এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  উপন্যাস

  • ভ্রমণ কাহানি(৬) :উপল মুখোপাধ্যায়  

    upal mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ০২ মে ২০২৪ | ১৪৭ বার পঠিত
  • | | | | |
    বাবাই পাহাড় নিয়ে কথা বলতে থাকে।  

    সকাল থেকে পাহাড় দেখা ভালো। পাহাড় দেখলে পাহাড়ের ওপর চড়ার মতো মনে হয়। তখন মনে হয় খুব আনন্দ হচ্ছে। এই আনন্দ হলে  তখন মনে হচ্ছে আরো পাহাড় দেখি। আরো পাহাড় দেখার পর আরো পাহাড় দেখতে দেখতে ক্রমশ পাহাড় বড় হতে লাগে । এখন কি সে রকম কিছু হচ্ছে? কী জানি , বুঝতে পারছিনা। এরপর ক্যামেরার চোখে দেখতে শুরু করি , জুম করতে থাকি , জুম । তখন পাহাড় ছোট হতে লাগল- গাছ বড় বড় হয়ে, ছায়া হয়ে, ফার্নের মতো হয়ে, মসের মতো হয়ে, এ্যালগির মতো হয়ে আর কিছু হয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়ল তারপর আবার ঘুমিয়ে পড়ল অকাতরে। এই ঘুমন্ত পাহাড়ে পাখিরাও দেখা যায় , তাদের আওয়াজ শোনার জন্য অবশ্য ক্যামেরা যথেষ্ট  নয়,  কাছে যেতে লাগে । কিছু   মানুষও  যে দেখা যায় নি এমনটা নয়। মনে হল সৃজিতাকে বলি কিন্তু ও অকাতরে ঘুমচ্ছে , কাল অনেক ধকল গেছে । আমরা কলকাতা থেকে ফিরলাম কালই সকালে ।মাঝে শুক্র, শনি , রবি তিনদিন হাতে থাকায় জলপাইগুড়িতে না গিয়ে এন জে পি  থেকেই  বেরিয়ে পড়েছি দুদিনের জন্য  কালিম্পঙের প্রত্যন্ত গ্রাম আলগাড়া । পি এইচ ইর বাংলো বুক করেছি।  অনেকটা জায়গা নিয়ে সেটা। একটা রাস্তা মেন রোড থেকে বাঁক খেয়ে বাংলোতে নেমেছে আর সেটাই আবার বাংলোর হাতায় বৃষ্টির জল ধরে রাখার জলাশয়ে নেমে শেষ হয়েছে। সামনেই পাহাড় , অপূর্ব দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।  ওখানেই দাঁড়িয়ে ক্যামেরায় জুম করছি।  থাক ,  সৃজিতাকে ডাকার দরকার নেই।  সব সময় যে ওকে পাব পেতেই থাকব পাহাড় দেখার সময় , পাখি দেখার সময় সব সময় -এর কী  মানে ? খুব বেশি হলে একটা জিজ্ঞাসা চিহ্ন মাঝে নিয়ে ঘোরার নামই যাকে  বলে দাম্পত্য। জিজ্ঞাসা চিহ্ন মানে  অসংখ্য প্রশ্ন তৈরি হওয়া। সেই প্রশ্ন তৈরি করতে এই কমাসে আমি ভালোই শিখে গেছি। রাতের বেলার এইসব প্রশ্নেরা এরকম হতে পারে।
    ------ কখন ফিরলে স্কুল থেকে ?
    -------- আজ যা গেল । তোমারও খুব ধকল গেল ?
    ------ তোমার বাবা / মার ওষুধটা পেল ?
    ------ না পেলে বল কাল এন জে পি যাচ্ছি , কাল হলে হবে ?
    ------ চা করবে ?
    ------ চা করব ?
    ------- রাতেও খুব গরম লাগছে না ?
    ----- রাতে ঠাণ্ডাটা বেশ বেড়েছে না ?
    ------ খাবারটা দেবে ?
    ------ খাবারটা দেব ? 
    --------  ওটিটি টা কেমন ?
    ------ কে ভালো করল ?
    ------ কে কে ভালো করল ?
    -------- রাত হয়েছে ওটিটির পরের এপিসোডটা কাল দেখ ?
    -------- দাঁড়াও পরের এপিসোডটা দেখি । আর একটু ?
    -------- আলোটা নিভিয়ে দেব ?
    -------- মশারি টাঙাতে হবে কি,  না মশার  রেপেলেন্ট চালাবো  ?
    -------- এসি বা পাখাটা বাড়াব বা কমাব ?
    ------- দাঁত মাজলে না ?
    -------- ইচ্ছে করছে ?
    -------- করবে ?
    -------- পিরিয়ড শেষ হয়েছে ?
    -------- লাগছে ?
    ------ আগের  থেকে কম লাগছে ?
    ------ কাল ভোরে উঠবে ?
    -------- কাল কটায় অ্যালার্ম দেব ?
    -------- কাল কী মেনু ?
    -------- পরশু অনির্বান আর সংঘমিত্রাকে বলব ?
    -------- রান্নার দিদি কদিনের ছুটি নিয়েছে ?
    -------- অফিসের হাওয়াটা দিনদিন অসহ্য হয়ে উঠছে ?
    -------- তোমার স্কুলে কী হাওয়া ?
    -------- আর পারছিনা , উইক এন্ডে বেরবে ?
      আর হ্যাঁ এসব রাতের প্রশ্নমালার সঙ্গে সকালের , দুপুরের , বিকেলের আর সন্ধে বেলার প্রশ্নেরা যে আলাদা রকমের হবে বলাই বাহুল্য । সব মিলিয়ে বেশ জটিল  ব্যাপার । হাজার প্রশ্ন , হাজার হাজার উত্তর তার ওপর প্রতি প্রশ্ন কত হবে কে জানে । পুরোটা একটা সংখ্যার খেলা মনে হয় । আমার এক দাদা দেখলাম একটা উপন্যাস লিখেছে , নাম দিয়েছে ভেল্কিবাজি । নামটা ভালোই, লেখাটা অবশ্য পড়ে দেখিনি । এমনিতে  সিভিল ইঞ্জিনারিংয়ের প্রফেস্যানাল লেখাপত্র আর পাখি দেখা বিষয়ক বই ছাড়া আর কিছু পড়তেই ভালো লাগছে না।  দুবছর আগেও এরকম ছিল না , যা পেতাম পড়ে ফেলতাম। দৃষ্টিভঙ্গি খুব ছোট হয়ে আসছে অথচ কিছু করতেও পারছি না। কী  যে হচ্ছে বুঝতেই পারছিনা।

      অফিসের কথা বললাম বটে তবে ওটা নিয়ে আমি খুব বেশি এগোই না। তার কারণ আছে ,আমাদের দুজনের অফিস আলাদা। এক হলে অবশ্য কেমন হয় একবার  অনির্বাণ -সংঘমিত্রাকে জিজ্ঞেস করতে হবে।  ওরা  দুজনেই আমার মতো সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার।  অনির্বাণ আমার মতো ডিপ্লোমা আর সংঘমিত্রা জলপাইগুড়ি থেকে সিভিলে ডিগ্রি করেছে ।  ও জলপাইগুড়িরই মেয়ে , অনির্বাণের   অবশ্য দমদমে বাড়ি।দুজনেই আমাদের সেচ দফতরে একই অফিস , আমাদের অফিসে চাকরি করে । প্রথম যখন এলাম দেখলাম অনির্বাণ দুদিন আগেই জয়েন করেছে।  আমরা একই ব্যাচের।  কিছুদিন পরে সংঘমিত্রাও এলো।  আমাদের আলাদা আলাদা সেকশনে পোস্টিং দিয়েছিল ডিভিশন থেকে ।  আমাকে দিল ধুপগুড়ি সেকশনে আর অনির্বাণকে জলঢাকার উপনদী ডায়না অরে মূল জলঢাকা নদীর মাঝে জঙ্গলে ঘেরা বামুনডাঙ্গা  সেকশনে।ওখানে আমি  গণ্ডারের ছবি পেয়েছিলাম , ভালোই হয়েছিল ছবিটা। সংঘমিত্রাকে কিছুদিন জলপাইগুড়ি  ডিভিশনের অফিসেই রেখে তারপর ঠিক উলটো দিকে চিফ ইঞ্জিনিয়ার নর্থ ইস্টের অফিসে পোস্টিং দিল এস্টিমেটর পোস্টে।  ডিগ্রি ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্যই হয়ত সেকশন পোস্টিং না দিয়ে অফিসে রেখে দিল , নাকি মহিলা হওয়ার জন্য ? কে জানে।
     
      তারপর একদিন হঠাৎ দেখলাম সংঘমিত্রার ফেসবুক পোস্ট।  জলপাইগুড়ির ওদের পৈতৃক বাড়িতে ওর মায়ের সঙ্গে   অনির্বাণ ।   আর একটা ছবিতে সংঘমিত্রা ওর বাবা , মা আর পিসির সঙ্গে দাঁড়িয়েছিল। আমি অনির্বাণ কে জিজ্ঞেস করলাম ,” ছবিটা কে তুলল।“
    ------ দুজনেই ।
    ------ আচ্ছা । ফ্রেমিং ঠিক আছে , কম্পোজিশন একটু এদিক ওদিক হতেও পারত , কী  ক্যামেরা নিয়েছিলি।
    -------- ধুস। ওসব কিছু নয়।
    ------- কেন ?
    ------- বুঝিই না। মোবাইলে ধরেছি আর  তুলেছি।
    ------- সংঘমিত্রা ?
    ------- কী ?
    ------- ক্যামেরা জানে না ?
    ------- তুই জিজ্ঞেস করে দেখনা।
    আমি সংঘমিত্রাকে জিজ্ঞেস করে দেখলাম ও বেশ ভালো ক্যামেরা জানে।  আমার সঙ্গে পাখির ছবি তোলা নিয়ে অনেকক্ষণ আলোচনা করেছিল। বেশ সিরিয়াসলি।  কথা বলার সময় ওর ভুরু আদ্ভুত  ভাবে কুঁচকে যায়।  সেদিন ক্যামেরা নিয়ে আলোচনার সময়ও ওর ভুরু কুঁচকে কুঁচকে যেতে দেখলাম আর ভাবছিলাম অনির্বাণের  সঙ্গে ওর ব্যাপারটা বেশ ঘন হয়ে জমেছে।  একজন  ক্যামেরা জানা আর না জানার প্রেম আরকি।
    বামুন ডাঙ্গা সেকশন অফিসের আশপাশের জঙ্গলটায় ছবি তোলার জন্য আমাদের গন্তব্য হয়ে উঠল ।  ওখানে সংঘমিত্রা ঘন ঘন যাতায়াত করত আমার সঙ্গেও মাঝে মধ্যে দেখা হতো।  সৃজিতাকেও নিয়ে কয়েকবার গেছি বিয়ের , আগে আর পরে। কিছুদিনের মধ্যে অনির্বান আর সংঘমিত্রা বিয়ে করে ফেলল।  কলকাতা আর জলপাইগুড়িতে দু জায়গাতেই প্রবল খানাপিনা করে আমরা ক্ষান্ত দিয়ে বিয়ের উৎসব শেষ করি। অবশ্য খানাপিনা শেষ হওয়ার নয় তা চলছে , ফটো নিয়ে আমার আর সংঘমিত্রার অনেক কথা হয় তখন পাশের ঘরে সৃজিতা আর  অনির্বাণ ট্রাভেল ব্লগ দেখে।  নানারকমের ব্লগ তারা  দেখেই চলে খাওয়া , বেড়ানো, উৎসবের , কার্নিভালের ব্লগ সারা পৃথিবীর।  সংঘমিত্রাকে ঠিক বার্ড ওয়াচার  বলা যাবে না তবে ও পাখিরও ছবি তুলে থাকে।  আমি যেমন হাতি আর গন্ডারের অনেক ছবি পেয়েছি এই কমাসেই।
     এই সব কিছুর জন্য  অনির্বাণের বামুনডাঙ্গা সেকশনে পোস্টিং পাওয়ার বিরাট ভূমিকা আছে। সে যদি ওই পোস্টিংটা না পেত তাহলে এতসব যে ছবির মতো পরপর ঘটে গেল , তা হতো কিনা সন্দেহ আছে। নাও হতে পারত।  প্রেমের সঙ্গে ছবি তোলার সম্পর্ক , জঙ্গলের কাছাকাছি থাকার সম্পর্ক না থাকলেও প্রেম হতে পারে।  অন্য কোনো ভাবে নিশ্চয়ই ওদের প্রেম হতো।  সেসব নিয়ে অনেক কিছু ভাবা যেতে পারে সময় থাকলে একা  বসে বসে , তাই কিছু সিদ্ধান্ত করাই যাচ্ছে না এখনি।
    প্রেম, দাম্পত্য ,  ফটো,  ক্যামেরা । সৃজিতা , অনির্বাণ, সংঘমিত্রা , আমি  এসব নিয়ে চলার  ফাঁকে ফাঁকে ছুরির মতো কিছু ধারালো বা চরম আঘাত করার মতো কিছু ভোঁতা জিনিস সময়ের মধ্যে ঢুকে পড়ছে।  তাদের ঢুকিয়ে দিচ্ছে কিছু লোক যাদের  জন্য অফিসটা ক্রমশ খারাপ হয়ে উঠেছে।নতুন স্কুটি নিয়ে অফিসে ঢুকছি ,  ঠিকেদারের একটা টেনিয়া লগে লগে ছিল,“ স্যার,  আপনি স্কুটি কিনেছেন?খুব সুন্দর কালারটা।”
    ——  হুঁ ।  
    —— কত পড়ল?
    —— এক লাখ। 
    —— ক্যাশে নিলেন স্যার ?
    ------ কেন ?
    ----- না এমনি , কিছু মনে নেবেন না । ভাবছি একটা কিনে দেব বউকে ।
    ----- দিন ।
    ----- ক্যাশে কত ?
    ----- জানিনা । আমি লোনে নিয়েছি।
    ------ লোনে ?
    ——  নব্বুই হাজার লোন নিয়েছি। 
    —— সেকি স্যার, লোন। 
    ------ কেন ?
    ------ না এমনিই। ই এম আই টানতে হয় ।
    ----- তা হয় ।
    ----- অনেক টাকা বেশি নিয়ে নেবে ।
    ----- তা নেবে ।
    ----- সেটাই তো ।
    ----- কী  করা যাবে ?
    ------- তা ঠিক , কত পড়ছে স্যার ?
    ------- কী ?
    ------- ই এম আই ?
    —— হ্যাঁ , ইএমআই বাইশ শোর মতো। 
    ------ অনেক । কটা স্যার ?
    ----- চার বছরের ।
    —— একবার বললেন না স্যার। 
    —— কী?
    —— বললেন না স্যার। 
    —— কী বলব?

    এই কথাগুলো  খারাপ এটা বলতে চাই তখন কে যেন বলছে - এটা বলা কী ঠিক হলো ? চেপে ধরছে আমায় । বলছে এরকম সবাই , তুমি তার থেকে আলাদা আলাদা হবার কথা ভাববে কেন ? যত বলতে চাই আমি একা কোথায় , অনেকে আছে আমার সঙ্গে ততো সে বলছে –সবার ব্যাংকে কত টাকা আছে জান তুমি ? বউদের অ্যাকাউন্টে , মায়েদের  অ্যাকাউন্টে , ভাইদের  অ্যাকাউন্টে , শালাদের অ্যাকাউন্টে  ?   বাবার কথা শুনতে  পাচ্ছি । বাবা বলতেই  থাকে,’’সুন্দরবন খারাপ আর নর্থ বেঙ্গল ভালো ! ঠিক করছিস না বাবাই ! এখনো বল,  বলে দিচ্ছি । তোর বদলির এপ্লিকেশনটা চেপে দেবে ।  সাউথের লোক,  যেচে নর্থ বেঙ্গল যাস না ! ‘’ বাবার কথা শুনতে চাইছি না । নিজেকে বললাম -  জানিনা এত সহজে খারাপ ভালো , সাদা -কালো বাইনারি হয় কিনা।  আর আমি কোন বাইনারি চাইও না। আমি ছবি তুলতে চাই।  হয়ত পাখি দেখার কৃতকর্মের মতো রোমান্টিক হতে চাই।  জন্তুর মতো , পাখিদের মতো রোমান্টিক হলে তা এক জান্তব ব্যাপারই হবে।  ওদের কেউ রোমান্টিক ভুলেও বলবে না অথচ পুরুষ  পাখি গায়ে নানা অপূর্ব রং  নিয়ে মেয়েদের আকর্ষণ করে থাকে। আমিও সৃজিতাকে আকর্ষণ করার চেষ্টা কি একদমই করিনি ? একথা বলা যাবে না। পাখি দেখতে সেই প্রথমবার , চাকরি পাওয়ার পরই নর্থ বেঙ্গল আসা ।  অনেকদিন বাদে যখন ওকে দেখলাম   ছোটবেলার  সময় ওকে কী  দেখেছিলাম অনেক মনে করার চেষ্টা করি। কিছুতেই মনে করতে পারিনা।  অনেক অন্য রকম দেখতে হয়েছে ?  বীরপাড়ার ওখানে জঙ্গলের রাস্তায় ও হাঁটছে।কী আশ্চর্য ভাবেই না হাঁটছিল , অন্তত আমার তো সেরকমই মনে হল।  ওকে কি ট্যুরিস্টের মতোই  দেখেছিলাম ?  নিশ্চয়ই , তাই না হলে ছবি তুলে ফেসবুকে দেব কেন ? আর সেটা দেখে বাবা বলল , " মেয়েটাকে চিনতে পেরেছিস ?"
    ------- কোন মেয়ে ?
    ----- কিছুই বোঝে না !
    -------- কার  কথা বলছ ?
    ------- বুঝতে পারছিস না ?
    ----- না তো ।
    ----- ধ্যাত গুল মারছিস !
    ----- গুল মারব কেন !
    ------ ওই মেয়েটার কথা বলছিলাম রে ।
    ------ কে ?
    ------ এই এই দেখ ।
    ------ কার ?
    ------ এই এইটে ।
    ------ কই ?
    -------- এইযে ফেসবুক , এক হাজার লাইক।
    -------- এর কথা, এ তো সৃজিতা ।
    ------ আচ্ছা !
    -------- ওহ , এমনিই  তুলেছি।
    -------- তাই !
    -------- চিনতে পেরেছ  ?
    ------- বাব্বা  !
    ------ আসল কথায় এসো দেখি
    -------- চিনব না !
    ------ কে বলত ?
    -------- অরে ও কল্যাণবাবুর মেয়ে , মেজ মেয়ে।
    -------- তোমাদের সময়কার বড়বাবু ?  
    -------- জানি জানি ।
    ------ কী করে ?
    -------- মনে পড়ছে ।
    ------ তুমি  কী করে বুঝলে ?
    ------ বুঝেছি রে বাবা !
    -----  কী করে ?
    ------ মুখের গড়ন ।
    ----- অমনি বুঝে গেলে ?
    ----- দেখবি , কল্যাণবাবু ওদের ফ্যমিলি ফটো পাঠিয়েছে ।
    ----- তাই বল ।
    ----- দাঁড়া ফোন করছি। আমি বলে দেব। মাঝে মাঝে যাবি।
    -------- দেখি।
    -------- না , দেখি টেখি নয় !
    ------ আচ্ছা , আচ্ছা ।

      বাবাকে বলিনি মাঝে মাঝেই সৃজিতার সঙ্গে আমার দেখা হচ্ছে।  বাবা ব্যাপারটার মধ্যে ঢুকে পড়াতে ভালোই হয়।  ওদের বাড়িতে আমার যাতায়াত হতে থাকে ঘন ঘন।  প্রেম চলে এখানে ওখানে , বাড়িতেও তার প্রভাব পড়ে।  দু বাড়ির হায়ারার্কি ঠিক করে দিল কবে আমাদের বিয়ে হবে। তবে বিয়ের পরপরই   দু বাড়ির হায়ারার্কির অমতেই আমি ট্রানফার চেয়ে নর্থ বেঙ্গল চলে এসেছি।  সেটা যে ঠিক কিসের জন্য তা কোন পক্ষকেই বুঝতে দিলে চলবে না।  সৃজিতারও আমার এই কারবারে ঘাবড়ে যাওয়ার কথা কারণ জার্নি টা কলকাতা থেকে নর্থ বেঙ্গল হচ্ছে যা হওয়ার কথা  থাকে না । কলকাতার দাপটে , তার সাহেবি গুমরে নর্থ বেঙ্গল আদার-অপর  হয়েই থাকে সেখানে বেড়াতে যাওয়া ভাল, মাঝে মাঝে থাকাও তবে পাকাপাকি বাসা বাঁধা কল্পনার বাইরে। তবে  সৃজিতা কিছুই বলল না,  একটা প্রাইভেট স্কুলে চাকরি জুটিয়ে নিলো বানারহাটের কাছে। বুঝতে দেয় না কলকাতায় না থাকাটা ভালো মন্দের বাইনারির বাইরে কিনা ।

       নর্থ বেঙ্গল ট্রান্সফার মানে নির্যাস শাস্তি। বেয়াড়াপনার শাস্তি , কত্তার  ইচ্ছেয় কম্ম না করার শাস্তি।  বাবা অনেক দিন নর্থ বেঙ্গলে পোস্টিং পেয়েছিল এই বেয়াড়া ভাব দেখানোর জন্য। সেচ বিভাগের  কত্তার ইচ্ছেয় কম্ম না করার জন্য।  আমার তো সেরকম কোন বাধ্যতার আর্জেন্সি নেই তাই বাবা আশ্চর্য হচ্ছিল আমি নর্থ বেঙ্গল গেলাম কেন সেধে।  এটা বাবা কিছুতেই মানতে পারে না আমি জানি।  সে জন্য অফিসের পচা ময়লা মাঝে মধ্যে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে এলে , সেই আলোতে আমি বাবার স্বর শুনতে পাই। তখন বাবা এসে আমাকে এখানে আসার জন্য অভিযোগ জানায় , নিস্ফল অভিযোগ।  বাবা হতাশ হয় আর তা প্রকাশ করছে ।
     
     আসলে  আমার রেবেল বাবা , বিদ্রোহী বাবারও হায়ারার্কি আছে আর তা নর্থ বেঙ্গলের  বিপক্ষে কথা বলতে থাকে অনবরত , অর্থহীন সেই কথা আমার কিছুতেই মাথার ঢোকে না।  বাবা কেন বুঝতে পারছে না সে নিজেই তো আমাকে পাখি দেখার পথ নিতে উৎসাহ দিয়েছিল,  সেও এই কুচবিহারের বুকে কোন অজানা জঙ্গলে।  এমন জঙ্গল যেখানে কেউ যাবে  না হাতির হাওদায় চড়ে;   হাতির ওপর , তার মেরুদণ্ডের ওপর অসহ্য চাপ দিতে , দিতে যাতে সেই মেরুদণ্ড ক্রমশ বেঁকে যায়।  এই যন্ত্রনামুক্ত পাখিদের আর নানান জন্তুদের অজানা নানা আটপৌরে কিছু জঙ্গলের জন্যই আমাকে নর্থ বেঙ্গল আসতে  হয়েছে সেটা কি বাবাকে বোঝাতে পারব?   সৃজিতা হয়ত এসব আন্দাজ করতে পেরেছিল সে জন্যই সেও কিছু বলেনি আমায়।  অবশ্য অন্য কিছুও হতে পারে তার চিন্তা , সে চিন্তাকে পুরোটা বুঝতে পারার বুড়বাক ইচ্ছেগুলোকে দমন করতে শিখছি এই কমাসে।

       আলগাড়ার পি এইচ ই বাংলোর সামনে একটা গোল করে বাঁধানো সিমেন্টের রিজার্ভার আছে।   সেখানে বর্ষার জল জমে।  শীতকালে তা বরফও হতে বাধা নেই।  আর আছে অসংখ্য আলোর রশ্মি , বৃষ্টির কণা , তাপের প্রবাহ আর হাওয়ার ঝাপটা।  সব বোঝে ওই  রিজার্ভারের জল  যা এখন টলটল করছিল। আর তাতে সামনের পাহাড়ের ছায়া পড়ার আগেই হুড়মুড়িয়ে আমার ছায়া ফেললাম।  দেখলামও বটে আর তখনি মনে হচ্ছে সৃজিতাকে জাগাই আমাকে দেখতে,  আমার ছায়াকে দেখাতে। চড়াই বেয়ে উঠেছিলাম আমি ওপরে  দোতলার ঘরে , বাংলোর দোতলায়, যেখানে ও রয়েছে , চললাম সেখানে। কিছুটা হাঁফাতে হাঁফাতে আমাকে যেতে দেখা গেল সেদিন।

     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | | |
  • ধারাবাহিক | ০২ মে ২০২৪ | ১৪৭ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    ও নাম! - Suvasri Roy
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে প্রতিক্রিয়া দিন