এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • গান্ধী | 213.110.243.22 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৪:২২579280
  • ভোর সাড়ে ৪টে। আমরা ৪জন, যাদের মধ্যে ৩জনের ঘুমোতে যাওয়ার স্বাভাবিক সময় রাত ২টো, তারা ঘুম থেকে উঠে তৈরী। তার একটু আগেই আমাদের ঘুম ভাঙ্গিয়ে রিসর্টের লোক চা দিয়ে গেছে। ৫টার কিছু আগে দেখা দিল আমাদের সাধের টাটা সুমো গোল্ড। গাঢ় কুয়াশা, কিছুই দেখা যাচ্ছেনা প্রায়, ঘড়ির কাঁটা ৫কে ছোঁবে বলে যাচ্ছে এমন সময় আমাদের যাত্রা শুরু হল বাংরিপোসি থেকে।

    ডিসেম্বরের তৃতীয় শনি-রবি, ঘুরতে যাওয়ার আদর্শ সময় আমাদের আবার খেয়াল চাপল চল ঘুরে আসি। কয়েকদিনের চেষ্টায়, রেস্তের জোরে সিমলিপালের থেকে বেশি দুর যাওয়ার সময় পেলাম না। তখন এমনই ভেবেছিলাম, কিন্তু পরে বুঝেছিলাম যে ঘরের সামনেও এরকম অনেক জায়গা আছে, যেগুলো না যাওয়া মানে মিস করে যাওয়া ়

    সিমলিপাল, জেলা-ময়ুরভঞ্জ, রাজ্য-উড়িষ্যা। শিমুল গাছের আধিক্যর জন্যই একসময় এর নাম হয়েছিল সিমলিপাল। আজ যদিও অল্প জঙ্গলে শিমুল গাছের লাল রং খুঁজে পেলামনা বেশি। উড়িষ্যার উত্তরদিকের অনেকটা বড় অংশ জুড়ে (২৭০০বর্গ কিমি) এই অভয়ারণ্য। একসময় ময়ুরভঞ্জের রাজাদের বধ্যভুমি ছিল এই অরণ্য। ১৯৫৬সালে এটিকে তিগের রেসের্ভে হিসেবে চিন্হিত করা হয়। এরপর ১৯৭৯ সালে এটি "জাতীয় উদ্যান" -এর সম্মান পায়। গাছের মধ্যে প্রধান ভাগ শাল-শিমুল এবং ব্রিটিশদের আমলে লাগনো ইউক্যালিপটাশ। এছাড়াও অংশবিশেষে বিস্তীর্ণ তৃণভুমি। এছাড়াও প্রচুর প্রজাতির ক্যাকটাস এবং আরো অনেক কিছুই পাওয়া যায়। জীব বৈচিত্রে ভরপুর সিমলিপালের প্রধান আকর্ষণ বেঙ্গল টাইগার, শেষ গণনার পর এর সংখ্যা ৯৯, এরপরই আসে বুনোহাতি (প্রায় ৪৩০), এছাড়া চিতাবাঘ, বার্কিং ডিয়ার, চৌসিঙ্গা, বুনো খরগোস, অ্যান্টিলোপ, গৌর, জায়ান্ট স্কুইরেল, বুনোবিড়াল, সম্বর, বুনো শুয়োর এবং অবশ্যই হনুমান। এছাড়াও অজস্র প্রজাতির পাখি যাদের মধ্যে অন্যতম প্যাঁচা, হর্নবিল, ময়না, ময়ুর ইত্যাদি ইত্যাদি। আর আছে সাপ এবং মশা। শীতকালে সাপ নেই, আর সিমলিপালের মশা ম্যালেরিয়ার জন্য জগৎবিখ্যাত।এই ছিল উইকি এবং নেট থেকে পাওয়া খবর। এই খবরই আমাদের সিমলিপাল যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করার জন্য অনেক।

    শিমলিপাল দিয়ে নেটে সার্চ দিতেই যে দুটো থাকার অপশন পেলাম, তা হল বারিপদা আর যশিপুর। এছাড়া কিছু ট্ড র লজ। সব্থেকে পছন্দ হল লুলুং, এক তো সুন্দর এক নাম, আর ম্যাপ দেখে দেখলাম এটা একেবারেই জঙ্গলের মধ্যে। কিন্তু ট্ড তে ফোন করে জানা গেল লুলুং-এর পান্হনিবাস বন্ধ হয়ে গেছে। এরপর বারিপদা-যশিপুরের যে'কটি নাম পেলাম ফোন করে করে একটাতেও বুকিং পেলামনা। তখন শিমলিপালের বাকি শহরগুলোর দিকে নজর দিলাম।

    বারিপদা আর যশিপুরের মাঝের এক শহরের নামে চোখ আটকালো। "বাংরিপোসি", নাম শুনেই মনস্থির করলাম এখানেই থাকব। এরপর ঐ "খইরি রিসর্ট" খুঁজে পাওয়া। এই এলাকার নামের নেপথ্যেও অনেক গল্প আছে। আসব একে একে। বাংরিপোসি এক ছোট্ট (অবশ্য খুব ছোটও নয়) জনপদ, ঠিক শহর নয়। যেখানে আছে মাত্র ২টো হোটেল। একটা “হোটেল সিমলিপাল”, আরেকটা “খইরি রিসর্ট”। এই “খইরি রিসর্ট” আগে ছিল ওরিশা টুরিসমের (ট্ড) পান্হনিবাস। কয়েকমাস হল তারা জনৈক ব্যবসায়ীকে লিজে দিয়েছে। পান্হনিবাস বুক করার উদ্দেশ্যে ফোন করেই এই “খইরি রিসর্ট” খুঁজে পাই।

    এ তো গেল থাকার জায়্গা, যাব কি'করে? স্টুডেন্ট মানুষ, কোথাও ঘুরতে গেলেই আগে পকেটটা দেখে নি। আর গাড়ির থেকে ট্রেনে যাওয়া বেশি পছন্দ করি। কিন্তু ১সপ্তাহ আগে ট্রেনে টিকিট আর কে দেবে? অগত্যা ধৌলির জেনারেলই সই, ফেরা??? দেখা যাক কি করে ফেরা যায়।

    ২২তারিখ শনিবার, সকাল ৫টায় হাওড়া স্টেশন। যাব মোট ৪জন। ৩জন কোলকাতা থেকে, ১ জন উঠবে খড়গপুর থেকে। ভোর ৫টায় হাওড়া, আমি ছাড়া বাকি দুজন অত আগে আসতে পারবেনা, তাদের জায়্গা রাখতে হবে আমাকে। সেদিনই ট্রেন দিল ৫টা৪০-এ। কোনোরকমে মারপিট করে উঠে ৩জনের জায়্গা রাখলাম। একজন একটু বাদেই এল, আর একজন? ট্রেন ছাড়ার কয়েক মিনিট আগে এলেন। এরপর খড়গপুর থেকে আরেকজন উঠল। এরপর শুরু হল আমাদের টেনশন। ধৌলি বালাসোর পৌঁছয় ৯-২৬-এ, আর বালাসোর-বারিপদা লোকালের সময়১০-০৫, সেই ট্রেনই আবার বারিপদা থেকে বাংরিপোসি যাবে। বালাসোর থেকে বাংরিপোসি সময় লাগবে প্রায় ২ ঘন্টা। নেটে পড়েছি যে ধৌলি না এলে সে ছাড়েনা, কিন্তু না আঁচালে বিশ্বাস নেই। এদিকে খড়গপুর পৌঁছাতেই ৪০মিনিট লেট। কোনোরকমে ধৌলি এক্সপ্রেস বালাসোর পৌঁছাল ১০-০৫এ। যুদ্ধ করে প্ল্যাটফর্মে নেমেই ছুটলাম ট্রেনের টিকিট কাটতে। আমার মত প্রায় ৬-৭জন একসাথে গিয়ে বললাম ,"বারিপদা", "বাংরিপোসি"। কাউন্টারের লোকটি একগাল হেসে ফিক করে বলল, "এবে পলাইলা"। ইন্ডিয়ান রেলের আজব সিস্টেম। দিনে যেখানে ৩টে ট্রেন চলে, সেই কনেক্টিং ট্রেন ছেড়ে চলে গেল! ভাবলাম প্রতিবারের মত এবারও গোটা টুরে আমাদের ছড়াতে ছড়াতেই কাটবে। বালাসোরের বাসস্ট্যান্ডে এলাম। এখান থেকে বারিপদার বাস পাওয়া যায়। বালাসোর-বারিপদা ৭০কিমি আর বারিপদা-বাংরিপোসি ৩২কিমি। ধরেই নিলাম ২টোর আগে পৌছাবনা।

    যে হোটেল বুক করেছিলাম, তাকে ফোন করলাম, সে বলল বাসে করে বারিপদা নেমে আমাকে কল করুন, বারিপদা থেকে অটো বা বাস পেয়ে যাবেন। দুপুরে খাওয়ার কথাও বলে দেওয়া হল। নিরামিষ খাওয়াই ভালো প্রথমদিন, জানিনা কেমন খাওয়া দেবে, চিংড়ি-দেশী মুর্গীর প্রলোভন উপেক্ষা করে নিরামিষ করে রাখতে বললাম আমাদের জন্য। বালাসোর থেকে বাসে উঠলাম, টিকিট নিল ৪০টাকা করে, বুঝলাম হাল্কা ঠকাচ্ছে, কিন্তু কি আর করা? উড়িষ্যার বাসে কোনো নির্দিষ্ট ভাড়া থাকেনা বোধহয়, এরপরও দেখলাম, অনেকেই টিকিট নিয়ে বেশ দর কষাকষি করছে, যে যেমন পারে তেমন পয়সা দেয়। তো বাসে উঠলাম। ৪০টাকা করে নিল মানে আমাদের সিট রিসার্ভ হল। কয়েকজনকে উঠিয়ে দিয়ে আমাদের বসিয়ে দিল। ড্রাইভারের পিছনের প্রথম সিটে বসলাম। বালাসোর থেকে বাস এগোল এন-এইচ ৫ ধরে। কিছুদুর এগিয়ে যেখানে এনএইচ-৫ আর এনএইচ-৬০ মিশছে সেখান থেকে বাঁদিকে ঘুরল, সেই এনএইচ ৫ ধরেই এগোবে বাস। কিছুটা এগোনোর পরই দেখলাম পরিবেশ পালটাচ্ছে। আস্তে আস্তে গাছের সংখ্যা বাড়ছে, শালের জঙ্গল, বিশাল উঁচু উঁচু উইঢিবি, আগে ভাবতাম বাল্মিকির কথা সত্যি কিনা, এবার দেখলাম এই উইঢিবিগুলোতে ৩-৪টে বাল্মিকীও ঢুকে যাবে। অনেকগুলো ছোট-ছোট শহর-জনপদ-গ্রাম পেরিয়ে এলাম, সুন্দর সুন্দর নাম তাদের, বৈসিঙ্গা, বেতনটি। একেই ওড়িয়া পড়ার চেষ্টা করতে ভালই লাগে। একটু সময় নিয়ে চ্যালেন্জ, কোনো নাম পড়তে পারলেই আনন্দ পাওয়া যায়। সাথে একজন আছে যে ৫বছর কটকে পড়ত ফলে সে ভালই ওড়িয়া বলতে পারে। এটা গোটা টুরের মস্ত বড় সুবিধা। প্রায় দেড় ঘন্টা পরে বাস পৌঁছাল বারিপদায়। বারিপদা বাসস্ট্যান্ডে নেমে ঠিক করলাম এবার অটো নিই, কারণ বাংরিপোসি এখনো ৩০কিমি, বাসের যা অবস্থা তাতে এরপরও এই বাসে গেলে এখনো ভালোমতো গা-হাত-পা ব্যাথার চান্স, আর বেশি দেরী হয়ে গেলে আজ ঘোরা যাবেনা। অটো নিল ৩০০টাকা, প্রায় ৪০মিনিট পর পৌঁছালাম বাংরিপোসি। অটো শহর ছাড়িয়ে আরো এগিয়ে গেল। শহরের পর ২কিমি এগিয়ে একটা চেকপোস্ট। এরপরই শুরু হচ্ছে ফরেস্টের এলাকা। এই চেকপোস্টের নাম বাংরিপোসি ঘাঁটি।

    ঘাঁটি চেকপোস্ট পেরোতেই একজন স্কুটি নিয়ে এগিয়ে এলেন। এসেই পরিচয় দিলেন, শুভদা। উনার সাথেই আমাদের কথা হয়েছিল। ঘাঁটি চেকপোস্টের লাগোয়া "খইরী রিসর্ট"। এই ফাঁকে খইরী নামের পিছনের গল্প বলে নেওয়া যাক। সিমলিপালের জঙ্গলের দুই প্রধান নদী খইরী আর বুড়িবালাম (উড়িষ্যায় একে বলে "বুড্ঢাবালাঙ্গ") আর আছে বৈতরণী। ১৯৭৪ সালে সিমলিপালের রেঞ্জার ছিলেন সরোজ রায়চৌধুরী। একদিন কিছু আদিবাসী (এখনকার আদিবাসীরা প্রধানত খরিয়া) একটি ছোট্ট বাঘের শিশু নিয়ে আসেন তাঁর কাছে যাকে তারা পেয়েছে খইরি নদীর ধারে। শিশুটি মেয়ে, বয়েস দু-তিন মাস হবে। রায়চৌধুরী তার নাম রাখেন "খইরি"। এরপর এই খইরী তাঁর পোষ মানা হয়ে যায়, কিন্তু সে বাঁধা থাকত না। থাকত খোলা। গোটা সিমলিপালের আইকন হয়ে ওঠে খইরি। আর তার নামেই আমাদের রিসর্টের নাম "খইরি রিসর্ট"।
  • গান্ধী | 213.110.243.22 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৪:২৩579291
  • রিসর্টটা সবে গুছিয়ে উঠতে শুরু করেছে। থাকার জায়্গা অনেকই আছে। প্রায় ৭টা ডবল বেডেড রুম। একটা হল। তাছাড়াও পিছনের দিকে ৪টে ডবল বেডেড রুম, এগুলো খুব দরকার ছাড়া বুকিং হয়না। তো ঘর বেশ পছন্দ হল। অবশ্য পছন্দ না হওয়ার কিছুই নেই। এখানে এসে একটু ঘুমানোর জায়্গা পেলেই চলত। কিন্তু এটা বড্ডই ভালো। সামনেটা সাজানোর জন্য ল্যান্ডস্কেপিং-এর কাজ শুরু করেছে। এখনো ঘাস পুরো গজায়নি, ফুল গাছগুলো সবে ছোট-ছোট। সব মিলিয়ে খুবই পছন্দের। আলাপ হল জানকি লাল আগরওয়াল্লার সাথে। ইনিই মালিক, শুভদা উনার বন্ধু।

    প্রচণ্ড খিদের মুখে এই কথা শুনে প্রায় মুহুর্তের মধ্যে হাজির হলাম ডাইনিং-এ। তারপর? একথালা গরম ভাত, অসাধারণ সুন্দর ডাল, সাথে আলুভাজা-বেগুনভাজা, আলু-কপির ঝোল, খেজুরের চাটনী আর পাঁপড়। স্বাদের কোনো বিশেষণ দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয় এতটাই সুন্দর সে পদগুলো। নিমেষের মধ্যে উঠে গেল সব। রান্না করেন যিনি তাঁর নাম ননা (ওড়িয়াতে এর মানে কাকা), উনি এমন লোক যিনি খাওয়াতে ভালোবাসেন, এই সুন্দর রান্না আর ননা-বেহরা-জানকীলাল-শুভদার আতিথেয়তায় হঠাত মনটা খুশী খুশী হয়ে উঠল।

    খাওয়া শেষ হতে বাজল সাড়ে ৩টে। আজকের দিন মোটামুটি শেষ হতে চলেছে। এক স্টেশন মাস্টারের জন্য এই দুরবস্থা। এখানে অন্ধকার হয় সাড়ে ৪টের মধ্যে। যদি হাতে দুঘন্টাও সময় থাকত তো সামনের পাহাড়ের মাথার মন্দির ঘুরে আসতাম। মন্দিরে যাওয়ার শখ আমাদের কারোরই নেই, কিন্তু পাহাড়ে চড়াটাই আসল, তাই এমন বনের মধ্যে। কিন্তু সেগুড়ে বালি। আপাতত কি করার? কিচ্ছু নয়। বাংরিপোসি ঘাটি থেকে নদী নাকি ৬কিমি। কিন্তু সেও হেঁটে গিয়ে ফিরতে হলে সন্ধ্যে হয়ে যাবে। একটাও অটো জোগাড় করা গেলনা। একটা অটো বলল যাব কিন্তু ফিরবনা। তো আমরা ভাবলাম কালকের দিনটা তো আছেই। যাওয়া যাবে, আগে বরং রবিবারের সিমলিপাল টুরের ব্যবস্থা করে নিই। শুভদাকে ধরলাম। তিনি প্রথমেই বললেন, "কাল ডিসেম্বরের তৃতীয় রোব্বার, গাড়ী পাওয়া চাপ" শুনেই সবার উৎসাহ একেবারে ১০০ থেকে ১০এ নেমে গেল। তারপর যদিও গাড়ী যোগাড় হল। তবে এই পিক সিজনে কোনো গাড়ীই ৩৫০০ এর কমে রাজী হলনা। এমনি সময় রেট থাকে ২৪০০মতন। ঠিক হল এক টাটা সুমো গোল্ড। সকাল সাড়ে ৪টের মধ্যে তৈরী হতে হবে। তার আগে উনারা আমাদের চা দিতে পারবেন। সাড়ে ৪টে, ৫টার মধ্যে বেরোলে যশিপুর পৌঁছব মোটামুটি দেড় ঘন্টা পর। সেখান থেকে পারমিট জোগাড় করতে হবে। দিনে নাকি ৪০টা গাড়ীকে ভিতরে ঢুকতে দেয়। তো বেশী দেরী হয়ে গেলে প্রথম ৪০এ না থাকলে আবার ফেরৎ আসা। আমরা নিজেদের মধ্যে প্ল্যানও বানিয়ে নিলাম। যদি জঙ্গলে ঢুকতে না পারি তো বাদাম পাহাড়, সুলাইপাত ড্যাম, আর পারলে রামতীর্থ'র কুমীর প্রজনন কেন্দ্র।

    শুভদা বলে দিলেন যে, “সিমলিপালে আপনি কোনো খাবার নিতে পারবেন না”। ফলে জল-শুকনো খাবার যেন সারাদিনের মত স্টোর করে নিই। সেইজন্য বেরিয়ে পড়লাম বাজারের দিকে। ঘাটি চেক্পোস্ট পেরিয়ে বাজারের দিকে মানে আসল বাংরিপোসি জনপদের দিকে হাঁটা লাগালাম। প্রায় ২কিমি বোম্বে রোডের উপর দিয়ে হেঁটে এসে পৌঁছালাম বাজারে। এই বাজারেই আছে কনকদূর্গার মন্দির, এটি নাকি খুবই জাগ্রত। কয়েকটি ছোট ছোট চায়ের দোকান (কিন্তু একটাও তেলেভাজা দেখলাম না, মনটা খুবই চা-তেলেভাজা করছিল)। চা-এর দোকানে উনুনে হাওয়া দেওয়ার জন্য এক অদ্ভুত সিস্টেম। একটা লিভার ধরে ঘোরাচ্ছে, সেই লিভার যে হাউসিঙে আটকানো সেখান থেকে একটা রড গেছে উনুনের নিচে। সঠিক জিনিসটা কি বুঝলাম না, পরে ভেবে দেখব ভেবে মাথায় রেখে দিলাম। কিছু স্টেশনারী দোকান, কয়েকটা মুদীর দোকান। অনেক বিস্কুট, চানাচুর, কেক এসব কিনে নিলাম। সাথে কিছু কলা, আপেল। আমাদের ৪টে রাক্ষসের জন্য এগুলো যথেষ্ট নয়ও মনে হচ্ছিল। অন্ধকার হয়ে আসছিল। যতনা অন্ধকারের ভয় তার থেকে বেশি মশার ভয়। তাড়াতাড়ি হোটেলে ফেরার জন্য হাঁটা লাগালাম।

    হোটেলে ফিরে একটু আড্ডা-গান-আলোচনা হল, সবার মনেই একটা উত্তেজনা কাজ করছে কাল কি আদৌ জঙ্গল দেখা যাবে? জঙ্গল-অন্ধকার-কুয়াশা-শীত-হাতি। কারোর মনে তখনো বাঘের কথা নেই। যতই হোক, আমরা জানি বাঘ দেখা যায়না। অত সহজ নয় বা অত ভাগ্যও ("ভাগ্য", বিশ্বাস না করলেও এই কথাটাই ভাবছিলাম) আমাদের নেই। বেহরা (রিসর্টের বেয়ারা) ডাকতে এল তখন ৯টা, খাওয়া রেডি। সবাই একলাফে চললাম কেহ্তে। ননা এবার কি করেছে দেখি। রাতে শুধু ডিমের ঝোল ভাত-রুটি বলেছিলাম, কিন্তু মন বলছিল আরো কিছু নিশ্চয়ই হবে। রুটি-ডাল-আলুভাজা-ডিমের ঝোল। অসাধারণ রান্না, অদ্ভুত ভালো খাওয়া যখন প্রায় শেষ। বেহরা পায়েস নিয়ে এল। সিমাই পায়েস। উফ্ফ, এটা আর লিখতে পারা যাচ্ছেনা। এখানেই থাক খাওয়ার গল্প। শুধু এটুকু বলতে পারি, বাংরিপোসি-যশিপুর-বারিপদায় গেলে "খইরী রিসর্টে" না খেলে সিমলিপাল অরণ্য মিস করার মতই ব্যাপার হবে। এসেই সঙ্গে সঙ্গে বিছানায়। ২টো ঘুমাতে অভ্যস্ত লোকজন ১০টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লাম।

    প্রথমে পড়ল একটা ছোট্ট শহর বিসোয়ি, বাংরিপোসির থেকে একটু বড়। এখানে এটিএমও আছে। যশিপুর এখান থেকে ৩৫কিমি। এবার শুরু হল চড়াই-উৎরাই। হঠাৎ হঠাৎ পাহাড়ের উঁকি মারা। তখনো কুয়াশা, ফলে ভালো ছবি তোলা যাচ্ছেনা। পিছনের সীটে বসে আমি বাণী শোনাচ্ছিলাম যে কিছু কিছু ছবি ক্যামেরার লেন্সে ধরার থেকে মনের ক্যামেরায় তুলে রাখা ভালো। মার খেতে খেতে বেঁচেছি। প্রায় ৩০-৪০ মিনিট পর পৌঁছালাম যশিপুর। কিন্তু তার আগেই আমাদের টাটা সুমো দুবার হোঁচট খেয়েছে। আমাদের ড্রাইভার বাবু আমাদেরই বয়সী। বাবু জানালো যে এই গাড়ি নিয়ে জঙ্গলে ঢোকা রিস্ক হয়ে যাবে। ও যশিপুরে আমাদের অন্য গাড়ি ঠিক করে দেবে। তো যশিপুর আসতে ও আরেকটি গাড়ি ঠিক করল। রাস্তর ধারে এক চা'এর দোকান, একটা ছেঁড়া লুঙ্গি আর উপরে শোয়েটার তার উপর চাদর চাপিয়ে দোকানের মালিক চা করছিল। সে নাকি ৪টে বোলেরোর মালিক। তার গাড়ি ঠিক করে দিল বাবু । এবার রফা হল ৩২০০টাকায়। সে গাড়ির ড্রাইভার বলল তেল ভরে আসছি। এদিকে এখনই পেটে খিদে চালু হয়ে গেছে। সময় এখন সাড়ে৬। গরম গরম কচুড়ি-জিলিপি খেয়ে নিলাম। ওঃ, কচুড়িটা গরম ছিলনা, তরকারিটা গরম। তো প্রায় আধঘন্টা কেটে গেল সে তেল ভরে আর আসেনা। পেট্রোল পাম্প নাকি ১কিমি দুরে। এদিকে আমাদের সামনে দিয়ে প্রায় ১০খানা গাড়ি বেরিয়ে গেল। সবাই যাচ্ছে পারমিট নিতে। আমাদের মেজাজ চড়ছে দেখে বাবু আরেকটা গাড়ির সাথে কথা বলল, সে ৩৩০০টাকায় রাজী হল। তাড়াতাড়ি করে গাড়ি বদল করা হল। আর আমাদের সাধের ২ডজন কলা পরে রইল আগের গাড়িতে।

    নতুন করে যাত্রা শুরু হল। এবারের ড্রাইভারের নাম মহম্মদ মুনতাজ । মুখ তার চলছিলই সর্বদা। তিনি যশিপুরেরই লোক। সিমলিপালের রাস্তায় গাড়ি চালচ্ছেন প্রায় ৩০বছর। হাইওয়ে দিয়ে গাড়ি উঠতে শুরু করল, একটু বাদেই এল চেকপয়েন্ট। এখানেই সিমলিপালের রেঞ্জারের অফিস। সেখান থেকেই পারমিট নিতে হয়। আমাদের গাড়িটা যেখানে পার্ক করল তার ঠিক পিছনেই একটা সাজানো বাঙলো। রেঞ্জারের বাঙলো। যার এত গল্প শোনা, সেই খইরী এখানেই থাকত। ভাবতেই অবাক লাগছিল একটা বাঘিনী, সে একজন মানুষের পোষ মেনে তার বাঙলোয় থাকত তারই পোষা আরেক কুকুরের সঙ্গে। খইরী কি করে মারা যায় সঠিক জানিনা। মুনতাজ বললেন ঐ কুকুরের সাথে খেলতে গিয়েই কখনো কিছু চোট লাগে। তারপরই মারা যায় সে। মুনতাজ রাও ছোটবেলায় খইরীকে দেখেছেন।

    রেঞ্জারের অফিসেস সামনে প্রচণ্ড ভিড়। গুনে ফেললাম আমাদের আগে ৪০এর বেশি গাড়ি আছে। আশা নেই। কিন্তু মুনতাজ বললেন, খাতায় কলমে ৪০ হলেও এখানে কোনো রুল নেই। সত্যিই তাই। সব গাড়িই পারমিট পেল। প্রত্যেকের জন্য টিকিট ৪০টাকা, ক্যামেরার জন্য ক্যামেরা প্রতি ১০০, গাড়ির ১০০ আর গাইডের জন্য ২০০। আমাদের মুনতাজ নিজেই ড্রাইভার ও গাইড। কিন্তু সকলের ক্ষেত্রে তা নয়।

    সকালে ৭টা থেকে পারমিট দেওয়া শুরু হয়। আমাদের সাথে জল একটু কম ছিল। তো জল কিনতে দাঁড়ালাম। মুনতাজ বললেন, খাকড়া কিনুন, খেয়েছেন কখনো ?? দারুণ খেতে। আমি খাকড়া মানে গুজরাটিদের খাকড়া ভেবেছিলাম। ভালও লাগে সে জিনিস। কিন্তু খাকড়া বলতে যেটা কেনা হল সেটা অন্য এক জিনিস। আমাদের মালপোয়ার মতই। খালি সেটাকে চিনিতে ভাজেনি। আমার ভালো লাগেনি, অনেকেরই লেগেছিলো ভালো। পারমিট পাওয়ার পর কিছুটা আগের রাস্তায় ফিরতে হয়, তারপর ডানদিকে বেঁকে চেকপয়েন্টে, সেটা প্রায় ২কিমি দুরে, মেঠো রাস্তায়। এই রাস্তায় আসার পথেই ডানদিকে পেয়ে গেছি খইরী নদীকে। সরু একট নদী, অল্প স্রোত। কিন্তু পরিস্কার জল। পাথরের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে। এই নদীই বয়ে চলেছে গোটা সিমলিপালের মধ্যে দিয়ে। সিমলিপালের প্রধান দুটি নদী খইরী-বুড়িবালাম। আর এই খইরীর তীরেই কোনো এক ভোরে রেঞ্জারসাহেব খুঁজে পেয়েছিলাম বাঘিনী খইরীকে। সেখানে প্রথম চেকপয়েন্ট। গাড়ি থেকে নামিয়ে পুরো গাড়ি চেক হয়, তারপর প্রত্যেককে চেক করে। চেক পয়েন্ট থেকে গাড়ি ছড়া হয় সকাল ৯টা থেকে। আমরা জঙ্গলে ঢুকলাম যখন ঘড়ির কাঁটায় তখন ৯-১০।
  • গান্ধী | 213.110.243.22 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৪:২৪579302
  • জঙ্গল ভালো লাগলেও মাথা গরম ছিল। এই জঙ্গলে ৪০এর সীমারেখাটা বাঁধা বোধহয় উচিত। আমি এর আগে একমাত্র কাজিরাঙ্গা গেছি, সেখানেও একটা নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি ঢুকতে দেয়না, আমাদের একজন ক'দিন আগেই পুজোর সময় বান্ধবগড় ঘুরে এসেছে। সেখানেও তাই, ৪০ টার বেশি গাড়ি ঢুকতে দেয়না। কিন্তু এখানে সেসব নিয়মের বালাই নেই। শুভদা যদিও বলেছিলেন রান্না করা এইসব অনুমতি নয়, মুনতাজ ও বলেছিলেন, কিন্তু অনেককেই দেখলাম উনুন নিয়ে-চেয়ার গাড়ির মাথায় চাপিয়ে চলেছেন। তারা পিকনিক করবে জঙ্গলে। আর ফরেস্ট গার্ডরা কি করে তাদের ছাড়ে?? জানিনা। আমার কাজিরাঙ্গার অভিজ্ঞতা বা আমার বন্ধুর বান্ধবগড়ের অভিজ্ঞতার সাথে এ বড়ই বেমানান। মাথা গরম হচ্ছিল, কিন্তু জঙ্গলের ভিতরে ঢোকার পরই মন ভালো। এই কিছু ভুলভাল লোকের জন্য সিমলিপালকে ভালো বাসবনা?

    ছোটবেলার শুকতারার পাতা থেকে সংকর্ষন রায়ের লেখাগুলো ততক্ষণে উঠে আসছে আমাদের চোখের সামনে। গল্প উপন্যাসের নামগুলো কবেই ভুলে গেছি। কিন্তু মনে আছে সেই বাইসনের কথা (বাইসন না গৌর) যার গায়ে ফসফরাস লাগিয়ে ভয় দেখাতো পোচাররা ,মনে আছে সিমলিপালের হাতির কথা যাকে ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল চাইবাসায়, বাঘ ছিলো কি গল্পে? না বোধহয়। কিন্তু সেই আদিবাসীদের অরণ্যপ্রেম, রেঞ্জার-ফরেস্ট গার্ডদের জঙ্গল বাঁচানোর, বাঘ-হাতিদের বাঁচানোর চেষ্টা, সেই উঁচু উঁচু শাল-মহুয়া-শিমুলের জঙ্গল, ঘাড় সোজা করে যার শেষ দেখা যায়না, কিছু কিছু রাস্তা এমনভাবে গাছে ঢেকে গেছে যে সেগুলো কোনোদিন সুর্যের আলো দেখেনি, কিছুক্ষণ বাদে বাদে হঠাৎ সেই গাছদের হারিয়ে যাওয়া, সামনে বিশাল ঘাসের জমি, বা কখনো কখনো রুক্ষ্ম পাথুরে লাল জমি। মাঝেমাঝেই ছোট্ট ছোট্ট আদিবাসীদের গ্রাম, বাচ্ছাগুলো গাড়ি দেখলেই এগিয়ে আসে, হাঁসে, হাত নাড়ে, এটাই ওদের খেলা। কিছু কিছু বাচ্ছা আবার গয়ণা নিয়ে আসে। গয়ণাগুলো কিসের বুঝতে পারিনা, কোনো গাছের ডাল পাতা দিয়েই তৈরী, ১০টাকা-৫টাকা করে সেই হার, নিলাম কয়েকটা।

    গাড়ি এগিয়ে চলল কালিয়ানি গেট থেকে জঙ্গলের দিকে। জানাই আছে আজ জন্তু দেখার চান্স প্রায় শুণ্য, কারণ যশিপুর গেট থেকে প্রায় ১২০টা গাড়ি ঢুকেছে, আর বারিপদা থেকে আরো ১২০টা। এত গাড়ির চাপে কেউই রাস্তার আসেপাশে আসবেনা। কিছু গাড়ি তার মধ্যে কিছু তোয়াক্কা না রেখে জোরে হর্ণ বাজাচ্ছে।

    যাই হোক, এসব কথা থাক। আমাদের প্রথম গন্তব্য জোরান্ডা ফলস। রাস্তায় আগে পড়বে বরহিপানি, কিন্তু মুনতাজ বললেন আগে জোরান্ডা দেখে ফেরার রাস্তায় এটা আসব। জঙ্গল একটু ঘন হয়ে আসল। উঁচু উঁচু শাল-শিমুলের গাছ। সূর্যকে প্রায় দেখাই যাচ্ছেনা। জঙ্গলের মধ্যের তাপমাত্রা বাইরের থেকে প্রায় ৩-৪ডিগ্রী কম মনে হচ্ছে। মুনতাজ বললেন, এইসব রাস্তায় যখন-তখন হাতির পাল দেখা যায়, বিশেষকরে এখনকার সময় যখন হাতি পাশের গ্রামের দিকে নেমে আসে ধানে খাওয়ার আশায়। কিন্তু আজ সে সম্ভাবনা কম। প্রথম যে প্রাণী নজরে পড়ল সেটা একটা বিশাল মাপের নেউল। গাড়ি দেখে ঘাবড়ে গিয়ে একটু দাঁড়িয়ে পড়েছিল, তাই দেখতে পেলাম। আর একটু এগোলাম, একটা ছোট্ট গ্রাম। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা গাড়ি দেখে ছুটে এল। হাত নেড়ে আবার ছুটে চলে গেল। মুনতাজ বললেন, অনেক টুরিস্ট এদের হাতে পয়সা বা খাবার দেয়, কিন্তু সেটা বেআইনি। একটু পর জঙ্গলের ঘন অঞ্চলে গাড়িটা দাঁড়াল, আমাদের গাড়ি থেকে নামতে বারণ করে মুনতাজ একটা গাছকে লক্ষ্য করতে বললেন। একটা চাঁপা গাছ, পাশেই বনদফতরের একটা সবুজ-মেরুন বোর্ড, তাতে লেখা উচ্চতা ২৪ফুট (ভুলও বলতে পারি এখন সঠিক মনে নেই), ঐ চাঁপা গাছের জন্যই এই এলাকার নাম চম্পাঘাঁটি।অন্যান্যদিন এখানে কিছু না কিছু জন্তু দেখাই যায়, বিশেষ করে হনুমান। আরো একটু এগলো গাড়ি। রাস্তা বলতে লাল মাটির উপর গাড়ির টায়ারের দাগ। মাঝে মাঝে ছোট ঝরণা বা নালার উপর দিয়ে কাঠের সেতু। হঠাৎ গাড়ি দাঁড়াল, সামনে কয়েকটি হনুমান। কিছুক্ষণ এদিক-ওদিক লাফিয়ে ওরা চলে গেল। আরেকটা গ্রাম এল, বনদফতরের দেওয়া ম্যাপে দেখলাম এর নাম গুরুগেদিয়া। এখান থেকে একটা রাস্তা সোজা চলে যাচ্ছে, সেখানে আছে একটা কাঠের ব্রীজ (কিন্তু সে রাস্তা এখন গাড়ি যাওয়ার উপযুক্ত নয়)। বাঁদিকে বেঁকে আমরা এগোলাম।

    এবার জঙ্গল আরো ঘন, কখনো কখনো হঠাৎ বড় গাচ শেষ, আর ঘাসের জমি। কিছু কিছু জায়্গায় রুক্ষ্ম পাথুরে লাল মাটির উপত্যকা। বরহিপানির রাস্তা পেরিয়ে আর একটু সামনে এগিয়ে এক জায়্গায় দাঁড়িয়ে আমাদের বাঁদিকে তাকাতে বলা হল। দেখলাম, উঁচু উঁচু গাছের আড়াল থেকে হঠাৎই পাশের পাহাড়ের উপর থেকে নেমে আসা ঝরণা দেখা যাচ্ছে। এটাই বরহিপানি, এভাবেই একদিন রাস্তায় যেতে যেতে কেউ বরহিপানি ঝরণা খুঁজে পায়। বরহিপানির রাস্তা হওয়ার আগে এটাই ছিল ভিউপয়েন্ট।এখনো সেই ভিউপয়েন্টের রাস্তা আছে, কিন্তু ভাঁঙা। এখানে গাড়ি থেকে নামাও বারণ, তবু একটু এগিয়ে কয়েকটা ছবি তুলে এলাম।এবার যাব নওয়ানা। এর পাশেই জোরান্ডা ফলস। নওয়ানার রাস্তায় পড়ার পর রাস্তা আরো খারাপ হয়ে এল। জঙ্গল আরো ঘন। এখন আর রাস্তায় কোনো গ্রাম নেই। নওয়ানা পৌঁছেই মন খারাপ হয়ে গেল। গাড়িতে গাড়িতে ভর্তি। নওয়ানায় একটা ফরেস্ট বাঙলো ছিল আগে। কিন্তু ২০০৯-১০ এর মাওবাদী হামলার পর সবকটি ফরেস্ট বাঙলো ই বাইরের লোকেদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জঙ্গলের মাঝে একটি পাহাড়ের প্রায় চুড়ায় এই নওয়ানা। অত গাড়ি, অত মানুষ না থাকলে অসাধারন জায়্গা।

    এখান থেকেই সামনে তাকালে পুরো সিমলিপাল রেঞ্জটা প্রায় দেখাই যায়। সামনের পাহাড়টা প্রধানপাট, এখান থেকেই নেমে এসেছে জোরান্ডা। প্রায় ১৫০মিটার উঁচু থেকে একটা সরু সাদা জলের ধারা সোজা এসে পড়ছে, নিচে বুড়িবালাম নদী, সিমলিপালের অন্যতম আকর্ষণ।

    এরপর আবার ফিরে আসা গাড়িতে। এবার রওনা বরহিপানির দিকে। কিছুটা একই রাস্তায় ফিরে এসে এবার গাড়ি ঘুরলো অন্য রাস্তায়। পাহাড়ি রাস্তা, রাস্তার কোনো চিহ্নমাত্র নেই, খালি টায়ারের দাগ। গাড়ির স্পীড একদমই কম। বাঁকের মুখে উল্টোদিক থেকে হঠাৎ কোনো গাড়ি এলে যাতে থামানো যায়। এখানে গভীর জঙ্গল, হর্ণ দেওয়া মানা। আমাদের ড্রাইভার মুনতাজ স্থানীয়, তাঁর এসব জানা, কিন্তু অনেক গাড়িই বাঁকের মুখে হর্ণ দিয়ে নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। বেশ কয়েকবার এমন পরিস্থিতি এল যে আমরা গাড়ির ভিতর চুপ করে বসলাম। যদিও জানি এখানে গাড়ি গড়িয়ে পড়বেনা। আসেপাশের জঙ্গলে গাড়ি আটকে যাবে, তবু। কেউ যদি গাড়িতে সিমলিপালের প্ল্যান করেন তাঁকে বলব, কোলকাতা থেকে নিজের গাড়িতে আসুন, কিন্তু সিমলিপালে চেষ্টা করুন স্থানীয় গাড়ি ভাড়া নিতে।

    প্রায় মিনিট তিরিশেক পর পৌঁছালাম বরহিপানি । ভারতের দ্বিতীয় উচ্চতম জলপ্রপাত। বুড়িবালাম নদী চলতে চলতে হঠাৎই দিক পরিবতন করে উপর থেকে নামছে নিচের জঙ্গলের মধ্যে। সামনের মেঘাসন পাহাড় (নাকি পর্বত??)-এর ৩৯৯মিটার উচ্চতা থেকে বুড়িবালাম নদী এসে পড়ছে। নিচের একটা পুলের মধ্যে, এরপর আবার বয়ে চলছে নিজের গতিতে। দুটো ভাগে এই জলধারা নিচে আসছে। বর্ষার সময় এই বরহিপানির রুপ নাকি পালটে যায়। একটা জলের ধারা নয়, পুরো নদীর জল বিশাল পরিমাণে নেমে আসে ঐ উচ্চতা থেকে। গুগল-আর্থের দাবী অনুযায়ী, দুটো ভাগে নেমে আসা এই ফলসের আসল উচ্চতা ২১৭ মিটার, পরেরভাগটা আলাদা। যদিও এখনো পর্যন্ত স্বীকৃতি অনুযায়ী এর উচ্চাতা ৩৯৯মিটারের পুরোটাই। যাই হোক, এসব কচকচানি দেখার সময় ভাবিনি, পরে এসে লেখার এই এক সমস্যা। সামনে সুন্দর একট ওয়াচটাওয়ার, যেখান থেকে পুরো ফলসের ভিউঅটা পাওয়া যায়। কিন্তু কে যে সেই বিখ্যাত লোক, যিনি ওয়াচটাওয়ারের ঠিক সামনে একটা ছোট্ট ছউনি বানিয়ে রেখেছেন?? আপনি যাই ছবি তুলবেন ঐ ছাউনি আপনার ছবিতে আসবেই। বরহিপানি আমাদের সিমলিপাল ঘোরা প্রায় সার্থক করে দিল।

    ঘড়িতে তখন ২টো। এরপর আমাদের গন্তব্য চাহালা। এখানে আসার রাস্তায় দেখতে পেলাম কিছু বুনো ঘরগোশ আর প্যাঁচা। প্যাঁচা যে এত্ত বড় হতে পারে তার কোনো আইডিয়া ছিল্না আমাদের । পৌঁছালাম চাহালায়। ময়ুরভঞ্জের রাজাদের বনবাঙলো ছিল চাহালায়। তাঁরা শিকারে আসতেন এখানে। সুন্দর করে সাজানো বাগানের চারপাশ কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা। কাঁটাতারের একদম শেষে একটা সিঁড়ি নেমে যাচ্ছে মাটির নিচে। সেখানে সামনে মাটির প্রায় সমান উঁচুতে পৌঁছনোর পর সামনে জানালার মত (এই ব্যাপারটাকে কি বলে আমার জানা নেই) । এখান থেকেই আগেকার রাজারা শিকার করতেন। সামনেই একটা লেক, যে লেকের ধারে বনবিভাগের কর্মীরা নুন ঢেলে দিয়ে আসে। রোজ বিকেলে-ভোরে জন্তুরা সেই নুন চাটতে আসে। কিন্তু আজ এত লোক তারা আসেনি। কয়েকটা চিতল হরিণ দেখা গেল।এতদুর এসে কোনো বিশেষ জন্তু না দেখেই ফিরে যাব? বাঘের আশা করিনা, কিন্তু হাতি? রাস্তায় আসতে আসতে ফরেস্ট গার্ডদের মুখে শুনলাম হাতি বেড়িয়েছে, দেখতে পাওয়ার চান্স আছে। দেখতে পাবনা? হাতি না পাই। এখানে দেখতে পেলাম জায়ান্ট স্কুইরেল। অনেকটা দুরে, এতোটাই যে ক্যামেরার লেন্সে ধরা পড়লনা। একটা গাছে উঠছিলো সে। দুর থেকে দেখে মনে হল একটা বিড়ালের থেকেও বড়, আর লেজটা ততোধিক বড়, রঙ গাঢ় বাদামী। সিমলিপাল আমাদের একেবারে খালি হাতে ফেরালনা। এতো মানুষের ভিড় সত্ত্বেও কিছু তো পেলাম। এবার ফেরার রাস্তা ধরলাম।

    প্রথম গেট দিয়ে বেরনোর পর পরের চেক পয়েন্ট দিয়ে বেরনোর জন্য মুনতাজ শর্টকাট ধরলেন। আরো কাঁচা রাস্তা যে রাস্তায় গাড়ি চলেনা সেটা বোঝাই যায়। হঠাৎ রাস্তার মধ্যে এক ছোট্ট নদী। গাড়িতে করে সেই নদী পেরিয়ে এলাম। এরকম অনেকটা পথ পেরিয়ে যখন ২ন্ড চেকপোস্টে পৌঁছলাম ঘড়িতে তখন সাড়ে ৪। ওঃ, বলতে ভুলে গেছি, খাবার-দাবার যা নিয়ে গেছিলাম প্রায় তাই রয়ে গেছে। দু-এক প্যাকেট বিস্কুট আর জল ছাড়া। কোথা দিয়ে সময় কেটে গেছে বুঝলাম না।

    রিসর্টে পৌঁছে দিয়ে গেলেন মুনতাজ । উনার কার্ড রেখে দিলাম। কারণ সিমলিপাল আমরা আসবই। একটু অফ সীজনে। ফেব্রুয়ারীর শেষের দিকে, যাতে কিছু দেখতে পাই। আর আসলে মুখতারের গাড়িতেই যাব।

    এরপর?? রাতে বলা ছিল দেশি মুর্গীর (দেশি কুকড়া'র ) ঝোল। সেদিনের রাতের খাবার আগেরদিনের থেকে আরো বেশি সুস্বাদু ছিল তা বলাই বাহুল্য।

    পরদিন বাড়ি ফিরতে হবে। কি'করে ফিরবো? ট্রেনে ফেরার আর ইচ্ছা নেই। দু'জন ফিরব খড়গপুর, আর দু'জন কোলকাতা। খড়গপুরের দুরত্ব মাত্র ১১০ কিমি। আগরওয়াল্লা জানালেন তিনি বাসে সিটের ব্যবস্থা করে দেবে যদি আমরা বাসে যেতে চাই। এসেছি ট্রেনে, বাসে ফিরব। সেটাই ভালো হবে। বাস পরেরদিন সকাল পৌনে ১১ টায় ঘাঁটি চেকপোস্টে দাঁড়াবে। আমাদের জন্য ফোনে সিট বুক করে দিলেন।

    পরেরদিন সকাল। নাহ সকাল নয় ভোর ৫টেয় দরজায় ঠক। এত ভোরে কে? দরজা খুলতেই বেহরা, "সিমলিপালকা গাড়ি আয়া"। বুঝলাম সে আবার ছড়িয়েছে। আগেরদিন আমাদের ডাকতে এসে আমাদের পাশের রুমের দরজায় নক করেছিল। আজ আবার উল্টো, পাশের ঘরের দরজা নক করতে গিয়ে আমাদের।

    এরপর ৭টায় ঘুম থেকে উঠলাম। চারদিকে কুয়াশা। আজকের কুয়াশা কালকের থেকেও বেশি লাগছিল। রান্নাঘরের পাশে আগুন জ্বালানোর ব্যবস্থা হল, আগুনে গরম হয়ে ভাবলাম একবার নদীটা ঘুরে আসার ট্রাই নিই। বেরোলাম। একটা অটো ও জোগাড় হয়ে গেল ঘাঁটি থেকে।নদী ঘুরিয়ে আবার পৌঁছে দিয়ে যাবে ঘাঁটিতে। প্রায় ৬কিমি গিয়ে পৌঁছালাম নদীতে। সেই বুড়িবালাম। এই নামটা শুনলেই আমাদের মনে একটা অন্য ঘটনা চলে আসে। কিছু মানুষ সাইকেল কাঁধে নদী পেরোচ্ছে। একটা ট্রাকটরও পেরিয়ে গেল নদী। ডানদিকে সিমলিপালের ভিতর থেকে আসছে এই নদী। জলের পরিমাণ এখন খুবই কম। কিন্তু বর্ষাকালে ভয়ানক হয়ে ওঠে। কিছুক্ষণ ওখানে কাটিয়ে ফিরে এলাম।

    এরপর ফেরার পালা। ঠিক ১১টায় বাস এল। একনি লোকাল বাসের মত, খালি আগে থেকে বলা আছে বলে আমাদের ৪টে সিট রেখে দেওয়া। এনএইচ ধরে ১৫কিমি পর বোম্বেচক। কেউ যদি কোলকাতা-খড়গপুর থেকে আসতে চান তো যে কোনো জামসেদপুর-ঘাটশিলার বাসে করে এই পর্যন্ত আসতে পারেন। এখানে নেমে বাংরিপোসির বাস পেয়ে যাবেন। এরপরের রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। এই অংশটা একবার উড়িষ্যা, একবার ঝাড়খন্ড, একবার পশ্চিমবঙ্গে ঢুকেছে, ফলে অনাথ। এরপর রাস্তা এল পশ্চিমবঙ্গে পাকাপাকিভাবে। প্রায় ২ঘন্টা পর লোধাশুলিতে বাস দাঁড়াল। এখানে যারা লাঞ্চ করার করে নেন। মিনিট পনের পর বাস ছাড়ল। প্রায় মিনিট চল্লিশেক পর পৌঁছালাম নিমপুরা। আমাদের দুজনের পথ এখানেই শেষ। এটাই খড়গপুরের মোড়। আমরা দুজন নেমে এলাম। বাকি দু'জন কোলকাতা পৌঁছাল বিকেল ৫টা নাগাদ। মাঝে কোলাঘাটের আগে দেউলিয়াতে একবার থাকে চা'এর জন্য।

    কারোর যদি প্রয়োজন হয়, তাই নম্বরগুলো দিয়ে রাখলাম। আমাদের মনে হয়েছে ইনারা ভিষণই হেল্পফুল।

    খইরি রিসর্টঃ শুভদা - ০৯৭৭৬৫১২০০০,
    জনকী লাল আগরওয়াল্লা- ০৯৪৩৭৮৭৭৭৩০, (এঁর ফেসবুক প্রোফাইলে খইরি রিসর্টের ছবি পাবেন হ্ত্ত্প্সঃ//্ব।ফেবূক।োম/মেদিঅ/সেত/?সেত=অ।৩০৩৫৫০২২৩০৭৯৯৮৬।৫৬২০৯।১০০০০২৭৫০৩২৯১৭৪&ত্য়্পে=৩),

    সিমলিপালের ড্রাইভার-গাইড মহম্মদ মুনতাজ ঃ ০৯৪৩৭৩৬৩৯৬২
    ** সাথের ছবিগুলি আমাদের দলের বাকি দু'জনের তোলা
  • গান্ধী | 213.110.243.22 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৪:৩০579324
  • প্রচুর ঘেঁটেছে।

    তিগের রেসের্ভে - TIGER RESERVE
    ট্ড - OTDC
  • ঐশিক | 132.181.132.130 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৪:৪৭579325
  • খুব সুন্দর, পড়তে পড়তে আমাদের সিম্লিপাল আর বাংরিপশি ঘোরার গপ্প মনে পড়ে যাচ্ছিল
  • | 214.130.244.200 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৫:০৫579326
  • গান্ধী, ফেস বুকে ফটো দেখেছি। বাড়ি গিয়ে তোমার লেখা তাড়িয়ে তাড়িয়ে পড়বো।
  • গান্ধী | 213.110.243.22 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৫:১২579327
  • প্রচুর বানান ভুল, এটা সেটা ভুল আছে।

    @ঐশিকদা
    লেখাতেও অনেক ভুল ইনফো থাকতে পারে। আপনার যখন ঘোরা। ভুল থাকলে ধরিয়ে দেবেন।

    @বতীন্দা, হুম্মঃ)
  • sosen | 24.139.199.1 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৫:১৩579328
  • কি ভালো লিখেছে গান্ধী, পিঠ চাপড়ে দিলাম, আর এ লেখা গুরুতে প্রকাশ পেলে ছবি আঁকার অফার দিয়ে রাখলাম, ফটোর মাঝে মাঝে। এমন সুন্দর ডিটেইলিং, শঙ্কু মহারাজ একেবারে। তুই আরো ঘুরতে যা।
  • ঐশিক | 132.181.132.130 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৫:১৫579281
  • ইয়া আল্লাহ আমায় গান্ধী দাদা বলে, না বললে খুশি হতাম।
    আমি গেসিলাম ২০০২ সালে আজ থেকে ১০ বছর আগে, সে এক কেলর কিত্তি ট্রিপ ছেল, পরে সময় করে লিখব
  • গান্ধী | 213.110.243.22 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৫:১৭579282
  • সোসেন্দিঃ)
    ঐশিক(দা) কেলোর কীর্তি ট্রিপ আরো বেশি ভালো হয়। লিখো (তুমি করে দিলাম), পড়ব
  • Shola the Great | 131.241.218.132 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৫:২৫579283
  • মশা কেমন? কয়েক বছর আগে প্ল্যান করেছিলুম যাবো বলে, ইন্ডো ডাক্তার বেদম অ্যান্টিপুরকি দিয়েছিলো ওই মশার জন্যে। সেই ভয়ে আর যাইনি।
  • গান্ধী | 213.110.243.22 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৫:৩৩579284
  • মশা প্রচুর। সেরেব্রাল ম্যালেরিয়ার জন্য আদর্শ জায়গা নাকি। তবে সন্ধ্যের পর ওডোমস মেখে আর কয়েল জ্বালিয়ে থাকাই যায়।

    আর এখন মাওবাদী হামলার পর সিমলিপালের ভিতরের ফরেস্ট বাঙলোয় থাকা বন্ধ করে দিয়েছে। সেগুলোতে কারেন্ট ছিলনা বলে মশার উপদ্রব বেশি ছিল।
  • কৃশানু | 226.113.128.239 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৫:৫১579285
  • গান্ধী - খুব ভালো লাগলো।
  • গান্ধী | 213.110.243.22 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৬:৩২579286
  • পড়ার জন্য ধন্যবাদ কৃশানুদা
  • প্পন | 126.202.219.191 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৬:৫৩579287
  • বাহ! গান্ধী দারুণ লিখেছে। ফাটাফাটি। আরো আরো ঘুরে বেড়া আশীর্বাদ করলাম। ঃ)
  • Shola the Great | 131.241.218.132 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৬:৫৮579288
  • সেই প্রথম যুগের আনন্দমেলায় খৈরীকে নিয়ে একটা ফিচার বেরিয়েছিলো।
  • | 214.130.244.200 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৭:০১579289
  • ইয়েস পেয়েছি।

    @অপ্পন উহা "বেরা" হইবে। বেড়া নয়। ঃ))
  • কৃশানু | 226.113.128.239 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৭:০২579290
  • প্রথম যুগ কি? আমি পড়েছিলাম মনে হচ্ছে যে? ৯৩-৯৪ হবে না?
    আর একটা ছিল না, উত্তর বঙ্গে কোনো এক লেখকের বাড়ির একটি বাঘ? যে বগলের গন্ধ শুঁকতে খুব ভালবাসত?
  • Shola the Great | 131.241.218.132 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৭:০৬579293
  • না, আমি যেটা বলছি সেটা ৯৩-৯৪ এর অনেক আগে। সেই সময়ের আনন্দমেলা থেকে টিনটিন, সন্তু-কাকাবাবু (সবুজ দ্বীপের রাজা) ইত্যাদি কেটে বাঁধানো আছে - ওটাও তার মধ্যে রয়ে গেছে। ৯৩-৯৪ তে বেরিয়ে থাকতে পারে, জানি না - কারণ তখন আমরা আর নিতাম না।
  • গান্ধী | 213.110.243.22 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৭:০৭579294
  • খুব ছোটবেলায় আনন্দমেলা বা শুকতারায় কিছু একটা পড়েছিলাম মনে হয়। সেদিন আমার বন্ধু সৌম্য, সেও বলছিল।

    রায়চৌধুরীর ঘরে বসে ডিনার করার সময় খইরী লেখকের হাত মুখে নেয়, তারপর উনার কথায় ছেড়ে দেয়, এমন একটা ঘটনা লেখা ছিল কি?
  • | 214.130.244.200 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৭:০৯579295
  • হ্যাঁ খৈরী কে নিয়ে লেখা টা আমিও পড়েছি। তখন মনে হচ্চে আনন্দমেলা বড় সাইজের ছিল..
  • কৃশানু | 226.113.128.239 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৭:১০579296
  • গান্ধী - ছিল। লেখাটার নামই ছিল খৈরী। কোনো এক নামী লেখক লিখেছিলেন। সাথে আরো অনেক নামী লেখক ঐখানে গেছিলেন। সেই লেখক কি সুনীল গঙ্গ ছিলেন?
  • প্পন | 126.202.219.191 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৭:১০579297
  • বোতিন, যা জানো না তাই নিয়ে বেশি বোকো না। ঃ I
  • কৃশানু | 226.113.128.239 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৭:১১579298
  • ইয়েস, বড় সাইজের ছিল। অজ্জিদ্দা তার মানে আরো পুরনো কোনো লেখার কথা বলছেন।
  • গান্ধী | 213.110.243.22 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৭:১২579299
  • হুঁকারটা আমিই দিয়ে দিই।

    হুম্ম
  • | 214.130.244.200 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৭:১৩579300
  • ঃ))))
  • Shola the Great | 131.241.218.132 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৭:১৭579301
  • আমি যে সময়ের কথা বলছি তখনও আনন্দমেলা বড় ছিলো। প্রথম স্টিন্ট। ছোট হয়ে যায় অনেক পরে, সম্ভবতঃ ৮৫ সালে ফের বড় হয়।

    বাড়িতে বইয়ের তাক খুঁজলে বাঁধানো বইটা পেয়ে যাবো, তারিখ দিয়ে দেবো খুঁজে পেলে।
  • প্পন | 126.202.219.191 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৭:১৯579303
  • সুনীল গঙ্গ্যোই।

    পুসির জন্য একটা অভিধান কিনে নিয়ে যেতে হবে দেখছি!
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন