তা নয়।
    'উনিশে এপ্রিল' মনে পড়ছে।
  • xi | 161.141.84.239 | ১৪ জুন ২০১২ ০০:০১548425
  • ইট ইজ পসিবল দ্যাট উই'ভ অলরেডি মেট দেম। আই অর ইউ অর সামোয়ান এলস মাইট বি এলিয়েন, হু নোজ???
  • xi | 161.141.84.239 | ১৪ জুন ২০১২ ০০:০৩548426
  • রিদ্ধি "উনিশে এপ্রিল" তো বাইরে বাইরে কাজের সূত্রে ব্যস্ত মায়ের প্রতি মেয়ের অভিমানের গল্প। অকালমৃত বাবার জন্য মাকে ভুলভাবে দায়ী করা মেয়ের গল্প।
  • Ishan | 202.43.65.245 | ১৪ জুন ২০১২ ০০:৫৩548428
  • ফেসবুকে অনেক এলিয়েন আছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে প্রতিক্রিয়া দিন