এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • At the abode of the Cloud Warriors

    Demba Ba
    অন্যান্য | ২৯ অক্টোবর ২০১২ | ৫৬১৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Demba Ba | 131.241.218.132 | ৩১ অক্টোবর ২০১২ ১২:২৯577661
  • ইনিও রেশিখোলার বাসিন্দা -

  • Demba Ba | 131.241.218.132 | ৩১ অক্টোবর ২০১২ ১৩:৪২577662
  • মঙ্গলবার, ২৩শে অক্টোবর ২০১২ - জুলুকের পথে
    ==============================

    অবশেষে ২৩ তারিখ। যে জায়গাটার ছবি ইন্ডিয়ামাইকে দেখে ফিদা হয়ে গেসলাম, যে জায়গাটায় যাবো বলে সেই মে মাস থেকে হা পিত্যেশ করে বসে আছি, সেখানে যাবো।

    পেডং থেকেই শুরু ওল্ড সিল্ক রুটের - যেটা একসময় তিব্বতী লাসার সঙ্গে ভারতকে জুড়তো জেলেপ লা-র মধ্যে দিয়ে - আপাতত যেটা পূর্ব সিকিম, টুরিস্টদের কাছে আপেক্ষিকভাবে একটা নতুন জায়গা - খুব বেশিদিন নয় এই পথটা টুরিস্টদের জন্যে খোলা হয়েছে। গোটা পথে কাতারে কাতারে মিলিটারি, প্রায় প্রতিটা গ্রামে মিলিটারি ছাউনি। এরই মধ্যে ৯৫০০ ফুট ওপরে ছোট্ট গ্রাম জুলুক - যেখানে রয়েছে "ক্লাউড ওয়ারিয়র"-দের base - একটা ট্রানজিট ক্যাম্প। বর্ডার অঞ্চলে যে সৈন্যরা যায় তারা এখানে কয়েকদিন থাকে, acclimatisation-এর জন্যে। রোজ ছয় কিলোমিটার ওপরে ওঠায়, ট্রেনিং করায় - যারা সুস্থ থাকে তাদের বর্ডার পোস্টে পাঠানো হয়।



    (কার্টেসী - ইন্ডিয়ামাইকের এই ব্লগ - http://tinyurl.com/924qrlk)
  • Demba Ba | 131.241.218.132 | ৩১ অক্টোবর ২০১২ ১৪:০১577663
  • এই পথে শুধু তখনই যাবেন যখন মনে হবে যে হোটেল/রিসর্ট/ফুডকোর্ট/মল ইত্যাদির বাইরে অনেক দূরে শুধুমাত্র খুব বেসিক থাকা-খাওয়াতেও এই জায়গাটার সৌন্দর্য শুষে নিতে পারবেন আপনি...যদিও দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই পথেও আজকাল কিছু টুরিস্টের ভিড় হয় যারা ওখানে পৌঁছে ছোটখাটো ঘর বা সাধারণ চালের ভাত-ডাল-ডিমের ঝোল দিয়ে খাওয়া বা রুম-কমফর্টের অভাব নিয়ে অভিযোগ করে। হোম-স্টে-টাও অনেকটা ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হয়ে গেছে - সেলারিতে যেরকম টুরিস্টের ভিড় দেখেছিলাম, সেরকম লোকজন ইদানিং জুলুকেও যায়। টুরিস্ট আসা জুলুকের পক্ষে খারাপ না হলেও এই ধরণের টুরিস্টের ভিড় মনে হয় না খুব একটা ভালো। জুলুককে ভালো লাগাতে গেলে শুধু হিমালয়কে ভালোবেসে যেতে হবে। মনে রাখবেন জুলুক দার্জিলিং বা গ্যাংটক নয়, কখনো চাইবোও না জুলুক সেরকম হয়ে যাক। জুলুক যেমন আছে তেমনই থাকুক - পাহাড়ের গায়ে ছোট্ট একটা গ্রাম - সরু রাস্তা ঘুরে ঘুরে উঠে গেছে - যেখানে গায়ের ওপর দিয়ে মেঘ চলে যায়, আরো ওপরে উঠলে মেঘের ওপর উঠে যাওয়া যায়...শুধু চোখ বন্ধ করবেন আর ভেসে উঠবে হাজার বছর পুরনো ছবি - লাইন দিয়ে অনেক লোক ফার বা পুশতিনের কোট গায়ে চাপিয়ে হয়তো ব্যাক্ট্রিয়ান ক্যামেলের পিঠে বোঝা চাপিয়ে পাহাড়ি পথে এগিয়ে চলেছে...
  • Demba Ba | 131.241.218.132 | ৩১ অক্টোবর ২০১২ ১৪:৩৯577664
  • জুলুকে থাকার দুইটি জায়গা - এক নম্বর হল গোপাল প্রধানের হোমস্টে (দিলমায়া), আর দুই নম্বর পাসাং শেরপার হোমস্টে (পালজোর)। তিন চারটে মোটামুটি বড় গ্রুপ হলেই জুলুকে আর থাকার জায়গা থাকে না, কাজেই হাতে সময় থাকতে বুক করে ফেলা ভালো। ফোন নম্বর দিয়ে দিচ্ছিঃ

    গোপাল প্রধান - ৯৬০৯৮৬০২৬৬
    পাসাং শেরপা - ৯৭৩৪১৫০৫৪৬

    গোপাল প্রধানকে আগে ফোন করেছিলাম - সেই মে মাসেই। তখন থেকেই পুজোর ছুটিতে ওঁর হোমস্টে পুরো ভর্তি হয়ে গেছে। পাসাং শেরপাকে ফোন করে জায়গা পেয়েছিলাম। গাড়ির কথাও হয়েছিলো। থাকা-খাওয়ার জন্যে জনপিছু ৭০০/-, আর গাড়ি দিনপিছু ৩৫০০/- - সেই গাড়ি আমাদের পেডং থেকে নিয়ে আসবে, জুলুকের আশেপাশে যা ঘোরার ঘোরাবে, আবার পরের দিন গ্যাংটক ছেড়ে আসবে।

    তো কথামত গাড়ি এসে গেলো পেডং-এ পাক্কা সাড়ে আটটায়। ব্যাগপত্র গুছিয়ে রওনা দিলাম - সেই রেশিখোলার পথেই আবার। রেশিখোলা ছাড়িয়ে আরো একটু এগিয়ে প্রথম জনপদ "রেনক", আরো এগিয়ে "রংলি" - এখানে আপনাকে একটু দাঁড়াতে হবে, কারণ জুলুকের রাস্তায় যেতে হলে পারমিট লাগে। আপনার/আপনাদের আইডি সঙ্গে রাখবেন - ফটোকপিসহ - নইলে এখানে ফের ফটোকপি করাতে হবে, আর রাখবেন পাসপোর্ট সাইজ ফটো। গাড়ির ড্রাইভারই এইসব ডকুমেন্ট নিয়ে গিয়ে পারমিট করিয়ে আনবে। রংলিতে চা-টা খেয়ে ফের ওঠা শুরু, আর এই পথই আপনাকে নিয়ে যাবে জুলুক। পথে দেখবেন পর পর মিলিটারি ট্রাক যাচ্ছে - বেশ আস্তেই, কারণ রাস্তা বেশ চড়াই। এই ট্রাকের লাইনের পাশ দিয়েই অল্প জায়গা করে নিয়ে ছোট গাড়িগুলোকে বেরোতে হয়। প্রথম পেরোবেন লিংথাম - যেখানে আপনাদের পাস চেক করা হবে, চেকপোস্টের লোক পাসের একটা কপি রেখে দেবে। এর পর আরো উঠতে থাকবেন, আরো আরো উঁচুতে - গাড়ির জানলাটা একটু একটু করে বন্ধ করতে হবে, কারণ হাওয়া ক্রমশঃ ঠান্ডা হচ্ছে...আরেকটা ছোট গ্রাম পেরোবেন - নাম পদমচেন - এখানে হেডহান্টার্সদের ছউনি।

    আরো উঠতে থাকুন - একের পর এক হেয়ারপিন বেন্ড। গাড়ির ড্রাইভার আপনাকে বলবে এ আর এমন কি - জুলুকের ওপরে দেখবেন আসল হেয়ারপিন বেন্ড কাকে বলে...উঠতে উঠতে একসময় রাস্তা ঢেকে যাবে মেঘ আর কুয়াশায়, তার ফাঁক দিয়ে নীচের দিকে তাকালে আপনার গা শিউড়ে উঠবে - ভাবতে কষ্ট হবে যে ওই রাস্তায় আপনি উঠে এসেছেন। তারপর এক জায়গায় দেখবেন পর পর মিলিটারি লরির লাইন - সেই লাইনের পাশ দিয়ে এগোতে এগোতে পৌঁছবেন ছোট্ট গ্রাম জুলুকে - যেখানে থাকে Cloud Warriors...
  • de | 190.149.51.68 | ৩১ অক্টোবর ২০১২ ১৪:৩৯577665
  • সুন্দর হচ্ছে -- চলুক!
  • Demba Ba | 131.241.218.132 | ৩১ অক্টোবর ২০১২ ১৫:০২577666
  • রাস্তা থেকে জুলুক হিলটপ -

    আর এই হল পাসাং শেরপার হোমস্টে -

    একদম বাঁদিকে যে টিনের ছাউনিওয়ালা ঘর দেখা যাচ্ছে, সেটা।
  • san | 24.98.181.95 | ৩১ অক্টোবর ২০১২ ১৫:২১577667
  • খুবই পছন্দ হল।
  • Tim | 188.91.253.11 | ৩১ অক্টোবর ২০১২ ১৫:২৫577668
  • যাতা ভালো ছবি তুলেছে।
  • Demba Ba | 131.241.218.132 | ৩১ অক্টোবর ২০১২ ১৫:২৭577669
  • জুলুক পৌঁছলাম দুপুর দেড়টা নাগাদ। মোড়ের মাথাতেই পাসাং শেরপার একটা ছোট দোকান - সেখানে টুকটাক জিনিসপত্র, সিগারেট, লজেন্স আর ইসে পাওয়া যায়। দিনের খাওয়া দাওয়াও ওখানেই। ছোটখাটো চেহারার লোক পাসাং, একগাল হাসি নিয়ে ওয়েলকাম জানালেন, বল্লেন জিনিসপত্র এখানেই থাক - দুপুরের খাওয়া প্রায় তৈরী, খেয়ে নিয়ে ঘরে যাবেন। ছোট দোকানের এক কোণে পাসাং-এর স্ত্রী রান্না করছিলেন, তিনিও এসে এক গাল হাসি দিয়ে ঋতির গাল টিপে দিয়ে গেলেন।

    খাওয়াদাওয়া খুব সাধারণ। সাধারণ চালের ভাত, কালো ডাল, একটা ভাজা ভাজা তরকারি - সম্ভবতঃ লাউ, আর ডিমের ঝোল। বাইরে তখন বেশ ঠান্ডা, যদিও অনেক দিনের নর্থ ইস্ট ইংল্যান্ডের অভ্যাসে তখনও সেই ঠান্ডা ম্যানেজেবল। ভাত খেয়ে ঘরে গেলাম - কাঠের বাড়ি, টিনের চাল। একটা ছোট ঘরে তিনটে খাট, লেপ-কম্বল শুদ্ধু। পুরনো দিনের মেঝেওয়ালা বাথরুম, তবে কমোড সিস্টেম - যেটা কিনা একটু সুবিধার, কারণ হাঁটু বিগরোনোর পর দেশি সিস্টেম ব্যবহার করতে একটু কষ্ট হয়। গরম জলের কল নেই, ঝরণার জল ট্যাঙ্কে ভরে বাথরুমে ছাড়া হয়। ঘরে টিভি ইত্যাদি নেই, টিমটিমে দুটো আলো আছে, আর টেবিলে একটা কেরোসিন ল্যাম্প আর মোমবাতি, কারণ সন্ধ্যের দিকে প্রায়ই লোডশেডিং হয়। মোবাইলে সিগন্যাল কখনো থাকে, এক ফুট এদিক ওদিক সরে গেলেই সিগন্যালও হাওয়া হয়ে যায় - তবে সেটা এয়ারটেল। ওসব জায়গায় অন্য প্রোভাইডার হয়তো ভালো চলে - জানি না।

    হিমালয়ে যাঁরা প্রায়ই যান তাঁরা হয়তো লক্ষ্য করেছেন - দুপুরের পর থেকে আবহাওয়া আনপ্রেডিক্টেবল হয়ে যায়। জুলুকেও তাই। একটু বেলা গড়াতেই হু হু করে মেঘ উড়ে এসে রাস্তাঘাট ঢেকে ফেললো - ঘরটা আরো স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে উঠলো। তার মধ্যেই ঘরের পিছনদিকে পাহাড়ের গায়ে একটা সরু হাঁটাপথ ধরে একটু এদিক ওদিক ঘুরে এলুম - পাহাড়ের গা বেয়ে যেদিকে সিল্ক রুট উঠে গেছে সেটা নীচ থেকে দেখা যায়। আর অনেক ওপরে, পাহাড়ের মাথায় যেখানটা পুরো মেঘে ঢাকা - সেখানেই রয়েছে থাম্বি ভিউপয়েন্ট, আর আরো একটু এগিয়ে লুংথুং - আমাদের পরের দিনের ভোরবেলার গন্তব্য - সানরাইজ পয়েন্ট।
  • Demba Ba | 131.241.218.132 | ৩১ অক্টোবর ২০১২ ১৫:৩৬577671
  • সন্ধ্যেবেলা আর কিছু করার নেই। ছেলেমেয়ে খুবই বোর হতে শুরু করলো - সে অবশ্য পেডং-এও হয়েছিলো, কারণ টিভি নেই এমন জায়্গায় ওদের থাকা এই প্রথম (ছোটবেলার ইউরোপীয় ইউথ হোস্টেল বাদ দিলে - আর টিভির অপরিহার্যতা এখন আরো বেশি ওদের কাছে)। পেডং বাজার থেকেই এক প্যাকেট তাস আর একটা লুডো কিনে রেখেছিলাম - পেডং-এও কাজে এসেছিলো, এখানেও এলো। ওদিকে পেডং-এ একদিন পাকামি করে দেওয়ালের কাছে একটা বিছানায় একা শুয়ে ঋকের কাশিটা একটু বেড়েছিলো (কলকাতা থেকেই সর্দিভাব ছিলো, জানলা খুলে গাড়িতে বসে সেটা বেড়ে গেছিলো) - এখানে ঠান্ডায় আরো একটু যেন বেড়ে গেলো। পাশের ঘরে আরেকটা বাঙালী গ্রুপ এসেছিলো, তারা রুম হিটার নিয়েছিলো, আর সোয়েটার-জ্যাকেট-রামের বোতল সত্ত্বেও তারা ঠান্ডায় ঠকঠক করছিলো (ফোনে কারো সাথে কথোপকথন থেকে বুঝলাম)।

    রাতে পাসাং-এর বাবার তৈরী রুটি আর মুরগীর ঝোল খেয়ে শুয়ে পড়লাম - সাথে তিনটের সময় অ্যালার্ম দিয়ে, কারণ পরের দিন ভোর সাড়ে চারটের মধ্যে বেরিয়ে পড়তে হবে।
  • quark | 24.139.199.1 | ৩১ অক্টোবর ২০১২ ১৬:০৫577672
  • পেডং তক ক্যায়সে যায়েগা? বকুনি দিওনি কিন্তু!
  • Demba Ba | 131.241.218.132 | ৩১ অক্টোবর ২০১২ ১৬:১০577673
  • এনজেপি থেকে গাড়ি পাবেন, তবে সবাই যেতে চাইবে না, আর ভুলভাল দর বলবে। তারচেয়ে ভালো তেনজিং নোরগে স্ট্যান্ড বা পানিট্যাঙ্কি থেকে কালিম্পং চলে যান - রিজার্ভড বা শেয়ার গাড়িতে। কালিম্পং স্ট্যান্ড থেকে ওখানকার লোকাল গাড়ি সাত-আটশো টাকা নেবে পেডং যেতে।

    পেডং-এ সিল্ক রুট রিট্রিট একটা ভালো থাকার অপশন। আরেকটা ভালো অপশন হল জেলেপ লা রিসর্ট - এটা পেডং-এর যেদিকে সিল্ক রুট রিট্রিট, তার উল্টোদিকে, কিন্তু শুনেছি এদের ওপরতলা থেকে পেডং-এর দারুন ভিউ পাওয়া যায়।
  • quark | 24.139.199.1 | ৩১ অক্টোবর ২০১২ ১৬:২১577674
  • সব মিলিয়ে এনজেপি থেকে পেডং কতক্ষণ? আর এই যে দুটো থাকার জায়গা, এ দুটো বুক করে কেমন ক'রে?
  • quark | 24.139.199.1 | ৩১ অক্টোবর ২০১২ ১৬:২২577675
  • ওহ! সরি ওপরে না পড়েই লিখেছি।
  • Demba Ba | 131.241.218.132 | ৩১ অক্টোবর ২০১২ ১৭:০৩577676
  • এনজেপি থেকে কালিম্পং ঘন্টা তিনেক, রাস্তা ফাঁকা পেলে। কালিম্পং থেকে পেডং ঘন্টাখানেক, ম্যাক্স। সিল্ক রুটের সাইট আছে, ওখানে ফোন নম্বর পাবেন বুক করার জন্যে। জেলেপ লা-র সাইটটা খুঁজে পেলে দিচ্ছি।
  • Demba Ba | 131.241.218.132 | ৩১ অক্টোবর ২০১২ ১৭:১৫577677
  • এই ব্লগটা দেখবেন - http://tinyurl.com/924qrlk - এখানে সমস্ত কনট্যাক্ট ইনফো দেওয়া আছে। পাসাং শেরপার কনট্যাক্ট এখানে নেই, কারণ তখন এই হোমস্টে-টা ছিলো না।
  • Blank | 180.153.65.102 | ৩১ অক্টোবর ২০১২ ১৭:৩৩577678
  • খুব ভাল হচ্ছে। ঐ লেকটা। কি জেন নাম। ওর পাশে থাকার জায়গা আছে? ঐ যে টিনের বাড়িটা?
  • Demba Ba | 131.241.218.132 | ৩১ অক্টোবর ২০১২ ১৭:৩৯577679
  • হাতিপোখরি/এলিফ্যান্ট লেক। ওই কুঁড়েঘরটা ভেড়া চড়ায় এমন কারো। আমি নীচে যেতে চেয়েছিলুম, গাড়ির ড্রাইভার বল্ল ওখেনে নির্ঘাত কুকুর থাকবে। কুপুপে হোমস্টে নাই। অন্ততঃ এখনো তৈরী হয়নি। সম্ভবতঃ হবেও না, কারণ ওখান থেকে পাহাড় ডিঙোলেই চীন। মিলিটারি থিকথিক করছে।
  • কৃশানু | 226.113.128.239 | ৩১ অক্টোবর ২০১২ ১৭:৫০577680
  • একটু জ্ঞান দিয়ে যাই। ওই ভেড়া, গরু বা ইয়াক চড়াবার জন্য গ্রাম থেকে দুরে একটা টিনের বাড়ি করে এরা যে থাকে, তাকে নেপালি ভাষায় বলা হয় গোট। মথুরার-র গোঠ এর সাথে মিল টা লক্ষনীয়। পুরো সিকিম দার্জিলিং এলাকাতেই এরকম অজস্র গোট দেখা যায়। সান্দাকফু থেকে চার কিমি দুরেই একটা আছে। টাম্লিং, ধোত্রে-র কাছেও আছে। সান্দাকফু-র গোটে আমি ইয়াক এর মাংস আর ইয়াকের দুধের কফি খেয়েছিলাম। দারুন জায়গাটা, নির্জন আর সুন্দর, সান্দাকফু-র মতো ক্যালোর ব্যালোর নেই। নিজের জন্য অনেক সময় পাওয়া যায়। আর এই গোট গুলোর সাথেই থাকে ভুটানি কুকুর, প্রবল সাইজ আর ভিসন হিংস্র, শুনেছি। আর পাহারা দেয়।
  • Blank | 180.153.65.102 | ৩১ অক্টোবর ২০১২ ১৮:৩২577682
  • রুদ্রনাথে ওঠার সময় এমন গোটে রাত কাটিয়েছি। সেখানে অবশ্য একটা কুকুর ছানা ছিল। আমি যখন ঘুমোচ্ছিলাম সে নাকি অনেক ক্ষন আমার গায়ে উঠে ধাক্কা ধাক্কি করেছিল। তারপর আমার নাক চেটে দিয়ে চলে গেছিল
  • কৃশানু | 226.113.128.239 | ৩১ অক্টোবর ২০১২ ১৮:৫২577683
  • নিশ্চই ব্যাটা নেশা করতে এয়েছিল।
  • Demba Ba | 131.241.218.132 | ০১ নভেম্বর ২০১২ ১২:১৪577684
  • বোধি ভাটে জিগ্গেস করলো বাচ্চাগুলো ঠিক ছিলো কিনা - তো সেই গল্পে যাচ্ছি একটু পরে।
  • Demba Ba | 131.241.218.132 | ০১ নভেম্বর ২০১২ ১২:৪৭577685
  • বুধবার, ২৪শে অক্টোবর ২০১২ - সিল্ক রুট
    ==========================

    সাড়ে তিনটেতে অ্যালার্ম দিয়ে উঠলাম, বাইরে ঘুরঘুট্টি অন্ধকার, আর কনকনে ঠান্ডা - নর্থ ইস্ট ইংল্যান্ডের শীতকাল পুরো। তার মধ্যেই ওই কনকনে জল দিয়ে কোনোরকমে মুখ ধোয়ার কাজ সেরে বাকিদের ঠেলে তুললাম। ভোর চারটের সময় অবভিয়াসলি পুঁটকে দুটো উঠতে চাইছিলো না, কিন্তু সানরাইজ পয়েন্টের লোভ দেখিয়ে তুলতে হল। আর তারপর ওই ঠান্ডা জলে মুখ ধোয়ানো এক কেস...

    সেসব শেষ করে সওয়া চারটে নাগাদ গেলাম পাসাং শেরপার দোকানে। গাড়ি রেডি, ড্রাইভারও রেডি। কাঁচের গেলাসে ধোঁয়া ওঠা চা-ও এসে গেলো। ঋককেও একটু চা খাওয়ানো হল - প্রথমবার। তখন ওখানে আরো একটা গাড়ি এসে গেছে - তারাও ওপরে যাচ্ছে। এবং তাদের সাথে গোপাল প্রধান। ওই গাড়ির ড্রাইভারকে ঘুম থেকে তোলা যায়নি বলে গোপাল প্রধান নিজেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন। ভদ্রলোকের সঙ্গে অল্প একটু কথা হল চা খেতে খেতে - অতি অমায়িক লোক, মানে সেটা কতটা তা কথা না বল্লে বোঝা সম্ভব নয়। এতটা আস্তে আস্তে (নীচু গলায় এবং ধীরে - দুটোই) কথা বলা লোক চট করে দেখা যায় না। আমরা তৈরী হয়ে বেরোতে বেরোতে আরো একটা গাড়ি উঠে এলো - পদমচেন থেকে - ওখানেও এখন হোমস্টে তৈরী হয়েছে - যারা জুলুকে জায়গা পায় না, তারা পদমচেনে থাকে।

    তিনটে গাড়ি লাইন দিয়ে সিল্ক রুট ধরে চলতে শুরু করলো, তখন ভোর সাড়ে চারটে। সাড়ে নহাজার ফুট থেকে আমরা উঠবো থাম্বি ভ্হিউপয়েন্ট পেরিয়ে লুংথুং অবধি - মোটামুটি ১২০০০ ফুট উচ্চতায়। দূরত্ব মাত্র ১২-১৪ কিমি। গাড়ির কাঁচের ওপর ফ্রস্ট জমে রয়েছে, বার বার জল দিয়ে ওয়াইপার চালালেও অল্পক্ষণ পরেই ফের ফ্রস্ট - এখানে বিলেতের মত ওয়াশার ফ্লুইড হিসেবে অ্যালোহলিক সোপ মিক্সের চল নেই। একে অন্ধকার, তায় এইখানেই সিল্ক রুটের সেই বিখ্যাত ভুলভুলাইয়া - একের পর এক চৌঁত্রিশটা সরু হেয়ারপিন বেন্ড - জুলুক থেকে ৯ কিমি দূরের থাম্বি ভিউপয়েন্ট অবধি। উঠতে উঠতে আমরা মেঘের ওপর চলে এসেছি। রাস্তার পাশে নীচে মেঘের কার্পেট। যেতে যেতেই দেখতে পাচ্ছি আকাশের রঙ বদলাচ্ছে আস্তে আস্তে। তর সইছে না, হাত নিশপিশ করছে, অথচ তাড়া করার উপায় নেই - রাস্তা খুবই খতরনাক - যদিও আশার কথা যে ওই সময় উল্টোদিক থেকে গাড়ি আসার সম্ভাবনা নেই।

    অবশেষে সাড়ে পাঁচটার একটু আগে আমরা পৌঁছলাম লুংথুং। সেখানে তখন অলরেডি বেশ কিছু লোক - যারা পদমচেন আর নাথাং থেকে পৌঁছে গেছে। সূর্য তখন উঠবো উঠবো করছে, মেঘের কার্পেটের ঠিক ওপরে আকাশের রঙ হলদেটে। উল্টোদিকে নীচে মেঘ। আকাশ পরিষ্কার থাকলে ওদিকে কাঞ্চনজঙ্ঘার ওপর রঙের খেলা দেখা যায় - কিন্তু সেদিন শুধুই মেঘ আর কুয়াশা। জুলুক সম্পর্কে সমস্ত লেখায় পড়েছিলাম যে আকাশ পরিষ্কার থাকলে লুংথুং-এর সানরাইজ অন্য যে কোনো বিখ্যাত সানরাইজ পয়েন্টকে কঠিন কম্পিটিশনে ফেলে দেবে। দুর্ভাগ্য আমাদের, সেদিনই আকাশে নীচু মেঘ আর কুয়াশায় একটা hazy ভাব এসেছিলো। যে দৃশ্যের অপেক্ষায় ছিলাম সেটা পেলাম না, কিন্তু যা পেলাম তাও কম নয়।

    ওদিকে মেয়ে তো দুমিনিট বাইরে থেকেই ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে গাড়িতে চলে গেলো। ঋকও কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে ছবি তোলার চেষ্টা করে আর পারলো না। জ্যাকেট ট্যাকেট পরা ছিলো বলে গায়ে সামলানো গেলেও ঠান্ডায় হাতের আঙুল বেঁকে যাওয়ার মত অবস্থা। তার মধ্যেই উল্টোদিকে একটু আধটু ঘুরে দেখলাম - সেদিকেও মিলিটারির লোক টেম্পোরারি ছাউনি ফেলে রয়েছে - তাঁবুতে রাত কাটিয়েছে ওখানে, ভোরে রওনা দেবে।

    আশেপাশের পাহাড়ের গায়ে মেঘ ঘুরে বেড়াচ্ছে। পাহাড়গুলো লালচে দেখায়। দেখে হঠাৎ করে সেই হাইল্যান্ডস মনে পড়ে গেলো - হেদারে ঢাকা পাহাড়গুলো লালচে দেখাতো, এখানেও হেদারের মত ছোট ছোট না হলেও একটু বড় সাইজের লালচে ঝোপ সারা পাহাড়ের গা জুড়ে - সেরকমই লালচে দেখায়। সেই হাইল্যান্ডসের মতই ধূ ধূ ঢেউ খেলানো জমি আর পাহাড়...>

    <
  • Demba Ba | 131.241.218.132 | ০১ নভেম্বর ২০১২ ১২:৪৮577686
  • Demba Ba | 131.241.218.132 | ০১ নভেম্বর ২০১২ ১৩:৩৮577687
  • সানরাইজ পয়েন্ট থেকে নামার পথে দুবার দাঁড়ালাম ভুলভুলাইয়ার ছবি তোলার জন্যে। একবার লুংথুং থেকে অল্পদূর নেমেই - যেখান থেকে তিনটে পাহাড়ের গায়ে রাস্তার এই অংশটুকু দেখা যায়, আরেকবার থাম্বি ভিউপয়েন্টে, যেখানে দৃশ্যটা একটু অন্যরকম।



    <
  • Demba Ba | 131.241.218.132 | ০১ নভেম্বর ২০১২ ১৩:৩৯577688
  • ধুর, বেজায় ইনকন্সিস্টেন্ট।

    তিন পাহাড়ের গায়ে রাস্তা - https://fbcdn-sphotos-a-a.akamaihd.net/hphotos-ak-ash3/523392_10151289
    602163524_141605717_n.jpg

    থাম্বি ভিউপয়েন্ট থেকে -
  • Demba Ba | 131.241.218.132 | ০১ নভেম্বর ২০১২ ১৩:৪০577689
  • তিন পাহাড়ের গায়ে রাস্তা -

  • Demba Ba | 131.241.218.132 | ০১ নভেম্বর ২০১২ ১৪:০২577690
  • জুলুকে ফিরে আসতে আসতে সওয়া সাতটা মতন বাজলো। এবার দিনের বেড়ানোর জন্যে তৈরী হয়ে (চান করার কোনো সীনই নেই, বাকিটুকুর জন্যে পাসাং শেরপার বাবা এক বালতি গরম জল দিয়ে গেলেন) ওয়াই ওয়াই নুডল্স দিয়ে ব্রেকফাস্ট সারতে সারতে সওয়া আটটা। ফের এক গ্লাস চা খেয়ে সাড়ে আটটায় শুরু করলাম। ফের সেই লুংথুং-এর দিকেই যাওয়া, কিন্তু এবার সেখান থেকে এগিয়ে যাবো নাথাং ভ্যালীর দিকে, তারপর বাবামন্দির আর কুপুপ হয়ে ছাংগু অবধি। এর মধ্যে ম্যাক্সিমাম সাড়ে চোদ্দহাজার ফুটে উঠবো একবার, তারপরে ছাংগুতে ফের বারো হাজার মতন।

    লুংথুং-এর রাস্তা সকালে তখন রোদে ঝকমক করছে। দুধারের সেই লাল ঝোপগুলো আরো উজ্জ্বল। আবারো কয়েকটা মিলিটারি ছাউনি পেরোলাম - রায়পুর রেইডার্স, কী একটা শুটার্স - এরা মনে হয় স্নাইপার রেজিমেন্ট এবং আরো কী কী নাম। নাথাং ভ্যালী পড়বে রাস্তার বাঁদিকে কিছুটা নীচে। পাহাড়ের গা বেয়ে মেঘ নেমে নাথাং ভ্যালীকে ঢেকে দিচ্ছে, রাস্তার ওপরেই এক গুচ্ছ মেঘ - যার মধ্যে রাস্তাটা পুরো হারিয়েই গেছে।



    আরো একটু এগোলে পুরোই ব্যারেন ল্যান্ড, অনেকটা লেহ্‌-লাদাখের মত ধূসর। এখানেই কোথাও জেলেপ লা-র রাস্তা, যেটা এখন বন্ধ - ৬২-র যুদ্ধের পর। শুধু পড়ে আছে অনেকগুলো পরিত্যক্ত বাঙ্কার - ৬২-র চিহ্ন গায়ে মেখে। এর পরেই আসে আসল বাবা মন্দির - ক্যাপ্টেন হরভজন সিং মান-এর বাঙ্কার। অনেক গল্পকথা চালু আছে হরভজন সিং সম্পর্কে - এখনো নাকি মিলিটারি পোস্টে কেউ পাহাড়া দিতে দিতে ঘুমিয়ে পড়লে "বাবা" খুব রেগে গিয়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে তুলে বকাবকি করেন।

    http://en.wikipedia.org/wiki/Baba_Harbhajan_Singh

    এখান থেকে চীন বর্ডার খুব কাছেই। উত্তরদিকের পাহাড়গুলোর মাথায় বর্ডার পোস্টগুলো দেখা যায়। একটা বাড়ি দেখিয়ে গাড়ির ড্রাইভার জানালো যে ওইটা কনফারেন্স হল যেখানে ভারত এবং চীনের বর্ডার কনফারেন্স হয়। ওইদিকে যাওয়া মানা, পুরোটাই শুধুমাত্র মিলিটারি এলাকা। চারদিকের এই পাহাড় আর পরিত্যক্ত উপত্যকার মধ্যে দাঁড়ালে কেমন একটা যেন অনুভূতি হয়। কখনো হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে, কখনো নিজেকে একটা পিঁপড়ের সমান মনে হয়, কখনো ওইখানে পড়ে থাকা সৈন্যগুলোর জন্যে খারাপ লাগে।

    তবে অতটা ভাবার অবস্থা তখন ছিলো না, কারণ ঋক। আগেই বলেছিলাম - কলকাতা থেকে আসার সময়তেই একটু সর্দি ছিলো। পেডং-এ ঠান্ডা লেগে কাশিও শুরু হয়েছিলো। জুলুকে আরো ঠান্ডায় বুকে সর্দি বেশ ভালোমত বসে গেছিলো। নাথাং-এ পৌঁছনোর সময়েই সে আর গাড়ি থেকে নামতে চায়নি। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো। বাবা মন্দির পৌঁছে সে গাড়ির সীটে পুরো এলিয়েই পড়লো। আমরা তিনদিন আগে থেকেই সবাই একটা হোমিওপ্যাথি ওষুধ খাচ্ছিলাম - কোকা না কী যেন নামটা। তবে মনে হয় না তাতে কোনো কাজ দিয়েছিলো। আমার তেমন কিছু অসুবিধা হয়নি, একটু জোরে হাঁটলে অবশ্য বুঝতে পারতাম। সুমনার অল্প অস্বস্তি হয়েছিলো, ঋতির কিছু হয়নি, অথচ ঋক - যার গুরুদংমারের রাস্তাতে কিছু হয়নি, সে পুরোই কাৎ - যদিও তার প্রধান কারণ বুকে সর্দি বসা - যার ফলে অল্টিচিউড সিকনেসের এফেক্টটা বেশি হয়েছিলো। রংলিতে এক শিশি ব্র্যান্ডি কিনেছিলাম - অল্প গরম জলের সাথে এক ঢাকনা মিশিয়ে তাকে খাওয়ানো হল। তারপর চকোলেট। তাতে একটু শরীর গরম হল, বল্ল নিশ্বাসের অস্বস্তিটাও অল্প কমেছে, কিন্তু গাড়ি থেকে আর নামলো না কোথাওই।
  • Demba Ba | 131.241.218.132 | ০১ নভেম্বর ২০১২ ১৪:৩৯577691
  • একবার ভাবলাম নেমে যাই, আবার মনে হল আর হয়তো এদিকে আসা হবে না। যার জন্যে চিন্তা সেও পুরোটা ঘুরেই তবে ফিরতে ইচ্ছুক। ঠিক হল আরেকটু এগোই, যদি অবস্থা খারাপের দিকে যায় তাহলে নেমে যাবো।

    এগোলাম কুপুপের দিকে। নাথাং-এর লালচে ঝোপে ঢাকা পাহাড়ের বদলে এবার ধূসর ল্যান্ডস্কেপ। থেকে থেকে দুটো একটা ছোট ছোট লেক, এখানে বলে পোখরি। তারপর পাহাড়ের গায়ে একটা বাঁক ঘুরেই ডানদিকে বিরাট বড় এলিফ্যান্ট লেক বা হাতি পোখরি। ওপর থেকে দেখতে অনেকটা হাতির মত - দূরের দিকটাতে হাতির শুঁড়, কাছের দিকটা হাতির দেহ। রাস্তা থেকে কিছুটা নেমে লেকের পাশে একটা কুঁড়েঘর - লাক পা, মানে আমাদের ড্রাইভার কাম গাইড - আমাকে সেখানে যেতে দিলো না, বল্ল ভেড়া পাহারা দেওয়ার কুকুর থাকবে আর সেগুলো বেজায় খতরনাক। হাতিপোখরি ছাড়িয়েই কুপুপ গ্রাম - সেখানেও একপাশে বড় মিলিটারি ছাউনি। গ্রামের মধ্যে কয়েকটা দোকান আছে - সেখানে চা বা অন্যান্য কিছু খাবার পাওয়া যায়। আর পাওয়া যায় চীন থেকে আসা জিনিসপত্র - খেলনা, জ্যাকেট, কার্পেট ইত্যাদি।



    রংলিতে যে পাস করানো হয়েছিলো, সেটা ছিলো কুপুপ অবধি। কিন্তু আমরা যাবো ছাংগু। কুপুপের চেকপোস্টে একজন ছিলো যে আমাদের লাক পা-র চেনা - তো লাক পা পাসে ছাপ্পা মারার সময় তার সঙ্গে কথা বলে ক্লিয়ার করে এলো। আমরা এগোলাম ছাংগুর দিকে। জুলুক থেকে কুপুপ হল ৩৪ কিমি, কুপুপ থেকে ছাংগু আরো ৩৪ কিমি মতন। এদিকে ল্যান্ডস্কেপটা আরো কিছুটা বদলায়, কুপুপ বা তার আগের তুলনায় একটু সবুজ। তবে রাস্তা তুলনামূলকভাবে অনেক খারাপ। রংলি থেকে জুলুক হয়ে কুপুপ অবধি যা রাস্তা সেটা কলকাতা পৌরসভাকে লজ্জা দেবে, আবার কুপুপ ছাড়িয়ে নাথু লা/ছাংগুর দিকের রাস্তা দেখে ইস্টার্ন বাইপাসের কনট্র্যাক্টররা গর্ব করতেই পারে। এদিকে কিছুটা এগোলে ডানদিকে একটু দূরে দেখা যায় মেমেন চু লেক।



    কুপুপ ছাড়িয়ে কিছুদূর গিয়ে দুই নং বাবা মন্দির। এটা হল আগেরটার ক্লোন। আগেরটাই আসল বাবা মন্দির। যেহেতু কুপুপ থেকে জুলুকের দিকের রাস্তা আগে সাধারণের জন্যে বন্ধ ছিলো, তাই নাথু লা-র কাছে একটা দ্বিতীয় মন্দির বানানো হয় টুরিস্টদের জন্যে। গ্যাংটক থেকে যে টুরিস্টরা ছাংগু/নাথু লা আসেন, তাঁরা এই বাবা মন্দিরেই ঘুরে যান।

    বাবা মন্দির ছাড়িয়ে আরেকটু এগোলে নাথু লা-র রাস্তা বেরিয়ে যায় ওপরদিকে। সেখানে যেতে আলাদা পাস লাগে বলে আমরা আর যাইনি। এখানে একটা ইন্দো-চীন বর্ডার মার্কেট বসে - চীন থেকে জিনিসপত্র নিয়ে গাড়ি আসে বর্ডার পেরিয়ে ওই মার্কেটে - সপ্তাহে মনে হয় দুই দিন না তিন দিন বসে বাজারটা। চীন থেকে আসা গাড়িগুলো একজায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে, সেখানে ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশ পাহারা দেয়। আরো এগোলে আরো কিছু মিলিটারি ছাউনি পেরিয়ে ছাংগু - সিকিমের অতি পরিচিত লেক, আশেপাশে ইয়াক নিয়ে লোকজন ঘুরছে, সিকিমিজ/ভুটানি/লেপচা পোশাক পরে লোকজন ছবি তুলছে - টিপিক্যালি টুরিস্ট স্পট আর অত্যন্ত বোরিং। না এলেও চলে আর কি, কিন্তু এসেই যখন পড়েছি দু একটা ছবি তোলাই যাক। শুনেচি বরফ থাকলে নাকি দেখতে ভালো লাগে, আর আকাশ পরিষ্কার থাকলে স্নো-পীকগুলোর ছায়া পড়ে।



    ছাংগু থেকে ফেরার সময় একটু তাড়াহুড়ো করতে হল, কারণ ততক্ষণে ঋকের ব্র্যান্ডি আর চকোলেটের এফেক্ট ঘুচে গেছে। আরো একটু চকোলেট খাইয়ে, বাবা-বাছা করে নেমে আসতে শুরু করলাম বিশেষ কোথাও না দাঁড়িয়ে। নাথাং-এর আশেপাশে পৌঁছেছি যখন, তখন মেঘ করে এলো আরো বেশি। মুড়ির দানার মত ছোট ছোট স্নো-ফ্লেক পড়তে শুরু করলো। আরো একটু এগোতে রাস্তা পুরো মেঘে ঢাকা, এবং স্নো-ফ্লেকের বদলে বৃষ্টি। সেসব পেরিয়ে জুলুকে পৌঁছলাম তখন আড়াইটে বাজে। ঋকের মুখ তখন কালচে হয়ে গেছে, ঠোঁট নীল। পাসাং শেরপারা বল্লেন ওকে কিছু খাওয়াতে, তাতে সুস্থ লাগবে। সে ছেলে খেতে গিয়ে কাশতে কাশতে বমি করে ফেললো সব, বমির সঙ্গে ঘন সর্দি। আর কিছু না পেয়ে সঙ্গে ডায়ামক্স ছিলো, তাই অর্ধেক খাইয়ে দিলাম। আর আবার এক ঢাকনা ব্র্যান্ডি। সেদিন ঘরে রুম হিটারও লাগালাম যাতে ঘরের ড্যাম্প ভাবটা কাটে। ঘন্টাখানেক ঘুমনোর পর বিকেল নাগাদ ঋক একটু সুস্থ হল - সেটা বোঝা গেলো যখন ঋতির সঙ্গে একটা ছোট ঝগড়া সেরে ফেললো।

    রাতটা কাটিয়ে পরের দিন গ্যাংটকে পৌঁছে ডাক্তার দেখাবো ভাবলাম। অন্ততঃ রংলি পৌঁছে একটা কাফ-সিরাপ কিনে খাওয়াবো। যদিও তখন কাশি, আর তার জন্যে একটু নিশ্বাস নিতে অস্বস্তি ছাড়া সে মোটামুটি ভালোই। সন্ধ্যেটা কাটিয়ে রাতে ফের রুটি-মুর্গির ঝোল খেয়ে শুয়ে পড়লাম। পরের দিন ওই নটা নাগাদ বেরিয়ে পড়তে হবে, ঘন্টা পাঁচেক লাগবে গ্যাংটক পৌঁছতে।
  • de | 69.185.236.53 | ০১ নভেম্বর ২০১২ ১৫:০৩577693
  • একটা হোমিও ওষুধ আছে -- antim tart 200 -- যে কোন জায়গায় চেঞ্জ অব ওয়েদারে খুব কাজে দেয় -- এই ধরনের বুকে সর্দি বসে শ্বাসকষ্টে খুব উপকারী --

    আর অতো ঠান্ডায় রুম-হীটার নিতেই হয় -- বাচ্চাদের জন্য অন্ততঃ -- সহ্য করাটা ভালো নয় সবসময় -- নিউমোনিয়া হয়ে যাবে যে --

    লেখাটা খুব ভালো হচ্চে --
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন