এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • আমাদের পশুপাখি ও পরিবেশ পর্যবেক্ষণ

    tan
    অন্যান্য | ০৫ আগস্ট ২০০৬ | ২৪৭৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • tan | 131.95.121.127 | ০৫ আগস্ট ২০০৬ ০০:৫০631864
  • এখানে সকলে ঐ অসাধারণ টুকরো টুকরো দেখাগুলো লিখে রাখুন, ঐ ছোটোবেলার বাগানের টুনটুনি থেকে বড়োবেলার ক্যাঙারু অবধি সব,যে যেখানে যা দেখেছেন, সামনে বা ফিল্মে বা অন্য কোথাও,সব দিন।
  • dam | 61.246.153.100 | ০৫ আগস্ট ২০০৬ ১১:৪৭631875
  • এটা আসলে নবনীতার গপ্প। তা ও কবে লিখবে, বা আদৌ লিখবে কিনা জানি না, তাই আমিই লিখে রাখি।

    নবনীতা তখন কলকাতায় একটা আপিসে। তা সেখানে ওর বসার জায়গার আশেপাশে একটা খোলা ছাদ মত ব্যপার ছিল। সেখানে একটা ছোট্ট মই রাখা ছিল ওপরের ছাদে চড়ার জন্য। ও একদিন দেখে একটা কাক ঐ মইয়ের সরু সরু ধাপগুলোতে একটা একটা করে পা দিয়ে টক টক করে একবার উপরে উঠছে, আবার নামছে। আর জোড়া পায়ে উথছে না কিন্তু -- বাঁ পা, ডান পা করে দিয়ে দিয়ে উঠছে আবার নেমে আসছে, আবার উঠছে, আবার ----

    ব্যয়াম করছিল বোধহয়।

    আরেকদিন দেখে একটা কাক একটা মস্ত ডাল নিয়ে ওড়ার চেষ্টা করছে। এদিকে ডালটা ঠোঁটে করে ধরেছে একটা ধারের দিকে, ফলে যতবারই উড়তে যায় ততবারই পাশ করে পড়ে যায়। তবু ডালটা ঠোঁট থেকে ছাড়ে না। ছাড়লেই যদি অন্য কেউ নিয়ে যায়!! অথচ মাঝখানে ধরলেই উড়তে পারে, কিন্তু সেও করবে না --- সে এক দৃশ্য --- দুই ডানা ছড়াল -- আর ঘুরে পড়ে গেল।
  • Paramita | 64.105.168.210 | ০৫ আগস্ট ২০০৬ ১২:০৪631886
  • আমাদের যা পোষা পশুপাখি আপাতত সব সফট টয়রূপ ধারণ করে এসেছে আমাদের বাড়িতে। জানি সে এখানে চলবে না। কিন্তু সফট টয় বলে কি মানুষ নয়? একটা সবুজ ব্যাঙ রোজ রাত্তিরে গান গায় আর তিনটে হলুদ হাস প্যাঁক প্যাঁক করে জলকেলি করে। উপরন্তু আছে মা হাঁস। সে পেটের মধ্যে তিনটে ছানা নিয়ে বসে থাকে। আর প্যাঁচা তো বাড়িময়। লক্ষ্মীপ্যাঁচা একটা বইয়ের তাকে বসে কি করছে সেই জানে। বাগানে ডাল থেকে উঠে আসা একটা কাঠঠোকরা বসে আছে উচ্চাসনে কোনোকালে তাকে কাটুম আর তার পাশের হাতিটাকে কুটুম বলা হতো। আর মাছ? কে বললো মাছ জল ছাড়া বাঁচে না? রন্নাঘরে, খাওয়ার টেবিলের নিচে, বেসিন মাছে মাছাক্কার। মৌরলা টাইপ কিন্তু রঙীন। আর দুটো হলদে সবুজ ওরাঙ ওটাঙ জুটে গেছে তাদের পাশে। এরা সবাই মিলে রাত্তিরবেলা টয় স্টোরি তিনের মহড়া দেয়, জানি আমি।
  • tan | 131.95.121.127 | ০৫ আগস্ট ২০০৬ ১৯:৩৬631891
  • সবচেয়ে ছোটো পাখী আমার কাছে ছিলো টুনটুনি,টুনটুনি আর দুর্গা-টুনটুনি দুইই আশেপাশে ঝোপে ঝাড়ে গাছগাছালিতে দেখতাম। কিন্তু বইয়ে পড়া ছিলো পৃথিবীর সবচেয়ে ছোটো পাখি হলো গিয়ে হামিং বার্ড। গতকাল দেখলাম হামিং বার্ড, ছোট্টো, প্রায় মথের মতন ছোট্টো, বাগানের নতুন ফোটা লাল ফুলের গুচ্ছে মধুপান করছিলো, ডানাদুটো এত তাড়াতাড়ি নাড়ে, দেখাই যায় না প্রায়! বসে না, ডানা নাড়তে নাড়তে মধু খায় ছোট্টো ঠোঁট ফুলের সরু গায়ের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে। ভালো করে দেখতে পেলাম না, তার আগেই উড়ে চলে গেলো।
  • tan | 131.95.121.127 | ০৫ আগস্ট ২০০৬ ২১:১২631892
  • বাজারের কাছে এক ডিস্পেন্সারি আর ওষুধে্‌হর দোকান ছিলো পাশাপাশি, তারই পাশে ছিলো অশ্বত্থ গাছ একটা। ঐ গাছ থেকে এক হনুমান ডিসপেন্সারি আর ওষুধের দোকানে প্রায়ই এসে বসে থাকতো, চুপচাপ থাকতো, কোনো বাঁদরামি করতো না। মাঝে মাঝে কেটে গেলে দিব্যি এসে কমপাউন্ডারের কাছে হাত বাড়িয়ে দিতো ওষুধের জন্য। কমপাউন্ডারও ওষুধ লাগিয়ে দিতো!
  • tan | 131.95.121.127 | ০৫ আগস্ট ২০০৬ ২১:৫৯631893
  • প্রথমে দুখানা ঘরের মাত্র পাকা ছাদা ছিলো,বাকী সব টালির চাল।সেইসব ঘরের চালের আর দেয়ালের সঙে্‌যাগস্থলের জায়গাগুলো ছিলো চড়াইদের বাসা বানাবার অত্যন্ত পছন্দের জায়গা। তো তারা বানাতো বাসা,নিত্য কাঠকুটো ফেললো মেঝেতে,পরিষ্কার করতে করতে হদ্দ হয়ে গিয়ে বাড়ীর লোকে বিরক্ত।চড়াই ছানাগুলো মাবাপের আনা খাবার খেতো আর সারাদিন চিরুম চিরুম শব্দ করে ডাকতো।নিঝুম দুপুরে ওদের কোরাস ঠিক ঝুমুরের শব্দের মতন লাগতো।
    বড়ো হলে উড়ে যেতো, ছেলেপাখির গলা বেড়ে চকচকে কালো পালক হতো,মেয়ে পাখি সাদামাঠা, গলায় হার নেই।
    পরে সব ঘর পাকা ছাদ হয়ে গেলে আর চড়াইয়ের উৎপাত ছিলো না,তখন ওরা গাছেই বাসা বঁধতো বা হয়তো অন্য কোনো টালির চালের বাড়ী খুঁজে নিয়েছিলো।

  • Tina | 152.163.100.204 | ০৬ আগস্ট ২০০৬ ১৯:০৩631894
  • বেশ কয়েকসপ্তাহ আগে একদিন সকাল থেকে শুরু হয়েছে ঝিরঝিরে বৃষ্টি। রান্নাঘর এর বন্ধ কাঁচের জানালা র পাশে দাঁড়িয়ে হঠাৎ চোখে পড়লো বাইরে মেপল গাছ্‌টা র দিকে। সবুজ পাতায় পাতায় ভরা মেপল এর মাথায় বসে আছে একটা লাল কার্ডিনাল...... একা ভিজছে বৃষ্টিতে।
  • dam | 61.246.77.65 | ০৬ আগস্ট ২০০৬ ২০:১৬631895
  • মামাবাড়ীতে অনেকগুলো নারকেল গাছ ছিল। প্রত্যেকটায় আলাদা আলাদা জোড়া কাক থাকত। আর প্রত্যেকবছর কিন্তু জোড়াগুলো একই থাকত। আমরা আবার কাকগুলোর নাম দিয়েছিলাম। তা, ছাদের পাশে যে গাছটা, তাতে থাকত 'শ্রীমোটা' আর 'তনুশ্রী'। একদিন দেখি শ্রীমোটা কোত্থেকে একটা সোনালী রঙের বেশ বড় সাইজের চুড়ি নিয়ে এসেছে। সেটা মুখে করে তনুশ্রীর সামনে রাখল। তনুশ্রী তাকিয়ে দেখে পা দিয়ে ঠেলে গাছের ওপর থেকে মাটিতে ফেলে দিল। শ্রীমোটা আবার সেটা তুলে এনে সামনে দেয়। এরকম দুবার হবার পর তনুশ্রী ক্ষেপে গিয়ে চুড়িটা তো ফেললই, মোটাকে ঠুকরেও দিল। মোটা বেরিয়ে এসে লাইটপোস্টের পাশে তারের ওপর উদাস মুখে বসে দোল খেতে লাগল।

    এই তনুশ্রী যেদিন মারা যায়, সেদিন ছিল ভীষণ শীত। সন্ধ্যের পরপরই শোনা গেল শ্রীমোটা অন্য গাছগুলোতে গিয়ে ডাকাডাকি করছে। পাশ্রে গাছটায় থাকত লেজভাঙা আর লেজবৌ। শ্রীমোটা ওদের গাছের সামনে গিয়ে অনেকক্ষণ ডাকল। কেউ বেরোয় নি। সন্ধ্যের পর কোন কাক সহজে বাসা থেকে বেরোয় না। পরেরদিন সকালে দেখা গেল গাছের নীচে পড়ে আছে তনুশ্রীর দেহ।
  • dam | 61.246.77.65 | ০৬ আগস্ট ২০০৬ ২০:২৯631896
  • লেজভাঙা কোত্থেকে যেন আস্ত আস্ত ফুচকা এনে লেজবৌকে দিত, যখন লেজবৌ বাসায় থাকত ডিমে তা দিতে অথবা বাচ্চা পাহারা দিতে। ওদের বাসা প্রথমে বানায় ঝাঁটার কাথি, লোহার তার এইসব দিয়ে। এইসময় বাইরে শলার ঝাঁটা রাখলেই সমানে ভেঙ্গে নিয়ে যায়। তারপর আবার ভেতরটা নরম করার জন্য ফুলঝাড়ুর ফুল, তুলো, পাটের ফেঁসো এইসব যেখানে পায় ছিঁড়ে ছিঁড়ে নিয়ে যায়। এমনকি গোলাপের মোটা মোটা কুঁড়িও ছিঁড়ে নিয়ে যায়।

    কাকেরা কিশমিশ খেতে খুব ভালোবাসে। জানালার ভেতরে যদি দেখে কিশমিশ রাখা আছে প্রাণপণ চেষ্টা করে সেটাকে বাগাবার।

    আমাদের স্কুলের বেলাদি মাঝে মাঝেই যেন কিসব ভাবতে ভাবতে অন্যমনস্ক হয়ে যেতেন। উনি আবার কমনরুমে বসতেনও জানালার পাশে। আর রোজ টিফিনে একটি রসগোল্লা খেতেন দুটাকা দামের। বার দুয়েক হয়েছে ওনার সামনে খুড়িতে রসগোল্লা রয়েছে, বাইরে থেকে একটা কাক নিজের শরীরটা কিরম সরু জানালার শিকের ফাঁক দিয়ে ঢুকে খুড়িটা শুদ্ধ উঠিয়ে বাইরে নিয়ে গিয়ে পাঁচিলে বসে বসে খেয়েছে। কাকটার বোধহয় লোভ বেড়ে গেছিল,একদিন উনি ততটা অন্যমনস্ক নন, তেমন অবস্থায় ঢুকে এসে খুড়িটা নেবার চেষ্টা করতেই উনি চেঁচিয়ে ওঠেন আয়া মিনুদি রে রে করে তেড়ে এসে কাকের মুখ থেকে খুড়িটা কেড়ে নেবার চেষ্টা করে। সে তখন খুড়ি ব্যালান্স করে শিকের ফাঁক দিয়ে বেরোতে চাইছিল। আল্টিমেটলি খুড়িটা জানালার বাইরে মাটিতে পড়ে, কাকটা তার থেকে রসগোল্লাটা তুলে নিয়ে কোথায় যেন উড়ে চলে যায়। ব্যপারটা ম্যনেজিং কমিটির কাছে গেছিল। তার ফলে জানালায় জাল লাগানো হয়।
  • dd | 202.122.18.241 | ০৬ আগস্ট ২০০৬ ২২:০৩631865
  • আর সুনীল বাবুর বাড়ীতে ছিলো দুটো টিকটিকি। একজনের নাম কালাকাঁদ আর আরেকজনের নাম নির্মল কুমার।

    নির্মল বাবু একটু আত্মভোলা টাইপের ছিলেন। মশার কামড়ে তার মৃত্যু হয়।
  • tan | 131.95.121.127 | ০৬ আগস্ট ২০০৬ ২২:৫৭631866
  • দুপুরবেলা লোকজনের গজল্লা থামলে, সব নিঝুম হয়ে এলে ঘুঘু কেমন অদ্ভুতভাবে ডাকতো। ঘুঘ্‌ঘু ঘুঘ্‌ঘু-উ-উ ঝিমধরানো মতন আওয়াজ।
    একদিন বাইরে বেরিয়ে দেখি ঘুঘুদম্পতি কাপড়ে মেলার তারে বসে আছে, মহিলাঘুঘু চুপ করে গম্ভীর আর ঘুঘুমশায় ঘুঘু ঘুঘ্‌ঘু করতে করতে গলাটা হ্যাঁ এর ভঙ্গীতে বারে বারে উপর নীচ করতে করতে বৌয়ের দিকে এগোচ্ছে। বৌ পাত্তাও দিচ্ছে না। পরে এই জেস্‌চার অনেক দেখেছি, হয়তো ওটা ঘুঘুদের বিশেষ কোনো ভাষা।

  • tan | 131.95.121.127 | ০৬ আগস্ট ২০০৬ ২৩:০৪631867
  • হেমন্ত শীত এইসব শুকনো কালে, সন্ধেবেলা বাসায় ফেরার আগে মাঠে কাকেদের বিরাট মিটিং বসতো মাঝে মাঝে। শয়ে শয়ে কাক এসে ধানে্‌ক্ষতে বসতো,তখন ধানে্‌ক্ষতে ধান বা জল কিছু নেই, শুকনা পরিষ্কার।কাকেরা কোনো নেতাগোছের কাককে ঘিরে বসে কা কা কা কা করে বহুরকমের কথাবার্তা বলতো যার কিছুই আমরা বুঝতাম না।হয়তো কত জ্বালাময়ী বক্ট্রিতাই দিয়েছে, কিছুই বোঝা হয় নি। অন্ধকার হলে মীটিং ভেংএ চলে যেতো যে যার গাছে। কেন যে ওরা মীটিং করতো কেজানে!

  • dam | 202.54.214.198 | ০৭ আগস্ট ২০০৬ ১৯:৩৭631868
  • পেনুদের সাদাকালো ছাগলটা রোজ ঘাস খেতে যাবার পথে আমাদের গেটের সামনে এসে দাঁড়াত, প্রথমে গলা লম্বা করে, তারপরে গেটের ওপরে পা দিয়ে উঠে মালতীলতার পাতা খাবার চেষ্টা করত। কোনদিনই নাগাল পেত না, অথচ আমৃত্যু চেষ্টা করে গেছে দিনে একবার করে।
  • tan | 131.95.121.127 | ০৭ আগস্ট ২০০৬ ১৯:৪৬631869
  • একটা সাদা হাঁস এসে আশ্রয় নিয়েছিলো গত বছরের আগের বছর, ঘরের নীচে ফাঁকফ্‌করে বানিয়েছিলো বাসা। পরিযায়ী হাঁস, সম্ভবত মেক্সিকো থেকে আসে।
    কদিন পরে দুইখানা ছোটো ছোটো ছানা ফুটেছিলো ওর ডিম থেকে,একটা সাদা একটা রঙীন ছানা,একটু বড়ো হলে ওদের নিয়ে সকালে সকালে ঘাসের বনে খাবার খুঁজতো দেখতাম।রঙীনটা সম্ভবত খুব বাধ্য ছ্‌হানা ছিলো,মায়ের সনেগ সঙ্গে থাকতো,সাদাটা ছটফট করে বেড়াতো,প্রায়ই হারিয়ে যেতো,তখন মা হাঁস প্যাঁক প্যাঁক করতে করতে খুব ডাকতো আর দৌড়ে দৌড়ে খুঁজতো। ছানারা বড়ো হয়ে গেলে হেমন্তের শেশে উড়ে চলে গেলো তিনজনে।
    কোথা থেকে আসে,কোথায় চলে যায়, কেমন ঘুরে বেরিয়ে জীবন কাটায়। দারুণ।
  • i | 202.128.112.253 | ০৮ আগস্ট ২০০৬ ০৬:১৮631870
  • সেই ৭৮এর বন্যার সময় একটা বিড়ালছানা কোত্থেকে যেন আমাদের বারান্দায় আশ্রয় নেয়-তার নাম হয় ভাস্কো ডি গামা-আমরা ভাস্কা বলে ডাকতাম।সর্বক্ষণ পায়ে পায়ে ঘুরত-আমরাও ছোটো খুব -ভাস্কাকে নিয়ে খেলতাম।
    ঠাকুমার পুজোর নারকোল, ক্ষীর সব খেয়ে নিত-তখনি জানলাম বিড়াল নারকেল খায়।এই সময় বেশ গোলযোগ হত-ঠাকুমা মেকুরটিকে পিছার বাড়ি দেওয়ার জন্য ব্যস্ত হতেন আর সে পালাতো।
    বেশিদিন বাঁচে নি। বিষাক্ত কিছু টিকটিকি/গিরগিটি খেয়ে ফেলেছিল। বিড়ালরা মারা যাওয়ার আগে বাড়ীর থেকে বেরিয়ে যায় -কেউ বলেছিল-ভাস্কাও বাগানে গিয়ে শুয়েছিল।
    এরপর একটি বিশালদেহী বিড়াল আমাদের বাড়ী আসে নিজে থেকেই-মোটকু-
    এই সময় আমাদের বাড়ীতে তিনটি মেনি বিড়াল ঘুরঘুর করত-তাদের নাম ছিল গান্ধারী, ইন্দুমতী, পরভৃতা-
    আমার মা-র এক বন্ধু পাঞ্চালী মাসী সেই শুনে বোল্লেন আর তোদের বাড়ী আসব না-তোদের বিড়ালদের যা সব নাম-কোনদিন শুনব আমার নামে কুকুর/বিড়াল পুষেছিস-
    আর ছিল নেড়ি কুকুর সরমা-সে পাঁচিলের ওপর শুয়ে থাকতে ভালবাসত-
    আর মাঝে মাঝে আসত একটা রহস্যময় বেড়াল তাকে আমার বড়জেঠু ছাড়া কেউ কখনও দ্যাখেনি-সে নাকি মাঝরাতে বকুলগাছের তলায় ঘুরে বেড়াত-এবং সে নাকি পাটকিলে বেড়াল-এ'কথা বড়জেঠু জোর দিয়ে বলতেন-পাটকিলে রংএর ওপর কেন জানি বেশি জোর দিতেন-অথচ রাতের অন্ধকারে পাটকিলে রং ক্যাম্নে বোঝা যেত কে জানে?
    মোটকু আসার পর অন্য বিড়ালদের উৎপাত লক্ষ্যণীয়ভাবে কমে গেল।
    আর মোটকু আমাদের বাড়ীর দর্শনীয় জিনিষের মধ্যে অন্যতম হয়ে গেল-নতুন কেউ বাড়ীতে এলেই মোতকুকে দেখানো হোতো।
    মোটকু অনেকদিন বেঁচেছিল-তখনই জানলাম বেড়ালের বয়সকে ১০ নিয়ে মাল্টিপ্লাই করলে মানুষের বয়সের ইকুইভ্যালেন্ট হয় নাকি-তা মোটকু বেঁচেছিল সে হিসেবে ৮০ বছরেরও বেশি।
    এরপর আমাদের বাড়িতে আর কোনো বেড়ালকে প্রশ্রয় দেওয়া হয় নি।আমরা বড় হয়ে গিয়েছিলাম।
  • ® | 203.197.96.50 | ০৮ আগস্ট ২০০৬ ১৩:৩৫631871
  • এটা ম্যারিকাতে দেখা একটা ঘটনা। একবার ক্রসিং এ দাঁড়িয়ে আছি ওয়াক সিগনালের জন্যে, দেখি রাস্তার ওপাশে একপাল হাঁসের ছানাও দাঁড়িয়ে। ওয়াক সিগনাল যেই দিলো ওমনি তারাও দল বেঁধে লাইন বরাবর রাস্তা পার হল :-)
  • Su | 59.93.201.226 | ২০ আগস্ট ২০০৬ ১১:২১631872
  • এখন মানেকা গান্ধীর কল্যাণে পাখিদের খাঁচায় পোরা যায় না, কিন্তু আমাদের ছোটবেলায় আমাদের পাশের বাড়ির এক ভদ্রলোক বাগানে বিরাট একটা খাঁচা লাগিয়ে তাতে নানা বিধ চড়াইয়ের মতো দেখতে রঙিন পাখি পুষতেন। তারা সারাদিন কিচিরমিচির করত, হাঁ করে দেখতাম। পাখিরা তো দিব্যি সুখে ছিল বলে মনে হত।
    চড়াই প্রসঙ্গে মনে পড়ল, কলকাতায় চড়াই ভীষণ কমে গেছে, প্রায় দেখাই পাওয়া যায় না। শুনলাম মোবাইলের ব্যবহার যত বাড়ছে তত নাকি চড়াই পাখি কমছে। মোবাইলের সিগনালে ওদের নাকি খুব অসুবিশা হয়। এটা কি ঠিক? কেউ সঠিক তথ্য দিতে পারো?
    সু
  • tan | 131.95.121.127 | ২১ আগস্ট ২০০৬ ২২:৩৪631873
  • দুখানা শালিক ছিলো আমাদের বাড়ী, গরমকালে সকালে আমরা যখন ডাইনিং টেবিলে একসঙ্গে চারজনে চা মুড়ি খেতাম পাখিদুটো আসতো গ্রিলের ফাঁকে ফাঁকে মুখ বাড়াতো। মুড়ি নিয়ে ওখানে দিলেই টুকিয়ে টুকিয়ে মুড়ি খেতো দুই শালিক ! শেষে সাহস বাড়লে হাত থেকেও খেতো। পালক ফালক উঠে গিয়ে একবার চেহারা ওদের খারাপ হয়ে গেছিলো, পরে শীতকালে ফের পালক টালক গজিয়ে অতি চমৎকার চেহারা হয়েছিলো।
    বাগানে জবাগাছে থাকতো বুলবুলিরা। আর লংকাজবা গাছে আসতো হলদে রঙের ইষ্টিকুটুম পাখি। দুপুরে আসতো দুর্গা-টুনটুনি।এদের সূর্যপাখীও বলে।পুরুষপাখীর পালকে রোদ্দুর পড়লে অজস্র রঙ জ্বলজ্বল করে,বর্ণনা করা যায় না এমন রঙ!
    আমগাছে নানা পাখি আসতো, বক হাঁড়িচাচা দোয়েল কোকিল।
    ফেব্রুয়ারী থেকে কোকিলদের ডাকা শুরু হয়ে যেতো,উরে বাবা দক্ষিণের বাঁশবনে আর সংলগ্ন জঙ্গলে আনেক কোকিল থাকতো,কু কুহু কু কুহু কু কুহু করে ডাকতে থাকতো ভোর রাত থেকে,শেষে গলা ভেঙে যেতো।মেয়ে কোকিল কালো না, সাদার উপরে কালো কালো ছিট ছিট চেহারার, ঝোপে একখানা মেয়ে কোকিল থাকলে যদি কোনোমতে দুখানা ছেলে কোকিল এসে পড়তো, সে কেলেংকারী কান্ড।কু কু কু কু দুই ছেলে লড়াই শুরু করে দিতো। প্রধানত গলার জোরে লড়াই,তাতে না শানালে ঠুকরে দিতো, একটা যতক্ষণ না গাছ থেকে চলে যায় ততক্ষণ লড়াই চলতো আর ছিটছিট মেয়ে কোকিলটাও মাঝে মাঝে তেড়ে উঠে কু কু কু কু করতো, তবে মেয়ে কোকিলের গলা ছেলে কোকিলের মতন অমন হাই পিচড নয়।
    পাশের ধানজমিটায় বর্ষাকালে কচি কচি ধানচারা লাগিয়ে যেতো লোকেরা,জলে কাদায় তখন জমিভরা, সেই জলের মধ্যে লক লক করে বাড়তো ধানচারা,দুইদিনের মধ্যে হাল্কা সবুজ ঘন সবুজ হয়ে যেতো,আর একমাসের মধ্যে গোছা মোটা হয়ে যেতো।ঐ ধানচারার ফাঁকে ফাঁকে লম্বা লম্বা সরু সরু চঞ্চল পায়ে ছুটতো ডাহুক মা, ওর ছানারা তখন ঝোপের বাসায়।
  • dri | 199.106.103.254 | ২২ আগস্ট ২০০৬ ০১:৩৬631874
  • নেড়িকুকুর কি পশুপখি-র মধ্যে পড়ে?

    হাজরার কাছে এক বন্ধুর বাড়ীর নিচে সিঁড়ির তলায় একটি নেড়ি থাকত। সে তো কতই থাকে। তা একবার তার যখন বাচ্চা হল, তাদের পাশের গলির আরেক নেড়ি শেষ বাচ্চাটা জন্ম দেওয়ার সময় মরে গেল। তখন সে নিজের চারটে বাচ্চার সাথে প্রতিবেশী কুকুরের তিন বাচ্চাকেও দুধ খাওয়াত।

    গল্পটা হয়ত বলার মত নয়। ভুলেও গিয়েছিলাম। কিন্তু কয়েক মাস আগে টিভিতে অ্যাডপশানের ওপর একটা প্রোগ্রাম দেখাচ্ছিল। সেখানে একটা ছোট্ট কালো বাচ্চার গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন এক সাদা ভদ্রলোক, আর ভাষ্যকার খুব গর্বিত গলায় রং নিয়ে বলছিলেন, মানুষই হল একমাত্র স্পিসিস যারা নিজের বায়োলজিকাল সন্তান না হলেও একই রকম ভালোবাসতে পারে। সেটা শুনে হঠাৎ মনে পড়ে গিয়েছিল।
  • tan | 131.95.121.127 | ২২ আগস্ট ২০০৬ ০১:৪৫631876
  • কুকুর মা নেকড়ে মা এরা অপ্রত্যাশিত স্নেহপ্রবণ,অনেক সময় অন্য স্পিসিসের বাচ্চাকেও দুধ খাওয়ায়।
    কুকুর মা বেড়ালছানাকে দুধ খাওয়াচ্ছে নিজের চক্ষে দেখা।
    নেকড়ে মা মানুষের বাচ্চাকে দুধ খাইয়েছে এইটা অবশ্য গল্পে শোনা।

  • hu | 202.54.53.194 | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ১৩:১৮631877
  • তখন সবে মাধ্য মিক শেষ, সকাল বেলা দু ঘন্টার জন্য স্কুলে যাই- P.T practice করতে। একদিন বন্ধু বলল বাড়িতে চল একটা খুব সুন্দর জিনিস দেখাব। গেলাম, যাকে দেখলাম তার পরে আর ওকে ছেড়ে আসতে পারিনি,পেটের নীচটা আর চারটে পা সাদা, পুরো পিঠের উপোরে একটা আস্ত গাঢ় বাদামী আর কালোয় বোনা কারপেট-চোখের চারপাশটা অদ্ভুত কালো। জুতোর বাক্সে চড়ে সে আমার বাড়ি এলো- মাত্র ২৫ দিন বয়সে, বাবা প্রথমে খুব ধমক দিলেও তারপর নিজেই যত্ন কোরে স্নান করিয়ে, চামচ দিয়ে দুধ খাইয়ে দিলো, আমি শুধু দেখ্‌লাম। খেয়ে সে খাটার তলায় একেবারে পিছন দিকের পায়ার ইঁটে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে রইল-কিছুতেই বের হল না-অভিমান হয়েছিলো বোধ হয়, অতো ছোট্টোটি অবস্থায় মার কাছ থেকে নিয়ে এসেছিলাম তো। ওকে নিয়ে আমার সময় কাটানোর সেই শুরু।
  • tan | 131.95.121.132 | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ০৩:০২631878
  • বহুদিন আগের এই টইটায় কতজনে পশুপাখিপরিবেশ নিয়ে লিখেছিলো,বেশ লাগছিলো শুনতে। আবার শুরু হোক না!
  • Tim | 204.111.134.55 | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ০৩:০৭631879
  • আসিতেছে! আসিতেছে! .... চড়াই, কোকিল, প্যাঁচা, ঘুঘু আর তক্ষকের কাহিনী। :-)
  • Paramita | 64.105.168.210 | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ০৪:০৬631880
  • আরে এই সুতোটা মনেই ছিল না। আমার এখন লক্ষকোটি পোষ্য। রঙ তাদের মিষ্টি কালো, স্লিম গড়ন। মেন্টেন করা খুব সোজা, যা খুদকুঁড়ো বাঁচে নিজেরাই নিয়ে খেয়ে নেয়, আমায় খাবার বাড়তে হয় না। ঝামেলা নেই। আমি না থাকলে বাড়ি পাহারা দেয় যত্ন করে। আজ ঝিরঝিরে বৃষ্টি আর তারা ঝাঁপিয়ে এসেছে আমার কোলে, পায়ে পায়ে ঘুরছে। আমি তাদের গম্ভীরভাবে নামিয়ে দিই, তারা একটুও রাগ না করে হাত বাড়িয়ে আবার চলে আসে কাছে। আমার মেয়েদের খেলার সঙ্গী, সেদিন দেখি ছোটো মেয়েটা ঘুমোচ্ছে আর এক কালোখুকি মেয়ের ডান হাতটা চেটে দিচ্ছে। ওদের ডেকে আনি নি, চলে যেতেও বলতে পারছি না। থাক্‌ এখানেই। সার বেঁধে।
  • b | 78.137.144.235 | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ০৪:১৪631881
  • এক পুরোনো মফ:স্বলে দিন কেটেছে।নব্বই এর দশকেও পষ্ট দেখেছি বসন্তবৌরি পাখি, যোগিন সরকারের বই থেকে কাট-কপি-পেস্ট করা। মাঝরাতে মাঝে মধ্যে শেয়াল ডাকতো। কলকাতা থেকে খুব যে দূর, তা নয় কিন্তু।
  • tan | 131.95.121.132 | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ০৪:১৮631882
  • ডাহুক এখনো আছে সেখানে,ইষ্টিকুটুম পাখিও আছে, বর্ষার ধানক্ষেতে এখনো নামে মস্ত মস্ত শামুকখোল পাখি-এখনো মাঠের ধারের কটা শিমূল দাঁড়িয়ে আছে,শীতশেষে বসন্ত এলে রাঙাফুলে ঢেকে যাবে বলে... শুধু সংকুচিত হয়ে আসছে ওদের পরিসর, মানুষ কেবলই ঘরবাড়ি বানিয়ে বানিয়ে ভরে ফেলছে খোলামাঠগুলো, এমনকি ধানক্ষেতও কমে আসছে...
  • Tim | 204.111.134.55 | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ০২:২২631883
  • আমাদের ঘরে চড়াইয়ের বাসা ছিলো। সকালের দিকটা বা সন্ধ্যে হওয়ার পরেই নিয়ম করে পড়তে বসার বিরক্তিকর সময়গুলোয় ওরাই ছিলো ভরসা। খুব মন দিয়ে কিচকিচ শুনে সাংকেতিক ভাষার পাঠোদ্ধার করার চেষ্টা করতাম, অনেক সময় টুপ করে কোনো চড়াইয়ের বাচ্চা পড়ে গেলে তাকে নিয়ে যতটা সম্ভব সময় নষ্ট করা যেত। একবার ফ্যানের ব্লেডে একটা চড়াই ঠিকরে পড়লো বিছানায়, অদ্ভুৎ লেগেছিলো সেদিন। এইমাত্র ঝড়ের বেগে উড়ে বেড়াচ্ছিলো যে পাখিটা , পরের মুহূর্তেই সে ঠোঁটে রক্ত মেখে নিস্পন্দ। মাঝে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের তফাৎ। এখনও চড়াই আছে, তবে তারা বারান্দায় নিরিবিলিতে থাকতেই বেশি পছন্দ করে।
    আমাদের বাড়িতে অনেক আগে একটা পোষা কোকিল ছিলো। আমরা তখন খুবই ছোটো, আবছা মনে পড়ে খাঁচায় বসে সে গম্ভীরভাবে আমাদের পর্যবেক্ষণ করতো। সেই সময় আমার কেমন জানি ধারণা ছিলো যে কোকিলের একমাত্র কাজই হলো ডাকাডাকি করা। তাই সেই কোকিলটাকে দেখে হতাশ হয়েছিলাম। সে ভয়ানক মুডি ছিলো, রীতিমত রাশভারিই বলা যায়। এর কিছুদিন পরেই সে মারা যায়, এবং এই নিয়ে বাড়িতে একটা নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছিলো। এর প্রায় বছর দশেক পরে, ততদিনে ""খাঁচার পাখি বনের পাখি"" সম্পর্কিত মতবাদ মুখস্থ হয়ে গেছে, আবার আরেকটা কোকিলের সাথে আলাপ হলো। পাশেই জাপানের দূতাবাস, সেখানকার একটা ঝাঁকড়ামতন গাছে সে থাকতে এলো। এই পাখিটা বেলা দশটার পর থেকে ডাকতে শুরু করতো, তারপর মিনিট পনেরোর ইন্টারভ্যাল দিয়ে দিয়ে টানা বিকেল অবধি ডেকে যেতো। তখনই এক বন্ধু কইলো, কোকিলের ডাকেরও নাকি সংরক্ষণ সূত্র আছে। আগের কোকিলটা কম ডাকতো বলে এইটা বেশি ডেকে পুষিয়ে দিচ্ছে। এখনও সেই কোকিল আছে মনে হয়।
    একবার কালীপুজোর আগে আগে জ্যাঠতুতো দাদার সাথে মন দিয়ে বাজির মশলার ভাগ মেশানো শিখছি, এমন সময় হঠাৎ ঘরে একটা ঘুঘুপাখি ঢুকে এলো। দাদাকে আমি চিরকালই ফেলুদার মর্যাদা দিতাম, সেটা যে এমনি এমনি না তা প্রমাণ করতেই বোধহয় চোখের পলকে একটা ঝুড়ি তুলে নিয়ে পাখিটাকে বন্দী করে ফেললো সে। যাই হোক, তারপর পাখিটার পায়ে একটা সুতো বেঁধে প্রথমে আমাকে (গেলাসচাপা কাঁকড়াবিছে দেখানোর কায়দায়), তারপর বাড়ির সবাইকে দেখিয়ে একটা নাতিদীর্ঘ ভাষণ দিয়ে তবেই পাখিটাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু আমি ভয়ংকর দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। বইতে লেখা ছিলো বাড়িতে ঘুঘু চরা নাকি খারাপ। কিন্তু ঠিক কি হয় কোথাও স্পষ্ট বলা ছিলো না। তাই ভাবনা হচ্ছিলো। এখন অবিশ্যি কনফুশন নাই। বরং বেশ ভালো-ই লাগে ঘুঘু চরা খালিবাড়ি আমার।
    প্যাঁচার গল্পটা বীররসের। পাশের ফ্ল্যাটের কাকু বদলি হয়ে যাওয়ার পর কাকিমা প্রথম প্রথম দেড় বছরের ছেলেকে নিয়ে বেশ ভয়ে ভয়েই থাকতেন।
    সেই সময় একদিন ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে তিনি বাইরের ঘরে এসে আবিষ্কার করলেন, ঘর আলো করে একটি পরিচিত লক্ষ্মীপ্যাঁচা বসে। একদম সিনেমার মত কেস। তো ভয় ভক্তিতে মিলে কাকিমার তো পুরো নার্ভাস ব্রেক্‌ডাউন হওয়ার যোগাড়। অজ্ঞান হওয়ার আগে কিকরে যেন দরজা খুলে বাইরে এসে চেঁচিয়েছিলেন। তাইতেই আমাদের ঘুম ভাঙ্গে। তো, বাইরে গিয়ে দেখলুম কমান্ডোবাহিনী নেমে পড়েছে। নিচের প্ল্যাটের আরেক কাকিমা আর মা মিলে একটা রূদ্ধদ্বার বৈঠক টাইপ করে ঠিক করে ফেললো, যে একে তাড়ানো যাবে না, এখুনি আলো ফুটে যাবে, তখন কাকের সম্মিলিত আক্রমণ ঠেকানো এই অবলা প্যাঁচার পক্ষে সম্ভব হবেনা। তারপর নিচের প্ল্যাটের কাকিমা কি অদ্ভুত কৌশলে একটা ঝুলঝাড়ু দিয়ে প্যাঁচাটাকে ঘরের কোণার দিকে নিয়ে গ্যালো, কিভাবেই বা সেটা একসময় নিজেই গ্রিলের ফাঁক দিয়ে বাইরের কার্নিসে পৌঁছলো, সেসব ইতিহাস। শুধু ঐ অবলা প্যাঁচাকে যখন একঝাঁক কাক চারদিক থেকে এসে ছেঁকে ধরলো, তখন দু একবার এড়িয়ে যাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে, শেষমেষ তিনি পক্ষবিস্তার করে উড়াল দিলেন। সেই ঝাপটায় একটা কাক ছিটকে পাশের বাড়ির ছাদে পড়লো, আর রাজকীয় ভঙ্গীমায় আমাদের মুগ্‌ধ করে একঝলক বিদ্যুতের মত সেই বীর তাঁর দিনের ডেরায় ফিরে গেলেন।
    এই ঘটনার পর থেকে ঐ প্যাঁচাটা আমাদের বাড়িতে প্রায় দীর্ঘস্থায়ী আস্তানা গেড়ে ফেলে। এখন তার ঠিকানা একটা তালাবন্ধ ফ্ল্যাটের ধোঁয়া বেরোবার চিমনি। রাতের দিকে অনেকে মিলে ছাদে গল্প করতে বসলে প্রায়ই তাকে মাথার ওপর দিয়ে বিশাল ডানা ছড়িয়ে ওড়াওড়ি করে শিকার খুঁজতে দেখা যায়।
  • Tim | 204.111.134.55 | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ০২:৫১631884
  • নারকেল গাছের গুঁড়িতে গর্ত করে যে তক্ষকটা থাকতো, তাকে আমরা বহুদিন অবধি একটা কুমীরের ছানা বলেই জানতাম। মানে সেরকমটাই বোঝানো হয়েছিলো। তো, সেই হতভাগা সর্বক্ষণ শরীরের আধখানা বের করে আড়চোখে তাকিয়ে থাকতো। আর এমনই কপাল, বাড়ি থেকে বেরোবার রাস্তাটা ঠিক ঐ গাছের নিচ দিয়ে। যতবারই বেরোতে যাই ততবারই ঐদিকে চোখ চলে যায়। কে যেন আবার বলেছিলো ওটা নাকি লাফিয়ে গায়ে চলে আসে। ফলে খেলতে যাওয়ার সময় একছুট্টে নারকেল গাছটা পেরোতে হতো। কখনও কখনও আবার সে হঠাৎ বেরিয়ে এসে চমকে দেওয়ার চেষ্টাও করতো। তাই আমরা বেজায় অপছন্দ করতাম আর মনে মনে ফন্দী আঁটতাম , কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায়। এরকমই একদিন বিকেলে খেলার পরে সোনার সাথে ( ও আমাদের পাশের বাড়িতে থাকতো, ওরও একই সমস্যা, বেরোবার রাস্তায় নারকেল গাছ) অনেকক্ষণ পরামর্শ করে বাড়ি ফিরতে গিয়ে দেখলাম তিনি নেই গাছের কোটরে। ভাবলাম আপদ চুকেছে বোধহয়। এর অল্পক্ষণ পরেই প্রথমে একটা চিল চিৎকার, আর তারপর ভয়ানক চেঁচামেচি শোনা গেল সোনাদের বাড়ি থেকে। আসলে তক্ষকটা সোনাদের বাথরুমের দেওয়ালে বসে ছিলো। মাঠ থেকে ফিরেই শ্রীমাণ বাথরুমে যান, এবং ....
    তারপর থেকে আমরা আর কোনোদিন ওটাকে তাড়ানোর চক্রান্ত করতাম না।
    এর কয়েকবছর পরে তক্ষকটা একদিন মারা গেল, তখন সন্ধ্যের দিকে মাঝে মাঝে মনে পড়তো সেই সরীসৃপের কথা। গুণে গুণে সাতবার ডাকতো সে সন্ধ্যেবেলা। যাকে তাড়ানোর পরামর্শ করে আমাদের বিকেলগুলো কেটেছিলো, সত্যি সত্যি যখন সে চলে গেল তখন তেমন আনন্দ হলো না দেখে নিজেরাই অবাক হয়েছিলাম।
  • Blank | 59.93.168.76 | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ১১:৩৯631885
  • খান দুই গুইহাঁটকেল (গোসাপ) থাকতো বাড়ির পেছনের বাগানে। দেখলেই কেমন ভয় লাগতো। জানলা দিয়ে মাঝে মাঝে দেখতাম জঙ্গলের মধ্যে ওদুটো ঘুরছে। বড় বড় কচু পাতা গুলো নড়ছে খুব। কাক গুলো চেঁচাচ্ছে। হঠাৎ ই একটা বড় কচুপাতার ফাঁক দিয়ে মুখ বেড় করলো কোনোটা। আবার মিলিয়ে গেলো। তারপরেই চোর কাঁতার ঝোপ পেরিয়ে, পার্থেনিয়াম গাছের ফাঁকে হারিয়ে গেল সেই ডাইনোসরের ছানা টা। ওদুটোর ভয়ে ঐ জঙ্গলে ঢুকতেই ভয় লাগতো। কখনো ঐ জঙ্গলে বল পরলে কে ওটার ভেতরে যাবে বল আনতে, তাই নিয়ে চলতো তক্ক বিতক্ক। অনেক সাহস টাহস নিয়ে, দশ বার 'ভয় কে করবে জয়', আর 'রাম লক্ষন সাথে আছে ...' আওড়াতে আওড়াতে বল খুঁজতে যেতুম।
    সবচেয়ে অদ্ভুত লাগতো যখন পানা পুকুরের মধ্যে দিয়ে ওদুটো পালাতো। পানায় সবুজ হয়ে আছে পুকুর, তার মধ্যে একটা আঁকা বাঁকা জায়গায় অদ্ভুত লাইন পরে আছে, ওটাই গোসাপ যাওয়ার লাইন। হেমেন্দ্রকুমার পড়েছি সদ্য। সেই অজানা দ্বীপের ভয়ঙ্কর প্রানী ছারা কিচ্ছু ভাবতে পারতুম না ওটাকে।
    তারপর কবে যেন আমরা সেই বাড়ি ছেরে চলে এলাম। গোসাপ দুটো কোথায় হারিয়ে গেলো। নতুন বাড়ি তে এসে পেলাম একটা বুলবুলি পাখীর ছানাকে। কিন্তু সে গল্প অন্যদিন।
    (ডি: জঙ্গল মানে কাটা খানেক জমি তে খান দুই পেয়ারা গাছ, পেঁপে গাছ। মাটির ওপরে কচু গাছ আর ব্যাঙের ছাতা, পেয়ারা গাছের গায়ে এত্ত বড় বড় শামুক)
  • § | 122.162.83.182 | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ১৩:১৫631887
  • ক্যাঙারু দেখিচি তো! গায়ে ঠেসান দিয়ে বসিচি, নিজের হাতে বিচুলি খাইয়েছি, গলকম্বলে আঙুল দিয়ে কুড়কুড়ি করে দিয়েছি। একবারও লাফিয়ে দেখালো না তবু।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে মতামত দিন