এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বরফে ঢাকা নদীপথ - চাদর ট্রেক

    কৃশানু
    অন্যান্য | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ | ৩৮৪৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • san | 24.99.13.253 | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ০১:০৮584363
  • ছাতিয়া মনে হয় ছাতির প্লুরাল ;-)
  • Yan | 161.141.84.239 | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ০১:১৪584364
  • দিদিমা মত্ত হয়ে গেছেন, ডা কে ডা হু কী । ছাতার চাকরি দুম ফট! ---এইরকম হতে পারে কী? জাস্ট একটা পসিবিলিটি আরকি! ঃ-)))
  • কৃশানু | 213.147.88.10 | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ০১:২৬584365
  • বাহ বাহ, এইটাতো জানতুম না!! ধন্যবাদ সিকিদা।
  • kumu | 132.161.228.79 | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১০:২৩584366
  • কৃশানু লেখো দেখি ট্রেকের গল্প।

    এইসব টই হাইজ্যাকিংএর অপচেষ্টায় বিভ্রান্ত হয়ো না।ছাতার চাকরি পর্যন্ত এনে ফেলেছে-ভাবা যায় না।
  • Abhyu | 85.137.8.90 | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১০:৩৫584367
  • আমার কণ্ঠ হতে গান কে নিল ভুলায়ে,
    সে যে বাসা বাঁধে নীরব মনের কুলায়ে॥
    আমার কেমন সন্দ হয় বর্ষার বাসাকে কুলায় বলে। দেখবেন সব কুলায়ের রেফারেন্স আসছে বর্ষাকালে। একা নজরুল বাদে। সাঁঝের পাখিরা ফিরিল কুলায় তুমি ফিরিলে না ঘরে। কুলায়ে না, কুলায়। তবে ছাতার চাকরি থেকে সময়্মতো বাড়ি না ফিরলে অনেক কিছুই হতে পারে।
  • Yan | 161.141.84.239 | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ০৭:০৫584368
  • বাসার উপরে ছাতা মেলে রাখতে হয়, বর্ষাকালে। নইলে বাসা ভিজে যাবে না???? ঃ-)
  • Yan | 161.141.84.239 | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ০৭:১৫584369
  • বলা যায় না প্রাচীন কালে কেউ হয়তো লিখছিলেন,

    "আকাশে খেলিছে কালো হাতি/ কুলায় মেলিয়া রাখো ছাতি।"

    মানে বুঝলেন্না, কালো কালো হাতির মতন মেঘ আকাশে খেলছে, বৃষ্টি নামলো বলে, বাসার উপরে ছাতা মেলে রাখুন। ঃ-)
  • কৃশানু | 213.147.88.10 | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ২৩:০৯584370
  • 8)

    ভোর হতেই ঘরে ঢুকে পড়ল এক পশলা আলো। ঘরের দক্ষিণ দিকটা কাঁচের দেওয়াল। আলোয় চোখ খুলে গ্যাল। রুম হিটার জ্বলেছে সারারাত, তাই ঘর বেশ আরামদায়ক। লেপ ঝেড়ে ফেলতে অসুবিধে হল না। দাঁড়ালাম জানালার সামনে। নীল আকাশ। সামনেই উঁচু উঁচু স্তুপের মত পাহাড়, ছুট্টে গিয়ে ধরা যাবে তাদের। লালচে পাহাড়ের মাথায়ে গায়ে বরফ। তাদের ঘিরে রয়েছে কাঠির মত চিনার গাছের জঙ্গল। পাখি নেই। দু-একটা রোমশ পাহাড়ি কুকুর, অলস চোখে তাকিয়ে আছে। এ শীতের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবার শক্তিটুকুও তারা হারিয়ে ফেলেছে।
    তারপরই হৈহৈ কাণ্ড রৈরৈ ব্যাপার। মনীশজি(আয়োজক দের একজন) একটা হুইস্ল গলায় ঝুলিয়ে সবাইকে ডাকাডাকি করতে লাগলেন। আটটার সময় ব্রেকফাস্ট। তারই খবর হল। আমরাও ঝটপট তৈরি হয়ে নিলাম। রবি ট্রাইপড নেওয়ায় আমারটা রেখে যাওয়া হল। বেশ কিছু জিনিস, যেগুলো ট্রেকের সময় কাজে লাগবে না, যেমন মোবাইল ফোন,পার্স, কিছু অতিরিক্ত পোশাক একটা ছোট ব্যাগে ভরে পাসাগের বাড়িতে রেখে দেওয়া হল। আমার রুক্স্যাক যথেষ্ট ভারি। কাঁধে ঝুলবে ক্যামেরার ব্যাগ। কিন্তু এই ট্রেকের সুবিধে হল, খুব বেশী চড়াই উৎড়াই নেই, নদীপথ ধরে সোওজা হাঁটো। আর তাছাড়া জামা কাপড়ও ব্যাগের চেয়ে বেশী গায়েই থাকবে।
    একটা ছোটো জটলা। তিন বন্ধু এসেছিলো ব্যাঙ্গালুরু থেকে। দুজন অসুস্থ হয়ে পড়ে। যা হয়, এ এম এস বা অ্যাকিউট মাউন্টেন সিকনেস। উপসর্গ মাথা ধরা, নজিয়া। খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে অনেকটা উঁচুতে উঠলে হয় এই সমস্যা। একমাত্র ওষুধ ডায়ামক্স। কিন্তু ডায়ামক্সও কাজ করতে কিছুটা সময় নেয়। তাই অসুস্থতা বেশী হলে একমাত্র উপায় আরও নীচে নেমে যাওয়া, যে উচ্চতা অবধি উপসর্গ গুলো দেখা যায়নি। শীতের মাস গুলোতে লেহ সরকপথে বাইরের দুনিয়ার সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। লেহ-মানালি বা লেহ-শ্রীনগর, দুটি রাস্তাই বন্ধ থাকে। তাই দিল্লী থেকে উড়ানে আসতে হয় লেহতে, উচ্চতার তারতম্যের জন্য অনেকেরই এ এম এস এর সমস্যা হয়। এদের ক্ষেত্রেও তাই। তিনজনই ঠিক করল ফিরে যাবে। দুই বন্ধুকে ফেলে একজন যাবে তাও কি হয়?
    ইন্ডিয়াহাইক্স এর কর্ণধার অর্জুন-দা এ ব্যাপারে বেশ উদার। ইন্ডিয়াহাইক্স এর পলিসিতে আছে, কেউ যদি কোনও কারণে ট্রেক সম্পূর্ণ করতে না পারে, পরবর্তীতে সেই ট্রেকে তাকে নিখরচায় আবার নিয়ে যাওয়া হবে। সে শারীরিক কারনেই হোক, বা প্রাকৃতিক খামখেয়ালিতায়। এই পলিসির কথা আমাদের ই-মেইলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। জানানো হয়েছিল, কেউ যদি কোনও ট্রেকরুট ভালবেসে আবার ফিরে যেতে চান, তাও হবে নিখরচায়। রবি-র কাছে গল্প শুনলাম, এর সুযোগও নিয়েছে কেউ কেউ। রুপিন পাস ট্রেকে রবি-র ব্যাচে ছিলেন এক মহিলা। চতুর্থ বার চেষ্টা করছিলেন রুপিন পাসে পৌঁছোবার। কিন্তু কোনওবারই তিনি শারীরিক বা মানসিক ভাবে তৈরি হয়ে আসতেন না। ক্লান্ত হয়ে পড়তেন খুব অল্পেই। কোনও জায়গায় বসে পড়লে আর নাকি উঠতেনই না! অবশেষে চারজন সাপোর্ট স্টাফ কে দিয়ে বইয়ে তাকে বেড়াল পার করার মত রুপিন পাসে পৌঁছে দিয়ে সকলে নিবৃত্ত হন।
    সে যাই হোক, ফিরে গ্যাল তিনজন, রইল বাকি আঠেরো।
  • kumu | 132.176.32.39 | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৭:৪৬584371
  • সিকি আগে থেকেই ওষুধ খেতে খেতে গিয়েছিল।
    এই দলের ট্রেকারদের বয়েস কিরকম ছিল?
    এইবারে রওনা দাও চটপট।
  • ঐশিক | 132.181.132.130 | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৭:৫৬584233
  • তারপরে কি হলো?
  • কৃশানু | 213.147.88.10 | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৮:১১584234
  • আজকে সময় আছে, দেখি লিখতে পারি কিনা। আপাতত কোসনো উলর জবাব দিয়ে যাই।
    সিকি আরো উঁচুতে গিয়েছিল, খার্দুনগ্লা পাস ইত্যাদি, মানে লাদাখ ভ্রমণ করেছিল, আমি বলব ওষুধ খেতে খেতেই যাওয়া উচিত। এই অসুধের কোনো সাইড এফেক্ট নেই, সিম্পল কেমিক্যাল রিয়াকশন।
    আমি ওষুধ খাইনি, কারণ নদীপথ পুরোটাই লেহ শহরের নিচে। উচ্চতা বেশি নয়। সবচেয়ে উঁচু জায়গা লেহ। একটু ফিট থাকলেই আর চাপ নেই। এর চেয়ে অনেক উঁচু উঁচু জায়গায় ট্রেক করেছি, কাজেই ভরসা ছিল।

    ট্রেকার দের বয়েস? শুনলে পেত্যয় যাবেননা, আমি সিনিয়র মোস্ট!!!
  • siki | 132.177.247.146 | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ২১:৫৩584235
  • হুঁ, জান্সকার নদীর ট্রেক এমন কিছু উঁচুতে নয়। লেহ্‌ থেকে বেশ নিচুতে।

    আর এএমএস বয়েস, ফিটনেস এসবের ওপর নির্ভর করে হয় না, আগেও লিখেছি। খুব হাট্টাকাট্টা জোয়ান ছেলেমেয়েরও এএমএস হতে পারে, আমার মত প্যাংলা ছেলেও নির্ঝ্ঞ্ঝাটে খারদুংলা জয় করে চলে আসতে পারে।
  • Rit | 213.110.246.230 | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ২২:২৭584236
  • সিকি দা,
    খার্দুংলা জয়ের রুট টা বলবে? আমার ছোটবেলা থেকে লাদাখ যাবার শখ। আমার একটা বন্ধুর অলরেডি ৩ বার হয়ে গেল। আমার একবারও হল না। ঃ(
  • কৃশানু | 213.147.88.10 | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ২৩:০৪584237
  • তা ঠিক, কখন কার এ এম এস হবে বলা মুশকিল। তবে হৃদযন্ত্র একটু সুস্থ থাকলে সম্ভাবনা কমে। কারণটা তো ব্রেইনে অক্সিজেনের অভাব।
    আমাদের আগের বছর আমার চেনা একজন ট্রেকার( এর সাথে গয়েচালা করেছি) নন্দগোপাল পান্ডে জি( বয়স ৫২) চাদর ট্রেক করে এসেছেন। গত সেপ্টেম্বরে তিনি মায়ালি পাস ও ঘুরে এসেছেন। এখন কালিন্দী খাল প্ল্যান করছেন।
  • siki | 132.177.247.146 | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ২৩:২১584238
  • রুট আর কি ... রাণাঘাট থেকে তিব্বত যাবার পথে তিব্বতের একটু আগেই পড়বে।

    বিস্তারিত জানতে চাইলে আমার ট্র্যাভেলগটা পড়ে ফ্যালো। এখানে কিশানু লিখুক বরং।
  • 4z | 152.176.84.188 | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ০০:৪৫584239
  • দেকেচ দেকেচ, এই তালে সিকিও বুগু'র মত নিজের লেখাকে প্রমোট কল্লে :)
  • siki | 132.177.247.146 | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ০০:৫৩584240
  • হাহাহাহা ... বুগু-টা একদম সময়োপযোগী হয়েচে :)
  • কৃশানু | 213.147.88.10 | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ০১:০৬584241
  • আকাশের সে সদ্ভাব দীর্ঘক্ষণ রইল না। আটটা বাজতে না বাজতেই মুখ হয়ে এল ভার। সূর্য গেলেন আড়ালে। হাওয়া ঝাপট দিতে লাগল জানালায়। হুহু করে বাড়ল শীত। বেরিয়ে ব্যাগ- ট্যাগ গুলো বাসের মাথায় তুলছি, শুরু হল তুষারপাত। দশ দিক সাদা। কয়েক মিটার দূরেও কিছু দেখা যাচ্ছে না। আমরা বাসের সামনে দাঁড়িয়ে গুলতানি করছি। মন-খারাপের মত চলে যাচ্ছে একটা-দুটো গাড়ি, ম্লান হলুদ হেডল্যাম্প।
    বাইরের শীত সহ্য করা যাচ্ছিল না। তা ছাড়া আমার জানালার ধারের সিট দরকার। এ ব্যাপারে কোনও রকম সমঝোতা করতে আমি রাজি নই। উঠে পরলাম বাসে। গুছিয়ে বসা গেল। ক্যামেরাও হাতেই। একে একে সবাই এসে গেল। বাইরে তখন গাড় হচ্ছে তুষার ঝড়।
    একে একে লেহ এয়ারপোর্ট, বাসস্ট্যান্ড পেরিয়ে এগোতে থাকলাম। আজকের মত আবহাওয়া গতকাল থাকলে ফ্লাইট ল্যান্ড করতে পারত না। ভাবতেই রোমাঞ্চ হচ্ছে আর আড়াই ঘণ্টা বাদেই সেই বহু প্রতীক্ষিত মুহূর্ত, প্রথম চাদরে পা দেবার। বাস একটু নীচে নামতেই আকাশ ক্রমে পরিস্কার, ঝকঝকে। আমরা পেরিয়ে এলাম পৃথিবীর উচ্চতম বটলিং প্ল্যান্ট, সারা শীত লাদাখকে গ্যাস সরবরাহ করে বাঁচিয়ে রাখে।
    পথের দু-পাশে প্রান্তর, ক্রমশ উঠতে উঠতে শেষ হয়েছে পাহাড়ে। সেই পাহাড় যেন ধুলোয় তৈরি, বালিতে ঢাকা। সে বালির সাথে মিশে গ্যাছে কুচি কুচি বরফ গুঁড়ো। এরকমই এক জায়গায় রয়েছে ম্যাগনেটিক হিল। শোনা যায়, এখানে নাকি অভিকর্ষের উল্টো দিকে মোটরবাইক এগিয়ে চলে, নিউট্রালে রেখে দিলে। কিন্তু জায়গাটা দেখে সমতল মনে হল, কোনও দিকে সামান্য ঢাল থাকলেও হতে পারে, খালি চোখে বোঝা সম্ভব নয়।
    আরও এগিয়ে কয়েকটা বাঁক নিতেই চিনারজঙ্গলের ফাঁক দিয়ে দেখা গেল সিন্ধু নদ। তার এক আকাশ নীল জল। আর আকাশে তখন জলছবির পেঁজা তুলো। সিন্ধুর পাশ দিয়ে বইতে বইতে আমরা পৌঁছলাম সঙ্গম। যেখানে জান্সকার এসে মিলছে সিন্ধু-র সাথে। ওপর থেকে নেমে আসা জান্সকার এর বাঁ-দিকে বরফ-নীল পাহাড়, ডান দিকে ন্যাড়া পাথুরে লালচে পাহাড়ে বরফ নেই। জান্সকার বরফে ঢাকা, সিন্ধু দিয়ে তিরতিরিয়ে বয়ে চলেছে জল।
    আমরা এবার হাইওয়ে ছেড়ে ছোটো একটা রাস্তা ধরলাম, জান্সকারের পাশাপাশি। কখনো নীচে নেমে নদীকে আদর করে, কখনো দূর থেকে দেখতে দেখতে চলে গিয়েছে পথ। প্রায় এক ঘণ্টা। থামল বাস। জায়গার নাম চিলিং। এত আক্ষরিক নামকরণ খুব বেশী হয় না। প্রায় তিনশ মিটার নীচে নদী। জায়গাটা বেশ ঢালু। পাথর আর বালিতে ভরা। ব্যাগ পিঠে নিয়ে নামতে নামতে নীচে তাকালে বুকের মধ্যে দুরু-দুরু। যখন তখন পায়ের চাপে সরে যাচ্ছে পাথর, দু একটা ছিটকে নীচেও পড়ছে। প্রায় পনের মিনিট লাগল নদী অবধি নামতেই। যে জায়গায় নামলাম সেখানে কোথাও সে প্রবাহিনী নয়। কিছুটা তুষার। খচমচ করে তার মধ্যে দিয়ে দিব্যি হাঁটা যাচ্ছে। ওই তো দেখা যাচ্ছে ক্যাম্প। এর নাম তিলাত সুমদো। পাঁচশ মিটার দুরেও নয়।
    এর পরই লাগল প্রথম ঝটকা। হঠাত সামনে দু-জনের সশব্দ পতন। তুষার থেকে কখন আমরা নদীর বুকে জমে থাকা কঠিন বরফের ওপর চলে এসেছি বুঝতে পারিনি। এখানে জুতো গ্রিপ করে না। তাই জুতোর ওপর পড়তে হল ক্র্যাম্পন। একটা মোটা রাবারের ব্যান্ড। তার নীচে ইস্পাতের দাঁত লাগানো। ব্যান্ডটাকে জুতোর ওপর আটকে নিতে হয়। পা ফেললে সেই দাঁতগুলো ঢুকে যায় শক্ত বরফে। দেয় কাঙ্খিত গ্রিপ। সাবধানে ব্যবহার করতে হয় এই জিনিস। ক্রমাগত পাথরে হাঁটলে দাঁতগুলোর ধার কমে যায়, তাই পরে আর বরফে গ্রিপ করে না। ক্র্যাম্পন পড়ে নিতেই চলা সহজ হয়ে গ্যাল। নদী-র থেকে একটু উঠেই আজকের ক্যাম্প। সাপোর্ট স্টাফরা আগেই চলে এসেছে। দূর থেকেই দেখা যাচ্ছে কিচেন টেন্টের সামনে ধোঁয়া।
  • Abhyu | 85.137.7.84 | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ০২:৩৭584242
  • জুতোর নীচ লোহার দাঁত লাগানোর এই কনসেপ্টটা হেলসিঙ্কিতে ছিল। ভারী জিনিস, খুব সুবিধের না, তবে বিপদে কাজ দ্যায়।:)
  • de | 190.149.51.67 | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৭:৩৫584244
  • এটা থেমে গেলো কেনো? খুব ভালো হচ্ছে!
  • siki | 132.177.247.146 | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৭:৪২584245
  • অ কিশানু, এট্টু বড় করে ল্যাখো না বাবা ...
  • hu | 188.91.253.11 | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ০৮:৫৯584246
  • অনবদ্য
  • গান্ধী | 213.110.243.22 | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ০৯:৫৬584247
  • ট্রেকে এত আস্তে আস্তে হাঁটে নাকি কৃশানুদা??? ছোট ছোট লেখা হলেও আপত্তি নেই, ফ্রিকোয়েন্সি বাড়াও
  • ঐশিক | 132.181.132.130 | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১০:২১584248
  • এত ছোট আপডেট !!!!!
  • কৃশানু | 213.147.88.10 | ১১ মার্চ ২০১৩ ০০:১৪584249
  • ৫)
    প্রথম দিন কোনও হাঁটাহাঁটি নেই আর। আমাদের ক্যাম্প এর পাশ দিয়ে বয়ে গ্যাছে, না ঠিক বয়ে যায় নি, চুপচাপ শুয়ে আছে জান্সকার এর একটা উপনদী, নাম জানি না। ক্যাম্পে বসে থাকলে তো ঠাণ্ডা লাগবে, আমরা তাই তাকে একটু পরখ করে নিতে বেরলাম, চা ম্যাগি-র সাত্বিক লাঞ্চ সেরে। পরের দিন জান্সকার বরাবর হাঁটব, আলাদা রাস্তা, কাজেই একটু এগিয়ে দেখা যাক এই নদীটা কেমন। যাদের ক্র্যাম্পন পড়ার অভিজ্ঞতা, তাদের অভ্যাসও হয়ে যাবে।
    সব জায়গায় বরফ সমান শক্ত নয়। কোথাও কাঁচের মত, ঝুর ঝুর করে ভেঙে যাচ্ছে। জায়গায় জায়গায় বরফের মাঝে অল্প জল। কোথাও স্রোত নেই, কোথাও হাল্কা স্রোত। কোথাও চাদরের মত বরফ, কিন্তু ওপরটা পুরপুরি মসৃণ নয়। সেখানে পা দিতে গেলেই জায়গাটা বসে যাচ্ছে। ঢ্যাপ ঢ্যাপ করে শব্দ হচ্ছে, নীচে ফাঁপা। এখান দিয়ে হাঁটতে হলে সাবধান না থাকলে পা অনেকটা ঢুকে যাবে আচমকা, তলায় পাথর থাকলে মচকে যেতে পারে, জল থাকলে ভিজে যেতে পারে। ব্যালেন্স হারিয়ে পড়ে যাবার সম্ভাবনাও রয়েছে।
    নদীর বুকে দাঁড়িয়ে আমরা সূর্যাস্ত দেখলাম। পাথুরে পাহাড় হল সাদা থেকে হলদে। তারপর সোনালি পেরিয়ে তাতে মিশলো সিঁদুরের ছোঁয়া। পাহাড়ের মাথা থেকে আলো সরে গেলেও সূর্যের কথা ভাবতে ভাবতে সে রাঙা হয়ে রইল অনেকক্ষণ। অবশেষে বেগুনির শেষ ছোঁয়াচ টুকু নিভে গ্যাল। ফিরতি পথ নিলাম আমরা।
    ঠাণ্ডা কতটা বোঝাতে বোধ হয় বলে নেওয়া উচিত আমি কী কী পরে ছিলাম। থার্মাল ইনারের ওপর ছিল দুটো ফুলহাতা টিশার্ট। একটা সোয়েটার, তার ওপর জ্যাকেট। যথাবিহিত ডাবল গ্লাভস, ডাবল মোজা, হনু-টুপি তো ছিলই। মোটা হলোফিল জ্যাকেটটা অবশ্য নেরাকে পৌঁছোবার আগে প্রয়োজন হয় নি। সে কথায় আসছি পরে।
    দেখতে দেখতে হুড়মুড়িয়ে রাত নামলো, আমরা জনা কুড়ি কোনও রকমে মুরগি গাদা হয়ে ডাইনিং টেন্টের ভেতর সেঁধিয়ে গেলাম। ডিনারের আগে অবধি আমি সাধারণত বাইরে ঘুরতে পছন্দ করি, কিন্তু এই ট্রেকে তার উপায় নেই। আড্ডা – গল্পে জানা গ্যাল আমি দলের সিনিয়র-মোস্ট মেম্বার। বেশ একটা কেউকেটা ঠাউরালাম নিজেকে!
    কিচেন টেন্টটা যেন মিনি ভারতবর্ষ। হিসেব করেছিলাম, ষোলটা আলাদা আলাদা রাজ্যের বসবাসকারী আমরা! এমনকী লন্ডন প্রবাসী রোহিতও এসেছিল এই ট্রেকের জন্য।
    দাল-সব্জি, ভাত-রুটি দিয়ে এলাহি ডিনার। কিন্তু ডাইনিং টেন্ট ছোট বলে খেতে হয় বাইরে দাঁড়িয়ে। সে তো হল। কিন্তু খাবার শেষে বাসন পরিস্কার করার মত সিংহ-হৃদয় আমি নই। ঠিক করতে হল স্ট্র্যাটেজি। আমার ছিল কুল্লে একটি চামচ, একটি মগ ও একটি থালা, সব স্টিলের। খাওয়া হয়ে গেলে সুন্দর করে চেটেপুটে তাদের ঢুকিয়ে নিতাম রুক্স্যাকে। কারুর ক্যামেরায় বন্দীও হয়ে আছে থালা-পরিস্কারের সেই দৃশ্য। প্রথমদিন এ নিয়ে কিছু ঠাট্টা-তামাশা শুনলাম। কিন্তু পরবর্তী দিনগুলোতে দেখলাম প্রায় সকলেই খেয়ে নিয়ে চুপি চুপি থালা ব্যাগে ভরছে। ‘মহাজ্ঞানী মহাজন, যে পথে করে গমন’।
  • কৃশানু | 213.147.88.10 | ২৩ মার্চ ২০১৩ ০০:৪৪584250
  • ৬)

    সকাল হল ঢিমিয়ে। পাহাড়-পর্বত পেরিয়ে সামান্য আলোটুকু আসতেও কত দ্বিধা। আর সকালের দিকেই চোখ দুটো লেগে আসে। রাতে বিশেষ ঘুম হয় না, দুই থেকে তিন ঘণ্টা, বড় জোর। কিন্তু উঠে পড়তে হয়। সকাল থেকে প্রচুর কাজ। আমাদের স্লিপিং ব্যাগের ভেতর গরম জল ভরা ওয়াটার ব্যাগ রাখতাম, যাতে স্লিপিং ব্যাগের ভেতরটা গরম থাকে। প্রথম কাজ তাকে ফাঁকা করা, নইলে ভেতরে বরফ হয়ে গেলে, পরের বার গরম জল দেওয়ার পর সে ফেটে যেতে পারে। ছোটো লিক হলে আরও সর্বনাশ। স্লিপিং ব্যাগে নিয়ে শোয়ার পর জল বেরিয়ে ভিজে যাবে সব, সেই জল ঠাণ্ডা হবে, বরফ হবে। সর্বনাশ হবে স্লিপিং ব্যাগ কমে গেলে! স্পেয়ার তো বেশী নিয়ে যাওয়া যায় না।
    প্রাতঃকৃত্য করাটা এই শীতে এক যন্ত্রণা। প্রথমে আড়াল খোঁজো, সেই জায়গা অন্য কেউ ব্যবহার করার আগেই যাতে তুমি চলে যেতে পার, তার জন্য অন্যেরা ঘুম থেকে ওঠার আগে উঠতে পারলে ভালো। আর সেই প্রবল শীত ও হাওয়ায় শরীরের একটা অংশ বেশ কিছুক্ষণের জন্য আঢাকা রেখে দেবার কষ্টও কিছু কম না।
    কেউ কেউ মুখ ধুলো, আমি লিস্টারিন। তারপর ব্যাগ ফিরসে প্যাক কর। দেখে নাও কিছু ভুললে কিনা, যথা হেডল্যাম্প, জলের বোতল, সানগ্লাস ইত্যাদি।
    এবং অতঃপর সবচেয়ে কঠিন কাজ, স্লিপিং ব্যাগ প্যাক করা। তায় গ্লাভস খুলে রাখার জো নেই বেশিক্ষণ। একটা ছোট্ট ব্যাগের মধ্যে একটা ঢাউস জিনিস ভাঁজ করে ঢোকাবার জন্য কতই যে কসরত করতে হয়। চেপে চেপে হাওয়া বের করতে হবে, না হলে, ওই অসমান পাথুরে জমিতে তার উপর বসে হাটুঁ দিয়ে চেপে, মোলায়েম করে, ঢোকাতে হবে। পুরো ব্যাপারটা সময় সাপেক্ষ আর কষ্টদায়ক। কিন্তু সাফল্য অন্তে মিলবে পুরস্কার। ব্রেকফাস্ট।
    ব্রেড – মধু –বাটার – পরিজ, গরম গরম, যেন অমৃত। মুহূর্তে চাঙ্গা। ঘুম উধাও, জড়তাও।
    এরপর রওনা। যাত্রা শুরু।
  • | 24.97.21.160 | ২৩ মার্চ ২০১৩ ১০:৪৩584251
  • তারপর?
  • কৃশানু | 213.147.88.10 | ২৫ মার্চ ২০১৩ ২৩:০৪584252
  • ৭)
    আজ আমরা বারো কিলোমিটার হাঁটবো। তিলাত সুমদো থেকে শিংরা কোমা। যদিও অন্যান্য ট্রেকের থেকে এই হাঁটা অনেক ন্ততে। আগেই বলেছিলাম, চড়াই নেই, প্রায় সমতল রাস্তা। কিন্তু প্রধান সমস্যা ঠাণ্ডা। পুরো নদীপথ জুড়েই দুদিকে পাহাড়। তাই রোদ্দুরের দেখা মেলা ভার। তার মধ্যে অন্যান্য ট্রেকে যেখানে প্রথম দিন ঊর্ধ্বাঙ্গে একটা টিশার্টই যথেষ্ট, এখানে সেই পথই হাঁটতে হয় প্রায় সমস্ত জোব্বাজুব্বি চাপিয়ে। রোদ উঠলে হনুমান টুপিটি খোলা যায়। কিন্তু তারও একটা সুবিধে আছে। পিঠের রুক্স্যাক অনেক হালকা হয়ে আসে, বইতে কষ্ট কম।
    বেলা ন’টা নাগাদ আমরা বেরিয়ে পরলাম। প্রথমেই বেশ অনেকটা জায়গা জুড়ে জলের কোনও অস্তিত্ব নেই, সমস্তটাই বরফ। ক্র্যাম্পন পড়া আছে, তাই কোনও অসুবিধেই নেই হাঁটতে। বেশ ভালো জোরেই হাঁটছিলাম, যাতে শরীর গরম থাকে। হঠাত একটা আছাড় খেলাম, সোজা শক্ত বরফের ওপর, সামনের দিকে। ট্র্যাকপ্যান্টে ক্র্যাম্পনের দাঁত আটকে গিয়ে পড়েছি হুড়মুড়িয়ে। হাত-পা ঝেড়ে উঠে জুতোর ফিতে দিয়ে ভালো করে বেঁধে নিলাম প্যান্টের ঘের, যাতে আর না হয় এই দুর্ঘটনা।
    কিন্তু এতই সহজ কি? ঘটেই চলল একের পর এক। প্রথম দিন কুল্লে আমিই ভুপতিত হলাম চার-বার। দ্বিতীয় বার ক্র্যাম্পনের সামনের একটা রাবার ব্যান্ড খুলে গেল, তাই দাঁতটা গ্রিপ করল না। এবং কিছু বুঝে উঠবার আগেই আবার বরফ শয্যা। রাবার ব্যান্ড খুলে যাওয়ায় ক্র্যাম্পনের ভুগোলটা গেল বদলে। তাই আমার ট্রেক-শু তে সেটা আর ঠিকঠাক ফিট করল না। বাধ্য হয়েই পড়তে হল হাঁটু অবধি লম্বিত জুতো, বা গামবুট। শক্ত প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি জুতোর ভেতরটা খুব গরম। কিন্তু মোটেই আরামদায়ক নয়, শক্ত বলেই। দুটো মোজা পড়ে থাকায় আর জমি পাথুরে না হওয়ায় বিশেষ অসুবিধে হল না। সবচেয়ে বড় কথা, কিছুক্ষণ বাদেই পেরোতে হল এমন এমন দু-তিনটে স্ট্রেচ যেখানে গামবুট না পড়ে গেলে মোজা ভিজবেই। সবাইকেই পড়ে নিতে হল গামবুট।
    পাসাগ রাস্তা দেখাচ্ছিল আমাদের। অভিজ্ঞতার জোরে সে বুঝে নিচ্ছিল কোথা দিয়ে হাঁটা নিরাপদ বা কোথাকার বরফ আদৌ সক্ষম হবে না আমাদের ভার বইতে, এইসব। আমরাও চলছিলাম পিছু পিছু। কখনো বা দুরত্ব বেড়েও যাচ্ছিলো একটু। এর মধ্যেই একবার আপাত ভাবে শক্ত বরফ হঠাত নীচে বসে যাওয়ায় ব্যালেন্স হারিয়ে পড়লাম আরেকবার। কিন্তু নীচে জল না থাকায় বেঁচে গেলাম এবারও, শক্ত বরফের ধারাল ক্রিস্টালে সামান্য ছড়ে গেল কনুই।
    প্রায় বারোটা নাগাদ সূর্যের আলোও আছে, সামনে জলও আছে, এরকম এক জায়গা দেখে বসা হল লাঞ্চ করতে। শুকনো খাবার খাওয়া যায় না এই ঠাণ্ডায়। জমে বরফ হয়ে যায়। কাজেই প্রায় ঘণ্টা দেড়েক রোদে গা সেঁকতে সেঁকতে আমরা অপেক্ষা করতে লাগলাম লাঞ্চের।
    চেন্নাই এর ছেলে, ব্যাঙ্গালুরুতে কর্মরত প্রতাপের ইচ্ছে হল নদীর ধারে গিয়ে বোতলে জল ভরবে। ঠিক নদীর সামনে যেতেই পতন এবং একদিক জলে। দৌড়ে গেল লখনউ বাসী অংশুল। থেমে গেল এক মিটার আগে। নইলে তারও একই অবস্থা হত। প্রচণ্ড বিস্ময়ের মধ্যেও বুঝতে পারলাম যে প্রতাপ ব্যালেন্স পেয়ে গ্যাছে এবং আর পড়ে যাবে না, কিন্তু একা একা উঠবার ক্ষমতাও নেই। আমরা সবাই মিলে ধীরে সুস্থে উদ্ধার করলাম প্রতাপকে। দুতিন জন মিলে স্লিপিং ম্যাট দিয়ে ঘিরে ধরা হল তার চারপাশে। সখা-পরিবৃত অবস্থায় সিক্ত বসন পরিবর্তন করলেন প্রতাপ।
    চা এলো প্রথমে। তারপর স্যুপ। ম্যাগি। ক্ষুধার নিবৃত্তি। আবার চলার শুরু।
    প্রতাপেরই বন্ধু স্ট্যালিন। জিজ্ঞেস করেছিলাম এহেন নামের কারণ। জানলাম ওর মা মালয়ালি। সিপিএম-এর প্রতি দুর্বলতা আছে। জিজ্ঞেস করেছিলাম তোমার কী মত? জানলাম, আর যাই হোক, সিপিএম নয়।
    শ্বেতার সঙ্গে গল্প করতে করতে আসছিল। আমি আর পারেক একটু আগে। হঠাত পিছনে চিৎকার। সামান্য অন্যমনস্কতায় ফুটপ্রিন্টের বাইরে পা দিয়ে ফেলেছিল স্ট্যালিন। ডান দিকের কোমর অবধি ঢুকে যায় বরফ জলে, মুহূর্তে। তাকেও সাহায্য করি পোশাক পরিবর্তনে।
    এর পরপরই চতুর্থ ও শেষবার পতন আমার। শুধু আজকের মতই নয়, বাকি পথেও, এই শেষ। এবং অন্যান্য তিনবারের মত অল্পের ওপর দিয়ে যায়নি মোটেও এবার। বরং ভুগিয়েছে আরও দুদিন। আসছি সে ঘটনায়।
  • siki | 132.177.192.162 | ২৯ মার্চ ২০১৩ ১২:৩৪584253
  • কিশানু লিখুক ধীরেসুস্থে।

    ততক্ষণ আরেকটা ট্র্যাভেলগ শেয়ার করি এখানে। চাদর ট্রেক। ছেলেটা এ বছর জানুয়ারিতে গেছিল।

    দেখুন, পড়ুন, স্পেশালি ছবিগুলো এনজয় করুন।

    http://www.bcmtouring.com/forum/travelogues-north-india-f61/chadar-trek-t50300/
  • কৃশানু | 213.147.88.10 | ০১ এপ্রিল ২০১৩ ২৩:৪২584255
  • ৮)
    প্রত্যেকেই নিজের পছন্দের গতিতে হাঁটে। বড় দল কখনই একসাথে চলতে পারে না। সব ট্রেকেই যেখানে কোনও বিপজ্জনক অংশ থাকে বা রাস্তা হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা, সেখানেই অপেক্ষা করেন গাইড।
    পাসাগ আমাদের আগেই ছিল। হয়ত আরও জনা পাঁচেক আমাদের সামনে। বাকি প্রায় বারো জন পিছনে। অন্যদের পায়ের ছাপ দেখতে দেখতে হাঁটছিলাম আমি আর পারেক। বা যে স্লেজ বানিয়ে সাপোর্ট স্টাফরা সামান নিয়ে চলেন, তার সরু দাগ দেখতে দেখতে।
    ক্রমশঃ কঠিন বরফে সরু দাগ মিলিয়ে এল। দাগ দেখে দেখে আমরা কখনো বাঁ আবার কখনো ডান দিক দিয়ে হাঁটছিলাম। দাগ মিলিয়ে গেলে বরফ শক্ত বলে সোজা হাঁটতে থাকলাম। বেশ কিছুটা হাঁটার পর পায়ের নীচে ফাঁপা শব্দ শোনা গেল। আর কয়েকপা যেতেই চিড় খেয়ে তৈরি হতে লাগল বিশাল বিশাল চাঙড়। হঠাত যেন এক চক্রব্যূহে আটকা পড়ে গেলাম। একমাত্র বাঁ দিকে দশ-বারো পা গেলে পাথর রয়েছে। খাড়া দেওয়াল প্রায়, কিন্তু এই বরফ-ফাঁদের থেকে তো ভালো!
    পারেক এগোলো আগে। প্রতি পায়ের চাপেই ভাংছে আস্তর। ঢুকে যাচ্ছি হাঁটু পর্যন্ত, আরও বেশী। গাম বুট এর ফাঁক গলে বরফের শক্ত টুকরো আঘাত করছে পায়ে। তবে ভরসা আছে, পাথরের ওপর পৌঁছলেই জুতো খুলে এগুলোকে বের করে ফেলা যাবে। ঠিক এক পা বাকি থাকতে পারেকের বাঁ পা ঢুকে গেল উরুর কাছ অবধি। নীচে জল, কিন্তু বেঁচে গ্যাছে, গামবুট এর ওপর পৌঁছয়নি। আর আমি করলাম চরম ভুল। কিন্তু এই শেষ বার।
    পারেক যেখান দিয়ে গ্যাছে, সেখানকার বরফ ভঙ্গুর, এই ভেবে আমি একটু দূর দিয়ে এগোলাম। ওটাই ছিল ভুল। ও যেখানে যেখানে পা দিয়ে দিয়েছে, সেখানে আসলে ওপরের ফাঁপা বরফ ভেঙ্গে তুলনামুলক ভাবে শক্ত স্তর বেরিয়ে এসেছে, সেখানে পা দিয়ে দিয়ে যাওয়াই উচিত ছিল। আমি তার পাশ দিয়ে এগোতে লাগলাম। শেষ এর ঠিক আগের পদক্ষেপে ডান পা ঢুকে গেল অনেক ভেতরে। প্রায় কোমর পর্যন্ত। হাঁটুর কাছে পেলাম শীতল জলের স্পর্শ। ভিজতে শুরু করেছে মোজা। প্রচণ্ড তাড়াহুড়ো করে বাঁ পা তুলে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাইলাম পাথরের কাছে। বাঁ পা রাখতেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে গেলো সেখানকার বরফের বিস্তারও। ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে গেলাম বাঁদিকেই। চতুর্থ বারের মত। জলের মধ্যে।
    ন্যাংটার আর বাটপাড়ের ভয় থাকেনা। এই পতন মুহূর্ত যেন আমাকে সাবালক করে দিল। নিমেষের মধ্যে উঠে দাঁড়িয়ে লাফিয়ে পা রাখলাম পাথরে, বালিতে। বাঁ দিকে ছিল ক্যামেরার ব্যাগ। ক্যামেরা বাইরে নিয়ে এলাম। ব্যাগ এর নিচের অংশ ভিজেছে। ক্যামেরা কাজ করছে না।
    দুটো প্যান্ট এবং নীচের থার্মাল ওয়্যারের বাঁ পা সপসপে। ভাগ্যক্রমে পিঠের ব্যাগ ভেজেনি। ওতে আরও জামা কাপড় আছে, কিন্তু থার্মাল নেই আর। ঠিক করলাম ক্যাম্পে পৌঁছে পালটাবো। আকাশ মেঘলা হচ্ছে। আপাতত গামবুট উলটে বরফ কুচি বের করলাম। মোজা পালটালাম। গ্লাভস এর দুটো লেয়ার ছিল। ছবি তোলার জন্য ভেতরে সারজিকাল গ্লাভস পরেছিলাম। বাইরের হলোফিল গ্লাভস এর ভেতরে ছিল উল। হলোফিল ওয়াটারপ্রুফ হয়। জলে বাঁ হাত ডুবে যাওয়ায় কব্জির কাছ দিয়ে জল ঢুকে ভিজিয়ে দিয়েছিল উল। তাই সেই গ্লাভস খুলতে হল।
    হাঁটতে শুরু করলাম পাথর টপকে। প্রায় আধঘণ্টা এইভাবে চলার পর বাকিদের দেখতে পেলাম। পাহাড় টপকে হাঁটার প্রচণ্ড পরিশ্রম। তাতেই প্যান্ট গুলো প্রায় শুকিয়ে এলো। গামবুটও। আকাশ আবার পরিস্কার হওয়ায় একখণ্ড রোদ্দুর উঁকি দিয়েছিল পাহাড়ের আড়াল থেক। সবাই বিশ্রাম নিতে বসলাম, পাথরের খাঁজে। অপেক্ষা, বাকিদের জন্য। জানা গেলো ক্যাম্প আর আধ ঘণ্টা। তখনই বুঝেছিলাম, জামা কাপড় পালটাতে হবে না। রোদে রাখতেই চালু হল ক্যামেরাও। কিন্তু গ্লাভস? আরও দুদিন জ্বালিয়েছিল। কিচেন টেন্ট এর আগুনে শুকোতে দিলে খটখটে হয়ে যেত। হাতে পরলেই ভেতরে জমে যাওয়া বরফ গলে গলে আবার জল। সারজিকাল গ্লাভস এ শীত তেমন আটকায় না। তাই এই দুদিন চালাতে হল হাতে মোজা পরে। আট জোড়া মোজা নিয়ে যাওয়ায় বেঁচে গেলাম এ যাত্রা। কিন্তু যেকোনো কাজ করতে হলেই মোজা খুলে নিতে হচ্ছিল। সে এক বিড়ম্বনা। এ লেখার একদম শুরুতেই ব্যাখ্যান করেছি তার।
    কিন্তু এই আধ ঘণ্টার পথ পেরিয়ে এসে বুঝলাম, ক্যাম্প এ পৌঁছতে হবে বেশ কসরত করে। ক্যাম্প সাইট এর ঠিক আগেই নদী প্রবাহিণী, জমাট বরফ নেই এক টুকরোও। আবার চড়তে হবে পাহাড়ে। এবার ডান দিক দিয়ে। কিন্তু পুরোটাই দেওয়াল। মাঝের একটা অংশে, প্রায় ছ-মিটার লম্বা, পা রাখার জায়গা হয়ত মেরেকেটে ছ-ইঞ্চি। গামবুট যথেষ্ট গ্রিপ দেয় না। তাই আবার পাথরে বসে নিয়ে পড়তে হল ট্রেক জুতো। গামবুট বেঁধে নিলাম ব্যাগে।
    প্রায় বিশ মিটার নীচ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে স্রোতস্বিনী জান্সকার। ডান দিকের পাথরে ভর রেখে একপা একপা করে এগোচ্ছি আমরা। পা ফসকালে কি ঘটবে কারুর বুঝিয়ে দেবার দরকার নেই। তাকালেই হাড়হিম হয়ে আসে। আর হয়ত দু-মিটার পেরোতে হবে। আবার দুর্ভাগ্য।
    ক্যামেরা ব্যাগ এর নীচের দিক আর বাঁ দিক ডুবেছিল জলে। তাই হয়ত, ব্যাগ-এর বাঁ দিকের স্ট্র্যাপ লাগানোর বল-সকেট জয়েন্টটা গেলো খুলে। কি ভাগ্যি, আমি সব সময় মাথার ওপর দিয়ে ক্যামেরা-র ব্যাগ এর স্ট্র্যাপটা ডান কাঁধে ফেলে ব্যাগটা রাখি বাঁ কোমরের ওপর। আর রুকস্যাকটা গলাই তার ওপর দিয়ে। নয়ত আমার সাধের ক্যামেরার জলাঞ্জলি ঘটত মুহূর্তেই। আপাতত স্ট্র্যাপচ্যুত হয়ে সে ঝুলতে লাগল উরুর কাছে। ধাক্কা দিতে লাগল। কোনও মতে পেরোলাম ওই কঠিন পথ। একটা জোড়াতাপ্পি ব্যাবস্থাও করা গ্যাল স্ট্র্যাপটার। গিঁট বেঁধে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন