এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বাংলা কল্পবিজ্ঞানের গল্প-এর প্রতিশ্রুতি কতটা

    Milli
    অন্যান্য | ০৪ এপ্রিল ২০০৬ | ২৯০৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • Milli | 131.95.121.251 | ০৪ এপ্রিল ২০০৬ ২০:০৬563502
  • প্রথমে একটা সরাসরি গল্প দিয়েই শুরু হোক।

    প্রতিলিপি

    অর্চিষ্মান চুপ করে বসে ছিলো চেয়ারে,তাকিয়ে ছিলো সামনের বিশাল স্বচ্ছ জারের ভেতরের অস্বচ্ছ রঙীন তরলের ভেতরে ভাসা জীবটির দিকে। জীবটি মানুষ, সম্পুর্ণ, পূর্ণবয়স্ক ও জীবন্ত। দেখা যাচ্ছে না ভালো করে ওর মুখ,কিন্তু অর্চি জানে আয়নায় যে মুখটা দেখতে পায় অর্চি, ঠিক সেটাই।

    অর্চিষ্মানের ক্লোন ঐ জারের ভেতরে। আড়াই বছর আগে ওকে যখন রোপন করা হয়, তখন অদ্ভুৎ যে শিরশিরানি ছিলো অর্চির শিরদাঁড়া বেয়ে,অনিশ্চয়তার ভয় ছিলো,অসফল হবার আশংকা ছিলো,সেই ভয় এখন আর নেই।এখন একটা অন্যরকমের অনুভূতি, একটা অধৈর্য অস্থিরতা, একটা আশ্চর্য ঈর্ষাও। সময় হয়ে এসেছে,এইবারে অর্চির প্রতিলিপি উঠে দাঁড়াবে, পৃথিবীর আলো বাতাসে চোখ মেলে বেরিয়ে আসবে, সবল নিশ্চিত পায়ে হাঁটবে, দৃঢ় সতেজ গলায় কথা বলবে। ওর স্মৃতি পুরোপুরি অর্চির স্মৃতির প্রতিলিপি।অস্ফুট শৈশব থেকে ক্লোন রোপনের আগে পর্যন্ত অর্থাৎ অর্চির সাতাশ বছর বয়স পর্যন্ত সমস্ত স্মৃতি ম্যাপ করে দেওয়া হয়েছে এই ক্লোনের মাথার মধ্যে।

    রঙীন ঘন তরলের পর্দার আড়ালে ডুবে থাকা ক্লোনমুখের দিকে তাকিয়ে চুপ করে বসে থাকে অর্চি। সে ক্লোন নিয়ে অবসেসড, বহুকাল ধরে।খুব ছোটো থেকেই।একটি যমজ ভাই ছিলো অর্চির, আইডেন্টিকাল টুইন।পাঁচ বছর বয়সে ফ্লুতে মারা যায়।পাঁচ বছরের অর্চির কি কোনো অভাববোধ হয়েছিলো সেই ভাইটির জন্য? মনে হয় না,সে তো দিব্যি ছিলো বাবামায়ের আদরে,নতুন আসা ছোটো বোনটিকে নিয়ে খেলাধূলায়। তবে বাবা ক্রমশই বেশী ব্যস্ত হয়ে পড়তে থাকেন কাজে,ব্যবসায় ও টুরে। তাই বাবাকে বেশী পাওয়া হয়নি ওদের দুভাই বোনের।কিন্তু মা ডরোথি কখনো সেকথা বুঝতে দেননি ওদের।মায়ের আদরে সতর্কযত্নে নিটোল পরিচর্যায় বেড়ে ওঠে ওরা দুটিতে।
    বোন শুচীস্মিতাকে খুবই ভালোবাসত অর্চিষ্মান,ছোট্টো বোনটি খেলতে খেলতে পড়ে গিয়ে হাঁটু ছড়ে ফেলেছিলো,ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদছিলো।অর্চি ধরে ধরে বাড়ী নিয়ে এসেছিলো,মা যখন ওর ক্ষততে ডেটল দিচ্ছিলেন,তখন ও দৌড়ে মোড়ের ওষুধের দোকান থেকে মলম কিনে এনেছিলো।
    বোনটি যখন ভাইফোঁটার দিনে মধ্যমায় চন্দন নিয়ে কপালে হোঁটা দিতো অর্চির, ওর কপালের মধ্যেটা কেমন শিরশির করতো। কিন্তু তবু এইসবের বাইরে অর্চির যে একলা মন, সেইখানে সে ঐ চলে যাওয়া ভাইটির জন্য কল্পনাপ্রবণ হয়ে পড়তো।কেমন হতো সে যদি বেঁচে থাকতো? সে কি অর্চির আয়নার মধ্যের কিশোরটির মতন দেখতে হতো? আর ওর মন? ওর স্মৃতি ওর হৃদয়? সেও কি অর্চিষ্মানের মতনই হতো?

    ওর মনে পড়তো খুব ছোটোবেলা,চার বছর বয়সে,যখন সপ্তাহান্তগুলোতে মাবাবা আর ওরা দুটিতে বেড়াতে বেরিয়ে পড়তো এদিক ওদিক,কাছে দূরে। সমুদ্রের তীরেই বেশী যেতো, সূর্যস্নান ভালোবাসতো মা,তাই বাবাও ওখানেই নিয়ে যেতো।
    মাবাবা যখন রঙীন ছাতায় মাথাটুকু ঢেকে উদার সূর্যালোকে পড়ে থাকতো,বাবা বই পড়তো,মা মাঝে মাঝে বই পড়তো,মাঝে মাঝে লেস বুনতো, ওরা দুটিতে বালির উপরে খেলা করতো।ঢেউ সরে গেলে বালির উপরে কেমন সুন্দর প্যাটার্ন দেখা যায়!আর কত রকমের ঝিনুক! কত রঙা ঝিনুক! কতবার জ্যান্ত শঙ্খ দেখেছে ওরা! চলে বেড়াচ্ছে!কি অবাক ব্যাপার!দুজনে মস্ত চোখ মেলে দেখতো ওদের,আনন্দে চিৎকার করে ডাকতো মাকে,দ্যাখো দ্যাখো মা,কি রকম চলছে! জ্যান্ত শংখ! মা বই বা বোনা রেখে ওদের কাছে আসতেন,কত ঝিনুক মা কুড়িয়ে দিয়েছে!
    একবার ওরা বেড়াতে গেল বাবার দেশে,সে অনেক দূরে,প্লেনে চেপে গেলো,ছোট্টো ছোট্টো দুটি ফুটফুটে একরকম দেখতে বাচ্চা দেখে সবাই কেমন খুশী সেখানে!
    এক বৃদ্ধা ছিলেন,ঠাকুমা নাকি তিনি অর্চির, তিনি অর্চি আর অংশুকে কোলে নিয়ে কেমন কাঁদছিলেন!অর্চি অবাক হয়ে দেখছিলো ওর গালে কত কুঁচকানো বলিরেখা! সেই বলিরেখার উপর দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।উনি কি সব বলছিলেন,কিছুই অর্চি বুঝতে পারেনি! অংশুও হয়তো পারেনি।তবে ওঁর গলা জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ লুকিয়েছিলো দুভাই।টুকি টুকি টুকি।

    ঈশ,কি স্পষ্ট সেসব কথা মনে আছে এখনো!
    সম্পূর্ণপ্রায় ক্লোনটির দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে স্মৃতিরোমন্থন করতে করতে চমকে উঠলো অর্চি!রঙীন তরলের মধ্যে প্রভূত কম্পন,ভেতরের দেওয়ালে হাত চেপে ধরেছে অর্চির ক্লোন,সে এক্ষুণি বেরিয়ে আসতে চায়।
    অর্চি লাফিয়ে উঠলো,টেকনিকাল ডিরেকটারদের এখনি ডাকা দরকার, এক্ষুণি।

    বাইরে চমকে উঠলো বিদ্যুৎফলা, কড়কড় করে উঠলো বাজ, বছরের সবচেয়ে ভয়ানক ঝড়বাদল এসে পড়েছিলো মরুভূমিতে,কাজে মগ্ন থাকায় সেদিকে খেয়াল ছিলো না অর্চির।

    আচমকা সমস্ত ল্যাব কমপ্লেক্স ডুবে গেল পিচের মতন ঘন অন্ধকারে, বিদ্যুতের সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছে।বাইরে আকাশটা তখন বেগুনী রঙের,থেকে থেকে ধারালো উঙ্কÄল বিদ্যুতের ফলায় ছিঁড়ে যাচ্ছে অন্ধকার।এ ঘরের জানালায় আছড়ে পড়লো ভাঙা গাছের ডাল,চড়াৎ করে ভেঙে গেলো কাঁচ, ক্ষনপ্রভা আলোয় দেখা গেলো তোড়ে ছাঁটবৃষ্টির জল ঢুকছে সেই ফাঁকা দিয়ে,অর্চিষ্মান হতচেতন হয়ে পড়ে আছে মেঝেতে,ওর হাতে সেলফোন।অজ্ঞান হবার আগে সে কাউকে ফোন করার চেষ্টা করছিলো।

    আরেকটা শক্ত ডাল মারাত্মক বেগে ঢুকে গেলো ঘরে, সোজা আঘাত করলো কাচের জারটিতে, সেটি ভেঙে তরল গড়িয়ে গেলো মেঝে জুড়ে।চকিত আলো অন্ধকারে উঠে দাঁড়ালো নতুন অর্চিষ্মান,সর্বাঙ্গ দিয়ে চটচটে তরল গড়াচ্ছে,ঝাঁ-চকচকে নগ্ন,সুগঠিত পূর্নবয়স্ক মানুষ একটি,অদ্ভুতভাবে টলছে,টলোমলো পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে ভাঙা জানলায়, বৃষ্টির ছাঁটে দুহাত পেতে দিচ্ছে,ধুয়ে যাচ্ছে চিটচিটে জন্মতরল। খুব নিশ্চিত পায়ে সে অচেতন অর্চির দেহ ডিঙিয়ে দরোজার কাছে গিয়ে ছিটকিনি খুলে ফেল্লো। কেন এত অন্ধকার,সেটা তার বোধগম্য হচ্ছিলো না,মনে হচ্ছিলো,আলো তো থাকার কথা ছিলো! অদ্ভুৎ বিরক্ত লাগছিলো তার!
    সিঁড়ি দিয়ে একতলায় নেমে সোজা বাইরে বেরিয়ে এলো সে, অবিরল বৃষ্টি ধারা অপেক্ষারত প্রিয়তমের মতন ঝাঁপিয়ে পড়লো ওর অনাবৃত শরীরে,ধুয়ে ধুয়ে সাফ করে দিলো একেবারে।

    বৃষ্টিতে স্নান করে খুব খুব পরিতৃপ্ত মনে দরোজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে এলো ক্লোন অর্চিষ্মান, সে জানে কোন্‌টা তার ঘর।
    খুব নিশ্চিত ও নিশ্চিন্ত সে,একটা অস্বস্তিকর চটচটে অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়েছে, ভালো লাগছিলো ওর। অর্চির ঘরে ঢুকলো সে,টর্চটা জ্বাললো, আলনা থেকে তোয়ালে নিয়ে ভালো করে মুছলো গা মাথা,অন্তর্বাস ও বহির্বাস পরে একেবার ফিটফাট হয়ে গাড়ীরে চাবিটি নিলো হাতে,যেতে হবে,খুব তাড়াতাড়িই তাকে যেতে হবে দিশার কাছে। কতদিন সে দিশাকে দেখে নি!

    দিশা দিশা দিশা।সেই চটপটে ছটফটে মেয়েটি,একঢাল চুল সর্বদা খোলা,ছড়ানো পিঠ জুড়ে,প্রসাধনহীন মুখে অপূর্ব লাবণ্য,চক্‌চকে কালো চোখের মণিতে প্রায়শই দুষ্টুমীর ঝিলিক।
    ও:,কতদিন হয়ে গেলো দিশার কাছে যায় নি সে।শেষ কবে দেখেছিলো ওকে? সেই ও যখন তুলে দিতে এসেছিলো প্লেনে,সেই ছোট্টো এয়ারপোর্টের বালি বালি জমির উপরে?
    সেই তখনি তো অর্চিষ্মান চলে এলো এই মরুভূমি ঘেঁষা দেশে,সদলবলে।বাবা নিজে স্পন্সর করলেন,আরো প্রচুর স্পনসর জুটিয়ে দিলেন বলেই এটা তৈরী হতে পারলো।বাবা এত ভালো ম্যানিপুলেটর!আরে,নইলে কি এমনি এমনি এত সফল ব্যবসায়ী হয়েছেন? বাবার চেহারাটা মনে পড়লো অর্চিষ্মানের,থ্রী পিস সুট পরা নিঁখুত স্মার্ট মানুষ,উজ্বল চোখে কিছুটা শক্ত চাহনি, চিবুকখানা দৃঢ় হয়ে নেমেছে চৌকো ধরনের মুখের শেষে।মাঝে মাঝে অর্চির অবাক লাগতো,একজন সামান্য ইমিগ্রান্ট হয়ে ছাত্রাবস্থায় যিনি এসেছিলেন তিনি মাত্র কয়েক দশকের মধ্যে এতখানি উঠলেন কিকরে?
    ও:,বাবার সঙ্গেও তো কতকাল দেখা হয় না।
    অর্চির নিজের দেশে ক্লোন নিয়ে গবেষণা নিষেধ,কি হাস্যকর বোকামি!
    অর্চিকে তাই চলে আসতে হলো সীমান্ত পেরিয়ে এই কাঁটাগাছ ফণীমনসার বিঁভুইয়ে।
    বাবার সঙ্গে দেখা হয় না কতদিন,মায়ের সঙ্গে আরো বেশীদিন, মা এখন বহুদূরের এক আশ্রমে সন্ন্যাস নিয়ে আছেন। সেখানে অর্চি গেছিলো তাও হয়ে গেলো কত বছর। বোন্‌ শুচিস্মিতা থাকে বহুদূরের এক দ্বীপরষ্ট্রে, ওর সঙ্গেও সেই বেশ কবছর আগের ক্রীসমাসে শেষ দেখা হয়েছে।

    দিশার সঙ্গে বন্ধুত্ব হাই স্কুলের দিন গুলি থেকে।দিশা তখনি খুব ভালো বেহালা বাজাতো,গিটার বাজাতো, ভালো গাইতোও। স্বপ্নের মতন সেইসব দিন, অর্চিষ্মান ডুবে থাকতো স্বপ্নে,কত আশ্চর্য সব পরিকল্পনা মাথায় গিজগিজ করতো।অসম্ভব সব স্বপ্ন,আশ্চর্য সব কল্পনা। দিশা সেগুলোতে আরো রঙীন তুলি বোলাতো, অর্চিকে উসকে দিতো। এইজন্যেই ওদের মধ্যের আপাত অমিল সত্বেও বন্ধুত্বটা টিকে গেছিলো,পরে আরো দৃঢ় হয়ে হয়ে কখন যেন অজান্তে বন্ধুত্বের সীমা টপকে প্রেম হয়ে গেছিলো অর্চিষ্মান জানতেও পারেনি।
    গাড়ী চালিয়ে যেতে যেতে ও সেসব দিনগুলোর কথাই ভাবছিলো,সেই নতুন কলেজে ঢোকা,ওয়েলকাম পার্টি,সেখানে একঢাল খোলা চুল পিঠে ছড়িয়ে দুষ্টু চোখের দিশা গিটার বাজিয়ে গাইছে।প্রথম দিনেই সবার মন জয় করে নিলো কোমল মেয়েটা।

    এইসব ভাবনাতে ডুবে গাড়ী চালাতে চালাতে ও পিছনে ফেলে আসছিলো বালির পাহাড়,ফনীমনসার বাঁক,ছোটো একটা তিরতিরে স্রোত,খেজুর কুঞ্জ-সব একে একে পিছনে ফেলে সে চলে যাচ্ছিলো উত্তর সীমান্তের দিকে। পিছনে ফেলে যাচ্ছিলো আস্তে আস্তে থেমে আসা ঝড়বৃষ্টিও।
    শহর চাড়িয়ে গেলো রাত নটা নাগাদ। মাঝরাতে নির্জন মরুভূমির মাঝখানে গাড়ী চালাতে চালাতে ক্লান্তি এলো,একপাশে গাড়ী থামিয়ে ও বেরিয়ে এলো গাড়ী থেকে।এদেশে গাড়ী থামালে পুলিশের ঝামেলা নেই আর এই একটেরে নিস্বম্বল মরুভূমির মাঝখানে চোরডাকাতের আশংকাও নেই, তারা সবাই ক্যাসিনো শহরে নিজেদের কাজ করে।

    গাড়ী থেকে বেরিয়ে এসে উন্মুক্ত আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে নিশ্বাস নিলো অর্চিষ্মান। এখানে আর মেঘজল নেই,একেবারে ফটিক্‌স্‌বচ্ছ আকাশ।লক্ষ লক্ষ তারা ঝলমল করছে আকাশে,কি অদ্ভুৎ স্নিগ্‌ধ দ্যুতি ওদের! এতক্ষণে মনের একটা অস্বস্তি একেবারে দূর হয়ে গেলো অর্চির। হ্যাঁ,সে অর্চিষ্মান,অর্চিষ্মান রয়।সৌম্যপ্রভ রয় ও দরোথি ম্যাকলারিন রয়ের পুত্র অর্চিষ্মান রয়।
    কেন জানি এতক্ষণ একটু একটু অস্বস্তি হচ্ছিলো অর্চির। স্মৃতির ধারায় একটা অন্ধকার জায়গা ছিলো,সময়ের কিছুটা যেন সে হারিয়েছে। বিরাট ল্যাব কমপ্লেক্স তৈরী হচ্ছে, সবাই প্রচন্ড ব্যস্ত, মানব ইতিহাসের সবচেয়ে সাহসী ও চ্যালেঞ্জিং প্রোজেক্ট এখানে হাতে নেওয়া হলো,পূর্নাঙ্গ ক্লোন তৈরীর প্রজেক্ট। সব স্পস্ট মনে পড়ছে,মনে পড়ছে কিভাবে গ্রুপে গ্রুপে ভাগ হয়ে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা কাজ শুরু করলেন, কিভাবে সব মেটেরিয়াল এসে পড়লো,কিভাবে কাজ এগোতে লাগলো।
    কিন্তু তারপরে? তারপরেই একটা বিপুল অন্ধকার স্মৃতির মধ্যে,যেন ঘুমিয়ে পড়লো অর্চি, গভীর অচেতনপ্রায় ঘুম। প্রথমে একেবারে পীচকালো অন্ধকার,শব্দহীন, গন্ধহীন, স্পর্শহীন। ক্রমে ঘুমের মধ্যে অস্পস্ট শব্দ তরঙ্গ এসে পৌঁছতে লাগলো অর্চির চেতনায়,কেমন ধোঁয়া ধোঁয়া সব।অদ্ভুৎ গন্ধ অনুভবে আসতে লাগলো,অদ্ভুত উষঁঅ সমুদ্রের স্নানের মতন একটা অনুভব। সে কি সমুদ্রে ডুবে গেছিলো কোনোদিন? নাকি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে একটা বিরাট স্বপ্ন দেখছিলো?
    (ক্রমশ)
  • b | 194.202.143.5 | ০৫ এপ্রিল ২০০৬ ২৩:২৬563513
  • এর পরের টা কই?
  • Milli | 131.95.121.251 | ০৬ এপ্রিল ২০০৬ ০১:২৯563524
  • আন্ডার কনস্ট্রাকশন।
  • Milli | 131.95.121.251 | ১০ এপ্রিল ২০০৬ ২৩:০৩563535
  • দিশাকে একটা ফোন করা দরকার। গাড়ীতে এসে সেলফোনটা খুঁজলো অর্চিষ্মান, নেই। ফেলে এলো? কিছুই ঠিক করে মনে পড়ে না। সেই ঘুমের থেকে বেরিয়ে একটা ঝড়বৃষ্টির স্মৃতি আছে, সেটাও আধাস্বপ্নের মতন। জলেভেজা মনে পড়ছে, গামাথা মুছে পোশাক পরে গাড়ী নিয়ে বেরিয়ে পড়া মনে পড়ছে,সেলফোনটা তখন দেখে নিলো না কেন?
    নির্জন গ্যাস স্টেশনে একজন মাত্র লোক। সেখানে তেল ভরে নিয়ে ফোন করতে ঢুকলো।স্লটে গুনে গুনে কোয়ার্টার ফেলে দিশার নম্বরটা ডায়াল করতে গিয়ে একটু ইতস্তত করলো অর্চিষ্মান। ঘড়িতে রাত দেড়টা।ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছে দিশা যদি না গভীর রাতের কোনো মুভি দেখতে দেখতে আটকে যায়।
    কিন্তু শেষ পর্যন্ত ডিজিটগুলো টিপে কানে চেপে ধরলো যন্ত্রটা। ওপাশ থেকে ঘুমজড়ানো দিশার গলা,একটু কি অন্যরকম শোনাচ্ছে শেষ যে গলা শুনেছিলো তার চেয়ে? একটু ভারী, একটু দানাদার!! এত ঘুমের মধ্য থেকে হঠাৎ জেগে গেলে মানুষের গলা অন্যরকম শোনাবে না?

    দিশা অবাক! তারপরে ক্রুদ্ধ। অর্চি,তুমি? এতকাল পরে? কতদিন কত বছর ফোন করোনি? এখন কি মনে করে এই মাঝরাত্তির পার অসময়ে ফোন করেছ?
    অর্চিষ্মান প্রবল চেষ্টায় ঠান্ডা করে দিশাকে। মেয়েটা এমনিতেই একটু রাগী, এখন অভিমানে আরো তপতপে অবস্থা। তবে এই কথায় কথায় রাগ বলেই অর্চির দিশাকে ভালো লাগে। ও কল্পনায় দেখতে পাচ্ছে এলোমেলো চুলের দিশাকে, মুখখানা গনগনে। চোখ জ্বলজ্বলে।ওর সঙ্গে তুলনায় বেশীরভাগ মেয়েকে খুব সাদাসিধে লাগে। ও সবসময় এমন দপদপ করে জ্বলে!

    অর্চি বললো "সকালে পৌঁছচ্ছি, সাররাত ড্রাইভ করে যাবো,সকালে বোকো না কিন্তু। একটু আদর কোরো।প্লীজ প্লীজ প্লীজ।"
    ওপাশে হেসে ফেলেছে সদ্য ঘুমভাঙা দিশা, বলছে "এখনো এমন পাগলই আছো! কাজপাগল তো আগের মতই আছো জানি, নইলে বছরখানেক ফোন করতে মনে থাকেনা আমাকে! আচ্ছা,যদি ধরো এসে দ্যাখো আমার বিয়ে টিয়ে হয়ে গেছে অন্য কারু সঙ্গে? "
    অর্চিষ্মান হাসলো,"তুমি প্রমিস ভাঙবে এ আমি কিকরে বিশ্বাস করবো? আমায় প্লেনে তুলে দেবার সময় কি বলেছিলে? বলেছিলে সারাজীবন অপেক্ষা করবে, অপেক্ষা করে করে বুড়ো হয়ে মরে গেলেও কোনো আফশোষ থাকবে না তোমার। এজন্মে না হলে পরজন্মে আমাদের দেখা হবে আবার। "
    দিশা হাসলো," আর তুমি কি বলেছিলে? মনেও রেখেছ কি? "
    অর্চিষ্মান লাল হয়ে গেলো, ওর মনে পড়েছে কি বলেছিলো দিশাকে।

    *******
    গাড়ী চালাতে চালাতে ক্লান্তি ছেয়ে আসে সর্বাঙ্গে অর্চির। নির্জন রাস্তা মরুভূমি চিরে চলে গেছে দূর থেকে দূরে। রিফ্লেকটরগুলো ঝকমক করে অর্চির গাড়ীর আলোতে, পাশের নি:সীম মরুভূমিতে নক্ষত্রালোকে দেখা যায় আঁকাবাঁকা ক্যাকটাসের দীর্ঘ শীর্ণ দেহগুলো। মাঝে মাঝে মরুহ্রদ, তাতে তলটলে নক্ষত্রছবি। এরকম স্মৃতি আগে ছিলো না অর্চিষ্মানের। এইভাবে সারারাত গাড়ী চালিয়ে মরু পার হয় নি সে কোনোদিন আগে।ঘুমঘুম মন নিয়ে শান্তভাবে গাড়ী চালাতে চালাতে মনটা অজানা কিসের একটা ভাবনায় ছেয়ে যায় অর্চির।
    মনে হয় সে যদি শত শত কিংবা সহস্র বছর আগে অন্য কোনো জন্মে এই মরুর কোনো গাঁয়ে জীবন কাটিয়ে থাকে,তাহলে কি এখন গেলে চিনতে পারবে সেই গাঁ, সেই পাহাড়ের গুহায় আঁকা পূর্বপুরুষের স্মরণচিহ্ন,সেইসব অদ্ভুত ছবি,সেই আশ্চর্য ভাষা, আশ্চর্য বিশ্বাস!!!
    ভোর হয়ে আসে পুবের দিগন্তে। একটা অতি হাল্কা সাদা আলোর চাদর এসে পড়ে মাটিতে, সেই ক্ষীণ নীহারশুভ্র আলোয় ঢেকে যায় নক্ষত্রাবলী,হারিয়ে যায় সেই টলটলে নিবিড় রাত্রিনীল যার মধ্যে মণিকণার মতন টলমল দুলছিলো নক্ষত্রেরা,নীহারিকাসমূহ ছড়িয়ে ছিলো শুভ্র উর্ণাতন্তুর মতন!
    এখন শুধু দেখা যাচ্ছে দুয়েকটা অতি উঙ্কÄল তারা আর গ্রহেরা দপদপ করে জ্বলছে আকাশে, গ্রহেরা সবাই এক্লিপটিক বলে একটা কাল্পনিক লাইনের কাছাকাছি থাকে, একটু উপরে বা নীচে,খুব দূরে নয়।
    পুব আকাশে গোলাপী রঙ জেগে উঠলো এইবার। ঊষা।সূর্য উঠতে দেরি নেই আর। সব তারা মিলিয়ে গেছে,গ্রহেরাও যায় যায়। কিসের একটা অজানা টানে পথের পাশে ক্যাকটাসতলায় গাড়ী থামিয়ে লক করে পাশের নামাল হয়ে এলিয়ে পড়া জমিতে নেমে এলো অর্চিষ্মান। ওর মনে হচ্ছিলো আরেকটু গেলেই পাওয়া যাবে কোনো গাঁ, সেই গাঁয়ে হয়তো এখনো পাওয়া যায় সেইসব পাহাড়ের গুহা, সেইসব ছবির অদ্ভুত ভাষা।
    আহ, ঐ তো দেখা যাচ্ছে রুখুরুখু লালচে রঙের একটা পাহাড়,গায়ে খাঁজ কাটা, যেন নিপুণ ভাস্কর্য! অথচ শুধু বালিওড়ানো বাতাসের আঘাতে আঘাতে ঐরকম তৈরী হয়েছে,মানুষের ছেনি হাতুড়ীতে নয়, জানে অর্চিষ্মান।

    হাঁততে হাঁটতে পথ ফুরায় না, কিন্তু হঠাৎ ক্যাকটাসঝাড়ের আড়ালে দেখা দেয় চোট্টো একটা গাঁ, পাথরের উপর পাথর সাজিয়ে তৈরী কুটির, তরমুজের ক্ষেতে মিহি সবুজ চোখ জুড়ানো, বড়ো বড়ো তরমুজও ফলে আছে,ওধারে বাজরার ক্ষেত দেখা যায়।
    একটি মস্ত কুয়ো, অর্চি গিয়ে উঁকি দিলো। জল বেশ নীচে।টলটলে সেই গোল আয়্‌নায় অস্পষ্ট দেখতে পেলো নিজের মুখ। উফ্‌ফ কি তেষ্টা পেয়েছে অর্চির!

    পাশের পাথরে হেলান দিয়ে বসে পড়লো।কেউ জল নিতে আসলে জল চাইবে। কেউ কি আসবে না? চাইলে জল দেবে না?

    একটি তরুণী এলো খানিকক্ষণ বাদে,চূড়া করে চুলগুলো মাথার উপরে তুলে বাঁধা, পরণে একটি খাটো খয়েরী রঙের ঘাগড়া আর গায়ে আঁটো আকাশীরঙ ছোটো ব্লাউজ। হাতে দড়িবাঁধা ছোটোবালতি আর কাঁখে একটি কলসী।সবল তেজী বাদামী পা দুটো খুশী হয়ে উঠছিলো কুয়োর দিকে যেতে যেতে।

    কুয়োর জলে বালতি পড়ার মিষ্টি গভীর শব্দটা খুব ভালো লাগলো অর্চিষ্মানের। পাথরের পাশ থেকে উঠে মেয়েটির কাছে গিয়ে সে ঈশারায় জানালো তৃষ্ণার্ত, জল চায়। মেয়েটি অবাক হয়ে গেছিলো প্রথমে, তারপরে জলে ভরা বালতি তুলে অর্চির পাতা অঞ্জলিতে ঢেলে দিলো ঠান্ডা স্নিগ্‌ধ জল। পান করতে করতে অননুভূত একটা শিরশিরে ভাব সর্বশরীর ভরিয়ে তুলছিলো অর্চিষ্মানের। জলপান করে অনেক ধন্যবাদ দিয়ে সে ফিরে চললো বড়ো রাস্তার দিকে,সেই ক্যাকটাসতলায় যেখানে ওর গাড়ীটি রয়েছে সেইদিকে। দিশার কাছে যেতে হবে,দিশা অপেক্ষা করে আছে।

    (ক্রমশ:)
  • Milli | 131.95.121.251 | ১২ এপ্রিল ২০০৬ ২২:৫১563546
  • প্রতিলিপি(আগের অংশের পর)

    দিশা দাঁড়িয়ে ছিলো ওদের বড়ো ফটকের সামনে। অল্প অধৈর্য আর অল্প রাগ আর অনেকটা খুশী মিলে ওর মুখখানা অবর্ণনীয়।
    প্রথম দেখা হবার উচ্ছ্বাস কেটে যেতে লাগলো বেশ কিছুক্ষণ! তারপরে আরো কিছুক্ষণ পারস্পরিক অভিযোগ,তারপরে জলযোগের ব্যবস্থা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো দিশা।
    সারারাতের ক্লান্তি কাটাতে স্নানঘরে ধারাজলের নীচে আবরনহীন একলা দাঁড়িয়ে একটা অদ্ভুত অনুভূতি হলো অর্চিষ্মানের! মনে হলো এই দিশা,এত এত চেনা সেই কৈশোর থেকে একসঙ্গে পথচলা দিশাকে যেন সে চিনতে পারছে না! এ কি এতদিনের বিচ্ছেদ এর ফল নাকি অন্য কিছু?
    ঘনিষ্ঠ মুহূর্তগুলো মনে পড়তে লাগলো,জলের ধারার মধ্যে লালচে হয়ে উঠতে লাগলো অর্চিষ্মানের মুখ,আবার পরক্ষনেই মুছে যেতে লাগলো সেই রক্তাভ প্রসন্নতা।কেন এই বিষাদ,এই দু:খ? সাময়িক বিচ্ছেদ তো হয়ই মানুষের তার প্রিয়জনের সঙ্গে, তাহলে অর্চিষ্মানের এমন কেন লাগছে?
    এই দিশা, সেই শেষ দেখা হবার সময় প্লেনে ওঠার আগে যাকে নিবিড় জড়িয়ে ও বলেছিলো,"কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে না কোনোদিন। আমরা সব সময় মিলে থাকবো যেখানেই থাকি যতদূরেই থাকি।আমাদের মধ্যে কোনো ব্যবধান কেউ ঘটাতে পারবে না।"
    তীক্ষ্ণ একটা ভয়ের ফলা অর্চিষ্মানের বুকের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে।খুব খুব দূরের আর সিনেমায় দেখা কথার মতো মনে হচ্ছে ঐ স্মৃতিসমূহ। কিন্তু ওসব তো সত্যি সত্যি ঘটেছিলো! ঘটেনি কি? হঠাৎ কেন অর্চিষ্মানের তবে মনে হচ্ছে ওটা অন্য কোনো মানুষের জীবন,ওর নিজের জীবন নয়। সেই স্মৃতির অবিচ্ছিন্ন প্রবাহের মধ্যে একটা অন্ধকার ভয়াবহ খাঁজ, একটা ধারালো ছুরি দিয়ে আলাদা করে দেয়া অতীত ও বর্তমান, সেইটার রহস্য ভেদ করা মাত্র বোঝা যাবে সে আসলে কে, আসলে কি, কোন্‌টা সত্যি কোন্‌টা বানানো। কিন্তু ভীষণ ভয় করছে অর্চিষ্মানের,শীত করছে, উষ্ণতার জন্য কাতর হয়ে উঠছে প্রতিটি অনুপরমাণু।

    দীর্ঘ ধারাস্নানে ক্লান্তি ধুয়ে ফেলে গামাথা মুছে বাথরোব জড়িয়ে বেরিয়ে এলো অর্চিষ্মান, দিশা ব্যস্ত ছিলো ব্রেকফাস্ট টেবিল সাজাতে। পিছনে না ঘুরেই বললো,"অর্চি,তোমার শুকনো জামাকাপড় পাশের ঘরে চেয়ারে রাখা আছে। প্লীজ তাড়াতাড়ি করো। খাবার ঠান্ডা হয়ে গেলে খুব বিশ্রী লাগবে খেতে।"

    ব্যস্ত দিশার দিকে একপলক তাকিয়ে পাশের ঘরে ঢুকে পড়লো অর্চিষ্মান। পোশাক পরতে পরতে আবার সেই ভয়টা ফিরে এলো, কেন এমন মনে হচ্ছে অর্চিষ্মানের? এই বাড়ী,ঐ যে গাড়ীটা দীর্ঘপথ দীর্ঘরাত পার করে সে চালিয়ে আনলো, এই হাসিমুখ দিশা যে কিনা এতদিন পরে প্রিয়সান্নিধ্যে উঙ্কÄল হয়ে উঠেছে, সব এমন স্বপ্নের মতন কেন মনে হচ্ছে? মনে হচ্ছে এক যাদুকর জাদুকাঠি ঘুরিয়ে এই বলবে "যা:",অমনি সব মিলিয়ে যাবে,চমকে উঠে অর্চি দেখবে সে দাঁড়িয়ে আছে অদিগন্ত নগ্ন বালুর মধ্যে, একটি মরুচর তরুণী কাঁখে কলসী হাতে দড়িবালতি নিয়ে দূর থেকে দূরে চলে যাচ্ছে।

    এইসব কি বলা যায় দিশাকে? বলা যায়? নাহ, দিশা ভয় পাবে, উদ্বিগ্ন হবে।কিন্তু কাউকে তো বলতে হবে, কাকে বলবে অর্চিষ্মান?

    ব্রেকফাস্টের পরে দুজনে মিলে ঘুরতে গেলো শহরের সবুজ নির্জন পার্কে।এটি একটি বন্যপ্রাণী সংগ্রহশালাও।স্বাভাবিক গাছপালার পরিবেশে রাখা হয়েছে হরিণ,নীলগাই, শিম্পাঞ্জী,গোরিলা, অস্ট্রিচ,হেজহগ ইত্যাদি। বড়ো বড়ো গাছের ছায়ায় ভারী মনোরম সে জায়গা। বড়ো বড়ো ময়ূর মুক্ত অবস্থায় ঘুরে বেড়াচ্ছে দর্শকের কাছে কাছে। দুপুর রোদে ক্লান্ত হয়ে ছায়াঘন ঝোপের আড়ালে চলে গেলো মস্ত পেখমওলা পুরুষ ময়ূরটি।

    মেরি গো রাউন্ডে বাচ্চাদের চড়িয়ে দিয়ে বাইরে থেকে দেখছে তরুণ হাসিমুখ বাবামায়েরা,দিশার মুখ খুশী হয়ে উঠছে।দিশা খুব ভালোবাসে ছোটোদের। একবার বললো, "আমাদের ছেলেমেয়েদের এখানে যখন নিয়ে আসবো,ওরা খুব খুশী হবে অর্চি।" অমনি ভয় লাফিয়ে উঠছে অর্চির মনের মধ্যে,ভবিষ্যৎ ভাবতে গেলেই শীত করছে ওর। ও শক্ত করে ধরছে দিশার হাত, দিশা অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বলছে "কি হলো অর্চি?" অর্চির মুখ ঘামে টসটস করছে, খসখসে দুর্বল গলায় সে কোনোরকমে বললো,"কেন জানি মাথায় ব্যথা করছে,একটু বসতে পারলে হতো।হয়তো গরমে এরকম লাগছে।"
    গাছের ছায়ায় সিমেন্টের স্থায়ী বেঞ্চিতে অর্চিকে বসিয়ে দিয়ে কোল্ড ড্রিংকের স্টলের দিকে দৌড়ে গেলো দিশা। পাঁচ মিনিটের মধ্যে ঠান্ডা পানীয় নিয়ে এলো। অর্চি কয়েক চুমুক দিয়েই একটু হাসলো। দিশা খুব অপ্রস্তুতমুখে ক্ষমা চাইছে,সারারাত ড্রাইভ করে আসা অর্চিকে একটুও বিশ্রাম করতে না দিয়ে পার্কে নিয়ে এসেছে বলে।
    অর্চিষ্মান দিশাকে আশ্বস্ত করে "না না ক্ষমা চাওয়ার কি আছে? আমি নিজেই তো বললাম যে এখানে আসবো।"
    দুজনে হাত ধরাধরি করে এবারে ফিরে যাচ্ছে বাড়ীর দিকে। দিশা বললো,"বাড়ী গিয়ে ভালো করে বিশ্রাম নেবে আগে। ছি ছি,আমার আগেই খেয়াল থাকা উচিত ছিলো।তুমি তো চিরকালই ছেলেমানুষ, কিছুই খেয়াল থাকে না,কিন্তু আমারও কেন ভুল হলো?"
  • dri | 129.46.240.42 | ১৩ এপ্রিল ২০০৬ ০৭:২৭563549
  • কল্পবিজ্ঞানের নাম করে একটা মিষ্টি প্রেমের গল্প নামাচ্ছেন দেখছি। দেখুন প্রেম ট্রেম ঠিক আছে, একটু যুদ্ধ না থাকলে কিন্তু কোন গল্পই সম্পুর্ণ হয় না। মহাভারত দেখুন। হিন্দি সিনেমা দেখুন। হ্যামলেট দেখুন। গন উইথ দ্য উইন্ড দেখুন। লাস্টে দুই অর্চির ঝাড়পিট থাকবে তো? নাকি দিশাকে পলিগ্যামিস্ট বানিয়ে ছাড়বেন? :-)

    যাইহোক, আপনার গল্প দুটোতে একটা অদ্ভুত রিপিটিং থীম লক্ষ্য করলাম। অর্চির জল খাওয়া। আর অগ্নিজাতকে সেই যোদ্ধার জল খাওয়া। বেশ একটা সিম্বল-অব-লাইফ সিম্বল-অব-লাইফ ব্যাপার আছে। চালিয়ে যান।
  • tan | 131.95.121.251 | ১৩ এপ্রিল ২০০৬ ২০:৫২563550
  • দিশার দায় পড়েছে! সে এই ইম্যাচিওর ইডিয়ট দুটোকে কিক আউট করে হনলুলুতে বা পাপুয়া নিউগিনিতে গিয়ে হিরণ্যাক্ষকে বে করবে।:-))))
  • tan | 131.95.121.251 | ১৪ এপ্রিল ২০০৬ ০৪:৩৩563551
  • দ্রিঘান,চিন্তা নেই,ঝাড়পিট তো হবেই।না হয়ে পারে?
    কিন্তু একটা জিনিস বুইতে ভুল করে ফেলেছেন, আরে ও ঝাড়পিটও প্রেমেরই আরেক অবস্থামাত্র!যেমন বরফ,জল বাষ্প- সবই এক জলেরই বিভিন্ন অবস্থামাত্র!
    কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের আগে আগে মানে আগখানে ছোটো গীতাটি মিস করে যাবেন না,ওতেই সব বলে দেয়া আছে।:-)))

  • dri | 66.81.198.53 | ১৪ এপ্রিল ২০০৬ ০৯:২৩563552
  • ওহ্‌ হো। আপনি শ্রীমদ্ভাগবতম্‌ ওয়ার ম্যানুয়ালম্‌ এর কথা বলছেন তো? আরে কে তোর বউ, কেই বা ছানা। চালা তীর। ক্ষাত্রধর্ম বলে কতা! নলিনী দলগত জলমতি তরলম তদ্বৎ জীবনম অতিশয় চপলম। আজ আছিস, কাল নেই। চালা গুলি। আজকাল তো অরো সিম্পল। প্লেন চালাতে চালাতে টেপ বোতাম। নিচে হোক কালিপূজো। সেই দৃশ্য ধরার জন্য ভিডিও ক্যামেরা বাগিয়ে বসে থাক এক ঝাঁক চ্যানেল। ফ্রেমে ধরা থাক আলোর ফুলকি, রক্ত থাকে না যেন এক ফোঁটাও। প্রেম ও থাকে নাকি? কে জানে? আমি তো আর গীতা পড়িনি। তবে ওয়েপনটা কলসীর কানা ধরে নিলে, প্রেম তো করোলারী মাত্র।
  • tan | 131.95.121.251 | ১৪ এপ্রিল ২০০৬ ২১:২৭563503
  • দ্রিঘান,পকেটে পকেটে রাখা যাবে এমন সুন্দর প্রেসি ফর্মে করা ওয়্যার কে ওয়্যার মায় লাভ কে লাভ ম্যানুয়াল আর দেখেছেন কোথাও?
    আরে ফ্লপিটপিতে রাখলেও তো পড়তে ল্যাপি লাগবে,কিন্তু এই ক্ষুদ্র ম্যানুয়াল... অথচ সবই বলে দেয়া আছে।
    যখন যেখানে যা দরকার লাগিয়ে দিতে হবে।
    দ্দুমদ্দুমদ্দুম করে ফাটিয়ে দিলো ট্রিনিটি-সাত মাইল দূরের সাইট থেকে আউরে গেলো "দিবি সুরিয় সহস্রস্য ভবেদযুগপৎ ..."
    ভাবা যায়? পাঁচ হাজার বছর আগেই ভাষ্যপাঠের কবিতা পজ্জন্ত লেখা হয়ে গেছে!!!!!!

    আর কিনা আজাকলকার ছোঁড়াগুলো বলে আমরা প্লেনও বানাই নাই,বোমাও বানাই নাই, রকেটও বানাই নাই।
    বলুক বলুক।
  • Milli | 131.95.121.251 | ০৬ জুন ২০০৬ ০১:২৬563504
  • প্রতিলিপি(আগের অংশের পর)

    ঝড়ের রাতের সেই ভয়ংকর অবস্থার পরে ল্যাব কমপ্লেক্সে বিদ্যুৎ সংযোগ আসতেই লেগে গেলো বহু ঘন্টা! পরদিন সিকিউরিটি অত্যন্ত কড়া, ক্লিনিকে অর্চিষ্মানের শুশ্রুষা চলছে, সেই রাতে ও অজ্ঞান হয়ে ছিলো প্রায় পাঁচ ঘন্টা, যদিও বাইরে থেকে তেমন আঘাত কিছু বোঝা যায় নি, কিন্তু ওর ইন্টার্ন্যাল হেমারেজ হয়েছিলো।
    ওর একটি গাড়ী নিপাত্তা, সঙ্গে সেই গাড়ীতে যেসব জিনিস ছিলো যেমন লাইসেন্স ইত্যাদি, সবই নিপাত্তা। সিকিউরিটি টিম সবরকম চেষ্টা করছে খুঁজে পাওয়ার, সবরকম কন্ট্যাক্ট কাজে লাগিয়ে। কিন্তু সবচেয়ে মুশকিল হলো,এত কাছে অন্যদেশের বর্ডার, মরুভূমির কিছু অংশ পেরিয়ে যদি গাড়ীচোর অন্যদেশে চলে যায়, সেখানকার পুলিশকে অ্যালার্ট করতে সময়ের প্রয়োজন,ততক্ষণে সে নাম্বার টাম্বার বদলে ফেলবে নিশ্চিন্তে।
    গাড়ীটির চেয়ে অনেক বেশী চিন্তার কারণ হলো ক্লোনের দেহের কোনো হদিশ মেলেনি। জারটি পড়ে আছে ভাঙা, কাত হয়ে পড়া, সমস্ত তরল ঘর জুড়ে ছড়ানো, বৃষ্টিতে খানিক ধুয়ে যাওয়া, কিন্তু ক্লোন মানুষটি কোথা সেই সম্পর্কে কারুর বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। কোনোরকম হাতের ছাপ বা পায়ের ছাপও কোথাও নেই, এত বৃষ্টিতে তা থাকার কথাও নয় অবশ্য।
    এই ক্লোন রিসার্চারদের কারু কারু জানা আছে যে ক্লোনের বেরিয়ে আসার সময় হয়ে গেছিলো। গবেষকদের মধ্যে কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন অর্চিষ্মানের ক্লোনই তার গাড়ী নিয়ে চলে গেছে।তার স্মৃতি তো আসলে এই অর্চিষ্মানের স্মৃতির প্রতিলিপিমাত্র! সেতো জানেনা যে সে আলাদা ব্যক্তিত্ব!
    ক্লিনিকে ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিটে স্যালাইনের নল হাতে ঘুমিয়ে আছে অর্চিষ্মান, ওর জ্ঞান ফেরানোর পরে সিডেটিভ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। ঘরটিতে সব সময়ের জন্য দুজন স্পেশালাইজড নার্স রয়েছেন। তাছাড়া ডাক্তার রা তো সবসময় অ্যালার্ট!
    ডক্টর কুমার প্রসাদ, এই ক্লোন তৈরীর টীমের বরিষ্ঠ বিজ্ঞানী, ভদ্রলোক এই বিপর্যয়ে খুবই মুষড়ে পড়েছেন। অর্চিষ্মান ওঁকে পিতৃতুল্য মনে করতো। এই কাজ শেষের মুখে, আড়াই বছরের পরিশ্রমের সফল্যের মুখে একি অভাবনীয় কান্ড ঘটে গেলো?
    ক্লিনিকেই অপেক্ষা করছেন ডক্টর প্রসাদ, প্রতি ঘন্টায় খোঁজ নিচ্ছেন অর্চিষ্মানের অবস্থার, ও ভালো হয়ে উঠে বসলে কি করেই বা তিনি ওকে সব বলবেন, এই ভেবে ধূসর হয়ে যাচ্ছেন।
    বিনীতা, ডক্টর প্রসাদের সেক্রেটারি, এসে বললো,"স্যর,আপনি সেই সকাল থেকে এখানে বসে আছেন। এবারে চলুন। আপনার নিজেরও তো বিশ্রামের প্রয়োজন। শুধু শুধু টেনশন করে কোনো লাভ হবে কি?"
    ডক্টর প্রসাদ তবু চুপ করে চেয়ে থাকেন বিনীতার দিকে, ওঠেন না সোফা থেকে, কি করবেন কিছু বুঝতে পারছেন না। বিনীতা ওঁর হাত ধরে তোলে,বাইরে নিয়ে যেতে যেতে বলে,"একটু সময় দিন,দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে। শুধু শুধু টেনশন করে নিজেকে অসুস্থ করে ফেলবেন না।"
    সম্মতিসূচকভাবে মাথা নাড়তে নাড়তে বাধ্য ছেলের মতন বিনীতার সঙ্গে চলতে থাকেন ড: প্রসাদ। যদিও তিনি একটুও যেতে চাইছিলেন না দূরে।
    নিজের কোয়ার্টারে পৌঁছে ডক্টর প্রসাদ বৈঠকখানার সোফাতে এমনভাবে এলিয়ে পড়লেন যে বিনীতা পৌঁছে দিয়েই চলে যেতে পারলো না।রান্নাঘরে গিয়ে কফি আর টোস্ট তৈরী করে নিয়ে এলো ডক্টর প্রসাদের জন্য। ধন্যবাদ দিয়ে খেতে শুরু করলেন প্রসাদ,এতক্ষণে তিনি বুঝতে পেরেছেন কতটা ক্ষুধার্ত ছিলেন। খাওয়ার মাঝপথে সেলফোনে কুলুকুলু। প্রফেসর স্টিভেন ম্যাকডুগাল, আরেকজন বিজ্ঞানী এই টীমে, তিনি সেলে কথা বললেন খানিকক্ষণ ডক্টর প্রসাদের সঙ্গে। প্রধানত টেনশন কম রাখার কথাই,খানিক সান্ত্বনাবাক্য ইত্যাদি, ডক্টর প্রসাদ কথা বলে বেশ কিছুটা হাল্কা হলেন।
    ড: প্রসাদকে লাঞ্চ রান্না দিয়ে করে ভালো করে ঠিক ঠাক সব ঢাকাচাপা দিয়ে ওনাকে ঠিক একটার সময় সব খেয়ে নিতে বলে তারপরে বাড়ী গেলো বিনীতা।
    দৈহিক ও মানসিক ভাবে খুব ক্লান্ত থাকায় ড: প্রসাদ শোবার ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন অল্পক্ষণের মধ্যেই।

    *****
    বিনীতার সঙ্গে থাকে ওর বয়ফ্রেন্ড রাহুল, সেও এই প্রোজেক্টে আছে। সে এখান কার একজন ফিনানশিয়াল অ্যানালিস্ট। এই আইডিয়ালিস্ট স্বপ্নদর্শী দলের মধ্যে যারা কিছুটা অন্তত প্র্যাকটিকাল তাদের মধ্যে রাহুল একজন।
    বিনীতা ফিরতেই কাজের টেবিলে ডেটাশিটে চোখ বোলাতে ব্যস্ত রাহুলের জিজ্ঞাসু চোখ ওকে ছুঁয়ে যায়, কিন্তু কিছু বলে না। বিনীতা ক্লান্ত হাসে, কৈফিয়ত দেয়, সত্যি কথাই বলে, প্রৌঢ় ড: প্রসাদের সঙ্গে এদের দুজনের স্নেহের সম্পর্ক।
    রাহুল হেসে অস্ফুটে একটা ইয়ার্কি করে, কিন্তু বিনীতা শুনতে পেয়ে যায়, ছদ্মরাগে একটু বকে রাহুলকে। কিন্তু রাহুল তাড়াতাড়ি মাফ চায়, বলে,"সরি সরি। বিনি, তুমি রান্না করবে এখন? আমি সাহায্য করতে পারি।" উঠে পড়ে চেয়ার থেকে, বলে,"কি রাঁধবে? কালকে অতক্ষণ পাওয়ার ছিলো না বলে ফ্রীজের খাবার সব গেছে নষ্ট হয়ে,সব ফেলে দিয়েছি। "
    "বেশ করেছ।" সংক্ষেপে বলে আনাজ বঁটি এসব বার করতে থাকে বিনীতা। রাহুল করুণ মুখে বলে,"সরি বিনি। তুমি রাগ করে আছো নাকি?"
    আনাজ কুটতে কুটতে বিনীতা বলে,"না। যাও না চাল ধোও না, হীটার অন করে বসাও না। কোনো কাজের না,খালি কথা,খালি কথা।"
    রাহুল চাল ধুয়ে ভাত বসিয়ে দেয় হীটারে। বিনীতার আনাজ কোটা শেষ,কি তাড়াতাড়ি পিস পিস করে কুটে ফেলেছে সব আলু, গাজর, ক্যাপসিকাম, টোমাটো, বরবটি, সাদা বেগুন,বেগুনী বেগুন---- এতদিন দেখেও আজও রাহুলের খুব অবাক লাগে। মেয়েরা কি তাড়াতাড়ি না কাজ করতে পারে এইসব।রাহুলের ঘন্টাখানেক লাগতো।
    কড়াই বসিয়ে তেল গরম করে শুকনো লঙ্কা আর কারিপাতা ফোড়ন দিয়ে বিনীতা বলে, "শোনো চারটে ডিম বার করো।আজকে আর বেশী ঝামেলা করলাম না, এই তরকারিপাতি ভাজা ভাজা করে ডিমদিয়ে ভেজে মশলা টশলা দিয়ে বেশ একটা রসভাজা টাইপের করে ফেলবো। এইরকম রেসিপি যদিও লোকে কাউকে বলে টলে না,কিন্তু দেখো,খেতে ভালোই লাগবে।"
    রাহুল অতি দ্রুত বিনীতার কানের পাশে ঠোঁট ছুঁইয়ে দৌড়ে চলে যায় ডিম আনতে, বিনীতা বলে,"অসভ্য!!!"পুরো লাল হয়ে যায় ওর উনুনতাপে অল্প লাল হওয়া মুখ।
    রান্না শেষ করে সব ক্যাসারোলে ক্যাসারোলে গুছিয়ে জায়্‌গা ধুয়েমুছে তবে বিনীতা স্নানে ঢুকলো।খুব গোছানো আর চৌকস গিন্নী টাইপের মেয়ে বিনীতা। রাহুলের খুব ইনফিরিয়র লাগে মাঝে মাঝে ওর দ্রুত অথচ ছন্দ ময় কাজ দেখে।
    রাহুলের স্নান হয়ে গেছিলো আগেই,দুজনে খেতে বসে অনেক গল্পটল্প হলো ওদের,বহুদিন বাদে এইরকম ছুটি। এদের দেখে মনেই হচ্ছিলো না কিছু অস্বাভাবিক ঘটে গেছে মাত্র আগের রাতে। দুজনের সেলেই বেশ কিছু কল এলো,সবই এখানের বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকেই,শুধু একবার রাহুলের ফোনে একজন বাইরের,ওকে উঠে দূরে গিয়ে কথা বলতে হলো। বিনীতার ব্যাপারটা অদ্ভুত, ও জানে রাহুল একটা গন্ডগোলে জড়াচ্ছে, অথচ ওকে টেনে বার করার আশা ছাড়তে পারে না। খুব আস্তে আস্তে চিবোতে চিবোতে ও রাহুলের সমস্ত আচরণগুলির স্মৃতি মনের মধ্যে তোলাপড়া করে, বেচারা প্রথম দিকে কি সাংঘাতিক ছটফট করতো! তখন ও চাইছিলো না ঐভাবে অন্তর্ঘাতে সায় দিতে,একসময় সেই ছটফটানি কমে গেলো, ও রাজী হয়ে গেলো। বিনীতার কষ্ট হতো ওর মুখ দেখে তখন, একজন মানুষ আরেকজন হয়ে যাচ্ছে,দেখতে একইরকম,একই দেহ,অথচ হৃদয় বন্দী শিকারীর জালে, আগের মানুষটি দীর্ঘ ঘুমে তলিয়ে যাচ্ছে,নতুন ক্রুর নিষ্ঠুর দানব জেগে উঠছে, যে আগের সুস্থ মানুষটির নকল করে অভিনয় করে যাচ্ছে।
    বিনীতা জানে একদিন ঘুমিয়ে পড়া সত্তা জেগে উঠে লড়াই শুরু করবে, ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাবে দুই সত্তাই, একজন জিতবে অন্যজন মরে যাবে। সেদিন যদি মানুষটি জেতে বিনীতা হাত ধরে থাকবে তার,প্রাণ দিয়ে শুশ্রুষা করে সারিয়ে দেবে সব ক্ষত। আর যদি দানব জেতে? শিউরে ওঠে বিনীতা,তাহলে কি করবে তাও জানে বিনীতা,হয়তো খুব কঠিন,কিন্তু উপায় নেই,তাই নির্দেশ দেওয়া আছে ওকে।সেই দানবসত্তার রাহুলকে হত্যা করে ওকে চলে যেতে হবে মেইন স্টেশানে,সেখানে ওকে ডিসম্যান্টল করে ফেলা হবে।বিনীতা হিউম্যানয়েড,অথচ রাহুল বুঝতে পারেনি কোনোদিন।
  • Milli | 131.95.121.127 | ২৬ নভেম্বর ২০০৬ ২২:৪৫563505
  • প্রতিলিপি(আগের অংশের পর)

    অর্চিষ্মানের ভালো হয়ে উঠে বসতে সপ্তাহখানেক লাগলো।ততদিনে সবই ছন্দে ফিরে এসেছে প্রায়।কাজকর্ম চলছে পুরো ল্যাব কমপ্লেক্সে,হার্ডকোর টেকনিকাল লোকেদের কাছে ঝড়বৃষ্টির রাতের ভাঙচুর চুরি পলায়নের দুর্ঘটনা ল্যাবে একপেরিমেন্টের গন্ডগোলের মতন,একটা এক্সপেরিমেন্ট ভন্ডুল তো কি হয়েছে, ফের নতুন গোটা দশেক এক্সপেরিমেন্টের ডিজাইন করে সেগুলো করার কাজে লেগে গেলেই হয়!এই ধরনের সব মনোভাব।
    বৃদ্ধ বৈজ্ঞানিক ড: কুমার প্রসাদও দিব্যি ঠিক হয়ে গেছেন তরুণতরদের এই উৎসাহে উদ্যমে ভেঙে না পড়া মনোভাবে।
    সদ্য অসুখ থেকে ওঠা অর্চিষ্মানকে কিভাবে খবরটা দেওয়া হবে এটাই শুধু এখনো কেউ ঠিক করে উঠতে পারছে না। অবশেষে বিনীতা এগিয়ে এলো,সেই ঠিক ঠাক করে খবরটা দেবে। অর্চিষ্মান জানতো বিনীতা হিউম্যানয়েড রোবট, বস্তুত বিনীতার ডিজাইন অর্চিষ্মান আর ওর এক রোবোটিক্স বিশেষজ্ঞা বান্ধবীর।
    ধীরে ধীরে সইয়ে সইয়ে খবরটা বিনীতা দিলো কিন্তু দেখা গেলো এত সতর্কতার কোনো প্রয়োজন ছিলোই না। অর্চিষ্মান বেশ শক্ত গোছের লোক।নিরাসক্ত গবেষকের মতন সে বললো ""আরে,তাতে কি? ফার্স্ট ট্রায়াল কি আর সবসময় ঠিকঠাক হয়? আমরা আবার সব নতুন করে করবো।""
    দিন যায়,রাত যায়,নতুন দিন আসে। রাহুলের স্যাবোট্যাজ ধরা পড়ে যায় একদিন। বিনীতাই জানিয়ে দেয়,নইলে ব্যাপারটা আরেকটু হলেই ল্যাব কমপ্লেক্সে বিষ্ফোরণ ঘটার মতন বিপজ্জনক হয়ে যাচ্ছিলো।রাহুলকে কিন্তু পুলিশে দেওয়া গেলো না, না সে বর্ডার পার হয়ে পালায় নি অন্যদেশে,সে পৃথিবী পার হয়ে চলে গেছিলো। প্রচন্ড শকে হার্টফেল করে মারা গেছিলো রাহুল, যখন সে চোখের সামনে বিনীতাকে মেটালিক রোবটরূপে দেখলো! ওর অতিবড়ো দু:স্বপ্নেও বোধহয় বেচারা এই ভয়ংকর অবস্থা কল্পনা করতে পারেনি।যাকে দিনের পর দিন ভালোবেসে ধন্য হয়েছে,তাকে ইন অ্যানিমেট যন্ত্র হিসাবে দেখা যে কি সাংঘাতিক জিনিস সে আমরা বুঝবো কিকরে?
    বিনীতাকে ফিরিয়ে দেওয়া হলো রোবট ওয়ার্কশপে,সেখানে ওর ওয়রন আউট পার্টসগুলো বদলে নতুন করে দেওয়া হলে সে ফের ফিরে এলো নবোদ্যমে। কিন্তু কোথায় যেন সেই আগের বিনীতা মিসিং! সেই জ্বলজ্বলানো তরুণী আর নেই! বিনীতা কি শুধুই যন্ত্র নাকি অন্যকিছু? ভালোবাসার যন্ত্রণা টের পেয়ে সে কি মানুষ-মানুষ হয়ে গেছিলো? তাই একদিন নিজেকে কড়া অ্যাসিড দিয়ে গলিয়ে ফেলে চলে গেলো অস্তিত্বের থেকে মুক্তি নিয়ে?

    নতুন ক্লোন এক্সপেরিমেন্টগুলো এগিয়ে চলছিলো ঠিকঠাকই,কিন্তু একদিন আবার গন্ডগোল!
  • Milli | 131.95.121.127 | ২৮ নভেম্বর ২০০৬ ২২:৫৩563506
  • নতুন ক্লোন এক্সপেরিমেন্টসমূহ ভালোই এগিয়ে চলেছিলো পরিকল্পনা অনুযায়ী। মাস তিনেক কেটে গেছে এমন সময় একদিন গভীর রাতে এলো একটি টেলিফোন,দিশার ফোন,অর্চিষ্মানকে চাইছে।
    অর্চিষ্মান ল্যাবে ছিলো,সে এসে ধরলো ফোন।দিশা খুব আপসেট গলায় বলছিলো,কিছু না বলে অর্চি কেন এইভাবে চলে গেছে!দিশা কি কোনো ভুল করলো যে রেগে গিয়ে এভাবে বাড়ী থেকে চলে গেলো অর্চি!
    অর্চিষ্মান এইসব কথার মাথামুন্ডু কিছুই ধরতে পারলো না! সে কোথা থেকে চলে গেছে! কবে সে রাগ করলো? দিশা কি মানসিক ভারসাম্য হারালো নাকি?
    কিন্তু এইসব কিছুই বোঝা গেলো না,কান্নাভেজা উদ্বেগে জরজর গলায় দিশা বলছে,"অর্চি,আমি আসবো তোমার ওখানে।আমার পাসপোর্ট টোর্ট সব করা আছে, ভিসা হয়ে যাবে কালকেই যদি চাই,আসবো আমি অর্চি?""
    ""এসো, কিন্তু আমি কিছুই বুঝছি না।আমি তোমার উপরে রাগ তো করিনি! তোমার সঙ্গে তো তিনবছর দেখা হয়নি প্রায়,তাই কি তুমি আমার উপরে রাগ করেছ?""
    খুব রেগে গেলো দিশা, বললো,""ইয়ার্কি ভালো লাগছে না অর্চি,হানিমুনের থেকে ফিরেই আমি তোমাকে কেমন কেমন ছাড়া ছাড়া উদাস উদাস দু:খী দু:খী দেখেছি।হয়তো আমি কোনোভাবে তোমার মনের মতন হইনি,এতদিন পরে বুঝেছ।কিন্তু তবু একটা দায়িত্বশীল মানুষের মতন আচরণ করবে তুমি এইটুকু তো আমার এক্সপেক্টেশনের মধ্যে ছিলো!হঠাৎ কাউকে না বলে এভাবে নিরুদ্দেশ হয়ে যাবে!""দিশা ফুঁপিয়ে ওঠে,কথা বলতে পারে না আর।
    অর্চিষ্মানের কানের উপর দিয়ে হানিমুন,উদাস দু:খী,মনের মতন না হওয়া,নিরুদ্দেশ---কথাগুলো এলোমেলো ঘূর্ণির মতন ঘুরছিলো,কোনো অর্থবোধ হচ্ছিলো না। এসব কি বলছে দিশা? হানিমুন কেন? কার সঙ্গে? দিশার মাথাটাথা ঠিক আছে তো!
    ""দিশা,দিশা,শোনো,মন দিয়ে শোনো। একটু মাথাটা ঠান্ডা করো। মন দিয়ে শুনে উত্তর দাও।তোমার কি বিয়ে হয়ে গেছে? হানিমুনের কথা বলছিলে যে!""
    এইবারে দিশা এত রেগে গেলো যে অর্চিষ্মানের কানের কাছ থেকে ফোনটা কয়েক ইঞ্চি দূরে সরাতে হলো দিশার চিৎকার যাতে কান না ফাটিয়ে দেয়! দিশার চিৎকার দিয়ে গলা ভেঙে গেলো,সে ভাঙা গলায় কাঁদতে কাঁদতে বলছিলো,""তোমাদের সবাই সমান। এখন বিয়েও অস্বীকার করছো! তোমাকে আমি বিশ্বাস করেছিলাম অর্চি,ভেবেছিলাম তুমি একটা প্রকৃত মানুষ। কিন্তু এখন দেখছি তুমিও আর কিছু না,একটা দানব। মনস্কামনা পূর্ণ হয়ে যাবার পরে ছেঁড়া ফুলের মত সব ফেলে মাড়িয়ে চলে যেতে পারো। তোমরা সবাই সমান।""
    অর্চিষ্মান একেই বিশেষ গুছিয়ে কথা বলতে পারেনা, তার উপরে এখন এত রেগে যাওয়া দিশাকে সামলাবে কি করে,ঠান্ডা করবে কি করে তা একেবারেই ভেবে পেলো না। তবু শেষ চেষ্টা হিসাবে বললো,""দ্যাখো দিশা, তুমি যা খুশী ভাবতে পারো, কিন্তু সত্য হলো এই যে গত তিনবছর ধরে আমি এখানেই আছি, রাতদিন কাজ চলছে ল্যাবে,মাসতিনেক আগে একটা দুর্ঘটনা ঘটেছিলো, আমার নিজেরও খুব গন্ডগোল গেছে। অত্যন্ত অসুস্থ ছিলাম কিছুদিনের জন্য। তারপরে ও অনেক ঝামেলা চলছে রোজই, কিন্তু আমি একটা কথা বলতে পারি নিশ্চিত, যে আমি তোমাকে কখনো ঠকাই নি। তুমি এসো এখানে, যত তাড়াতাড়ি পারো এসো, তোমার সব ভুল বোঝাবুঝি দূর হয়ে যাবে আশা করি।""
  • Milli | 131.95.121.127 | ২৯ নভেম্বর ২০০৬ ০৫:৪২563507
  • তখনি ক্লোন অর্চিষ্মান গাড়ী চালাতে চালাতে মরুভূমি পার হয়ে উল্টোদিকে আসছিলো আবার। হানিমুন থেকে ফিরে সে স্পষ্ট বুঝতে পারছিলো এই দিশাকে সে নিজে চেনেনা। দিশার স্মৃতি অন্য কারুর স্মৃতি, কিকরে যেন ওর নিজের স্মৃতির মধ্যে জড়িয়ে গেছে। ঐ ঝড়ের রাত্রি,ঐ নিকষ কালো অন্ধকার, ঐ চিকমিকে বিদ্যুৎফলা ঐ ধারাজলে স্নান, ঐ তার জন্মরাত্রি, তার আগের জীবন তার নয়,যদিও স্মৃতিতে সব দগদগে কিন্তু সে তার স্মৃতি নয়, অন্য কারুর জীবনের ঘটনা সমূহ কপি করে ভরে দেওয়া হয়েছে। সে বুঝতে পারছে,স্পষ্ট বুঝতে পারছে। কিকরে বুঝতে পারছে বলতে পারবে না, প্রমাণও করতে পারবে না,কিন্তু অদ্ভুত তীব্র যন্ত্রণা,ঈর্ষা আর অসহায় আকুতিভরা মন নিয়ে সে বুঝতে পেরেছে সে একটা ভুল, একটা গোঁজামিল একটা জলছাপ মাত্র! অথচ বিয়ের দিনে দিশার পাশে নিজেকে ধন্য মনে হয়েছিলো, দিশাকে বিয়ের কনের সাজে কি আশ্চর্য সুন্দরী লেগেছিলো। হানিমুনে যাবার সময় এত সুক
    হী আর কেউ ছিলো না দুনিয়ায়। অথচ প্রতিবার মিলনমুহূর্তে ফিরে এসেছে সেই তীক্ষ্ণ অনধকার, ধারালো ছুরির ফলা দিয়ে পৃথক করে দেওয়া অতীত ও বর্তমান, সেই ভয়ংকর অতল খাদ। দিশা বারে বারে জিজ্ঞেস করেছে কি হলো? কেন অর্চি এত অন্যমনস্ক, ওর কি কোনো কারণে খারাপ লাগছে? দিশা অভিমানও করেছে কয়েকবার। যথাসাধ্য ওকে বুঝিয়েছে অর্চি, কিন্তু আসল কথাটা বলতে পারে নি। সে অচিষ্মান নয়, সে অন্য কেউ, সে একটা ভুল, সে একটা ব্যঙ্গচিত্র।
    মধুচন্দ্রিমা শেষে ফিরে এসে আর সে পারেনি ঐ বোঝা টানতে, চিঠি লিখে রেখে পালিয়ে এসেছে চেনাপথ ধরে। জন্মরাত্রে যে পথ দিয়ে এসেছিলো সে। এবারে গিয়ে সে দাঁড়াবে সেই নিষ্ঠুরের সামনে যে তাকে তৈরী করেছে নিজের প্রতিলিপি করে, নিজের হাতেই সে শেষ করে দিক তাকে। শুধু মরে যাবার আগে সে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চায়, এত কষ্ট দেবার কি অধিকার ছিলো তার? কেন সে এইরকম কাউকে বানাতে গেলো পদে পদে যার বুকের মধ্যে ছুরির ফলা ঢুকে ফালাফালা করে দেবে জীবন! কেন? কি অপরাধ তার?
    নির্মল মরু-আকাশের তারার আলোয় বালিকণা জ্বলজ্বল করে, কৃষ্ণা একাদশীর চাঁদ ওঠে ঐ দূরে, অপার্থিব বিষন্ন হাসির মতন ঝুলে থাকে আকাশের গায়ে, দূরে ঢেউ খেলানো বালির উপরে ফণীমনসার ঝাড়ের কাছে সেই অদ্ভুত অন্যলোকের ঈশারা! কোথা থেকে এত কুয়াশা আসছে,কোথা থেকে এত ঠান্ডা আসছে? আহ আহ, কী ঠান্ডা! কুঁকড়ে যাচ্ছিলো অর্চিষ্মান। শরীরে নীচে ঢালু জমির অনুভব হচ্ছিলো, গড়িয়ে যেন সে পড়ে যাচ্ছে সেই নততলের উপরে দিয়ে,আরো আরো কুয়াশা এসে ঢেকে দিচ্ছে সব,কুয়াশার মধ্য দিয়ে সবুজ দেখাচ্ছে চাঁদকে! কী অদ্ভুৎ!
  • Milli | 131.95.121.127 | ১৭ ডিসেম্বর ২০০৬ ২৩:৪৪563508
  • প্রতিলিপি(কন্টিনিউড)

    তিনদিন পরে ল্যাব কমপ্লেক্সে দিশা এসে পৌঁছালো দুপুরবেলা। ওকে রিসিভ করতে গেটের কাছে ছিলো অর্চিষ্মান নিজে। ক্লিয়ারেন্স না থাকলে তো কেউ এখানে বাইরে থেকে ঢুকতে পারে না, তাই অর্চিষ্মান নিজেই নিরাপত্তারক্ষীদের পোস্ট পার হয়ে বাইরে এসে দিশাকে রিসিভ করে ভেতরে নিয়ে যায়।
    ঝলমল রোদ্দুরে ভরা নীল আকাশওয়ালা একটা সুন্দর দিন, চারিপাশে বড়ো বড়ো সবুজ গাছে ভরা বীথি দিয়ে যখন অর্চিষ্মানের পাশে পাশে হেঁটে ওর অ্যাপার্টমেন্ট বাড়ীর দিকে দিশা যাচ্ছিলো, তখন দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তি মুছে যাচ্ছিলো হাল্কা বাতাসের ছোঁয়ায়, দূরে সবুজের আড়ালে আড়ালে লুকিয়ে থাকা পাখিদের ডাকে আর অর্চিষ্মানের সুখ-উজল মুখের দিকে চেয়ে। এই তো তার অর্চি, চেনা সেই আপন মানুষটি, নাহ, এ তাকে ঠকাতে পারে বলে দিশার আর বিশ্বাস হয় না। কিন্তু তাহলে ঐ হানিমুন? ঐ বিভ্রান্ত অর্চি? ঐ আবিষ্টমুহূর্তে সহসা উদাস ও দু:খী হয়ে পড়া মানুষটা কে ছিলো? এই অর্চিষ্মান বলছে সে কোথাও যায় নি, অন্যেরা কি বলে জানলে বোঝা যাবে, কিন্তু দিশার ইচ্ছে করছে না। এক অভূতপূর্ব সুখে সে ভরে উঠছে, খুঁড়ে খুঁড়ে সত্যমিথ্যা জানতে চেয়ে সে এই দুর্লভ আনন্দ ভেঙে দিতে চায় না। কিন্তু সত্য? সত্য জানতে চাইবে না সে? দিশা দ্বিধা করছে,সে এই মানুষটিকে হারাতে চায় না আবার মিথ্যার কাঁটাও বুকে পুষে রাখতে চায় না। চলতে চলতে সে ভাবছে আর ভাবছে।
    এসে গেলো অর্চির বাড়ী। দোতলায় সুন্দর নীট ক্লীন সাজানো ঘরে দিশাকে নিয়ে গিয়ে অর্চি বললো, ""শোনো দিশা, এই ঘর তোমার জন্য। এতটা পথ এসে তুমি ক্লান্ত।আগে স্নান করে নাও, ক্লোজেটে তোমার কিছু পোশাকও আছে, কালেভদ্রে শপিং এ গেলে তোমায় গিফট দেবার জন্য কিনি, প্রত্যেকবারই ভাবি তোমায় পাঠিয়ে দেবো, কিন্তু রয়েই গেছে।ভালোই হলো,এখন ব্যবহার করতে পারবে।""
    সঙ্গে সঙ্গে ক্লোজেটের দরজা খুলে দিশা অবাক! ক্লোজেট ভর্তি নানারকম পোশাক, টি শার্ট জিন্স জ্যাকেট তো আছেই সঙ্গে শাড়ী, চুড়িদার, ওড়না ঘাঘড়া সব আছে।
    সে অর্চির দিকে চেয়ে হাসলো, বললো,""পাগল, একেবারে পাগলই আছো। কোনোদিন যদি না আসতাম,এগুলো এইরকম পড়ে থাকতো? এই ঘর, ঐ আয়না,ড্রেসিঙ টেবিল, আরে একটা বেহালা আর হারমোনিয়াম ও রেখেছ? "" দিশা কোণের টেবিলটার দিকে এগিয়ে যায়, সেখানে সুন্দর ঢাকনা পরানো বেহালা আর হারমোনিয়ম রাখা।
    অর্চিষ্মান মৃদু হাসে বলে,""তুমি ফ্রেশ হয়ে নীচে এসো, আমরা একসঙ্গে কাফেটেরিয়ায় গিয়ে লাঞ্চ করবো।""
    স্নান করে হাল্কা কচি কলাপাতা রঙের শাড়ী পরে হাল্কা রজনীগন্ধাসৌরভের পারফিউম দিয়ে অনেকদিন পরে বেশ সাজলো দিশা, এমনকি শাড়ীর সঙ্গে ম্যাচ করে সবুজ পাথর বসানো কানের দুল পরলো পর্যন্ত!
    কাফেটেরিয়া বেশ নির্জন, বারোটা থেকে একটা অবধি ভীড় থাকে,তখন লাঞ্চের ছুটি, তারপরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই চলে যায়। অর্চিষ্মান আর দিশা একটা গোল টেবিলে মুখোমুখি বসে ভাত পাতলা মুসুর ডাল ঝুরি করা আলুভাজা সীমবেগুনের তরকারি আর চিকেন কারি একেবারে দেশীয় প্রথায় হাত দিয়ে মেখে খাচ্ছিলো। মাঝে মাঝে তেঁতুলের আর আমের টকঝাল আচার! খেতে খেতে দিশা হাসছিলো, এই দেশী খাবার এই বিভুঁইয়ে! অর্চি বললো রোজ এরকম হয় না, আজকে দিশা আসবে বলে সকালে স্পেশাল অর্ডার দিয়ে রেখেছিলো অর্চিষ্মান!
  • Milli | 131.95.121.127 | ১৮ ডিসেম্বর ২০০৬ ০৫:০২563509
  • প্রতিলিপি(কন্টিনিউড)
    তৃপ্তি করে খাওয়া শেষ করে দিশা ফিরলো অর্চির অ্যাপার্টমেন্টে আর অর্চিষ্মান চলে গেলো ল্যাবে,বাকী দিনটুকু কাজ করেই সাড়ে পাঁচটায় ফিরবে বললো।এমনিতে অর্চি ল্যাবে অনেক বেশী রাত অবধি থাকে, কোনোদিন দুটো বা আড়াইটেতে ফিরে ঘন্টা তিনেক ঘুমিয়েই উঠে পড়ে স্নানটান ইত্যাদি সব সেরে আবার ল্যাবে ছোটে। কাজপাগল অর্চিষ্মান কোনোদিন ক্লান্তি অনুভব করে না,ঘন্টাতিনেক কি চারেক ঘুম ওর অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া শরীরে যথেষ্ট মনে হয়।
    আজকে কিন্তু ল্যাবে জটিল ক্যালকুলেশানের মাঝে মাঝেই অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছিলো অর্চিষ্মান। মাঝে মাঝে ঘুমঘুম পাচ্ছিলো ওর, এ কি এত পেট ভরে দুপুরে ভালোমন্দ খাওয়ার ফল নাকি দিশার জন্য মন ছটফট করছে?
    বেলা তিনটের সময় কড়া কফি আনিয়ে খেতে খেতে কাজ করতে থাকলো, ওর অ্যাসিস্টেন্ট তরুণ দুজন-কলেজ থেকে সদ্য পাস করা দুটো ছেলে আরুল আর বীতশোক- একটু অবাক, কারণ এই সময়ে এমনিতে কফি টফি কিছু খায় না অর্চিষ্মান। মাঝে একবার আরুল কি ভুল করায় অর্চি এমন ধমক দিলো যে আরুল আর বীতশোক দুজনেই এত অবাক হয়ে গেলো যে বলার না।আসলে ওদের সঙ্গে অর্চির ঠিক সুপারভাইজার অ্যাসিস্টেন্ট রকম সম্পর্ক না, বরং বন্ধুর মতই সম্পর্ক বলা যায়। কোনোদিন ওদের সঙ্গে মেজাজ গরম করে না অর্চিষ্মান,আজকে হঠাৎ...
    আরুল মুখ কালো করে ফের কাজটা নিয়ে বসলো, আর অর্চিষ্মান নিজের টেবিলে ফিরে কপাল টিপে ধরে চোখ বুজে বসে রইলো,ওর সামনে ধূমায়িত কফির কাপে দুধচিনি ছাড়া কালো কফি ক্রমে ক্রমে ঠান্ডা হয়ে আসতে লাগলো। বীতশোক গোছানো ছেলে, সে এসে অর্চিকে বললো ""স্যর, একটা কথা বলি যদি কিছু মনে না করেন। আপনাকে অত্যন্ত ক্লান্ত দেখাচ্ছে,আপনি বাড়ী গিয়ে বিশ্রাম নিন। আমরা দুজনে মিলে সিমুলেশান মিলিয়ে সব ঠিক করে রাখবো, কাল সকালে এসে দেখবেন।""
    অর্চিষ্মান কপাল থেকে হাত সরিয়ে চোখ মেলে রেগে চেঁচিয়ে উঠতে গিয়েও সামলে নিলো, ওর মনে হচ্ছিলো দিশা কোথায় যেন দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে।
    অল্প একটু হেসে অত্যন্ত দীন গলায় অর্চিষ্মান বললো,""ঠিক আছে, তোমাদের আমি ভরসা করি, তাতো জানোই। একটা কথা শুনবে বীতশোক? আরুলকে বলবে আমি মাফ চেয়েছি? আসলে আমি ওভাবে বলতে চাই নি, আজকে হঠাৎ কি যে... খুব ক্লান্ত... ওকে বলবে মাফ চেয়েছি?""
    বীতশোক হেসে ফললো,""বলবো। আপনি নিজে গিয়ে বলুন না, ও গোমড়ামুখে বসে আছে, চলুন।""
    অর্চিষ্মান কুঁকড়ে গেলো ভেতরে ভেতরে, তবু উঠলো, যা করে ফেলেছে ফেলেছে, এবারে তার প্রতিকার করার সময় অন্যের ঘাড়ে চাপালে তো চলবে না!
    আরুল চুপ করে বসেছিলো সংখ্যামালা সামনে নিয়ে, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হাতের লেখায় খুব সুন্দর করে সাজানো সমীকরণ আর সংখ্যারাশি। অর্চি কাছে যেতে উঠে দাঁড়ালো আরুল, অন্য এক দূরের দেশ থেকে এসে যোগ দিয়েছে আরুল, সেই দেশের কালচার অনুযায়ী উর্ধ্বতনদের মর্যাদা এত বেশী যে সর্বদাই অধস্তনদের কেঁচো হয়ে থাকতে হয়। এখানে যদিও কালচার অনেকটাই আলাদা, অনেকটাই সমব্যবহারের নীতি, তবু এখনো আরুল অভ্যস্ত হয় নি। ওর মুখ দেখে অর্চির কেমন কষ্ট হলো। তার নিজের তো স্বপ্নের প্রোজেক্ট আপনজনেদের ছেড়ে পড়ে থাকার যুক্তি আছে কিন্তু এরা তো দুটো পয়সার জন্য এই গডফরসেকন জায়্‌গায় পড়ে আছে বছরের পর বছর। কি আছে এখানে? না এদের পরিবার পরিজন না কোনো সেরকম উৎসব আয়োজন,না তেমন নামকরা বেড়াবার জায়গা।
    আরুলের কাঁধে হাত রেখে অর্চিষ্মান ভাঙা গলায় কোনোরকমে বললো,""মাফ চাইছি আরুল। আমার অত্যন্ত অন্যয় হয়েছে ওভাবে বলা।আমায়... আমায় ক্ষমা করো।""
    আরুল যে এই শুনে একেবারে কেঁদেই ফেলবে দুহাতে মুখ ঢেকে হুঁ হুঁ করে, এতো অর্চিষ্মান স্বপ্নেও ভাবে নি! এ কি গেরোরে বাপু!!!!
    কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অর্চির সামনে আরুল যে কতক্ষণ ওরকম কাঁদতো ভগবান জানেন। বীতশোকই এসে পরিস্থিতি সামাল দিলো।

    সব মিটিয়ে টিটিয়ে ফিরতে গিয়ে অর্চিষ্মান দেখলো তার ঝিমধরা ভাব আর মাথাধরা পুরো কেটে গেছে,আরো কিছুক্ষণ কাজ করাই যায়। তাই এখন না ফিরে কাজ খানিক এগিয়ে ফেরাই ভালো, ভাবলো ও। টানা ঘন্টা আড়াই কাজ করে একটু পায়চারী করার জন্যে বাইরে আসতেই দেখলো অপূর্ব সন্ধ্যা নেমে আসছে, পশ্চিম আকাশে আবীর ঢালা, মাথার উপরে নীল আকাশে গোলাপী ওড়নামেঘ, পাখিরা দলে দলে পশ্চিমের ঐ রঙীন আকাশের উপর দিয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিন্দুর মতন ফিরছে। প্রায়ই তো সন্ধ্যা হওয়া দেখে অর্চিষ্মান, আজকে এতটা অসাধারণ লাগছে কেন?
    কাগজপত্র গুটিয়ে ফাইলে গুছিয়ে রেখে, কম্পু আর সিমুলেটার বন্ধ করে অর্ছিষ্মান আরুল-বীতশোককে ডেকে সব বুঝিয়ে বাড়ীর দিকে রওনা দিলো। কাছাকাছি পৌঁছে দিশার গলার সুরেলা শব্দগুছ ভেসে এলো, সুরযন্ত্র বাজাতে বাজাতে দিশা গাইছিলো,"" সন্ধ্যা হলো সন্ধ্যা হলো/দেখছি চেয়ে প্রথম তারা/সেই যেন চায় আমার চোখে/তার দুখানি নয়নতারা।""
    অর্চিষ্মানেরও খুব প্রিয় এই গান, সে পশ্চিমের আকাশে তাকিয়ে দেখলো সন্ধ্যার তরল অন্ধকারে আকাশে জ্বলজ্বল করছে একটা তারা, সন্ধ্যাতারা, সে জানে ওটা গ্রহ আসলে।
    কলিং বেলে হাত রাখতে গিয়েও রাখলো না অর্চি, নিজের চাবি বের করে প্রায় নি:শব্দে দরজা খুলে ঢুকলো।
    দিশা দোতলায় ব্যালকলিতে মাদুর বিছিয়ে বসেছে, পরণে চন্দনীরঙের শাড়ী, ঘরে চন্দনগন্ধের ধূপ জ্বলছে, দক্ষিণা বাতাসে দিশার চুল উড়ছে। দিশা আকাশের দিকে মুখ, দেখেনি অর্চিকে, অর্চি নি:শব্দে নীচে নেমে এলো, স্নানঘরে, স্নান করে নতুন পোশাক পরে তবেই যাবে ও, সারাদিনের ঘষটানিওলা মানুষ হিসাবে সে দিশার কাছে যেতে চায় না ও।
  • Milli | 131.95.121.127 | ২১ ডিসেম্বর ২০০৬ ২২:৩৭563510
  • প্রতিলিপি(কন্টিনিউড)

    ওর আস্তে আস্তে চেতনা ফিরে এলো,মাথার একপাশে ভোঁতা একটা ব্যথা শুধু, ও কাত হয়, রাস্তার ঢালু ধার বেয়ে গড়াতে গড়াতে এসে পড়ে আছে একটা গুল্মঝাড়ের পায়ের কাছে। ওর গাড়ীটা পাথরে ধাক্কা খেয়ে কিছুটা কাত হয়ে আছে,সামনেটা তুবড়েছে খানিকটা।
    ও সেসব দেখতে পেলো না নীচ থেকে, ও উঠে বসতে গেলো, কিন্তু পারলো না, মাথা ঘুরে ফের পড়ে গেলো। এইবারে চিৎ হয়ে শুয়ে হাতপা ছড়িয়ে উপরের দিকে তাকাতেই সমস্ত ব্যথাবেদনা উধাও হয়ে গেলো। আকাশ জুড়ে এত তারা, যেন ঠেসাঠেসি হয়ে আছে! বড়ো বড়ো উজল তারাদের পিছনে অপেক্ষাকৃত অনুঙ্কÄল তারাদের ভীড়,তারও পরে তারাচূর্ণের মতন ছড়িয়ে আছে আলোর আভা।কী অদ্ভুৎ! ঐ মহাবিশ্ব, ঐ বিশালতা, ঐ আলো অন্ধকার! হাল্কা ক্ষুদ্র সাদা রেশমী রুমালের মতন গ্যালাক্সির প্রলেপ দেখা যায়, অ্যান্ড্রোমিডা! মনে পড়ছে! চারিদিকে কি বিরাট খোলা নির্জন মরু! কি কোমল রাত্রিবাতাস! কোথাও কোনো শব্দ নেই দিগন্ত থেকে দিগন্তে!
    তারার আলোয় চোখ চেয়ে থাকতে থাকতে ঘুমপাড়ানি গানের মতন একটা সুর ভেসে এলো, না কানে নয়, মনের মধ্যে। কোথায় সে শুনেছিলো এই আশ্চর্য বিষন্ন সুর? চোখ বুজে আসে ওর, মনে পড়ে একটা ধানক্ষেত, সবুজ চারাগুলো জলের মধ্যে, লকলক করে নাচছে বর্ষার বাতাসে, মস্ত বড়ো একটা গোল চাঁদের হলুদ আলো ছড়িয়ে আছে স্বপ্নের আলোর মতন, এক কোঁচকানো বাদামী চামড়ার বুড়ীমানুষ ওকে কোলে নিয়ে বারান্দায় হাঁটতে হাঁটতে ঐ গান গাইছেন, শব্দগুলো স্পস্ট হচ্ছে না, শুধু একটা টানা সুরের কাঁপা কাঁপা কিছু তরঙ্গ...
    একবার জোর দখিন বাতাসে উড়ে আসা শব্দের মতন মুহূর্তজন্য শোনা গেলো, ""আয় ঘুম যায় ঘুম"" তারপরেই ফের শুধু হাওয়ায় কাঁপ সুরতরঙ্গ, কথা নেই আর। কোন্‌ গান এটা?কবে কোথায় শুনেছিলো ও?
    ওর কিছুই মনে পড়ে না, চোখ মেলে দেখে আকাশে জ্বলে উঠলো একটা তারা, ফস করে মিলিয়ে গেলো তারপরে। ওটাকে বলে উল্কা, মিটিয়র। সে জানে।
    আবার সেই আয় ঘুম যায় ঘুমের অনতিস্পষ্ট একটা লাইন, তারসঙ্গে "খাট নাই পালং নাই..."বলে একটা কি যেন লাইন আসতে গিয়েও হারিয়ে গেলো। নেশাচ্ছন্নের মতন ঘুমিয়ে পড়লো ও, ঢালের উপরে এলিয়ে রইলো ওর মাথা, জখম হওয়া হাতে কাঁধে কনুইয়ের কাছে আর হাঁটুতে রক্তচিহ্ন ছিলো। কিন্তু সাংঘাতিক কিছু নয়, রক্তপাত বন্ধ হয়ে গেছিলো।
    পুবমুখী ওর ঘুমন্ত মুখে উষার আলো পড়তেই ঘুম ভেঙে গেলো, এবারে ও উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করে সফল হলো, আস্তে আস্তে পা ফেলে ফেলে ও এগোচ্ছিলো। ঐ দূরের সবুজ সবুজ ওগুলো কি? ক্যাকটাস ঝাড়? নাকি কোনো বাগান নাকি ক্ষেত? কোনো গাঁ? বাদামী পাহাড়টি আগে কোথাও দেখেছে কি সে?
    খুব জলতেষ্টা,আহ, জল কোথায় পাবে? হয়তো ঐ বাদামী পাহাড়ের কাছে...
    এইরকম একটা অতি ভোরের হাল্কা একটা ছবি একঝলকের জন্য ভেসে উঠলো মনের মধ্যে,সেদিনও সে ঐ দিকেই যাচ্ছিলো, ক্লান্ত ছিলো কিন্তু ব্যথা ছিলো না এত, সে কবে?
    মনে পড়ে না, সে হাঁটতে থাকে অল্প খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে, আহ, কী জলতেষ্টা! সবুজগুলো আরো স্পষ্ট হচ্ছে, আকাশে এখন অনেক বেশী আলো। পুবের দিকে লাল,সেখান থেকে লাল একটা গোলার মতন সূর্জ উঠবে,সে জানে।
    কুয়োটা দেখা গেলো, চারপাশে গোল করে পাথর দিয়ে ঘেরা, কাছে গিয়ে উঁকি দিয়ে দেখলো কাকচক্ষু জল,অনেক নীচে।ঐ তো পাথরটা, তার পাশে গিয়ে বসে পড়বে ও। কে যেন আসবে,কার যেন আসার কথা?
    মনে পড়ে না, ক্লান্ত ও চুপ করে বসে দেখে পায়ের কাটা থেকে নতুন করে রক্ত বেরুচ্ছে। ও ট্রাউজারের পাশের পকেটে হাত ঢোকায়, কতগুলো টিসুপেপার উঠে আসে, তার একটা নিয়ে চাপা দেয় রক্তবেরুনো ক্ষতটায়। আস্তে আস্তে এলিয়ে শুয়ে পড়ে, আবার ঘুম আসছে।সঙ্গে স্বপ্ন।স্বপ্নের মধ্যে নীল চাঁদ একটা।
    (ক্রমশ:)
  • Milli | 131.95.121.127 | ২৩ ডিসেম্বর ২০০৬ ০৬:৪৩563511
  • প্রতিলিপি(কন্টিনিউড)

    জলের ঝাপটা লাগে ওর মুখে,ঠান্ডা লাগে সেই জলের ছোঁয়া,চোখ মেলে দেখে ঝুঁকে আছে একটি মেয়ে,খয়েরী রঙের খাটো স্কার্ট আর সবুজ রঙের আঁটো পুরোহাতা ব্লাউজ পরা,মাথায় একটা রুমাল বাঁকা করে বাঁধা। মেয়েটা দুহাতের অঞ্জলিতে জল নিয়ে ওর চোখেমুখে দিচ্ছিলো। ওকে চোখ মেলতে দেখে মেয়েটা হাসে,কি যেন বলে। মেয়েটার চোখের তারা দুখানা গভীর কালো,হাসিটা এমন সুন্দর যেন ভোরের আলোর মতন ছড়িয়ে পড়ছে ঠোঁটে গালে চোখে কপালে,ঝলমল করছে চোখ দুটো।আগে ও কোথায় যেন একবার দেখেছিলো একে! কোথায়? কবে?
    কিছুই মনে পড়ে না।
    আস্তে আস্তে ওঠে ও,অজ্ঞান হয়ে গেছিলো? মেয়েটা চোখেমুখে জল দিয়ে জ্ঞান ফিরিয়ে আনলো? মেয়েটার হাতে কলসীভরা জল,সে দিকে ইংগিত করে জল খেতে চায় ও।মেয়েটা জল দেয়,ও জল খায়।আগে এরকম কবে যেন হয়েছিলো?
    ওর কাঁধের আর হাতের শুনিয়ে যাওয়া রক্তচিহ্নের দিকে নির্দেশ করে কি যেন জিজ্ঞেস করে মেয়েটা,ও বুঝতে পারে না।সম্ভবত জখমগুলো কিকরে হলো বা জখম সাংঘাতিক কিনা জানতে চাইছে। কিভাবে উত্তর দেবে বুঝতে না পেরে ও নিজের ভাষাতেই বলে,""কেটে গেছিলো।কেটে গেছিলো। এখন রক্ত বন্ধ হয়ে গেছে।""
    মেয়েটা ওর হাত ধরে টেনে তোলার মতন ভঙ্গী করে কি যেন বলে,অন্য হাত দিয়ে দূরে গাঁয়ের ক্ষেতি আর বাড়ীগুলোর দিকে দেখায়।কি করতে বলছে? ওর সঙ্গে যেতে বলছে?
    ও হাসার চেষ্টা করে মাথা কাত করে বলে,জিগেস করে,""তোমার সঙ্গে যেতে বলছো?""
    মেয়েটা হুড়হুড় করে কিসব বলে হাসে, তারপরেই অল্প চিন্তিত হয়ে আবার কি জিজ্ঞেস করে।হাঁটার ভঙ্গী করে দেখায়,তারপরে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে থাকে।হয়তো জানতে চাইছে হাঁটতে পারবে কিনা এত জখম নিয়ে।
    ও উঠে দাঁড়ায় আস্তে আস্তে সাবধানে।হাসে,বলে,""পারবো হাঁটতে।চলো তোমার বাড়ীতে নিয়ে চলো।খুব খিদে পেয়েছে,বাড়ীতে নিয়ে খেতে দেবে তো?""
    মেয়েটা ঝকঝকে হাসে,কলসী টলসী বাঁ কাখে নিয়ে অসংকোচে ডান হাতে ওর বাঁ হাতখানা ধরে,আসতে হাসতে হুড় হুড় করে কত্তকিছু বলতে বলতে চলতে থাকে ওর বাড়ীর দিকে।

  • Rana | 81.62.109.141 | ২৫ ডিসেম্বর ২০০৬ ১৮:১২563512
  • তাপ্পর ? তাপ্পর?

    দারুন লাগছে !
  • Milli | 131.95.121.127 | ২৫ ডিসেম্বর ২০০৬ ২৩:৪১563514
  • রানা,
    ধন্যবাদ।কেউ পড়ছে জানলে লেখার এন্থু আসে।
    এখন কদিন লেখা হবে না,ভগবান করলে পরে আবার।
    ভালো থাকবেন,আসি।
  • Milli | 131.95.121.129 | ১৯ জানুয়ারি ২০০৭ ২৩:৫৬563515
  • দিশা অর্চিষ্মান কদিন ছুটি নিয়ে বেড়াতে চলে গেছে এমন একজায়গায় যেখানে পাহাড় এসে সমুদ্রের আয়নায় মুখ দেখছে।
    দিশা আর অর্চির মধ্যে কথোপকথন শুরু হয়েছিলো সেদিন সন্ধ্যায় চা-সিঙারা খেতে খেতে।গানের পরেই দিশা উঠে গিয়ে গড়ে রাখা সিঙারাগুলো ভেজে চা করে নিয়ে এসেছিলো।এত ভালো জিনিস আগে অর্চিষ্মান কোনোদিন খায় নি, খেয়ে সে দিওয়ানা হয়ে গিয়ে কথা কইতে শুরু করেছিলো অনেক।এমনিতে অর্চিষ্মান মিতভাষী, কিন্তু সেদিন সন্ধ্যাবেলা প্রগলভ হয়ে গেছিলো।
    কথা চলতে চলতে ভ্রমণের কথা উঠলো,তারপরেই সেই চেনা প্রশ্ন অর্চির-
    দিশা, তুমি কি ভালোবাসো? সমুদ্র না পাহাড়?
    দিশা হেসে ফেলে,বলে, শতকরা নব্বইজন এইরকম জানতে চায়,তুমিও চাইছো?
    অর্চিষ্মান অল্প অপ্রস্তুত হয়,তারপরে সামলে নিয়ে হেসে বলে,""দেখা যাচ্ছে আমিও নব্বইয়ের দলেই,সংখ্যালঘুর দলে নই।বলো না দিশা,পাহাড় না সমুদ্র?কোনটা ভালোবাসো? আমি সিরিয়াস কিন্তু।""
    ""দুটোই অর্চি।এমন কোনো জায়্‌গায় যেতে ইচ্ছে করে যেখানে পাহাড় এসে সমুদ্র ঝুঁকে পড়েছে।জানো এমন জায়্‌গা?ভীড় নেই কোলাহল নেই,শুধু সমুদ্রবেলা নারিকেলবাগান আর নালসবুজ পহাড়ের সারি।"" দূরের আকাশের দিকে চেয়ে স্বপ্নাচ্ছন্নের মতন বলছিলো দিশা,কিন্তু বলা শেষ করেই তাড়াতাড়ি সম্বিৎ ফিরে পেয়ে হাসে,বলে,""দিবাস্বপ্ন দেখছিলাম অর্চি। এসব আসলে কল্পনাতেই সত্য আর সুন্দর। বাস্তবের দুনিয়ায় এদের চাইলে হয় না,জোর করে চাইতে গেলে সব ভেঙে যায়।""
    অর্চিষ্মান কিন্তু অবাক হয়ে দিশাকে দেখছিলো,আস্তে আস্তে আস্তে বললো,""বেড়াতে যাবে দিশা? কতদিন ছুটি নিই নি।ছুটি নিয়ে তুমি আমি চলো কোথাও বেড়িয়ে আসি।আগে থেকে ঠিক করা কোনো জায়্‌গায় না,এমনি এমনি বেরিয়ে পড়ি চলো,যেখানে গিয়ে পৌঁছই।যাবে?""
    দিশা গলা ছেড়ে হেসে বলেছিলো,""এখনো সেইরকমই পাগল আছো অর্চি তুমি।একদম সেই কলেজের দিনগুলোর মতন।""
    কিন্তু অর্চিষ্মান সিরিয়াস ছিলো,তলে তলে সব ঠিক করে দিশাকে নিয়ে বেড়াতে এসেছে পাহাড়সমুদ্রের মিলনস্থলের প্রায়নির্জন এক অঞ্চলে।
  • Milli | 131.95.121.129 | ২৩ জানুয়ারি ২০০৭ ২২:৪৩563516
  • মরুভূমির মাঝখানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জল-উৎস ঘিরে গড়ে ওঠা জনপদ,শক্ত কন্টকগুল্মের ঝাড়, খেজুরকুঞ্জ, জোয়ার বাজরা রাগি ফসলের সবুজ ক্ষেত, মরুর ফলবাগান,তাকে ঘিরে কোথাও কোথাও পাথরের বেড়া,পাথরের পাশে পাথর সাজিয়ে একটা সীমানা দেখানো আরকি আর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাথুরে কুটির।এই নিয়েই ক্ষুদ্র জনপদখানি বাদামী পাহাড়ের কোল ঘেঁষে।
    মেয়েটা ওর হাত ধরে নিজের ঘরের দিকে নিয়ে যায়,বিশ্লথ পায়ে স্বপ্নগতের মতন চলে ও।কিন্তু ওর ভালো লাগছিলো।ক্লান্তি,পথদুর্ঘটনাজনিত বেদনা,স্মৃতিহীনতার অস্বস্তি সত্বেও ওর ভালো লাগছিলো এই হৃদয়বতী মরুকন্যার সঙ্গে চলতে। মনে হচ্ছিলো কোথায় কেমন করে যেন এই অল্পচেনা মেয়েটির সঙ্গে জীবনের সুতো জড়িয়ে আছে ওর।
    পাথুরে বেড়ায় ঘেরা একটুকরো সব্জিবাগানের মাঝে ছোট্টো কুটিরখানি,পাথরের বেড়া আর শুকনো খড়পাতা ছাউনি,আনততলের মতন ছাউনি,সুন্দর লাগে দেখতে।সামনের একটা ছোট্টো পরিপাটী দাওয়া।সেখানে
    চাটাই বিছিয়ে ওকে বসতে দিলো মেয়েটা,কালো পাথরের মসৃন থালায় এনে দিলো একরকম খাবার,পাথরের গেলাসে এনে দিলো জল।
    তারপরে পাশে বসে ওর দিকে চেয়ে হেসে কি বললো,হয়তো ওকে খেতে বলছে। ও কি করবে ভেবে পেলো না।মেয়েটা আকারে ইঙ্গিতে বোঝাবার চেষ্টা করছে যে ওকে এসব খেতে হবে,জল খেতে হবে।ও ইত্‌স্‌তত করে,ওর খেতে ইচ্ছে করছে না এখন,যদিও খিদে আছে।এতটা হেঁটে পায়ের হাতের জখমের জায়গাগুলো নতুন করে বেশী ব্যথা করছে।হয়তো মেয়েটা কিছু অনুমান করলো ওর ম্রিয়মান মুখ দেখে,হঠাৎ উঠে দৌড়ে গিয়ে নিয়ে এলো কিছু ভেষজ,একপাত্র জল আর কিছু পরিষ্কার কাপড়।ওর আহত জায়গাগুলো জলেভেজা কাপড়ে ভালো করে মুছে মুছে ভেষজ দাঁতে থেঁতো করে দিয়ে দিতে লাগলো ক্ষতগুলোতে।পরিষ্কার শুকনো কাপড়ের খন্ড দিয়ে বেঁধেও দিতে লাগলো।অতি ভালো ওষুধ,দেবার কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যথা কমার আর সঙ্গে আরামের অনুভূতি ছড়িয়ে পড়তে লাগলো ওর মস্তিষ্কে।ও চুপ করে গ্রহণ করলো পরিচর্যা,হয়ে গেলে নত হয়ে থ্যাংকস দিলো মেয়েটিকে।মেয়েটা হাসছিলো,উজল চোখ মেলে ওর দিকে তাকিয়ে কি যেন জিজ্ঞেস করলো,ও কিছু বুঝলো না।মেয়েটা হাল ছাড়লো না,নিজের হাত নিজের হৃদপিন্ডের উপরে নিয়ে বললো "তিহা তিহা তিহা",তারপরে জিজ্ঞাসু চোখ মেলে নিজের ভাষায় জিগালো,""তুমি? তুমি? তুমি?""
    ওর আরামে ঘুম চলে আসছিলো,কি নাম ছিলো ওর? মনে পড়ে না,মনে পড়ে না।
    মিষ্টি খাবারের খন্ড তিহা ওর মুখে তুলে দিতে দিতে হেসে নিজের ভাষায় বললো,""আমি তোমার নাম দিলাম তিশান।তিশান, তিশান,তিশান।""
    ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসছিলো ওর,ও হাসলো,কি সুন্দর নাম,তিশান!!!!
    পুরানো স্মৃতির কি দরকার,এইখানে,এই মরুজনপদে,এই মরুকন্যা তিহার ঘরে নবজন্ম হয়েছে তিশানের।একটা বহুকালরুদ্ধ শান্তির নি:শ্বাস ফেলে তিশান চোখ বন্ধ করে।তলিয়ে যায় নিশ্চিন্ত নিরুপদ্রব নিদ্রায়।

  • Rana | 212.158.75.199 | ২৪ জানুয়ারি ২০০৭ ১৫:৪৪563517
  • গল্প টা বেশ ভালো লাগছে। এটা কি আপনার নিজের লেখা ?
  • Milli | 131.95.121.129 | ২৪ জানুয়ারি ২০০৭ ১৯:২১563518
  • আপনার কি মনে হয়,রানা?
    :-))))

  • Milli | 131.95.121.129 | ২৬ জানুয়ারি ২০০৭ ০১:২৩563519
  • এখানের সমুদ্রবেলায় লোকজনের ভীড় নেই,সূর্যস্নানের জন্য লোকে ছাতার নীচে মাথা দিয়ে উন্মুক্ত দেহে পড়েও নেই।সমুদ্রতীরে শুভ্র বালুকনা ঝকমক করে,একটু দূরে নারিকেল বীথি, ঝাউগাছের দল আর কাজু গাছের মতন একরকম গাছের বন।এখানে সত্যি সত্যি খুব ভালো করে ছুটি উপভোগ করছে অর্চিষ্মান আর দিশা।সকালে উঠে চলে আসে,নারিকেল বীথির মধ্যে বালির উপরে মাদুর টাদুর বিছিয়ে বসে বসে সমুদ্রশোভা দেখে,সঙ্গে করে নিয়ে আসে খাবারবাদার আর ফ্লাস্কে গরম চা,জলের বোতলে জল।খেয়েদেয়ে দুজনে ছেলেমানুষের মতন সমুদ্রতীরে ঝিনুক টিনুক কুড়িয়ে বেড়ায়,ঢেউ এসে পা ভিজিয়ে দিলে দৌড়ে তফাতে হটে আসে আর প্রাণ খুলে হাসে।এখন ওদের নিত্য পিকনিক। কখনো দুপুরবেলা ছাতা মাথায় দুজনে চলে সমুদ্রকিনারের পাহাড়টির দিকে,উপর থেকে নীল সমুদ্রটা অনেকটা পর্জন্ত দেখা যায়,দিগন্তলীন লবনাম্বুরাশি,তীরে যেমন ঢেউয়ে ফেনায় মাখামাখি,এত উপর থেকে সেসব নেই হয়ে যায়, শুধু জেগে থাকে বিশাল নীল এক পারাপারহীন তরল রাত্রি,সর্বদা আন্দোলিত কিন্তু কিন্তু তাও চিরস্থির, প্রশান্ত।
    ওরা কাছের ছোট্টো শহরের সরাইখানায় একটু জায়্‌গা নিয়েছে। খুবই ছোট্টো একটি পারিবারিক সরাইখানা,সরাইমালিকের পরিবারের লোকেরা নিজেরাই রান্নাবান্না করে অতিথিদের খাওয়ায়। বাগানের লাগোয়া দোতলার ব্যালকনিসমেত একটি ঘর ভাড়া নিয়েছে অর্চিষ্মান আর দিশা,ব্যালকনিতে দাঁড়ালে বা জানালার পর্দা সরালেই দেখা যায় দূরে নীলপাহাড়।ওরা সকালে উঠেই রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ে,ফেরে সন্ধ্যেবেলা ডিনারের সময়।কোনো কোনোদিন লাঞ্চ খেতে দুপুরে ফেরে,যেদিন কিনা সরাইয়ের মালকিন বলে দেন উনি স্পেশাল সী ফুডের প্রিপারেশান করবেন। এই ক্ষুদ্র সরাইয়ের সরল মানুষগুলির সস্নেহ আন্তরিকতা স্পর্শ করে ওদের তরুণ হৃদয়।
    এবারে ওদের আউটডোরেই কাটছে দিনরাত্রের বেশীরভাগ সময়।অবশ্য তাইই ওরা চেয়েছিলো।
  • Milli | 131.95.121.129 | ২৬ জানুয়ারি ২০০৭ ০৭:০৬563520
  • প্রায় সারাদিন ঘুমিয়ে বিকেলবেলা ঝরঝরে হয়ে উঠলো তিশান,স্নানটান সেরে তিহার করা গরম খাবার খেয়ে তাজা হলো আরো।
    চাঁদের আলোয় সেদিন গ্রামের মাঝে নাচের আসর বসেছিলো,উপজাতির গ্রুপ নাচ, তবে সবাই অংশ নেয় না,একদল ট্রেইন্ড লোকই মুখ হাতে পিঠে গলায় গাঢ় উজল রঙের নক্সা করে বিশেষ ধরনের ঝালর ঝোলর পোশাক পরে তবে নাচতে নামে।
    তিহা তিশান আজ সন্ধ্যায় সেখানে। নাচের আসর শুরু হওয়ার আগে গাঁওবুড়োদের কাছে তিহা জানিয়েছে তিশানের কথা,তাকে সে সঙ্গী হিসাবে গ্রহণ করতে চায় এইকথাও। হয়তো তিহার বিশেষ মর্যাদা আছে গাঁয়ে এই প্রকৃতিনির্ভর উপজাতির মধ্যে,হয়তো সে সর্দারবংশের কন্যা বা হয়তো বিশেষ কোনো স্কিল দিয়ে সে জাতির সেবা করে যা কিনা আর বেশী লোক জানেনা। তাই খুব সহজেই তিহার প্রস্তাব গৃহীত হয়।সত্যি বলতে কি,তিহা যখন কথা বলছিলো গাঁওবুড়াদের সঙ্গে, তখন তিশানের কেমন শীত শীত লাগছিলো,ও এখানে বাইরের লোক,যদি এনারা গ্রহণ না করেন? না করারই বেশী সম্ভাবনা।এদের ভাবলেশশূন্য কুঞ্চিত মুখ আর ক্ষুদ্র চোখ থেকে মনের কথা প্রায় কিছুই অনুমান করা যায় না।এদিকে তিশান এদের ভাষার বিন্দুবিসর্গ বোঝে না।
    অবশেষে তিহা যখন হাসিমুখে তিশানের দিকে ফিরে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলো যে সে গৃহীত হয়েছে,তখন অবরুদ্ধ শ্বাস মুক্ত করে দিয়ে গাঁওবুড়াদের মস্ত একটা বাও করে দর্শকাসনে গিয়ে বসে পড়লো তিশান।এতটাই হাল্কা লাগছিলো যে তিহাকে ধন্যবাদ দেবার কথাও খেয়াল ছিলো না।
    নৃত্য আরম্ভ হলো,তিহা একরকম সুস্বাদু পানীয় এনে ওকে দিয়ে নিজেও ওর পাশে বসে আস্তে আস্তে চুমুক দিয়ে খেতে লাগলো।তিশান চুমুক দিয়ে টক ঝাল মিঠে ঝাঁজ মেলানো মেশানো অভূতপূর্ব স্বাদ পেলো,পান করতে করতে মিঠে রকমের নেশা হচ্ছিলো।
    নাচ লক্ষ্য করে তিশান বুঝলো এ নিছক বিনোদনের নাচ নয়,তার চেয়ে অনেক গভীর ও ব্যাপ্ত ব্যাপার।নাচতে নাচতে এরা গোল হয়ে ঘুরছে,নুয়ে পড়ছে,ছন্দ তাল মেলানো নিঁখুত নৃত্য,সঙ্গে অজানা ভাষার অজানা সুরের সম্মোহনী গান আর অপূর্ব বাজনা।হঠাৎ তিশান অনুভব করলো এরা যারা দর্শকাসনে বসে আছেন,তারাও আবিষ্টের মতন,মনের দ্বারা যেন সংযুক্ত হচ্ছেন নৃত্যশীল দেহমনগুলির সঙ্গে।যেন নাচ নয়,একধরনের পূজা, সম্মিলিত আত্মনিবেদন।একটা শক্তিশালী তরঙ্গের মতন কিছু তিশানকে স্পর্শ করে যাচ্ছিলো, কিছু বোঝার আগেই সে একটা অন্য জগতের মধ্যে তলিয়ে গেলো।

  • Milli | 131.95.121.129 | ২৮ জানুয়ারি ২০০৭ ০০:৫১563521
  • উল্কাবৃষ্টি হবার কথা রাতে,সেই শুনে দিশা অর্চিষ্মান সারা রাত আকাশের নীচে কাটাবে বলে সন্ধ্যেবেলা খেয়ে দেয়ে ঠিকমতন পোষাকপত্তর পরে রেডি হলো। মাদুর, টর্চ, রেডিও, ফ্লাস্কে চা,কিছু কাগজের কাপপ্লেট, ঠোঙায় চানাচুর, প্লাস্টিকের বাক্সে প্যাটিস, সামোসা, সসের প্যাকেট ইত্যাদি সাজসরঞ্জাম নিয়ে বেরোলো। ওদের আতিথ্যদানকারী সরাইয়ের মালিক-মালকিন ওদের আইডিয়াতে চমৎকৃত হয়ে নিজেরাও একদিন ঐভাবে হোল নাইট প্রোগ্রাম করবেন বলে বলে ফেল্লেন। ওনারা ভেবেছেন যে এরা নিগ্‌ঘাত হানিমুনে এসেছে। নইলে এমন ছেলেমানুষী করে নাকি কেউ এমনি বেড়াতে এলে?
    দিশাকে ভদ্রমহিলা জিগ্গেসও করেছেন ঠারে ঠোরে,দিশা ঠোঁট ছড়িয়ে হেসেছে খালি।ওতেই ভদ্রমহিলা এত সন্তুষ্ট হয়েছেন যে স্পেশাল একটা কি ঝালনিমকি তৈরী করে ওদের সঙ্গে দিয়ে দিয়েছেন রাত্রিব্যাপী পিকনিকে যাতে খেতে পারে কোনোসময়।
    দিশার সত্যি সত্যিই কিন্তু হানিমুনের কথা মনে হচ্ছিলো,ওর সত্যি হানিমুনটা এত ভয়ানক দু:স্বপ্নের মতন যে ওটা ঘটেছিলো কখনো এটা সে মন থেকে মুছে ফেলতে চায়।অর্চির ব্যাপারে তাই সে ওদের ল্যাব কমপ্লেক্সেও কাউকে কিছু জিগ্গেস করেনি,অর্চিষ্মান কি কোথাও গেছিলো না ওখানেই ছিলো-এইধরনের কোনো প্রশ্নই দিশা কাউকে করেনি।হয়তো ছিলো,হয়তো নয়।কি হবে সত্য জেনে? যে সত্য মিছিমিছি দু:খ দেবে তা জেনে লাভ কি?
    অবিকল অর্চির মতন দেহমন দিশার সেই দু:খী ক্ষণসঙ্গী হয়তো এই অর্চি নয়,তাতে কি এলো গেলো? সে যদি এ নাও হয়,দিশা তো তাকে এই অর্চিষ্মান হিসাবেই নিয়েছিলো!
    নারিকেলবীথি যেখানে সমুদ্রতীরের সাদা বালুবেলার সঙ্গে মিশে গেছে সেইখানে ফাঁকা দেখে জায়গা বেছে অর্চি মাদুর বিছিয়ে ফেলে হুড়হুড় করে সব জিনিসপত্র মাদুরে ফেলে ঝাড়া হাতপা হয়ে একটু দৌড় দিয়ে আসতে গেলো সমুদ্রের কাছ থেকে,শুকনো বালি থেকে ভেজা বালির দিকে যেতে যেতে ওর জুতোর ছাপ পড়ছিলো ক্রমশ বেশী বেশী গভীর হয়ে। ওর ভারী খারাপ লাগলো, জুতো যেন প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখছে ওকে,ফিরে এলো ও মাদুরের কাছে।জুতোমোজা খুলে রেখে এবারে খালিপায়ে দৌড়োতে দৌড়োতে সর্বাঙ্গে আনন্দের শিরশিরানি অনুভব করছিলো।
    দিশা এলোমেলো ভাবে ফেলা জিনিসপত্রগুলো গোছাতে গোছাতে বলছিলো ""পাগল!এক্কেবারে পাগল!" দূর থেকে অর্চির ডাক এলো,"দিশা-আ-আ-আ,এসো,এসো।"
    দিশাও জুতোটুতো খুলে রেখে শুকনো বালি পার হয়ে তরঙ্গধৌত ভেজাবালির উপর দিয়ে পরিচ্ছন্ন সুন্দর পদচিহ্ন রাখতে রাখতে দৌড়ে গেলো অর্চির কাছে,জলসীমায় পৌঁছে দুজনে ফিরে তাকালো পাহাড়ের দিকে,ঠিক তক্ষুণি পাহাড়ের শীর্ষের কাছে সবুজ আভা তুলে আকাশের কালো গায়ে উল্কা জ্বলে উঠলো।

  • Milli | 131.95.121.129 | ২৮ জানুয়ারি ২০০৭ ২৩:১৮563522
  • প্রথম উল্কা দেখার আনন্দে হাই ফাইভ করে দুজনে হাতে হাত জড়িয়ে ফিরে এলো মাদুরে। রেডিও অন করে দিলো,এফ এমে অনুষ্ঠান চলছিলো এই উল্কা দেখা নিয়েই,লোকে ফোনও করছিলো,জানাচ্ছিলো কে কোথায় কিরকম দেখছেন।
    দিশা অর্চি নিজেদের সেল অফ করে রাখলো,একটা দুটো করে উল্কা জ্বলে জ্বলে উঠে নিভে যায়,আকাশভরা তারা যেন ঝমঝম করছে,দূরে সমুদ্রতরঙ্গশীর্ষে অদ্ভুত আলো জ্বলজ্বল করছে।
    ""আচ্চা অর্চি,সমুদ্রে যেসব জীব থাকে,সেইসব জীবেরা আকাশটাকে,ঐ তারাদের ঠিক কেমন ভাবে দ্যাখে বলো তো? এই উল্কাজ্বলা ওরা কিভাবে দ্যাখে?আদৌ ওরা কি জ্যোতিষ্ক ইত্যাদি দেখতে পায়?""
    ""ওরা আরো ভালো দ্যাখে।সারফেসের কাছে কাছে যারা থাকে,তারা দিব্যি দেখতে পায়,পুরো একশো আশি ডিগ্রী না বটে,কিন্তু অনেকটাই।জলের মধ্য দিয়ে আলো চলতে পারে দিব্যি।তুমি তো জানোই।জলের ভিতর মার্বেল ফেলে দ্যাখো নি? আরে আমরাও তো বাতাসের সমুদ্রের মধ্যে ডুবে আছি,আমাদের কাছেও তারার আলো তো রিফ্র্যাকটেড হয়েই আসে।মহাসমুদ্রের জীবেদের কাছে আকাশ দ্যাখা আমাদের তুলনায় সুবিধাজনক,কোনো গাছটাছের বা পাহাড়ের বাধা নেই,শহরের ধোঁয়া নেই,লাইট পলুশন নেই...অবশ্য আমরা নিজেরা জাহাজ টাহাজ ওশেন লাইনার টাইনার পাঠিয়ে কিছুটা দূষিত করে দিয়েছি...""
    ""একবার জলচর জীব হয়ে দেখতে ইচ্ছে করে অর্চি,কেমন লাগে দুনিয়াটা..."
    দিশার মুখ আকাশসমুদ্রের দূর মিলনস্থলের দিকে,দুচোখে স্বপ্নলীন দৃষ্টি।
    অর্চির মুখকানগলাহাত সহসা অস্থির হয়ে ওঠে,ও দুইহাতের কাপে দিশার মুখ ধরে নিজের ঠোঁট দিশার ঠোঁটের দিকে নামিয়ে আনে....
    তারপরের আধাঘন্টা অদ্ভুত ঝড়ের মতন,দুজনের স্মৃতিতেই সময়ের পারম্পর্য্য হারিয়ে যায়,সময়হীন স্বপ্নলোকে চিরন্তন দয়িত-দয়িতার মতন অন্তহীন মিলনে মিলে যেতে যেতে ওদের বাকশ্রুতিময় পার্থিব অনুভূতি অন্যলোকে চলে যায়,ওদের চারধারে বালিতে ছড়িয়ে থাকে ওদের সমস্ত পরিত্যক্ত বসন,ওদের মাথার উপরে সমগ্র আকাশ জুড়ে তখন দ্যুলোকের অগ্নিক্রীড়ার মতন তখন শত শত উল্কা জ্বলে জ্বলে জ্বলে জ্বলে উঠছে নিমেষ নিমেষ জুড়ে।অজস্র অজস্র উল্কা,কখনো সবুজ আলোর দ্যুতি,কখনো কমলা আলো,কখনো লাল আলো।উপরে কোথায় যেন উৎসব,সেখানে ফুলঝুরি, চর্কিবাজি, তুবড়ি জ্বালিয়ে কারা উৎসব করছে।এই জ্বলানেভার আলোকোৎসবের উপরে জেগে থাকে চিরন্তন তারারা, স্নেহকোমল আলোর দৃষ্টি মেলে।
  • Milli | 131.95.121.129 | ২৯ জানুয়ারি ২০০৭ ০৮:০১563523
  • সেই রাত্রি তিহা আর তিশানেরও বিশেষ রাত্রি।বাদামী পাহাড়ের চূড়ার কাছে একটি গুহা আছে,সেই গুহার সম্মুখে একটি উন্মুক্ত চাতাল,সেই চাতালে ওরা ওদের বাসর রাত্রি কাটাচ্ছিলো।
    সেদিন বিকালে বৃদ্ধ জ্ঞানী জ্যোতিষী ও ভিষক কিন্মল আগুনের ধুনির সামনে সমাজবৃদ্ধদের আশীর্বাদ নিয়ে এবং জ্যোতিষগণনার শুভলগ্ন মিলিয়ে তিহা ও তিশানের বিবাহ দিয়েছেন।অগ্নিপূত মন্ত্রশলাকা তন্তুতে গেঁথে ঝুলিয়ে দিয়েছেন ওদের দুজনের গলায়,দুজনের হাতে এঁকে দিয়েছেন উল্কি,কপালে দিয়েছেন ভেষজ ও ভস্মের মিশ্রণের ফোঁটা,দুজনের প্রত্যেক হাতের মণিবন্ধে বেঁধে দিয়েছেন শুষ্ক একজাতীয় বিশেষ লতা।
    তারপরে সকলে প্রীতিভোজে আপ্যায়িত হয়েছে,স্তিমিত আগুন ঘিরে বসে অন্যেরা যখন গল্প করছে,তখন তিশান আর তিহাকে বিদায় নিয়ে চলে আসতে হয়েছে পর্বতের গুহার কাছে,উপজাতির নিয়ম অনুযায়ী ওদের তিনদিন ও তিনরাত্রি বাস করতে হবে ওখানে।গুহার কাছটিতেই একটি ক্ষীণ জলধারা আছে,সেখান থেকে ওরা জলপান করতে পারবে আর সামান্য আহার করবে সঙ্গে নিয়ে আসা শুষ্ক ফলমূলাদি থেকে। এই তিনদিন ওদের ওখানে কাটাতে হবে আকাশের কাছাকাছি,উপজাতির বিশ্বাস অনুযায়ী নবদম্পতি কেবল এইভাবেই আকাশস্থ পূর্বজদের আশীর্বাদ পেতে পারে।
    এরা বিশ্বাস করে,বহু বহুকাল পূর্বে একদিন আকাশ থেকেই এদের আদিপিতা ও মাতা নেমে এসে মরুমধ্যস্থ দেশটুকুতে এই মানুষদের সৃষ্টি করেছিলেন।যখন সকলেই আত্মনির্ভর হয়ে ওঠে,তখন ওনারা নিজের স্থানে ফিরে যান,কিন্তু আজও যখন সৃষ্টির অমোঘ নিয়মে নরনারীর বিবাহ হয়,তখন তারা আশীর্বাদ করতে আসেন,তাদের আশীর্বাদ অনূভূত না হলে নরনারীর মিলন নিষেধ।

  • Milli | 131.95.121.129 | ৩১ জানুয়ারি ২০০৭ ০০:৪৫563525
  • সন্ধ্যা থেকেই নবোঢ়া তিহা শান্ত হয়ে চোখ বন্ধ করে প্রার্থনার ভঙ্গীতে বসে ছিলো চাতালে,নি:শব্দে ওর ঠোঁট নড়ছিলো, হয়তো কোনো মন্ত্র বলছিলো।তিশান পাশে বসেছিলো,কিন্তু ও তো তিহার ভাষা তেমন জানেনা ভাসা-ভাসা কিছু কাজ চালাবার মতন নামশব্দ আর ক্রিয়াপদ ছাড়া,তাই মন্ত্র বা প্রার্থনা কিছুই না করে ও শুধু চুপ করে বসে তিহার মুখের দিকে চেয়ে ছিলো।
    পশ্চিম আকাশের কমলা আলোয় মানুষের সন্ধ্যাবেলার মুখ এত মায়াবতী লাগে! নাকি তিহার মুখই শুধু এত মায়াকাড়া! আগে তো ঠিক এরকমটি মনে হয় নি!
    লোহিত সন্ধ্যারাগ ক্রমে মিলিয়ে গেলো,তারার আলোয় তাপসীর মতন সমাহিত মুখ তিহার।বন্ধ চোখের পাতা একসময় কেঁপে ওঠে,চোখ মেলে তিশানের দিকে তাকিয়ে তিহা অল্প হাসে,ইঙ্গিতে ওকে চোখ বুজে মন সঁহত করতে বলে।
    চোখ বুজতেই তিশানের মনে পড়ে সেই নৃত্যানুষ্ঠানের রাত্রির কথা,সেই রাতেই এই উপজাতির একজন হয়ে গেছিলো তিশান। কি যেন হয়েছিলো সেই রাত্রে,অদ্ভুত কিছু স্বপ্ন,অদ্ভুত কিছু ভাবানায় অর্ধচেতন তিশান ফিরে গিয়েছিলো বহু বহু জন্ম আগের কোনো উপকথায়,কী আশ্চর্য,সেখানেও ছিলো বাদামী রঙের একটা পাহাড়,কিন্তু সে এই জায়গা নয়,অন্য কোনো জায়গা,সেখানের গাছপালা পশুপক্ষী সব অন্যরকম,সেখানে একটি নদী ছিলো,সেই নদীতীরে তিশান বসে থাকতো যেন কার অপেক্ষায়,একটি বিরাট সোনালী পাখী ওকে নিয়ে গেছিলো যেন কোথায়....
    ঐ রাত্রির পর থেকে তিশানের আর স্মৃতিহীনতার অস্বস্তি ছিলো না,সে যেন প্রসারিত দীর্ঘ ড্রীমটাইমের মধ্যে ঢুকে পড়েছিলো,যেখানে নিকট অতীত আর দূর অতীত,ইহজন্ম পরজন্ম সব অদ্ভুতভাবে একটা বিরাট নক্সায় সুষমভাবে বুনে দেওয়া হয়েছে।
    ঐ রাত্রিতে অর্ধচেতন ওকে বাড়ীতে হয়তো বয়ে এনেছিলো তিহা অন্যদের সাহায্য নিয়ে,পরদিন সকালে জেগে উঠেছিলো অন্য তিশান, যার মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দমেশানো অন্যজীবনের ছেঁড়া টুকরো উঁকি দিয়ে যেতো জাগিয়ে যেতো তীব্র বেদনা,সেই তিশান নয়।এক নতুন তিশান,অনেক অনেক বেশী শক্তিশালী,অনেক অনেক বেশী আত্মস্থ,অনেক বেশী জীবনীশক্তিসম্পন্ন। সেদিন থেকেই তিশান তিহার কাছে ভাষা শিখতে থাকে,ওদের পোশাক পরিধান করে আর আস্তে আস্তে সকলের সঙ্গে পরিচিত হতে থাকে।ও বুঝতে পেরেছিলো এই উপজাতির মানুষেরা ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের চেয়ে সমষ্টিগত জীবনের ভালোমন্দকে অনেক বেশী মূল্য দেয়।

  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে প্রতিক্রিয়া দিন