এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ভ্রমণ  দেখেছি পথে যেতে

  • মুক্ত বন্দীশালায় কিছুক্ষণ - ২

    সমরেশ মুখার্জী লেখকের গ্রাহক হোন
    ভ্রমণ | দেখেছি পথে যেতে | ২৯ এপ্রিল ২০২৪ | ২০৮ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • আগের পর্বে বলেছিলাম তিনটি বিপজ্জনক অপরাধীর উদাহরণ দেবো যাদের আজীবন কারাগারে বন্ধ করে রাখা‌ই বাঞ্ছনীয়: 

    ১. চার্লস শোভরাজ - সুদর্শন, সপ্রতিভ, লেডিকিলার শোভরাজ বিকিনি কিলার নামে‌ও পরিচিত। কেননা তাঁর বেশ কিছু শিকার মৃত‍্যুকালে ছিলেন বিকিনি পরিহিতা। তাঁর শিকারদের সুচতুরভাবে প্রতারণা‌ করাই শুধু নয় জেল ও পুলিশের কর্মী‌দের চোখে ধূলো দিতে‌ও তিনি ছিলেন সিদ্ধ। তাই তার আর একটি নাম হয়ে গিয়েছিল Serpent. তার জীবনের ওপর সিনেমা, তথ‍্যচিত্র ছাড়া‌ও ২০২১এ BBC/Netflix বানায় আট পর্বের ড্রামা সিরিজ - The Serpent. (আমি দেখিনি)‌

    সিরিয়াল কিলার শোভরাজ ১২ জন মহিলা‌কে  হত‍্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হন। তবে সম্ভবত তিনি ৩০ জনকে হত‍্যা করেন। ভারতের জেলে ২০ ও নেপালের জেলে ১৯, জীবনের ৩৯ টা বছর জেলে কাটিয়ে শোভরাজ ৭৮ বছর বয়সে মুক্তি পান। কৃতকর্মের জন‍্য তার কোনো অনুতাপ হয়নি।  বরং তাঁর অপরাধ জীবনের অভিজ্ঞতা ব‌ই, সিনেমা, টিভি সিরিয়ালের জন‍্য বিক্রি করে রয়‍্যাল‌টি  হিসেবে প্রচুর অর্থ কামিয়েছেন। প্রভাব খাটিয়ে, ঘুষ দিয়ে তিনি ভারতের জেলেও ছিলেন আয়েশে। চার্লসের মতো অপরাধী কারাদন্ড মার্জনা‌র যোগ্য নয়। 

    মার্ক ডেভিড চ‍্যাপম‍্যান - ২৫ বছর বয়সে তিনমাস ধরে পরিকল্পনা করে মার্ক ঠান্ডা মাথায় জন লেননকে হত‍্যা করে। সেদিন সে অনেকক্ষণ জনের বাড়ির নীচে আর্কেডে অপেক্ষা করেছি‌ল। সে পিছন থেকে জনকে পাঁচবার গুলি করে। খুব কাছ থেকে গুলি করেছি‌ল সে। তবু একটি ফসকে যায়। চারটি‌ লক্ষ‍্যভেদ করে। জন হাসপাতালে যাওয়ার পথেই মারা যায়। মার্ক গুলি চালিয়ে ওখানেই দাঁড়িয়ে‌ছিল। পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেনি। ফলে হাতেনাতে ধরা পড়ে। বিচারে আজীবন কারাবাসে দণ্ডিত হয়ে মার্ক জেলে আছে ১৯৮১ সাল থেকে। কুড়ি বছর পর মার্ক আইনানুগ প‍্যারোলে মুক্তি‌র আবেদন করেছিল। তার আবেদন বিশেষজ্ঞ মনোবিদ, পুলিশ কর্তাদের দ্বারা নাকচ হয়। তাদের ধারণা মার্কের impulsive nature, psychotic behavior, least regard for human life, personality disorder, manic depression, paranoid schizophrenia ইত‍্যকার নানাবিধ মানসিক জটিলতা‌র কারণে ও সমাজের পক্ষে বিপজ্জনক। ফলে এযাবৎ ওর তেরোবার প‍্যারোলে‌র আবেদন নাকচ হয়েছে। ৪৪ বছর জেলে কাটিয়ে মার্ক ২০২৫ সালের আগস্টে  চতুর্দশতম প‍্যারোল আবেদনের শুনানির অপেক্ষা‌য় আছে। তখন মার্কের বয়স হবে সত্তর।

    হাদি মাতার - ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত স‍্যাটানিক ভার্সেস ব‌ইয়ের জন‍্য ১৯৮৯ সালে ইরানের ধর্মগুরু আয়াতোল্লা খোমেনী‌ সলমন রুশদির মৃত‍্যুদণ্ডের ফতোয়া জারী করেন। সে বছরেই খোমেনী মারা যান কিন্তু জারি থাকে ফতোয়া। সাথে যোগ হয় রুশদি‌র প্রাণনাশের পুরস্কার - তিন মিলিয়ন ডলার। সলমন ব্রিটিশ নাগরিক। তাই ব্রিটেন তাঁকে সরকারি নিরাপত্তা দেয়। প্রাণনাশের আশাংকা‌য় রুশদি দশ বছর লোকচক্ষুর আড়ালে ব্রিটেনে গোপন জায়গায় সরকারি নিরাপত্তা‌য় কাটান। তবুও তার মধ‍্যে রাষ্ট্রীয় মদতপুষ্ট ইরাণী সন্ত্রাসীরা তাঁর ওপর ছবার ব‍্যর্থ হামলা চালায়। ১৯৯৮ সালে ব্রিটেন ও ইরানের মধ‍্যে কূটনৈতিক সমঝোতা‌য় ইরান রাষ্ট্রীয় মদতপুষ্ট সন্ত্রাসীদের তুলে নেয়। তবে ফতোয়া ও পুরস্কার জারি থাকে। ২০০০ সাল থেকে রুশদি ভাবেন তাঁর প্রাণনাশের বিপদ হয়তো কেটে গেছে। তাই তিনি আমেরিকা‌য় যাতায়াত শুরু করেন বিশেষ নিরাপত্তা ছাড়াই।

    ১২ই আগস্ট ২০২২ - ফতোয়া জারির ৩৩ বছর পর নিউ ইয়র্কের Chautauqua Institution এর অডিটোরিয়ামে রুশদি যে বিষয়ে বক্তব্য রাখতে গেছেন - ভুক্তভোগী হিসেবে সেটি তার ভালো‌ভাবে জানা - The importance of protecting writers whose lives are under threat. হঠাৎ দর্শকদের মধ‍্যে থেকে ২৪ বছরের হাদি মাতার ছুটে উঠে আসে স্টেজে। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই রুশদি‌কে দশ, বারোবার ছুরিকাঘাত করে। ও হাতেনাতে ধরা পড়ে। রুশদি প্রাণে বেঁচে যান। তবে ওনার ডান চোখ নষ্ট হয়ে যায়। একটা হাত‌ও আংশিক অকেজো হয়ে যায়। 

    পরে রুশদি সাংবাদিকদের বলেছেন - হাদি মাতারের সাথে তাঁর ঐ ২৭ সেকেন্ডের চকিত মোলাকাত ছিল প্রায়-মৃত্যুর অভিজ্ঞতা - Near Death Experience. আর হাদি সাংবাদিকদের বলেছিল - রুশদি বেঁচে গেল? ভারি আশ্চর্য তো!  রুশদিকে ১৮ দিন পর হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার সময় তাঁর চিকিৎসক বলেছিলেন, আপনি ভাগ‍্য‌বান কারণ হাদি ঠিক জানতো না - ছুরি দিয়ে নিশ্চিতরূপে কীভাবে  মানুষ মারা যায়। 
     
    তিন মাসের পরিকল্পনা‌য় সেটা ভালো করে জানতো লেননের হত‍্যাকারী মার্ক। সে কাছ থেকে পাঁচটা গুলি ছুঁড়ে‌ছিল .38 Special হেভি ক‍্যালিবার রিভলবার থেকে। পয়েন্টে‌ড বুলেট শরীর এফোঁড় ওফোঁড় করে বেরিয়ে যেতে পারে তাই ও ভেবেচিন্তে ব‍্যবহার করেছি‌ল Hollow point expanding বুলেট যা Soft Target মানে মানব শরীরে ঢুকেই ছেৎরে ফেটে যাবে - to cause maximum damage. তাই লেনন হাসপাতাল অবধি‌ জীবন্ত পৌঁছোতে পারেন নি।

    হাদি লেবাননের মুসলিম। সে ছশো পাতার স‍্যাটানিক ভার্সেস ব‌ইয়ের চার পাঁচ পাতার বেশী পড়েনি‌। কিন্তু শুনেছে রুশদি ঐ ব‌ই‌তে ইসলামের অবমাননা করেছেন। সে খোমেনী‌র ফতোয়ার কথাও জানতো। ওর হয়তো মনে হয়েছে তা পালন করার নৈতিক দায়িত্ব ওর ওপরেও বর্তায়। তাই সে রুশদির প্রাণ নিতে চেয়েছিল। হাদি ধরা পড়ার পর ওর মা ওর সাথে দেখা‌ করেননি। ওর প্রাণভিক্ষা‌ও করেননি। ওর ব‍্যাপারে কোনো কথা‌ই বলতে চাননা। মঞ্চে হাতে ছুরি নিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েও হাদি আদালতে বলেছে ও নিরপরাধ - he pleaded not guilty. দেখা যাবে আদালত কী ভাবে।

    ফেরা যাক মুক্ত বন্দী‌শালায়

    অনেকের ধারণা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মানে ১৪ বা ২০ বছর। এই ধারণা‌র কারণ‌ও আছে। অনেক সময় সরকার কিছু আজীবন দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীদের ১৪ থেকে ২০ বছর মেয়াদ খাটার পর ছেড়ে দেন। কিন্তু সরকার চাইলে কাউকে আমৃত্যু কারাগারে বন্দী রাখতে পারে। তবে নতুন, হার্ডকোর অপরাধীদের জন‍্য কারাগারে স্থান সংকুলানের জন‍্য জেলারের সুপারিশে সাজার মেয়াদে‌র এক তৃতীয়াংশ রেগুলার জেলে কাটানোর পর কিছু শান্ত, ভদ্র, নিরীহ স্বভাবের দণ্ডিত‌দের মুক্ত বন্দী‌শালায় এনে রাখা হয়। তাতে বন্দী পিছু সরকারের খরচ‌ও হয় অনেক কম। 

    তবে কিছু ক্ষেত্রে অপরাধীরা মুক্ত বন্দী‌শালায় আসার সুযোগ পায় না। সেগুলি আর না লিখে উৎসুকদের জন‍্য রাজস্থান সরকারের Open Prison Policy থেকে রুল 3 অংশটা‌ই রেখে দিলাম। তাতে দুটো কৌতূহলোদ্দীপক ব‍্যাপার চোখে পড়লো। এক- ক্লজ 3d তে যেসব ধারায় দণ্ডিত অপরাধীরা মুক্ত বন্দী‌শালায় আসার জন‍্য বিবেচিত হবে না বলা আছে তাতে দফা 302 বা নরহত্যা নেই কিন্তু আছে দফা 303 - এই দফা লাগু হয় যদি কেউ সাজার মেয়াদ কাটার সময়ে জেলে বা প‍্যারোলে কদিনের মুক্তি পেয়ে তখন আবার কাউকে হত‍্যা করে।   তখন শাস্তি ফাঁসি বা আমৃত্যু কারাবাস। 
     
    দুই- ক্লজ 3m - অবিবাহিত বন্দীরা বিবেচিত হবে না। অর্থাৎ মুক্ত বন্দীশালা‌য় স্থানান্তরিত হতে গেলে তাদের রেগুলার জেলে আসার আগে বিবাববন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। জেল থেকে প‍্যারোলে কদিনের ছুটি পেয়ে বন্দী‌রা সহোদর/রা ভাই বোনের বিয়েতে যেতে পারে তবে নিজে বিয়ে করে কিনা জানা নেই। জেল খাটা পাত্রর সাথে কনের পিতামাতা বিয়ে দিতে বা পাত্রী নিজে‌ই বিয়েতে রাজী হবে বলে মনে হয়না।  তবে আইনত কোনো বাধা আছে বলে মনে হয় না। এই ক্লজ‌টা আমার অদ্ভুত এবং অযৌক্তিক লাগলো।

     
    নরহত্যা‌র দায়ে দণ্ডিত বিবাহিত অপরাধীর একজন অভয় রাজ গুর্জর। ২০০৮ সালে ওর গাঁয়ে এক উৎসবের রাতে ও তরোয়ালের কোপে ওদের গাঁয়ের এক অত‍্যাচারী গুণ্ডা ও তার দুই সাগরেদের ভবলীলা সাঙ্গ করে দিয়ে‌ছিল। কিন্তু ও পালায় নি। তরোয়াল হাতে থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করে। গুণ্ডা‌র দল সে রাতে বেশ নেশাগ্রস্ত অবস্থা‌য় ছিল। অভয়ের উন্মত্ত তরোয়ালের সামনে দাঁড়াতে‌ই পারে নি। কচুকাটা হয়ে যায়। অভয় বলে, গ্ৰামবাসীরা খুশিতে গ্ৰামে ১০০ কেজি লাড্ডু বেটেছিল। থানেদার সে রাতে ওকে বলেছিল, কুছ মজবুরী কে বজহ সে বেবশ হমলোগ যো নেহি কর পায়া, তু নে কর দিখায়া অভয় - সাবাশ! আদালতে থানেদারের সদর্থক সাক্ষ্যে প্রতিপন্ন হয় অভয় যাদের উড়িয়ে দিয়েছে তারা কেউ‌ই নিরীহ সাধারণ গ্ৰামবাসী নয়। অত‍্যাচারী গুণ্ডা। অভয় ঐ কাজ করে ফেলেছে সহ‍্যের সীমায় পৌঁছে ক্ষণিকের উত্তেজনা‌য়।  তাই বিচারে ফাঁসির বদলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় অভয়ের।

    অভয়ের কথা শুনে মনে পড়ে গোবিন্দ নিহালনির ‘অর্ধ সত‍্য’ সিনেমার শেষ দৃশ্য। সাসপেন্ডেড ইনস্পেক্টর অনন্ত ভেলাঙ্কার (ওম পুরী) সিভিল ড্রেসে বুলেট চালিয়ে থানায় আসে। তার সিনিয়র সফি ইনামদার ওর হাবভাব দেখে শঙ্কিত হয়ে বলে - কেয়া বাত হ‍্যায় ভেলু? ওম ভাবলেশহীন কণ্ঠে বলে - স‍্যার ম‍্যায় নে রামা শেট্টি কো মার দিয়া। রাজনৈতিক মদতপুষ্ট সমাজবিরোধী রামা শেট্টি‌র জন‍্য‌ই ওম পুলিশের উর্দী পরেও কিছু করতে না পেরে নিজেকে নপুংসক ভাবছি‌ল অনেকদিন ধরে। রামাকে ক্ষণিকের উত্তেজনা‌য় গলা টিপে মেরে ফেলা একটি স্ফূলিঙ্গে সেই জমা বারুদে লাগা বিস্ফোরণ। সে বারুদ জমা হয়েছিল নীতি‌বান ইন্সপেক্টর অনন্ত ভেলাঙ্কারের মনে - অনেকদিন ধরে - নানা পরিস্থিতি‌তে।



    সদ‍্যজ্ঞাত প্রেক্ষিতে আমি ভালো করে আবার অভয়কে দেখি। ২০২৩ এ তখন ওর বয়স বললো ৪৮ - তাহলে ১৫ বছর আগে যখন ও তরোয়ালের ঘায়ে কচুকাটা করেছি‌ল তিন গুণ্ডাকে - তখন ও তেত্রিশ। এখন শীর্ণকায় চেহারা, শান্ত মুখভাব দেখে অনুমান করা কঠিন একদা এই মানুষ‌টি ক্ষিপ্ত হয়ে এক লপ্তে তিন গুণ্ডা‌র ভবলীলা সাঙ্গ করে দিয়েছল। গতকাল কেল্লায় ওকে দেখে ঘুণাক্ষরেও মনে হয়নি ও এক অতীতের ঘাতক! সাবেক পোষাকে সহজ সরল স্বাভাবিক এক দেহাতী মানুষ বলেই মনে হয়েছিল।

    জিজ্ঞাসা করি, ঐ ঘটনার জন‍্য কী পরে আপনার কোনো অনুশোচনা হয়েছে? 

    - কখনো‌ই নয়। পুণ‍্যকাম করলে অনুশোচনা কেন হবে বাবুজী? 

    - ঠিক আছে, অনুশোচনা না হোক, এই যে আপনার জীবনের পনেরোটা বছর জেলে কেটে গেল, তার জন‍্য কোনো আক্ষেপ হয়?

    - তা হয় বৈ কি। তবে পুণ‍্য কামাতে গেলে‌ও তো দক্ষিণা দিতে হয়, ভেবেছি এটাও তেমন। তবে ওপর‌ওয়ালা আছেন। তাই আবেদন করতে এগারো বছর জেলে কাটানোর পর সরকার এখানে পাঠিয়েছে। এখানে‌ও চার বছর হয়ে গেল। হালে রিহাইয়ের আবেদন করেছি। হয়তো মঞ্জুর হয়ে যেতে পারে।

    - এখানে এসে কেমন লেগেছে?

    - এখানে থাকলে জেলের মতো দমবন্ধ লাগে না।  পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখা যায়। তাইতো আমাদের একমাত্র ছেলে নির্মল এগারো ক্লাসের পরীক্ষা‌র পর চন্দ্রপুর থেকে কদিনে‌র জন‍্য এসেছে আমার কাছে থাকতে।

    - এখানে পরিবারের কেউ আপনার সাথে এসে থাকতে‌ও পারে? তাহলে তো ভালো‌ই বলতে হবে।

    - হ‍্যাঁ পারে। একজনের সাথে আলাপ করাবো। নারায়ণ সিং তোমর। সে  তার বৌকে নিয়ে আছে। এখানেই তাদের একটি মেয়ে‌ও হয়েছে। নাম রেখেছে নয়না।

    - তোমর মানে তো রাজপুত বংশের?

    - হ‍্যাঁ। ওর চেহারা দেখবেন। ওদের মেয়েকে দেখবেন। অপরাধ একটা করে ফেলে‌ছে বটে কিন্তু কথা বললে‌ বুঝবেন ওর ত‌ওরতড়িকা গাঁ‌ওয়ারদের মতো নয়। 



    - কিন্তু বৌ নিয়ে আছে মানে? বিয়ে কখন হোলো? 

    - বিয়ে ওর জেলে আসার আগেই হয়েছিল। কিন্তু বিয়ের মাস চারেকের মধ‍্যে‌ই খুনের দায়ে ধরা পড়ে নারায়ণ। তখন‌ও ওদের ছেলেপুলে হয়নি। ওদের পরিবারের কারুর নেতাদের সাথে যোগাযোগ আছে। তাদের সুপারিশ, বৌ সন্তান‌হীনা এই সব কারণে সাত বছর রেগুলার জেল খেটে এই মুক্ত বন্দী শালায়  ও এসেছে বছর চারেক আগে। তখনই ও বৌ কে নিয়ে আসে। নয়নার জন্ম এখানে‌ই। ওর বয়স এখন বছর আড়াই।

    - বিয়ের পরেই ও জেলে চলে এলো, ওর বৌ এতোদিন অপেক্ষা করেছি‌ল ওর রিহাইয়ের জন‍্য?

    - বয়সে অনেকটা ছোট ওর বৌ। নারায়ণের কাছেই শুনেছি বৌয়ের সাথে ওর ইসক ছিল বিয়ের আগে থেকে। আপনি তো দুনিয়া‌দারি দেখেছেন বাবুজী, বোঝেন নিশ্চয়ই সচ্চা প‍্যার মহব্বত থাকলে অনেকে অনেক কিছু সহ‍্য করতে পারে মানুষ। সাত বছর জুদাই ভী।

    - যদি কিছু মনে না করেন, আপনার‌ও কি বিয়ের আগে মহব্বত ছিল আপনার বৌয়ের সাথে? আপনি তো বেশ হ‍্যান্ডসাম।

    সরল হেসে অভয় বলে, না, না বাবুজী, আমাদের বাড়ি থেকে‌ই দেখেশুনে‌ বিয়ে হয়েছিল। আমি যখন জেলে আসি, আমাদের ছেলে নির্মল তখন দু’বছরের ছোটু। কোথায় আর যাবে বৌ। তাই আমার ফেরার অপেক্ষা‌য় আছে। কিছুদিন থাকে ওদের বাড়িতে, কখনো আমাদের বাড়িতে। সবাই খুব পছন্দ করে ওকে। এভাবেই ওদের দিন কাটছে‌।

    অভয় আলাপ করায় নারায়ণের সাথে। লালচে ফরসা চেহারা বহদিন জেলের হাওয়া খেয়ে মলিন হয়ে গেছে। তবু বোঝা যায় আদতে কেমন ছিল। নীলাঞ্জনা নয়না‌ও মিষ্টি। এখানে ও বাবা মায়ের সাথে থাকলেও আর কোনো আত্মীয় পরিজন,  নেই। সমবয়সী খেলার সাথী নেই। পার্কে গিয়ে খেলার সুযোগ নেই। পাথর বাঁধানো উঠোনে - পাশে এক চিলতে সবুজ। তাতে দু একটি ছোট গাছ। এটুকু‌ই ওর প্রকৃতি পরিচয়।  খেলনা নিয়ে নিজের মনে একা একা খেলে। ছোট সাইকেল চালায়। বন্দী‌শালায় ওর বাবার সহবন্দী‌রাই তার সঙ্গী। ওদের কাছে‌ও শিশুটি মুক্ত বাতাসের মতো।  এটা স্বাভাবিক বাড়ির পরিবেশ নয়। কিন্তু শিশুরা কী বোঝে তারা কোনো অস্বাভাবিক পরিবেশে আছে? কে জানে। তবে নয়না খুব গম্ভীর। প্রায় পৌনে ঘন্টা কাটিয়ে‌ছিলাম ওখানে। তার মধ‍্যে দুর থেকেও নয়নার মধ‍্যে শিশুসুলভ উচ্ছলতা দেখিনি। নয়নার জন‍্য মন খারাপ লেগেছিল আমার।

    নারায়ণ একটা টুল এনে বলে, বাবুজী বসুন না একটু, চা খেয়ে যান। পর্দা ফেলা ঘরের দিকে তাকিয়ে মুক্ত বন্দীশালাবাসিনী ঘ‍রণীকে চায়ের কথা বলে। একটু বাদে ওর বৌ থালায় করে তিনটে পরিস্কার ছোট গ্লাসে চা নিয়ে আসে। আমরা চা তুলে নিতে সে এক পরদেশী বুজুর্গ আঙ্কলকে হাত তুলে নমস্কার করে ঘরে চলে যায়। সে বেশ সুশ্রী। তাই ওদের মেয়েটি অমন ফুটফুটে হয়েছে। একদা সাত বছরের বিরহজ্বালা হয়তো প্রশমিত হয়েছে স্বামী কন‍্যা‌কে নিয়ে থেকে। হলেই বা একটা মোটে ঘর। তাই তার মুখে লজ্জা, বিষন্ন‌তা, ম্রিয়মাণ‌ভাব চোখে পড়লো না। আর পাঁচটা গৃহস্থ‌বধূর মতোই স্বাভাবিক লাগলো।

    এই সব দেখেশুনে মনেই হচ্ছিল না আমি কোনো বন্দী‌শালায় এসেছি, হলেই বা তা মুক্ত। একাকী ভ্রমণপথে এমন কত যে সব বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়! দলের সাথে কলবল করে ঘুরলে এসব অধরা রয়ে যায়। সেদিন দলে থাকলে আমি গাড়ি বা অটোতে যেতাম। ভেতরের শর্টকাট রাস্তা দিয়ে দেড় কিমি হেঁটে যেতাম না, এসব চোখেও পড়তো না। পড়লেও দলে থাকলে অভয় আমায় ভেতরে ডাকতো না।

    নারায়ণকে শুধোই, কেমন লাগে এখানে? 

    নারায়ণ বলে, আমি তো পরিবার নিয়ে থাকি। খারাপ লাগে না। 

    অভয় বলে, আমরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্তের মধ‍্যে বাইরে যেতে পারি। তাই কাল নির্মলকে নিয়ে কেল্লায় বেড়াতে গেছি‌লাম। শুনেছি কেল্লা‌টা বিখ্যাত। তাই তো আপনি কলকাতা থেকে এখানে এসেছেন ওটা দেখতে। অথচ চার বছর এখানে থেকেও আমার যাওয়া হয়নি। সন্ধ্যায় ফিরে আসতে হয়। ইনচার্জ মীনাজী রোজ সকাল বিকেল খাতায় হাজিরা নেন। এছাড়া জেলের মতো আর কোনো কড়াকড়ি নেই। এখানে থাকার এই নিয়ম সবাই মেনে চলে। বছরে দুবার প‍্যারোলে সাত দিনের জন‍্য বাড়ি যাওয়া যায়। এছাড়া বিশেষ কারণে, ধরুন বাড়িতে নিকটজনের শাদী বা দেহান্ত হলেও কদিনে‌র ছুটি পাওয়া যায়।

    - তখন যদি কেউ গিয়ে আর না ফেরে?

    অভয় একটা মোক্ষম ডায়লগ ঝাড়ে। বাবুজী, তোতে কো পিঞ্জরে মে রখতে হ‍্যায়, কবুতর খুলা ছোড়া যাতা হ‍্যায়। আট দশ বছর রেগুলার জেলে কাটিয়ে যারা এখানে আসে তারা জানে এরপর পেতে পারে আইনত মুক্তি। তাদের জনমকুণ্ডলী আছে পুলিশের কাছে। পালিয়ে যাবে কোথায়? কতদিন? ধরা পড়বে‌ই। তারপর আর মাফি নেই, আমৃত্যু জেলেই পচতে হবে। এসব কথা এখানে আসার আগে জেলার সাহেব প‌ইপ‌ই করে বলে দিয়েছেন। জিসকো ভী থোরা সা অকল বচা হ‍্যায়, ও কভি এ্যায়সা হরকৎ করনা তো দুর, সোচে গা ভি নেহি।

    অভয়ের কথা‌র প্রমাণ‌ও পেলাম এই লেখা লিখতে গিয়ে, উপরে দেওয়া নিয়মের Rule 3 c তে।
     
    (পরবর্তী পর্বে সমাপ‍্য)

     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ভ্রমণ | ২৯ এপ্রিল ২০২৪ | ২০৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 172.58.241.244 | ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:৪৪531214
  • এই বিষয়ে কিছুই তেমন জানিনা। এই লেখা পড়ে অনেক কিছুই জানা হলো। সেটা খুবই ইন্টারেস্টিং। ক্লজ 3m আমারও খুব "অদ্ভুত আর অযৌক্তিক" লাগলো। এর কারণ তো কিছুই বুঝলামনা!
    এমনিতে ভাষা নিয়ে আমার পিটপিটানি নেই। তবু এই লেখায় কয়েকটা হিন্দী ঘেঁষা বাংলা একটু চোখে লাগলো -- ''লাগু হয়", "মেয়াদ কাটা", "লাড্ডু বেটেছিলো" এইসব। যখন কথোপকথনের মধ্যে হিন্দী শব্দ মিশছে, সেগুলো পড়তে কিন্তু চোখ হোঁচট খাচ্ছেনা। নিজের এইরকম মনে হওয়াটা দেখে নিজেই একটু আশ্চর্য্য হলাম। ভাবছি এর কারণ কী হতে পারে (এটা কিছুটা জোরে জোরে ভাবা, লেখককের প্রতি কিছু দাবী নেই)।
  • বিপ্লব রহমান | ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:৪৯531215
  • আশ্চর্য ভ্রমণ, আশ্চর্য সব মানুষ। দারুণ অভিজ্ঞতা ভাই। 
     
    তবে বিদেশি কেস স্টাডি ও আইনের দীর্ঘ আলাপ বাহুল্য মনে হয়েছে, এসব ভ্রমণ কাহিনীর সাবলীলতা ক্ষুন্ন করেছে। 
     
    আপনার সব লেখা অনুসরণ করছি। শুভ কামনা। 
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ২১:৪৮531225
  • পড়ছি। 
     
    স‍্যামের লেখা না পড়লে নিজেরই লস্। বিনা খাটাখাটুনিতে এমন সব আশ্চর্য অভিজ্ঞতার শরিক হতে পারা - আমাদের সৌভাগ্য। চালিয়ে যাও বস্। আমরা পড়তে থাকি।
  • সমরেশ মুখার্জী | ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ২২:৪৪531226
  • kk লান  
     
    আমার লেখা মনযোগ দিয়ে পড়েন বলে কয়েকটি কথা বলি:
     
    ১. বাংলায় প্রথাগত পারদর্শী‌তা কম বলে লেখা‌য় অনেক বানান ভুল হয় আমার। চতুর্মাত্রিক কয়েকবার ভুল ধরে হাল ছেড়ে দিয়েছেন। 
     
    ২. সীমিত ভাষাগত যোগ্য‌তা সত্ত্বেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে  আমার লেখায় এবং মন্তব‍্যে ভাষার ব‍্যবহার পরিশীলিত।বাক‍্য বিন‍্যাস গোছানো। বানান ভুল হলেও অসংলগ্ন বাক‍্য লেখা আমার আসে না।
     
    ৩. আবার কিছু ক্ষেত্রে আমার প্রকাশ‌ভঙ্গি রম‍্যরসে সিক্ত। তা কখনো রকের ক‍্যাওড়ামির বর্ডার লাইন অবধি চলে যায়। আসলে আমি Monotone চরিত্র ন‌ই, তাই আমার নেই কোনো consistent approach. বিভিন্ন ঋতু, কভি খুশি কভি গম এর মতো মুড সু‌ইং হয় আমার। লেখাতেও তার ছাপ পড়ে।  
     
    ৪. তবে যোষিতা যেমন "এল ডোরাডো" ট‌ই‌তে এক জায়গায় অকপক সত‍্যভাষণ করেছেন - উদ্ধত কাউন্সিলর যোষিতা‌র চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে, নিজের প‍্যান্টের বেল্ট খুলে বলেছন - "চল তোকে চুদবো" - এটা আমি লিখতে পারতাম না। প্রয়াত মলয় রায়চৌধুরীর মতো ভাষা প্রয়োগ‌ও আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এটা আমার হিপোক্রিসি নয়, সীমাবদ্ধতা।
     
    ৫. এ লেখায় সংলাপ অংশ ছাড়াও যে 'লাগু হয়", "মেয়াদ কাটা", "লাড্ডু বেটেছিলো" এইসব শব্দ এসেছে - তার কারণ কিছু জায়গায় আমার বর্ণনা অংশেও তাদের ভাবনা, সময়, পরিবেশ, পরিস্থিতি প্রতিফলিত করতে চেয়েছি। এটা slip of finger নয় - সজ্ঞানে করেছি।
     
    ৬. আপনি যেমন আপনার ভাবনা নির্দ্বিধায় loud thinking করলেন - আমি‌ও করলাম। পাঠক লেখক মিথস্ক্রিয়া‌য় এটাই কাম‍্য।
     
    লেখা‌র ওপর পাঠকের - জাস্ট অসাম, সমৃদ্ধ হলাম, কোনো কথা হবেনা, চালিয়ে যান  -  এসব দেখে দেখে অভ‍্যস্থ চক্ষু এমন বিশদ, অকপট মন্তব্য দেখে তৃপ্ত হয়।
     
    ভালো থাকবেন।
     
     
  • সমরেশ মুখার্জী | ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ২২:৫৯531227
  • বিপ্লব বাবু 
     
    "বিদেশি কেস স্টাডি ও আইনের দীর্ঘ আলাপ বাহুল্য মনে হয়েছে, এসব ভ্রমণ কাহিনীর সাবলীলতা ক্ষুন্ন করেছে।"
     
    এটা ভ্রমণকাহিনী  নয়। এই সিরিজে লিখিত ২২ টা পর্বের থেকে এর চরিত্র আলাদা। বহু জায়গায় ঘুরে ৬২+ বয়সে আমি‌ও মুক্ত বন্দী‌শালা সেই প্রথম দেখে অভিভূত হয়েছিলাম। লেখক হিসেবে সেই অভিঘাত কিছু প্রাসঙ্গিক পরিপ্রেক্ষিত সহকারে এ লেখায় ধরতে চেয়েছি - নিবন্ধের মতো করে।
     
    তবে পাঠক হিসেবে আপনি আপনার অভিমত অকপটে জানিয়েছেন। এটাই বাঞ্ছনীয়।
     
    ভালো থাকবেন।
     
     
  • সমরেশ মুখার্জী | ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ২১:৫৩531255
  • অমিতাভ,

    পুনরাবৃত্তি হয়ে যাচ্ছে, তবু বলি - আমি মূলতঃ নির্জনতাপ্রিয়। তাই পার্ক স্ট্রিট, ভবানীপুর, লক্ষ্মৌ রেসিডেন্সি, কাশিমবাজারে ইংলিশ ও ডাচ এবং আরো কিছু বিদেশি‌দের সিমেটারি এবং হায়দ্রাবাদে সাত গুম্বজ বা আরো নানা অখ‍্যাত দেশী সমাধিক্ষেত্রে গিয়ে অনেকক্ষণ কাটিয়েছি নিশ্চুপে। শ্মশানের হট্টগোলের থেকে কবরখানার নিস্তব্ধ‌তা আমার শান্তি‌দায়ক লাগে।

    তেমনি এই Freedom music vdoটি দেখলে‌ শান্তি‌র সাথে মনে হয় ইচ্ছা‌মতো চলাফেরার স্বাধীনতা হারিয়ে বন্দী জীবন কাটানো কী দুঃসহ। তা যদি সাইবাবা, সোমা সেন এবং এমন আরো অনেকের মতো অকারণে হয় - অভিশাপ।

    আবার kk লানকে যা লিখেছি তাও সত‍্য। আমি বৈচিত্র্য‌পিয়াসী‌। তাই নির্জনতা, শান্তি পছন্দ হলেও কখনো দলে মিলে আড্ডা, হৈচৈ, বেড়ানো, রঙ্গতামাশা করেছি চুটিয়ে। নভী মুম্বাই‌তে থাকতে ২০১২-১৪ দুটি বছর আমার থেকে গড়বয়সে দু দশকের ছোট স্থানীয়‌দের সাথে পশ্চিমঘাটের সহ‍্যাদ্রী অঞ্চলে ডজনখানেক হিল ফোর্ট ট্রেকে বা দলবদ্ধ গোয়া ভ্রমণে ধুম মস্তি করেছি। তখন স‍্যামদা অন‍্য ফর্মে। দারুণ সুন্দর সে সব অভিজ্ঞতা। তা নিয়ে কেবল একটি লেখা লিখেছি। প্রকাশিত হয়েছে বার্ষিক ‘ভ্রমণ আড্ডা’ পত্রিকায়। অথচ শেয়ার করার মতো সেসব অনবদ‍্য ভ্রমণ স্মৃতি অনেক।

    লেখা পোষ্ট করলে পাঠকের মনতরঙ্গের আভাস পেলে ভালো লাগে। সে লেখা তাদের ভালো না লাগলেও ক্ষতি নি‌ই। তবে ফিডব্যাক মার্জিত হবে সে আশা নিশ্চয়ই দূরাশা নয়। বড় ফোরামে লিখলে -  ক্লিক করে অনেকে - স্কিম থ্রু করে অধিকাংশ - মন দিয়ে পড়ে মুষ্টিমেয়। তার মধ‍্যে অঙ্গুলিমেয় মন্তব্য‌ও আমার মতো সাধারণ মানুষকে অনুপ্রাণিত করে নানা অভিজ্ঞতা শব্দের কায়ায় ধরতে। সুচিন্তিত  মন্তব্য ভাবনার ভিটামিন। আঙ্গুলের স্টেরয়েড।

    নিছক বিশেষ‍্য পদ হিসেবে যে লেখে সে লেখক‌ - যেমন যে ঝাড়ু দেয় সে ঝাড়ু‌দার‍। তবু নিজেকে লেখক ভাবতে অস্বস্তি হয়। এটা শ্রীযুক্ত সৃষ্টিছাড়া নিক উবাচ  অনুযায়ী ন‍্যাকামি নয়। Dispassionate self assessment.

    ভালো থাকবেন। সঙ্গে থাকবেন।



     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন